চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৩৫

চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৩৫
ইশরাত জাহান জেরিন

নির্জন গৃহকোণে ভোরের স্তব্ধতা যখন সর্বত্র ছায়া বিস্তার করে তখনই সহসা নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে আসে একটি চাপা স্বরের প্রতিধ্বনি,
“চিত্রা কেন করলা এমন? ছাইড়া না গেলে কি হইতো না?”
ঘুমের গাঢ় আবেশে আচ্ছন্ন জান্নাতের কর্ণকুহরে শব্দটি ধীরে প্রবেশ করল। তবে স্পষ্ট ভাবে নয়।
আধো ঘুম জড়ানো চোখে সে পাশ ফিরে তাকায়। শুয়ে আছে সোহাগ। জান্নাতের দৃষ্টি পড়ল সোহাগের মুখের ওপর। ঝাঁকড়া চুলে ছায়াপড়া কপাল, শ্যামার্ণ দেহরেখায় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দীপ্তি, দীর্ঘ সরু দেহের জড়তা ভেদ করে ফুটে ওঠা গলার কণ্ঠমণি অব্যক্ত কোন বিষাদে ঘেরা নীরব কাব্য রচনা। তার ওই দু’টি গালের টোল নির্মম সৌন্দর্যের প্রতীক। যা দেখলে সহজেই নারীর অভ্যন্তরে নীরব মৃত্যুঘণ্টা বাজে। সোহাগ স্বভাবতই স্বল্পভাষী। নিঃসঙ্গতা তার একমাত্র নিকটতম সঙ্গী। সে ছাদে উঠে রাতের আকাশ দেখে, ধোঁয়ার সঙ্গে মিশিয়ে দেয় দুঃখ, একাকিত্ব, কিছু অপ্রকাশ্য কথা। গান করে নিজের জন্য। না বলা কথাগুলোর সুর তৈরি করে। এ জীবনে তার কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই। নেই ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন। খুব ইচ্ছে ছিল সাদামাটা কোনো নারীকে নিয়ে গড়ে তুলবে নিভৃত এক সংসার, দূরে কোথাও, পরিচয়ের গণ্ডির বাইরে। সেই চাওয়াই কি তবে তার অপরাধ ছিল?

জান্নাত ধীরপায়ে উঠে যায়। আলতো পায়ে যায় স্নানের ঘরে। দীর্ঘ সময় পরে সে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখে মুখে রাতের স্মৃতি। সেই রাত যা তার কাছে বহু দিনের লালিত এক আকাঙ্ক্ষা ছিল। সে তো কখনও ভাবেনি সোহাগ তার হবে। তাকে ছুঁয়ে দেখবে, তার শরীর-মন ছুঁয়ে যাবে এমন অধিকার নিয়ে। যে অধিকার একজন স্ত্রীর হয়। যা শুধু বৈধতা দিয়ে নয়, আত্মিক অঙ্গীকার দিয়ে গড়া। জান্নাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসে। সোহাগের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুপল চেয়ে পাশে বসে গায়ে হাত রেখে পরিশ্রান্ত স্বরে ডাকে,
“উঠবেন না? বেলা হইছে তো। উঠেন এইবার।”
দুই-চার ডাকার পর সোহাগের ঘুম ভাঙ্গে। সে ঘুমভাঙা চোখে জান্নাতের দিকে তাকায়। মাথাটা তার ঝিমঝিম করছে। সে তন্দ্রাচ্ছন্ন গলায় বলে,
“কয়টা বাজে?”
“আটটা বাইজা গেছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এত সকালে তুমি গোসল করছ যে? রাতে যেই ঝড় হইছে। সেই ঠান্ডা এখনও বাহিরে।”
জান্নাত কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর নিচু গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “আপনি জানেন না কেন গোসল করছি?”
সোহাগ চুপ করে ভাবে। তবে যুক্তিযুক্ত কারন খুঁজে পায় না।
“না কেন? কিছু মনে নাই আমার।”
“রাতের কথা কিছু মনে নাই?” জান্নাতের ভারাক্রান্ত গলা।
সোহাগ কপালে হাত রেখে মাথা নাড়ে। “উঁহু। আমি মুখ ধুইয়া আসি। তুমি একটু চা বানাইয়া দাও তো। এত মাথা ধরছে।”
জান্নাতের চোখ ছলছল করছে। তার মানে সোহাগ নেশায় অন্ধ হয়ে নিজ জ্ঞান হারিয়ে তাকে ছুঁয়েছিল? ভালোবেসে নয়? চিত্রাকে মনে করে তার কাছে এসেছে তবে?

