চেকমেট পর্ব ৫১

চেকমেট পর্ব ৫১
সারিকা হোসাইন

রূপকথাকে নিজের কব্জায় আনতে পেরে রুদ্রের ঠোঁটের বাঁকা হাসি প্রশস্ত হলো,সেই সাথে মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো নানান কুবুদ্ধি।একটা সিগারেট বের করে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে লম্বা টান দিলো রুদ্র।এরপর সামনের টেবিলের উপর দুই পা সটান করে মেলে সুইভেল চেয়ার খানায় হেলান দিলো।জ্বলে উঠা নীল চোখ জোড়া বুজে আরেক দফা সিগারেট টেনে নাক দিয়ে ভকভক করে ধোয়া ছেড়ে রুদ্র বলে উঠলো
” প্রাণ ভোমরা ধরে টান দিলে নিশ্চয়ই শ্বাস রোধ হয়ে মরার জোগাড় হয়,তাইনা ?তুই কেমন বোধ করছিস সারফরাজ?বুকটা কি একটু বেশিই ধুকপুক করছে?কোন ভয়ে তুই ভীত আজ?তোর সযত্নে ফুটানো ফুলের মধু শুষে নেবো সেই ভয় নাকি আমার কাছে চূড়ান্ত পরাজিত হবার?

কথাগুলো ভেবে তাচ্ছিল্য হাসলো রুদ্র।রূপকথা মেয়েটাকে তার বেশ মনে ধরেছে।বউ বানিয়ে নিজ প্রাসাদে রেখে দিলে মন্দ হয়না।নিঃসন্দেহে সারফরাজ এর রুচি প্রশংসার দাবিদার।সারফরাজ এর চয়েসের প্রশংসা করে নাক ফুলালো রুদ্র।সারফরাজ বা হাত না ঢুকালে এই মেয়েটা তার প্রেয়সী হতো।কারন মেয়েটা নিজে থেকেই তার কাছে এসেছিলো।অবশ্য প্রেম ভালোবাসা, বিয়ে এসবের প্রতি রুদ্রের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।বিয়ে মানেই গলায় দড়ি।রুদ্র উড়ে উড়ে ফুলের মধু পান করতে ভালোবাসে।কিন্তু আজকাল গরুর মতো গলায় দড়ি পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।বিয়ে নামক দড়ি।নেহাত রূপকথা অসম্ভব সুন্দরী এজন্য নাকি সত্যিই রুদ্র প্রেমে পড়েছে?প্রেমের কথা ভাবতেই চিন্তার মাঝে লজ্জা এসে ভর করলো রুদ্রের চোখে মুখে।এরপর হঠাতই এসব চিন্তা ভাবনা পাশ কাটিয়ে রুদ্রের মনে উদয় হলো সারফরাজ এর উন্মাদনা।অসুস্থ রূপকথাকে হসপিটালে না পেয়ে সারফরাজ এর কি বেহাল দশা হয়েছে এতক্ষনে তা ভেবে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো সে।পা দুখানা দোলাতে দোলাতে রুদ্র পুনরায় বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কোথায় খুঁজবি আমায় তুই?পৃথিবীর কেউ জানেনা আমার এই ঠিকানা।তোর প্রাণেশ্বরী কে বেকাবু মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াবি সারা ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে।কিন্তু আফসোস কোত্থাও মিলবে না।আহ খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?কি করবো বল?তোকে তো থামাতে হবে তাইনা?কিন্তু তুই ভাবিস না।তোর মৃত্যুর পর তোর প্রিয়তমা কে নিজের প্রিয়তমা বানিয়ে রেখে দিবো আমি।প্রমিস তোর চাইতে সুখে রাখবো তাকে।
কথা গুলো বলতে বলতে রুদ্রের দাঁত চেপে এলো।চোখের সামনে সহসাই ভেসে উঠলো সন্তানতুল্য পোষা দুই প্রাণীর রক্তাক্ত মৃত দেহ।রুদ্রের চোখের কোণে জমলো স্বচ্ছ জল।এই জলে প্রকাশ পেলো প্রাণী দুটোর জন্য তার নিখাদ ভালোবাসা।দ্রুত হাতে চোখের কোনের জল মুছে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রুদ্র।এরপর দেয়ালে থাকা ঘড়িতে সময় বুলিয়ে নিজের এসিস্ট্যান্ট কেভিন কে নির্দেশ দিলো

