চেকমেট পর্ব ৩৯

চেকমেট পর্ব ৩৯
সারিকা হোসাইন

রূপকথার পায়ের কাছে সিদ্দিকের নিথর রক্তাক্ত দেহ অনাদরে পরে রয়েছে।পাশেই হাটু গেড়ে সিদ্দিকের মুখ পানে তাকিয়ে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্যন দিচ্ছে রূপকথা।যে ছেলেকে মাত্রই চির নিদ্রায় ঘুম পাড়ালো সারফরাজ, রূপকথা তাকে চিনে।প্রায় ই রাস্তায় দেখা হয়েছে তাদের।রূপকথাকে অযথা এটা সেটা জিজ্ঞেস করে খোঁজ খবর নিতো।চট্রগ্রামেও বহুবার দেখেছে এই লোককে সে।মানুষটাকে কখনো কপট বা অসৎ চরিত্রের মনে হয়নি।মুখে মায়াবী হাসি আর চোখে সরলতা।এমন লোকের সাথে সারফরাজ এর কি শত্রুতা?

সিদ্দিকের প্রতি আপাতত নজর দিলো না সারফরাজ।সে টিস্যু নিয়ে এসে রূপকথার হাত শরীর মুছতে লাগলো।পুরো শরীরে রক্তের ছিটা।রূপকথাকে দেখতে বিভৎস লাগছে।তাছাড়া এমন নিকৃষ্ট মানুষের রক্তে রূপকথা রঙিন হয়েছে এটা কিছুতেই সইতে পারছে না সারফরাজ।হাতের বন্দুক ছুড়ে ফেলে হুংকার ছাড়লো
“ইয়ং!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দরজার বাইরে থেকে দৌড়ে এলো ইয়ং আর লুইস।সারফরাজ এর চোখ দেখেই বুঝে গেলো কি করতে হবে।বাক্য বিনিময় করে কিছুই বোঝাতে হলো না সারফরাজ কে।রূপকথাকে এক ঝটকায় নিজের কোলে তুলে লম্বা পায়ে এগিয়ে গেলো ওয়াশ রুম অভিমুখে।পরম যত্নে বাথ টাবে রূপকথাকে শুইয়ে ছেড়ে দিলো কল।এই পর্যন্ত একটা কথাও বললো না রূপকথা।সে মুখ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।এই মুহূর্তে না চাইতেও সারফরাজ কে দেখে তার ভয় লাগছে।প্রথম বারের মতো মনে হচ্ছে সারাফরজ হৃদয় হীন এক নিষ্ঠুর মানব।
রূপকথার মনের কথা শুনলো বোধ করি সারফরাজ।সে বাঁকা হাসলো ।এরপর রূপকথার হাতে সাবান মাখতে মাখাতে বললো

“ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে রূপকথা।ওর মৃত্যু বারো বছর আগেই লিখা ছিলো আমার হাতে।কিন্তু আমি ওকে মাফ করে দিয়েছিলাম।এর জন্য অবশ্য বারোটা বছর ই আমাকে পস্তাতে হয়েছে।শালা আমার বন্ধু ছিলো।কিন্তু বিশ্বাস করো, নটির পোলা এতোই বিখাউজ ও খালি আমার দুর্বলতার সুযোগ ই নিয়ে গেছে এতগুলো বছর।এজন্য এবার স্যাটা ভেঙে দিলাম ।তুমি ভয় পেও না।ও ভালো মানুষ নয়।এসব বাল ছাল টাইপ মানুষের জন্য তোমার চোখে জল মানাচ্ছে না।

সারফরাজ এর মুখের ভাষা শুনে রূপকথার চোখ নিভে এলো।এমন মুখের ভাষা সারফরাজ এর থেকে আর কখনো শুনেনি রূপকথা।সারফরাজ এর হাতের আগল থেকে টেনে নিজের হাত ছুটাতে চাইলো রূপকথা।কিন্তু সারফরাজ আরো শক্ত করে ধরে ঘষে ঘষে রক্ত তুলতে লাগলো।রূপকথা উপায় না পেয়ে অল্প করে বললো
“আমার শরীর গুলাচ্ছে।আমি বাড়ি যাবো।
রূপকথার গলার কাছে সাবান লাগিয়ে একদম নিকটে এলো সারফরাজ।রূপকথার ভেজা ঠোঁটের পানে নেশাক্ত নজরে তাকিয়ে ঘোর লাগা গলায় বললো

