ডার্কসাইড পর্ব ১৮

ডার্কসাইড পর্ব ১৮
জাবিন ফোরকান

– আঁর ফুঁয়ারে এইল্লা জালিমগিরি?আল্লাহ ন সইবো হই দিলাম!বেগ্গিন তোঁয়ার দুষ ফুঁউলটুশি! [আমার সঙ্গে এমন অত্যাচার?আল্লাহ সহ্য করবেনা কিন্তু!সব তোমার দোষ ফুলটুশী! ]
আসমানের চোখ রাঙানিতে নিহাদ মুহূর্তেই লজ্জাবতী উদ্ভিদের পাতার ন্যায় নেতিয়ে পড়লো। অধরের উভয় পৃষ্ঠ একে অপরের সঙ্গে চেপে ভারসাম্য রক্ষায় মনোযোগ দিলো।বর্তমানে চারুলতার ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমের এক কোণায় কাকতাড়ুয়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।এক পায়ে ভারসাম্য রেখে অপর পা তুলে রেখেছে শূন্যে।উভয় কাঁধের উপর ছোট আকৃতির দুটো মাটির তৈরি টব,যাতে রোপিত ক্যাকটাস।মাথাও আবদ্ধ একটি বইয়ে।সামান্যতম নড়চড় করলেও সবকিছু মেঝেতে ছিটকে পড়ে ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে।যা নিহাদ কোনোক্রমেই হতে দিতে রাজী নয়।কারণ,

– আমার থাইল্যান্ড থেকে কেনা শখের টব যদি ভেঙেছে রোডসাইড রোমিও….তাহলে তোমাকে শিকে বেঁধে কা*টা ঘা*য়ে ঝাল ঝাল মশলা মাখিয়ে শিক কাবাব করে ছাড়বো!
চারুলতার সাবধানবাণী ক্ষণে ক্ষণে বেজে চলেছে কানে।কিচেন থেকেও তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রেখেছে সে নিহাদকে।একটু এলোমেলো হয়ে আসলেই কটমট করে এমন ভঙ্গিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে যে নিহাদের শিরদাঁড়া শিরশির করে উঠছে।
– শাকচুন্নি!
আপনমনে বিড়বিড় করে রোযার দিকে ধারালো নয়নে দৃষ্টিপাত করলো সে।নিঃশব্দে হেঁচকি তুলে সহসাই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো মেয়েটি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চারুলতার ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমটা আসমানের পেন্টহাউজের তুলনায় অনেকটাই ছোট।তবুও ঝকঝকে তকতকে ইন্টেরিয়র এবং পরিপাটি আসবাবের কারণে বেশ অভিজাত মনে হচ্ছে।মুখোমুখি রয়েছে সোফাসেট, মাঝখানে টি টেবিল।একপাশে ফোল্ডঅ্যাবল টিভিস্ট্যান্ড।অফহোয়াইট বর্ণের পর্দা আবৃত কাচের দেয়াল উন্মুক্ত।বাইরের শীতল হাওয়া এবং দিবাকরের চড়চড়ে রশ্মি উভয়ের অবাধ চলাচল স্থানজুড়ে।একপাশে কাচের তাক।যাতে ইয়োগা ম্যাট, ছোট আকৃতির ডাম্বেলসহ বেশকিছু এক্সারসাইজ করার জিনিস। অপর পাশেই কাচের দেয়ালে পৃথক করা কিচেন।কিচেনের একপ্রান্তে করিডোর,যাতে রয়েছে ভিন্ন রুমে যাওয়ার ব্যবস্থা।

এই মুহূর্তে একটি সোফায় আসমানের পাশাপাশি বসে আছে রোযা।তাদের ঠিক মুখোমুখি সদ্য ইতালি থেকে আগত বিলালুর রেমান, রেমান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান এবং আসমানের পিতা।
একটি এমব্রয়ডারি করা সুতির ওড়না মাথায় তুলে রেখে বসে বসে নিজের কোলে রাখা হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে রোযা। কিছুক্ষণ আগেই বাইকে লিফট দিয়ে সাহায্য করা মানুষটা আদতে আসমানের বাবা এবং তার শশুর হতে পারে তা সে কল্পনাও করেনি।ওহ…পাতানো শ্বশুর!মনে মনে নিজেকে শুধরে নিলো।
বিলাল সোফায় গা এলিয়ে নিহাদের দিকে চেয়ে হাসছেন।

– আহ নীল….অনেক হয়েছে।বেচারা না বুঝে একটু ভুল করে ফেলেছে আরকি।তার জন্য এমন কাকতাড়ুয়া করে রাখবে?ছেলেমানুষ ছেড়ে দাও…
– কাক্কু আপনি দরবেশের বংশধর আমি শিওর!
পা মেঝেতে রাখতে গিয়েও আসমানের দৃষ্টি নিক্ষেপে নিহাদের বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। করুণ চোখে চাইলো গুরুর দিকে।কিন্তু গুরুর পাথর হৃদয় গলানো পৃথিবীর অন্যতম জটিল কর্ম সেটা তার থেকে ভালো কেউ অনুধাবন করতে সক্ষম নয়।আসমান বিলালের দিকে ফিরলো।মৃদু কন্ঠে জানালো,

