কালকুঠুরি পর্ব ৬
sumona khatun mollika
চাচির কথামতো আজ একদল লোক চলে এসেছে মাহাকে দেখতে। মাহা যেহেতু পর্দা করে কোনো পুরুষকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর যার সাথে বিয়ে সেত আসেইনি। ছেলের যে মা সে মাহাকে বলল,,
– তুমি রান্না করতে পারো? একটু হেঁটে দেখাও,, চুলটা দেখি,, নাকটা দেখি,,
মাহা কিছুই বললনা। কিন্তু যখন শেষে গিয়ে হাতের পোড়া দাগ এ আপত্তি জানালো, মাহা তখন উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– বেয়াদবি মাফ করবেন। কিন্তু আমি একটা মানুষ কোনো দীর্গস্হায়ী আসবাবপত্র নই। যে একদম বেছে বাছাই করে কিনে নিয়ে যাবেন। তাছাড়া আমাদেরওতো অধিকার আছে আপনার ছেলে সম্পর্কে জানার। উনি কোথায়? আমাকেতো উনার নাম টাও বলা হয়নি। মানুষের অতীত থাকতেই পারে। আমার তাতেও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চাচি এসে মাহাকে বসিয়ে আমতা সামতা করে বলতে লাগলেন,,
– এহে,, আজকালকের মেয়ে তো,, একটু,,,
তখন ওই মহিলার ছেলে চলে আসে। দেখে মনে হচ্ছে না তবে বয়স আছে। খুব সম্ভব ৪০ এর কাছাকাছি বয়স হবে। অনেক জোরাজুরির পর,, মাহা তার সাথে আলাদা কথা বলতে রাজি হয়ে যায়। চাচি বলে পাঠান কোনো গোলমাল করলে আজ তার খবর আছে।
লোক টার সাথে কথা বলে মাহা যা বুঝলো,,
– লোকটার নাম রাফিক। ব্যাঙ্কের চাকরি করে। আগের বউ মরেনি,, ছেড়ে চলে গেছে। কারণ, সে বাচ্চা জন্ম দিতে পারবেনা। সন্মানের খাতিরে সবাই বলে মরে গেছে।
মাহার মন সায় দিচ্ছিলনা তবুও সে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। ছেলের বাড়ি থেকে মোটামুটি ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করে আংটি বদলের ডেট ফিক্স করে যায়।
ওরা চলে যাওয়ার পর মাহা দৌড়ের ওপর ভার্সিটি পৌছে যায়৷ ১০ মিনিট লেট। তবুও পরীক্ষা টা দিতে পেরেছে। পরীক্ষার পর প্রশ্নটা হাতে নিয়ে বাইরে আসার সময় এক সিনিয়র ছেলে তাকে প্রোপোজ করে বসে। সেটা চোখে পরে কাশেমের , কাশেম দৌড়ে গিয়ে সামিরের কানে তুলে দেয। সাফিনও সেখানে উপস্থিত ছিল। সামির বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে বলল,,
– তাতে আমার কি,, ও আমার বউ না শালি দেখতে সুন্দরী দু একটা প্রোপোজ তো পাবেই।
কিন্তু সাফিন বলল,,
– ছেলেটাকে তুলে নিয়ে কাত করে দে। এমনভাবে করবি যাতে কেও টের না পায়। দোষটাও যেন প্রয়োজনে মাহার ওপরেই যায়।
সমির সেখান থেকে উঠে বাইরে চলে যায়। দেখে মাহা একটা গাছের নিচে বসে। হাতে ছোটখাটো কিসের একটা বই। সামির তার সামনে দাড়িয়ে ভূমিকা না করে বলতে শুরু করে,,
– এইযে সোডিয়াম ক্লোরাইড, ক্যাম্পাসে খুব প্রেমের বাতাস ছড়াচ্ছ,, শুনলাম তোমার নাকি বিয়া?
– জ্বি।
মহা চলে যেতে লাগলে সামির পিছনে ঘুরে ডাকলো,,
-দিবা,,?
মাহা বেশ চকিত হয়ে পেছনে তাকালো। এই নামটা ধরে তার বাবা ডাকতো। সামির এগিয়ে গিয়ে বলল,,
– এইযে তোমার হিজাব পিন পরে গেছিল পেছনে।
তখনি একটা সুন্দরী দেখতে মেয়ে ঠাস করে পিছলা খেয়ে পরে যায়। কাশেম এগিয়ে গেলেও সামির তাকিয়েও দেখেনা। পায়ে মোচ লাগাতে মেযেটা কান্না করে ফেলে। সামির তখনি আবার নিজের আসল রূপের ঝলক দেখিয়ে বলে,,
– শালার এই জন্যেই মেয়ে জাতি ঘিন্না লাগে,, পড়তেই পারেনি ভ্যাক শুরু করে দিয়েছে! ন্যাকা। মেয়ে মানেই খালি বাড়ির চাকরানী হওয়ার যোগ্য। গুতা খাইবো আর কাম করবো। শালির মেচির দল!
