কালকুঠুরি পর্ব ৪
sumona khatun mollika
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ৩ নমুনা, নুসরাত, সিয়াম আর সামির সাথে ইতি বেরিয়েছে মার্কেটে। মনমতো এটাসেটা শপিং করছে সবাই,, নুসরাত সামিরের ছোটলোকি দেকে বিষণ বিরক্ত হলো,,
সে মাত্র ২ টা নীল লুঙ্গি ছাড়া কিছুই নেয়নি। দোকানের কর্মচারী যখন জিজ্ঞেস করল,,
– ভাই জাঙ্গি?
তার জবাব ছিল এমন,,
– ট্যাকা তর বাপে দিবে বে? একেত সামান্য তিন কোনা জাইঙ্গার দাম লিস এতো এতো,, !! লুঙ্গি কিন্যা ট্যাকা শেষষ!!
ইতি দুটোর বেশি জামা কিনে দেয়নি। সিয়াম কিনে দিয়েছে। বিপত্তি ঘটল লিফটের মধ্যে। লিফট আটকে গেল। বাইরে থেকে কাজ চলছে । অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম ভালো ছিল জন্য তাদের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না । সামির ক্ষেপে গিয়ে বলল,,
– এর চাই আরডিএ মার্কেটি ভালো ছিল,, বালের মাতা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পর নুসরাত বলর,,
– একটু দ্রুত করতে বলো না।
– কেন?
– ইয়ে মানে,, আমার খুব জোরে এক পেয়েছে । মানে খুবই জোরে। আর চাপতে পারছিনা।
– কিহ!
– হ্যা।
সামির আর সিয়াম দুইজনেই একে অপরের দিকে তাকায় ইতি সামিরের আঙুল টেনে জিজ্ঞেস করে,
– এক মানে কি মামাই
– মানে বাঙ্গির নাতি।
নুসরাত পা গুটিয়ে দাড়িয়ে বলল
– এরে শালা তাতাড়ি করতে বুল না! বেরিয়ে গেল!
সিয়াম মাথা চুলকাতে লাগল সামির ইতির হাত থেকে কোকের কাপ টা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলদের মতো চেহারা নিয়ে বলর,,
– এতে কাজ সারেন,, আরতো উপায় নাই!
ইতি সিয়াম নুসরাত সকলে তার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে, নুসরাত ক্ষেপে গিয়ে বলল,
– দিমাগ খারাপ নাকি! শাল্লা!
– তাইলে এখানেই মুইততালা, বাঙ্গির নাতনি! এত গিলতে কে বলেচিল!
সেই মুহুর্তে লিফটের দড়জা খুলে গেলে নুসরাত দৌড়ে বাথরুম চলে গেল! সিয়াম দম ফেলে বলর,,
– গজব বেইজ্জতি ইয়ার, একটুর জন্য মানইজ্জত যায় নাই,,, ওহ!!
শপিং থেকে ফিরে সোজা ভার্সিটি চলে গেল দুই ভাই,,,
ভর্সিটিতে লাইব্রেরির পাশে চরম ভির লেগে আছে,, গোল জনতা ঠেলে সিযাম আর সামির ভেতরে ঢুকলো। পুলিশ তদন্ত করছে। ইন্সপেক্টর মাহবুব উদ্দিন হ্যান্ডগ্লাভস হাতে বডিটার গাল মুখ ছুয়ে বললেন,,
” এটা কিসের ছাপ,, মেরেছেতো দা দিয়ে, মুখের ওপর এটা,,, ”
পাশ থেকে মাহা বলে উঠলো,,
– জুতার পায়ের ছাপ স্যার। মনে হচ্ছে মুখ খুসে ধরেছিল,,
সামির বিরক্তিকর চেহারায় তাকিয়ে বলে,
– সব বিষয়ে হাত মারার কি দরকার, বেহুদা হারকাত!