– তোমার সঙ্গে বেয়াদবী করেছে।উপরন্তু… কারো প্ররোচনায় আমায় না জানিয়েই বাইরে গিয়েছে।শাস্তি প্রযোজ্য।
– আমার কি দোষ?তোমার বউই তো আমাকে….
– তুমি কি ফার্মের মুরগি?কসাই ডাকলেই জ*বা*ই হতে গলা পেতে দেবে?
কাচুমাচু মুখ করে আপনমনে কি যেনো বিড়বিড় করতে থাকলো নিহাদ।আসমান একটু মাথা ঘুরিয়ে রোযার দিকে তাকালো,তক্ষুনি নিজের দৃষ্টি লুকিয়ে ভিন্নদিকে দৃষ্টিপাত ঘটালো রোযা।
সকলের জন্য ট্রেতে করে শরবত নিয়ে হাজীর হলো চারুলতা।লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করা নিহাদের দিকে আড়চোখে চেয়ে ভেংচি কেটে নিজের বাবার পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো।মুহূর্তেই নিজের সন্তানকে বাহুডোরে আগলে নিলেন বিলাল।মাথায় স্নেহের চুম্বন এঁকে শুধালেন,

– হাউ আর ইউ মাই বেইবি?
– আই মিসড ইউ ড্যাড।
না চাইতেও দৃশ্যটির পানে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো রোযা।বাবা মেয়ের ভালোবাসাঘন মুহূর্ত।তার হৃদয়ে এক আবেগের সঞ্চার ঘটালো তা।নিজের বাবা মায়ের চেহারাও তার নয়নে কখনো ভাসেনা।স্থিরচিত্রের ন্যায় স্থবির তা মনমরুজুড়ে।একটুখানি পরিবারের ভালোবাসার কাঙাল তার সমস্ত অস্তিত্ব।অজান্তেই টলটল করে উঠলো দৃষ্টি।যা এড়ালোনা কোনো ভাবুকতা।ঘন গোঁফের আড়ালে মৃদু হাসলেন বিলাল।
– তোমার নাম কি মামণি?
হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে দ্রুতকন্ঠে রোযা জবাব দিলো,
– জ্বি…. আরিয়া সুলতানা।
বক্ষের একপাশে চারুকে আঁকড়ে রেখে অপর বাহু বাড়িয়ে ধরলেন বিলাল, অমায়িকতায় উদ্ভাসিত তার সমগ্র অবয়ব।বিস্মিত রোযা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠে দাঁড়ালো, পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো, দখল করে নিলো বক্ষের অপরপাশ।স্নেহের চুম্বন লাভ করলো নিজের ললাটে।

– আমার ছেলেটা বেশি জ্বালাতন করেনা তো তোমাকে?
না চাইতেও হাসি ফুটলো রোযার অধরে, টপ করে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা অবাধ্য আবেগের অশ্রু।নিজের মুখ পিতার সমতুল্য মানুষটির বক্ষে গুঁজে মাথা নাড়ল সে।লজ্জাবোধ কিংবা অনুভূতির তাড়নায় শব্দ নির্গত হলোনা কন্ঠ থেকে।মৃদু ধ্বনি তুলে হেসে বিলাল যুক্ত করলেন,

– নো টেনশন মামণি,আমি এসে গিয়েছি।তেড়িবেড়ি করতে গেলেও একদম সোজা করে দেবো।
একটি নিঃশ্বাস ফেলে বুকে হাত ভাঁজ করে রেখে নিহাদের দিকে ফিরলো আসমান।বেচারার করুণ দৃষ্টি লক্ষ্য করে পাল্টা ভ্রুকুটি করলো। তারপর নির্বিকার চেয়ে থাকলো বিপরীত দিকের সোফায়। বিলাল নিজের পরনের প্যান্টের পকেট থেকে একটি বাক্স বের করলেন।মেলে ধরলেন রোযার সামনে। যাতে শোভা পাচ্ছে স্বর্ণালী বর্ণের একটি ব্রেসলেট।বিহ্বল রোযা শ্বশুড়মশাইয়ের দিকে তাকাতেই তিনি জানালেন,

