ছায়াস্পর্শ পর্ব ২৬

ছায়াস্পর্শ পর্ব ২৬
জান্নাত চৌধুরী

রাতের আধারে কাশিমপাড়া পল্লী সেজে উঠেছে।
দিনের নিশ্চুপ মারা হয়ে থাকা পল্লী রাত হলেই নতুন ভাবে সাজে। এক এক করে সব ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলে উঠছে ! ঘরে ঘরে নারীদের সাজানো হচ্ছে পুরুষের খরা হিসাবে। এ যেন নিত্যদিনের খেলা এর নিষিদ্ধ পল্লীতে;
বেশ লাস্যময়ী ‌ সাজে চুলের বেনি নাচাতে নাচাতে বিলাসীর কাছে আসে লতা। বিলাসী কাঠের চেয়ারে পা তুলে বসেছে পরনে লাল একটা শাড়ি , মুখে ভারি মেকআপ , কপালে ‌ লাল ইয়া বড় একটা টিপ। লতা বারবার মুগ্ধ হয় বিলাসীর রূপে। গায়ের রং ভীষণ রকম উজ্জ্বল।
বয়স বেড়েছে তবুও চামড়ায় ভাজ নেই। লতার মাঝে মাঝে নিজের গায়ের রং নিয়ে আফসোস হয়! বিলাসী‌ দরজায় তাকায় , লতা দাঁড়ানো। আঙ্গুলে গাল ঠেলে বলল –

-“কিরে ছেমরি ‌ সাইজা ল‌ইছোস ?”
-“হো মাসি দেখো দেহি কেমন লাগতাছে!”
বিলাসী হাত বাড়িয়ে ডাকল! লতা এগিয়ে আসবে ঠিক এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলো ওসমান। লোকটার বয়স ৩০ উর্ধ্বে হবে, বেশ তাগড়া লোক ওসমান। এগিয়ে গিয়ে বিলাসীর কানে কানে কিছু একটা বলল। বিলাসী অবাক চোখে তাকালো।
ওসমান ইশারায় তাকে শান্ত হতে বলল। বিলাসী ইশারায় সবাইকে ঘর ফাকা করতে বলে- লতার আর এগুনো হলো না। সে ঘর ছাড়ল, তবে বিষয়টা তার আমলে এসেছে , গণ্যমান্য কেউ হবে হয়তো।
পুরো ঘর ফাঁকা হতেই, চেয়ারম্যান আসলো। পরনে কালো পাঞ্জাবি, সাথে সাদা পায়জামা। মুখে দাড়ি ; তবে বেশি বড় নয়, চুলগুলো উপর দিকে চিরুনি করা‌। বিলাসী দেখলো লোকটাকে , বরাবরই ভীষণ আকর্ষণীয় লাগে‌! তা এই লোক যাই পড়ুক না কেন? বিলাসী পানের পিচ ফেলে উঠে দাঁড়ালো, চেয়ারম্যান এগিয়ে এসে বিলাসীর চেয়ারে বসলো। হ্যাচকা টানে নিজের কোলের ওপর বসালো বিলাসীকে ‌। বিলাসী ‌ ঘৃণায় নাক মুখ কুঁচকালো। চেয়ারম্যান বাঁকা হেসে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“মুখ ফিরিয়ে নিলে যে?”
-তাহলে কি করা উচিত
চেয়ারম্যান বিলাসীর চিবুক নিজের দিকে ফিরিয়ে নরম সরে বলল –
-“এত ‌এত বছর পর দেখা- খাতির করবে না?”
“বসুন চা পান আনতে বলছি।”
চেয়ারম্যান তাকিয়ে থাকে! বিলাসী ফিরলো না তার দিকে, মাথা নিচের দিকে করে বসেছে! বিলাসী চোখের মনি বাদামি, ঘন পাপড়ি রয়েছে। সেই চোখে চিকন কাজল পড়লে বেশ লাগে। তবে বিলাসী বরাবরই মোটা কাজলের প্রলেপ দেয়। চেয়ারম্যান হাফ ছাড়লো –
-আমার দিকে ফিরে তাকাও অপরাজিতা! আমার কিন্তু অবমাননা পছন্দ নয়! ভুলে গেছো?
বিলাসী সহসা উত্তর করল – “আপনি ক্ষমতাবান মানুষ। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সইবে না এটা স্বাভাবিক। ওটা কেবল নারীর জন্য ?”