অভ্র ভোরের আলো ফোটার আগেই ফিরে এসে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় ছুড়ে দিয়েছিল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম তার চোখের পাতায় নেমে আসে। কিন্তু বজ্রের চোখে তখনও ঘুম নেই। বাইরে প্রভাতের নরম আলো ধীরে ধীরে ঘরের জানালা বেয়ে ভেতরে ঢুকছে। অথচ বজ্রের ভেতরটা তখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে। সে ভাবতে থাকে এই নিস্তব্ধ ভোরবেলায় তার মতো আর কারা জেগে আছে? কে জানে, হয়তো এই বাড়িতেই কেউ, কিংবা অনেক দূরে… কেউ একজন। চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে সে। কিচেনে এসে কফি মেকার চালু করে, তারপর নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে ডাইনিং টেবিলের গিয়ে বসে। চারপাশ নিঃস্তব্ধ। তবু তার ভেতরে কোথাও যেন কিছু অস্থিরতা দানা বাঁধছে। সে দু’হাতের দিকে তাকায়। অন্যমনস্ক দৃষ্টিতে যেন সেই হাতদুটি তাকে কিছু বলতে চায়। ঠিক তখনই পেছন থেকে এক নরম, মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসে,

“হাতে কি লেগে আছে ভাই? যে এত মনোযোগ দিয়ে দেখতাছেন?”
বজ্র চমকে ওঠে না। ধীরে মাথা তোলে। তার দৃষ্টির সামনে এসে দাঁড়ায় আয়েশা। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, পটলচেরা চোখজোড়া যেন সব প্রশ্নের উত্তর জানে। সবসময় যেভাবে চুল বেণি করে রাখে, আজও ঠিক তেমনি। গায়ে লতা-পাতার ছাপওয়ালা হালকা সবুজ কামিজ। দেখে মনে হচ্ছে এই রঙটা তারই জন্য তৈরি।
“আয়েশা না?”
“হুম।” আয়েশা মৃদু হেসে জবাব দেয়।
“বসো।”
আয়েশা হাসিমুখে এক পাশে বসে পড়ে। তারপর সুরভিত গলায় বলে, “আমাকে ডাক দিলেও ভাই পারতেন। একা একা কষ্ট করার কি দরকার ছিল?”
বজ্র কফির কাপের দিকে তাকায়। এক চুমুক দিয়ে বলে, “নিজের কাজ আমি নিজেই করতেই পছন্দ করি আয়েশা। তবে ঠিক সময়ে তোমাকে দরকার পড়লে অবশ্যই ডাকব।”

আয়েশা চুপ করে যায়। ঠোঁটের কোণে ক্ষণিকের হাসি আর চোখের মাঝে একরাশ ভাবনা খেলে যায়। তার ভেতরে দ্বিধা। এই ভোরবেলায় সবাই কোথা থেকে ফেরেছিল? জানতে ইচ্ছা হয় ঠিকই, কিন্তু নিজেকে সংযত রাখে। সে জানে এই বাড়ির নিয়ম, ভদ্রতা আর সীমারেখা না ভাঙা। এখানে সে একজন কর্মচারী। আর বাকিরা মনিব। মনিবের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো তার কাজ নয়। অযথা প্রশ্ন করলে যদি ভুল বোঝে? যদি তাকে বাড়াবাড়ির অভিযোগে বিদায় নিতে হয়? আয়েশা দৃষ্টিটা নামিয়ে নেয়। কিন্তু তার মুখে জমে থাকা প্রশ্নের ছায়া, হয়তো বজ্র ঠিকই পড়ে ফেলে। খানিকটা সময় নিরবতা বিরাজ করে। একসময় নিরবতা ভেদ করে বজ্র,
“ভোরে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি তুমি ছিলে না?
আয়েশা মুহুর্তেরর জন্য কোঠর থেকে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। বজ্র কায়সার কি করে জানল ভোরে যে সে তাদেরকে দেখেছে?
” আরে ভয় পাচ্ছো মনে হচ্ছে? মজা করেছি।”

ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক সকাল ১০টা ছুঁয়েছে। ড্রাগস দেওয়া হয়েছিল গতরাতেই। যার প্রভাব থাকার কথা ছিল মাত্র ছয় ঘণ্টা। সেই সময়সীমা বহু আগেই অতিক্রান্ত। অথচ চিত্রার চোখে এখনো ঘুমের রেশ। নিস্তব্ধ শয্যায় তার দেহ। ফারাজ চুপচাপ বসে আছে বিছানার কিনারায়। চিত্রার কাচের মতো স্বচ্ছ ত্বকের ওপর লাল হয়ে থাকা ইনজেকশনের ক্ষতচিহ্নে তাকিয়ে থাকে দীর্ঘ সময়। ব্যাথার স্থানে চুমু দিয়ে বলে,
“বিশ্বাস করো বিবিজান। তোমায় কষ্ট দিয়ে আমার ভালো থাকা ভালো নেই। মানুষের জীবনে কিছু অধ্যায় থাকে যা না পড়াই শ্রেয়। আমার জীবনে তেমনি বহু অধ্যায় আছে। তবে কথা দিলাম সেই অধ্যায় তোমাকে কখনো ছুঁতে পারবে না। স্পর্শ করতে পারবে না। তুমি কালো পাথরে মোড়ানো ফারাজ এলাহীকে কখনোই জানতে পারবে না।কেবলই জানতে পারবে নিজের স্বামীকে। তোমার চোখে ঘৃণার নয় ভালোবাসার পাত্র হয়ে বাঁচতে চাই।”
ফারাজ চোখ বন্ধ করে। চোখের সামনে ভেসে উঠে রাতেই সেই দৃশ্য।

দোতলা অফিস ভবন। তার নিচে অবৈধ গুদামঘর। চারিদিকে টাকার পাহাড়। এগুলোকে খাস বাংলায় কি বলে? জাল টাকা?যেটাই হোক তাতে ফারাজের কিছু আসে যায় না। তার লোকেরা ইতিমধ্যে জায়গাটা ঘিরে ফেলেছে। সামাদ মুজিবর রাজনীতিবিধ। তবে অবৈধ ব্যবসায়ী। কিছুদিন আগে ফারাজের সঙ্গে বড় একটা চুক্তি হয় তার। বিদেশ থেকে মাল আসে। সামাদ মুজিবরও চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করে নিজের কাজে লেগে যায়। তবে ফারাজ এলাহীর সঙ্গে চাল খাটানো কি আদৌও সহজ? চুক্তি অনুযায়ী যেই টাকা ফারাজ এলাহীর পাওয়ার কথা ছিল তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি জাল নোট। বেইমানদের ফারাজ কখনোই ক্ষমা করে না। তাঁর ওপর যদি বেইমান তার সঙ্গেই বেইমানি করে থাকে তবে তো কখনোই না। ফারাজের দেশে আসার খবর শুনার পরই সামাদ পালিয়েছিল। এই তো সেদিন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।

ফারাজ যত্ন সহকারে স্ফটিক স্বচ্ছ গ্লাসে মদ ঢালছে যত্ন সহকারে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। কালো ব্লেজারে আচ্ছাদিত। চোখে শীতল নিরপেক্ষতা। তার পেছনে আধা-আঁধারিতে দাঁড়িয়ে আছে বজ্র। দুই হাত বুকের মাঝে গুঁজে রাখা। দৃষ্টি নিবদ্ধ সামাদের বিধ্বস্ত শরীরে। একজন মানুষ কতটা হিংস্র হলে, আরেকজন মানুষকে এমন পাশবিক নির্যাতন করতে পারে। এ কথা যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে বজ্র বলবে, ফারাজ এলাহীকে না দেখলে তার উত্তর জানা সম্ভব নয়। ফারাজ নিখুঁতভাবে হত্যা করে। কাঁপে না তার বুক, কাঁপে না তার হাত। অথচ সেই মানুষটিও কারও চোখে চোখ রেখে বলে, “ভালোবাসি”। কী অদ্ভুত পরিহাস! বজ্রের মাঝে মাঝে হাসি পায়। নিজেকেও দেখে এখন হাসে সে। নিউরোসার্জনের মতো উচ্চতর বিদ্যা অর্জন করে শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে এই রক্তাক্ত প্রহসনে? মানুষের জীবন বাঁচানোর বদলে সেও জড়িয়ে গিয়েছে এসবে। সামাদের দেহ প্রায় নিষ্প্রাণ। প্রাণ আছে বললেই চলে। মাত্র নামমাত্র রুহু বাকি। গত দুদিন ধরে ফারাজের আদেশে তার অনুগতরা ইচ্ছেমতো অত্যাচার চালিয়েছে তার ওপর। তবুও মারেনি। কারণ জান নিয়ে খেলা করার চূড়ান্ত অধিকার কেবল ফারাজের। ফারাজ গ্লাস হাতে উঠে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে সামাদের সামনে গ্লাসটা তুলে ধরে। চোখে উপহাস। সে জিজ্ঞেস করে,

