চেকমেট পর্ব ৩১
সারিকা হোসাইন
ইলশে গুড়ি বৃষ্টি আর ঘন কালো মেঘে চারপাশ কেমন থমথমে।কমিশনার এর বাংলোর সামনের সরল চিকন রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইট নিভু নিভু আলো দিচ্ছে।এলোমেলো বাতাসের দাপটে এই বুঝি আলো নিভে গেলো।চারপাশের অসংখ্য ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিঁঝিঁ ধ্বনি কান তালা লাগিয়ে দিচ্ছে।ক্রমশ কমে আসছে মানুষের হাঁক ডাক।বাড়ছে বর্ষনের ধারা।
বাংলোর সামনে বিশাল এরিয়া নিয়ে ফুলের বাগান আর সবুজ মাঠ,বাগানের এক পাশে বসার ব্যবস্থা আছে।চারপাশে কনস্টেবল দের সতর্ক টহল।ধীরে ধীরে বৃষ্টির ধারা বাড়লো সেই সাথে নীরব হলো সবকিছু।
সুফিয়ান চৌধুরীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সারফরাজ।বৃষ্টিতে তার শরীর ভিজে নিংড়ে নিংড়ে জল গড়াচ্ছে।কিন্তু দৃষ্টি শান্ত চোয়াল শক্ত।মুখে কোনো ভীতির ছাপ নেই।যা আছে তা কেবল কঠোরতা।
সুফিয়ান চৌধুরীর গায়ের সাদা পাঞ্জাবি ভিজে শরীর দৃশ্যমান হলো।বুকের গুলির ক্ষত টা পাতলা পাঞ্জাবি ভেদ করে দেখা গেলো।তাতে দৃষ্টি তাক করে তড়িৎ চোখ সরিয়ে নিলো সারফরাজ।এরপর তপ্ত শ্বাস ফেলে সোডিয়াম লাইটের আলো আধারীতে তাকিয়ে রইলো।দুজনেই নীরব।বৃষ্টির ঝরঝরে ধারা উপেক্ষা করে কারো শ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে না।সারফরাজ জানে সুফিয়ান কেনো তাকে ডেকেছে।এর পোক্ত উত্তর ও সারফরাজ এর কাছে রয়েছে।প্রশ্ন করা মাত্রই উত্তর দেবে সারফরাজ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নীরবতা ভাঙলেন সুফিয়ান চৌধুরী।অসহায় গলায় শুধালেন
“কেড়েই যখন নিবি তখন দিয়েছিলি কেনো?
সুফিয়ান এর অসহায় প্রশ্নে মুখের উপর চট করে উত্তর দিতে পারলো না সারফরাজ।ভেতর থেকে বিবেক বাধা দিলো।সারফরাজ সুফিয়ান এর দৃষ্টিতে দৃষ্টিও মেলালো না।তার দৃষ্টি এখনো সেই আলো আধারীতে।সুফিয়ান কম্পিত হতাশা মিশ্রিত শ্বাস ফেলে পুনরায় বলে উঠলেন
“রূপকথার সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্যই তো ওকে আমার হাতে তুলে দিয়ে ছিলি তাই না.?
সারফরাজ মাথা ঝাকিয়ে জবাব দেয়
“হু”
“নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছি আমি রূপকথাকে।ওর ভালো মন্দ বিচার করার অধিকার আমার আছে নাকি নেই,?
