চিত্রাঙ্গনা পর্ব ১৮

চিত্রাঙ্গনা পর্ব ১৮
ইশরাত জাহান জেরিন

আকাশ আজ শোকার্ত। আকাশের বুক চিরে নেমেছে অবিরাম অশ্রুধারা। বাতাস ভারী হয়ে আছে এক অবসাদের ঘনঘটায়। প্রকৃতি আজ ক্লান্ত, অবসন্ন। তার নিজস্ব শ্বাসপ্রশ্বাসেও বিরাজ করছে অনুচ্চারিত হাহাকার। বৃষ্টির ফোঁটা পাতার উপর আঘাত হানছে ছন্দময় ধারায়। জলে সিক্ত পাতাগুলি দুলছে, কাঁপছে। একবার বৃষ্টি তাদের স্নান করিয়ে দিচ্ছে, পরক্ষণেই আবার ক্লান্তির ভারে নত হয়ে পড়ছে।

দূরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা গাছটার নিচে আশ্রয় নিয়েছে দুটি শালিক। তাদের পালক জলে জবজবে। ক্ষীণ দেহে বৃষ্টির নির্মম আঘাত সহ্য করেও তারা দাঁড়িয়ে আছে। নির্মোহ দৃষ্টিতে। শুনছে অপেক্ষার প্রহর । বৃষ্টি কি শেষ হবে? তারা কি ফিরতে পারবে চিরচেনা নিরাপত্তার কোণে? হুটহাট আকাশ ফেটে নামছে প্রচণ্ড বজ্রপাত। বিদ্যুতের এক হিংস্র আঁচড়ে মুহূর্তের জন্য সমস্ত অন্ধকার শ্বেতশুভ্র হয়ে উঠছে। হয়ত প্রকৃতির শিরদাঁড়া চিরে গেছে। তার বুকে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তারপর এক লহমায় নেমে আসে আরও গভীর, আরও পিচ্ছিল অন্ধকার। প্রকৃতি তার নিজের আর্তনাদেই বার বার ভেঙে পড়ে। শোকে স্তব্ধ হয়। এভাবেই ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।
নিলুফাদের বাড়ির উঠানে লাশের খাটিয়া পড়ে আছে। বৃষ্টির টিপটিপ ফোঁটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে কাফনে মোড়ানো নিথর দেহ। অথচ মাথার ওপর ছাতা ধরার মতো কেউ নেই। জীবনের অন্তিম যাত্রায় কেউ তার মুখে শেষবারের মতো একটা আচ্ছাদন দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করছে না। মৃত্যুর পরও মানুষ মানুষের অভাব ঠিকই টের পায়। কিন্তু তখন সে উপলব্ধি অর্থহীন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বারান্দায় পড়ে আছেন নিলুফার মা। শোকের ভারে তিনি অসহায়।ছটফট করছেন। বুক ফাটিয়ে কাঁদছেন। অথচ প্রতিবেশীরা তাকে জোর করে আটকে রেখেছেন। চিৎকার করতে দিচ্ছেন না। যেন মায়ের শোকও একটা অনৈতিক অপরাধ! অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ জানাজা পড়ানো হলো। কিন্তু তাতেও ছিল অনীহা,বিতর্ক। আত্মহত্যার লাশ! পাড়া-প্রতিবেশীরা কেউ চায়নি তার জানাজা হোক, কেউ চায়নি তার বিদায়ের প্রার্থনায় শামিল হতে।আর নিলুফার মা? তিনি বারবার ফেটে পড়ছেন। তার কান্না দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তার মেয়ে আত্মহ*ত্যা করবে? অসম্ভব! তার নিলু এমন মেয়ে না। কেউ তাকে মে*রে ফেলেছে! তাকে হ*ত্যা করা হয়েছে! কিন্তু তার এই দাবির জবাব নেই কারও কাছে। প্রতিধ্বনি নেই কারও কণ্ঠে। বাড়ির চারপাশ জুড়ে নোংরা ফিসফাস। লোকজন জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি মেরে দেখছে কাফনের সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটা। আর ছুঁড়ে দিচ্ছে বিষাক্ত কথার বিষফোঁড়া।

