গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৪৪

গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৪৪
Raiha Zubair Ripti

আজ রজনী দের আমেরিকা চলে যাবার দিন। সকাল থেকে বেজার মন খারাপ রুয়াতের। বোন কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সত্যি বলতে রজনীর ও ইচ্ছে করছে না যেতে। কিন্তু যেতে তো হবেই। রুয়াত কে ছাড়িয়ে ল্যাগেজ টা গুছিয়ে নিজেও রেডি হয়ে বলল-

-“ নিজের খেয়াল রাখবি রুয়াত। ঠিকমতো খাবার খাবি। আমি রোজ ফোন দিব।
রুয়াত এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। রজনী রুয়াতের চোখের পানি মুছিয়ে কপালে চুমু খেলো। নিচ থেকে সাদমান এর কন্ঠ পেতেই রুয়াতের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। এয়ারপোর্টে রুয়াত কে নিয়ে যাবে না শাফায়াত। গাড়িতে উঠলেই রুয়াত এখন বমি করে অবস্থা গুরুতর করে ফেলে। এয়ারপোর্টে শাফায়াত যাচ্ছে শুধু। সাদমান দের ঠিক টাইমে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে চলে আসলো। রজনী প্লেনে বসে শেষ বারের মতো নিজের জন্মভূমি কে পাখির চোখে দেখে নিলো। তারপর লম্বা শ্বাস টেনে সাদমান এর কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বুঝে ফেললো।
শাফায়াত বাসায় এসে দেখে রুয়াত মন খারাপ করে শুয়ে আছে। শাফায়াত রুয়াতের পাশে বসে রুয়াতের মাথায় হাত বুলালো। রুয়াত শাফায়াতের কোলে মাথা রেখে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে শাফু। আপা চলে গেলো তো।
-“ কষ্ট পেয়ো না রুয়াত। রজনীর ভালোর জন্যই তো যাচ্ছে। আর রোজ ফোনে কথা বলে নিবে ভালো লাগবে তাহলে।
রোহান তার মামু কে নিয়ে নীতি দের বাসায় এসে দেখে নীতি শাড়ি পড়া তো দূরে থাক সে টি-শার্ট আর প্লাজু পড়ে আছে। রোহানের ইচ্ছে করলো কয়েক টা চ’ড় বসিয়ে দিতে গালে। প্লাবন বিয়ে টা ভেঙে দিয়েছে এটা জেনে গেছে পুরো ফ্যামেলি। এও জানে এটা রোহানেরই কাজ। রোহান তার মামার দিকে তাকালো। এসে বিয়ের কথা না বলে তারা তাদের ছোট বেলার সুখ দুঃখের কথা বলছে! রোহান বিরক্তের সহিত বলল-

-“ সুখ দুঃখের কথা তো পরেও বলতে পারবে মামু। বিয়ের কথা বলতে আসছো। বিয়ে নিয়ে আগাও।
রোহানের মামা বিয়ের দিকে আগালো। বিয়ের ডেট ফিক্সড করলো সামনের মাসে। সেটা শুনে রোহানের কপালে দু ভাজ পড়লো। পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে আসতে বললো। মিনিট ত্রিশের ভেতর সাদা পাঞ্জাবি পড়া এক কাজি এসে হাজির। সবাই হতবাক। নেহাল বলে উঠল-
-“ কাজি কেনো এখানে? এই কাজি সাহেব ভুল বাড়িতে ভুলে ঢুকে পড়েছেন নাকি?
রোহান গম্ভীর মুখে বলে উঠল-

-“ না ঠিক বাড়িতে সঠিক বাড়িতেই তিনি এন্ট্রি নিয়েছে। উনাকে আমিই আসতে বলছি।
-“ কিন্তু কেনো?
-“ কাজি ছাড়া বিয়ে হয় নাকি?
-“ কার বিয়ে আজ?
-“ তোর বোন আর আমার।
নেহাল আশ্চর্য হয়ে বলল-
-“ হোয়াট!
-“ হ্যাঁ। আন্টি আপনার মেয়েকে একটা শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে আসুন। না সাজালেও চলবে।
সাইফুল ইসলাম এবার রেগে গেলেন। বললেন-
-“ তোর কি মাথা ঠিক আছে? বলছি তো তোর সাথে মেয়ে দিব। তাহলে এমন করছিস কেনো? আমার একটা মাত্র মেয়ে তাকে আমি ধুমধাম করে বিয়ে দিব।

-“ এতে কি লাভ? শুধু শুধু টাকা খরচ। এরচেয়ে বরং সেই টাকাগুলো দিয়ে আপনার মেয়ের আর আমার হানিমুনে খরচ কইরেন। আপাতত বিয়েতে বাগড়া দিয়েন না। আর আন্টি যান না একটু।
নীতির মা নীতি কে নিয়ে রুমে আসলো। নীতি এতক্ষণ অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে রেখেছিল। রুমে এসেই মা’কে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেলল। বলল-
-“ মা আমার হাসি থামছে না। এই ছেলে কি শুরু করেছে এটা!
নীতির মা আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে নীতি কে বলল পড়ে নিতে। নীতি শাড়ি টা পড়লে নীতির মা নীতি কে নিয়ে বাহিরে আসে। রোহান নীতির পাশে বসে গিয়ে। নীতি আড়চোখে একবার তাকায়। রোহান সেটা লক্ষ্য করে কাজিকে বলল-