সারফরাজ এবার মাথা তুলে সুফিয়ান কে দেখলো।এরপর খানিক মেপে হাসলো।স্পষ্ট ব্যাথাতুর হাসি।সেই হাসিতে সুফিয়ান এর প্রতি অবজ্ঞা খসে পড়লো।কিন্তু সুফিয়ান তা গায়ে মাখলো না।অদূরে গুড়গুড় শব্দে বিদ্যুৎ চমকালো।তাতে সারফরাজ এর বেদনায় নীল হওয়া মুখশ্রী পরিস্কার নজরে এলো।বৃষ্টির ধারায় ফর্সা মানুষটা ফ্যাকাসে হয়ে উঠছে ।সারফরাজ মনে মনে কথা গুছিয়ে নিলো।এরপর বলে উঠলো
“রূপকথার জন্য আমি বিপদজনক নই কমিশনার সাহেব।অতগুলো মানুষের প্রাণ সেদিন কেনো গেছিলো আপনি সবটা জানেন।আমার মানুষ খুনের হাতেখড়ি হয়েছে রূপকথার নিরাপত্তার জন্য।রূপকথার বসবাস আমার হৃদয়ের গহীনে।ওখানে ওকে ক্ষতি পৌঁছানোর দুঃসাহস কারোর নেই।মেয়ের জন্য অহেতুক ভয় পাচ্ছেন আপনি।রূপকথাকে সামান্য ফুলের টোকা দেবার আগেও তাকে আমায় মোকাবেলা করতে হবে।আর আমায় মোকাবেলা করা মানে সাক্ষাৎ মৃত্যুর জন্য জীবন উৎসর্গ করা।
সুফিয়ান শক্ত গলায় বললেন
“রূপকথার ইচ্ছে বড় ডক্টর হয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানো আর তোর ইরাদা মানুষের প্রাণ নেয়া।তোরা দুজন দুই মেরুর মানুষ।তুই ভুল পথে হাঁটছিস।মেয়েটা ছোট তাই ভুল সঠিক গুলিয়ে ফেলেছে।কিন্তু তুই তো বুঝদার।
“প্রেম ভালোবাসায় সকলেই অবুঝ স্যার।এখানে জ্ঞান বুদ্ধি ক্ষমতা কিচ্ছু করতে পারে না।মনের উপর কারো দখলদারি চলে না।চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।নিজেও তো প্রেম করে বিয়ে করেছেন।তখন এই নীতি বাক্য কাজে দিয়েছিলো?শুনেছিলাম আপনার শশুর এখনো আপনাকে মানেনি।আপনি তো পুলিশ।সৎ মানুষ।তাহলে উনি মানলেন না কেনো?কারন প্রেমিকার বাবার চোখে সব প্রেমিকই ভিলেন।আপনি আর আমি একই নৌকার মাঝি।
সারফরাজ এর খোঁচা মারা কথায় সুফিয়ান চৌধুরীর ইচ্ছে হলো নিজের মাথা নিজেই ফাটাতে।কিন্তু তা সম্ভব নয়।যেভাবেই হোক সারফরাজ কে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানাতে হবে।নইলে রূপকথার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।বাবা হয়ে মেয়ের জীবন এভাবে আধারে ঢেকে যেতে দিতে পারেন না তিনি কিছুতেই।তাই সুফিয়ান সারফরাজ এর সামনে এগিয়ে খপ করে সারফরাজ এর হাত চেপে ধরে বলে উঠলো
“এই দেখ তোর বড় হয়ে তোকে হাত ধরে অনুরোধ করছি।আমার মেয়ের পিছু ছেড়ে দে।রূপকথার থেকেও অনেক সুন্দর মেয়ে আছে ।তাদের বিয়ে কর, প্রেম কর যা খুশি তাই কর।কিচ্ছু বলবো না।প্রমিস
সারফরাজ কাটকাট গলায় উত্তর করলো
“সরি,সম্ভব না।অলরেডি স্ট্যাম্প মারা হয়ে গেছে।
“তোর পায়ে ধরলে মানবি?
“না”
“ভুলে যাস না তোর প্রাণ আমি বাচিয়েছিলাম।নইলে এতদিন জেলে পঁচে মরতি”
সারফরাজ তাচ্ছিল্য হেসে শুধায়
“সিরিয়াসলি?এমন কোন জেল এখনো তৈরি হয়নি যেখানে আমাকে আটকে রাখে।আপনি না বাঁচালেও আমি ঠিক বেঁচে যেতাম।কারন আমাকে থামানোর সাধ্যি কারোর নেই।খামোখা আপনি মরতে বসেছিলেন।আর এটা ভাববেন না যে ,আমি পালানোর জন্য গুলি করেছিলাম আপনাকে।আপনার গুলি খাওয়ার খায়েশ হয়েছিলো তাই সেটা মিটিয়ে ছিলাম আমি।দ্যাটস ইট।
“এতো বড় নাফরমানি কথা বলতে তোর বুক কাঁপছে না?