– তোমাদের বিয়ের উপহার।আমি তো থাকতে পারিনি।প্রথমবার বউয়ের মুখ দেখলে নিশ্চয়ই তাকে কিছু দিতে হয়।
– না আংকেল আমি কিভাবে…
“ আমি তো আপনার ছেলের সত্যিকারের বউ নই ”— বাক্যটি অনুচ্চারিত রয়ে গেলো।
– আংকেল কি?বাবা হই এখন তোমার।
– জ্বি মানে…
না চাইতেও আসমানের উপর আপতিত হলো রোযার দৃষ্টি।ছেলেটি হাঁটুর উপর পা তুলে চেয়ে রয়েছে, নয়ন যথারীতি শূণ্য।যেন জগতের সবচেয়ে বিরক্তিকর কোনো দৃশ্যের দিকে চেয়ে আছে যার প্রতি তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
– ওর দিকে কি দেখছো তুমি?হাতটা দাও এদিকে।
রোযাকে কোনোপ্রকার প্রতিবাদের সুযোগ না দিয়ে বিলাল তার কব্জিতে ব্রেসলাইটটি পরিয়ে দিলেন।

– বাহ্,বেশ মানিয়েছে তোমার হাতে।
– ধন্যবাদ আংকেল।
– বাবা।
– ব…বাবা।
হৃদয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো,বহু বছর পর এতটা আবেগ মোড়ানো সম্বোধনটি উচ্চারণ করতে।সটান উঠে দাঁড়ালো সে,
– আপনারা বসুন।আমি কিছুটা খাবারের ব্যবস্থা করি।
– ড্যাড ফ্রুট কাস্টার্ড বেশ ভালোবাসে।মাত্র মনে পড়ল ফ্রিজে ক্রিম তৈরী আছে।শুধু…
– তুমি বসো চারুলতা।আমি নিয়ে আসছি।

মৃদু হেসে কিচেনের দিকে হাঁটা দিলো রোযা।সোফার পাশ ঘেঁষে আসার সময় চারুলতা তার হাতে নিজের ফোন ধরিয়ে দিলো।ইশারায় চোখ টিপ দিলো।হতবাক হয়ে রোযা খেয়াল করলো তাতে ভিডিও ক্যামেরা অন করা।নিহাদকে ভিডিও করতে বলছে কিচেন থেকে!অনুধাবন করতেই সে মাথা নাড়ল,কিন্তু সে শোনে কার কথা?তার প্রতি নীরবে করুণ আবেদন পেশ করলো চারুলতা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনে ঢুকে পড়ল রোযা।
কিচেনের দেয়াল স্বচ্ছ হওয়ার দরুণ ড্রয়িং রুমের দৃশ্য উন্মুক্ত।ফলমূল বের করতে করতে রোযা সন্তপর্নে মোবাইলটা ঠেকিয়ে রাখলো এক প্রান্তে।যেন কাকতাড়ুয়া অবস্থানে রীতিমত জীবনসংগ্রাম করতে থাকা নিহাদের দৃষ্টি কিছুতেই এদিকে না পরে।একবার বুঝতে পারলেই হয়েছে,কান ঝালাপালা করে দেবে একদম!

ভিডিও হতে হতে রোযা ফলমূল কেটে বাটিতে সাজিয়ে নিলো।তাতে কাস্টার্ড এর ক্রিম এবং উপরে আনারের দানা ছড়িয়ে দিলো।মোবাইলে ততক্ষণে বেশ দীর্ঘ একটা ভিডিও হয়েছে।হঠাৎ নিহাদের চোখ পড়ায় রোযা অতি দ্রুত হাতে মোবাইল তার দৃষ্টিসীমানার বাইরে সরাতে গিয়ে সেটা হাত পিছলে পড়লো কেবিনেটের উপর।নিহাদ অবশ্য ব্যাপারটা ধরতে পারেনি, সে নিজের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাস্ত।রোযা টিস্যুতে হাত মুছে মোবাইল তুলতেই লক্ষ্য করলো ভিডিও বন্ধ হয়েছে।চাপ লেগে ভিডিও ফোল্ডারে প্রবেশ করেছে।ব্যাক বাটন প্রেস করতে গিয়েও একটি অদ্ভুত ফুটেজ লক্ষ্য করে সে থমকে গেলো। কারো মোবাইল ঘেঁটে প্রাইভেসি নষ্ট করা উচিত নয়।এমন শিক্ষা অন্তরে ধারণ করলেও ফুটেজের দৃশ্যের অবিশ্বাস্যতা এতই অধিক যে রোযার কৌতূহলী হৃদয় কিছুতেই নিজের অন্তরকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হলোনা।

