চেকমেট পর্ব ৫৫

চেকমেট পর্ব ৫৫
সারিকা হোসাইন

সারফরাজ কে অভিরূপের কেবিনে আনা হলো।সারফরাজ ডক্টরকে বিশেষ অনুরোধ করেছে অভিরূপ কে একটু চোখের দেখা দেখার জন্য।পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছে অভিরূপ আর সারফরাজ।দুজনের দৃষ্টি ছাদের উল্টো পিঠে নিবদ্ধ।কেবিনে পিনপতন নীরবতা।চারপাশে ফিনাইলের ঝাঁঝালো গন্ধ।অভির হাতে লাগানো স্যালাইন এখনো ধীর গতিতে পাস হচ্ছে।নাকে নাজাল অক্সিজেন ক্যানুলা।উন্মুক্ত গায়ে বুক পিঠ জুড়ে মোটা ব্যান্ডেজ।নীরবতা ভাঙলো সারফরাজ।ছোট ধীর গলায় সে শুধালো

“পালিয়ে গেলি না কেনো?যদি তোকে হারিয়ে ফেলতাম তখন?
অভিরূপ অল্প হাসার চেষ্টা করলো।এরপর ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো
“একদিন তুইও এভাবেই বাচিয়েছিলি আমাকে।তুই পালাস নি কেনো?
“আমার কোনো পিছুটান নেই অভি।কিন্তু তোর আছে।তোর মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছে তোর মা বোন।
একটু জোরেই কথাটা বলে বুক চেপে ধরলো সারফরাজ।অভিরূপ কিঞ্চিৎ ঘাড় ঘুরালো সারফরাজ এর পানে।এরপর ভারাক্রান্ত গলায় বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমাকে প্রটেক্ট করতে গিয়ে লুইস প্রাণ হারিয়েছে।আমি লুইসের মর্মান্তিক মৃত্যু মানতে পারিনি।মাথায় শুধু একটা কথাই এসেছে।রুদ্রকে মেরে দিতে।প্রানের ভয় করেনি আমার।কিন্তু আফসোস ওই জানোয়ার কে আমি কিছুই করতে পারিনি।আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে বুঝলি?বন্দুক চালানো কেনো শিখলাম না।
সারফরাজ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো
“বিধাতা এভাবেই লুইসের মৃত্যু লিখেছিলো।সব দোষ আমার।আমার যুদ্ধে তোদের শামিল করা ভুল হয়েছে আমার।লুইসের মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় আমার।জানিনা কি করে এই দায় এড়াবো।কিভাবে এই লাশের কফিন নিয়ে লুইসের পরিবারের সামনে দাঁড়াবো আমি কিচ্ছু জানিনা।

অভিরূপের চোখের কার্নিশ গড়িয়ে জল গড়ালো টুপ করে।চোখের সামনে এখনো লুইসের রক্তাক্ত নিথর দেহ ভাসছে।যাবার পথেও অভির সাথে লুইসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা হয়েছে।সারফরাজ এর সমস্ত ঝামেলা মিটলে দেশে ফিরে এরিকা কে ঘরে তুলবে লুইস।কিন্তু তার স্বপ্ন চূর্ণ হয়েছে।শুধু কি তারই স্বপ্ন ভেঙেছে?যেই মেয়েটা লুইসের অপেক্ষার প্রহর গুনে চলেছে এতগুলো বছর ধরে তার?আজ অভিও যদি লুইসের মতো এভাবে নিঃশব্দে চলে যেতো তবে তার মা বোন কি করে সইতো এই জন্ত্রনা?আর নেলি?সেকি সহ্য করতে পারতো অভির মৃত্যু সংবাদ?

ব্যথায় জর্জরিত হাতে চোখের জল মুছলো অভিরূপ।এরপর সারফরাজ কে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো
“ভাগ্যের উপর কারোর হাত নেই সারফরাজ।বিধাতা যেমনটি চাইবেন সেভাবেই হবে সবটা।তুই আমাদের জন্য কি কি করেছিস তা আমাদের অজানা নয়।বন্ধুর জন্য যদি সবটা উৎসর্গই করতে না পারলাম তবে কিসের বন্ধু হলাম?সারা জীবন শুধু নিয়েই যাবো?প্রতিদান দেবো না?
সারফরাজ ঠোঁটের কোণে শুকনো হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই না?
অভিরূপ মাথা ঝাঁকালো।এরপর শুধালো
“রুদ্রের কোনো ব্যবস্থা করতে পেরেছিস?নাকি আবার হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে?
সারফরাজ ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত করে অভির পানে তাকালো।সেই হাসির মানে অভিরূপ বুঝলো।সে উচ্ছসিত হয়ে উঠে বসতে চাইলো।কিন্তু শরীরে সেই জোর নেই।অভিরূপ অল্প হেসে শুধালো

