চেকমেট পর্ব ১১
সারিকা হোসাইন
ঝকজকে আলো বিলিয়ে দেয়া সূর্য সিয়েরা মাউন্টেন এর বৃহৎ চূড়ার পেছনে লুকিয়ে গিয়েছে।আলপাইন গাছের সারি ভেদ করে ঘন কালো অন্ধকার এসে ঘিরে ধরেছে সর্বত্র।কোথাও একবিন্দু আলোর উপস্থিতি নেই।চারপাশ ঘোর অমানিশায় লেপটানো।এহেন লোমহর্ষক অন্ধকার এ কেমন যেনো ভয় ভয় অনুভূতি হয়।সেই অনুভূতি কে আরেকটু গাঢ় করতে ডেকে উঠে নেকড়ের পাল।কি ভয়ানক তাদের দলবদ্ধ স্বর।মাঝে মাঝে বিশাল অজগরের ফসফস শ্বাসের শব্দ হৃদয়ে ধুকপুকুনির সৃষ্টি করে।থেকে থেকেই কেমন সব নাম না জানা বিশালদেহী পাখি ঝাক বেঁধে হুলুস্থুল বেসুরে গলায় চিৎকার করে উঠে।সেই চিৎকার কলিজা কাঁপিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।এমন ভয়ানক অরণ্যে মানুষ আর পশু কি করে একসাথে বাস করতে পারে?
রাতের পরিধি বাড়ার সাথে সাথেই শীতের তীব্রতা আরেকটু বাড়লো।ওয়েদার ফোরকাস্ট অনুযায়ী বরফ ঝরার কথা।কিন্তু শীতের মাত্রায় মনে হচ্ছে আজ বরফ ঝরবে না।
নিজ কক্ষের বৃহৎ বারান্দায় ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সারফরাজ।গায়ের পোশাকে এখনো ড্যামিয়েন এর তাজা রক্ত লেপ্টে আছে।রক্তের গন্ধ সারফরাজ এর বড্ড প্রিয়।রক্ত মাখা পোশাক গা থেকে খুলতে ইচ্ছে হয় না তার।এলকোহল এর চাইতেও বড্ড নেশালো এই রক্তিম পদার্থ।সারফরাজ এর মনে হয় আফিম বড্ড নেশালো কথাটি ভুল।তার মতে রক্ত বড্ড নেশালো হওয়া উচিত।নইলে সেই যে সতেরো বছর বয়সে রক্তের নেশায় হাতেখড়ি হলো তা এখনো মস্তিষ্কে শক্ত আসন গেড়ে বসে আছে কেন?কোনো ভাবেই এই আকাঙ্খা ,এই নেশা দমন করা যাচ্ছে না কেনো?কেনো বার বার মানুষের উষ্ণ রক্তে ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে?
এতো কেনোর উত্তর সারফরাজ জানেনা।নিজের এই অধঃপতনে তাচ্ছিল্য হাসে সারফরাজ।পা দিয়ে চেয়ারে আরেকটু দোল দিয়ে আহত গলায় বলে উঠে
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“নিজের নাতিকে এমন ভয়ানক রক্ত পিশাচ বানিয়ে দিলে সুবহান?বিধাতা তো জাহান্নামেও তোমাকে ঠাঁই দেবে না।
সুবহানের নিথর দেহ চোখে ভাসতেই বুক ভেঙে কান্না পেলো সারফরাজ এর।নানা বাড়ি,নানা নানীর আদর ভালোবাসা নিয়ে অনেক ধরনের ফ্যান্টাসি কাজ করতো তার মধ্যে।কিন্তু এগুলো সে কোনো দিন ও পায়নি।সারফরাজ তার মাকে খুঁজতে খুঁজতে ঢাকা থেকে চিটাগাং গিয়ে কাকতলীয় ভাবে সুবহান গং এর হাতে পৌঁছে।সারফরাজ তখন ও জানতো না সুবহান ই তার নানা।একদিন সুবহান এর হাবেলীর স্টোর রুমে সারফরাজ একটা ভাঙা ফটো ফ্রেম দেখতে পায়।সেখানে সারফরাজ এর মা আর সুবহান গং এর পুরো পরিবার ছিলো।নিজের চোখকে সেদিন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো সারফরাজের।