আসমানের হাসিমুখ!
উল্টো ফিরে ভিডিওটি চালু করলো রোযা।হৃদযন্ত্র দৌড়পাল্লায় নেমেছে। ক্ষণে ক্ষণে তরঙ্গ খেলে যাচ্ছে শরীরজুড়ে।মস্তিষ্ক উদগ্রীব হয়েছে অভূতপূর্ব ঘটনাটির উন্মোচনে।
ভিডিওটি শুরু হতেই দ্রষ্টব্য হলো কোনো এক সমুদ্রতট। গোধূলী লগ্ন।দিবাকরের ম্রিয়মাণ রশ্মি নীলাভ রাজ্যের ঢেউয়ে ভাসিয়েছে স্বর্ণালী ভেলা।বালুকাময় তীরে উর্মীমালার আছড়ে পড়ার ধ্বনি, অতঃপর বায়ু প্রবাহের শিরশিরে উদগীরণ।ভাসমান বুদবুদে আবৃত তট।প্রাকৃতিক আশীর্বাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভেসে আসছে খিলখিলে হাসির শব্দ।বড্ড মায়াবী সেই হাসি,অন্তরে প্রশান্তির ঝলক উৎপত্তিকারী।সাদা ফ্রকে বালুকাজুড়ে দৃশ্যমান হলো চারুলতা।উভয় বাহু দুপাশে মেলে ধরে প্রফুল্লতার স্রোতে হারিয়েছে নিজেকে।মসৃণ ঘন কালো চুলরাশি কোমর ছাড়িয়ে নেমেছে হাঁটু অবধি। দুলে বেড়াচ্ছে তা,সবুজাভ লতার ন্যায়।

দৃশ্যটি এ পর্যন্ত ঠিক ছিল।যতক্ষণ না অদূর হতে বালুরাজ্যে আগমন ঘটে রহস্যময় মানব আসমানের।
কোথায় সেই কদর্যতা, বিভীষিকা?কোথায় সেই কলঙ্ক? এ যেন এক ঘুমন্তপুরীর রাজপুত্র। দীপ্তির ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত তার দৈবিক অবয়ব।পরনে শুভ্র পোশাক।বায়ুর ঝাঁপটায় খেলে যাচ্ছে বস্ত্র,তাল মিলিয়েছে ঘন চুলের গুচ্ছ।এলোমেলো হয়ে আপতন ঘটেছে ললাটে।চোয়ালে ঝুলছে বিস্তৃত এক হাসি। অধরজোড়া মোড়ানো হৃদয় হরণীয়া হাসির মুক্তোধারায়।এগিয়ে আসছে সে ক্রমেই, বালুকাময় স্নিগ্ধ পদক্ষেপের চিহ্ন ফেলে।

নিজের হাত মেলে ধরলো চারুলতা।অতি যত্নে তা নিজের মুঠোয় আবদ্ধ করে নিলো আসমান।এক মুহূর্তের জন্যও তার পুষ্ট ওষ্ঠযুগল থেকে মুছে যায়নি হাসির বর্ষণ।দৃষ্টির নিগূঢ়তার মাঝে ভাসমান অনুভূতির তারকারাজি।জ্বলজ্বল করছে তা আপন উদ্ভাসে।চারুলতার কোমরে হাত জড়িয়ে তাকে শূন্যে তুলে নিলো আসমান।পরমুহুর্তেই ঘুরপাক খেতে থাকলো তটজুড়ে।হাসির কলতান জুড়লো এক ছন্দে।মিলিত হলো উভয়ের কপাল। মুহূর্তজুড়ে আবেগ, অনুভূতি এবং….. ভালোবাসা।

নিজের শরীরের জোর সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলল যেন রোযা।তার পদক্ষেপ টলে উঠলো।ধাক্কা খেলো কেবিনেটে।ধপাস করে মেঝেতে আছড়ে পড়লো একটি কাচের বাটি।ভেঙে চৌচির হয়ে প্রতিটি টুকরো ছড়িয়ে পড়ল এদিক সেদিক।একটি ছুটে এলো রোযার পায়ে,গেঁ*থে গেলো অল্পগতিতে।চুঁইয়ে নামলো র*ক্ত।কিন্তু তাতে কোনো মনোযোগ নেই।হৃদয় আজ চুরমার ওই কাঁচের ন্যায়।মস্তিষ্ক বিলীন অনুভূতির দোলাচলে।নিজের দৃষ্টি আজ নিজের হয়েও যেন বিশ্বাসের অনুপযুক্ত।চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছে, বিদায় নিয়েছে আবেগও।বাস্তবতা নিজের ভয়াল রূপ প্রদর্শন করেছে,ভয়ংকরভাবে।
এ কোন আসমান?
এ কোন চারুলতা?
– আরিয়া!
– মামণি?

