টেরিবেল পর্ব ১৯

টেরিবেল পর্ব ১৯
অনুপ্রভা মেহেরিন

পড়ন্ত সূর্যের আলো হলদে লাল আভায় আন্দ্রিয়ার গাল ছুঁয়েছে।নিস্তব্ধ পরিবেশ তার সাথে পাখিরা গান গাইছে মাথার উপর উড়ছে এক দল চিল এডউইন তাদের ডেকেছে বলেই তারা এখানে জড়ো হয়েছে।তাদের ছুড়ে ছুড়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে আর চিলরাও কার আগে কে খাবার নিতে পারবে সেই প্রতিযোগিতায় আছে।প্যালেসের ছাদটা ভীষণ সুন্দর উপরের তলায় একটা বেশ সুন্দর গম্বুজ তার সাথে একটা সুইমিংপুল।এডউইন তার সাম্রাজ্য কোন কিছুর কমতি রাখেনি।ছাদে বেশ কয়েকটা শাক সবজি ফল গাছ আছে সেখান থেকেই একটা পেয়ারা ছিড়ল আন্দ্রিয়া।কামড় দেওয়ার আগেই এডউইন বলল,

” ধুয়ে খাবে এর আগে নয়।”
“জামায় মুছে নিলেই তো হলো।”
” যা বলছি তা শুনবে না তুমি?আমি বলেছি যখন তোমার ভালোর জন্যই বলেছি।”
” হ্যাঁ ভালোর জন্যই বলেন আর করেন গতকাল রাতে আমার গলায়… উফফ এখনো ব্যথা আছে।অল্পের জন্য গলার চামড়া ছিড়ে যায়নি।
এডউইন প্রত্যুত্তর করে না।সে জানে আন্দ্রিয়া এত এত হাইডোজ আর নিতে পারছে না তবে আন্দ্রিয়ার আফসোস দেখে তার বেশ হাসি পেল।আন্দ্রিয়ার পরনে একটি লাল ফ্রক মেয়েটাকে ফুটন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে।আন্দ্রিয়া হাঁটতে হাঁটতে ছাদের কোনায় গেল এডউইনের ছাদে বেশ বড় একটি কাঠগোলাপ গাছ আছে ফুলগুলো উপরে হওয়ায় আন্দ্রিয়া লাফিয়ে ঝাপিয়েও ফুল নিতে পারল না।মেয়েটার লাফঝাপে এডউইন এগিয়ে এলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কুইন কি হয়েছে?”
” এডউইন একটা ফুল নিয়ে দিন।কি সুন্দর ফুল তাই না?”
” এই ফুল সুন্দর?”
এডউইন ভ্রু কুচকে ফেলে।আন্দ্রিয়া পুনরায় লাফিয়ে বলে,
” কাঠগোলাপ ফুল একটু বেশি সুন্দর।”
এডউইন হাত বাড়িয়ে কয়েকটা ফুল ছিড়ে আন্দ্রিয়ার হাতে দেয়।এই মেয়েটার কাছে এই ফুল ভালো লাগে!অথচ এডউইনের কাছে গাছটা অযত্নে পড়ে আছে।আন্দ্রিয়া কথার মাঝেই একটি ফুল নিজের কানে গুজে নিল এডউইন আন্দ্রিয়ার পানেই তাকিয়ে ছিল যখন আন্দ্রিয়া কানে ফুল গুজে দিল তখন তার কাছে মনে হলো, “নাহ কাঠগোলাপ সত্যিই সুন্দর ফুল।নাকি তোমার কানে আছে বলে এতটা সুন্দর লাগছে আন্দ্রিয়া?”