“যাবার সময় হয়ে গেছে কেভিন।সবটা গুছিয়ে নাও।
কেভিন কিছুটা নমনীয় স্বরে বলে উঠলো
“মেয়েটা প্রচন্ড অসুস্থ বস।জ্বরের দাপটে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে।যদি কিছু হয়ে যা…
কেভিন কে কথা শেষ করতে না দিয়েই গর্জে উঠলো রুদ্র।

“হয়ে যাক।সে মরে যাক।তাতে আমার কি এসে যায়?মারার জন্যই তো ধরে এনেছি।আদর সোহাগ করে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করতে নয়।এবার কোন ভাবেই সারফরাজ আমাকে হারাতে পারবে না কেভিন।পুতুল আর চাবি দুটোই আমার হাতে।আমি যেভাবে পুতুল নাচাবো ওভাবেই নাচতে হবে।অনেক হয়েছে।এবার সব কিছুর দাম চুকাবে ওই সারফরাজ।এক রাজ্যে কখনো দুই রাজা থাকতে পারে না।বুঝেছো?যাও সব রেডি করো।
কেভিন আর বাক্য আওড়ালো না।রুদ্রের চোখ গুলো কেমন আগুন ছড়াচ্ছে।কিন্তু মানুষ হিসেবে রূপকথার জন্য কেভিনের মন খচখচ করলো।রুদ্রের চড়ের প্রভাবে মেয়েটার ফর্সা গাল টকটকে লাল হয়ে আছে।ঠোঁটের কোণের রক্ত আর কপালের রক্ত জমে গিয়ে কালো হয়ে আছে।ইতোমধ্যে গালে কালসিটে দাগ পড়ে গিয়েছে।সারফরাজ আর রুদ্রের খেলায় মেয়েটার কোনো দোষ নেই।রুদ্ররাজ অহেতুক গুটি হিসেবে মেয়েটিকে চালাচ্ছে।
রূপকথার পানে পুনরায় নজর বুলিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো কেভিন।এরপর কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গেলো নিজের কাজে।

নিজের দলবল নিয়ে রুদ্ররাজের বাড়ি,মিল কারখানা বার ,সবকিছুতেই হন্যে হয়ে রূপকথাকে খুজলো সারফরাজ।কিন্তু রূপকথা বা রুদ্ররাজ কেউ কোত্থাও নেই।সারফরাজ এর মাথা ঘুরে উঠলো সেই সাথে বুক ফেটে চিৎকার এলো।রূপকথা প্রচন্ড অসুস্থ।তারমধ্যে রুদ্র তার সাথে কি করছে কে জানে?রুদ্রকে ডিফেন্ড করার মতো শক্তি রূপকথার শরীরে নেই।মেয়েটা কোন তবিয়তে আছে কে জানে?তাছাড়া সারফরাজ সুফিয়ান চৌধুরীর কাছেই বা কি জবাব দেবে?