“নাহ,আপাতত আপনার মেয়েকে এক পলক দেখার জন্য প্রাণ ধিকিধিকি করছে।এই বুঝি মরন হয়।সামনে থেকে সরুন তো।সারাদিন দেখতে পারিনি।জান কচলাচ্ছে।
সারফরাজ এর প্রেমঘটিত কথায় সুফিয়ান চৌধুরীর চোখ বুজে এলো।সে পরিস্থিতি সামাল দিতে সারফরাজ এর কাঁধ বুলিয়ে বোঝানোর মতো করে বলে উঠলো
“তাহলে পাপের পথ থেকে ফিরে আয়।আমি নিজে দাঁড়িয়ে তোদের বিয়ে দেবো।
“আমার ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ কমিশনার সাহেব।আর আমার বিয়েতে আপনার কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।আমি নিজে নিজেই দাঁড়িয়ে বিয়ে করতে পারবো।
এবার সুফিয়ান ক্রুদ্ধ হলেন।এই ছেলে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে তা সুফিয়ান খুব ভালো বুঝলেন।তাই রাগী গলায় বললেন
“রূপকথাকে ঠিক ফেরাবো আমি দেখিস তুই।
সারফরাজ শব্দ করে হেসে বলে উঠলো
“আমার চাইতে ধুই ধাপ উপরে আপনার মেয়ে।পারলে ফিরিয়ে দেখান।আপনি ফেরাতে পারলে আমি কখনোই ওকে ডিস্টার্ব করবো না।গড স্যায়ার।কিন্তু ফেরাতে না পারলে আমাকেও থামাতে পারবেন না আপনি।
বলেই হনহন করে বাংলোর আঙিনায় গিয়ে দাঁড়ালো সারফরাজ।এরপর ডাকলো
“হেই ফেইরি টেইল…
নিজ কক্ষে বসে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে রূপকথা।সুফিয়ান রূপকথার হাতে ধরে বুঝিয়েছে সারফরাজ মানুষ ভালো নয়।সে রূপকথার জন্য ক্ষতিকারক।কিন্তু রূপকথা তা মানতে নারাজ।সুফিয়ান এর কষ্টে রূপকথা নিজেও ব্যথিত হয়েছে।মানুষটাকে এতটা অসহায় আগে কখনো দেখেনি সে।এক দিকে বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা অন্যদিকে সারফরাজ এর প্রতি মনের টান।কোনোটাই অস্বীকার করতে পারে না রূপকথা।রূপকথার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সে মাঝ সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে।কেউ একজন হাত ছেড়ে দিলেই তার নির্ঘাত মৃত্যু।
রূপকথার ভাবনার মাঝে সারফরাজ আবার ডাকলো
“রূপকথা!
সারফরাজ এর আকুলতা মিশ্রিত আহ্বান ফেরাতে পারলো না রূপকথা।সে দৌড়ে বেলকনির দরজা খোলে বেরিয়ে এলো।সামনে সারফরাজ পেছনে তার বাবা।দুজনেই আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।সারফরাজ গলা বাড়িয়ে বুক চাপড়ে বললো
“লাভিউ ইউ সুইট হার্ট।বুকটা খাঁখাঁ করছিলো।এখন শান্তি পাচ্ছি।গুড নাইট।।
এরপর সুফিয়ান চৌধুরীর পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“প্রতিদিন এভাবে এসে হানা দেবো ভালোবাসার সংজ্ঞা আওড়াতে।চাইলেও আটকে রাখতে পারবেন না।কারন পাখি আমার।আপনি শুধু দানা পানি ছিটানোর মালিক।আর কিছুই না।
উত্তর শোনার অপেক্ষায় দাঁড়ালো না সারফরাজ।হনহন পায়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।সুফিয়ান তপ্ত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের ঘর অভিমুখে পা বাড়ালেন।
রূপকথা চলে যাবার পর থেকে নেলির মনটা ভালো নেই।একাকী কিচ্ছুটিতে মন বসে না তার।কলেজেও যেতে ইচ্ছে করে না।তবুও মনটাকে টেনে টুনে ঠিক করে বই খাতা হাতে কলেজে ছুটলো নেলি।আমজাদ হায়দার বাসায় নেই।গ্রামের বাড়িতে গেছে।গাড়ির ড্রাইভার ও গিয়েছে সাথে।নেলিকে আজ একাই রিক্সা করে যেতে হবে।তাই একটু আগে আগে বাসা থেকে বের হলো।