“তৃষ্ণা পেয়েছে? নাও মদ খেয়ে তৃষ্ণা মিটাও আলুবোখারা।”
সামাদ মাথা নাড়ায় উপর-নীচে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া ছিলে নিয়ে সেখানে মধু মাখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ভয়ংকর মৌমাছির ঝাঁক। ক্ষতস্থানে হুল বিদ্ধ হয়েছে, ফুলে ফেঁপে উঠেছে তার দেহের একেকটি অঙ্গ। শরীর ফুলে ফেঁপে উঠছে একেবারে পচনধরা আলুর মতো। মাছিরা চারপাশে বনবন করছে। বাতাসে ঘোরাফেরা করছে বিভৎস গন্ধ। তৃষ্ণা পেয়েছে সামাদের। কিন্তু তার ভেতরে দ্বিধা। এই মদের মধ্যে কি কিছু মেশানো? সে মুখ সরিয়ে নেয়। তার দৃষ্টিতে ভয়, অবিশ্বাস। ফারাজ তা দেখে হেসে ওঠে। মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“হারামি ভালো জিনিস গিলবা কেমন করে? কুত্তার পেটে ঘি হজম হয়? তোমার জন্য মৌমাছি আপাদের মধুমাখা চুমুই ঠিক আছে।”
ফারাজ নিজের হাতে গ্লাস তুলে নেয়। ঢকঢক করে গ্লাস খালি করে দেয়। তারপর উঠে দাঁড়ায়।
“ভাই, বাসায় ফিরবেন না? ভাবীর যদি ঘুম ভেঙে যায়? পাশে আপনাকে না পেয়ে ভয় পাবে না?” অভ্র নিচু গলায় বলে।

ফারাজ হালকা হেসে উত্তর দেয়,
“টেনশনের কিছু নেই কুদ্দুসের বাপ। তোমার ভাবীকে চাঁদের দেশে ঘুরতে পাঠিয়ে দিয়েছি আমি।”
ঠিক তখনই পিছন থেকে বজ্র এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তুই কি ড্রাগস দিয়েছিস ওকে? তোর মাথা ঠিক আছে ফারাজ? তুই পাগল নাকি? চিত্রাকে তুই সত্যিই ভালোবাসিস?”
ফারাজ ঘুরে দাঁড়ায়। চোখেমুখে হঠাৎ ভয়ানক কাঠিন্য ছড়িয়ে পড়ে, “ডোন্ট মেইক অ্যা নয়েজ। নাম ধরে ডাকিস না। ভাবী হয় ও তোর। ওর নাম, অধিকার সবকিছু আমার জন্য বহু আগেই হালাল হয়ে গিয়েছে। সামনে হোক বা পেছনে, ওর নাম মুখে আনবি না।”
ফারাজ সিগারেট জ্বালিয়ে এক টান দিয়ে বজ্রর কাঁধে চাপড়ে পুনরায় বলে,
“ভালোবাসি বলেই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। ভালো না বাসলে কবর পাঠিয়ে দিতাম। আর আমার বউকে নিয়ে ভাবার অধিকার আমি হীনা অন্য কোনো পুরুষের নেই।”
বজ্র কোনো জবাব দেয় না। শুধু নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে। সময়ের সাথে ফারাজকে সে চিনতে পারছে না আর। মানুষটা উন্মদ। উন্মাদনায় পুরো দমে পাগল হয়েছে। অভ্র ফারাজকে ডেকে গুদামঘর থেকে বেরিয়ে আসে। গম্ভীর স্বরে বলে,