সারফরাজ ভেবেছিলো নানার কাছে পরিচয় দিলে হয়তো সুবহান তাকে আগলে নেবে।কিন্তু কাবিরের মুখের নিষ্ঠুর কথায় ছোট সারফরাজ ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছিলো।কাবিরের থেকেই প্রথম জেনেছিলো সুবহান গং নিজের মেয়ের জামাইকে কে*-টে টুকরো টুকরো করেছে।কাবির অবলীলায় কথা গুলো বললেও সারফরাজ এর বুকে প্রতিটা কথা আর হাসি তামাশা বিষাক্ত তীরের ফলার ন্যয় বিধে ছিলো।নিজের মনের উচ্ছসিত ইচ্ছেকে মাটি চাপা দিয়ে সেদিনই মন থেকে মরে গেছিলো সারফরাজ।ছোট মানুষ হিসেবেও সুবহান সামান্য দয়া করেনি সারফরাজ এর উপর।শিখিয়েছে চুরি,ছিনতাই আর মানুষ কে ভয় দেখানো।এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি।নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুর তম বানিয়েছিলেন ওই টুকুন বয়সেই।আধো আধো শুদ্ধ মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে শিখিয়ে দিয়ে ছিলেন অশ্রাব্য বিশ্ৰী গালাগাল।ধীরে ধীরে সভ্য ভদ্র নিষ্পাপ সারফরাজ পরিণত হলো অসভ্য ট্রাক ড্রাইভারে।যেই জীবনের ভবিষ্যত ছিলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো নিমিষেই তা অমাবশ্যায় ঢেকে গেলো।এখন শুধু চারপাশে অন্ধকার আর অন্ধকার।
এঞ্জেলোর করুন ঘেউ ঘেউ শব্দে ধ্যান ভাঙলো সারফরাজ এর।হয়তো শীত লাগছে তার।এজন্য এমন গলায় ডাকছে।চেয়ার ছেড়ে নিঃশব্দে উঠে গিয়ে ফায়ার প্লেসে আ*-গুন জ্বা লি য়ে দিলো সারফরাজ।মুহূর্তেই উষ্ণতায় ছেয়ে গেলো ঘর।ছোট এঞ্জেলো আবারো ঘুমানোর জন্য নরম গালিচায় মাথা ফেলে চোখ বুঝলো।এঞ্জেলোর কিউট মুখের পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো সারফরাজ।এঞ্জেলো হীন এই নিঠুর দেশে তার আপন কেউ নেই।টাকা পয়সা,ক্ষমতা ,বিলাস বহুল জীবন কিচ্ছুটির অভাব নেই তার।অভাব শুধু একটা পরিবারের আর মন খুলে কথা বলার একটা মানুষের।
মনের ঘরের ছোট্ট কোন থেকে হঠাৎ রূপকথার নাম মনে পরলো সারফরাজের।তার একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে এক ফালি সুখের দূত হয়ে এসেছিলো মেয়েটি।নানান ধরনের ছেলে মানুশি প্রশ্ন করে পাগল করে তুলতো সারফরাজ কে।কি মিষ্টি ছিলো দেখতে!একদম রূপকথার স্নো হোয়াইট এর মতো।বড় বড় চোখ দুটোতে সারাক্ষন হাজারো প্রশ্ন খেলা করতো।সুযোগ পেলেই সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে নানান বাহানায় সেসব শুধাতো।গোটা গোটা হাতে সারফরাজ এর ঘন চুলে বিলি কাটত আর কোনো আবদার এর আগে কি সুন্দর নিজের ছোট দুই হাতের আজলায় সারফরাজ এর বড় মুখশ্রী নিয়ে বড় বড় চোখ করে আদুরে গলায় কথা বলতো।রূপকথার স্মৃতি মনে পড়তেই নিমিষেই মন ভালো হলো সারফরাজ এর।নিজের কর্ম ব্যাস্ততায় রূপকথার স্মৃতি ভুলতেই বসেছিল সারফরাজ।কিন্তু মনটা বড্ড দুস্টু।খোঁচা দিয়ে প্রতি রাতে নিয়ম করে মনে করিয়ে দেয় নামটা।
“আচ্ছা সেদিনের সেই ছোট রূপকথা নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছে তাই না?
