চেকমেট পর্ব ২৬ (২)

চেকমেট পর্ব ২৬ (২)
সারিকা হোসাইন

ক্লাস জুড়ে সকলের দৃষ্টি শান্ত স্থির।সামনে দাঁড়ানো স্বপ্নের পুরুষের ন্যয় অধিক সুদর্শন লেকচারার কে দেখে ক্লাসের মেয়ে স্টুডেন্ট গুলো পলক ফেলতে ভুলে গেছে যেনো।উপস্থিত ছেলেরাও ফিসফিস করে এটা সেটা বলছে।কিন্তু এসবের ধার যেনো ধারলো না রুদ্র।সে তার গাম্ভীর্য আর রহস্যে অটল থেকে সাদা শার্টের হাত কুনুই অব্দি গুটিয়ে হোয়াইট বোর্ডে ঘচঘচ করে মার্কার দিয়ে লিখলো
“ফাইট ওর ফ্লাইট রেসপন্স।
লেখাটি লিখে শেষ করে সামনে ফিরলো রুদ্ররাজ।ঠোঁটে ঠান্ডা হাসি গাঢ় আকাশি চোখে ইন্দ্রজাল এর খেলা।
রুদ্র পুরো ক্লাস জুড়ে একবার চতুর নজর বুলালো।ক্লাসের কেউ ঠোঁট টিপে ড্যাব ড্যাব করে তাকে দেখে চলছে কেউ ডায়েরির আড়ালে চোখ রেখে গোপনে নিঃশব্দে তাকে পরখ করছে।এসব দৃশ্যে রুদ্র কোনো প্রকার হেলদোল দেখালো না।তার চোখ যেনো অন্য কিছু খুঁজে চলেছে ক্লাস জুড়ে।

এদিকে নেলি রুদ্রের চোখের মনিতে খেই হারিয়ে ক্যাবলা কান্তের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।এমন বেহায়া দৃশ্যে রূপকথা নেলির হাতে চিমটি কেটে বলে উঠলো
“এই লোকটা ট্রেনে একই কেবিনে এসেছে আমার সাথে।উনাকে একেক দিন একেক রূপে দেখে অবাক হচ্ছি আমি।
বলেই গোপনে নিজের ফোন বের করে ছবি তুলতে উদ্যত হলো।কিন্তু তার আগেই ভরা ক্লাসে গমগমে আওয়াজে রুদ্র আঙ্গুলি ইশারা করে বলে উঠলো
“হেই ইউ,ইন দ্যা থার্ড রো।
রুদ্রের গলার স্পষ্ট আওয়াজে কেঁপে উঠলো রূপকথা।ফোন লুকিয়ে সম্মুখ লেকচার টেবিল পানে তাকাতেই রুদ্র মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো
“ইয়েস ইউ।
রুদ্রের আঙ্গুলি নির্দেশে রূপকথা চারপাশে বেকাবু তাকিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো।রূপকথার পানে ক্লাসের সকল মেয়ে তাকিয়ে রইলো।নতুন প্রফেসর আসতে না আসতেই নতুন ক্লাসে কি প্রশ্ন করতে পারে এই মেয়েকে তা যেনো কারো মাথায় ঢুকলো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দুই আঙুলে মার্কার টাকে বেশ কায়দা করে ঘোরাতে ঘোরাতে রূপকথার সামনে এসে দাড়ালো রুদ্র।এরপর অল্প ঝুকে অদ্ভুত গলায় শুধালো
“হুয়েন সাম ওয়ান ফেসেস আন এক্সপেক্টেড ড্যাঞ্জার,লাইক উম… লুজিং দ্যা অনলি পার্সন দে লাভ!হুইচ নার্ভাস সিস্টেম টেইকস ওভার ফার্স্ট?
রুদ্ররাজ এর অদ্ভুত প্রশ্নে রূপকথা অবাক চোখে রুদ্রের কঠিন হাস্যজল মুখের পানে তাকিয়ে রইলো।রুদ্রের চোখ দুটোতে কেমন চতুরতার খেলা।ঠোঁটে ঠান্ডা হাসি।চাহনি নির্লিপ্ত অথচ গভীর।
রূপকথা ফার্স্ট ক্লাসে এমন প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।সে এসবের উত্তর জানেনা।ফার্স্ট বই কিনে কৌতূহল বসত দুই তিন চ্যাপ্টার রিডিং পড়ে ছিলো।সেখানে এমন অধ্যায় পড়েছে বলে মনে পরে না।তবুও মস্তিষ্ক ঘেঁটে কিছু মনে করবার চেষ্টা করলো রূপকথা।এরপর ফট করে বলে উঠলো
“আই থিংক সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম স্যার।
রূপকথার উত্তরে রুদ্র মাথা ঝাকিয়ে বললো
“ব্রিলিয়ান্ট।