এই কথা এডউইন মনে মনেই বলল তার ইচ্ছে হলো না আবেগটা প্রকাশ করার।
আজকের বিকালটা সুন্দর ফুরফুরে বাতাস বইছে এডউইনের এই মুহূর্তে মনে হলো ঘোড়া নিয়ে বের হলে মন্দ হবে না।যে ভাবা সেই কাজ সে আন্দ্রিয়াকে নিয়ে চলে গেল নিচ তলায়।
আন্দ্রিয়া গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে প্যালেস থেকে বের হলো।এডউইনের প্যালেসের সামনে সিড়ি তার পাশেই একটি ঝরনা।ছোট বড় পাথরের গা বেয়ে বয়ে চলা ঝরনার জল জমা হচ্ছে নিচে ছোট্ট একটা ঝিরিতে।সেই ঝিরিতেও আছে জলজ গাছ এবং রঙিন মাছ।এসব এডউইনের নিজ বুদ্ধিতে করা আন্দ্রিয়া প্রতিবার মুগ্ধ হয় এসবে।
এমন একটা জীবন চেয়েছিল সে যেখানে নেই কোন মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বযুদ্ধ জটিলতা।
আন্দ্রিয়া গুনগুন গান গাইতে গাইতে প্যালেসের পেছনের দিকে গেল তার আগে আগে হাঁটছিল এডউইন।আস্তাবল থেকে একটি বড় ঘোড়া বের করে এনে এডউইন চমৎকার হাসল।আন্দ্রিয়া অপলোক তাকিয়ে রইল, কি সুন্দর ঘোড়াটা!

ঘোড়াটির গায়ের রঙ দেখছে লালছে লাগছে।আচ্ছা এই ঘোড়ার রঙটা সঠিক কি নামে বলা হবে?আন্দ্রিয়া এসব ভেবে সময় অপচয় করল না সে ঘোড়ার লেজ ধরে বলল,
” এই যে দেখছেন এই কালারটা চুলে করার আমার অনেক ইচ্ছা।”
এডউইন না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেলল।এই মেয়েটার যত অদ্ভুত অদ্ভুত কথা।
” আন্দ্রিয়া মেরি তোমার আর কি কি ইচ্ছা আছে আমাকে বলো।”
” আমার আপাতত ইচ্ছা এই ঘোড়া নিয়ে ছুটব।”
” এই জঙ্গলে ঘোড়া ছুটতে পারবে না বড়জোর হাটতে পারবে।”
” তবে তাই হোক।”
হঠাৎ আগমন ঘটলো শালোমীর সে আন্দ্রিয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আন্দ্রিয়া অবশ্য তার আগমনটাকে পাত্তা দিল না সে জানে শালোমী এখন তাকে লজ্জা দেবে।এডউইন ঘোড়াটাকে প্রস্তুত করে প্রথমে আন্দ্রিয়াকে তুলে দিল ঘোড়ায় তারপর নিজেও উঠে বসল।টগবগ টগবগ ছুটছে ঘোড়া যদিও খুব বেশি জোরে নয় আন্দ্রিয়া দুই হাত দুদিকে প্রসারিত করে শ্বাস নিল।এডউইন এক হাতে ঘোড়ার লাগাম ধরল অন্য হাতে আন্দ্রিয়ার পেট জড়িয়ে ধরে রইল যেন মেয়েটা ছিটকে না পড়ে।

” আন্দ্রিয়া মেরি মাই কুইন কেমন লাগছে?”
” সত্যিকারের কুইন মনে হচ্ছে।ইসস এডউইন আপনি আমার জীবনে আগে এলেন না কেন?”
” তুমি আগে এলে না কেন এই শহরে?ভুল করে আমার গাড়িতে না উঠলে তোমাকে পেতাম কোথায় বলোতো।”
ঘোড়া জঙ্গলের দিকেই হাঁটছে গহিন জঙ্গলে আন্দ্রিয়ার একটু আধটু ভয় লাগলেও এডউইন পাশে আছে এই ভরসায় নিজেকে সামলে নিল।দু’একটা শেয়াল ঘোড়াকে দেখে দৌড়ে পালাল সাথে কয়েকটি বুনো বিড়ালো ছিল।
এডউইন আন্দ্রিয়ার গলায় থাকা দাগটায় হাত বুলাল মুহূর্তে শিউরে উঠল আন্দ্রিয়া এডউইনের হাত খামছে ঘুরে বসার চেষ্টা করল সে।তার দুঃসাহসিক কাজে এডউইন ধমক দিল,