“দেখো কার সঙ্গে রাত কাটাইয়া আইছে। পলাইয়া গিয়েছিল তো! পোলা নিশ্চয়ই খাইয়া ছাইড়া দিছে? তাই তো দড়িতে ঝুলছে!” মৃত্যুর পরও রেহাই নেই নিলুফার। সমাজ তার শবদেহকেও শান্তি দিচ্ছে না।
পুলিশ এসেছিল। খুঁটিয়ে দেখে গেছে। লাশের চারপাশে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। তারপর নির্বিকারভাবে রায় দিয়ে গেছে আত্মহত্যা।
“আমরা তদন্ত করব, কারণ জানব।” বলে চলে গেছে। কিন্তু নিলুফার মা তাদের কিছুই বোঝাতে পারেননি। তার আকুল আবেদন, তার দুচোখ ভরা বিশ্বাস, তার মেয়ের নির্দোষিতা সবই বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
আচ্ছা, শোকের রঙ কেন কালো? শোকের রঙ তো সাদা হওয়া উচিত ছিল। কালো রঙ দেখে কি মানুষ কাঁদে? কালো কি মানুষের হৃদয়ে হাহাকার ছড়ায়? না তো! অথচ দেখো, এই সাদা কাপড় কেমন কাঁদাচ্ছে! এক মাকে, এক পরিবারকে, একটা হারিয়ে যাওয়া জীবনকে। মা কেঁদে কেঁদে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে, তার মেয়ের শরীরে মোড়ানো সাদা কাপড়টিকে দেখে। সাদা মানে কি আসলেই পবিত্রতা? নাকি নির্বাক নিষ্ঠুরতা?

প্রভাতের নির্মল আলোয়। চিত্রা স্নান সেরে ওযু করে, নামাজ আদায় করল। ফারাজের ফেলে রাখা কাপড়গুলো একে একে তুলে বালতিতে রাখল। এই বাড়িতে ওয়াশিং মেশিন নেই। তাই কাপড়গুলো হাতে ধুতে হবে। কাপড় ধোয়ার পাউডার দিয়ে সেগুলো ভিজিয়ে রেখে, চিত্রা আয়নার সামনে দাঁড়ায়। তার পরিধানে খয়েরি রঙের জামদানি শাড়ি। ভেজা কেশে গামছা পেঁচানো। সাধারণত সে অলঙ্কারবিহীন থাকে তবে বিয়ের পর হাতে গলায়,নাকে এমনকি পায়ে নুপুরে পড়ছে। সবই স্বর্ণের। চিত্রার চোখের নিচে কাজল দিতে ইচ্ছা হলেও দ্বিধায় তা পরিহার করল। তার উজ্জ্বল ত্বকে খয়েরি রঙের শাড়িটি সুনিপুণভাবে মানিয়েছে।

গামছা খুলে কেশ ঝাড়ল চিত্রা। বিছানার পার্শ্বস্থ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। ফারাজ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কোমর পর্যন্ত পাতলা কম্বলে আবৃত। চিত্রা জানালার কাছে গিয়ে গুনগুন করে কি একটা গাওয়া ধরল। হুট করে পেছন থেকে কারো জড়িয়ে ধরা অনুভব করল। চোখ বুঝে নিঃশ্বাস নিলো সে। মৃদু এলাচের গন্ধটা নাকে ভাসছে। চিত্রার এখন অনুভব করে ফারাজ বোধ অনেক দূরে চলে গেলেও এই গন্ধটার অযুহাতে চিত্রা তাকে খুঁজে বের করতে পারবে। কিন্তু কেনই বা খুঁজবে চিত্রা? স্বামী বলে? অভিভাবক বলে? হয়ত তাই। হিসেব করলে দেখা যাবে আপাতত ফারাজ এলাহী ব্যাতিত তার কেউ নেই। তার সবটা জুড়ে তো এখন ফারাজ এলাহীই থাকার কথা। লোকটা কম তো ভালোবাসে না। আর কত? সেও তো স্বামী হিসেবে স্ত্রীর থেকে অধিকার পাওনা। কারো পাওনা কাঁধে নিয়ে বাঁচা এত মুশকিল কেন? ফারাজ চিত্রার ভেজা চুল সরিয়ে দিয়ে পিঠে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। চিত্রার কেমন একটা অনুভব হয়। এই অনুভূতির নাম কি? স্বামীর স্পর্শে কি সমস্ত নারীর মনে এমন এক অবর্ণনীয় শিহরণ জাগে? যাকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না?