“কোথায় রেখেছিস তাকে?
“যেখানে ওর থাকবার কথা।
“পাতাল ঘরেই?
এমন সময় নার্স এলো।এসে অভিরূপের সমস্ত কিছু চেক করে বলে উঠলো
‘আপনাদের দুজনকেই কেবিনে শিফট করা হবে।সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যতখুশি ততো কথা বলবেন।নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে আপাতত একটু নজর দিন।
সারফরাজ ফট করে নার্স কে শুধালো
“বাড়ি ফিরেই বিয়ে করতে পারবো সিস্টার?একচুয়ালি আমাদের দুজনেরই বিয়ে আছে সামনে।বুঝতেই পারছেন এক্সারসাইজ এর একটা ব্যাপার আছে।তাই কোনো রিস্ক আছে নাকি জানতে চাইছি।
নার্স লজ্জায় মাথা নুইয়ে ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠলো

“যমের দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন।একটু তো ভালো হোন।
সারফরাজ অবাক চোখে শুধায়
‘খারাপটা করলাম কি সিস্টার?
নার্স কোনো মতে হেসে বলে উঠলো
“এক্সারসাইজ করতে হলে আরো দুমাস অপেক্ষা করতে হবে।এখন পুশ আপ দিতে গেলে প্রাণ যাবে।
আর দাঁড়ালো না নার্স।হাসতে হাসতে সে কেবিন ত্যাগ করলো।নার্স যেতেই বুক চেপে শব্দ হীন হাসলো অভিরূপ।এরপর সারফরাজ এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“একটু তো লাগাম দে ভাই।
সারফরাজ চট করে শুধায়
“লাগাম টা দেবো কোথায়?সব কিছুই আপাতত লাগাম ছাড়া হয়ে রয়েছে।
অভিরূপ বলে
“শালা মরলে সরাসরি দোজখে যেতি।
সারফরাজ রয়ে সয়ে বলে

“তা তো যেতাম ই।আচ্ছা এবার তওবা করে ভালো মানুষ হয়ে যাবো।
“আগে ভালো মানুষ হয়ে দেখা হতচ্ছাড়া।নইলে মেয়ে দিচ্ছি না তোমায়।
আকস্মিক সুফিয়ান চৌধুরীর গলায় হকচকিয়ে উঠলো সারফরাজ।এরপর অনুনয়ের স্বরে বলে উঠলো
‘এতোটা নিষ্ঠুর হবেন না কমিশনার সাহেব।আমার পরে প্রেম করে আগে বিয়ে করে ফেলছে অভিরূপ।নিজের জুনিয়র কে কিছুতেই সব কিছুতে ফার্স্ট হতে দিতে পারি না।মান ইজ্জতের একটা ব্যাপার আছে।আপনার মেয়ের আগে নেলির বিয়ে হয়ে গেলে আপনার মেয়ে আমায় খুন করে ফেলবে।
সুফিয়ান চৌধুরী কপাল কুঁচকে উত্তর করলেন
“মরতে বসেও বিয়ের শখ জাগছে তোর?
“আপনার মেয়ের জন্য ফিরে এসেছি কমিশনার সাহেব।আমার উপর দয়া করুন।নয়তো হ্যাক্সিসল খেয়ে জীবন দিয়ে দেবো।আর মরার আগে আপনার মেয়ের কান ভাঙাবো আপনার নামে।মেয়ের সামনে আজীবন দোষী হয়ে থাকবেন।
সুফিয়ান চৌধুরী প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো
“ঘক ঘক করে হ্যাক্সিসল খা।ভেতরের ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকাবে।কোনো ক্ষতি নেই।এন্টিবায়োটিক এর চাইতে ভালো কাজ করবে।

সারফরাজ অসহায় চোখে সুফিয়ান চৌধুরীর পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“ভালো মানুষটি হয়ে আর থাকবো না কিন্তু কমিশনার সাহেব।এই আমি বলে দিলাম।চরিত্রে কলঙ্কের দাগ পড়লে কিন্তু আপনার দোষ।এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার মেয়েকে যদি আমার হাতে না দেন তবে আমি চীর কুমার সংঘে গিয়ে নাম লিখাবো।তখন মেয়েমে কার হাতে দিবেন শুনি?
“তুই বরং তাই কর।এতে আমিই বেঁচে যাবো।আর আমার মেয়েকে নিয়ে তোর ওতো ভাবতে হবে না।কতো ছেলে লাইন ধরে আছে আমার মেয়ের পেছনে তুই জানিস?