-কথার ফুলঝুরি ঝরছে মুখে-
চেয়ারম্যান ঘাড় কাত করে তাকিয়ে রইল। মুখে একটা অদ্ভুত হাসি লেগে রয়েছে- বিলাসী তাকালো তার দিকে –
-তিলে তিলে শেষ হয়ে , এক পাপ নগরী গড়েছি। এতটাও দুর্বল ভাববেন না !”
“শক্তিও বেড়েছে নিশ্চয়ই কয়েক গুণ। পরীক্ষা নিতে হয় তবে”?
বিলাসী করুন চোখে তাকায়। চেয়ারম্যান বলে-
“পুরুষ ছুঁলেই কলঙ্ক। তবুও নারী ‌দেহের এত জ্বালা কেন? উত্তর করতে পারবে? ”
বিলাসী নিশচুপ থাকে ,চেয়ারম্যান কথার প্যাচ ভালো পারে। কিভাবে কিভাবে যেন কথার জালে জড়িয়ে ফেলে সবাইকে। চেয়ারম্যান আবার বলল –
-“অভিযোগ অভিমানে দূরত্ব গড়েছো। সে কবে এক রাতের একটু ভুলেই আজ নরকে পাড়ি দিয়েছো। এটা কি ঠিক হয়েছে?

-ভুল হাহ! ভুল ঠিক ,ওটা ভুল ছিল! আমি সুযোগ দিয়েছিলাম বলেই না ভুলটা হয়েছে! যে দুঃখ আমার নিজের বুনা সেই দুঃখে আফসোস নেই।
চেয়ারম্যানের মুখ মলিন লাগে! বিলাসির চোখ ছল ছল করছে- চেয়ারম্যান জিজ্ঞাসা করল –
-“তোমার চোখে অশ্রু অপরাজিতা ; ব্যথা পেলে?”
– আমি অপরাজিতা ন‌ই! ডাকবেন না আমাকে সেই নামে! অপরাজিতার অকাল মৃত্যু হয়েছে‌। আমি বিলাসী-
বিলাসী ডাকুন।
বিলাসী চোখ বুজে নিল! টুক করে এক ফোঁটা পানি গড়ালো, সে পানিটুকু আঙুলে মুছে নিল। চেয়ারম্যান কিছুটা ঝুঁকে আসে। বিলাসীর চুলের মুঠি চেপে মাথা এগিয়ে এনে তার মাথা ঠেকায়। বিলাসী মুখ ফিরিয়ে নেয়! দুজনের নীরবতার মাঝে হঠাৎ চেয়ারম্যান কাপা গলায় বলে-

”আমার সন্তান কোথায় অপরাজিতা ?”
বিলাসিত ছিটকে সরে গেল! মুহূর্তেই শক্তিহীন হয়ে পড়ল, ভয় ভয় চোখে তাকালো। চেয়ারম্যানের‌ দৃষ্টি শান্ত, বিলাসী উঠে কিছুটা দূরত্বে সরে যেতেই সে চেয়ারে হেলান দেয়। বিলাসী হাত মুঠো করে প্রশ্ন করে
-“কিহ বলছেন কিসের সন্তান?”
”আমার সন্তান ! তুমি অন্তঃসত্তা ছিলে অপরাজিতা ! খবর পেয়েছিলাম, টাকা পাঠিয়েছিলাম আমি- পেয়েছিলে ?
-কোন সন্তান নেই আপনি চলে যান ।
বিলাসীর গলা‌ ‌ কাঁপছে চেয়ারম্যান উঠে এসে দাঁড়ায় সামনে। ‌
বিলাসী ঘৃণায় এবারও মুখ ফিরিয়ে নেয়। বুকে ঝড় উঠেছে , এই পাষাণ মানুষ এত বছর পরে এসে এসব কি বলছে? চেয়ারম্যান বিলাসীর দুই বাহু চেপে ধরল-
”আর কত বছর লুকাবে, ধোঁয়াশায় ঢাকবে। আমি ব্যথাতুর অপরাজিতা। সে রাতের কিছুতেই আমার হাত ছিল না। আমায় ক্ষমা কর অপরাজিতা।