” আমায় কতটুকু ভালোবাসেন এলাহি সাহেব?”চিত্রা গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন করল।
ফারাজ তার প্রিয়তমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে, দু’চোখের পাতায় ভালোবাসার অনন্ত পরশ ছুঁইয়ে বলল,
” যতটুকু ভালোবাসলে তুমি হিসাব করতে পারবে না। ভালোবাসার অঙ্কে গড়মিল করবে তারচেয়েও অধিক। তবে প্রিয়তমা ভালোবাসা যে পরিমাপ করা যায় না। পরিমাপ করে ভালোবাসে কিপটেরা। আমি তোমায় মেপে ভালোবাসি নি। আমার ভালোবাসার কোনো মাপ নেই, কোনো মাত্রা নেই। তোমার জন্য জমানো এই ভালোবাসা অসীম।”
” তবে ধরুন এত ভালোবাসার পরেও যদি আপনাকে আমি ভুলে যাই?”
ফারাজ চিত্রাকে শক্ত করে বুকের পাঁজরে জড়িয়ে নেয়। প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে এক অন্য রকম শান্তি নিহিত। চিত্রা নড়চড় করে না। মিশে যায় ফারাজের বুকের গভীরে। কি হয়েছে আজ তার সে নিজেও জানে না। সোহাগ সব ভুলে সুখে থাকলে সে কেন পারবে না? কই সোহাগের রাত জেগে করা গল্প,কাব্যিক ছন্দ কিছুই তো তাদের পূর্ণতা দিতে পারে নি। সবই সময়ের স্রোতে বৃথা গেছে। ফারাজ চিত্রাকে জড়িয়ে ধরে গান ধরল,
” যদি তোমার মনে ধরে,আরো ব্যাথা দিও মোরে।
দোহাই লাগে ভুইলা যাইও না।”
কেমন যেন অদ্ভুত ভেজাভাব ছিল সেই কন্ঠে। ফারাজের কি কষ্ট হচ্ছে? তার অর্ধাঙ্গিনীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে তার কি অন্তর পুড়ছে? চিত্রা দীঘল শ্বাস ছাড়ে। এবার বাস্তবতায় ফেরা উচিত তার। যা তার জীবন থেকে চলে গেছে তা ভুলে সৃষ্টিকর্তার দেওয়া নেয়ামতকে এইবার গ্রহন না করলেই নয়।
“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি নাস্তা বানাচ্ছি।”
ফারাজ হেসে বলল,”নাস্তা তো ছোটলোকরা খায়,আমার তোমাকে চাই।”

বাহিরে ক্রিপল টাঙিয়ে তার নিচে দাওয়াতের রান্না বান্না হচ্ছে। খাবারের মো মো গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। চিত্রাকে ফারাজ কাজে হাত দিতে সাফ নিষেধ করেছে। কঠোর স্বরে বলেছে, “আমার বউ তুমি। এই বাড়ির কামলা না। সো আমি তোমাকে যেই কাজ দিবো তুমি সেটাই করবে। আপাতত তোমার কাজ স্বামীর সেবা করা। তাকে আদর-সোহাগ করা। এই না না না সোহাগ করার দরকার নেই। তবে তুমি চাইলে ১০০-২০০ টা চুমু দিতে পারো। আমি মাইন্ড করবো না।” চিত্রা তাই বাহিরে যায় নি। সকাল থেকে মারিয়া আর মার্জিয়া কাজ করছে। সঙ্গে লোকও আছে। তবুও তারা জোগাড় করে দিচ্ছে। চিত্রা মামার রুমে গিয়ে খাটের পাশে পিঁড়ি টেনে বসল। ফারাজ বসে নি। দাঁড়িয়ে ছিল। মামা পাথরের মতো শুয়ে আছেন। হঠাৎ হঠাৎ টুকটাক কথা বলেন।

