চেকমেট পর্ব ১৩
সারিকা হোসাইন
সকাল সকাল সারফরাজ কে জোর করে বগল দাবা করে ধরে একটা ট্যাটু রিমোভাল শপে নিয়ে এসেছে অভিরূপ।ভয়ানক চোখ জোড়া এই অদ্ভুত ট্যাটু আরো ভয়ানক করে তুলেছে।অভিরূপ চায় সারফরাজ কোনো মেয়েলি বিষয়ে জড়াক।যাতে তার মধ্যে ন্যূনতম ভালোবাসার সৃষ্টি হোক।কিন্তু তার চোখের এই ট্যাটু দেখলে মেয়ে তো দূর একটা ছেলেও কাছে ঘেঁষবে না।কারন ট্যাটুর মিনিং “আম মনস্টার,রান এওয়ে ইফ ইউ ওয়ান্না লিভ।ট্যাটু টা সারফরাজ এক প্রকার বাধ্য হয়েই করেছিলো।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ড,স্যালিনাস,স্যান্টাক্রুজ,সিগন্যাল হিল,হাইল্যান্ড এই এরিয়া গুলো ছিল সব চেয়ে ভয়ানক আর খতরনাক।এই প্রত্যেকটা ছোট ছোট শহর ছিল একেকটা গ্যাঙ এর অধীনে।এক গ্যাঙ লিডারের শহরে আরেক গ্যাঙ লিডার বা সদস্যাদের প্রবেশ ছিলো নিষিদ্ধ।কিন্তু কেউ তা মানতে নারাজ।এজন্য হতো মুখোমুখি সংঘর্ষ।এক গ্যাঙ এর সদস্য অন্য গ্যাঙলিডার বা সদস্যকে দেখলেই ডিরেক্ট শুট করে দিতো।মানুষের প্রাণ নেয়া যেনো একদম সহজ ছিলো এদের কাছে।শুধু তাই নয়।শরীরে অঙ্কিত ট্যাটু প্রমান করত কে কতো ভয়ানক আর দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ।যাদের পুরো মুখশ্রী জুড়ে ট্যাটু থাকতো তাদের দেখে সহজেই বোঝা যেত এই সদস্য গুলো তাদের দলে সব চেয়ে বিপদজনক এবং গ্যাঙ লিডার এর জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতেও দ্বিধা বোধ করবে না।আর যার চোখের নিচে টিয়ার ড্রপ ট্যাটু অঙ্কিত থাকে তাকে দেখলেই মানুষ দৌড়ে পালাত।কারন চোখের নিচের টিয়ার ড্রপ ট্যাটু প্রমান করতো মানুষটির নির্দয়তা এবং নিষ্ঠুরতা।শুধু তাই নয়।যার এমন ট্যাটু আছে সে হচ্ছে ওই গ্যাঙ এর শ্রেষ্ঠ প্রাণ হারক।যে নিজেই জানেনা সে কত জনের প্রাণ নিয়েছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সারফরাজ কতো জনের উষ্ণ রক্তে স্নান করেছে এই হিসেব সারফরাজ এর অজানা।আজকাল এসব খুন খারাবী তার কাছে নেশায় পরিণত হয়েছে।এই নিষ্ঠুর নিয়ম নীতি হীন শহর তাকে কবে কবে হৃদয় হীন মানব করেছে তা সারফরাজ জানে না।সারফরাজ শুধু জানে এই পৃথিবীতে টাকা আর ক্ষমতা ছাড়া টেকা মুশকিল।তাই ক্ষমতার জন্য চাই টাকা আর টাকার জন্য?
কথাটি ভেবেই কিটকিটিয়ে হাসে সারফরাজ।কতো জন সাধু লোক এই দুনিয়ায় টাকা,ক্ষমতা,দম্ভ ,সাহস নিয়ে আয়েশী জীবন যাপন করছে?আদেও কেউ করতে পেরেছে? মোটেও না।তবে কিসের এতো পিছুটান?