“ভাবীকে মুক্তি দিন ভাই।”
ফারাজ হাসে। “মুক্তি? বন্দি করেছি মুক্তির জন্য না।মৃত্যু ছাড়া আমার কাছ থেকে তোর ভাবী মুক্তি হবে না রে।”
“ভাই!” অভ্র প্রায় কেঁপে ওঠে।
“না রে ভাই। এবার আর মিনতি নয়। বরং বজ্রকে গিয়ে বল সামাদের চোখ সহ সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে সংগ্রহ করতে। তারপর টাকাগুলো সহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহটা গুদামে রেখে আগুন লাগিয়ে দিবি। শালা পুড়ে মরুক নিজের মালের সাথে। আর এগুলো সামাদের লোকেদেরকে নিয়েই করাবি। তারপর ওদেরকেও পুড়িয়ে মারবি।”
“কেমনে ভাই? ঝামেলা হবে না?”
“দেখ কুদ্দুসের বাপ, পাছা ভরা গু থাকলে যেমন জিলাপি বানিয়েও খাওয়া যায়। ঠিক তেমনি টাকা থাকলেও সব করা যায়। সামাদের লোক গুলোকেই তো আমি প্রথমে মোটা টাকায় কিনেছিলাম। ওরা আমায় সামাদ দিলো। আমি ওদের মৃত্যু দিবো। আমি আবার কারো কাছে ঋণি থাকি না। ওইসব ছোটোলোকি বিষয়।”
“কিন্তু ওরা তো সাহায্য করেছে আমাদের।”
“রসুন কোয়া কোয়া পাছা কিন্তু একজায়গায়। যতই টাকায় কেনা লোক হোক না কেন যেহেতু এত বছর সামাদের খেয়ে পড়ে তার সঙ্গেই বেইমানি করতে পেরেছে তাহলে আরো ভালো অফার পেলে আমার সঙ্গে করবে না তার গ্যারান্টি কি পিও?”

ফারাজ কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। চিত্রা নড়চড় করছে। চোখ মেলতেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে তার শরীর। ফারাজের চিত্রার এই অবস্থা দেখে ভেতরটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাথা পেয়েছে একজন আর অনুভব করছে অন্যজন। এরই নাম বুঝি ভালোবাসা?
“চিত্রা!”
চিত্রা বসার চেষ্টা করে। ফারাজ তৎপর হয়ে বালিশ গুঁজে দেয় পেছনে। তার কাঁধে হাত রাখে কোমল ভঙ্গিতে।
“কয়টা বাজে?” চিত্রা ক্লান্ত গলায় বলে।
“কেন তোমার কয়টার দরকার বিবিজান?”
“উঠতে দেরি করে ফেলেছি আজকেও তাই না?”
“উঁহু।”
“হাত নাড়াতে পারছি না ফারাজ।”
“ঘুমের ওষুধের কারণে মনে হয় এমন হয়েছে। আস্তে উঠো পাখি। এখনি এমন দশা হলে ১১ বাচ্চার জননী কেমন করে হবে?
চিত্রা চোখ বন্ধ করে বলে, “ইশ্‌… শুরু হয়ে গেছে আবার।”
ফারাজ স্নিগ্ধ কণ্ঠে ফিসফিসায়,
“হয়নি এখনো। ফ্রেশ হয়ে এসো, খেয়ে শক্তি বাড়াও। তারপর দেখবে, তোমার স্বামীর শুরু কাকে বলে।”

নিশুতি রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই মাহাদী বাড়ির পথে ফিরে আসে। ক্লান্ত চোখে, শ্রান্ত পায়ে হলেও তার মুখে প্রশান্তির ছায়া। হাতে ধরা একটি দামি শাড়ির প্যাকেট। রানি গোলাপি রঙে মোড়ানো, মাহাদী চুপি চুপি উঁকি দিচ্ছে বাড়ির ভেতর। বউকে আজ একটা সারপ্রাইজ দিবে। বিয়ের পর এতদিনেও সে মারিয়াকে কিছু উপহার দিতে পারেনি, আজ প্রথমবার নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কিনে এনেছে এই শাড়ি। মনে মনে ভেবেছে, মারিয়া নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে। হয়তো সে মুচকি হাসবে, চোখে আনন্দ জমবে। কিন্তু বাড়ির চৌকাঠে পা রাখতেই মাহাদীর কানে আসে দুটি মেয়েলি গলার কথোপকথন। সে থেমে যায়। ধীর পায়ে একটু এগিয়ে ভেতরে উঁকি দেয়। বাড়ির সামনের বসার জায়গায় মারিয়া বসে আছে। মুখ গম্ভীর, চোখ অবনত। পাশে বসে প্রতিবেশী এক মহিলা রাশেদা, যার কণ্ঠে অহংকারের গন্ধ।