তবে আজ কথা বললেন না। শুধু চেয়ে দেখলেন। দু’চোখে তার অসাড় দৃষ্টি। মামা আজ দুই বছর ধরে পঙ্গু। দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকায় গায়ে এক রকমের ঘা জন্মেছে। গায়ে কেমন একটা উৎকট গন্ধ। মামার মুখের দিকে তাকালে খুব কষ্ট হয়। শীর্ণ দেহ,কোটরে বসে যাওয়া দুটো চোখ। যার ভেতরে পঙ্গুত্বের অসহায় চাহনি। গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকার লজ্জা। জীবনের দুটো অবস্থায় মানুষ বড় অসহায় হয়ে পড়ে। এক অসুস্থতায়। দ্বিতীয় বার্ধক্য। একটি শিশুও কিন্তু অসহায়। তবে সেই অসহায়ত্ব তাকে লজ্জিত করে না। সংকুচিত করে না। কারন সে দাবির হাত বাড়িতে যেমন স্নেহ ভালোবাসা নেয়,দাতার মতো আনন্দও দেয় উজাড় করে। কিন্তু একজন বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যখন অসহায় তখন?জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত তাকে বুঝিয়ে দেয় বেঁচে থাকার নিদারুণ যন্ত্রণা।
ফারাজ নীরবতা ভাঙল,”ওনার চিকিৎসা হয় নি?”ফারাজের কথায় চিত্রা ছলছল আঁখি দু’টো নিয়ে তার পানে তাকায়।
“না। এই বাড়ির কাছে মামা তো কেবল একটা পুরোনো ঘুনে ধরা আসবাবপত্রের মতো। যার এখন আর কোনো প্রয়োজন নেই।”

ফারাজ দৃঢ় গলায় বলল,”ডোন্ট ওয়ারি। তোমার মামার দায়িত্বটা আমি নিলাম। জলদি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তারপর এক্কেবারে লুঙ্গি তুলে জামাই – শশুর মিলে লুঙ্গি ডান্স দিবো। আরে ধ্যাত ওই চিজটা তো আবার আমার কোমর থেকে খুলে যায়৷। আচ্ছা থাক দুজন মিলে না হয় চাড্ডি পড়েই একটা ডান্স দিলাম?তুমি একটা ভিডিও বানিয়ে দিও তো।রিলসে আপলোড দিবো। শা*লার আমার আইডির পেছন লাল হয়ে গেছে।”
চিত্রা একটা ঢোক গিলে। প্রথমে ভেবেছিল ফারাজ ভালো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভালো হবে আর ফারাজ এলাহী? তার মুখ থেকে সুস্থ কথা আশার কেবল অসুস্থ মানুষই করতে পারে। ফারাজ হঠাৎ গলার স্বর বদলে বলল, “বাহিরে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। চলো বাহিরে যাই। আমাদের প্রেম দেখিয়ে সোহাইগার কুরকুরানি বাড়িয়ে দিয়ে আসি। এমনিতেই জেলাসির লেভেল হাই হওয়ার ফলে ওর পেছনে আগুন লেগেছে। কখন না জানি আমি আবার ওর পাছায় কেরাসিন ঢেলে দেই৷ শালা বাঙ্গির ঘরের বাঙ্গি।”
চিত্রা হতবাক। এই লোককে শুধরানো যাবে না। একটু আগের কথাবার্তা শুনে তো মনে হয়েছিল একেবারে দুধ দিয়ে গোসল করে উঠেছে। অথচ এখন মামার সামনেই তামাশা শুরু। মানে যেই লাউ সেই কদু।