অভিরূপ এর স্বাভাবিক গলায় নিজের ধ্যান ছেড়ে বাইরে এলো সারফরাজ।মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এখন আর ট্যাটুর প্রয়োজন নেই।নিজের নাম আর আধিপত্য ই যথেষ্ট।বরং এই ট্যাটু ক্যালিফোর্নিয়ার অলি গলির মাস্তানদের চিহ্ন হয়ে উঠেছে।এদের মতো দু টাকার সাধারণ গ্যাঙ নয় সারফরাজ।তার নিজেরই একটা পরিচয় আছে।জাগুয়ার, কি ভয়ংকর নাম তাই না?নিজেকে ভয়ংকর উপস্থান না করে নম্র ভদ্র থেকে হুট করে বুকের কলিজা খুবলে আনার মধ্যেই হয়তো পরম তৃপ্তি।এটলিস্ট লাস্ট মোমেন্ট এ ভিকটিম কে চমকে দেয়া যায়।
কথাটি ভেবে সারফরাজ ঠোঁট কামড়ে হাসলো।এরপর চোখের কালো রোদ চশমা সরিয়ে ট্যাটু রিমোভাল ব্যক্তির সামনে গিয়ে বসলো।সারফরাজ এর চোখ আর ট্যাটু দুই দেখেই ঘাবড়ে গেলো লোকটি।হাত পা ও কেমন কেঁপে উঠলো।এটা দেখে সারফরাজ তাচ্ছিল্য হাসলো।অভিরূপ হাতের ইশারায় তাকে ভয় পেতে নিষেধ করে তা রিমুভ করার জন্য নির্দেশ দিল
“রিমুভ ইট
অভিরূপ এর নির্দেশ পেতেই সারফরাজ কে শুইয়ে ঝটপট নিজের কাজে লেগে পড়লো পাওলো নামের ছেলেটি।ছোট ট্যাটু রিমোভ করতে বেশি সময় লাগলো না।পাওলো অল্প মেডিসিন চোখের নীচে লাগিয়ে বলে উঠলো
“ইট উইল টেইক থ্রি ডেইজ ফর দ্যা স্কার টু হিল।
চোখের নিচে বেশ জ্বালাপোড়া হচ্ছে।শোয়া থেকে চট করে উঠে বাইরে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।অভিরূপ বিল মিটিয়ে পেছন পেছন এলো।এরপর ছোট গলায় বলল
“তোর জন্য একটা ব্লাইন্ড ডেট এর বুকিং দিয়েছি হোটেল ল্যাগোল্যান্ডে।
একদিকে চোখের জন্ত্রনা অন্য দিকে অভিরূপ এর ব্লাইন্ড ডেট দুই মিলিয়ে সারফরাজ এর মস্তিষ্কে চিরবিড়িয়ে উঠলো।লম্বা লম্বা পা ফেলে গাড়িতে উঠে বলে উঠলো
“কতো বার বলবো মেয়ে মানুষের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই?।
নাছোড়বান্দা ভঙ্গিতে অভিরূপ ও হুড়মুড়িয়ে পাশের সিটে বসতে বসতে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো
“এমন বলিস না।এক দম মরে যাবো ব্রো। দুই হাজার ডলার দিয়ে রেস্টুরেন্ট বুক করেছি।কতোটা কস্টলি তুই একবার ভেবে দেখ।পুরো টাকা নিজের একাউন্ট থেকে দিয়েছি।তুই না গেলে জান কচলাবে টাকা হারানোর যন্ত্রনায়।প্লিজ ওয়ান টাইম এর জন্য রিকোয়েস্ট করছি।জাস্ট ওয়ান টাইম….হু?
“আমি তোকে বলেছি মেয়ে খুঁজ আমার জন্য?কখনো দেখেছিস কোনো মাফিয়া টাকা,পাওয়ার,বিজনেস এসব ছেড়ে মেয়ে মানুষের হাফপ্যান্ট এর তলায় বাধা পড়তে?
জিভ কেটে অভিরূপ বললো
“ছি কিসের তলা ফলা বলছিস এসব?মুখে একটু লাগাম তো দে।
“তো বিদেশি মেয়েদের আঁচল আছে?যে সেখানে বাধা পরবো?