চেয়ারম্যান খানিক দম নেই এরপর বলে -সব আসামি একবার সুযোগ পায়! আমিও চাই ,আমার সন্তানের মুখ দেখতে চাই ‌“ অপরাজিতা ”
বিলাসী চোখে চোখ রাখলো। “ আপনি বড্ড পাষাণ লোক জানেন সুখে লাগিয়ে অভুক্ত আমার হৃদপিণ্ড আপনি কিনা আঘাত কইরা বলেন দুঃখিত!”
চেয়ারম্যান হাত বাড়িয়ে আবারো ছুঁতে ‌ নিবে , তার আগেই দূরে সরে গিয়ে দুহাত জোর করে বিলাসী বলে-
“আপনি দয়া করে আসুন, আপনার কোন সন্তান নেই। আমি অন্তঃসত্তা ছিলাম না। কখনই নাহ ! আপনি ভুল খবর পেয়েছেন ;

চেয়ারম্যান কথা গিলে ফেলে। এত বছর পর সন্তানের খোঁজে এসেছে ভেবেই নিজের কাছে লজ্জিত সে। কি হয়েছে তার , “কাব্যকে দেখার পর হতেই ভীষণ অস্থির সে”‌। বিলাসীর দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে-
-“আমি আসছি অপরাজিতা; তবে আবার আসবো আমি !”
চেয়ারম্যান বেরিয়ে গেলেই , বিলাসী ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। খামচে ধরে মাথার চুল, একে একে এলোমেলো করে সব সাজ।

এশার নামাজ শেষে বারান্দায় -দাঁড়িয়েছে মানহা! আকাশে মেঘ নেই, ভীষণ স্বচ্ছ। অর্ধচাঁদের দেখা মিলেছে। বাতাসে গাছের পাতা দুলছে- সাথে এক অদ্ভুত আর্দ্রতা মিশেছে!
রাত তখন ৯টাহ ১৫ !
হঠাৎ অন্দরমহলের হইচই ভেসে আসে -নিচে গোলমাল লেগেছে। মাথায় ওড়না টেনে নিচের দিকে রওনা হলো মানহা-
অন্দরমহল এর পরিবেশ গরম ! মাগরিবের আগের দিকে আরাধ্য শহরে যাবে বলে তৈরি হয়ে বেরিয়েছে। শেষ সিড়িতে পা রাখতে রেনুর মা এসে পা জাপটে ধরে তার।
“যা শালা! এ আবার কে এলি?
হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মহিলা।তার কান্না না শুনে, দ্রুত কদমে ঘর হতে বেরিয়ে আসে ‌ ইফরাহ । আজমকা কাউকে নিজের পায় ঝাপটাতে দেখে বিরক্ত আরাধ্য।
রেনুর মা কাঁদছে। আরধ্য – নিজেকে সামলে বলল –