দাওয়াতের আগেই অভ্র ব্যাগ পত্তর নিয়ে চিত্রার মামীর বাড়িতে হাজির। সকাল থেকে ফারাজকে সে কল করে যাচ্ছে। তবে মহৎ ব্যক্তি তো আবার জমিদারের বংশধর। তাই কল ধরে নি। তাই বাধ্য হয়ে অভ্র নিজেই চলে এলো। জরুরি কথা আছে। সবকিছু জলদি বলাটা জরুরি। ফারাজ তখন দুপুরের গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিল। চিত্রাকে সে রুমে বসিয়ে রেখেছিল তবে গোসল থেকে বেড়িয়ে রুমে খুঁজে পেল না। তবে খুঁজে পেয়েছে তার ক্রাইম পার্টনার অভ্রকে।
ফারাজ চোখ সরু করে তাকায়, ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি,”কিরে আমার বউয়ের মধ্যে আমি অভ্রকে কেন দেখতে পাচ্ছি? ডেট ওভার মাল খেয়ে ফেলি নি তো?
অভ্র নাটকীয়ভাবে এক পা পেছনে সরল। হাত উঁচিয়ে বলল,” আরে ভাই কাছে আসবেন না। আমার ইজ্জত আমার বউয়ের জন্য তোলা। দূরে যান বলছি। চুম্মা-টুম্মা দেওয়ার উদ্দেশ্য নেই তো?
ফারাজ এবার আরেক পা এগিয়ে এল,”আরেহ! কুদ্দুসের বাপ না তুমি? তাই তো বলি আমার বউয়ের মুখে দাঁড়ি কবে গজালো?”

অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” ভাই মজা নিয়েন না। আপনাকে না দেখতে পেয়ে আমার কষা হয়ে গিয়েছিল। তবুও বাথরুমে যায় নি। আপনাকে সময় না দিয়ে বাথরুমকে কি করে সময় দেই বলুন তো? পারলাম না ভাই। আমি থাকতে পারলাম না।”
ফারাজ মুখ বাঁকিয়ে বলল,”ক্ষমা ভাই। আগে পেট সাফাই করে আসো। ওইসব পেটের মধ্যে জমিয়ে ইট বানানোর মতলব নাকি? যাও ভাই বাহিরে একটা পেট ক্লিয়ার করার জায়গা আছে.. ওখানে যাও। এখানে কাম সারলে গন্ধে টিকতে পারবো না।”
অভ্র হাসল।বলল, “সমস্যা নাই ওই ইট দিয়ে বাড়ি বানাবো। তারপর বিয়ে করে বউ নিয়ে করবো…মানে গল্প। আর কামটা যেখানেই সারি না কেন আপনি অবশ্যই টিকতে পারবেন৷ কারন আমি ব্যবহার করি এয়ার ফ্রেশনার। আমি হাগলেও লেমন ফ্রেবার পাবেন।”

“থু।”
“ভাই।”
“যা পিশাচ দূরে যা। দূর হ। তুই আমার পাক পবিত্রতা নষ্ট করে দিছিস। ওয়াক।”
অভ্র মুখ ভেংচাল। মনে মনে শুধালো,
নিজের পাছায় নয়মণ গু,
পরেরে কয় পাছায় গু।
“কিছু বলছিস নাকি? এবার বল এখানে আসার কারন কি?”
“ভাই নিলুফা। নিলুফা শেষ।”

