খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৫

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৫
আনিকা আয়াত

চাঁদনী রাতের ফকফকে আলো উপচে পড়ছে বিশাল এক নদীর ঝলে। ঢেউয়ের সঙ্গে দুলতে দুলতে সেই ক্ষুদ্র আলো টি দূরে কোথাও অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তবুও এক কিঞ্চিৎ ও চাঁদের ছায়া সরছে না। রাতের এই নিস্তব্ধ পরিবেশে দুটি নর-নারীর ভারী নিশ্বাস ছাড়া অন্যকিছুর শব্দ নেই। প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস এর সাথে কতশত দুঃখ জেনো লুকিয়ে আছে। ঠান্ডা শীতল হাড় কাঁপুনি শীতের রাতে পাকা পিচঢালা রাস্তায় হাঁটু তে থুতনি ঠেকিয়ে বিষণ্ণ চোখে বসে আছে চৈতী। তার নজর দুরের ওই টলটলে নদীর পানিতে। জোয়ারের পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নিজেকে খুঁজতে ব্যস্ত সে। ওদের মতো তার ভেতরেও কষ্ট লুকিয়ে আছে।

রাত এখন গভীর। কিন্তু মন বিরস থাকায় এই খোলা জায়গায় সময় কাটাতে ভালো লাগছে। চারপাশের কৃত্রিম সোডিয়াম আলোয় মেয়েটার ফর্সা মুখশ্রী চকচক করছে। গায়ের জ্যাকেটের ভেতর সে একদম মিনি প্যাকেট! অর্পণ এতক্ষণ বুকে হাত ভাঁজ করে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকেই দেখছিল। পলক যেনো পড়তে আজ ভুলে গেছে। সে বাইক থেকে নেমে তার পাশে বসলো। একপলক চৈতীর মুখ পানে তাকিয়ে নজর ঘুরালো নদীর ধারে। এখানে চৈতীকে নিয়ে আসতে তার বেগ পোহাতে হয়নি। হোস্টেলে ওর প্রশ্নে চৈতী উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নেয়। তৎক্ষনাৎ অর্পণের চড়াগলা শুনে হকচকিয়ে উঠে। লোকটা এই তো নম্র স্বরে কথা বলছিল! মুহুর্তেই কি হয়ে গেলো? থতমত খেয়ে চৈতী পা থামিয়ে দিতেই অর্পণ বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ এদিকে আয় কথা আছে। ”
চৈতী ঠাই দাঁড়িয়ে রয়। অনুভব করে তার পা টলছে। জ্বরের তাপে দেহ শিরশির করছে। জ্বর কি তবে বাড়লো? কে জানে? সে অস্ফুট স্বরে বলল,
“ আমার গায়ে জ্বর! রুমে যাবো। ”
কথা শেষ হতে দেরী কিন্তু, তাহিয়ার গা শক্ত করে ধরে এলিয়ে পড়তে দেরী হলো না। নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে খিচুনি দেওয়ার মতো হলো! এই টুকু সময়েই মেয়েটা এতটা দূর্বল হয়েছে তা জেনো ভাবনার বাইরে ছিলো। তাহিয়া একা সামলাতে পারছে না। তৎক্ষনাৎ হুঁশ ফিরলো অর্পণের। দৌঁড়ে চৈতীকে জাপ্টে ধরে তাড়া দিলো,
“ পানি নিয়ে আসো কুইক। ”

তৎক্ষনাৎ তাহিয়া অসহায় নয়নে তাকিয়ে হোস্টেল গেলো পানি আনতে। অর্পণ মেয়েটাকে আগলে নিয়ে ধীরপায়ে বাইকের কাছে নিয়ে যায়। দারোয়ান মামার সাহায্যে বসালো উপরে। মেয়েটার দুই হাত টেনে তার গলা জড়িয়ে রাখলো যাতে পড়তে না পারে। চিন্তায় মাথা খারাপ হচ্ছে ওর। মেয়েটার কি বড় কোনো সমস্যা হলো? একটু আগেই সে জেনেছে চৈতীর জ্বর। আসার সময় মনে করে, মেডিসিন এনেছে।
তাহিয়া জগ ভর্তী পানি নিয়ে ফিরলেই অর্পণ ওর ঠান্ডা মুখে হালকা চাপ্পড় মে/রে ডাকলো,
“ এ্যাই মেয়ে! চোখ খুলো। কথা বলছো না কেনো? একদম ফা-লতু অভিনয় করবে না। চড়িয়ে কান গরম করে দিবো।”

