কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৪
মিসরাতুল রহমান চৈতী
রাতুল চেয়ার টেনে ঘুমন্ত চৈতীর মুখটা দেখে যাচ্ছে। কি আছে ওর এই মুখটাতে যার জন্য সে এতো মুগ্ধ হয়। তার কাছে মনে হলো, তার পাপের রাজত্বে একটা সুন্দর, পবিত্র ফুল ফুটেছে, আর সেই ফুলের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সে সেই গন্ধটাকে যেন আতর হিসেবে নিজের গায়ে মেখে নিচ্ছে। হাজারো মেয়েকে ছোঁয়েছে এই হাতে, কিন্তু যখনই চৈতীকে ছোঁয়ার কথা ভাবছে, কিছু একটা অদৃশ্য কারণে তার হাত থেমে যাচ্ছে।
এটা কী? কেন যখনই তার দৃষ্টি চৈতীর দিকে যায়, তখনই কিছু একটুকু আলাদা অনুভব হয়? এটা কী মায়া? কী সেই জাদু, যা তাকে বশীভূত করেছে? কোথায় হারিয়েছে তার আগের স্বাভাবিকতা? কেন তার মন ও হৃদয়ের মধ্যে চৈতী এইভাবে গেঁথে যাচ্ছে?
যখন থেকে চৈতীকে দেখেছে আর কোন নারীর সঙ্গ ভালো লাগে না। আর কোন নারীর দিকেও তাকাতে ভালো লাগে না। হাজার নারীর ভিড়ে তার চোখ কেবল তার কোমলমতি,, শান্ত,, মায়াবী মুখে আটকে যায়।
–”তবে কি আমার তো চরিত্রহীন পাষণ্ড এমপি ঘায়েল হলো পবিত্র হলো কি এই মেয়েটি সংস্পর্শে। বেশ তো তাই হোক আজ আমি রাতুল আহাম্মেদ ঘোষণা দিলাম পৃথিবীর সমস্ত মেয়ে আমার জন্য হারাম শুধু মাত্র একটি মেয়ে ব্যাতীত ঘুমন্ত চৈতীর মুখ পানে তাকিয়ে বললো একমাত্র আমার কোমলমতি ছাড়া। চৈতী তুমি আমার জীবনে আসা এক শুভ্র ভালোবাসা যার স্পর্শে মুছে যাবে সকল কালিমা।”
চৈতী, তুমি আমাকে শুধুমাত্র এই দুনিয়ার এক নারী হিসেবেই নয়, এক অমোঘ কাব্যিক সৌন্দর্য হিসেবে তোমার অস্তিত্বে বেঁধে রেখেছো, যা কখনোই মুছে যাবে না। তুমি আমার প্রতিটা শ্বাসে, প্রতিটা নিশ্বাসে, আমি শুধু তোমাকেই অনুভব করি, আর কিছু নয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সে একটা বিয়ার নিয়ে বিয়ার টা খাওয়া শুরু করে। বিয়ার চুমুক দিলো সে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো যত দূর তার চোখ যায়। সব মানুষেরই অতীত থাকে। রাতুলের জীবনেও অতীত আছে ভয়ঙ্কর অতীত সেই অতীতের জন্য আজ সে জঘন্য। তবে সমস্যা নেই তার অতীত থেকে তার একাকিত্ব থেকে বের হতে একটা খড়কুটো লাগতো আর সেই খড়কুটো সে পেয়ে গেছে তাহলো,, চৈতী। যাকে সে কেয়ামত পর্যন্ত আগলে রাখবে তার হৃদয় কোঠরে।
রাতুলের ঠোঁটে বিয়ার লাগলেও, মনে হলো স্বাদ বদলে গেছে। কেন জানি তিক্ত লাগছে, যেন এই নেশা আর তার শরীরে কাজ করছে না। সে এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
তার হৃদয়ের গহীনে কোথাও একটা পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা সে নিজেই টের পাচ্ছে। এই অনুভূতি কি ভালোবাসা? না কি এটা শুধুই মোহ?
না, এটা মোহ নয়।
এটা কিছু গভীর, কিছু শুদ্ধ, কিছু যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি।
রাতুল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, দুপুর ২টা বাজে। বাইরের রৌদ্র তপ্ত হয়ে উঠেছে, চারদিকে উত্তপ্ত হাওয়া বইছে। সে একবার চৈতীর দিকে তাকায়—এখনো গভীর ঘুমে ডুবে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় চৈতীর মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
সে জানে, চৈতী এখনো দুর্বল। গত কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো খায়নি, শরীরও ভেঙে পড়েছে। তাকে আর ঘুমাতে দেওয়া ঠিক হবে না, এখন তার খাবার দরকার।
রাতুল ধীর পায়ে বেলকনিতে থেকে রুমে প্রবেশ করলো। তারপর আলগোছে চৈতীর দিকে এগিয়ে এসে আলতো গলায় ডাক দিলো,, চৈতী এই চৈতী ওঠো। বেলা হলো খেয়ে নিবে।
রাতুলের ডাক শুনে চৈতী পিটপিট করে তাকায় তাকিয়ে যখন দেখে রাতুল ওর দিকে অনেকা ঝুকে আছে আতঙ্কে দিগ্বিদিক হয়ে সে এক লাফে পিছনে ছিটকে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,, সমস্যা টা কি আপনি এইভাবে আমার দিকে ঝুঁকেছিলেন কেন?