আজ আমারো মাহা ঠাস করে সামিরের গালে চড় বসিয়ে দিল। সামির লুঙ্গি উচা করে দাড়িয়ে রইল। কাশেম খপ করে মাহার হাত ধরে ঝাকি দিয়ে বলল,
-এই মে তোমার সাহস কত? আগেরবারো কিছু বলিনি।
পেছন থেকে একটা মেয়ে এসে কাশেমের হাত ছাড়িয়ে বলল,,
– কাশেম ভাই? আপনে মাহার হাত ধরছেন কেন?
কাশেম সরে দাড়িয়ে বলল,
– শ্যামা?
শ্যামাঙ্গিণি এক মেয়ে কে দেখে কাশেম থ হয়ে গেল। সামির বলল,,
– এই,, বাচ্চারা হুড়োহুড়ি কোরোনা। সেদিন একগালে চড় খাইছি। আজ আরেকটা অভিশাপ উঠছি বিয়াও হইব।
মাহা জ্ঞান দেয়ার সুরে বলল,,
– মেয়ে জাতিকে ঘৃণা করেন? আপনার কি বাবা আপনাকে পেটে ধরেছিল? না চাচা?
সামির মাহার বাহাতের কব্জি চেপে ধরে বলল,,
– বাপ মা তুলে কথা বলিস না। মেয়ে মানুষ দেখে ভালোবাসা দেখাচ্ছি।
মাহা হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বলল,
– আপনি ঘৃণারো যোগ্য না!
সামির মাহার হাতটা আরে শক্ত করে ধরে কাছে এগিয়ে জবাব দিল
– ঠিক বলেছ, আমি ঘৃণার যোগ্য নই। ভালোবাসার যোগ্য।
মাহাকে মেধা টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল। সামির কাশেমকে বলর,,
– এই কালো ছেড়ির নাম তো মেধা,, শ্যামা???
কাশেম বলল,
– আমি বলি শ্যামা।
– কাইল্লা ছুড়ির কাহিনি কি?
– কালো বইলেন না ভাই,, নিজ ইচ্ছায় তো আর কালো হয়নাই।
– ওরে শাল্লা ! লক্কর ঝক্কর এর কাহিনি নাকি? কিন্তু কাইশসা, তুইতো ফশসা!
– আমিওতো নিজ ইচ্ছেয় ফর্সা হইনি ভাই।
– না, তা ঠিক,, যাইহোক, নাচতে নচতে আবার ভাঙা টিন রে বলা মারায়ো না। বুঝছো সোনা। আব্বা – আম্মার পার্সোনাল ম্যাটার।
– আচ্ছা ভাই।
– চল,,,
– আপনে যান আমি আসছি।
– আইচ্ছা।
কাশেম দৌড়ে গেটের কাছে চলে এলো ,, মেধাকে ধরে বলর,,
– ও শ্যামা দাড়াও। রাগ কোরোনা।
মাহা ততখনে বাড়ি চলে গেছে। মেধা রাগ দেখিয়ে বলল,
– কাশেম ভাই,, আমার বান্ধবী কে জ্বালাচ্ছিলেন কেন?
– আমি জানতাম না ও তোমার বান্ধবী। ভাইকে মেরেছিল তাই,, রাগ কোরোনা শ্যামা!
– আপনি আমাকে শ্যামা বলে ডেকে কি বোঝাচ্ছেন? আমি হিন্দু তাই?
– তুমিতো হিন্দু না।
– তাহলে? শ্যামা মানে?
– তোমার না জানলেও চলবে। তুমি বলনা,, আমার জবাব দিলেনা?
মেধা তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– দেখেন কাশেম ভাই,, আপনে অনেক সুন্দর আর বড়লোক বাড়ির ছেলে। আপনার সাথে আমার যায়না। আমি কালো আমি অমাবস্যা আপনি চাঁদ।
– খালি কালো কালো করো কেন? আমি তোমাকে কোনোদিনো রঙের খোঁচা দিযেছি?