চৈতীর টুঁ-শব্দও নেই। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে অর্পণের বুকে।অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে বলে, অর্পণ দেরী করলো না। পকেট থেকে হাই পাওয়ারের জ্বরের ট্যাবলেট টা মুখে পুড়ে দিলো। গ্লাসের পানি মুখে ঠেকিয়ে বলল,
“ খাও! এই মুহুর্তে সুস্থ হয়ে যাবে। ”
চৈতী মৃদু নড়ে উঠে মুখ কুঁচকে ফেলে। ওষুধের তিক্ত এবং মুখের তিক্তকার উগড়ে আসলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি গলগল করে বমি করবে। ছেলেটা হয়তো বুঝে ফেললো। তৎক্ষনাৎ মুখ শক্ত করে চেপে ধরে অর্পণ। হিসহিসিয়ে বলল,

“ ফেলবি না! গিলে খা বলছি। গিল। ”
বেচারী নিভু নিভু চোখে অসহায় নয়নে তাকায়। হাত ছাড়িয়ে নিতেই অর্পণ ওর পিঠ জড়িয়ে ধরে। তার শক্ত,কঠিন চোখ দিয়ে শাসানো উপেক্ষা করতে পারলো না। উপায় না পেয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেললো ওষুধ। অর্পণ তাহিয়া কে গ্লাস দিয়ে থমথমে স্বরে বলল,
“ চৈতী একটু আমার সঙ্গে থাকুক। আমি নিরাপদে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিবো।”
“ অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবেন? মাথা কি খারাপ হয়েছে? ভুলভাল কোনো অঘটন ঘটলে আপনি দ্বায় নিবেন?”

অর্পণ চৈতীর মাথায় তার জ্যাকেটের টুপি বেঁধে দিলো। যাতে কানে বাতাস লাগতে না পারে। তিরতির করা ঠোঁটের দিকে চেয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। ঠান্ডা চিকন নাকে আলতো ছুঁয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
“ অঘটন নামক শব্দ-ই ওর লাইফে ভুলেও দ্বিতীয় আসতে দিবো না। তুমি চুপচাপ রুমে যাও।”
তাহিয়া যেতে পারছে না মেয়েটাকে একা রেখে। সেদিন একা ছেড়ে দূর্ঘটনা থেকে বাঁচতে বাঁচতে ফিরেছে। আজও একা ছাড়বে? তার মন স্বায় দিলো না অসুস্থ দূর্বল মেয়েটাকে একা ছাড়তে। ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
“ ও অসুস্থ ভাইয়া। প্লিজ কথা তো শুনুন।”

অর্পণ কখনও কারো কথা শুনেছে? বোকা তাহিয়া ভাবলো কীভাবে তার কথা শুনবে? সে সম্পূর্ণ বল ছেড়ে দেওয়া ভারী দেহের চৈতীকে ধীরে ধীরে বাইকে বসালো। মেয়েটা জেনো কখনও ব্যথা না পায় সেজন্য সামনে উল্টো করে বসালো। সে পিছনে বসতেই মুখোমুখি হলো মেয়েটা। অর্পণ বাঁকা হাঁসে । জ্যাকেট দখল করার পর আজ বাইকেও দখল নিচ্ছে? এতবড় স্পর্ধা মেয়েটার? যেখানে কোনো মেয়ে ভুলেও এই বাইক স্পর্শ করতে পারেনা সেখানে চৈতী বসে পড়লো। অবশ্য তার মর্জি অনুযায়ী-ই তো বসতেই পারে। অর্পণ চাইলে সব অসম্ভব সম্ভব হয়। চৈতীর হাত দুটো টেনে নিজের বুকে গলিয়ে পিঠে রাখলো। চৈতীর দূর্বল হাতে পাঞ্জাবী পরিহিতা যুবকটির পিঠ জড়িয়ে ধরে আছে। সে চোখ খুলতে চাইছে কিন্তু খুলতে পারছে না। শুধু আদুরে বিড়াল ছানার মতো গুটিশুটি মেরে অর্পণের বুকে মাথা রেখে চুপটি করে রইলো। ছেলেটি হাঁসে। এক হাতে মেয়েটাকে আগলে রেখে মাথা কিঞ্চিৎ নিচু করে, চৈতীর মাথায় থুতনি ঠেকালো। বামহাতে বাইক স্টার্ট দিতেই তাহিয়া বলল,