” নো। প্লিজ।আন্দ্রিয়া…”
” ভয় পাচ্ছেন?”
এডউইনের মেজাজ খিচে গেল ভাগ্যিস ঘোড়া ধীরে ধীরে চলছে তাই আন্দ্রিয়া একটু চেষ্টাতেই এডউইনের মুখোমুখি বসতে পারল।এডউইন গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,
” এভাবে বসার কারণ?”
” আমি আমার হিরোকে দেখতে চাই।”
” দিন দিন আমাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছো তুমি।নাও ইউ আর পারফেক্ট এজ এডউইন ওয়াইফ।”
এডউইন বাঁকা হাসল তার হাসির প্রত্যুত্তরে আন্দ্রিয়া চমৎকার হাসল।আন্দ্রিয়া রোমান্টিসিজমে ডুবে থাকা মেয়ে যার ভাবনা চিন্তা বাস্তবের চেয়েও বেশি অবাস্তব জগৎটাকে নিয়ে,তার রাজ্য নিয়ে, পরীদের নিয়ে আর তাকে পাগলের মতো ভালোবাসবে এমন এক কিং’কে নিয়ে।সেখানে যখন অবাস্তবেরা হঠাৎ বাস্তবতায় ধরা দিল তখন ব্যাপারটা আন্দ্রিয়ার কাছে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো।

এডউইন কি কোন বশ মন্ত্র জানে?আন্দ্রিয়াকে কেন ঘোরে ফেলে সে?নাকি আন্দ্রিয়া নিজেই এডউইনের প্রাণঘাতি ভালোবাসায় বারবার নিজেকে বন্দি করছে?আন্দ্রিয়ার ভাগ্যটা জটিল থেকে জটিলতর।তার ভাগ্যদেবতা আদৌ কি তার সহায় হচ্ছেন?নাকি…
এডউইনের গায়ে মিশে থাকা কস্তুরীর ঘ্রাণে আরেকবার মাতোয়ারা হয়ে পড়ল সে।গলায় ঝুলে থাকা ক্রস লকেটটা এত সুন্দর লাগে কেন?আন্দ্রিয়া তর সয় না ঘোড়া চলছে অথচ সে এডউইনের পরনের শার্টটার বোতাম খুলতে ব্যস্ত।
” আন্দ্রিয়া মেরি তুমি বড্ড জ্বালাও।বি কুআইট কুইন।”
আন্দ্রিয়া এডউইনের ঠোঁটে তার সরু আঙুলের সাহায্যে চেপে ধরল এডউইন মুহূর্তে ভ্রু কুচকে ফেলে, এই মেয়ে চাইছে কি?

” আন্দ্রিয়া এতটা দূর্বল হয়ে যাচ্ছো?তোমার পরিবার যদি আমাকে না মেনে নেয়?”
আন্দ্রিয়া ঘোর থেকে ছিটকে পড়ল।এডউইনের ঠোঁট চেপে ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,
” এডউইন আমি আপনাকে চাই।আমি যাব না কারো কাছে।যাব না।আমি কার কাছে যাব?আমার মা বাবা ভাই বোন কেউ নেই যারা আছে তারা আমাকে ভালোবাসে না।আমি একজনের ভালোবাসায় বাঁচতে চাই। এডউইন আমাকে বন্দি করুন যেন কেউ আমাকে আপনার কাছ থেকে আলাদা করতে না পারে।”
এডউইন আলতো চুমু খেল আন্দ্রিয়ার ঠোঁটে।এডউইনের ঠোঁট জুড়ে বিজয়ের হাসি এটাই তো চাইছিল সে। অভ্র যে বলেছিল এডউইন খুব ভালো ম্যানিপিউলেইট করতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আন্দ্রিয়া।আন্দ্রিয়া কথা বাড়ায় না এডউইনের মাথা চেপে ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।বাদামী এক জোড়া চোখে সে সত্যি কারের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে এই ভালোবাসা দূরে ঠেলে দেবে কী করে?আন্দ্রিয়া যখন এডউইনের ঠোঁটে মত্ত তখনি গাছ থেকে একটি সাপ এসে এডউইনের ঘাড়ে পড়ল।হঠাৎ সাপটি দেখেই আন্দ্রিয়া বিকট চিৎকার করে আন্দ্রিয়া যেন এক্ষুনি ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নামবে।এডউইন শক্ত হাতে চেপে ধরে আন্দ্রিয়ার কোমড় অন্য হাতে চেপে ধরে সাপের মুখ।
সাপটি দেখতে হলুদ কালো ডোরাকাটা।সাপটির নাম ‘শঙ্খিনী’।এডউইনের কাছে এই জাতের দুটি সাপ আছে তবে তার এই সাপটি দেখেও বেশ আগ্রহ জাগলো প্যালেসে নিয়ে যাওয়ার।আন্দ্রিয়ার কোমড় ছেড়ে এডউইন সাপটাকে হাতে তুলল,