“তোমার জন্য যে আরও কতো জনের প্রাণ যাবে আমি নিজেও জানিনা সুইটি।শালা তোমার সকল খবর রুদ্রকে দিতো।এজন্যই রুদ্র এতো ভালো করে চিনে তোমায়।আফসোস সেদিন সালাকে কেনো টুকরো টুকরো করলাম না।না হলে রুদ্রের নোংরা নজর তোমার উপর পড়তো না।দোষ আমার।
বলেই রূপকথার ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ালো সারফরাজ।আকড়ে ধরতে চাইলো ভেজা ঠোঁট।কিন্তু সরিয়ে দিলো রূপকথা।অন্যত্র মুখ ঘুরিয়ে রূপকথা বলে উঠলো
“এসব ঠিক হচ্ছে না।

সারফরাজ তাচ্ছিল্য হাসলো।এরপর জোর করেই চুমু খেলো রূপকথাকে।রূপকথা প্রথমে বাধা দিলেও পরে একদম স্থির হয়ে বসে রইলো।দীর্ঘ চুম্বনের পর সারফরাজ হাঁপিয়ে বলে উঠলো
“তুমি জানতে আমি মানুষের প্রাণ নেই।তবে আজ কিসের এতো ভয়?নাকি আমার অগোচরে অন্য কিছু আছে এখানে?
বলেই রূপকথার চুলের মুঠি চেপে ধরলো সারফরাজ।ব্যথায় রূপকথার চোখ ছলছল হলো।তাতে দৃষ্টি দিলো না সারফরাজ।সে রূপকথার কানে চুমু একে কম্পিত গলায় হিসহিস করে বলে উঠলো

“সময়ের পরিক্রমায় এর থেকেও আমার কুৎসিত রূপ তোমার সামনে আসবে রূপকথা।তবুও আমায় ছাড়তে পারবে না তুমি।একবারও যদি এমন কিছু ভেবেছো তবে পুরো দুনিয়া জ্বালিয়ে ছারখার করবো আমি।তোমাকে আকড়ে ধরে আমি দ্বিতীয় বার বেঁচে থাকার প্রেরণা খুঁজে পেয়েছি।চাইলেও আমাকে আর মারতে পারবে না তুমি।
সারফরাজ এর নিষ্ঠুর কঠিন কথায় রূপকথার চোখ উপচে জল গড়ালো।রূপকথা অস্ফুট গলায় বলল
“লাগছে সারফরাজ।

রূপকথা মিহি স্বরে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হাতের মুঠি আলগা করলো সারফরাজ।এরপর আবদার করলো
“তোমার কোমরের বা পাশে একটা ছোট তিল আছে আমি কি ওখানে একটু আদর করতে পারি?
রূপকথার কোমরের পিছনে তিল আছে এটা রূপকথা নিজেই জানেনা।সারফরাজ জানলো কি করে?রূপকথা চমকে উঠলো।এক দিকে সারফরাজ এর উপর রাগ অন্যদিকে ভালোবাসা মোড়ানো লজ্জা এসে কাবু করলো রূপকথাকে।সে ইতস্তত করে শুধালো

“কি করে জানলে?আমি তো কখনোই বলিনি।
অমায়িক হাসলো সারফরাজ।এরপর হাস্কি স্বরে বললো
“ছোট বেলায় কার কাছে ছিলে তুমি রূপকথা?কতবার ন্যাঙতু ন্যাঙতু দেখেছি তার হিসেব আছে?
এবার লজ্জা এসে আরো ঘায়েল করলো রূপকথাকে।মানুষটা তার সমস্ত সিক্রেট জানে।ছিঃ কি অসভ্য।
সারফরাজ পানির ভেতর হাত দিয়ে রূপকথার কোমর ছুলো।এরপর ফিসফিস গলায় বললো
“আরো কোথায় কোথায় কি রঙের তিল আছে বলবো?
রূপকথা সারফরাজ এর মুখ চেপে ধরে নিভু গলায় বলে উঠলো