কথাটি বলেই আঙুলের কড় গুনে সারফরাজ ।হিসেব করে বের করে রূপকথার বর্তমান বয়স।এরপর হাত উঁচিয়ে নিজের কোমরের নিচ থেকে মাপে,পেট সমান নাকি বুক সমান?হয়তো বুক সমান।
“আচ্ছা রূপকথা আমায় মনে রেখেছে?আমাকে দেখলে চিনতে পারবে এখন?না না কি ভাবছি?ওই টুকুন বাচ্চা থোরাই মনে রেখেছে আমাকে?আমিও না কেমন বদ্ধ পাগল।
সরফরাজ মনে মনে ভাবে একবার দেশে ফিরে রূপকথার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে।পরক্ষনেই নিজের মনকে শুধায়
“যদি রূপকথা তোকে এখনো মনে রেখে জিজ্ঞেস করে আমায় ফেলে কোথায় গেছিলে সারফরাজ?তখন কি উত্তর দিবি তুই?
রূপকথার প্রশ্নে সারফরাজ এর গলা শুকিয়ে আসে।কমিশনার নিশ্চয়ই রূপকথাকে ভালো রেখেছে।আগ বাড়িয়ে রূপকথার সামনে সারফরাজ যেতে চায় না।সবাই হয়তো এতদিনে সারফরাজ নামক খুনির কথা ভুলে গিয়েছে।অবশ্য এসব পাতি মাস্তানদের কেউ মনে রাখে না।সুফিয়ান চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সারফরাজ।মানুষটা বড্ড ভালো।নইলে নিজের জান বাজি রেখে কেউ একজন খুনিকে বাঁচায়?
“একটা ধন্যবাদ দেবার জন্য হলেও আপনার সাথে দেখা করতে চাই সুফিয়ান চৌধুরী।এবং খুব শীঘ্রই দেখা হবে আমাদের।
ধীরে ধীরে ভর্তির সময় এগিয়ে এলো রূপকথার।সুফিয়ান চৌধুরীর কাছ থেকে রূপকথা কয়েকদিন একা থাকার অনুমতি নিয়েছে।ভদ্রলোক নিজেও স্পেস দিয়েছে রূপকথাকে।যদিও রূপকথার জন্য ঢাকা নতুন।এর আগে দু এক বার ঘুরতে যাওয়া হয়েছে।কিন্তু রূপকথা সেভাবে ঢাকার কিছুই চিনে না।মেয়ের জন্য বড্ড চিন্তা হয় সুফিয়ান চৌধুরীর।তবুও মেয়ের আবদার ফেলতে পারেন নি তিনি।তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো সুফিয়ান এর ছোট বোন শিউলির বাসায় থাকবে রূপকথা।শিউলির মেয়ে ন্যালির ও যেহেতু একই কলেজে চান্স হয়েছে তাই আর চিন্তা করলেন না সুফিয়ান।।মেয়েকে নিয়ে তিনি ঢাকায় রেখে আসতে চাইলেন।কিন্তু এতেও বাঁধ সাধলো রূপকথা।সুফিয়ান এর কাছে আবদারের স্বরে বললো
“একা একা এডভেঞ্চার হিসেবে রাতের ট্রেনে যেতে চাই পাপা।প্লিজ না করো না।তুমি যদি না করো তাইলে আমার মন খারাপ হবে কিন্তু বলে দিলাম।
কথাটি বলে সুফিয়ান এর কোলে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে রইলো রূপকথা।মেয়ের ঝলমলে চুলে হাত বুলিয়ে সুফিয়ান বলে উঠলো
“এট লিস্ট কেবিনে করে যা।
বাবার সম্মতি পেয়ে রূপকথা সুফিয়ান এর পেটে চিমটি কেটে বললো
“ইউ আর গ্রেট পাপা।এতো সহজেই রাজি হয়ে যাবে এটা আমি ভাবতেই পারি নি।
কথাটি বলে আবারো সুফিয়ান এর কোমর জড়িয়ে শুয়ে রইলো রূপকথা।সন্ধ্যার স্ন্যাকস নিয়ে একটু পর হাজির হলেন রেখা।বাপ মেয়ের খুন সুটিতে প্রশস্ত হেসে শুধালেন
“কি পরিকল্পনা হচ্ছে বাপ মেয়ে মিলে?
