চেকমেট পর্ব ৩৫
সারিকা হোসাইন
চারপাশে নিস্তব্ধ নিগূঢ়তা নেমে এলো।মনে হচ্ছে পৃথিবী থমকে গিয়েছে।পৃথিবীতে কোনো প্রাণ বেঁচে নেই।সব কিছু যেনো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।সেই ধ্বংস স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে আছে রূপকথা একা।
সারফরাজ এর গাল বেয়ে নাক বেয়ে এখনো তাজা রক্তের ধারা গড়িয়ে পরছে।এই মুহূর্তে সারফরাজ কে কোনো সুদর্শন প্রেমিক পুরুষ বলে মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে সামনে সারফরাজ নয়।একটা রক্ত চোষা পিশাচ দাঁড়িয়ে আছে।যে এই মুহূর্তে রক্তের নেশায় বুদ উন্মাদ হয়ে রয়েছে।একটু নড়চড় হলেই সে রূপকথাকে ও গিলে নেবে।সারফরাজ এক পা এগিয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু রূপকথা কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো।তার পা জোড়া কাপছে টলমলে হয়ে।শরীর কেমন ভার শূন্য ঠেকছে।মনে হচ্ছে মাথার ভেতর কোনো ঘিলু নেই।সব কেমন ফাঁকা।
সারফরাজ এগিয়ে এসে খপ করে রূপকথার হাতের সরু কব্জি চেপে ধরলো।সারফরাজ এর শীতল স্পর্শে রূপকথা শিউরে উঠলো।ভয়ে চিৎকার করতে চাইলো।কিন্তু কন্ঠ নালি বড্ড বেঈমানি করলো।কোনো আওয়াজ বাইরে বেরুতে দিলো না।
চোখ দুটো কেমন চঞ্চল হয়ে উঠেছে।সারফরাজ এর ক্রুর চোখে দৃষ্টি মেলাতে ভয় পাচ্ছে তারা।অথচ পুরো ঘটনার বাহক সে নিজেই।বড় গলায় সারফরাজ কে বলেছে নিয়াজ মোর্শেদ তার বাবাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।গোপনে আড়ি পেতে তার বাবার কাকুতি মিনতি সে নিজে কানে শুনেছে।সারফরাজ যেনো তাকে শূলে চড়ায়।তার বাবাকে হ্যানস্থা করার জন্য বুড়োটাকে যেনো উচিত শিক্ষা দেয় সারফরাজ।প্রেমিকার আদেশ তথ্যাস্ত পালন করেছে সারফরাজ।তবে রূপকথা ভয় কেনো পাচ্ছে?
সারফরাজ ঠান্ডা গলায় শুধালো
“দেখবে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রূপকথা সারফরাজ এর শার্ট খামচে ধরে মাথা দোলালো।সে দেখবে না এমন বিভৎস দৃশ্য।রূপকথা ভেবে ছিলো সারফরাজ লোক মারফত নিয়াজ কে শায়েস্তা করবে।হালকা কিল ঘুষি থ্রেট দেবে।কিন্তু সারফরাজ নিজেই তাকে বুম বুম বাউন্স করে দেবে এটা রূপকথার কল্পনাতীত।এই মুহূর্তে রূপকথার কি করা উচিত রূপকথা ভুলে গেছে।ফাঁকা মস্তিষ্ক কিন্তু মনে হাজারো দুস্টু আগ্রহ ভাটুর ভুটুর করে উঠলো।নিয়াজ মোর্শেদ কেমন করে পৃথিবী থেকে ডিলিট হয়েছে তা দেখার সাধ জাগলো।মনকে নিজেই বুঝালো, সে ভবিষ্যৎ ডক্টর।এমন বেকাবু ভয় তাকে মানায় না।দুদিন পর নিজেই মানুষের বুক পেট কাটবে সে।নিজেকে নিজেই হ্যাংকি পাঙ্কি বুঝ দিয়ে জোর গলায় কথা বলতে চাইলো রূপকথা।কিন্তু এবারও কন্ঠ নালী নিষ্ঠুরতা দেখালো।ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বললো।কিন্তু আওয়াজ হলো না।শকুনি নজরের মালিক সারফরাজ বুঝলো বোধ করি ঠোঁটের ইঙ্গিত।সে এক হাতে জাপ্টে ধরে নিয়াজ মোর্শেদ এর কক্ষের দরজার সামনে দাঁড় করালো রূপকথাকে।