“তোমার বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেল, জামাই এখনও একটা নাকফুল বানিয়ে দিতে পারল না? আমার মেয়ে আছে না, ওর জামাই তো গহনার নিচে চাপা দিছে ওরে!”
কথাগুলো যেন কাঁচের টুকরোর মতো গিয়ে বিঁধে মারিয়ার বুকে। সে কিছু বলল না। কিন্তু তার নিঃশব্দ দৃষ্টিতে, চোখের নরম কোণায় জমে থাকা দুঃখ যে কাউকে থমকে দিতে পারে। মাহাদী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। সে একবার হাতের শাড়ির প্যাকেটের দিকে তাকায়। পুরো আনন্দটাই মাটি। এক চিলতে হাহাকার জমেছে তার বুকেও। ভেতরে ঢুকতেই মহিলার কণ্ঠ থেমে যায়। সে এক ঝটকায় শাড়ির আঁচল টেনে মাথা ঢেকে উঠে দাঁড়ায়, মুখে মেকি হাসি। “আচ্ছা যাই, অনেক কাজ বাকি…”বলে বেরিয়ে যায়।
মারিয়া মাহাদীর দিকে একবার তাকায়। মাহাদীর ঘরে প্রবেশ করলে দরজা লাগিয়ে সেও ভেতরে ঢুকে পরে। রুমে গিয়ে মারিয়া আলনার কাপড়ে হাত দেয়। গুছানো জিনিস গুলোই এই মেয়ে বার বার গুছায়। মারিয়া স্বামীকে লুঙ্গি এগিয়ে দিয়ে বলে, “যাও গিয়ে গোসল করে আসো।”
ঘরজুড়ে নীরবতা । মারিয়ার মুখে অভিমান, চোখে অভ্যস্ত যন্ত্রণার ছাপ। মাহাদী বুঝতে পারে সে এসেছে খুশি দিতে, অথচ সাথে এনেছে আরও একরাশ বোঝা। সে দ্বিধায় পড়ে শাড়িটা এখন দেওয়া ঠিক হবে তো? কিন্তু কিছু না ভেবেই এগিয়ে এসে তার হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দেয়। মারিয়া খুলে দেখে। শাড়িটা নিঃসন্দেহে সুন্দর। নরম, ঝলমলে, তার মতোই সাদামাটা। তবু তার মুখে হাসি নেই। খুশির ছায়া নেই। মাহাদী অপেক্ষা করে। অবশেষে মারিয়ার ঠোঁট ফাঁটে। গলা যেন জমে থাকা বরফের মতো ঠান্ডা।

“রাতে কোথায় ছিলে?”
মাহাদীর কণ্ঠে ধরা পড়ে এক চিলতে হকচকানো ভান, “নাইট ডিউটি ছিল।”
“নাইট ডিউটি কবে থেকে ধরছো?” তার কণ্ঠে সন্দেহ নেই, নেই রাগও। আছে শুধু একধরনের ক্লান্তি।
মাহাদী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। হাতে ধরা শাড়ির বাক্সটা তখনো খোলা। ভিতরের রঙিন কাপড়টা যেন অনেক কিছু বলতে চায়। কিন্তু কারও কথার কোনো জবাব নেই।
“মারিয়া তোমার জন্য শাড়িটা আনছি। পছন্দ হইছে?”
“হ্যাঁ হইবো না কেন? কিন্তু শাড়ি কিনার টাকা পাইলা কই?”
“কামাইছি। তোমারে সুখী করতে আমি সারাদিন-রাত কাজ করমু। তবুও তোমার চোখে আর জল দেখতে পারমু না। তুমি কাঁদলে বউ আমার অন্তর কাঁদে। ভীষন যন্ত্রণা হয়,ভেতর পুড়ে।”
মারিয়ার চোখ ছলছল জরে উঠে। সে হুট করেই কেন যেন মাহাদীকে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে। মাহাদী জানে মারিয়া কেন কাঁদছে। সেই কথা ভেবে হুট করেই তার মস্তিষ্ক জ্বলে উঠে। যার জন্য তার মারিয়ার চোখের জল পড়েছে তাকে মাহাদী ছাড়বে না। সেও কাঁদবে যেমন করে কাঁদছে তার মারিয়া। মারিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরেই মাহাদী সেই ভেবে হাসে। সেই হাসি ভয়ানক,সেই হাসি পৈশাচিক।