অভিরূপ খপ করে সারফরাজ এর পা চেপে ধরে বলে উঠলো
“তুই না গেলে আমি তোর পা ছাড়বো না।প্লিজ।একবার যা।ভালো না লাগলে আর কোনো দিন জোর করবো না।প্রমিস
অভিরূপ এর পাগলামো দেখে তপ্ত শ্বাস ফেললো সারফরাজ।এরপর বললো
“কয়টায়?
চট করে পা থেকে উঠে সিটে হেলান দিয়ে বসে অভিরূপ বলে উঠলো
“আজ সন্ধ্যা সাতটায়।টেবিল নম্বর এলাভেন।
গাড়ি স্টার্ট করতে করতে সারফরাজ বললো
“ঠিক আছে যাবো।আর এল সালভাদর থেকে কোন কল এসেছে?কিছু বলেছে ওরা?
নিজের ফোন চেক করতে করতে অভিরূপ চিন্তিত গলায় বলল
“তুই কি ড্যান এর সাথে ওয়েপন এর বিজনেস এর ডিল করতে চাচ্ছিস?সালভাদর কতোটা ড্যাঞ্জারাস জায়গা জানিস তো নাকি?
অভিজ্ঞ হাতে স্মুদলী ড্রাইভ করতে করতে সারফরাজ বলে উঠলো
“আমার বন্দুক বেচতে পারলেই হলো।ওখানে কে কার প্রাণ নিচ্ছে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।
নিজের ফোন আরেকটু ঘেঁটে অভিরূপ বলে উঠলো
“ড্যান এখনো কোনো এনসার পাঠায় নি।অলরেডি সে ডেভিল কিং নামক কোনো ব্যাক্তির সাথে চুক্তিবদ্ধ আছে।শুনেছি লস এঞ্জেলস এর নামকরা ওয়েপন বিজনেস ম্যান সে।একদম লাইসেন্স করা।দীর্ঘ দিনের ব্যাবসা তার।শুধু তাই নয় এলসিডি আর কোকেইন এর ও বিশাল বিজনেস তার।তাকে ফেলে তোর প্রস্তাব ড্যান মানবে কি না কে জানে?
গাড়ির স্পিড আরো এক ধাপ বাড়িয়ে সারফরাজ বললো
‘নাম খুঁজে বের কর ওই শয়তান রাজের।নাম জানা জরুরি।একই বনে দুটো সিংহ রাজা হয়ে থাকতে পারে না।
সারফরাজ এর চোখ দুটোতে ভয়ানক ক্রোধ দেখা গেলো।এই ক্রোধের হেতু খুঁজে পেলো না অভিরূপ।দুজন দুজনের জায়গা থেকে বিজনেস করছে।যেচে পরে ভিমরুলের বাসায় ঢিল ছোড়ার দরকার কি?
তবুও অভিরূপ ইতস্তত করে বললো
“অযথা ঝামেলা পাকানোর দরকার কি?
“কারন এই ডেভিল কিং আরো মাস ছয়েক আগে আমার রাশিয়ান ডিলার কে ফুসলেছে।কায়দা করতে না পেরে আমার উপর এট্যাক পর্যন্ত করেছিলো।কিছুদিন আগে হাতে যেই গুলি লেগেছিলো এটাও তারই কাজ ছিলো।
অবাক হয়ে অভিরূপ শুধায়
“আমাকে কিছু জানালি না যে!
“তোকে ইচ্ছে করেই বলিনি।নিজের চিন্তা অন্যের উপর চাপানো আমার ধাতে নেই।
আর কোনো কথা হলো না দুজনের।ঝকঝকে রাস্তা মাড়িয়ে চলতে লাগলো কালো রঙের রোলস রয়েস ড্রপটেইল ।রাস্তা কাঁপিয়ে দৌড়ে চলা গাড়িটির পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাস্তার মানুষজন।পৃথিবীর সব চাইতে দামি গাড়ি এটি।যার মূল্য প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন ডলার।এমন দামি গাড়ি যিনি চালাচ্ছেন কি তার পরিচয়?