সারফরাজ এর ভাবনার মাঝেই সুফিয়ান চৌধুরীর কল এলো।ভদ্রলোক সারা রাত এক মুহূর্তের জন্য দুচোখের পাতা এক করেননি।মেয়েটা সুস্থ হলো কিনা সেই চিন্তায় নিজেও অসুস্থ প্রায়।ফোনের স্ক্রিনে সুফিয়ান চৌধুরীর নম্বর দেখে ঘাবড়ে গেলো সারফরাজ।সুফিয়ান চৌধুরীর প্রশ্মে কি জবাব দেবে সেটা ভেবেই প্রথম কল তুললো না সে।কিন্তু সুফিয়ান চৌধুরী পুনরায় কল করলেন।ইতস্তত আর ভয় নিয়ে সারফরাজ কল তুললো।সারফরাজ হ্যালো বলতেই সুফিয়ান ব্যতিব্যস্ত হয়ে শুধালেন
“আমার মেয়েটার কি অবস্থা সারফরাজ?জ্বর কমেছে?
ভদ্রলোকের কন্ঠে চিন্তা আর অসহয়তার ছাপ।বাবা হিসেবে মেয়ের অসুস্থতার খবর শুনে কাতর হওয়া স্বাভাবিক।কিন্তু সারফরাজ চেপে গেলো সব।সে কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলে উঠলো

“জ্বী কমিশনার সাহেব।আপনার মেয়ের জ্বর কমেছে।এখন ঘুমুচ্ছে।ঘুম থেকে উঠলে আপনার সাথে কথা বলিয়ে দেবো।
সারফরাজ এর কথা বিশ্বাস করলেন সুফিয়ান চৌধুরী।সারফরাজ এর গলাটাও কেমন ক্লান্ত শোনালো।সুফিয়ান ভাবলেন সারাদিন ছেলেটা অনেক ধকল পোহিয়েছে।তাই তিনি আর বিরক্ত করতে চাইলেন না সারফরাজ কে।অল্প করে শুধু বললেন

“তুই ও ঘুমা সারফরাজ।সারাদিন অনেক দৌড়েছিস।রাখছি।
সুফিয়ানের ফোন কাটতেই মাটিতে ধপ করে বসে ছোট বাচ্চার ন্যয় শব্দ করে কেঁদে উঠলো সারফরাজ।আজ প্রথম সুফিয়ান চৌধুরীর নাম শুনেই তার ভয় করছে।মানুষটার সামনে কিভাবে দাঁড়াবে সেই ভয়ে শিউরে উঠছে এই সাহসী মানব।সুফিয়ান চৌধুরীর আদরের মেয়েকে সারফরাজ এই দূরদেশে এনে হারিয়ে ফেলেছে।এই কথা কিভাবে জানাবে সে সুফিয়ান চৌধুরী কে?
সারফরাজ মাথার চুল খামচে ধরে মাটি থেকে কোনো মতে উঠে দাঁড়ালো।এরপর চোখে মুখে হিংস্রতা ফুটিয়ে ছুটলো ড্যানিয়েল এর কাছে।

ড্যাভিন এখনো ড্যানিয়েল কে বাঁচিয়ে রেখেছে।প্রাণে মারেনি।কিন্তু পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ড্যানিয়েল বারবার মৃত্যুর ভিক্ষা চাচ্ছে।ড্যাভিন যখন ড্যানিয়েল এর দাঁত তুলে ফেলার জন্য প্লায়ার্স নিয়ে তেড়ে এলো এমন সময় সেখানে প্রবেশ করলো সারফরাজ।রক্তাক্ত ড্যানিয়েল কে দেখে সারফরাজ এর বিন্দুমাত্র মায়া হলো না।সে ড্যানিয়েল এর চুলের মুঠি চেপে ধরে হিসহিস করে বলে উঠলো
“রুদ্ররাজ কোথায়?
ড্যানিয়েল সারফরাজ এর প্রশ্নে চমকে উঠলো।এরপর ভাঙা গলায় বলে উঠলো
“আই ডোন্ট নো।