মাহবুব উদ্দিন সহ সকলে তার দিকে তাকালো,
– তুমি কিকরে জানো?
মাহা ভেতরে যাবার অনুমতি চাইলে মাহতাব তাকে অনুমতি দেয়। মাহা মেয়েটার লাশের ওপর ঝুকে বলে,,,
– এই দেখুন স্যার,, পরিষ্কার কোনো জুতার ছাপ। ছেলেদের জুতা খুব সম্ভব গাল থেকে কান পর্যন্ত এভাবে সোজা করে চেপে ধরা হয়েছে। আর এইযে দেখুন এটা কুড়াল দিয়ে মারার চিহ্ন। দা নয়। কুড়াল দিয়ে একদম বুক বরাবর কোপ মেরেছে । আর গায়ের চামড়ার দাগগুলি খুব সম্ভব চামড়ার বেল্টের।
মাহার জবাব আর সাহস দেখে মাহবুব সহ সকলে হতবাক। তিনি বললেন,,
– একদম সঠিক ধারণা তোমার। তুমি কি কোনোভাবে এর সাথে জড়িয়ে?
-না স্যার। আমি ল ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট।
– আচ্ছা! উডবি লযার!
– না স্যার, আমি বিসিএস দেব, মেজিস্ট্রেট পজিশন এর জন্য।
– ইন্টারেস্টিং! নাম কি তোমার?
– মাহাদিবা ফারনাজ মাহা।
– নাম্বার দিয়ে যাও প্রয়োজন হলে কল করবো।
– জ্বি।
সামির প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কাশেমের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল,
– আচ্ছা কাইশসা, পুলিশ হলে সহজেই ছুড়িদের নাম্বার লেয়া যায় তাইনা!
-শালায় চালাক আছে ভাই!
পুলিশ লাশ নিয়ে চলে গেল। মাহা দুরে সরে বসে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে আরেকবার রক্তাক্ত জায়গা টা দেখলো। গা কাটা দেয়ার মতো অবস্থা । সবাই বলাবলি করছে, মাহার কি সাহস, পুলিশি ঝামেলায় ঢুকে পরল! মাহা বেরিয়ে যাবার সময় পেছন থেকে স্মৃতি চত্বর থেকে সামির বাজখাঁই কণ্ঠে ডেকে উঠল,,,
– ও মেজিস্ট্রেট আফুজান্স! একটু শুনে যান,,
মাহা কথা কানে না নেয়ার ভান করলে সামির কাশেমকে বলে তাকে তুলে নিয়াসতে। মাহা কোনো কথা না বলে চুপচাপ চলে আসে,,
– কেমন আছেন চড়ওয়ালী?
– জ্বি আল্লাহ ভালোই রাখছে।
– নজর কিন্তু আপনার হেব্বি ধারালো।
– আপনার বড় ভাইও এটাই বলেছিল।
– আরে আপনার মতো সোডিয়াম ক্লোরাইড রে ভুল বলতেই পারেনা।
– কি?
– সোডিয়াম ক্লোরাইড!
– মানে চিনি? আমাকে আপনার মিষ্টি খুকি মনে হয়?
কাশেম কিছু বলতেই যাবে অমনি সামির হাত উচিযে থামিয়ে বলল,,
– আব্বা আম্মার কথার ভেতর কথা বলতে নাই। বাঙ্গির বাচ্চাগুলো কে আর মানুষ করতে পারলাম না। ও হ্যা,, তুমি,, তুমি মিষ্টি খুকি হবে কেন,, তুমিতো সাইলেন্ট বোম! ওই মনটা সোডিয়াম ক্লোরাইড এর মতো তাই তুমি সোডিয়াম ক্লোরাইড।
– আর কিছু?
