টেরিবেল পর্ব ১২
অনুপ্রভা মেহেরিন
অভ্রের জীবনে ব্যস্ততা নিত্যদিনের সঙ্গী।সে বরাবরি চেয়েছে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে এবং সেখানেই সেটেল হতে তবে তার এসব চিন্তাভাবনাকে গুলি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে তার বাবা।অভ্রের বাবা একজন পুলিশ অফিসার তিনি বরাবরি চেয়েছেন তার ছেলেকেও এই প্রফেশনে যুক্ত করতে কিন্তু অভ্র এসবে কোন আগ্রহ নেই।সে যখন বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে গেল তখনি তার বাবা তাকে ব্যবসা ধরিয়ে দিল।অভ্রও কম যায় না তার ব্যবসার জন্য যে মডেল প্রয়োজন নিজের ব্র্যান্ডের মডেল সে নিজেই।এই তো এইদিক দিয়ে অভ্রের একটু শান্তি।
একটু হিরো হিরো ভাইব কে না চায়?অভ্রও চায় তাই নিজের মডেলিংটাকে বেশ যত্ন সহকারে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
একটু আগেই দারোয়ানের ফোন আসে,সে জানায় অভ্রের নামে নাকি অনেকগুলো পার্সেল এসেছে।অভ্র শুরুতে বিশ্বাস করতে না চাইলেও দারোয়ান প্রতিটা বক্সের ভিডিও পাঠায়।এত এত কার্টুন বক্স দেখে অভ্র বেশ অবাক হয়েছে কই সে তো কিছু অর্ডার করেনি।তাছাড়া সে কিছু অর্ডার করলেও তার দোকানের ঠিকানা দেওয়া থাকে তবে এসব কি?
অভ্রের ঠোঁটে আচমকা এক চিলতে হাসির আভাস দেখা যায়।ইদানীং একটা মেয়ের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠছে।রাত দিন ফোনে কথা বলা একে অপরকে জানা বোঝা সব মিলিয়ে অভ্রের মনের কোনে অনুভূতি তৈরি হয়েছে।দুইবার তারা একসাথে একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করেছে অভ্র মেয়েটাকে একটা দামি ওয়াচ গিফট করেছে তবে কি সেই মেয়েটাই রিটার্ন গিফট হিসেবে অভ্রের জন্য এসব পাঠাল!লজ্জায় মুহূর্তে ব্লাশ হলো সে ইসস মেয়েটা কি পাগল!এত এত গিফট কেউ পাঠায়?অভ্র অতি সত্বর গাড়ি ঘুরাল এক্ষুনি বাড়ি যেতে হবে।
অভ্র বাসায় ঢুকতেই আহাম্মক বনে যায় এত এত কার্টুন বক্স তাও কি না সব বড় বড়।এসবে কি আছে?অভ্র মাত্র একটা কার্টুনে হাত রাখল তখনি তার ফোন বেজে উঠল।এডউইন কল করেছে,অতি দরকার ছাড়া খেজুরে আলাপ করতে এডউইন কখনোই ফোন করে না তাই অভ্র জানে এডউইন ফোন করেছে মানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” হ্যালো এডউইন হঠাৎ ফোন করলে?”
” তোমার ঠিকানায় আমার কিছু পার্সেল গেছে খবরদার ওসবে হাত দেবে না।খুলেও দেখবে না।”
মুহূর্তে মাথায় বাজ পড়ল অভ্রের।এসব পার্সেল তার নয়!এসব এডউইনের!এত বড় ছ্যাকা!
অভ্র নিজের চিন্তাভাবনায় নিজেই লজ্জিত হলো মনের কোনে হালকা পাতলা রাগ জমেছে সেই রাগকে ধরে রেখে এডউইনকে ধমক সুরে বলল,
” তোমার পার্সেল আমার ঠিকানায় কেন এলো?আমাকে অন্তত একবার জানাতে।”
” বেশি কথা না বলে পার্সেল গুলো নিয়ে আমার প্যালেসে চলে আসো।”
” মানে কি?তোমার কার্টুন আমার গাড়িতে ঢুকবে?”