একটা পাকোড়া তুলে নিয়ে অল্প ফু দিয়ে খেতে খেতে রূপকথা বললো
“সিক্রেট মিশন নিয়ে আলাপ হচ্ছে মা।
“তা কি সিক্রেট?
“পাপা আমাকে একা একা ঢাকা পাঠাতে রাজি হয়েছে।
রূপকথার খুশিতে বুকে সূক্ষ ব্যাথা অনুভব করলেন রেখা।মেয়েটা চলে গেলে তিনি কীভাবে থাকবেন?মনের কষ্ট মনে চেপে মুখে সামান্য ভাপ পর্যন্ত বের করলেন না রেখা।শুধু মলিন হেসে বললেন
“বেশ তো।
সুফিয়ান স্ত্রীর মলিন মুখশ্রী খেয়াল করে বলে উঠলেন
“আমরাও মাস দুয়েক পর ঢাকায় শিফট হবো রেখা।অলরেডি আবেদন করেছি।এখানকার দায়িত্ব নতুন কমিশনার কে না বুঝিয়ে যেতে পারবো না।তাই এই দেরি আরকি।
পরের দিন সকালে খুব ভোরে উঠে গেলো রূপকথা।বিশেষ এক কাজের জন্য আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে সে।সুফিয়ান বা রেখা কেউ এখনো উঠেনি।রূপকথা সেই সুযোগে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো।ড্রয়িং রুমে এসেই হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠা কুলসুমের সাথে দেখা হয়ে গেলো তার।আড়মোড়া ভেঙে দু চোখ কচলে কুলসুম শুধালো
“কোথায় যাচ্ছেন যে?..
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রূপকথা।মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো
“বাইরে।মর্নিং ওয়াকে।
মর্নিং ওয়াকের নাম শুনে চোখ মুখ বাঁকাল কুলসুম।যেই মানুষের শরীরে এক রতি মাংস নেই তার আবার কিসের মর্নির ফর্নিং।
কুলসুম এর উত্তরের ভরসায় দাঁড়ালো না রূপকথা।হনহন করে পা ফেলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।কুলসুম রূপকথার যাবার পানে তাকিয়ে বলে উঠে
;―অদের কাম ন গরি বে আদের কাম লই টানাটানি।
ফাঁকা রাস্তায় কোনো রিক্সা বা সিএনজির কিচ্ছুটির দেখা পেলো না রূপকথা।দীর্ঘ সময় হাঁটার পর একটা ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা পেলো।ভাগ্য যেনো সামান্য প্রসন্ন হলো।রিক্সা ওয়ালাকে হাঁক ছেড়ে ডেকে রূপকথা শুধালো
“সুবহান গং এর হাবেলীতে যাবেন?