রাতুল ওর রিয়েক্ট দেখে বাঁকা হাসলো। তারপর বললো,, অনেক বেলা হয়েছে খেয়ে নিবে চলো।
আপনার যদি মনে হয় আপনার পাপের অন্নের একটা দানা আমি মিসরাতুল রহমান চৈতী সেইটা গ্রহন করবো তাহলে ভুল ধারনা আমি আপনার অন্ন গ্রহন করবো না।
তীর্যক হাসলো রাতুল তারপর বললো,,
–”এইটুকু শরীরে এতো তেজ আই লাইক ইট। ওরে আমার বোকা চৈতী পাখিরে শরীরের তেজ টা ধরে রাখতে হলেও তো তোকে খাবার খেতে হবে মেয়েদের এতো তেজ ভালো না। আমি খাবার নিয়ে আসছি চুপচাপ খাবার খেয়ে নিবে একদম কোন প্রকার টেপো করবে না।” কথাটা বলে রাতুল রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
চৈতী ভালো করে রুমটা দেখে নিচ্ছে কোথায় কি আছে না আছে সব। গট গট পায়ের শব্দ শুনতেই চৈতী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে এসে ভালো করে ওয়াশরুম টা দেখতে লাগলো। চৈতীর যা দেখার দেখে নিয়েছে। চৈতী দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বের হতে দেখলো রাতুল ওর জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে।
চৈতী নিজেকে যথাসম্ভব ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করলো। বিপদে সব থেকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। আর ও এইটুকু বুঝে গেছে ওর সাথে সহজে পেরে উঠবে না তার শরীর আসলেই দুর্বল। এখন তাকে খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। সে ধীরে পায়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। রাতুল চৈতীর দিকে খাবারের প্লেট টা এগিয়ে দিলো। চৈতী খাবারের প্লেট টা হাতে নিয়ে ভাবছে কিছু?
রাতুল চৈতীর দিকে তাকিয়ে বললো,, সমস্যা কি খাচ্ছো না কেন?
–” এই খাবার টা যে আমার জন্য নিরাপদ সেইটা কি করে বুঝবো। এই খাবার টা আগে আপনি খেয়ে দেখান। ”
রাতুল চৈতীকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। এইটুকু সময়ে এতোটা চেঞ্জ এইটা কি করে সম্ভব? রাতুল চৈতীর খাবার থেকে একটু খাবার নিয়ে তা মুখে দিলো।
রাতুলকে খাবার খেতে দেখে সে অনেকটা নিশ্চিত হলো যে খাবারে কোন প্রকার কিছু মেশানো নেই। সেও খাবার টা মুখে তুলে নিয়ে খেতে লাগলো। রাতুলও খাওয়ার শুরু করলো।
খাওয়া শেষ হতে রাতুল প্লেট দুটো রেখে আসলো। প্লেট দুটো রেখে রুমে আসতেই চৈতী বলে উঠলো আমার ড্রেস কখন আসবে? এইসব ড্রেস পড়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে।
রাতুল ঠোঁট কামড়িয়ে হেসে বললো,, এইসব ড্রেসে তোমায় খুব হর্নি লাগছে। ছোঁয়ার অনুমতি থাকলে এখনিই ছোঁয়ে দিতাম।
চৈতী রাগান্বিত কন্ঠে বললো,, আপনি কি ভোট চুরি করে এমপি হয়েছেন? আসলে আমার সন্দেহ হচ্ছে কোন মানুষ যেচে পড়ে কোন চরিত্রহীন লম্পটকে এমপি বানাবে না। আদোও কি আপনি দেশের জন্য কোন কাজ করেন না কি মেয়ে নিয়ে ই পড়ে থাকেন?
–”তোমার মনে হচ্ছে না তুমি অতিরিক্ত সাহস দেখাচ্ছো? আমার সাথে এইভাবে কথার বলার সাহস কারও নেই। এই প্রথম একটা পুঁচকে মেয়ে আমার সাথে এইভাবে কথা বলেছে তাও আমার চোখে চোখ রেখে?”
–বাকি কেউ দেখাই নি কারন তারা চৈতী নয়। আর আমি চৈতী চৈত্র মাসের মতো তেজ তো থাকবেই।
রাতুল ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে বললো,,, এই জন্য ই তো তোমাতে মেতে উঠেছে আমার মন। তোমার তেজে ঝলসে যাওয়ার জন্য। তেজী পাখিকে পোষ মানতে হেব্বি মজা। শুনো মেয়ে আমি একটু বের হবো কাজে রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করো না রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তোমার জন্য ক্ষতিকর এসিড রূপ ধারন করবো আমি কথাটা বলে আলমারি থেকে তার পায়জামা-পাঞ্জাবি নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলো।
কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩
–” ড্রেস চ্যাঞ্জ করে এসে দেখলো চৈতী গভীর চিন্তায় মগ্ন। ” সে একটু কেশে চৈতী ধ্যান ফিরিয়ে বললো,, আমার আসতে দেরি হবে কোন প্রকার চালাকি করবে না আই রিপিট। আর টাইমলি খেয়ে নিয়,, আর তোমার ড্রেস বিকালে আসবে টাটা বলে চলে গেলো।”
অদূরে তাকিয়ে রইলো চৈতী ও যাওয়া পর সে একটু হাসলো। তার পরিকল্পনার জন্য পারফেক্ট।