” শুনো তুমি প্রত্যেকটা কাটুন খুললে ছোট ছোট ব্যাগ পাবে সেই ব্যাগ গুলো গাড়িতে করে নিয়ে আসো।কার্টুন দেওয়া হয়েছে সেফটির জন্য।”
অভ্র কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,
” সরি আমার সময় নেই।দুইদিন পর দিয়ে আসব চলবে?”
” একদম না।আমার সেফটি তোমার কাছে তুমি না এলে এক্সিডেন নিশ্চিত।”
” সেফটি মানে?”
” আজ রাতে বিয়ে করছি।বিয়ের পর কি হবে নিশ্চয়ই বলতে হবে না।”
অভ্র যেন হাওয়ায় ভাসছে।এডউইন বিয়ে করছে!বিয়ে?এই বন মানুষটাকে কে বিয়ে করছে?যে বিয়ে করছে সে নিশ্চয়ই কালনাগিনী।এই ছাড়া এডউইনকে আর কে বিয়ে করবে?
” এডউইন এসব কি বলছো?তোমার সত্যিই বিয়ে?আমি বিশ্বাস করি না।”
” তোমার বংশদন্ডের কসম।”
” রাবিশ।তোমার বিয়ে আর তুমি আমাকে এখন বলছো?এই তোমার বন্ধুত্ব?”
” আমার বিয়েতে আমি কাউকে ইনভাইট করিনি করব না।তোমাকে যে করলাম এটা তোমার ভাগ্য।”
” ইনভাইট করলে নাকি অপমান করলে?”
” তুমি যা ভাবো তাই।”
” সব বাদ তোমাকে বিয়ে করছে কে?না মানে তোমার কপালে বউ আছে?কে থাকবে তোমার সাথে?মেয়ে টেয়ে না পেয়ে কি তোমার ওই মোটা তাজা সাপদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করছো?আচ্ছা তোমাদের ভবিষ্যত বাচ্চা কেমন হবে?মাথা মানুষের মতো আর বডি সাপের মতো?”
” শাট আপ অভ্র।মুখ সামলে কথা বলো।”
অভ্র ভীষণ বিরক্ত হলো।বেশ রাগ ঝেরে বলল,
” তো তোয়ারে হাঙ্গা কইরবো কে?তোয়ার মতো মাইনষের লগে কি থাহন যায়নি?”
আবার শুরু হলো নোয়াখাইল্লার বক ঝক।এডউইন এবার বেশ বিরক্ত হলো।ছেলেটাকে থামানো দরকার।অভ্রকে কিভাবে থামাতে হয় এডউইন বেশ ভালো করেই জানে তাই সে হুমকি দিয়ে বলে,
” দুই ঘন্টা সময় দিলাম আমার জিনিস পত্র নিয়ে যদি না আসো তোমার ওই যে সেই গুপ্ত পিকগুলো ভাইরাল হয়ে যাবে – কথা দিলাম।”
শান্ত স্বরে হুমকি।এডউইন ফোন কাটল।অভ্র নেশাপানি করে একদিন তার প্যালেসে নাচানাচিতে মত্ত ছিল।কোথায় তার গায়ের জামা কোথায় তার প্যান্ট শুধুমাত্র একটা আন্ডারওয়ার পরনে। বেচারার হুশজ্ঞানহীন ইজ্জতের রফাদফা করে দিয়েছে এডউইন বেশ কিছু ভিডিও এবং ছবি নিয়ে তাকে বেশ অনেকবার হুমকি দিয়েছে ভাইরাল করার।যেহেতু অভ্র একজন মিডিয়ার লোক সেহেতু তার অবশ্যই এসবে যায় আসে।বেচারা না পারে কইতে না পারে সইতে।
আন্দ্রিয়ার ঘুম ভাঙলো সকাল দশটায়।সে জানেও না আজ রাতে তার বিয়ে হতে চলেছে। রোজ রোজ যেমন দিন কাটায় আজকেও ঠিক তার তেমন ভাবেই সকালটা শুরু হলো।আন্দ্রিয়ার খুব বেশি লম্বা নয় কিন্তু তার লম্বা চুল ফোলা গাল তার সাথে পরনের ফ্রকে মেয়েটাকে রূপ কথার পরী মনে হয়।এডউইন মাঝে মাঝে ভেবে পায় না এত সুন্দর একটা মেয়ে তার বউ হবে!কি কিউট ইনোসেন্ট চাহনি শুধু ঘাড়ত্যাড়ামি একটু বেশিই করে ব্যাপার না এসব এডউইন মানিয়ে নিতে পারবে।