বাসা থেকে বের হবার আগে আকাশে নজর বুলালো।কোনো মেঘ নেই।ঝলমলে আকাশ।বৃষ্টি আসার চান্স নেই বললেই চলে।তাই ছাতা ছাড়াই বেরিয়ে এলো সে।
বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রিক্সার অপেক্ষা করলো।কিন্তু রিক্সা ওয়ালা যেনো অমাবস্যার চাঁদ।সহসা দেখা মিললো না।মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে থেকে কপাল চোখ কুঁচকে বিরক্তিতে হাঁটা ধরলো নেলি।হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এলো তবুও কোনো খালি রিক্সার দেখা পেলো না।এদিকে ঘড়ির কাটা লাগাম হীন দৌড়ে চলছে।ইম্পরট্যান্ট ক্লাস মিস হলে কলেজ গিয়েও কোনো লাভ হবে না।
রিক্সা খুঁজতে খুঁজতে হঠাতই ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি নামলো।চারপাশে কোনো ছাউনি বা বড় গাছ নেই।নেলির মেজাজ যেনো তরতর করে মাপকাঠি পার করলো।রাগে জিদে চিৎকার করে চোখ বুঝে দাঁড়িয়ে রইলো রাস্তার মধ্যখানে।হঠাৎ কেউ মাথায় ছাতা মেলে ধরলো।এক চোখ খোলে সামনে তাকাতেই দু চোখ বিস্ফারিত হলো।সামনে হাস্যজল অভিরূপ দাঁড়ানো।এই বৃষ্টির মধ্যে অভিরূপের সাক্ষাৎ অবাক করলো নেলিকে ।নেলি কিছু প্রশ্ন করার আগেই অভিরূপ বলে উঠলো
“খেঁক শিয়ালের বিয়ে দেখতে বের হয়েছো ছাতা ছাড়া?বর্ষা কালের আকাশের কোনো ব্যালেন্স আছে?
শ্যাম বর্ণের সুঠাম দেহী পুরুষের আকর্ষণীয় চোখ মুখে খেই হারিয়ে নিরুত্তাপ তাকিয়েই রইলো নেলি।বিপরীত মুখে একটা প্রাইভেট কারের আগমন দেখে নেলিকে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো অভি।এরপর কোমর জড়িয়ে উঁচু করে তুলে নিজের গাড়ির পাশে দাঁড় করালো।সব কিছু নেলির কাছে স্বপ্ন মনে হলো।সে আনমনে অভিরূপ এর গাল টিপে ধরলো।অভিরূপ ঠোঁট কামড়ে হেসে উত্তর করলো
“ঘুম ভাঙেনি?এটা স্বপ্ন নয় মিস।এভাবে কেউ পুরুষের শ্লীলতাহানি করে?
অভিরূপ এর প্রশ্নে ভড়কে গেলো নেলি।সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নিজেকে একবার পরখ করলো।শরীর প্রায় ভিজে গেছে।নেলি মুখ লুকিয়ে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করলো নিজের এমন উদ্ভট বেহুদা
আচরণে।এরপর নিভু গলায় বলল
“সরি, বুঝতে পারিনি।
অভিরূপ নেলির লজ্জায় লাল আভা ছড়ানো মুখ দেখে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো
“চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।
লজ্জায় কাবু হয়ে মাথা নিচু করে সম্মতি জানালো নেলি।অভিরূপ ড্রাইভিং সিটের পাশে নেলিকে বসতে বলে নিজেও বসে গেলো।এরপর টিস্যু এগিয়ে বলে উঠলো
“মুছে নাও।
নেলি ঠোঁট টিপে টিস্যু নিয়ে ছোট করে থ্যাঙ্কস জানালো।এরপর চুল,শরীর মুছতে ব্যস্ত হলো।
নেলিকে একবার গভীর ভাবে পরখ করলো অভিরূপ।এই অদ্ভুত বোকা মেয়েটাকে কেনো জানি ইদানিং তার বেশ ভালো লাগছে।মনের অজান্তেই গোপনে গোপনে করে চলেছে ফলো।আচ্ছা এমনটা হবার কারন কি?তবে কি অভিরূপ প্রেমে পড়লো?