ড্যানিয়েল এর জবাবের সাথে সাথেই ড্যানিয়েল কে সজোড়ে লাথি বসালো সারফরাজ।লাথি খেয়ে শব্দ পর্যন্ত করতে পারলো না ড্যানিয়েল।সারফরাজ ড্যানিয়েল এর গলা চেপে ধরে গর্জে জিজ্ঞেস করলো
“তুই জানতিস রুদ্ররাজ রূপকথাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে?
ড্যানিয়েল উত্তর করবার আগেই সারফরাজ ড্যানিয়েল এর চোখের ভাষা পড়ে নিলো।তারমানে ড্যানিয়েল জানতো রুদ্ররাজ নিয়ে যাবে রূপকথাকে।
সারফরাজ ড্যানিয়েল কে অসহায় গলায় বলে উঠলো
“তোকে আমি প্রাণ ভিক্ষা দেবো ড্যানিয়েল।জীবনে প্রথম কাউকে আমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরত পাঠাবো।বিনিময়ে বল রুদ্ররাজ কোথায়?

সারফরাজ এর সাথে দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করে আসছে ড্যানিয়েল।সে জানে সারফরাজ কখনো কথার হেরফের করে না।এক কথার মানুষ সারফরাজ।কাউকে মিথ্যে আশ্বাস পর্যন্ত দেয়নি সে কোনোদিন।ড্যানিয়েল যদি তাকে সবটা বলে দেয় তবে নিশ্চয়ই সারফরাজ তাকে এই নরক থেকে মুক্তি দিবে।ভালোবাসার মানুষ বলে কথা।নিজের জীবন ফিরে পাবার খুশিতে চকচক করে উঠলো ড্যানিয়েল এর চোখ।সে কোনো মতে গুঙিয়ে বলে উঠলো
“আপনার মা যেখানে বন্দী ছিলো।
সারফরাজ বুঝে গেলো ড্যানিয়েল কি বলতে চাইছে।রুদ্ররাজ ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়েছে রূপকথাকে নিয়ে।সারফরাজ কপাল স্লাইড করে কিছু ভাবলো।এরপর বাঁকা হেসে ড্যাভিন কে বলে উঠলো

“কিল হীম।
সারফরাজ কে ওয়াদা ভঙ্গ করতে দেখে চিৎকার করে উঠলো ড্যানিয়েল।সে পাগলের মতো বলতে আরম্ভ করলো
“আপনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রমিস করেছেন।এভাবে কথার বর খেলাপ করতে পারেন না আপনি।
সারফরাজ ঠোঁট উল্টে কাঁধ উঁচিয়ে বলে উঠলো
“তুই ও প্রমিস করেছিলি কখনো আমায় ধোকা দিবি না।কিন্তু তোর ধোকা তো আমার জান বের করে নিয়ে গেছেরে ড্যানিয়েল।তোকে বাঁচিয়ে রাখলে কবে না আমার আবার মরন হয়।তারচেয়ে বরং তুই মর।হ্যাপি জার্নি।গুড বাই।
বলেই হনহন করে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।এরপর লুইস আর ইয়ং কে আদেশ দিলো
“ক্যাপ্টেন লিও কে জেট রেডি করতে বলো।আর আমার মাকে তৈরি করো।দেশে যাচ্ছি আমরা।এবার একবারে বউ নিয়ে ফিরে আসবো।তার আগে নয়।

ঘুটঘুটে অন্ধকার এক কক্ষ।তাতে নেই এক ফোটা আলো চলাচলের পথ।আলো তো দূর এক বিন্দু বাতাস পর্যন্ত বইছে না।ভ্যাপসা গরমে শরীরে জ্বালাপোড়া করছে।মনে হচ্ছে শরীরের মাংস খুলে পরে যাচ্ছে।প্রচন্ড পিপাসায় গলাটাও চৌচির হয়ে ফেটে উঠছে।
ক্লান্ত রূপকথা বার কয়েক ফাঁকা ঢোক গিলে গলাটা ভেজানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু জ্বরের কারনে মুখটা আঠালো হয়ে আছে।জিভের অগ্রভাগ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া লেহন করে বহু কষ্টে আওড়ালো
“পানি”