“আগুন ধরিয়ে দেবো সব গুলোর পাছায়।
“একটু আগেই না তওবা পড়ে ভালো হলি?
“এখনো পড়িনি।পড়তে চেয়েছি।।।
“তারাতারি পড় হতচ্ছাড়া।

অসহনীয় ভ্যাপসা উত্তাপ,মশার কামড়,তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রনায় উন্মাদ হয়ে উঠলো রুদ্র।জাহান্নামের চাইতে কোনো অংশে কম নয় এই পাতাল ঘর।এক বিন্দু বাতাস পর্যন্ত মাটির ফাক গলিয়ে এখানে আসতে পারছে না।তার মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার যেনো চোখ দুটোকে গিলে খাচ্ছে।প্রচন্ড পিপাসায় রুদ্রের গলা ফেটে যাচ্ছে।শুষ্ক ঠোঁট জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে চিৎকার করে উঠলো রুদ্র
‘এই কে কোথায় আছিস আমার পায়ের শিকল খুলে দে।
শুকনো গলায় চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে কাশি উঠলো।অন্ধকার হাতড়ে পানির জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো রুদ্র।খুঁজতে খুঁজতে একটা পানির জগ পেলো।জগে অল্প পানি।সেটাই ঢকঢক করে সাবাড় করলো।কিন্তু তার পিপাসা মিটলো না।এদিকে দুদিন ধরে না খেয়ে থেকে পেটের নাড়ি ছিড়ে যাবার জোগাড়।পুরো ঘর বাসী খাবারের গন্ধে ভরে রয়েছে।এক হাতে নাক চেপে ধরে রুদ্র বলে উঠলো

“এর চাইতেও দুর্বিষহ অবস্থা করবো আমি তোর সারফরাজ।শুধু একবার বের হতে দে আমায়।
রুদ্র প্রাণপণে চেনা পরিচিত সকলের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো কিন্তু কারোর সাড়া পাওয়া গেলো না।এমন সময় কেউ পাতাল ঘরের দরজা টেনে সরালো।দরজার ঘরঘর শব্দে রুদ্রের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।চোখে মুখে আভিজাত্য ফুটিয়ে কাঠের আধ ভাঙা চৌকিটার উপর বসলো রুদ্র।এরপর অপেক্ষা করতে লাগলো মুক্তির।
ঠক ঠক পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।রুদ্রের কক্ষের দরজা খুলতেই অল্প মশালের আলো রুদ্রের কক্ষ আলোকিত করলো।সেই আলোর উৎস ধরে দরজার পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো রুদ্র।দরজায় যে দাঁড়িয়ে তাকে রুদ্র চিনে না।মানুষটা ধীরে ধীরে পা ফেলে রুদ্রের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর হাতের খাবারের বক্স টেবিলে রেখে ভারী গলায় বলে উঠলো

“তোর বন্দি জীবন শুরু হয়ে গেছে রে শয়তান।এখন থেকে রোজ রোজ মুক্তির প্রহর গুনবি।কিন্তু সেই প্রহর আর আসবে না।ও হ্যা আরেকটা কথা।দুদিন পর পর মিলবে এক বেলা খাবার।একটা ভাতের কণাও নষ্ট করবি না।চেটেপুটে খাবি বুঝলি?যদি নষ্ট করেছিস তবে সাত দিন পর পর খাবার মিলবে।
বলেই কিটকিটিয়ে হাসলো লোকটি।রুদ্র নাক ফুলিয়ে চোয়াল শক্ত করে উঠে গিয়ে আগত ব্যক্তিকে আঘাত করতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই উক্ত ব্যক্তি রুদ্রের কলার চেপে ধরে দয়ামায়া হীন রুদ্রের চোখে মুখে কয়েক ঘা বসিয়ে বলে উঠলো

“এসপি আবির মাহতাব আমার নাম ।তোর মতো হাজারো ক্রিমিনাল কে প্রতিদিন রিমান্ডে নিয়ে রড থেরাপি দেই আমি।আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করলে জন্মের সময় মায়ের বুকের যেই দুধ খেয়েছিস সেটা টিপে বের করবো আমি শালা।
কথাগুলো বলে রুদ্রকে সজোড়ে এক ধাক্কা দিলেন আবির মাহতাব।দুর্বল শরীরে রুদ্র ছিটকে গিয়ে ভাঙা মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।রুদ্রের পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন আবির মাহতাব।নিজের এহেন পতনে রুদ্রের মাথা ঘুরে উঠলো।নিজের আভিজাত্য আর বিলাসী আরামদায়ক জীবন মনে পড়তেই চুল খামচে ধরে চিৎকার করে উঠলো রুদ্র।