“ চৈতী পড়ে যাবে তো!”
ওর সঙ্গে থাকলে কখনও পড়বে না। অর্পণ তার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে একদম স্লো গতিতে চলতে শুরু করে। রাতের এই মিষ্টি সময় আর চৈতী তার বুকে। এমন সুখকর সময় তার জীবনে দুটো কণও আসেনি। এবং ছিলো না। খুবই অল্প গতিতে বাইক চলছে! মৃদু ঠান্ডায় কেঁপে ওঠে চৈতী খামচে ধরে ওর পাঞ্জাবী।
অর্পণ কিসের টানে আজকাল এত উন্মাদ হচ্ছে? বন্ধুদের লুকিয়ে মেয়েদের হোস্টেলে গিয়ে তুলে আনছে একটি ভীতু রমনীকে? কেনো এই অসভ্য চোখ শুধু তাকে খুঁজে। বুকটা খা খা কিসের কারণে করে? উত্তর সে পায়নি। শুধু জানে,এই মেয়ের নিকট আসলেই সব ক্লান্তি, হতাশা দূরে পালিয়ে যায়। হৃদয়ে বয়ে চলা ঝড় তৎক্ষনাৎ শান্ত হয়ে যায়। পাঁচ মিনিট ব্যয় করে ওরা এসে পৌঁছাল নদীর ধারে। রাস্তার কিনারায় চৈতীকে আস্তে আস্তে বসিয়ে দিল। চৈতীর জ্বর খানিকটা কমে আসছে। তীব্র ডোজ এর মেডিসিনে মাথাটাও হালকা হয়েছে। সে নদীর পানে চোখ মেলে হাঁটু ভাজ করে থুতনি ঠেকালো ।

“ দেখি জ্বর কমেছে কিনা?”
বলেই অর্পণ তার পাশে ধপ করে বসলো। এতক্ষণের নিরবতা কাটিয়ে কথা বলার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। চৈতীর কপাল, গাল এমনকি ঝুঁকের বসে আকস্মিক গলায়ও স্পর্শ করে ফেললো। ঠান্ডা কনকনে হাতের ছোঁয়া গরম গলায় পেতেই চৈতী কেঁপে ওঠে। অর্পণের হাতের উপর হাত রেখে ছিটকে দূরে সরে গেলো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
“ কি করছেন?”
কপাল কুঁচকায় অর্পণ,
“ কি করলাম? ”
চৈতী চুপ করে রয়। কিঞ্চিৎ দূরত্ব বজায় রেখে মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
“ স্পর্শ করবেন না।”
“ এতক্ষণ যে জংলীর মতো খাবলে জড়িয়ে ধরে আসলে তার বেলায়?”

অর্পণ কথাটি বলেই নিজের কাঁধ দিয়ে মেয়েটার কাঁধ জোরে ধাক্কা দিলো। বেচারী একদিকে জড়তা অপরদিকে টাল সামলাতে না পেরে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যেতে নেয়। নিজেকে বাঁচাতে হাত উঁচু করে ছেলেটাকে ধরতে যাওয়ার মাঝেই, বাঁকা হেঁসে অর্পণ এক ঝটকায় হেঁচকা টানে নিয়ে আসলো নিজের নিকটে। মেয়েটা তৎক্ষনাৎ বলল,
“ আমার সাথেই আপনি এমন করেন কেনো?”
অর্পণ উত্তর দেওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালো না। পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে যেনো ছোট্ট টেক্সট দিলো। গাল ফুলিয়ে থাকা চৈতীর দিকে এক পলক তাকিয়ে ওই জ্যাকেট সমেত এক টানে নিয়ে বসালো নিজের কোলে। চৈতী হকচকিয়ে উঠে। ধস্তাধস্তি করে বলল,

“ কি–কি করতে চাইছেন? অসভ্যতা করছেন কেনো? আমি কিন্তু চেঁচাবো!”
মুখে এ কথা বললেও তার কেনো জানি ওইদিনের পর থেকে অর্পণের প্রতি পূর্ণ ভরসা জন্মেছে হৃদয়ে। কি হয়েছে কে জানে? এলোমেলো, অগোছালো মানুষটার সান্নিধ্যে থাকলে খারাপ লাগে না। মনে হয়, যতই খারাপ লোক হোক বাজে ভাবে অসভ্যতা করবে না। অর্পণের ঘোলা নয়ন, দাঁড়ি গোঁফের মাঝে পোড়ে যাওয়া ঠোঁট এবং কাটা ভ্রু সবই সুক্ষ্ম নজরে খেয়াল করেছে সে। ভার্সিটিতে যতবার দেখা হয়েছে, সে এটুকু নিশ্চিত অর্পণ এতটাও বাজে নয়।
সে গাঁইগুঁই করে মুচড়া মুচড়ি করলো। অর্পণ আরোও শক্ত করে পেছন থেকে জ্যাকেট সহ জড়িয়ে ধরলো। ওর মনে হলো, কোনো একটা প্যাকেট কে জড়িয়ে ধরেছে। মেয়েটার দেহ তো দূর কাপড়ের টিকি- টাও স্পর্শর প্রশ্নই এলো না ।