“তোমার প্রাণ যাবে আমার হাতে।
সারফরাজ মাদকতা মেশানো গলায় বলে উঠলো
“প্রাণ অলরেডি চলে গিয়েছে।এই কদিন ইচ্ছে করে ইগনোর করেছো।সব টের পেয়েছি।কিন্তু কিচ্ছু বলিনি অভিরূপ এর ঝামেলা নিয়ে বিজি ছিলাম এজন্য।আমাকে কষ্ট কেনো দিয়েছো জান?প্রাণে ধরফরানি উঠে একটু আড়াল হলেই।ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছ?
সারফরাজ এর প্রশ্নে রূপকথার শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।মনে পরে গেলো রুদ্রর হুমকি।বিভীষিকাময় সেই রাতের স্মৃতি মনে পড়তেই দিশেহারা হলো রূপকথা।সে ঝটপট সারফরাজ কে ঠেলে বাথ ট্যাব থেকে উঠে দাঁড়ালো ।এরপর ভেজা শরীরে ড্রয়িং রুমে এসে দাড়ালো।কাঁধের ব্যাগটা এখনো মেঝেতে পড়ে রয়েছে।সেটা তুলে হাতে নিয়ে নিজের ফোন বের করলো রূপকথা।ফোনে চারটা মিসড কল আর একটা মেসেজ।মেসেজ টা একটা বিদেশি নম্বর থেকে এসেছে।ভয়ার্ত চোখে একবার সারফরাজ কে দেখে মেসেজ ওপেন করলো রূপকথা।মুহূর্তেই তার দুনিয়া উল্টে গেলো।ঝটপট ফোন ব্যগে ভরে এলোমেলো গলায় বলে উঠলো

“আমাকে যেতে হবে সারফরাজ।আম্মুর শরীর ভালো নেই।আমাকে অনেক গুলো ফোন করেছে।পরে কথা হবে।
সারফরাজ নিজের ভেজা কাপরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
“জাস্ট টু মিনিটস।আমি চেঞ্জ করে এসে পৌঁছে দিচ্ছি।
রূপকথা হাত তুলে বাধা দিয়ে বললো
“নো নিডস।আমি একাই যেতে পারবো।
রূপকথার নিষেধ শুনে সারফরাজ অবাক হয়ে গেলো।মেয়েটা আজকাল হুটহাট উদ্ভট আচরণ করছে।সারফরাজ তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলো
“ঠিক আছে ভেজা কাপড়েই যাবো।
রূপকথা এবার তেঁতে উঠলো।সে ধমকে বলে উঠলো

“সারাখন এমন চিপকে কেনো থাকতে চাও সারফরাজ?আমার নিজের কোনো ফ্রিডম নেই?যখন বলছি আমি একাই যেতে পারবো তখন তুমি কেনো জেদ করছো?
রূপকথার ধমকে কেঁপে উঠলো সারফরাজ।ভেতরে কেমন সূক্ষ ব্যথা মোচড় দিয়ে উঠলো।স্বচ্ছ চোখ দুটি লাল হয়ে উঠলো।তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে সারফরাজ এগিয়ে এসে রূপকথার মাথায় হাত বুলিয়ে শুধালো
“শরীর খারাপ লাগছে জান?জ্বর এসেছে?মোড সুইং হচ্ছে?এভাবে রেগে যাচ্ছ কেনো?
কোনো মতে নিজেকে সারফরাজ এর থেকে ছাড়িয়ে রূপকথা বললো
“আসছি।এসব ভালো লাগছে না।
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো।রূপকথার যাবার পানে তাকিয়ে সারফরাজ ব্যথিত হলো।রূপকথার বলা সামান্য কয়েকটা কথা তার হৃদয় এফোড় ওফোড় করলো।সারফরাজ এর ভয় হতে লাগলো।ছোট বাচ্চার ন্যয় কান্না পেলো।বুক চেপে ধরে সোফায় ধপ করে বসে গেলো সারফরাজ।এরপর বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“এমন করিস না রে পাখি।আত্মা ফেটে মরে যাবো আমি।তুই আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।

একটা ট্যাক্সি ধরে সারফরাজ এর বাড়ী থেকে নিজ বাড়ি অভিমুখে ছুটলো রূপকথা।সেই সাথে অনবরত ডায়াল করতে লাগলো রুদ্রের নম্বর।এরপর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
রুদ্র ফোন ব্যক করে নাটকীয় স্বরে বলে উঠলো
“হেই বেবি গার্ল কি মনে করে এতো এতো কল হু?
রূপকথা মিনতি করে নিচু স্বরে বলে উঠলো
“আমার মাকে কিছু করবেন না প্লিজ।আমি সারফরাজ এর সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে গেছিলাম।কোনো সম্পর্ক নেই আর আমাদের মধ্যে।আমি সরাসরি নিষেধ করেছি ওকে।আমার মাকে কিছু করবেন না।একটু রহম করুন।
রুদ্র এবার কিটকিটিয়ে হাসলো।এরপর বললো