বদ্ধ কক্ষে রূপকথার গলার স্বর নিজের কাছেই প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো।ঝাপসা নিভু চোখে নিজের অস্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করলো রূপকথা।কিন্তু কিছুই ঠাহর করতে পারলো না।বদ্ধ কক্ষের ভ্যাপসা গন্ধ তার মস্তিষ্কে জানান দিলো দীর্ঘদিন এখানে কারোর আসা যাওয়া নেই।
নিজের মন্দ ভাগ্যের উপর তাচ্ছিল্য হাসলো রূপকথা।বেচারা সারফরাজ কোথায় না তাকে খোঁজে বেড়াচ্ছে।অথচ সে কোথায় বন্দি।

রুদ্রের এই নোংরামো দেখে রূপকথার আকাশ সম ঘৃণা পেলো রুদ্রের উপর।একটা মানুষ কি করে এতোটা নিকৃষ্ট হতে পারে রূপকথা জানে না।মনে মনে অগণিত অভিশাপ ঝাড়লো রুদ্রের উপর সে।এরপর ঢুলু ঢুলু দুর্বল শরীরে অন্ধকার হাতড়ে ঘরের আনাচে কানাচে হাত বুলালো দরজা খোঁজে পাবার উদ্দেশ্যে।এমন সময় কারোর জুতার খুট খুট শব্দ পাওয়া গেলো।চতুর রূপকথা ঝটপট অন্ধকার হাতড়ে শক্ত চৌকিটায় এসে শুয়ে চোখ বুজে রইলো।কেউ হ্যাচকা টানে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই সূক্ষ আলোক রশ্নি এসে কক্ষ আলোকিত হলো।মানুষ টা সেই আলোতে রূপকথাকে দেখলো।এরপর ফোনে কাউকে চট্রগ্রাম এর আঞ্চলিক ভাষায় বলে উঠলো

“তার জ্ঞান এখনো ফিরেনি সাহেব।কি করবো এখন?পানি মেরে জাগিয়ে তুলবো?এভাবে না খেয়ে থাকলে তো মরে যাবে।
ওপাশ থেকে উত্তর এলো
“খিদে পেলে ঠিকই উঠবে।তুমি নিজের কাজে যাও।
লোকটি দরজা টেনে বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে গেলো।মুহূর্তেই আলোকিত কক্ষ আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো।মানুষটার মুখের চট্রগ্রামের ভাষা শুনে রূপকথার চোখ কপালে উঠলো।বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্ক আন্দোলন করে বলে উঠলো
“হ্যা এটা বাংলাদেশ।
ক্যালিফোর্নিয়া তে প্রচন্ড শীত অথচ এখানে গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছে।তাছাড়া নিশ্চয়ই ক্যালিফোর্নিয়ার সাদা চামড়ার বিদেশীরা ইংরেজি ফেলে চিটাগাং এর ভাষা বলবে না।কিন্তু রূপকথাকে কোথায় রেখেছে রুদ্ররাজ?আর সারফরাজ ই বা তাকে খোঁজে পাবে কিভাবে?

বিকেল বেলায় বাংলোর গার্ডেনে বসে আকাশের পানে তাকিয়ে নানান ভাবনায় মজেছেন সুফিয়ান চৌধুরী।সারফরাজ কে আজ দুদিন ধরে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।রূপকথার ফোনটাও বন্ধ।মেয়েটার কি অবস্থা সেটাও জানতে পারছেন না।মনের ভেতরে কেমন কু গাইছে সারাক্ষন।কারো কিছু হলো?রূপকথা বা সারফরাজ ঠিক আছে তো?
“কমিশনার সাহেব!