বলেই হাত তালি দিলো।পুরো ক্লাসের মেয়ে গুলো কেমন ঈর্ষান্বিত চোখে দেখতে লাগলো রূপকথাকে।রুদ্রের হাত তালিতে রূপকথার মনে কোনো আনন্দ হলো না।বরং অযাচিত অজানা এক ভয় এসে বুকের মাঝে হানা দিলো।
রূপকথার ভয়কে দ্বিগুন বাড়িয়ে গম্ভীর গলায় নাটকীয় ভঙ্গিতে রুদ্র বলে উঠলো
“এক্সাক্টলি।এমন সিচুয়েশন এ পড়লে আমাদের হৃদয়ের গতি তেজ হয়,নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।মনে হয় এই বুঝি প্রাণ গেলো রাইট?সেই সাথে চিবুক গড়িয়ে ঘাম গড়ায়।বাট মিস!
কথাটি বলে রূপকথার পানে বাঁকা চোখে তাকিয়ে রইলো রুদ্র।রূপকথা রুদ্রের চাহনির মানে বুঝতে পেরে মাথা নত করে প্রত্যুত্তর করলো
“রূপকথা।রূপকথা চৌধুরী।
রুদ্র স্মিত হেসে বললো
“নাইস নেইম।তো মিস রূপকথা টেল মি ওয়ান থিং।হ্যাভ ইউ এভার ফেল্ট দ্যাট সিচুয়েশন রিসেন্টলি?
রুদ্রের তির্যক প্রশ্নে কেমন কেঁপে উঠলো রূপকথা।মানুষটার কথা বার্তা তার মোটেও ভালো লাগছে না।এতো এত স্টুডেন্ট এর ভিড়ে রূপকথাকে ই কেনো এসব জিজ্ঞেস করছে এই রুদ্ররাজ?
এদিকে রূপকথার পানে তাকীয়ে ঠোঁট টিপে হেসে চলেছে ক্লাসের মেয়েরা।রূপকথার নাজেহাল চেহারা দেখে তারা যেনো বেশ আনন্দ পেলো।রূপকথা রুদ্রের পানে তাকিয়ে ইতস্তত করে নিভু গলায় বলল

“ক্যান আই সিট?
রুদ্র গম্ভীর গলায় উচ্চস্বরে বলল
“নো।”
রূপকথা রুদ্রের ধমকে কেঁপে উঠে ভীত মুখে একবার রুদ্রের পানে নজর বুলালো।রূপকথার ভীত মুখশ্রী দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে রুদ্র বলে উঠলো
“জাস্ট কিডিং।প্লিজ সিট ডাউন।
রুদ্রের এহেন আচরণ কেমন অদ্ভুত লাগলো রূপকথার।রুদ্রের সারহে সাথে ক্লাসের মেয়ে গুলোও শব্দ করে হেসে উঠলো।ফার্স্ট দিনে এমন নাস্তানা বুদ হয়ে চোখ ফেটে জল এলো রূপকথার।তবুও নিজেকে সামলে মাথা নিচু করে বসে গেলো রূপকথা।রূপকথার পানে তাকিয়ে রুদ্র ঠোঁট কামড়ে মনে মনে বলে উঠলো
“আ উইল বার্ন এভরিথিং ইউ লাভ ডিয়ার সারফরাজ। তোর চোখের যেই আগুন দিয়ে সব কিছু জ্বালিয়ে দিচ্ছিস সেটার উত্তাপ হীন ছাই দেখতে চাই আমি।এবং সেটা খুব শীঘ্রই।