সকালের ঝিমধরা আলো ঘরজুড়ে বিস্তার করছে। রোশানের ঘুম ভাঙে। হাত বাড়িয়ে পাশে খোঁজে। খুঁজে পায় শূন্য । মোহনার শরীরের উষ্ণতা নেই,বালিশ নিঃসঙ্গ। রোশান চোখ মুছে ধীরে উঠে পড়ে। অভ্যস্ত পায়ে বারান্দায় যায়। ঠোঁটে সিগারেট গুঁজে আগুন ধরায়। ধোঁয়ার কুন্ডলিতে ভেসে যায় ভেতরের গুমোট ভাবটা। গতরাতের ঘুমটা দীর্ঘ আর ভারমুক্ত ছিল। বহুদিন পর এই প্রশান্তি। হয়তো কারণ, মদ বেশি খেয়েছিল তাই। মদ খেলে রোশানের মনে থাকে না কিছু। অতীতের ছায়াগুলো ঝাপসা হয়ে যায়। কষ্টগুলো ঠান্ডা হয়। অতীত ভুলে গেলে মানুষের ভিতরটা একটুখানি হালকা হয়, আর হালকা মনে ঘুমও আসে গভীর। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে চোখ ফেলে পেছনের শ্যাওলা ধরা পুকুরপাড়ের দিকে। সেখানে বসে আছে মোহনা। সঙ্গে একটা অল্পবয়সী মেয়ে। দু’জনে পাথর ছুঁড়ছে জলে, ঢেউ তুলে হাসছে। সেই হাসির শব্দ বাতাসে উড়ে আসছে ঢেউয়ের মতো করেই। কি অপূর্ব সেই হাসি। এক মুহূর্তের জন্য রোশান স্থির হয়ে যায়। নারীর হাসিতে এমন কী থাকে, যা এত তীব্রভাবে আকর্ষণ করে? খোদা যেন নিজ হাতে এক নির্মম মোহের ফাঁদ বুনেছেন, যেখানে চাইলেও চোখ ফেরানো যায় না।

তার স্ত্রী হাসছে। রোশানের তো তাতে খুশি হওয়ার কথা। অথচ বুকের ভেতর হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ছে শীতল জ্বালা। অতীত ফিরে আসছে নিঃশব্দে কিন্তু নির্মমভাবে। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রোশান একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়। চোখ তার মোহনাদের দিকে স্থির। অথচ দৃষ্টিতে অশান্ত আগুন। মৃদু স্বরে সে নিজেকে শুনিয়েই উচ্চারণ করে,
“তোমার পছন্দের প্রতিটি জিনিস আমি কেড়ে নেব মোহনা। তোমার প্রতিটি সুখের গল্পে আমি বিষ মিশিয়ে দেব।যা কিছু তুমি ভালোবাসো সেগুলো একে একে ছিনিয়ে নেব।…ইশ, আমার ভাই ফারাজকে এসবে না জড়ালেও পারতে।”

আয়েশা সেই কখন থেকে অভ্রের ঘরের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু সরকার ভাই তো গণ্ডারের মতো নাক ডেকে হয়তো ঘুমোচ্ছেন। তার জাগার নাম নেই। কিন্তু আর অপেক্ষা করলে চলবে না। ফারাজ ভাই যেহেতু আদেশ দিয়েছেন, তাই যেকরেই হোক অভ্রকে নিচে নিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসাতে হবে। দরজায় টোকা দেওয়ার আগে আয়েশা কান পেতে ভেতরের শব্দ শোনার চেষ্টা করে। হঠাৎই ভেতর থেকে ভেসে আসে মেয়েলি কণ্ঠস্বর। তার ভেতরটা ধক করে উঠে। চোখ কুঁচকে সন্দেহে ঠোঁট কামড়ে ধরে সে। মনে মনে ঝাঁঝিয়ে ওঠে,
“তার মানে এই সরকারের বাচ্চায় মেয়ে নিয়ে ঘরে ইচিকদানা বিচিক দানা খেলতাছে ? ওরে সেয়ানা সরকার, তোর মতো মালই তো দেশে দু’চারটা আরো দরকার।”
বাড়তি আগ্রহে দরজায় আরও ভালোভাবে কান পেতে শোনার চেষ্টা করতেই আচমকা দরজাটা ভেতর থেকে খুলে যায়। কোনো প্রস্তুতি না থাকায় টাল সামলাতে না পেরে আয়েশা প্রায় পড়ে যেতে বসে। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে একজোড়া শক্ত বাহু তাকে নিজের প্রশস্ত বুকে জড়িয়ে ধরে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আয়েশা। কিন্তু পরক্ষণেই তার নাকে আঘাত হানে ভ্যানিলা আর ল্যাভেন্ডারের তীব্র গন্ধ।
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পায় গভীর, সম্মোহনী একজোড়া চোখ তার দিকে নিবদ্ধ। সেই চোখের গভীরতায় ডুবে যায় আয়েশা। তবে অকস্মাৎ ভেসে আসে একটা চিন্তিত কণ্ঠস্বর,
“ঠিক আছো তুমি?”