ধীরে ধীরে নিজের ব্যাগ পত্র বই খাতা গুছানো শুরু করেছে রূপকথা।হাতে আর বেশি সময় নেই।মাত্র পাঁচ দিন।এরপর চলে যেতে হবে অচেনা গন্তব্যে।দীর্ঘদিন বাদে ন্যালির সাথে দেখা হবে।সেই খুশিতে কিছুটা উচ্ছসিত রূপকথা।ব্যাগে নিজের দরকারি জিনিস গুলো ভরতে ভরতে হঠাৎ গত সন্ধ্যার কথা মনে পড়লো রূপকথার।মানুষটা কেমন অদ্ভুত।কিসব মেসেজ পাঠিয়েছে তাকে।অজানা অচেনা মানুষকে কেউ এমন বার্তা পাঠায়?অবশ্য ভুলটা তারই।যেচে পরে লোকটার সাথে এহেন মজা করা ঠিক হয়নি।রূপকথা তাৎক্ষণিক লোকটিকে ব্লক করেছে।কিন্তু আরো কয়েকটা প্রোফাইল থেকে লাগাতার মেসেজ এসেই চলেছে।শেষমেশ বাধ্য হয়ে নিজের আইডি ডিএক্টিভেট করে রেখেছে রূপকথা।সুফিয়ান বা রেখা কারো কাছেই বিষয়টি শেয়ার করেনি সে।নেহাত সামান্য ঠুনকো বিষয় ভেবেই চুপচাপ রয়েছে।আদেও কি এটা ঠুনকো বিষয়?নাকি ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করছে সামনে?
“কিরে কি ভাবছিস?
রেখার ডাকে হকচকিয়ে উঠে রূপকথা।এরপর নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠে
“ঢাকায় গিয়ে কি কি করবো তার একটা হিসেব কষছি মা।
মেয়ের কথায় রেখা অতটা পাত্তা দিলেন না।হাতের তেলের বাটি টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন
“তখন বললি মাথা ব্যাথা করছে এরপর সেই যে রুমে ঢুকলি আর বের হলি না।সামনে একটু বস তো।মাথায় তেল পানি দিয়ে চুল টেনে দেই।দেখবি আরাম লাগবে।
রেখার কথায় ভাবনা ফেলে একটা ছোট টুল টেনে নীচে বসলো রূপকথা।রেখা অতি যত্নে রূপকথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে শুধালেন
“আমাদের ছাড়া এই কদিন থাকতে কষ্ট হবে না তোর?
“হবে তো মা।কিন্তু যেতে তো হবে তাই না?আর আমি নিজেকে একাকী একটু সময় দিতে চাই ।প্লিজব মা মন খারাপ করো না
রেখা এ প্রসঙ্গে আর কথা বললেন না।প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন
“যাবার আগে চল একদিন শপিং এ যাই।কিছু জামা কাপড় কিনে নিয়ে গেলে সুবিধা হবে তোর জন্য।
রূপকথা মাথা ঝাকিয়ে বললো
“ফুপি বলেছে ঢাকায় চিটাগাং এর থেকে ভালো কাপড় পাওয়া যায় ।এখান থেকে আপাতত কিনবো না।একেবারে ওখানে গিয়েই কিনবো।
এমন সময় কুলসুম এলো।হাতে ঠান্ডা শরবত।দুই হাতে সেই শরবত রূপকথার সামনে এগিয়ে বললো
“অনের ঠান্ডা শরবত।
কুলসুম এর হাতে শরবত দেখে কপাল কুঁচকে রূপকথা শুধালো
“চিনির বদলে লবন দিয়েছিস তাই না?