পিটপিট চোখে একবার নিয়াজ কে পরখ করলো রূপকথা।কেমন চোখ উল্টিয়ে মরে পরে আছে বুড়ো ভাম।কপালের ফুটা দিয়ে মগজ গলে গলে পড়ছে।আর কিছু দেখার অবস্থায় রইলো না রূপকথা।সারফরাজ এর শার্ট খিচে ধরে চোখ বুঝলো।এরপর সারফরাজ এর বুকে মাথা হেলিয়ে হুশ হারালো।
জ্ঞান হীন রূপকথার মুখের পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো সারফরাজ।এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে কল করলো লুইস কে।ভবনের বাইরেই অপেক্ষা করছিলো লুইস আর ইয়ং।ফোনে রিং বাজতেই ব্লুটুথ ডিভাইস কানেক্ট করে লুইস উত্তর করলো
“বস।
“Clean up the place and get rid of the body
বলেই খট করে কল কেটে দিলো সারফরাজ।এরপর রূপকথাকে কাঁধে তুলে লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে এলো লোক চক্ষুর আড়ালে।
নিজের গাড়িতে এনে রূপকথাকে সিটে হেলান দিয়ে বসালো সারফরাজ।এরপর পানির বোতল এর ক্যপ খোলে চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো।কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হলো না রূপকথার।সে যেনো গভীর ঘুমে মগ্ন।এই ঘুম ভাঙবার নয়।
এই মুহূর্তে সারফরাজ এর কাছে রূপকথাকে ঘুম কুমারী শেহজাদী মনে হচ্ছে।রূপকথার ফর্সা মুখে জলের বিন্দু গুলো হিরের ন্যয় জ্বলজ্বল করছে।গোলাপি ঠোঁট জোড়া সদ্য প্রস্ফুটিত শিশির ভেজা পদ্ম।ধীর গতির শ্বাসের কারনে রূপকথার বক্ষ উঠা নামা করছে।চোখের বড় বড় পাপড়ি গুলো কেমন ধনুকের ন্যয় বেঁকে রয়েছে।চিকন খাড়া নাকটার প্রতি বেশ ঈর্ষা হলো সারফরাজ এর।
“এই মেয়েকে এতো সুন্দর কে হতে বলেছে হু?পুরা আঙ্গুন সুন্দরী।সারাক্ষন মাথা নষ্ট করে রাখে।দেবো নাকি কয়েক দফা ভালোবাসা?
রূপকথার এলোমেলো চুলগুলো আলগোছে কানের পিঠে গুঁজে দিলো সারফরাজ।বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরে গিয়েছে বেশ খানিকটা।নিষিদ্ধ অঙ্গে সারফরাজ এর দৃষ্টি স্থির হলো।পাপবোধ থেকে দৃষ্টি সরাতে চাইলো তৎক্ষণাৎ।কিন্তু পারলো না।দৃষ্টি আর মনের যুদ্ধে দৃষ্টিই জয়ী হলো।সারফরাজ হটাতে পারলো না তাকে।সুডৌলো গঠনে শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হলো।নিষিদ্ধ বাসনা কব্জা করলো পুরো শরীর।এমন অনুভূতি আজ প্রথম।পুরুষত্বের লাগাম টেনে ধরা কষ্ট সাধ্য ব্যপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এহেন খতর নাক পরিস্থিতি রোধে নিজেকে বেশ ধমকি দিলো সারফরাজ।বন্দুকের ভয় ও দেখালো মনকে।কিন্তু বেয়াড়া মন নেশাগ্রস্ত মাতালের ন্যয় তাল হীন হলো।সে তার সিদ্ধান্তে অটল।
শেষমেশ উপায়ান্তর না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো সারফরাজ।গায়ের শার্ট ভিজে জপজপে অবস্থা।গায়ে কেউ কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।বরফ মিশ্রিত সুইমিং পুলে ডুব দিতে পারলে শান্তি পাওয়া যেতো।
“কি রে এভাবে ঘামছিস কেনো?
আকস্মিক অভির গলায় কেঁপে উঠলো সারফরাজ।যে কেউ দেখলে ভাববে সারফরাজ বড় কোনো চুরি করে ধরা পড়েছে।সারফরাজ এর অদ্ভুত আচরণে অভি কপাল কুঁচকে পুনরায় শুধালো
“কি আছে গাড়ির ভেতর?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?দেখি তো!