– আপনার পাশে আমারে কোনোদিনও মানায় না কাশেম ভাই।
– তুমি ভুল জানো। কালোই জগতের আলো৷ আমি তোমার রঙ টারে ভালোবাসি না, তোমারে ভালোবাসি।
মেধা মুচকি একটু হেসে অবাক করা কণ্ঠে বলে,,
-! ”
ছন্দ মিলিয়ে বলাই যায় আলো
বাস্তবে কবিও ভেংচায় কালো।।
মেধার কথাটা কাশেমের মাথায় শিতল বাতাসের মতো বাড়ি খেতে লাগল। মেধা চলে গেলে কাশেম সেদিকেই তাকিয়ে রইল। মনে মনে বলল,
– তবুও মন মানেনা। কাইল্লা ছুড়িডারেই ভাল্লাগে।
সামির বাড়ি গিয়ে দেখল সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে গোলমাটুর সিভান। সামিরকে দেখে দৌড়ে এসে বলর,,
-কাকা, এই দেখ আমিও লুঙ্গি পরছি। ওই বাড়িতে কেও লুঙ্গীই পড়তে দেয় না৷
-কামাই করেছিস। লুঙ্গি ঐতিহাসিক পোশাক ম পড়বিনা মানে অবশ্যই পড়বি। চল ওপরে যাই।
চলো বলে সিভান সামিরের মতো লুঙ্গি উচা করে হাটতে লাগল। লুঙ্গির কোনা উপরে তুলায় পেছনের একপাশ অর্ধেক দৃশ্যমান হতেই সামির দৌড়ে গিয়ে এক হাতে তাকে উল্টো করে কোলে তুলে ওপরে উঠে যেতে যেতে বলল,,
– এই বাঙ্গি,, তুইও তো দেখছি ফকিন্নির ঝি এর মতো, ভেতরে পরার প্যান্ট নাইতো পরেছিস কেন? লুঙ্গির গুষ্টি উদ্ধার করতে!
– আরে পায়ের রগ মাথায় উঠে গেল। সোজা কর আমাকে।
তারা ওপরে চলে গেলে সাফিন ইনায়াকে বলল,,
– সিভানের ওপর নজর রাখবি। যখন তখন যেখানে সেখানে যেন না যায়।
– আচ্ছা।
সিভান তার বাপ, চাচাদের খুব ভালোবাসে তবে,, তার বাবা সবসময় তাকে ব্যাস্ততা দেখায়। মৃত্যু কি সে তা বোঝেনা। তবে মায়ের মরার দিন কেঁদেছে। খুব কেঁদেছে। সামিরের সাথে থাকলে সবসময় ফুর্তিতে থাকে। তবে সামনে ইলেকশন, আর সামিরও দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নয়। তাই সাফিনের একটু চিন্তা হয়।
নুসরাতের বাবার বাড়ি থেকে এখনো কোনো রেসপন্স নাই। মানে মেয়েটা যে পালিয়ে বিয়ে করেছে,, কোনো পাত্তাই নাই। নুসরাত , সিয়াম, সামির, সিভান, ইতি, ইনায়া সকলে এক রুমে বসে ছিল। এরি মধ্যে কাজের মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,,
– বড় বাবু বাড়িত নাই। রাতে কি রানবো? ভাত না রুটি?
নুসরাত – ভাত
সামির – রুটি
নুসরাত – আমি বলছি ভাত!
সমির – আমি বললাম রুটি।
ভত রুটি, ভাত, রুটি করতে করতে সিভান তাদের থামিয়ে বলল,,
– ভাত যোগ রুটি সমান কিছুইনা। বিরিয়ানি সবার চলবে? বিরিয়ানি।
-আচ্ছা।
নুসরাতের সাথে সিভান সারা দুনিয়ায় যত গল্প আছে সব একদিন এই মেষ করে ফেলছে। সামির সবগুলো কে বের করে দিয়ে
খাটের ওপর শুয়ে হাতের ফোনটা ঘাটাঘাটি করতে লাগল। হঠাৎ করে কি একটা মনে হয়ে হুট করে বেরিয়ে গেল।
গিয়ে পৌছলো একটা শুনশান এলাকায়। পিনপতন নীরবতা। ভয়ংকর পরিবেশ। মাঝখানে বেধে রাখা একটা ছেলে৷ এটা সেই ছেলেটা যে ভার্সিটিতে মাহাকে প্রোপোজ করেছিল। কাশেম তাকে চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে। মোটা লাঠির দুচার বাড়িতেই কাহিল হয়ে গেছে ছেলেটা। তার নাম খুব সম্ভব রুহান।
সামির তার মুখের বাধন খুলে দিতেই চেলেটা বলতে শুরু করল,,
– সামির ভাই,, আমাকে চিনতে পারতেছেন না?
সামির ভুরু কুচকে তাকে দেখে বলল,
– রুহান!
কালকুঠুরি পর্ব ৫
তারপর বাকা হেসে দুই হাতে লুঙ্গি গুটিয়ে একটা চেয়ারে বসে থুতনিতে হাত দিয়ে রসিকতা করে বলল তুই! তোর ভাই তোকে খুজছেনা? খুজবেইবাকেন! সভাপতি তিহান ভাইয়ের ছোট ভাই রুহান সেত মার্কামারা বলদ! সে তুই ভাই ভাস্তে যাই হোস, তবে,, কাকে প্রোপজ করছিলি জানিস?
– উহু, দেখতে ভাল্লাগছে।
– চেহারা নাদেখেই? তুই জানিস ওটা সাইলেন্ট বোম! টাচ করবি আর ফেটে যাবি। সামনে ইলেকশন না হলে তোকে এখানেই ছিড়ে ফেলতাম। দিবার আশেপাশে যেন তোরে না দেখি। যাহ। কাইশসা ছাইড়ে দে।