– এসব ঝামেলায় জড়িওনা। কঠিন লেবেলের মারা খাবে।
– যেদিন খাব আপনাকে ভাগ দিয়ে যাব।
– দিও। মারা ডাই নাহয় দিলে,, কিন্তু, আমি তোমার থেকে আরেকটা চড় পাই,, একগালে থাবড়া মাড়লে নাকি বিয়া হয়না?? আমিতো সিঙ্গেল থাকপার চাইনা। আরেকটা তো পাওনা গো।
– ক্ষমা করবেন,, হাতের শক্তি খরচ করতে চাচ্ছি না।
– যে ফকিন্নির ঝি,, গায়ে বল আছে যে খরচ করবা? শুনলাম তো তোমারে নাকি হেব্বি ভালোবাসে!
– আপনাকে কে দেখতে বলেছে?
– চোখ আছে দেখে ফেলেচি!!! এক কাজ কইরো সহ্য না হইলে আনারস আর দুধ মিশায় খায় ফেইলো। তোমার কেস লড়ার জন্য কেডি পাঠক কে হায়ার করব আমি নিজে। ওহ তুমিতো আবার ফকিন্নির ঝি,, কিনতে না পারলে বইলো আমি ট্যাকা দিবনে।
– জ্বি ধন্যবাদ।
– যাও বাড়ি যাও। তোমার খোকা ডিপজল ওয়েট করছে।
মাহা চলে যেতে যেতে ভাবল,,
– কি লেবেলের ধরিবাজ বকাটে! আল্লাহ রক্ষা করুন।
কাশেম সামিরকে বলর,,
-ভাই,, সব ঠিকাছে কিন্তু,, সোডিয়াম ক্লোরাইড মানে তো লবণ এতো সবাই জানে।
– চোপ বাঙ্গির নাতি, চড়ওয়ালী যখন বলেছে চিনি মানে চিনিই। সবাই ভুল!!
কশেম মাথা চুলকে গাড় নাড়ালো।
রতের বেলা মুহিব মাহাকে জিজ্ঞেস করল,
-তুই পুলিশি ঝামেলার ভেতর কেন ঢুকেছিলি,, ওসব রাজনৈতিক কারসাজির ভেতর তোর ঢোকার কাজ নেই। আব্বু শুনলে পিটবে।
-কিন্তু অন্যায় দেখে চুপ করে থাকাতো আরো বড় অন্যায় ভাইয়া।
– ওকালতি পরে করিস। যা৷ পড়তে বোস। শোন,,
– হুমমম?
– সামির সিকান্দার তোকে কিছু বলেছে?
– এসব ছেড়ে দুরে থাকতে বলেছে।
মুহিব মাথা নেড়ে চলে যায়। মাহা ভাবে,, এই রাজনিতী বিদেরা কি ঝামেলা ছাড়া কিছু বোঝেনা!
তখনি ফোনে টুং করে শব্দ হয়। ফেসবুক চেক করে মুখটা বাকা হয়ে যায়। সিযাম সিকান্দার বিবাহিত ! নতুন বউ নিয়ে পোস্ট করেছে।
এদিকে ,,,
কাশেম সামিরকে বলছে,,
– ভাইকি একাই যাবেন? পারবেন যাইতে? আমি যাব? পুলিশ দরে ফেললে কেচ্ছা হয়ে যাবে।
– আমি একাই একশ । তোরা ওই মাহবুব উদ্দিন রে ধরে রাকিস। ফাইল নাম্বার কত?
– ৩ নং শেলফে ২ নাম্বার লাইনে ৮ নাম্বার ফাইল। নীল রঙের।
– ওকেই।
– ভাই রনিরে নিয়ে যান।
– দেত! তুই যাবি?
কালকুঠুরি পর্ব ৩
৪ জন মিলে ফাইল চুরি করতে গেছে রাজপাড়া থানায। ওখানেই আছে সাফিন সিকান্দার এর কেস ফাইল। বড্ড চতুরতার সাথে সেই ফাইল চুরি করে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিল সামির। তারপর বাড়ি চলে গেল।