-কাহিনী কি চাচি ? উঠুন-
রেনীর মার কানে কথা গেলো কিনা কে জানে?আরাধ্য হাক ছাড়লো-
– ইরা! এই ইরা – এদিকে আসো তো
ইফরাহ এগিয়ে আসে-
আরাধ্য রেণু মার দিকে ইশারা দিয়ে বলে
-“তোলো তাকে”
ইফরাহ কাহিনী বুঝলো না। তবুও সামনে গিয়ে রেণুর মায়ের হাত ধরে উঠালো। অরুনিমা ওযু করে ঘরে বসে ছিলেন।
তাসবিহ জপছিলেন। অবসরে তিনি এটা বেশি করেন। চেচামেচিতে তিনিও বেরিয়ে এসে দাঁড়ালেন-
রেণুর মা সরে যেতেই আরাধ্য বলল-

-”কাঁনদেন ক্যান, জলদি ঘটনা বলেন।
রেণুর মা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠল। আরাধ্যের ধৈর্য নেই, দেখা যাবে এক্ষুনি গালি ছুড়বে। অরুনিমা ছেলেকে চেনে, তিনি এগিয়ে ‌ আসেন রুনুর মায়ের কাছে
-না কাইন্দা আসল কথা বল ছেমরি। কান্দিবা লাগছো কেন?
“আমার মাইয়া! “ছোট নবাব” আমার মাইয়া –
আরাধ্য এত ভ্রু কুচকালো আঙ্গুলে কান চুলকে বলল-
“আরেকবার যদি মাছির মত প্যান প্যান করেন। তো আমি আসি”
রেণুর মা অপ্রস্তুত হয়ে ধরা গলায় বলল –
-পাশের গ্রামের রমিজ মিয়ার পোলার লগে আমার মাইয়ার লাইন আছিল! আমার মাইয়া ‌আইজ ‌ পোয়াতি। মুখপুড়ি সারে সর্বনাশ করছে ‌ “ছোট নবাব ”

-“এইডা তো খুশির খবর!” আপনি মিষ্টি না আইনা কান্দেন ক্যান?
ইফরা‌হ অবাক চোখে তাকালো আরাধ্যের গা ছাড়া ভাবে।
রাগে দাঁতের দাঁত চেপে ধরেছে ।একটা ‌ মা কতটা অসহায় হয়ে তার মেয়ের কেলেঙ্কারির কথা বলছে। এই লোক কি তা বোঝেনা। ইফরাহ ভাবনার মাঝে আরাধ্য আবার বলে-
-এখন কি চাইছেন? মানে কাহিনী কি ওটা বলুন ?
”রমিজের পোলা আমার মাইয়ারে আর সন্তান রে স্বীকার করে না। আইজ মাইয়া ফাঁস নিবার গেছে “ছোট নবাব”! আমার এক মাইয়া তার কিছু হলে আমি কেমনে বাঁচমু।
আরাধ্য এসবের পাত্তা দিল না।রুনুর মা আবারো কেঁদে উঠলো, আরাধ্য তখন বেড়িয়ে গিয়েছিলো
বর্তমান ….

মানহা নিচে এলো! ইফরাহ সিঁড়ির কাছে‌ গাট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মানহা তাকে পাশ কাটিয়ে দাঁড়ালো। টেবিলের ওপর ৮খান কাঁচা কঞ্চি রাখা! ইতোমধ্যে দুটো ভেঙ্গে ‌ থেতো ‌ হয়েছে! রেণুর মা একপাশে দাঁড়ানো, আরাধ্য একের পর এক বাড়ি দিয়ে যাচ্ছে শেহরামকে।ছেলেটা ‌যন্ত্রণায় কুকিয়ে উঠছে বারবার।
ইফরাহ শান্ত চোখে দেখছে সব। তার চোখে বিন্দুমাত্র ভয় নেই। ব্যাপারটা ভীষণ তৃপ্তি দায়ক লাগছে। একের পর এক বারি দিতে দিতে তিন নাম্বার লাঠিটাও ভেঙ্গে ফেলেছে আরাধ্য। চতুর্থ লাঠি হাতে নেবে ঠিক তখনই রেনু ছুটে এসে আঁকড়ে ধরে শেহরামকে।
দুই হাত জোড় করে আর তোর দিকে তাকিয়ে বলে –
ওরে আর মাইরেন না ছোট নবাব। ব্যাথা লাগতাছে হের শরীরে, কলিজা আমার পড়তাছে। এই বাচ্চা তার না , কেউ নাই বাচ্চা ওর। তবুও মাইরের না।
শরীরের তীব্র ব্যথার মাঝেও শেরহাম ছল ছল চোখে রেনুর দিকে তাকায়। আরাধ্য রেণুর মার দিকে তাকাতেই তিনি মেয়েকে নিতে আসেন। তবে লাভ হয় না ! রেনু আরো আস্তে-পৃষ্ঠে ধরে শেহরামকে
আরাধ্য ঘাড় ফুটায়। আলোতো হাতে , লাঠিতে একবার হাত বুলিয়ে ডাকে মানহাকে –