সুফিয়ান চৌধুরীর পুরোনো এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ে আজ।ভদ্রলোক নিজে এসে অনুরোধ করে গেছেন পুরো পরিবারকে উপস্থিত হবার জন্য।রূপকথাকে প্রথমে বাড়ির বাইরে বের করতে গাইগুঁই করলেন সুফিয়ান।কিন্তু পরে কি ভেবে যেনো রাজি হলেন।সুফিয়ান জানেন ওই বদমায়েশ ছোকরা ঠিক ওখানে গিয়েও উপস্থিত হবে।মানুষের সামনে শেষমেশ মাথা না কাটা যায়।তাই রূপকথাকে ডেকে কঠিন গলায় বললেন
“তোমার ডেঞ্জারাস প্রেমিক কে আবার ওখানে ডেকো না।বাবার কথা না মানো অন্তত বাবার মান সম্মান এর উপর দয়া করো।
সুফিয়ান চৌধুরীর কথায় রূপকথা মন ভার করে বলে উঠলো
“সারফরাজ কি গায়ে রক্ত মেখে ঘুরে বেড়ায় পাপা?ওকে দেখলে কি বোঝা যায় ও নির্দয়?
সুফিয়ান নাক ফুলিয়ে উত্তর করলেন
“মুখে মুখে কথা বলো না।এসব শুনে শুনে ভাবছো আরে বাহ সিনেমার হিরো দের মতো মানুষ মারছে!কিন্তু যেদিন সামনে থেকে ফেস করবে এই দৃশ্য সেদিন বুঝবে বাবা কেনো এমন করি।
রূপকথা আর কথা বাড়ালো না।সে একটা পার্টি গাউন নিয়ে তৈরি হতে চলে গেলো।
সন্ধ্যার আগে আগে পরিবার নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন সুফিয়ান।আর মনে মনে দোয়া করলেন
“শয়তান টার সাথে যেনো কিছুতেই দেখা না হয় মাবুদ।
মনে মনে জতো ধরনের দোয়া দরুদ আছে সব পড়লেন সুফিয়ান।এরপর চোখ বুজে সিটে হেলান দিলেন।ত্রিশ মিনিট পর কনস্টেবল রফিক ডেকে বলে উঠলো
“এসে গেছি স্যার।
সুফিয়ান তড়িৎ গাড়ি থেকে নেমে মেয়ে আর স্ত্রীর হাত ধরে বাইরে বের করলেন।এরপর চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন।চারপাশে সারফরাজ কে না দেখে বেশ শান্তি অনুভব করলেন মনে মনে।মেয়ে যে তার কথা রেখেছে এটা ভেবেই এক প্রকার নিশ্চিন্ত হলেন।
বিয়ে কেন্দ্র করে বিশাল বড় আয়োজন করেছেন শিল্পপতি আশরাফ মির্জা।একমাত্র মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে কিচ্ছুটি বাদ রাখেন নি।রূপকথাকে দেখতে পেয়ে আশরাফ মির্জা দ্রুত পদে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন।এরপর একজন ওয়াইটার ডেকে ওয়েলকাম ড্রিংকস দিতে বললেন।
সেন্টার ভর্তি পরিচিত মানুষজন।আরো কয়েকজন পুরোনো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাক্ষাৎ পেলো সুফিয়ান।দীর্ঘদিন বাদে পরিচিত হারানো বন্ধু পেয়ে মেয়ে স্ত্রী ভুলে আড্ডায় সামিল হয়ে হাস্য রসে মেতে উঠলেন সুফিয়ান চৌধুরী।রেখা নিজেও আশরাফ মির্জার সহধর্মীনির সাথে আলাপে মশগুল হলেন।ওয়াইটার জুস এনে রূপকথার সামনে ধরতেই কয়েকটা বাচ্চার দল হুড়োহুড়ি করে ওয়াইটার এর সাথে ধাক্কা খেলো।অসাবধানতা বশত ওয়াইটার এর হাত থেকে জুস পড়লো রূপকথার জামায়।ওয়াইটার ভীত ফ্যাকাসে মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করতেই রূপকথা তাকে রিল্যাক্স থাকতে বলে ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।
ওয়াশরুমের সাইডটা ফাঁকা।সব কিছুর আয়োজন বাইরের খোলা এরিয়ায় থাকায় ভেতর প্রায় ফাঁকা।রূপকথা ওয়াশ রুমের বাইরের বেসিন থেকে পানি নিয়ে জামা ক্লিন করতে লাগলো।রূপকথা যখন নিজের ড্রেস ক্লিন করতে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ এসে পেছন থেকে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আকস্মিক পুরুষালি স্পর্শে ভীত হয়ে থমকে দাঁড়ালো রূপকথা।কিন্তু যখন পেছনের মানুষটা রূপকথার ঘাড়ে বিড়ালের মতো নাক ঘষলো তখন রূপকথার বুঝতে বাকি রইলো না মানুষটা কে।
সারফরাজ এর উষ্ণ স্পর্শে চোখ বুজে সারফরাজ এর বাহু জড়িয়ে ধরলো রূপকথা।রূপকথার কানে মাথায় চুমু একে নেশাক্ত গলায় সারফরাজ বললো
“তোমার উত্তাপে মোমের মতো গলতে ইচ্ছে করছে।এতো আগুন কেনো জ্বলিয়েছো ?