” সাপটা সুন্দর না?”
” ও..ওটা ফেলে দিন।”
” প্যালেসে নিয়ে যাই?”
” এডউইন প্লিজ ফেলে দিন।”
” কেন?সাপটা বড় লম্বা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।”
ভয়ে ঘৃণায় আন্দ্রিয়ার গা রি রি করে উঠল।আন্দ্রিয়া দু’এক বার বুমির ঢেকুর তুলল মেয়েটার বেগতিক অবস্থা দেখে এডউইন হো হো শব্দে হেসে উঠল।
” এডউইন আপনি যদি এটা না ফেলেছেন ঈশ্বরের কসম রাতে আমার কোলে আপনি নয় মাফিন ঘুমাবে।”
এডউইন আলতো হাতে ছেড়ে দিল সাপটাকে সে কিছুতেই আন্দ্রিয়ার ভাগ মাফিনকে দেবে না।হিংসায় ভরে গেল এডউইনের মন প্রাণ আন্দ্রিয়ার কোলে সে ঘুমাবে আর কেউ না।কেউ না।

চায়ে বিস্কুট চুবিয়ে বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে ছোট্ট ছেলে হৃদয়।সেই সন্ধ্যা থেকে সে পাপেটের সাথে ঘুরছে ফিরছে পাপেট তাকে কত মজার মজার খাবার খাইয়েছে।হৃদয় এত স্বাদের খাবার শেষ কবে খেয়েছে মনে নেই।পাপেটের সাথে হৃদয়ের দেখা হলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায়।হৃদয়ের বয়স মাত্র নয় বছর এইটুকু একটা ছেলে ট্রেনের তলায় গলা দিয়ে মরতে গেছিল ভাবা যায়!পাপেট প্রথমে অবাক হলেও পরবর্তীতে ছেলেটাকে বাঁচাল এবং আশেপাশে স্টেশনে যত যাত্রি ছিল সবার কাছে প্রশংসা পেল।

হৃদয় তার করুন জীবনের একেকটা ঘটনা পাপেটকে বলছিল,তার মা বাসা বাড়িতে কাজ করে।তার বাবা তাকে আর তার মাকে রেখে অন্য মহিলা নিয়ে পালিয়ে গেছে একবছর আগে।তার মা এতদিন বুয়ার কাজ করে সংসার চালালেও এক সাপ্তাহ আগে তাকে রেখেই একজনের সাথে পালিয়ে গেছে।সে তার মাকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি।একদিন তার মা তাকে বলেছিল তার নতুন আব্বা আসবে কিন্তু নতুন আব্বা নাকি তাকে মানতে নারাজ তবুও তার মা চেষ্টায় আছে নতুন সংসারে হৃদয়ের যেন ঠাই হয় সে ব্যবস্থা করার।

হৃদয়ের মা তাকে আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেলেন তিনি।এই শহরে হৃদয়ের কেউ নেই কার কাছে থাকবে সে?এই এলাকায় তারা নতুন ভাড়া এসেছে হৃদয় তেমন কিছু চিনেও না।খিদার জ্বালায় ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছিল নিজেকে এক অভিশপ্ত মানুষ মনে হলো।ছোট্ট হৃদয়ের মনে কতটা প্রভাব পড়লে সে আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়!
পাপেট সব শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।হৃদয়কে জানাল সে যা যা পছন্দ করে সব তাকে দেবে সময় রাত বারোটা পর্যন্ত তারপর পাপেট চলে যাবে।ক্ষুদার্ত হৃদয় শুধু খাবার চাইল পাপেট তাকে সাধ্যমত খাবার খাওয়াল।অনেকদিন পর এত এত খাবার খেয়ে হৃদয়ের পেটে আর জায়গা নেই তবুও পাপেটের জোরাজোরিতে এই রাতে পাপেটের সাথে একটি টং দোকানে চা বিস্কুট খেতে লাগল।ঘড়ির কাটায় বারোটা বেজে গেছে সে সাথে ফুরিয়ে এলো পাপেটের সময়।পাপেট গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,