-”বুলবুলি
মানহা পাশেই দাঁড়ানো ছিল ‌ তবুও , শুনলো না। বরং আরাধ্যের ডাক উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকল। কেন শুনবে সে ওই লোকের ডাক? শুনবে না…
আরাধ্য আবার ডাকে –
“এই যে ‌ ‌ মিম , নুন , হা ‌। কানে কোন বাল আটকেছে যে আমার ডাক বারি মারছে যা তোর শ্রবণে আসছে না !
-শুনছি বলুন ?
“জলদি এক জগ গরম পানি নিয়ে আয় ।লগে দুটো বড়ই পাতা দিয়া আরেক পাতিল বসাবি”
-‌ শেহেরাম শুষ্ক ঢোক গিলে। আরাধ্য ঝুঁকে ‌ তার গাল চেপে ধরে বলে+
-”মেয়ের লগে সম্পর্ক ‌ করছো , লুতুপুতু করছো, ভ্রমর সাইজা মধু শেষ করছ। এখন যখন ফুল শুকিয়ে যাবার উপক্রম তুমি শালা পাল্টি মারো?
আরাধ্য থামে শেহরাম কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
-আমি নির্দোষ আমি কিছু করি নাই।
-যা শালা কেস কি হলো? আজকাল কি পুরুষের স্পাম বাতাসে উড়ে নারী গর্ভে স্থান নিচ্ছে! কেলো করেছে রে, এত সাড়ে সর্বনাশ না- পুরোটাই সর্বনাশ !
আরাধ্য বেশ ফুরফুরে মেজাজে বলল- “কিছু না করে যখন বাচ্চার বাবা হয়েছিস! তাহলে ডেফিনেটলি কিছু করেছিস, ওটা পরের কথা আগে বল সম্পর্ক ছিল।

-“না ”!
কলিজায় ‌‌ দম আছে দেখছি, ঠোঁটের কোণে সত্য কথা –
রেনু‌ ডুকরে ওঠে । আরাধ্য রেণুর দিকে তাকিয়ে বলে-
” যা বলেছে তা কি সত্যি ?”
-“না !
-“তোমার গর্বের সন্তান কি তার”?
রেণু মাথা নাড়ায়। শেরহাম নিজেকে বাঁচাতে আরও কিছু বলবে –
তার আগেই ‌ আবারো পিঠে বারি পড়ে তার। একনাগাড়ে ২০-২৫ টা বেতের বাড়ি মারে আর আরাধ্য; ইতোমধ্যে গরম পানি নিয়ে এসেছে মানহা‌। আরাধ্য পানির উত্তাপ পরীক্ষা করতে কিছু পানি শেরহামের পায়ে ফেলে- চেঁচিয়ে ওঠে ‌শেরহাম। লাল হয়ে ফোসকা পড়ে যায় পা। অরাধ্য বাঁকা হেসে বলে –
-এক থেকে তিন গুনবো সত্যি স্বীকারের শেষ সুযোগ‌ হয় পানি নয়তো নারী।
তিন –