বাড়িতে মেহমানের কমতি নেই। আশপাশের অনেকেই এসেছে সোহাগের বিয়ের দাওয়াত খেতে। হুট করেই যে সোহাগ বিয়ে করে বউ এনে বাড়িতে তুলেছে সেটা শুনে সবাই অবাক। সোহাগ তো এমন কাজ করার ছেলে নয়! চিত্রার খেতে মন চাইছে না। পোলাও সে খুব একটা পছন্দ করে না, ভাতই তার কাছে কমফোর্ট ফুড। ওদিকে, ফারাজ আর অভ্র প্রথম সারিতেই খেতে বসেছে। ফারাজ তো সোহাগকে সোজা উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসে পড়েছে। বেচারা সোহাগের তাই বউ নিয়ে উঠে যেতে হয়। কারন বউয়ের সিটটাও ফারাজের চাই। নিজের বউকে এখানে বসাতে হবে না? চিত্রার কিছু পুরোনো বান্ধবী এসেছে। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছে সে। তবে অভ্রের কিন্তু পুরো মনোযোগ ফারাজের পাশের খালি সিটের দিকে। চোখে-মুখে স্পষ্ট আকুতি,ওখানে সে বসতে চায়!

“ভাই…”
“দিমু না বসতে। তুমি মামু ওম্মে গিয়া বসো।”
“ভাই, জায়গা তো খালি নাই আর। দেন না বসতে। ভাবী তো নাই এখন।”
ফারাজ ঠান্ডা চোখে পকেটের দিকে ইশারা করল। অভ্র তাকাতেই সব বুঝে গেল। হিসহিসিয়ে বলল,
“ভাই, আপনি পিস্তল নিয়ে কেন আসছেন?”
“নাচতে।”
“বসলাম!”
“বসে তো দেখো? গুলি যে তোমার কোন কোন দিক দিয়ে বের হবে, টেরই পাবে না!”
অভ্র কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই কালো সানগ্লাস পরা একটা মেয়ে পাশ কাটিয়ে ফারাজের জায়গায় বসে পড়ল। চুলে বিচিত্র রঙের ছোঁয়া, সাজগোজও অদ্ভুত। মেয়েটি ফারাজকে দেখে মিষ্টি গলায় বলল,
“ভাইয়া আমি না পোলাও বাড়তে পারি না। একটু বেড়ে দেবেন?”
ফারাজ একবার চেয়ারের দিকে, একবার অভ্রের দিকে তাকালো। এই চেয়ার তো সে নিজের বউয়ের জন্য রেখেছিল! হুট করে এই সার্কাস এল কোথা থেকে? অভ্র কি করবে বুঝতে না পেরে মেয়েটার প্লেটে পোলাও দিতে যাবে ঠিক তখনই ফারাজ চেঁচিয়ে উঠল,

“অভ্র!”
অভ্র কিছু বলার আগেই মেয়েটি সপ্রতিভ কণ্ঠে পুনরায় তাকে বলল,
“হেই, তোমার নাম কী? আমার ফ্রেন্ডরা বলছিল তুমি নাকি বারবার আমাকে দেখছিলে। পছন্দ করো আমাকে? তাই না? আই নো!”
ফারাজ হতভম্ব! “পছন্দ আর আমি? আম্মা, তোমার চোখের রিপেয়ার দরকার। ভোল্টেজ কমে গেছে!”
মেয়েটা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “আম্মা? আমি?”
“না, তোর নানি! বাল উঠ এখান থেকে! আমার বউ যদি দেখে আমি অন্য মেয়ের পাশে বসে আছি, তাহলে রোমান্স শুরু হওয়ার আগেই খতম! উঠ!”
মেয়েটি চুলে হাত বুলিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
“পারব না। আমি জায়গা পেয়েছি!”
ফারাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুই আমার বাল পাইছিস। উঠ কইলাম উঠ মাতারি।”

চিত্রাঙ্গনা পর্ব ১৭

কথা শেষ করেই ফারাজ চেয়ার নিয়ে উঠে দাঁড়াল। শুধু নিজের চেয়ারই নয় মেয়েটার চেয়ারটাও টান মেরে সরিয়ে নিল! মেয়েটা প্রায় পড়েই যাচ্ছিল, তবে তার আগেই অভ্র তাকে ধরে ফেলল। কিন্তু পরমুহূর্তেই তাকে ছেড়ে দিল। ধপাস! মেয়েটা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ল।অভ্র তা দেখে হাঁ করে তাকিয়ে বলল,
“বাপরে! ময়দার বস্তা!”

চিত্রাঙ্গনা পর্ব ১৯