” হৃদয় আমার সাথে যাবে?নাকি নিজের মতো থাকবে।আমার সাথে গেলে কিন্তু বিপদ হবে ভেবে চিন্তে উত্তর দাও।”
” আমনে অনেক ভালা।কিয়ের বিপদ?আমনের লগে থাকলে আমি ভালা থাকমু।”
“তার মানে তুমি আমার সাথে যাবে?”
” হ যামু চলেন।”
পাপেটের হাত জড়িয়ে ধরল হৃদয়।তার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ হলো পাপেট।
এই ব্যস্ত শহরে রাত বারোটা যেন রাত আটটার সমান।পাপেট হৃদয়কে নিয়ে গেল তার বাসায় ভীষণ সুন্দর বাসা এক দেখায় হৃদয়ের পছন্দ হলো।এত সুন্দর বাসা সে আগে দেখেছে কি না সন্দেহ আছে।

” আমনের বাসায় কেউ নাই?”
” আছে।”
” কে আছে?”
“তা জেনে তোমার কাজ নেই।তুমি বরং আমার সাথে আসো।”
পাপেটের পিছু পিছু যেতে লাগল হৃদয়।পাপেট তার খাটের তলায় প্রবেশ করে পাতালে যাওয়ার ঢাকনা খুলল তার কার্যক্রমে বেশ অবাক হলো হৃদয় তবুও বাক্য ব্যয় না করে সে পাপেটের পিছু পিছু সিড়ি দিয়ে পাতালপুরীতে প্রবেশ করল।

” এক দুই পারো?”
পাপেটের অদ্ভুত প্রশ্নে হৃদয় ভড়কালো।তবুও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।পাপেট স্মিথ হেসে বলে,
” গুড বয়।আসো বলতো এখানে কটা মাথা?”
হৃদয়ের সারা শরীর শিউরে উঠল একটি বড় তাকে সাজানো আছে বেশ কয়েকটি মাথার খুলি এত এত মাথার খুলি এখানে কী করছে!হৃদয়ের ভয়ার্ত চাহনি দেখে পাপেট ভরসা দিয়ে বলে,
” বলো এখানে কটা মাথা?”
” আমার ডর করে।”
” ভয় করবে না।আমি না তোমার ভালো আঙ্কেল?”
” হ।”
” তাহলে আমার কথা শুনো।”

হৃদয় গুনতে শুরু করল।এক থেকে ছাব্বিশ পর্যন্ত গুনে হাপিয়ে উঠল সে এখনো অনেক বাকি।বেহিসাবি খুলিগুলো দেখে হৃদয়ের দম বন্ধ লাগছে।হঠাৎ পাপেট হৃদয়ের ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
” শুনো হৃদয়, তুমি জানো তুমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত মানুষ।তোমার বাবা নিজ স্বার্থে চলে গেলেন।তোমার মাও একই কাজটা করলেন তাহলে বলো তোমার জীবনে আর কে আছে?”
” কেউ নাই।”
” তোমার আম্মা যদি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসতো তবে কি তোমাকে একা রেখে চলে যেত?”
” না।”
” এই পৃথিবীতে তোমার বেঁচে থাকাটাই বৃথা আর কষ্টকর। আশা করি এই এক সাপ্তাহতে তুমি বুঝতে পেরেছো।”
” তাই তো মরতে গেসিলাম।”
” এভাবে নিজের জীবন শেষ করে লাভ আছে?তোমার উচিত শেষ বারের মতো অন্যকে খুশি করে মৃতুবরণ করা।
” কেমনে আমি অন্যরে খুশি করমু?”