আকস্মিক কারো ভরাট গলায় ধ্যান ছেড়ে বেরিয়ে সামনে তাকালেন সুফিয়ান চৌধুরী।সামনে বিধ্বস্ত সারফরাজ দাঁড়িয়ে।ছেলেটার চোখ দুটো কেমন অসহায়।চকচকে মুখটায় খোচাখোঁচা দাড়ি আর কেমন মলিনতা।চুল গুলোও উস্কোখুস্কো।সুফিয়ান চৌধুরী চট করে উঠে দাঁড়িয়ে সারফরাজ এর কাছে এসে কপাল কুঁচকে ব্যস্ত গলায় ডাকলেন
“সারফরাজ!কি অবস্থা করেছিস নিজের?আর হঠাৎ দেশে?রূপকথা কোথায়?
সারফরাজ অসহায় চোখে সুফিয়ান চৌধুরীর হাত চেপে ধরে বলে উঠলো
“আমি আমার জীবনের শেষ খুন করতে এখানে এসেছি কমিশনার সাহেব।এরপর আমি সত্যিই ভালো হয়ে যাবো।আমি ভালো হয়ে গেলে আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবেন?বিশ্বাস করুন আমি সত্যিই ভালো মানুষ হয়ে যাবো।

বলেই সুফিয়ান কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো সারফরাজ।এবার ভয় পেলেন সুফিয়ান চৌধুরী।সারফরাজ কাঁদবার ছেলে নয়।নিশ্চিত সাংঘাতিক কিছু ঘটেছে।যার জন্য এভাবে ভেঙে পড়েছে ছেলেটা।সুফিয়ান সারফরাজ এর পিঠ হাতড়ে আশ্বস্ত করলেন
“আচ্ছা রূপকথাকে বিয়ে দেবো তোর কাছে।তার আগে বল হয়েছে টা কি?
সারফরাজ সুফিয়ান চৌধুরী কে আরেকটু শক্ত করে ঝাপ্টে ধরে বলে উঠলো
“রুদ্ররাজ রূপকথাকে হসপিটাল থেকে তুলে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সুবহান চৌধুরীর হাবেলীতে নিয়ে এসেছে কমিশনার সাহেব।
কথাটি বজ্রপাতের ন্যয় সুফিয়ান চৌধুরীর উপর পরলো।সে সারফরাজ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলো

“কি বলছিস তুই?
“আমি সত্যি বলছি।
বলেই তীব্র অপরাধবোধ থেকে মাথা নিচু করে ফেললো সারফরাজ।সুফিয়ান চৌধুরী শক্ত হয়ে পাথরের ন্যয় দাঁড়িয়ে রইলেন।এই কথা রেখা জানলে নির্ঘাত মরে যাবে।সুফিয়ান ইতোমধ্যে রুদ্ররাজ এর নোংরামি সম্পর্কে জেনেছেন।ছেলেটা মানুষ কম জানোয়ার বেশি।অবশ্য যার রক্তই পশুর সে আবার মানুষ হয় কি করে?সুফিয়ান চৌধুরী ভয়ার্ত চোখে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে শুধালো

চেকমেট পর্ব ৫০

“আমার মেয়েটা বেঁচে আছে তো?
সারফরাজ মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো
“বেঁচে আছে।রূপকথাকে মারার জন্য নেয়নি ও।আমাকে চূড়ান্ত ঘায়েল করতে রূপকথাকে তুলে নিয়ে গেছে সে।রুদ্র জানে রূপকথা আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।আমার মাকে ছাড়া আমি অল্প অল্প করে বাঁচতে শিখেছিলাম কমিশনার সাহেব।কিন্তু আপনার মেয়েকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারছি না।আপনার মেয়ে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে ।আমি ঠিক মতো শ্বাস টাও নিতে পারছি না।এই দেখুন আমার বুকে কতো কষ্ট হচ্ছে।

চেকমেট পর্ব ৫২

2 COMMENTS

  1. প্লিজ জলদি দিন পরবর্তী পাঠ,,আমার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে 🥲🫰

Comments are closed.