কুলসুম তাৎক্ষণিক মাথা নাড়িয়ে বললো
“ও বাজি এগুন অপবাদ ন দিয়ো যে।
“তাইলে তুই এক ঢোক খেয়ে দেখা দেখি।
এমন গরমের দিনে ভইঙ্গা মানুষের এমন বাড়াবাড়ি পছন্দ হলো না কুলসুম এর।রূপকথার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট টিপে বুঝালো সে লবন নয় চিনি দিয়েই শরবত করেছে।এরপর বহু কনফিডেন্স এ এক চুমুক মুখে তুলে বহু কষ্টে গলাধঃকরণ করে মুখ চোখ বিকৃত করে বলে উঠলো
“আর কাছে লাগের চিনি এগুন নোনতা।
রূপকথা ধমকে বলে উঠলো
“তুই চিনি আর লবণের পার্থক্য শিখে তারপর শরবত বানাবি।
ভয়ে ভয়ে কুলসুম শরবত এর গ্লাস নিয়ে বিদেয় হতেই রূপকথা বলে উঠলো
“ও তোমার কোন কাজে লাগে মা?ছাটাই কেনো করছো না?
রেখা রূপকথার মাথার চুল টানতে টানতে বললো
“বাদ দে মা বাবা হীন মেয়েটা যাবে কোথায়?তাই রেখে দিয়েছি।
বাবা মায়ের কথা মনে পড়তেই সেদিনের সেই ভয়াবহ এক্সিডেন্ট এর কথা মনে পড়লো রূপকথার।নিমিষেই কেমন বুকের ছাতি কেঁপে উঠলো।চোখ দুটো ও জলে পরিপূর্ণ হলো।এক্সিডেন্ট থেকে মনে এলো সারফরাজ এর কথা।সব মিলিয়ে হৃদয় বিষিয়ে উঠলো।অসহনীয় জন্ত্রনা গ্রাস করলো চারপাশ থেকে।প্রত্যেকটা মানুষের আবছা চেহারা চোখে ভাসলো।সেই সাথে কানে বাড়ি খেলো
“আমি খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো রূপকথা।সে পর্যন্ত তুমি লক্ষী মেয়ে হয়ে থেকো।নইলে আর কোনো দিন ফিরবো না।
মুহূর্তেই চোখ থেকে খসে পরলো জল।সংগোপনে রেখাকে বুঝতে না দিয়ে সেই জল মুছে কম্পিত গলায় রূপকথা শুধালো
“আমি কি পাজি মেয়ে মা?
রেখা তড়িৎ রূপকথার মাথায় চুমু খেয়ে বললো
“তুই আমার লক্ষী মেয়ে।
রূপকথা রেখার উত্তরে নিজেকে নিজেই মনে মনে জিজ্ঞেস করলো
“তবে সারফরাজ ফিরে না কেনো?
সিয়েরা ফরেস্ট এ শহরের তুলনায় একটু আগেই যেনো দিনের আলো ফুরিয়ে যায়।সূর্যের আলো ফুরাতেই চারপাশ থেকে নেকড়ের হাউলিং, শেয়ালের ডাক আর নিশাচর প্রাণীর ভয়ানক স্বর ভেসে আসতে থাকে।চারপাশ কেমন হঠাৎই ভুতুড়ে লাগতে শুরু করে।
বাতাস হীন সিয়েরা অরণ্যে হঠাতই ছোট আলপাইন গাছের চিরল পাতা গুলো খচখচ শব্দে নড়ে উঠলো।সেই সাথে সারফরাজ এর খোলা জানালা দিয়ে কেমন অদ্ভুত ফসফস শব্দ ভেসে আসছে ।বেড রুমে ব্লাইন্ড ডেটে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো সারফরাজ।এমন সময় এহেন অদ্ভুত শব্দ তাকে বিরক্ত করলো।স্বাভাবিক মানুষের কাছে এই শব্দটা হুট করে শুনলে অধিক ভয়ের মনে হবে।কিন্তু সারফরাজ কেয়ারই করলো না।শব্দটা বাইরে থেকে আসছে।তাই একটা টর্চ নিয়ে এগিয়ে গেলো সারফরাজ।ক্ষণকাল গড়াতেই এঞ্জেলো ঘেউঘেউ করে ডেকে উঠলো।কপাল কুঁচকে সারফরাজ বাইরে বের হতেই সমস্ত শব্দ থেমে গেলো।কিন্তু এঞ্জেলোর ঘেউ ঘেউ থামলো না।সাধারণ অপরিচিত কোন মানুষ দেখলে এঞ্জেলো এমন হাঁকডাক করে।টর্চ জ্বালিয়ে চারপাশে খুজলো সারফরাজ।কেও নেই।হঠাৎ ইয়ার্ডের কাছে একটা দ্বিখন্ডিত ব্ল্যাক ম্যাম্বার দেহ পাওয়া গেলো সেই সাথে কুয়াশাচ্ছন্ন ভেজা ঘাসে জুতার মথিত ছাপ।সারফরাজ কপাল কুঁচকে কিছুক্ষন ভাবলো।এরপর মুখে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“wow…. আই লাইক ইট..