এরপর ধীরে ধীরে মনে পড়তে লাগলো মায়া চৌধুরীর বন্দি জীবনের কথা।নিজের ফুপুকে এই ঘরে বছরের পর বছর তারা দাদা নাতি মিলে বন্দি করে রেখেছিলো।সারফরাজ এই বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেরিয়েছে।অথচ ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি তার মায়ের অবস্থান।মা মা করে কতো কেঁদেছে ছেলেটি।প্রতিশোধের মোহে অন্ধ হয়ে সারফরাজ এর আড়াল করে বছরের পর বছর বিভিন্ন মেন্টাল হসপিটালে জোর করে ভর্তি করিয়ে রেখেছে রুদ্ররাজ নিজে।রুদ্রের হাতে পায়ে ধরে নিজের মুক্তি চেয়েছে মায়া হাজার হাজার বার।কিন্তু কঠিন রুদ্রের মন গলেনি।আচ্ছা সারফরাজ এর বাবার হাতে রুদ্রের বাবার প্রাণ গিয়েছে।সেদিন সাদাফ শাহজাইন চাইলে রুদ্রকেও মেরে দিতে পারতেন।কিন্তু তিনি নিজের পোশাকের সাথে বেঈমানি করে রুদ্রকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।এর প্রতিদানে মায়া চৌধুরী কে কি দিয়েছে রুদ্র?কঠিন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষন?এতো কিছুর মধ্যে কি আদৌ সারফরাজ এর কোনো হাত ছিল?
নিজের প্রশ্নের উত্তর রুদ্র নিজেই দিলো।

“নাহ সারফরাজ এর কোনো দোষ ছিলো না।সে ও তো রুদ্রের ন্যায় ছোট বাচ্চাই ছিলো।তবে রুদ্র কেনো সারফরাজ আর তার মায়ের জীবন এমন নরক করেছে?শেষ চেকমেট তো সারফরাজ ই দিলো।তাদের দাদা নাতি দুজনেরই তো পতন হলো।তবে কি সুবহান চৌধুরীর ন্যয় রুদ্রের ও মৃত্যু সন্নিকটে?
আর ভাবতে পারে না রুদ্র।ক্ষুধায় পেট উগলে বমি পাচ্ছে তার।সে দৌড়ে গিয়ে টেবিলের উপর থাকা খাবারের বক্স হাতে নিয়ে উন্মাদের ন্যয় খুললো।এরপর হাত না ধুয়েই গপাগপ খাবার গিলতে লাগলো।খাবারে অতিরিক্ত ঝাল।ঝাল খাবার রক দমই খেতে পারে না রুদ্র।তার কান গরম হয়ে মুখ জ্বলে হেঁচকি উঠলো।
আশেপাশে কোথাও পানি নেই।পাগল কুকুরের ন্যয় জিভ বের করে হা করে রইলো রুদ্র।তার শরীর অস্থির হয়ে উঠেছে।ঝাল কমাতে নিজের হাত চাটতে লাগলো রুদ্র।এরপর পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারালো।

হসপিটালে পনেরো দিনের চিকিৎসার পর ছুটি হলো সারফরাজ আর অভিরূপের।দুজনেই এখন বেশ সুস্থ।হাঁটা চলা করতে কোনো অসুবিধা হয় না।মাঝে মাঝে কাশি উঠলে বুকে ব্যথা হয়।নেলি সকাল বিকাল অভিরূপের বাড়িতে গিয়ে অভিরূপ এর খোঁজ খবর নেয়।সারফরাজ বাড়ি ফিরেই নিজের ইমার্জেন্সি টিকিট কাটিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া যাবার উদ্দেশ্যে।লুইসের দেহ এভাবে রাখতে তার কষ্ট হচ্ছে।জতো তাড়াতাড়ি সম্ভব লুইসের সমাধি করা অত্যাবশ্যক।
সারফরাজ ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে।মায়া নিজের ঘরের ঝাড়া মোছায় ব্যস্ত।এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়েছেন।ওষধ চলছে নিয়মিত।
এমন সময় হাতে একটা খাবারের বক্স দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো রূপকথা।রূপকথাকে দেখে মায়া খুশি হয়ে এগিয়ে এলেন।রূপকথা মায়ার হাতে খাবার গুলো পাঠিয়ে বলে উঠলো
“মা পাঠিয়েছে।গরম গরম বিরিয়ানি আছে এতে।খেয়ে নিন।