বলেই গাড়ির ভেতর উকি মারতে উদ্দ্যত হলো অভি।সারফরাজ অভিরূপের কলার চেপে ধরে শীতল কম্পিত গলায় বলে উঠলো
“থেমে যা।বোম আছে ভেতরে।ওই তেজস্ক্রিয় মিশ্রিত ধ্বংস দেখার অধিকার শুধু আমার।আর কারো না।
বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল অভিরূপকে।সারফরাজ এর পেশীবহুল হাতের ধাক্কায় দূরে সটকে গেলো অভি।তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট করতে করতে সারফরাজ বলে উঠলো
“নেলি আছে উপরে।ওকে বাড়ি পৌঁছে দিস।আমি গেলাম।
পার্টি ময় রূপকথাকে খোঁজে না পেয়ে বেশ বিরক্ত হলো নেলি।রূপকথার ফোনে বেশ কয়েকবার কল করেও কোনো পাত্তা পাওয়া গেলো না মেয়েটির।নেলি জানে সারফরাজ কে পেলে রূপকথা দুনিয়া ভুলে যায়।তাছাড়া সারফরাজ রূপকথার সঙ্গে থাকলে বাড়তি টেনশনের কোনো ঝামেলা নেই।খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকেছে অনেক খন আগে।সব ফ্রেন্ডরা ইতোমধ্যে পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।নেলি আর সময় অপচয় করলো না।রূপকথাকে ছোট একটা টেক্সট পাঠিয়ে নীচে নেমে এলো সে।
গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে বাইরে পা রাখতেই নেলি বিস্ময়ে হতবাক হলো।সামনে অভিরূপ দাঁড়িয়ে আছে।নেভি ব্লু শার্ট আর জিন্স কার্গো তে মাত্রাতিরিক্ত কিউট লাগছে তাকে।
নেলি দৌড়ে এসে অভির সামনে দাঁড়িয়ে শুধালো
‘পা ঠিক হয়েছে?হাঁটা চলায় কোনো প্রব্লেমস নেই তো না?মেডিসিন ঠিকঠাক চলছে?নাকি স্কিপ করে যাচ্ছেন?
অভি ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে উত্তর করলো
“যাদের পার্সোনাল ডক্টর থাকে ট্রিটমেন্ট করার জন্য তাদের অসুস্থতা ঘিরে রাখবে কোন শক্তিতে?
বলেই চোখ টিপলো অভি।অভির কাঁধে ছোট পাঞ্চ মেরে নেলি লাজুক ভঙ্গিতে বলে উঠলো
“আপনি কিন্তু খুব দুস্টু।কিন্তু আপনাকে দেখলে মোটেও বোঝা যায় না।ওই শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট আর কি!
নেলির কথায় ঠোঁট কামড়ে হাসলো অভি।এরপর হঠাতই বুক চেপে চোখ মুখ কুঁচকে বসে গেলো রাস্তার মাঝখানে।অভিরুপের আকস্মিক অবস্থায় ঘাবড়ে গেলো নেলি।সে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো
“কি হলো আপনার?
অভি বুক চেপে ধরে ভাঙা গলায় বলে উঠলো
“তোমার আপনি সম্বোধন হৃদয় নিতে পারছে না।তাই হার্টবিট ব্লক করে আমায় মারতে চাইছে।
অভির ছলাকলায় মন ভার হলো নেলির।সাংঘাতিক বজ্জাত লোকটা তাকে অযথা ভয় দেখিয়েছে।আরেকটু হলেই দিশাহীন হয়ে যেতো সে।তার মনের খবর না জেনেই অসভ্য পুরুষ তাকে ভোগাতে চাইছে।সময় বুঝে ঠিক উচিত শিক্ষা দেবে নেলি তাকে।নেলি মনে মনে হাজারো গালাগালি দিলো অভিকে।এরপর লাজুক হেসে হনহন করে হেটে সামনে এগিয়ে গেলো
পেছন থেকে অভিরূপ চিৎকার করে ডেকে বলে উঠলো