পাপেট কিয়ৎক্ষণ পাইচারি করল।হৃদয় যখন কক্ষটি মনোযোগ দিয়ে দেখছিল তখনি পাপেট তার সবচেয়ে ধারাল এবং পছন্দের ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কা★টতে শুরু করে।হৃদয়ের ছটফট বাড়তেই হৃদয়কে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে তার সাথে।যতক্ষণ পর্যন্ত না ছেলেটার প্রাণ পাখি উড়ে যাচ্ছিল ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত পাপেট হৃদয়ের গলায় পোচ চালাতেই থাকে।রক্তের জোয়ারে ভিজে গেল পাপেট তার রক্ত রঞ্জিত দেহখানি দেখলে কোন সুস্থ মানুষ নির্ঘাত জ্ঞান হারাবে।ভাগ্যদেবতা যখন হৃদয়ের সহায় হলো না তখন হৃদয়ের মৃত্যু সুনিশ্চিত সে ছিটকে পড়ল মেঝেতে।পাপেট রক্তাক্ত দাঁতে হেসে বলে,

” এভাবে কষ্টে বেঁচে থেকে লাভ নেই আমি তোমাকে সুখের মরণ দিলাম।”
পাপেট হৃদয়ের লা*শটা টেবিলে তুলল এবং দেহে থাকা সমস্ত জামাকাপড় খুলে ফেলল।সর্বপ্রথম ইনিউক্লিউশন ফরসেপের মাধ্যমে অক্ষিকোটর থেকে চোখ আলাদা করল।তারপর দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে কো *পাতে কো *পাতে হৃদয়ের দেহ থেকে মাথাটি ছিন্ন করল।ইয়েস পাপেট আরেকটি ট্রফি জিতেছে।
পাপেট ভীষণ আনন্দে গান গাইতে থাকল।
সে এক ছমছমে রাত রক্তাক্ত পাপেট রক্তাক্ত পাতালপুরী কি বীভৎস দৃশ্য।

পাপেট ছুরির সাহায্যে কৌশলে হৃদয়ের দেহ থেকে মাংস আলাদা করল।সব মাংস প্যাকেটে ভরে গোসল সেরে বেরিয়ে পড়ল রাতের নিরবিলি রাস্তায়।রাস্তায় থাকা কুকুর গুলোকে হৃদয়ের মাংস এক টুকরো এক টুকরো করে খেতে দিল পাপেট।সে যখন কুকুরগুলোকে মাংস খাওয়াচ্ছিল তখন তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,
” হৃদয় বোকা ছেলেটা, কষ্ট করে বাঁচার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।তুমি মরে গেলেও দেখ অন্তত তোমার মতো একটা অপ্রয়োজনীয় মানুষ দ্বারা কিছু প্রয়োজনীয় কাজ হলো।ক্ষুদার্ত কুকুর গুলোর রাতের ভোজন বেশ তৃপ্তিদায়ক হলো।
আপনার কি ভাবছেন আমি হৃদয়কে মারলাম কেন?আপনারাই বলুন অপ্রয়োজনীয় একটি প্রাণ এই পৃথিবীতে থেকে কি হবে?ছেলেটা শুধু শুধু বেঁচে থেকে কষ্ট পাবে।তার থেকে বরং তাকে সুখকর মৃত্যু দিলাম যা কষ্ট পাওয়ার এক বারেই পেল আর কোন কষ্ট নেই তার।হৃদয় কীটের ন্যায় বেঁচে থেকে কী হবে?

টেরিবেল পর্ব ১৮

তার থেকে বরং নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিক অন্যের তরে।হৃদয়ের মাংস যখন কাটছিলাম বিশ্বাস করুন আমার এত আনন্দ হচ্ছিল!অনেকদিন পর আনন্দ পেলাম হৃদয় আমাকে যে আনন্দ দিয়েছে সেই আনন্দ আমার হৃদয়ে আজীবন লেখা থাকবে।তাছাড়া হৃদয় ক্ষুধার্ত কুকুরগুলোর খাবার হলো কুকুররাও নিশ্চিয়ই হৃদয়ের প্রতি আনন্দিত।যাই হোক এত এত উপকার করলাম তারপরেও আপনারা বলবেন পাপেট খারাপ।খুব খারাপ।আপনারা এত অকৃতজ্ঞ কেন বলুন তো?পাপেটকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না?

টেরিবেল পর্ব ২০