চিত্রার জন্য একগাদা উপন্যাস এনে দিয়েছে ফারাজ। অথচ সে তো একটা বই চেয়েছিল। গোটা লাইব্রেরি তো নয়। মাত্র দু’দিনের জন্য এখানে থাকবে সে এত বই দিয়ে কী করবে? বিছানার ওপর বসে খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে চিত্রা। গল্পের চূড়ান্ত টানটান মুহূর্তে আছে সে। বাইরে যা-ই ঘটুক, এখন তার মন পুরোপুরি ডুবে আছে বইয়ের পাতায়। ফারাজ মাত্রই কিচেন থেকে ফিরে এসেছে কিছু একটা হাতে করে। চিত্রা তাকে দেখেও না দেখার ভান করে। অভিমানের এক পুরু চাদর জড়িয়ে নেয় নিজের চারপাশে। ফারাজ এখনো তাকে বাড়ি ঘুরে দেখতে দেয়নি। চিত্রার মনটা বেশ খারাপ। অভিমানী মেঘবালিকা অভিমান করেছে। এটা ফারাজ ভালো করেই টের পেয়েছে। হাতের বাটিটা টেবিলে রেখেই হঠাৎ চিত্রার পা ধরে এক টানে তাকে নিজের দিকে তাকে টেনে আনে ফারাজ।

ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যায় যে চিত্রা কিছু বুঝে উঠতে পারে না। হঠাৎ পাওয়া এই ঘনিষ্ঠতায় সে একটু থমকে যায়।
“ফারাজ, প্লিজ ছাড়ুন!” চিত্রার কণ্ঠে কাঁপন।
“কানে শুনতে পাচ্ছি না বিবিজান, জোরে বলো।”
চিত্রা বিরক্তিতে ঠোঁট চেপে “চ…” জাতীয় অস্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করে। কিন্তু তাতে ফারাজের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই। চিত্রা একবার কৌতূহলভরে টেবিলের ওপর রাখা কাচের বাটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ওর মধ্যে কী আছে?”
“খাবার। আজ শুধু খাবো না, বরং তোমাকেও খাওয়াবোও।”
চিত্রা রাগে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“আপনি সরুন আমার ওপর থেকে। হাতির মতো শরীর নিয়ে অবলা পিঁপড়েকে পিষে মারতে চান?”
“তুমি মরতে চাইলে, পিষে মারতেও রাজি আছি।

ফারাজ আর কথা না বাড়িয়ে চিত্রাকে পরম মমতায়, ভালোবাসার ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তোলে। তার প্রতিটি স্পর্শে চিত্রার শরীরজুড়ে লাভার মতো উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ কেমন শিহরণ? এ কেমন আকর্ষণ? ফারাজ ধীরে ধীরে তার দিকে ঝুঁকে পড়ে। চিত্রা নিজের শরীরটা বিছানার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। তার চোখ কথা বলছে।এই চোখের ভাষা কেবল ফারাজের জন্যই সৃষ্টি। চিত্রা একটু কেঁপে উঠে বলে,
“আমার হাতে ব্যথা করছে।”
ফারাজ নেশালু কণ্ঠে মৃদু হেসে জবাব দেয়,

“চিন্তা কোরো না, মলম লাগিয়ে দেবো… না হয় নিজেই ব্যথার ওষুধ হয়ে যাবো।”
“দরজাটা খোলা আছে নাকি?” চিত্রার স্বর আতঙ্কে কাঁপে।
“উঁহু” বলেই ফারাজ নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে নেয় কাচের বাটিটা। বাটিতে স্ট্রবেরি, ওপরে ঢেলে দেওয়া হয়েছে ঘন, সাদা কনডেন্সড মিল্ক। সে সেখান থেকে একটি তুলে নিজে মুখে পুরে নিয়ে চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,

চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৩৪

“খাবে?”
চিত্রা মুখ ফিরিয়ে নেয়, “না, খাবো না।”
ফারাজ মুখে তীব্র অভিব্যক্তি এনে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে, “যা বেডি তুই গু খা, আবুলের নাতনি কোথাকার”

চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৩৬