আরাধ্য গুনতে শুরু করে । ঘরে এক নীরবতা , কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে ।
“দুই”
এবারেও নিশ্চুপ শেরহাম । আরাধ্য জগ কিছুটা উঁচু করে বাকি সংখ্যা বলার আগে, তার পা জাপটে ধরে শেহরাম একে একে সব সত্যি স্বীকার করে, আরাধ্য জগ নামিয়ে নেয়।
ঠোঁটের লেগে আছে হাসি । ঠিক যেন যুদ্ধ জয়ের হাসি- এতো সময়ে এক বড় যুদ্ধ জয় করেছে আরাধ্য।
ইফরাহ হাফ ছাড়ে। অন্তর তার তৃপ্তি পেয়েছে !
ইতোমধ্যে এক হুজুর মন্তর লোক নিয়ে হাজির হয়েছে রেজা। ইফরাহ সদর দরজার দিকে তাকায়। হয়তো, বিয়ে পড়ানো হবে ! সে আর অন্দরমহলে থাকে না, রওনা দেয় ঘরের দিকে –

প্রায় মাঝরাত…
আন্দরমহলের সব ঝড় ঝামেলা পেরিয়ে, ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে আরাধ্য। ক্লান্ত লাগছে ঘুমের প্রয়োজন তার,, ঘরে এসে ডাকে
-”ইরা!
জবাব আসেনা। পুরো ঘর যেন ফাঁকা ফাঁকা করছে। এদিক ওদিক আর একবার নজর বুলিয়ে, বেলকনিতে যায় সে! ইফরার দাঁড়িয়ে সেখানে-
আরাধ্য জিজ্ঞেস করলো –
-এখানে কি করছো ইরা ? ঘুমাও নি যে।
-‌ঘুম আসছে না !
আরাধ্য ঘাটালো না ইফরাহ কে। উল্টো ঘুরে চলেই যাবে তখনি থামিয়ে দেয় ইফরাহ –
“হাতমুখ ধুয়েছেন ? ”
-যাচ্ছিলাম ! তুমি বরং আরেকটু আকাশ বিলাস করো !

আরাধ্য চলে যায়। ইফরাহ ব্যতিব্যস্ত হয়না – আরো কিছুসময় তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। খোলা আকাশের দিকে তাকেলেই। কেন জানি বড্ড ভালো লাগে তার। আকাশের দিকে তাকিয়ে আজ অব্দি কত অভিযোগ করেছে সে।
মিনিট পাঁচেক পেরিয়ে আরাধ্য হাত মুখ তোয়ালেতে মূছতে মুছেতে ঘরে আসে। ভেনিটির সামনে দাঁড়িয়ে চুলে একবার হাত বুলিয়ে আবারো ডাকে –
‘’রক্তকমলিনী শুনছো? একটু এদিকে এসো তো।
ব্যথা করছে ঠিক বুকের বাম পাশটায়। এইযে এই জায়গায় আছে না একটা হার্ট ঠিক ওইখানে। এর ওজন জানো ৩০০ গ্রাম-

একটু ছুয়ে দাও তো! কি যে ব্যাথা মাইরি –
ছিড়ে পড়ছে ! ”
ইফরাহ ঘরে আসে বেলকনির পর্দা টেনে দিয়ে। আরাধ্য সামনে এসে দাড়ায়।
“জ্বি বলুন ! ”
-কাছে এসো একটু ! এদিকে এসে বসো তো-

ছায়াস্পর্শ পর্ব ২৫

ইফরাহ সম্মতি থুরি পাত্তা দিবে তার আগেই হাত টেনে বিছানায় বসালো আরাধ্য। দুপা জোড়ো করে শুয়ে পড়লো, মাথা রাখলো ইফরাহর কোলে। ইফরাহ ভীষণ একটা অবাক হলো না –
ইফরাহ হাত রাখলো আরাধ্যের মাথায় স্লিকি চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আরাধ্যের বেশ ভালো লাগছে – মুসকি হাসে আনমনে।

ছায়াস্পর্শ পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here