সুবহন গং এর নাম শুনেই রিক্সা ওয়ালার মুখের রঙ ফ্যাকাসে হলো।কিন্তু মোটা ভাড়ার আশায় রাজি হলো।কালবিলম্ব না করে রূপকথা চেপে বসতেই হাওয়ার বেগে চলতে লাগলো রিক্সা।আধ ঘন্টা পর রূপকথা সুবহান গং এর হাবেলীতে পৌছালো।এরপর রিক্সা থেকে নেমে বলে উঠলো
“আপনি এখনই দাঁড়ান আমি যাব আর আসবো।
রিক্সা ওয়ালা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাতেই ভেতরের দিকে ছুটলো রূপকথা।
প্রকান্ড হাবেলীর শেওলা পরা উঠোনে দাঁড়িয়ে ছলছল করে উঠলো রূপকথার চোখ জোড়া।দূতলা বিশিষ্ট আভিজাত্য ভরা বাড়িটি আজ কেবল ধুলো ময়লা,আগাছা আর স্যাঁতস্যাঁতে শেওলার দখলে।বখাটে ছেলে পেলের আড্ডা জমে রাতের বেলা এখানে।ভাঙা মদের বোতল,সিরিঞ্জ আর সিগারেট এর ফিল্টার এ তার ছাপ স্পষ্ট।বাড়ির পাশ ঘেষে বাবলা গাছটা এখনো স্বয়ং দম্ভ নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ঝোপঝাড় আর ময়লার স্তুপ মাড়িয়ে ভীতিহীন ভেতরে প্রবেশ করলো রূপকথা।কাঠের দরজা জানালা গুলো উই পোকা খেয়ে নিয়েছে।তাই কৃত্তিম ভাবে আলোকিত করার কোনো দরকার পরছে না।একে একে সিঁড়ির ধাপ মাড়িয়ে সারফরাজ এর ঘরে প্রবেশ করলো সে।ঘরের ভেতরের সিমেন্ট উঠে চটচটে হয়ে আছে।ভাঙা একটা বিছানা অনাদরে পরে রয়েছে এক কোনে।
তার নিচে ছোট একটা স্টিলের ট্রাংক।সেটাও বৃষ্টির জলে আর স্যাৎস্যাতে মেঝেতে থাকতে থাকতে জং ধরে গিয়েছে।ঘরটিতে আর কিছুই নেই।হয়তো চোর এসে নিয়ে গেছে।এমন জনমানব হীন ফাঁকা বাড়িতে কেউ কিছু ফেলে রাখে নাকি?আগ্রহ বসত হাটু মুড়ে মেঝেতে বসে সেই ট্রাংক টেনে বার করলো রূপকথা।তালা হীন ভঙ্গুর ট্রাংক খুলতে সময় লাগলো না তার।ট্রাংক খুলতেই ভেতর থেকে ভ্যাপসা গন্ধ বের হলো সেই সাথে তেলাপোকার দল।ট্রাংক এর ভেতরে শক্ত পলিথিনে মোড়ানো কিছু কাপড় দেখতে পেলো রূপকথা।যেগুলো ভাঙা খাটের উপর রেখে আরো কিছু খুজলো।উল্টেপাল্টে ট্রাংক নাড়াচাড়া করতেই একটা ছোট বাক্স বেরিয়ে এলো।উৎসুক হয়ে সেই বাক্স খুলতেই লেমিনিটিং করা ছবি বেরিয়ে এলো এক খানা।ছবিটা এখনো অক্ষত আছে।সামান্য নষ্ট ও হয়নি।ছবিটি কোনো আর্মি দম্পতির। আর্মি লোকের পোশাকে ব্যাজে তার পদ স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে।কোনো উচ্চ পদস্থ অফিসার তো বটেই।মাঝে একটা হাসিখুশি ছেলে।তার পাশে অনন্য সুন্দরী এক মহিলা।টানা টানা চোখ আর খাড়া নাক মহিলার সৌন্দর্য বর্ধন করেছে হাজার গুণ।ছবিটা আরেকটু কাছে এনে দেখতেই সাদা আকাশি মিশেলের চোখ জোড়া নজরে এলো রূপকথার।অল্প হেসে রূপকথা বললো
“সারফরাজ এর ছোটবেলার ছবি।
চেকমেট পর্ব ১০
ছবিটা উল্টাতেই পেছনে একটা ঠিকানা নজরে এলো।ঠিকানা টা ঢাকার।রূপকথা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে কাপড়ের ব্যাগ আর ছবিটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।এরপর হাতে করে আনা রঙ পেন্সিল দিয়ে মসৃন দেয়াল খুঁজে তাতে লিখলো
“রূপকথা।ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
সেক্রেটারীয়েট রোড,ঢাকা।
০১*********৪৫
এরপর ছোট করে লিখলো
“তোমার বেড়ানো শেষ হলে একবার এই ঠিকানায় এসো সারফরাজ।তোমার অপেক্ষায় আগের ঠিকানা তেই এতো গুলো বছর ছিলাম।তুমি আসোনি।বাধ্য হয়ে ঠিকানা পাল্টাতে হলো।