-“ বিয়ে পড়ানো শুরু করেন কাজি সাহেব।
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। নীতি কে কবুল বলতে বললে নীতি বাপ,ভাইয়ের দিকে তাকায়।নীতির ভাই ইশারায় বলে কবুল বলে দিতে। কিন্তু সাইফুল ইসলামের চোখ মুখ শক্ত থাকে। নীতি কবুল বলে দেয়। রোহান কে বলতে বললে রোহন বলে দেয় কবুল। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলে রোহান কাজির পাওনা কাজি কে বুঝিয়ে দেয়। তারপর শ্বশুর শাশুড়ি কে সালাম করে। রোহান শক্ত করে নীতির হাত ধরে বলে-

-“ তাহলে এখন আসছি আমরা। নেহাল রে তরে একটু বলতে পারছি না বাসর ঘর টা সাজানোর জন্য বউয়ের ভাই বলে। তোর আব্বা আম্মা সামলাস। তার মেয়ের অযত্ন আমি করবো না। আসছি।
রোহান নীতি কে নিয়ে চলে আসলো নিজের বাসায়। বাসায় একটা খাবারও নেই। রোহান নীতি কে রুমে বসিয়ে ফুড পান্ডায় খাবার অর্ডার দিতে নিলে নীতি বাঁধা দিয়ে বলে-
-“ অর্ডার করতে হবে না খাবার। আমি রাঁধতেছি।

রোহান বারন করলো। বলল- নতুন বউ তুই আমার তোকে দিয়ে প্রথম দিনই রান্না করাবো আমি! নো ওয়ে।
নীতিও কম না। সে রোহানের কথা না শুনে রান্না ঘরে এসে রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিলো। একা হাতে চিকেন,ডিম,ভাত,পোলাও,পায়েস রান্না করলো। রোহান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। নীতি নিশ্চয়ই তারজন্য ই রান্না করাটা এতো ভালোভাবে শিখেছে। কথায় আছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। নীতি কে পাওয়া শ্রেষ্ঠ গিফট আল্লাহর থেকে রোহানের। নীতি খাবার গুলো ডাইনিং টেবিলে সাজালো। তারপর রোহান কে ডেকে বলল-
-“ আসুন..ক্ষুধা পেয়েছে খেয়ে নিন।
রোহান চেয়ার টেনে বসলো। খাবারের প্লেট টেনে খেতে খেতে বলল-

-“ তোর খাবার কই প্লেটে?
-“ আমার ক্ষিধে নাই।
-“ আমার পাশে এসে বস তো।
-“ কেনো?
-“ আহ্ বলছি আসতে আয় না।
নীতি চেয়ার ছেড়ে উঠে রোহানের পাশে বসলো। রোহান পাশে ফিরে প্লেট থেকে ভাতের লোকমা উঠিয়ে নীতির মুখের সামনে ধরে বলল-
-“ হা কর।
নীতি হা করলো না। সেটা দেখে রোহান রাগী কন্ঠে বলল-
-“ হা করতে বলছি তো। কানে যায় নি সেটা?
নীতি হা করলো। রোহান খাইয়ে দিলো নীতি কে। নীতি কে খাইয়ে দেওয়ার সাথে সাথে রোহান নিজেও খেতে লাগলো।

খাওয়া শেষে বাকি খাবার গুলো নীতি ফ্রিজে রেখে এঁটো থালাবাসন ধুয়ে উপর করে রুমে আসলো। দেখলো রোহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। রোহান নীতির আসার শব্দ টের পেয়ে পেছন না ফিরেই বলল-
-“ এখানে আয় তো।
নীতি আঁচল দিয়ে মুখ চেপে রোহানের পাশে দাঁড়ালো। রোহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে নীতি কে কাছে টেনে মুখের সামনে থেকে আঁচল সরিয়ে মুখে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া নীতির চোখ মুখের উপর ছেড়ে দিলো। নীতি কেশে উঠলো। রোহান বাঁকা হাসলো। কপালে গাঢ় চুম্বন একে বলল-

-“ আজ থেকে আমাদের একটা সংসার হবে জানিস তো? যেখানে আমি আর তুই থাকবো। আমাদের ভালোবাসায় পূর্ণ হবে সেই সংসার। আমার রাগ,পাগলামি, ভালোবাসা সব তোকেই তো সামলাতে হবে। তুই ছাড়া আর কে আছে বল তো আমার? গোধূলিতে পাওয়া সেই বিকেলের এক ফোটা রশ্মি তুই। সেই রশ্মি ছাড়া তো আমার ঘর অন্ধকার! একটু না অনেকখানি ভালোবাসি তোকে নীতি। আমার পাশে থাকিস সব সময়। ছেড়ে চলে যাস না। আমার ভাগ্যে কেনো জানি প্রাপ্তির সংখ্যা খুবই কম। তুই প্লিজ থেকে যাস।

গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৪৩

নীতি বরফের মতো থমকে গেলো। আলতো হাতে রোহানের গালে হাত রেখে বলল-
-“ চলে যাবার হলে অনেক আগেই তো চলে যেতাম। এতো বছর অপেক্ষা করতাম না তাহলে। আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকতে চাই।
রোহানের চোখ মুখে হাসির ঝলক। রোহান নীতি কে সোজা পাজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। রুমের লাইট বন্ধ করে দিলো। আজ থেকে শুরু হলো তাদের এক নতুন জীবনের সূচনা।

গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি শেষ পর্ব