অভিরূপ,এঞ্জেলো আর সারফরাজ সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনের টেবিলে এসে বসলো।যার সাথে সারফরাজ এর ডেট সে আসলেই অভিরূপ এঞ্জেলো কে নিয়ে বেরিয়ে যাবে।সারফরাজ কে একবার গভীর চোখে পরখ করলো অভিরূপ।গায়ে একটা ব্ল্যাক শার্ট আর ব্ল্যাক ব্লেজার জড়িয়েছে সারফরাজ।সেই সাথে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করে জেল দিয়ে সেট করেছে।ছোট কয়েক গাছি চুল কপালের কাছে পরে আছে।ফর্সা মুখটা ক্লিন সেভ করেছে বোধ হয় দীর্ঘদিন বাদে।হাতে দামি রোলেক্স ঘড়ি।খোচাখোঁচা গোঁফ না থাকায় টকটকে ঠোঁট টা বেশ নজর কাড়ছে।কোন মেয়ে এমন সম্মোহিত পুরুষ রিজেক্ট করতে পারবে না এমনটা ভেবে মনে মনে শান্তি অনুভব করলো অভিরূপ।মিনিট দশেক অপেক্ষা করতেই অনিন্দ সুন্দরী এক মেয়ের আগমন ঘটলো।লম্বা ফর্সা বাদামি চুলের ছোট পোশাকধারী মেয়েটিকে দেখে ফাঁকা ঢোক গিললো অভিরূপ।কিন্তু সারফরাজ নির্বিকার।যেন এর চাইতেও হাজার গুণ সুন্দর জিনিস সে দেখে ফেলেছে।
সারফরাজ কে স্পেস দিতে এঞ্জেলো কে নিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো অভিরূপ।যাবার আগে চোখ টিপে কিছু ইঙ্গিত করলো।অভিরূপ দরজা ঠেলে চলে যেতেই মেয়েটি ডিসেন্ট হেসে বসলো।ভদ্রতার খাতিরে উঠে পর্যন্ত দাঁড়ালো না সারফরাজ।এতে মেয়েটি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।ধীরে ধীরে মেয়েটি তার পরিচয় দিতে লাগলো।কিন্তু সারফরাজ এবারও মুখ খুললো না।মেয়েটি নিজের সৌন্দর্যের পাশাপাশি শারীরিক সৌন্দর্য ও দর্শন করাতে চাইলো সারফরাজ কে।গভীর চোখে মেয়েটির পানে নজর বুলিয়ে সারফরাজ বলে উঠলো
“আম ইম্প্রেসড।উইল ইউ বি মাই বেড পার্টনার?
মেয়েটি সারফরাজ এর প্রস্তাবে খানিক বাঁকা হাসলো।এরপর ছোট পোশাক টেনে টুনে নিষিদ্ধ অঙ্গের আকর্ষণ বাড়িয়ে নেশাকত গলায় শুধালো
চেকমেট পর্ব ১২
“সো হারি হু?
সারফরাজ ফিচেল হেসে বিড়বিড় করে বললো
“রক্তের পিপাসা বড্ড করে চেপেছে।
বাংলা বুঝলো না মেয়েটা।তাই ঠোঁটে হাসির রেখা অব্যাহত রেখে শুধালো
“সরি?
সারফরাজ প্রত্যুত্তর না করে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো
“মাই হাউজ ইজ এম্পটি।ডোন্ট ওয়েস্ট টাইম ডার্লিং…