মাত্র কবুতরদের খাবার দিয়ে এডউইন নিচে নামল তখনি দেখা হলো আন্দ্রিয়ার সহিত মেয়েটা হেলে দুলে কিচেনের দিকে যাচ্ছে।
” গুড মর্নিং কুইন।”
আন্দ্রিয়া চকিতে তাকাল।এডউইনকে একবার দেখেই তার ঘুমেরা ছুটে পালিয়ে যায় এই ছেলেটা এত সুন্দর কেন?বাদামী চুল,খোচা খোচা বাদামী দাড়ি ঠোঁটে লেগে থাকা এক চিলতে হাসি উফফ মাখন।আন্দ্রিয়া যখন এডউইনের পানে তাকিয়ে তখনি শালোমী এসে উপস্থিত হয়,
” আন্দ্রিয়া মেরি আপনার নজর সরান।চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন আমাদের কিং কে।”
” আমার কিং কে আমি গিলে খাব তোমার কি সমস্যা শালোমী?”
আন্দ্রিয়ার ঠোঁট নাড়ানো দেখে এডউইন এগিয়ে এসে ভ্রু কুচকে বলে,
” কার সাথে কথা বলছো? ”
” ক…কই কারো সাথে না।এডউইন ক্ষুধা পেয়েছে।”
আন্দ্রিয়ার একটা বাক্যে এডউইন ব্যস্ত হয়ে পড়ল।দ্রুত সেন্ডউইচ বানিয়ে আন্দ্রিয়ার সামনে হাজির করল সেই সাথে এক মগ কফি।
” কফিটা শেষ করবে ঘুম কেটে যাবে।”
আন্দ্রিয়া খাবার মুখে পুরলো তার ফোলা গাল দুটোতে চটকে দিতে পারলে বেশি মজা পেত।
” আন্দ্রিয়া?”
” হু?”
” আজ রাতে আমাদের বিয়ে।”
আন্দ্রিয়ার চোয়াল থেমে গেল।এডউইনের পানে তাকাতে এডউইন তাকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিল।
“বিয়ে মানে?একবার বললেন না আমায়!বিয়েতে আমি কি পড়ব?আমি শুধু সাতটা জামা এনেছি এর মধ্যে তিনটে জামা নষ্ট হয়ে গেছে বাকি যা আছে এগুলো পরে আমি বিয়ে করতে পারব না।”
এডউইন তীর্যক হাসল।
” বিয়ের শপিং ডান।চলে আসবে অপেক্ষা করো।”
” সেকি আমাকে জানালেন না?”
” সারপ্রাইজ।”
” উহ আমি একটুও সারপ্রাইজ হইনি।যদি আমার পছন্দ না হয়?”
আন্দ্রিয়া চুপ রইল।তবে বেশিক্ষণ চুপ না থেকে আচমকা হেসে বলে,
” যে ছেলে আন্দ্রিয়া মেরির মতো কিউট ইনোসেন্ট একটা মেয়ে পছন্দ করে তার পছন্দ নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।”
আন্দ্রিয়ার কথায় এডউইন না হেসে পারল না।তবে এই হাসি উড়িয়ে দিতে আন্দ্রিয়ার একটা কথাই যথেষ্ট ছিল,
” এডউইন আমার পরিবারের কেউ থাকবে না?কেউ না!আমার মন মানছে না।”
এডউইন পড়ল দারুন বিপাকে।আন্দ্রিয়া যদি এখন বিয়ে করবে না বলে জেদ ধরে তবে আজ এডউইন সব ধ্বংস করে ছাড়বে সব।হ্যাঁ মনে মনে এমনটাই ভাবল এডউইন।রাগ ঢাক সব জায়গায়, সব মুহূর্তে দেখাতে নেই এডউইন বেশ দক্ষ হাতে সামলে নিল আন্দ্রিয়াকে।এডউইনের ইমোশনাল কথাবার্তা যে কোন মেয়েকে গলিয়ে ছাড়তে বাধ্য।
” কুইন একবার বিয়েটা হয়ে যাক তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে আমি নিজে নিয়ে যাব।বিশ্বাস করো তো আমায়?”