কথার গহীন মর্মার্থ বুঝলো না রূপকথা।নিছক সামান্য প্রেমানুভূতি ভেবে আবেশে উত্তর দিলো
“গলতে মানা করেছে কে?
সারফরাজ দুস্টু হেসে হাতের বাধন আরেকটু শক্ত করে ফিসফিস করে বলে উঠলো
“সইতে পারবে না।কেঁদে কেটে পালাতে চাইবে।আরেকটু বড় হও।
রূপকথা কপাল কুঁচকে উত্তর করলো
“ধুর।
সারফরাজ রূপকথার লতানো কোমর চেপে ধরে মাদকতা মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো
“নেশা ধরে যাচ্ছে হানি।নিজেকে ধরে রাখা দুষ্কর।ভুলভাল কিছু করে ফেললে সব দোষ তোমার।হু?
নিষিদ্ধ ইঙ্গিত অল্প টের পেলো রূপকথা। লজ্জায় তার কর্ণদ্বয় লাল হয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো।নিজেকে সারফরাজ এর বন্ধন থেকে ছাড়ানোর বৃথা প্রয়াস করে বলে উঠলো
“তোমাকে এখানে ডাকাই আমার ভুল হয়েছে।পঁচা লোক।
সারফরাজ রূপকথার গালে চুমু একে আহ্লাদী গলায় বলে উঠলো
“তোমার আগে ইনভাইটেশন পেয়েছি আমি ডার্লিং।অভিরূপ এর মামাতো বোনের বিয়ে এটা।
সারফরাজ এর আদরে রূপকথার ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে হলো এই মুহূর্তে।ঘুম ধরা নেশালো চোখে আয়নায় সারফরাজ কে একবার দেখলো সে।নিঃসন্দেহে সুদর্শন ,মোহনীয় একটা প্রেমিক পুরুষ সে।মানুষটা তার একান্ত।আর কারোর নয়।সারফরাজ এর হৃদয়ের পুরো দখলদারি রূপকথার।শুধু কি তাই?সেতো সারফরাজ এর সাম্রাজ্যের রানী।সেখানে শুধুমাত্র রূপকথার রাজত্ব চলে।আর কারোর না।
রূপকথা তৃপ্তির হাসির রেখা ঠোঁটে ফুটিয়ে সারফরাজ এর পানে ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সারফরাজ এর কোমর।এরপর চোখ বুজে আবেশী গলায় বলে উঠলো
“তোমার হৃদ স্পন্দন কার নাম জপে সারাক্ষন?
সারফরাজ রূপকথার নাকে চুমু খেয়ে জবাব দেয়
“যার বসবাস এখানে তার।
চেকমেট পর্ব ৩০
রূপকথার উষ্ণ স্পর্শে ধীরে ধীরে শ্বাস ভারী হয় সারফরাজ এর।লজ্জায় নুইয়ে পরে রূপকথা।সারফরাজ রূপকথার কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাঁপানো গলায় বলে উঠে
“আম ডায়িং টু হ্যাভ ইউ মাই সুইট ম্যাডনেস।আই থিংক আই হ্যাভ টু গো নাও।আদারওয়াইজ আ উইল গো ইনস্যান এন্ড ইউ উইল লুজ এভরিথিং।