চৈতীর এবার গরম লাগা শুরু করে। চোখ-মুখ লাল হয়ে ভেতরে আ/গুন ধরছে। ভেতর টা অস্থিরতায় হাঁসফাঁস। সে হালকা ঢোক গিলে বলল,
“ আমার কেমন জেনো লাগছে। আপনি প্লিজ দূরে সরে বসুন।”
বলেই অর্পণের হাঁটুতে বসা চৈতী উঠতে নেয়। তৎক্ষনাৎ জাপ্টে তাকে থামিয়ে দিলো। মেয়েটার নরম কোমল দুহাতের আঙুলে নিজের আঙুল গুলো গুঁজে শক্ত করে ধরল। এরপর চৈতীর পড়া জ্যাকেটের ভেতরে ঢুকিয়ে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“ কেমন কেমন লাগে? ”
চৈতীর নিশ্বাস ক্রমশ ঘন হচ্ছে। সে ঘনঘন শ্বাস ফেলে বলল,
“ ওমন ওমন।”
হাঁসলো অর্পণ। মেয়েটার চুলের সেই সুঘ্রাণে এই নির্জন রাতে তার মাতাল মাতাল লাগছে। সে ঘোরের মাঝেই মুখ কাঁধ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলো ঘাড়ের নিকট। নাক ডুবিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে ঘোর মাখা কণ্ঠে বলল,
“ তুমি আমাকে বড্ড পোড়াচ্ছ চুমকি!”
ছেলেটার কণ্ঠে চৈতী চমকে উঠে। ঘাড়ের নিকট ওর খুঁচা খুঁচা দাঁড়ির সংঘর্ষে সমস্ত গা শিউরে উঠছে। নড়াচড়া করতেই সে স্পর্শ আরোও গভীর থেকে গভীর হওয়া শুরু করে। চৈতী থমকে যায়! হাত বের করার জন্য চেষ্টা করলেও অনুভব করে তার হাত দুটি আবদ্ধ এই ভয়ংকর যুবকের হাতে। ভয়ে কাটা দেয় তার দেহ। মাথা এঁকেবেঁকে দূরে নেওয়ার চেষ্টায় রুদ্ধশ্বাস স্বরে বলল,

“ অর্পণ..! কি করছেন!”
অর্পণ আসলেই কি করছে? মেয়েটা কোন নিষিদ্ধ জালে ফাঁসিয়ে দিলো তাকে? সে হুঁশে ফিরতে পারছে না কেনো? নাক মুখ ঘঁষে হঠাৎ আরেকটা সর্বনাশ কান্ড ঘটিয়ে ফেললো। চৈতী পরপর দুইবার গাঢ় এবং ভেজা স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে।তার সম্পূর্ণ লোমকূপ শিরশির করে উঠে। এবার আর থেমে রয় না। ধস্তাধস্তা করে কেঁদে উঠে মেয়েটা। অর্পণ কপাল কুঁচকে তাকায়। মাথা উঁঠিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“ কান্না থামাও মেয়ে। ”
“ আপনি খুব খারাপ অর্পণ! প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।”
বলেই চৈতী কান্নামিশ্রিত চোখে মাথা পেছনে ঠেলেই অর্পণের বুকে ক্রমশ এলোপাতাড়ি ধাক্কা দিলো। ছেলেটা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ মেয়েটার কান্ডে নিঃশব্দে হাঁসলো। চৈতী রাগের বশিভূত হয়ে চিৎকার করে বলল,