“আপাতত হাত ভেঙেছি।নেক্সট টাইম এমন ধৃষ্টতা দেখালে একদম পিষে দেবো।
বলেই খট করে লাইন কেটে দিলো রুদ্র।
রুদ্রের ফোন কাটতেই সুফিয়ান চৌধুরীর ফোন এলো।রূপকথা ঝটপট ফোন রিসিভ করে ডুকরে কেঁদে উঠলো।মেয়ের কান্নায় ব্যস্ত গলায় সুফিয়ান বলে উঠলেন
“কি হয়েছে মা?
রূপকথা নিজেকে সামলে বলে উঠলো
“মা মা মাম্মা কোথায় এখন?
সুফিয়ান চৌধুরী তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলেন

“হসপিটালে এসো।একটা বেপরোয়া ট্রাক এসে ধাক্কা দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে কেউ একজন সেভ করে নিয়েছে।হাতে একটু ফ্র্যাকচার হয়েছে।একটু পরেই বাড়ি ফিরে যাব আমরা।
রূপকথা চোখের জল মুছে বলে উঠলো
“আমি আসছি।
ত্রিশ মিনিটের মাথায় হসপিটাল পৌছালো রূপকথা।রেখা বসে আছে বেডে।ডক্টর হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচাচ্চে।রূপকথা ভেতরে ঢুকেই রেখাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।মেয়ের মনে মায়ের জন্য ভালোবাসা দেখে চোখের জল ছেড়ে দিলো রেখা নিজেও।তার প্রতি এতটা আবেগ ঘন রূপকথাকে এর আগে কখনো দেখেন নি তিনি।রেখার মাথায় চুমু একে রূপকথা বলে উঠলো।

“তোমাকে ছেড়ে আর কোত্থাও যাবো না আম্মু।তোমার লক্ষী মেয়ে হয়ে তোমার কাছেই বসে থাকবো।প্রমিস।
রেখা চোখের জল মুছে রূপকথার হাতে চুমু খেয়ে বললেন
“আমি ঠিক আছি বাবা।আমার কিচ্ছু হয় নি।তুই ই তো আমার মেডিসিন।এসব ফ্র্যাকচার ম্যাকচার কিছুই করতে পারবে না আমার।
ডক্টর এর থেকে কাজ শেষ করে সুফিয়ান মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ছুটলেন বাড়ি অভিমুখে।যেতে যেতে শুধালেন
“তোমার পাগল প্রেমিক কই?একাই এলে যে?
রূপকথা প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য কথা তুললো।সুফিয়ান দুস্টু হেসে শুধালেন
“ঝগড়া করেছো?
রূপকথা অকপটে উত্তর করলো
“না পাপা।
মেয়ের মনে কিছু হয়েছে বুঝতে পেরে চুপচাপ গাড়ি চালানোতে মন দিলেন সুফিয়ান।এই বান্দা বান্দি কিয়ামত হয়ে গেলেও যে দুজন দুজনকে ছাড়বে না তা খুব ভালো করেই জানেন তিনি।হোকনা অভিমান, ঝগড়া।এসব ভালোবাসা যে আরো মধুর করে।তিক্ত নয়।

ঘড়ির কাটায় রাত দশটা বেজে পঁচিস মিনিট।
ধরনীতে রাত নেমেছে।আকাশের গায়ে জমেছে কালো মেঘ, যেন কারও অপ্রকাশ্য বেদনার ছায়া। বাতাসে হঠাৎ হালকা শীত। চারদিকে নিস্তব্ধতা, অথচ সেই নীরবতার বুক চিরে কোথাও কেমন একটা কান্নার শব্দ যেন লুকিয়ে আছে।
সারফরাজ চুপচাপ বসে আছে নিজের ঘরের এক কোণে, জানালার পাশের পুরনো চেয়ারে। ইচ্ছে করেই কক্ষে কোনো আলো জ্বালায় নি সে। অন্ধকারে বসেই ভাবনার পাহাড়ে ডুবে রয়েছে।রূপকথার নিষ্ঠুর বাণী,চোখের চাহনি,ভয় সব কেমন তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে।
আকাশে গুড়গুড় মেঘ ডাকছে।বাইরে বৃষ্টি নামে কি না তা সে জানে না। তার ভেতরেই যেন শুরু হয়েছে এক অচেনা বর্ষণ যা—নিঃশব্দ, নির্মম, অথচ থামার নাম নেই।