কলেজ ছুটির পর বিষন্ন মুখে বেরিয়ে এলো রূপকথা।নেলি বিভিন্ন কথা বলে রূপকথাকে হ্যাপি করতে চাইলো।কিন্তু রূপকথার মন ভালো হলো না।
ক্লাস শেষ করে রুদ্ররাজ চলে যেতেই ক্লাসের মেয়ে গুলো রুদ্ররাজ আর রূপকথাকে কটাক্ষ করে ঠেস দিয়ে নানান কথা বলেছে
“বুদ্ধির জোর না থাকলেও রূপের জোড়ে ঠিক সুদর্শন ডাক্তারকে নিজের দিকে টেনে নেয়া যায়।
মেয়েদের এমন কুরুচি মন্তব্যে রূপকথা কোনো প্রতিবাদ করেনি ।শুধু দ্রুত পদে ক্লাস ত্যাগ করেছে।নেলিকে নিয়ে বাইরের গেটে আসতেই সারফরাজ কে দেখা গেলো।গাড়ির সামনে ক্রস স্টাইলে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে ।রূপকথাকে দেখতে পেয়েই দ্রুত হাতে সিগারেট ফেলে পায়ে পিষে মুখে হাসির রেখা টেনে এগিয়ে এলো।এরপর শুধালো

“মন ভার কেনো?
রূপকথা সারফরাজ এর দরদ ভরা স্বরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।রূপকথার কান্নায় সারফরাজ শক্ত গলায় শুধালো
“কে কি করেছে?কোনো ছেলে টিজ করেছে?কেউ ফ্রেসার হিসেবে র‍্যাগ দিয়েছে?
সারফরাজ এর উৎকণ্ঠা দেখে নেলি অবাক হলো।সারফরাজ উত্তরের প্রতীক্ষায় রূপকথার হাত চেপে ধরে পুনরায় ভয়ানক গলায় শুধালো
“হু ইজ দ্যাট বাস্টার্ড?
রূপকথা চোখের জল মুছে সারফরাজ এর চোখের পানে তাকালো।রূপকথার অসহায় দৃষ্টি বুঝতে পেরে সারফরাজ বললো

“গাড়িতে এসো।বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।
রূপকথা সারফরাজ এর পাশের সিটে বসলো আর নেলি ব্যাক সিটে বসে মাথা নিচু করে রইলো।গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট করে সারফরাজ রক্ত হীম করা গলায় বলল
“কে কি বলেছে রূপকথা?জাস্ট টেল মি হিজ নেইম।কতো বড় কলিজা ওয়ালা দেখতে চাই।
রূপকথা সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো
“ডক্টর রুদ্ররাজ।
রুদ্ররাজ নাম শুনে সারফরাজ এর চোয়াল কেমন শক্ত হয়ে উঠলো।নীল চোখ জোড়া মুহূর্তেই অগ্নিবর্ন হলো।সেই সাথে ফুলে উঠলো ঘাড় আর কপালের নীল শিরা।
অধিক ক্রোধে নাকের পাতা আর থুতনি কেঁপে উঠলো সারফরাজ এর।মস্তিষ্ক হলো বিক্ষিপ্ত।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে শুধালো
“কি বলেছে?
রূপকথা একে একে প্রত্যেকটি ঘটনা সারফরাজ কে খোলে বলতেই সারফরাজ ফোন বের করে ডায়াল করলো একটা নম্বরে।ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই সারফরাজ গর্জে উঠা গলায় বলে উঠলো
“লাইট আপ দ্যা ডেভিল কিংস বার ইন ফ্লেম ব্রাউনি।হি ডেয়ার্ড টু মক মাই গার্ল।নাও হি উইল পে ফর ইট।
ওপাশ থেকে ব্রিটিশ একসেন্ট এ ইংরেজি ভাষায় ব্রাউনি কিছু বললো।কিন্তু কানে তুললো না সারফরাজ।সে ধমকে বলে উঠলো

চেকমেট পর্ব ২৬

“জাস্ট শাট আপ।আম অলরেডি ডান লিসেনিং।
বলেই ফোন কেটে দিলো সারফরাজ।এরপর সামনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“ভুল মানুষের সাথে মজা লুটেছিস তুই রুদ্র।সামান্য হাসির জন্য আমি তোর দুঃস্বপ্ন হয়ে তোকে ধাওয়া করবো।তোর সব গুলো দাঁত একটা একটা করে তুলে নেবো আমি।কতোদিন এভাবে হাসতে পারিস তুই আমিও দেখতে চাই

চেকমেট পর্ব ২৭