চারুলতা এবং বিলাল উভয়ে প্রবেশ করলেন কিচেনে।পিছনেই আসমান। নিহাদও নিজের কাকতাড়ুয়া ভঙ্গি ত্যাগ করে কৌতূহলী হয়ে উকি দিচ্ছে দেয়ালের ওপাশ থেকে।রোযার কাছে সর্বপ্রথম পৌঁছলেন বিলাল।
– একি?কি হয়েছে?তোমার পা…
– সরো দেখি।
রোযার সামনে হাঁটু গেড়ে ঝুকলো আসমান।কিন্তু অভাবনীয় দৃশ্যটির প্রতিও কোনোপ্রকার নজর আপতিত হলোনা রোযার।তার উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি বর্তমানে যুক্ত চারুলতার আতঙ্কিত নেত্রে। অতি দ্রুত এগিয়ে রোযার হাত থেকে নিজের মোবাইল কেড়ে নিলো সে।একবার স্ক্রিন এবং অতঃপর রোযার পানে চাইলো।উভয় রমণীর নয়নে উদ্ভাসিত হলো এক অজানা অভিব্যক্তি।চারুলতার ঢেউ খেলানো বিস্তৃত ঠোঁটজোড়া ফাঁক হলো,কিন্তু কোনো শব্দ নির্গত হলোনা।তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো রোযা,তার সমস্ত শরীর শীতল হয়ে উঠেছে।কিছুই শুনতে চায়না সে, আর কিছুই জানতে চায়না।যদি সম্ভব হতো,তাহলে কিছুক্ষণ আগের মুহূর্তটি সে এক্ষুণি মুছে ফেলত মস্তিষ্ক থেকে।
এতক্ষন ধরে রোযাকে ডাকতে থাকা বিলাল কিংবা নিহাদ কারো কন্ঠই কর্ণগোচর হয়নি।ভূত দেখার মতন চমকিত হয়ে সে অদূরে চেয়ে আছে। শব্দগুচ্ছ গোত্তা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে কানের পর্দায়।বিরক্তিবোধ করলো আসমান।র*ক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে।ইশারায় নিহাদকে ফার্স্ট এইড কিট আনার নির্দেশ প্রদান করে উঠে দাঁড়ালো মেঝে থেকে।

– এক্সকিউজ মি…
রোযা কিছু বলার পূর্বেই তার কোমরে জড়িয়ে গেলো আসমানের বলিষ্ঠ বাহু।শক্তিশালী টানে নিজের ডান হাতের বাহুতে বসালো সে রোযাকে,সয়ংক্রিয়ভাবে তার গ্রীবাদেশ আঁকড়ে ধরলো রোযা।ওড়নাটি পিছল খেয়ে পড়ে যেতেই অপর মুক্ত হাতে তা পাকড়াও করলো আসমান।লম্বা পদক্ষেপে এগিয়ে গেলো সোফার দিকে।তবুও এহেন কাছাকাছি আসা,মুহূর্তের গভীরতা কিংবা আবেগের তাড়না ছুঁতে সক্ষম হলোনা রোযার বরফখণ্ডে পরিণত হওয়া অন্তর।আনমনে আসমানের মাথায় চিবুক ঠেকালো নিজের, বুজে নিলো চোখের পাতা।অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার আগে দৃষ্টিতে ভাসলো চারুলতার সুদর্শনা চিন্তাখচিত মুখখানা।

এক হাতে হুইস্কির গ্লাস।তাতে বুদবুদ উঠে বায়ুতে মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। অপর হাতের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে পোস্টকার্ডের মতন কিছু মানুষের ছবির হার্ডকপি। তীক্ষ্ণ নজর একে একে আপতিত হচ্ছে প্রত্যেক প্রান্তে।সর্বপ্রথম ছবিটি এক তরুণীর।অত্যন্ত সুদর্শনা,টানা নয়ন এবং মসৃণ দীর্ঘায় কুচবরণ চুলের অধিকারিণী। অবয়বজুড়ে মুগ্ধতার অনুভূতি খচিত।মনকাড়া হাসি যেন সময়ের অতীত।দ্বিতীয় ছবিটি এক পুরুষের। পুরুষালী কাঠামোয় শিশুসুলভ মায়াবী চেহারা। ককেশীয়দের ন্যায় ধবধবে গাত্রবর্ণ।নিগূঢ় কৃষ্ণগহ্বরের শোষণীয় দৃষ্টি চিত্তজুড়ে চির ধরানোয় পারদর্শী।তৃতীয় ছবিটি সবকিছুর সঙ্গে কিছুটা বেমানান।অতি সাধারণ এক বাঙালি রমণী।প্রথম ছবির রমণীর ন্যায় সুদর্শনা নয় সে।তবুও সাধারণ কামিজ পরিহিত অবকাঠামোজুড়ে এক লাস্যময়ী পরিব্যাপ্তি রয়েছে। চন্দনপূর্ণ মুখমণ্ডলে প্রশান্তির বাসনা।

একে একে ছবিগুলো টেবিলে স্থাপন করা হলো।মাঝখানে শুভ্র পুরুষ,দুপাশে দুই রমণী।যেন এক রাজা এবং তার দুইটি রাণী। দুয়োরাণী, সুয়োরাণী। তীর্যক হাসি প্রকাশ পেলো টকটকে ঠোঁটজুড়ে।তাতে স্পর্শ করলো গ্লাস,কন্ঠনালী বেয়ে নেমে গেলো উত্তেজক তরল।
– ভেরি….ইন্টারেস্টিং!
কণ্ঠস্বরের শিহরণেও বিন্দুমাত্র নড়লোনা কক্ষজুড়ে দন্ডায়মান কালো পোশাকধারী,বুকে পেঁচার সিলভার মোহর সম্বলিত যান্ত্রিক মানবগুলি।দৃশ্যপটে চেয়ে থাকল বরফস্থির দৃষ্টিতে।ধীরে ধীরে হাতে উঠে এলো উভয় রমণীর চিত্র।দুদিকে তা তুলে ধরে ম্রিয়মাণ জড়ানো শব্দগুচ্ছ প্রতিধ্বনিত হলো আবদ্ধ দেয়ালজুড়ে।
– হুম শুড আই ক্যাপচার ফার্স্ট?