রূপকথা আড় চোখে সারফরাজ কে একবার দেখলো।মানুষটা এখনো ল্যাপটপেই দৃষ্টি গেঁথে বসে আছে।সারফরাজ এর বেখেয়ালি আচরনে রূপকথার রাগ সপ্তম আকাশ ছুলো।সে ধপ ধপ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলে উঠলো
“উপরে এসো সারফরাজ তোমার সাথে আমার কথা আছে।
সারফরাজ তবুও সেখানেই বসে রইলো।উঠলো না।এমনকি রূপকথাকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখলো না।
রূপকথা নাক ফুলিয়ে শব্দ করে এসে সারফরাজ এর সামনে দাঁড়ালো।এরপর ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো
“কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?
সারফরাজ অনেক খন পরে মুখ তুলে রূপকথার পানে দৃষ্টি পাতলো।এরপর শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“কেনো এসেছো?

সারফরাজ এর এই প্রশ্ন রূপকথার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিলো।সে সারফরাজ এর নিকট ঝুকে কম্পিত গলায় বললো
“কেনো এসেছি মানে?
“হ্যা কেন এসেছো?এই বাড়িতে কি আছে তোমার?
“কি আছে মানে?কি বলতে চাইছো ক্লিয়ার করো।
“একটা অবিবাহিত ছেলের বাড়িতে এমন হুটহাট আসা যাওয়া ভালো দেখায় না রূপকথা।চলে যাও ।আর আসবে না।
সারফরাজ কে চিনতে আজ বেশ কষ্ট হচ্ছে রূপকথার।মানুষটা কেমন কঠিন কঠিন কথা বলছে।মায়া হাতের কাজ ফেলে ছুটে এসে সারফরাজ কে ধমকে শুধালেন
“মেয়েটার সাথে এমন করছিস কেনো?
সারফরাজ চোখে মুখে কাঠিন্য ফুটিয়ে বলে উঠলো
“এখনো দাঁড়িয়ে আছো যে?বললাম না ভালো দেখাচ্ছে না।

রূপকথা কেঁপে উঠলো সারফরাজ এর এহেন নির্দয় কথায়।সে শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে যেতে নিলো।এমন সময় মায়া এসে রূপকথার হাত ধরে বলে উঠলো
“ওর মাথা ঠিক নেই মা।তুমি আমার সাথে এসো।আমরা গল্প করবো আজ সারাদিন।
রূপকথা আলগোছে মায়ার হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে যেতে নিলো।এমন সময় সারফরাজ গলা উঁচিয়ে বলে উঠলো
“শুনো আগামী মাসে আমার বিয়ে।তোমার বাবা যদি এই কদিনের মধ্যে তোমাকে আমার কাছে বিয়ে না দেয় তবে আমার কোনো দোষ দিতে পারবে না তুমি।তুমি বরং তার পছন্দের কারো সাথেই বিয়ে করে নিও।আমার বিয়ের বয়স ফুরিয়ে যাচ্ছে।আম্মুও নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাইছে।
রূপকথার চোখের কোন থেকে মোটা মোটা অশ্রু ধারা খসে পড়লো।সে মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো।রূপকথার যাবার পানে তাকিয়ে সারফরাজ বলে উঠলো

চেকমেট পর্ব ৫৪

“পাগল খেপিয়ে দিয়েছি এবার কমিশনার বুঝুক যা বোঝার।বার বার বিয়ের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে।একটু রেস্ট দরকার।বউ হীন ঘুমানো যাচ্ছে না এই কথা বার বার জাহির করেও কমিশনার এর টনক নড়ানো যাচ্ছে না। কমিশনার ভাবে আমি নির্লজ্জ্ব।যদিও আমি আসলেই নির্লজ্জ।তাই বলে কি আমার একটুও সম্মান নেই ?এক বিয়ের কথা কতোবার বলা যায়?সুফিয়ান চৌধুরী এবার বুঝুন ঠেলা।
বলেই ঠোঁট টিপে হেসে সারফরাজ বলে উঠলো
“বিরিয়ানি দাও মা।শাশুড়ি যত্ন করে পাঠিয়েছে।না খেলে পাপ লাগবে।

চেকমেট পর্ব ৫৬