এই রাত, এই নীরবতা, এই অন্ধকারসব মিলিয়ে মনে হয়, পৃথিবী বুঝি আজ সারফরাজের মতোই একা হয়ে গেছে।
এমন সময় কেউ কক্ষের আলো জ্বালালো।পায়ের শব্দ শুনে সারফরাজ বুঝে নিলো লুইস এসেছে।সারফরাজ এর বেদনার্ত মুখের পানে তাকিয়ে লুইস দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।এরপর মাথা নিচু করে বলে উঠলো
“আই ওয়ান্ট টু শো ইউ সামথিং।
লুইসের কথায় ভাবনার শহর থেকে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।এরপর ছোট করে বললো
“হুয়াট?

লুইস তাৎক্ষণিক নিজের ফোন বের করে সারফরাজ এর বাড়ির বাইরের একটা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বের করে সারফরাজ এর সামনে ধরলো।ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রূপকথার পেছনে কেউ স্টক করছে।শুধু তাই নয়।রূপকথা পিছন ফিরলেই সে লুকিয়ে যাচ্ছে।
ফুটেজ টা একটু জুম করলো সারফরাজ।চতুর মস্তিষ্ক নানান কিছু ভেবে ফেললো নিমিষেই।
লুইসের হাতে ফোন দিয়ে হ্যাঙ্গার থেকে শার্ট নিয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতে সারফরাজ বললো
“রূপকথার বাড়িতে যাচ্ছি।
লুইস ঠোঁট উল্টে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো
“ইটস রেইনিং।

সারফরাজ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে উত্তর করলো
“রেইনিং এর মায়েরে বাপ।পিচ্ছিল দেয়াল কিভাবে টপকাবো আপাতত সেটাই ফাকিং টেন্স।
বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এরপর পার্কিং লটে এসে গাড়ি নিলো না।নিলো পছন্দের কালো রঙের বাইক।মাথায় হেলমেট ঠুসে বৃষ্টি চিড়ে বেরিয়ে গেলো রাস্তায়।এরপর রাস্তায় জমে থাকা জল ছিটিয়ে ঝড়ের বেগে হারিয়ে গেলো অন্ধকারে।

বেলকনিতে ছিটে আসা বৃষ্টিতে আনমনে ভিজে চলেছে রূপকথা।সারফরাজ এর অসহায় করুন মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।হৃদয় ভেঙে খান খান হচ্ছে।অসহনীয় ব্যাথায় বুক ভেঙে চিৎকার আসছে।সারফরাজ যখন জানবে রূপকথা তাকে আর ভালোবাসে না।তখন কি রিয়াক্ট করবে?ও কি বাঁচবে?
এই নিষ্ঠুর ভাবনা আর ভাবতে পারে না রূপকথা।সে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুজে নেয়।বৃষ্টির উত্তাল ঝাপটা এসে তাকে ভিজিয়ে দিলো পুরোটা।শীতে ঠকঠক কাঁপছে শরীর।কিন্তু পাত্তা দিলো না রূপকথা।
আচমকা কেউ জড়িয়ে ধরলো খুব শক্ত করে।খুব চেনা পরিচিত স্পর্শ।রূপকথা চোখ মেলে সারফরাজ এর ভেজা মুখশ্রী দেখলো।দুই হাতে পিপাসার্ত চাতকের ন্যয় সারফরাজ কে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রূপকথা।দুজন দুজনকে বাধলো শক্ত আলিঙ্গনে।সারফরাজ রূপকথার কপালে চুমু একে বলে উঠলো

চেকমেট পর্ব ৩৮

“টেল মি দ্যা ট্রুথ।
রূপকথা সারফরাজ এর বুকে মুখ লুকিয়ে জোরে কেঁদে উঠলো।সারফরাজ তাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে এলো।এরপর টাওয়েল খুঁজে শরীর মাথা মুছিয়ে বলে উঠলো
“কেউ তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে রূপ?
রূপকথা ঠোঁট টিপে মাথা ঝাঁকালো।এরপর ধীর গলায় বললো
“আন্টি বেঁচে আছে সারফরাজ।আমি নিজে তাকে দেখেছি।

চেকমেট পর্ব ৪০