“নিষ্ঠুর মানবী নেলি হায়দার শহর জুড়ে আন্দোলন করবো তোমার বিরুদ্ধে।দাবি না মানা পর্যন্ত একশত চুয়াল্লিশ ধারা জারি থাকবে।ব্যস্ত শহরে ভালোবাসার মিছিল হবে।এক দফা এক দাবি।আপনি থেকে তুমি বলবি।
নেলি খিলখিল করে হেসে উঠলো অভির কথায়।অভিরূপ বুঝলো দাবি পাশ হয়ে গেছে।ঝটপট মাটি থেকে উঠে দৌড়ে নেলির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো অভি।মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলো মুক্তো ঝরা হাসি।এরপর ঘোর লাগানো স্বরে বলে উঠলো
“ক্ষমতা থাকলে সমস্ত কোলাহল থামিয়ে দিতাম শুধু তোমার হাসির মিষ্টি রিনিঝিনি সুর শোনার জন্য।থমকে দিতাম সময় ক্ষণ।আর হেসো না নেলি।ও হাসিতে আমার মরন হয়।
সুফিয়ান চৌধুরীর বাড়ির সামনে গাড়িতে বসে আছে সারফরাজ।পাশেই অবচেতন রূপকথা।রূপকথার কোমল মুখের পানে গভীর দৃষ্টি ফেললো সারফরাজ।মেয়েটির চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে গলা শুকিয়ে এলো সারফরাজ এর।সে হাত বাড়ালো রূপকথার গোলাপি অধরের পানে।ছুঁয়ে দিতে চাইলো পরম যত্নে।কিন্তু নিজের রক্তাক্ত হাতের পানে তাকিয়ে থেমে গেলো।এরপর তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠলো
“তুমি নিস্পন্দ আমি রক্তাক্ত।দুজন দুই মেরুর মানুষ।অথচ ভালোবাসা?সে তো অবুঝ।এসব পার্থক্য সে বুঝতে নারাজ।
সারফরাজ টিস্যু দিয়ে ঘষে ঘষে নিজের হাত মুছে নিলো।নিয়াজ মোর্শেদ এর রক্ত শুকিয়ে চামড়ার সাথে লেগে রয়েছে।সাবান পানি ছাড়া উঠবে না মনে হচ্ছে।হাতের দুমড়ানো টিস্যু বাইরে ছুড়ে ফেলে রূপকথাকে শক্ত আলিঙ্গনে বাধলো সারফরাজ।এরপর রূপকথার কানে চুমু একে ফিসফিস করে বলে উঠলো
“তোমাকে ছুঁয়ে পবিত্র হবার চেষ্টা করছি রূপকথা।ভেতরটা একদম পঁচে গেছে।
সুফিয়ান চৌধুরী কে কল করেছে সারফরাজ বেশ কিছুক্ষণ আগে।ভদ্রলোক এখনো বের হলো না।সারফরাজ স্ব শব্দে গাড়ির হর্ন বাজালো।রূপকথার জ্ঞান কেনো ফিরছে না এটা নিয়ে তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এদিকে সুফিয়ান এর কোনো পাত্তা নেই।সারফরাজ এর ইচ্ছে হলো বাড়ির গেট ভেঙে ফেলতে।কিন্তু শশুর বাড়ীর ক্ষতি করলে রূপকথা তার থেকেই ক্ষতি পূরণ আদায় করবে দ্বিগুন।শেষমেশ লস তারই।দ্বিতীয় বার হর্ন বাজতেই বেরিয়ে এলো সুফিয়ান।সুফিয়ান কে দেখে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলো সারফরাজ।ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এসে চাপা গলায় সুফিয়ান ধমকে উঠলো
“আর জায়গা পেলি না?আমার মেয়ের সামনেই সমস্ত অঘটন ঘটাতে হয় তোর?প্রেম কি আছে না ভেঙেছে?ভাঙলে আমি মহা খুশি।কাল মসজিদে সিন্নি বিলাবো।
সারফরাজ হো হো করে হেসে বললো
“আমার ভালোবাসার শিকল ছেড়ে উড়ে যাবার সাধ্য আপনার মেয়ের নেই।সে আমার বুকেই বেহুশ হয়েছে।
“খুন করার আগে দেখবি না আশেপাশেবকে আছে?