“ হাত ছাড়ছেন না কেনো?”
বলেই প্রচন্ড স্পিডে মাথা নিয়ে বারি মা/রলো ওর বুকে। কিন্তু এবার ভুলবশত বুকে না লেগে অর্পণের ঠোঁটে লেগে যায়। তৎক্ষনাৎ ছেলেটা ব্যথাতুর শব্দ করে। চৈতীর আক্রমণ করাও যেনো চুপসো গেলো। চোখ বড় বড় করে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
“ কি হলো? কোথায় ব্যথা পেয়েছেন।”
অর্পণ চোখ খুললেও হাত সেই পকেট থেকে বের করলো না। যদি মেয়েটা পালিয়ে যায় তখন? সে বাঁকা হেঁসে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
“ বললেই কি হবে? তুমি কি সেখানে আদর করে দেবে? ”
চৈতীর কান ঝা ঝা করে উঠে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ বললে বলুন না বললে নাই। অসভ্য! ”
“ আমার বউয়ের সম্পত্তিতে তুমি আঘাত করেছ মেয়ে। এবার চুমু খেয়ে ব্যথা সারিয়ে দিতে হবে।”
বলেই ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে গেলো। চৈতী হতবাক হয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ ঘাড় সামনে ঘুরিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“ ফা*লতু। নিশ্চয়ই মিথ্যে ঢং করেছেন।”
অর্পণ গাল ফুলায়। ঠোঁট উল্টে বিড়বিড় করে,
“ গোলাপি ঠোঁট জোড় মাথা দিয়ে বারি মেয়ে ছিঁড়ে ফেলেছ। তবুও বলছো, আমি ফা*লতু! অসভ্য! তুমি নিজেই না অন্যের ঠোঁটে আঘাত হানতে চাও।”
চৈতী চোখ খিঁচে নেয়। তড়িঘড়ি করে বলল,
“ চুপ। ”

অর্পণ কথা বাড়ালো না। মেয়েটার মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘড়ি দেখে নিলো। এবার ফিরতে হবে। সে যে কারণে এসেছে, ওটাই তো বলা হয়নি। ঝটপট গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলল,
“ কাল তৃধার বিয়ে! উপস্থিত দেখতে চাই। জ্বর ইন শা আল্লাহ রাতেই চলে যাবে।”
চৈতী শক্ত গলায় বলল,
“ বারবার বলেছি যাবো না। তবুও জোরজবরদস্তি করছেন কেনো?”
“ যেতেই হবে। কোনো বারণ শুনবো না। ”
“ যাবো না! না! না! পারলে নিয়ে দেখান।”
বলেই অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। অর্পণ কপাল কুঁচকে বলল,
“ হোস্টেলে ফিরার ইচ্ছে আছে?”
তৎক্ষনাৎ মেয়েটার মুখ চুপসে যায়। এ ছেলেকে দিয়ে তার সন্দেহ নেই। যদি বলে তাহলে করেই ছাড়বে। সে করুণ চোখো তাকাতেই অর্পণ বলল,

“ তাহলে চুপচাপ দুপুরে রেডি হয়ে থাকবে। আমি নিতে আসবো। যদি ভুলেও একথার হেরফের হয়, তাহলে কি করবো বুঝতেই পারছো। আজ ট্রেইলার দেখালাম আগামীকাল এমন জায়গায় লুকাবো তোমার আত্নাও খুঁজে পাবে না। জাস্ট গু/ম করে ফেলবো।”
দরদর করে ঘামতে শুরু করে মেয়েটা। হালকা ঢোক গিলে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। আমতা আমতা করে বলল,
“ দেখুন…আমার ওসব ভালো লাগে না।”
“ তোমার না লাগলেও আমার লাগে। চুপচাপ রেডি হয়ে থাকবে। নইলে, আজ যেতে দিবো না।”
বেচারী অনেক বার বারণ করলেও অর্পণ শুনলো না। মেয়েটাকে যেতেও দিলো না। শেষে উপায় না পেয়ে চৈতী রাজি হলো। অর্পণ শেষে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“ বেশী চালাকি করলে চড়িয়ে গাল লাল করে ফেলবো। মনে থাকবে?”
“ থাকবে।” চৈতীর কণ্ঠে ভয়।

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৪

“ কেমন আছেন মিস? এই মধ্যরাতে কাজল কালো গাঢ় চোখের ঘায়েল করা রমণীকে ভীষণ পড়ে পড়ছে। এই হতভাগা কে আপনার কি মনে পড়েনা স্নিগ্ধা রানী? ”
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে মেসেজটি একনাগাড়ে দুইবার পড়ে স্নিগ্ধা চমকে উঠে।
চোখের ঘুম মুহূর্তেই সব উবে গেলো।

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৬