ঠিক তখনি কক্ষের দরজায় মৃদু কড়াঘাত।ভেতরে প্রবেশ করলো একজন।হাতে আইপ্যাড।টেবিলের উপর স্ট্যান্ড স্থাপন করে মুখোমুখি করানো হলো।মুহূর্তেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো অবয়বটি।বয়সের ছাপ বেড়েছে বহুগুণে,চোখের নিচে কালি পড়েছে।আধপাকা দাড়ি কমে এসেছে।কেমন উদ্ভ্রান্ত এবং আতঙ্ক অস্তিত্বজুড়ে।
বাঁকা হাসলো সে।ছবি রেখে হাত এলিয়ে দিয়ে টেবিলের প্রান্ত হতে টেনে নিলো মানব মা*থা*র খু*লি*টি, জীববিজ্ঞানের ভাষায় যাকে সম্বোধন করা হয় করোটি হিসাবে।অতি যত্নে বুকে আগলে নিয়ে তাতে আদুরে হাত বুলিয়ে চললো।

– মিস্টার বাদশাহ…. লং টাইম নো সি?
– আলফা…আমি…
আঙুল তুলে না বোধক ইশারা করতেই ভিডিও কলের ওপাশের বাদশাহ কায়সারের মুখজুড়ে ছেয়ে গেলো অমানিশা। করোটিতে ঠোঁট স্পর্শ করে আলফা বিড়বিড় করলেন,
– এটা কে জানো? আমার সন্তান!
নৈঃশব্দ্য।শুধুমাত্র ভারী নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের আলাপন।চেয়ারে হেলান দিয়ে যথারীতি করোটিতে আদর ছোঁয়া চলমান রেখে আলফা আদেশ ছুঁড়লেন,
– আই ওয়ান্ট হিম অ্যালাইভ! হি শুড নো দ্যা পেইন হি গেইভ মাই সন্! ওয়ে মোর দ্যান দ্যাট!
– আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।দরকার হলে গোটা দেশ উপড়ে ফেলব কিন্তু তবুও…
– উহুম।চেষ্টা নয়,আমি ফলাফল চাই।দিস ইজ মাই লাস্ট আল্টিমেটাম বাদশাহ!আদারওয়াইজ…. ইওর এম্পায়ার উইল বার্ন ইনটু অ্যাশেজ!

ওপাশ থেকে কিছু বলার সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই ইশারায় ভিডিও কল কেটে দেয়া হলো।নিজের আপন জগতে ডুব দিলেন আলফা। করোটি নিজের দিকে ঘুরিয়ে চেয়ে থাকলেন একদৃষ্টে।কঠোর দৃষ্টিজুড়ে মুহূর্তের জন্য প্রকাশ পেলো এক অব্যক্ত অনুভূতি।দৃষ্টিতে ভেসে এলো স্মৃতিমালা।
“ ড্যাডি….আমি স্কুলে স্টার পেয়েছি!”
“ আমাকে একটু আদর করে দাওনা ড্যাডি।”
“ মাম্মা ওই চাঁদের দেশে তারাদের সাথে সুখে আছে তাইনা ড্যাডি?আমিও একদিন ঠিক তারা হয়ে মাম্মার কাছে যাবো….”

কণ্ঠস্বর কানে বাজতে থাকলো।অশরীরী পরাশক্তির অবাধ্য বাসনার ন্যায়। হৃদমাঝারে উঠলো সমুদ্রঝড়। করোটিতে আলফা ঠেকালেন চুম্বন।সিক্ত কন্ঠে আপন আবেগে বিড়বিড় করলেন,
– ইউ আর আ স্টার নাউ, মাই বয়!
দীর্ঘ এক মুহুর্ত কাটলো তার সন্তানসঙ্গে।পরক্ষণে প্রতিজ্ঞ দৃষ্টি আপতিত হলো টেবিলে ছড়ানো ছিটানো মহারাজ এবং তার রাণীগণের পানে।