” এডউইন….”
আন্দ্রিয়া কথা শেষ করার আগেই কলিংবেল বেজে উঠল নিশ্চয়ই অভ্র এসেছে।এডউইন দরজা খুলতেই অভ্র এক গাল হেসে বলে,
” এডউইন কুনগা তোয়ারে বিয়া কইরবো?হেই অভাগীর মুখকান এক্কানা চামু।”
” আন্দ্রিয়া মেরি আর কিছু বলতে হবে?”
এডউইন ধমক সুরেই বলল তবে অভ্র ভীষণ আফসোস সুরে বলল,
” সুন্দরী মেয়েদের মাথায় যে গোবর ভরা তা আজ প্রমাণিত।এই মেয়েটার জন্য কি ছেলের অভাব পড়েছে যে তোমাকে বিয়ে করতে হবে?”
এডউইন কিছু বলার আগে অভ্র ব্যাগপত্র সব মেঝেতে রাখল আন্দ্রিয়া অবাক চোখে দেখছে সব।এসব কি?কিসের ব্যাগ?আন্দ্রিয়াকে দেখতে পেয়ে অভ্র পা বাড়াতেই পেছন থেকে তার কলার টেনে ধরল এডউইন,
” খবরদার আমার কুইনের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে না।দূরত্ব বজায় রেখে চলবে তা না হলে সাপের খাচায় তোমার বাসরটা করিয়ে ছাড়ব।”
অভ্র মুখ গোমড়া করে সরে গেল এডউইন আন্দ্রিয়ার হাত টেনে জড়িয়ে ধরল,
” এখানে সব তোমার।আমাদের বিয়ের জিনিস পত্র এছাড়াও তোমার যা যা প্রয়োজন সব আছে।”
আন্দ্রিয়া অবাক না হয়ে পারে না এডউইন তাকে না জানিয়ে এতকিছু একাই কিনে ফেলল!
” এডউইন বিয়েটা আর কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে হয় না?না মানে যদি এর মাঝে আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা যায়।”
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো এডউইনের।হাত যুগল মুষ্ঠি বদ্ধ হলো।তার সরল চাহনি রুপান্তরিত হলো হিংস্র চাহনিতে।এডউইন দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলে, “আন্দ্রিয়া মেরি তোমার এত বড়ো সাহস আমাকে সুতোয় বেঁধে নাচানো!তোমার কথায় বিয়েতে নেমেছি আর তুমি এখন সব পিছিয়ে নিচ্ছো আমার ইমোশন নিয়ে টেনিস খেলা হচ্ছে?আই সয়্যার একবার আমার ধৈর্যর মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তুমি নিজেও পার পাবে না।এডউইন উইলসন কি জিনিস তা তোমাকে বুঝিয়েই ছাড়বে।”
টেরিবেল পর্ব ১১
এডউইনের রাগান্বিত চাহনি অভ্র বুঝতে পেরে আড়ালে মাথা নাড়িয়ে ইশারা করল এডউইন যেন নিজেকে সংযত করে।আন্দ্রিয়ার সামনে কোন মতে রেগে যাওয়া যাবে না।এডউইন নিজেকে যে কতটা কষ্টে সংযত রেখেছে তা বলে বোঝানো যাবে না।এডউইন নিজেকে সামলে
আন্দ্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ক্রূর হেসে স্বগোতক্তি স্বরে বলে,
” আন্দ্রিয়া মেরি মাই কুইন,আই ওয়ান্ট ইউ সো ব্যাডলি।”