“আমি জানি নাকি যে আপনার মেয়ে আমার লেজ ধরে কিলিং স্পটে ঢুকে যাবে?আমি তো স্পট ক্লিয়ার করেই গেছি।
সুফিয়ান ব্যথিত গলায় শুধালেন
“মারলি কেনো, ?অন্যভাবে তো মিট করা যেতো।আমি সব শুনেছি।ফোনের এপাড়ে আমিই ছিলাম।
“আপনার মেয়ে আবদার করেছে স্যার।খুব শখের বুঝলেন?আবদার ফেলতে পারি না।একদম মাথায় উঠে বসেছে।চাবি ওয়ালা পুতুল হয়ে গেছি আমি।ঘুড়ির নাটাই আপনার মেয়ের হাতে।সে যেভাবে উড়াবে আমি ওভাবেই উড়তে বাধ্য।
মেয়ের এমন ভয়ংকর দুর্ঘটনায় হাত আছে শুনেই বুক চেপে দাঁড়িয়ে গেলেন সুফিয়ান।এরপর দাঁতে দাঁত পিষে বললেন
“মেয়েটার মাথা এভাবে খাস না।পরে খুব পস্তাবি।বারো বছর ধরে পালছি।এমন সব অদ্ভুত বায়না ধরে যার অস্তিত্বই এই পৃথিবীতে নেই।
“ধরুক।না থাকুক এই নশ্বর পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব।সমস্ত বায়না পূরণ করবো আমি।হোক আমার সাধ্যের বাইরে।তাছাড়া রূপকথার বায়নার অস্তিত্ব যেই পৃথিবীতে নেই সেই পৃথিবীর অস্তিত্ব কোন কাজে ?যদি রূপকথা চায় এই ফালতু পৃথিবী ধ্বংস হোক তবে দ্বিতীয় হিটলার হবো আমি।পৃথিবীর প্রত্যেকটা শহরে আমি নিউক্লিয়ার বোমা মেরে ধ্বংস করবো সব।তবুও সে হ্যাপি থাকুক।
সারফরাজ এর ভালোবাসার সীমা পরিমাপ করে চোখ উল্টালেন সুফিয়ান।এরপর বললেন
“বোম মেরে শশুর শাশুড়ি সব উড়িয়ে দিবি?অন্ধ প্রেমিক তুই?নিউক্লিয়ার বোম মারলে তুই বাচবি?তোর প্রেমিকা সে বাঁচবে?প্রেমের ডায়লগে একটু তো বাস্তবতা রাখ।এসব আকাশ কুসুম বলেই আমার মেয়েকে কব্জা করেছিস তাই না?
“চুমু খেয়ে কব্জা করেছি আপনার মেয়েকে।
“আস্তাগফিরুল্লাহ।তোর মুখে গজব পরবে হারামি।
বলতে বলতে
গাড়ির নিকট এসে মেয়ের জ্ঞান হীন মুখের দিকে নজর দিলেন সুফিয়ান।এরপর বলে উঠলেন
“এতো দূর জেহেতু নিয়ে আসতে পেরেছিস তবে ঘর পর্যন্ত এগিয়ে দে।বুড়ো বয়সে এসব ধকল কুলোয় না।
“আপনার মেয়েকে কোলে তুলতে আমি দুই পায়ে রাজি।সারাদিন এই মতলবেই ঘুরি।কখন কোথায় ছুঁয়ে দেয়া যায়।এভাবে সবসময় ছুঁয়ে দেবার অনুমতি দিবেন ঠিক আছে?আমি বিনা দ্বিধায় লুফে নেবো।
সারফরাজ এর ঠোঁট কাটা কথায় দুই কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে সুফিয়ান চৌধুরী বলে উঠলেন
“লোফার কোথাকার।রূপকথার বাপ আমি।একটু সম্মান কর।কান তো পঁচে গেলো তোর শরম লাজ হীন কথায়।এমন লাগামহীন কেনো তুই বলতো?
রূপকথাকে কোলে তুলতে তুলতে সারফরাজ প্রত্যুত্তর করলো
“আমার পিছে না লেগে নিজে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে কি কি কুকীর্তি করেছিলেন ত্রিশ বছর আগে সেটা ভাবুন।সাধু পুরুষ ছিলেন নাকি অসাধু তা বেশ ভালোই জানি।চাইলে কেচ্ছা শুরু করতে পারি।করবো?
সারফরাজ এর খোঁচা দেয়া কথায় চুপসে গেলেন সুফিয়ান।এই ছেলেকে মোটেও ভরসা নেই তার।কখন কোন বেফায়েস কীর্তি উগলে দেয়।তার চেয়ে চুপ থাকাই উত্তম।কিন্তু মনের কৌতূহল মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।তাই ফিসফিস করে শুধালেন
চেকমেট পর্ব ৩৪
“আচ্ছা প্রেম প্রীতির আলাপ বাদ।আসল কথায় আসি।নিয়াজ কে যে মারলি?যদি পুলিশ কেইস হয়?
সারফরাজ শক্ত চোয়ালে অদ্ভুত হাসলো।এরপর ভারী গলায় জবাব দিলো।
“জার্মান শেপার্ড পর্যন্ত শুকে কোনো ক্লু বের করতে পারবে না।হাত বড়োই পাকা কমিশনার সাহেব।যেই প্রমান আমি নিজে লোপাট করেছি বিধাতা ছাড়া কোনো প্রাণীর পক্ষে তা খোঁজে বের করা সম্ভব না।আর যদি পেয়েও যায়।পৃথিবীতে এমন কোন জেল,আইন,আদালত নেই যেখানে আমাকে আটকে রাখবে।আমি দূর্বার।যে আমার বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাকে জাস্ট উপড়ে ফেলবো আমি।সেটা যদি আপনিও হন তাতেও আমি আমার মনের ইরাদা বদলাবো না।