– কিছু কি হয়েছে চড়ুই?তোমাকে আজকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে।
নিজের দাদুর কথায় কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে পদার্পণ করলো রোযা।দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে বাটির স্যুপ তুলে ধরলো তার ঠোঁটে।জোরপূর্বক ফুটিয়ে তুললো স্নিগ্ধ এক হাসি।
– কই নাতো!কিছু হয়নি।কি হবে আমার?
– জামাই কিছু বলেছে?ঝগড়া করেছ?
– হাহা,কি যে বলোনা দাদু।তোমার জামাই একটা হুতুমপেঁচা।ঝগড়াও করা যায়না শান্তিমত। গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
গড়গড় করে মিথ্যা বলতে অন্তরে বাঁধছে রোযার।কিন্তু কিছুই করার নেই।নিজের জীবনের অশুভ ছায়া তার দাদুকে ছুঁয়ে যাক তা সে কোনোদিনও হতে দেবেনা।মুচকি হাসলেন ইউনূস। লক্ষ্মী ছেলে হয়ে নিঃশেষ করলেন রাতের খাবার।

– তোমার হাতের জিনিসটা তো খুব সুন্দর!
ব্রেসলেটের দিকে দৃষ্টিপাত হতেই রোযা ভ্রু তুললো।
– ওহ।আংকেল….না মানে বাবা দিয়েছেন।
– বিলাল রেমান।আমাকে দেখতে এসেছিলেন আজকে সকালে।খুব ভালো মানুষ।
– হ্যাঁ দাদু।আমাকে খুব আদর করে। মামণি বলে ডাকে।
সায় জানালো রোযা।দাদুকে শুইয়ে দিলো বিছানায়।তারপর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বিড়বিড় করলো,
– চিন্তা করোনা দাদু।তোমার চিন্তার দিন শেষ।আমি খুব ভালো আছি,খুব সুখে আছি এই নতুন পরিবারে।
এটুকুই।নার্সের দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলে রোযা বেরিয়ে গেলো।তার চলার পথের দিকে তাকিয়ে হাসি ধরে রাখলেন ইউনূস,পরপরই তার কুঞ্চিত চেহারায় নেমে এলো অপূরণীয় এক আঁধার।কি চমৎকার মিথ্যা বলতে জানে তার চড়ুই!

নিজের রুমের বিছানায় স্থির হয়ে আধ ঘণ্টামতন বসে থাকলো রোযা। বিলাল রেমান,আসমানের বাবা এখানে এসেছেন আজ দ্বিতীয়দিন।তার আগমনের উত্তেজনা ফিকে হয়ে পড়েছে অদ্ভুত এক রহস্যের অন্তরালে।রহস্য বলা উচিত তাকে?নাকি ঘোরতর নিষিদ্ধ কোনো অনুভূতি?জগতের সবথেকে উদ্ভট চিন্তার দলেরা ভিড় পাকিয়েছে রোযার মস্তিষ্কজুড়ে।গতকাল সকালে তার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিল স্বয়ং আসমান।কিন্তু রোযার অনুভূতি তাতে শূণ্য।একটি বাক্য তো দূরে থাক শব্দও বিনিময় হয়নি তাদের মাঝে।রোযার আচরণের অস্বাভাবিকতা শুধুমাত্র আসমান নয় বরং নিহাদ অবধি ধরতে পেরেছে।আজ সন্ধ্যায় তাই এসেছিল তার রুমে, স্বভাববশত নিজের হাসির জাদু দিয়ে মাতিয়ে তুলতে রোযাকে।তথাপি সম্ভব হয়নি তা। রোযার চারিপাশে জমা দ্বিধাদ্বন্দের আস্তরণ নিহাদ ভেদ করতে পারেনি।

উঠলো রোযা।ঘরে পায়চারি করতে থাকলো।আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে ব্যাথা লাগলো, তবুও থামলোনা।ধকধক করে স্পন্দিত হতে থাকলো তার হৃদযন্ত্র।কি হচ্ছে এসব?কি ভাবা উচিৎ তার?নিজের দৃষ্টিকে অবিশ্বাস করবে?চারুলতার অনুভূতিকে অস্বীকার করবে?আসমান এবং চারুলতা….তারা ভাইবোন নয়?ভাইবোনের মাঝে এমন সম্পর্ক?নাকি সৎ ভাইবোন?তাও হতে পারে।কিন্তু তাই বলে….
– আহহহহ!!
দুই হাতে কান চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো রোযা। পেন্টহাউজের বেশিরভাগ রুম সাউন্ডপ্রুফ।সেক্ষেত্রে তার আর্তনাদ বাইরের কারো কর্ণগোচর হওয়ার কথা নয়।সমস্ত শরীর প্রগাঢ় অনুভূতিতে কাপতে থাকলো।কি ধরে নেবে সে এই সম্পর্ককে?নিষিদ্ধ আকর্ষণ?নাকি নিষিদ্ধ ভালোবাসা?তারচেয়েও বড় বিষয়…
আসমানও ভালোবাসতে জানে!
হুট করেই হাসি পেলো রোযার।নিজের অবস্থার প্রতি নিজেরই এক প্রকার কৌতুক প্রবণতা।কি দুর্বল সে!কিসের প্রতি দুর্বল হয়েছে?কেনো এতটা আহাম্মক মনে হচ্ছে নিজেকে?

– পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গাধী তুই রোযা!
নিজেকেই নিজে ধমকালো।পাতানো বউয়ের মতন পাতানো বোনের ব্যাপারটা তার মস্তিষ্কে এর আগে আসেনি কেন?কিসের প্রলেপ পড়েছিল তাতে?অন্ধবিশ্বাসের প্রলেপ?এক দানবকে বিশ্বাস করেছিল সে!হাস্যকর!
টিকতে পারলোনা রোযা।এই আবদ্ধ আভিজাত্যে মুহূর্তবাস সম্ভব নয়।মুক্ত বায়ু প্রয়োজন।এক টানে অরগাঞ্জা গায়ে তুলে চললো সে।শূন্য হলরুম থেকে দরজা খুলে বেরোলো বাইরে।লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোর, অতঃপর গন্তব্য হলো মারবেলের পিছনের ছোট্ট পার্ক।রাত্রি এখন পৌঁনে বারোটা।
আনমনে হাঁটতে থাকলো রোযা।কাটানো দিনগুলোতে পরিচিত হয়ে আসা অভিজাত তল্লাট তাকে মুগ্ধ করলোনা।যেমন করলোনা তারকারাজি খচিত বিস্তৃত আকাশ।আকাশ…. আসমান… উফ্! চিন্তায়ও প্রশান্তি হরণ হয়েছে তার!
ধপ!

মৃদু শব্দটিতে থমকে পড়লো রোযার পদচারণা।সামান্য উঁকি দিলো সে দেয়ালের পিছন থেকে।অতঃপর,
– কেনো দ্বিতীয়বার আমাকে ভালোবাসলিনা বল?
কণ্ঠটি স্পষ্ট। তীব্র গতিতে ছুটে এসে যেনো গেঁ*থে গে*লো রোযার হৃদয়ে,ধারা*লো তীরের ফলা হয়ে।দোদুল্যমান দৃষ্টি তার আবদ্ধ নাটকীয় মঞ্চে।যে মঞ্চের প্রধান চরিত্রদ্বয় একে অপরের মুখোমুখি।
বুকে দুহাত ঠেকিয়ে দেয়ালের সঙ্গে আসমানকে চেপে ধরেছে চারুলতা।টানা টানা নয়নজুড়ে তার সিক্ত আবেগ। উপচে পড়ছে অশ্রুদানা হয়ে।অপরদিকে নির্বিকার আসমান,তাকে এড়িয়ে চেয়ে আছে সুদূরপানে।মৃদু কন্ঠস্বর উত্তেজনার গাঢ়ত্বে যোগ করলো নতুন মাত্রা।
– ডোন্ট চারু! বাবা এসেছে।
– কেনো আসমান?কেনো?

আসমানের বুকে মাথা ঠেকালো চারুলতা।পিঠ ভাসানো চুলরাশি ছড়িয়ে পড়ল তার আশেপাশে।
আসমান!নীলাদ্রি নীল নয়?কি নিদারুণ রঙ্গমঞ্চ!
আলতো করে চারুলতার বাহু স্পর্শ করলো আসমান।
– আমাকে ভালোবাসা পাপ।
এক ঝটকায় চারুলতাকে দূরে সরিয়ে দিলো বলিষ্ঠ হাতযুগল।দেয়াল ছেড়ে সটান ঘুরল।এক পদক্ষেপ অগ্রসর হতেই ক্লাইম্যাক্স মোকাবেলায় থমকে পড়লো পদযুগল। অনুভূতিহীনতার অপর পাড়ে দন্ডায়মান বর্তমান।
বিন্দুমাত্র অশ্রুও জমলোনা রোযার নয়নে।স্থির তাকিয়ে সে। নিটল নির্ভার পর্বত হয়ে। পরনের ওড়না উড়ছে বায়ুতে।যেন শৃংখল মুক্ত করে ছুটে যেতে চাইছে অবাধে।

– আ… আরিয়া…
নিজের অশ্রু মুছতে মুছতে সপ্রতিভ দৃষ্টিতে তাকালো চারুলতা।নিজের জায়গায় স্থির সে,অমুল্য ভাস্কর্যের ন্যায়।
– তুমি ঠিকই বলেছিলে আসমান।অনুভূতি বড্ড বেহায়া।
রোযার দৃঢ় বক্তব্যে একটি নিঃশ্বাস ফেললো আসমান।কপালে ঠেকালো নিজের হাত।
– শুভরাত্রি।

ডার্কসাইড পর্ব ১৭

রঙ্গমঞ্চের সমাপ্তি।রোযার প্রস্থান।তাকে আটকালোনা আসমান।ওই একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নির্বিকার চেয়ে থাকলো বায়ুতে দুলতে থাকা ওড়নার দিকে।
– তুই একটা মেশিন আসমান…হৃদয় ভাঙার মেশিন!
চারুলতার কাঁধের জোর ধাক্কায়ও টললোনা অনুভূতিশূণ্য হিমালয়।

ডার্কসাইড পর্ব ১৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here