ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৮

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৮
অবন্তিকা তৃপ্তি

‘ভাইকুঞ্জ’ পরিবারে আজ রীতিমত ঝড়-তুফান চলছে। এ বাড়ির সবচেয়ে আদরে বাঁদর হয়ে যাওয়া; মেঝো চাচার একমাত্র মেয়ে কুহু ক্লাসে ২০০ জন স্টুডেন্টকে পেছনে ফেলে ২০-রোলে পাশ করেছে। আপাতত এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের চোখ রেজাল্ট শুনেই কপালে চড়ে গেছে। কুহুর এই অত্যন্ত চমৎকার রেজাল্ট করে ফেললো কি করে? জোর করে যে মেয়েকে পড়তে বসানো লাগে; পড়াশোনার জন্যে দিনে হাজারবার বোঝানো লাগে; এই মেয়ের এই চমৎকার রেজাল্ট সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে একদম।

তাই তো আড়ালে-আবডালে আজ সারাদিন এই বাড়ির প্রতিটা কোণায়-কোণায় এই নিয়েই আলোচনা চলছে। এই যে এইমুহূর্তে. . . কবিতার বাসায় কুহুর রেজাল্ট শুনে শামীমা নিজের ফ্ল্যাট থেকে দৌড়ে এসেছেন। রান্নাঘরে চা খেতে খেতে দুই জা এই নিয়ে গম্ভীর আলোচনায় বসেছেন। কবিতার মতে— কুহুর কিছু একটা হয়েছে; কুহু আজকাল ওবেক গোছানো হয়ে গেছে; নিজের কাজ আজকাল নিজে করার চেষ্টা করে. .সন্ধ‍্যা হতেই নিয়ম করে পড়তে বসছে. .রান্না শিখছে টুকটাক!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কবিতা জানালেন; তার কুহুর এসব ম্যাচোর আচরণ একটুও সুবিধার ঠেকছে না। কি হয়ে হেছে তার আদরের ছোট মেয়েটার? অজানা বিপদের আশঙ্কায় নীল হয়ে গেল কবিতার গোলগাল মা-সুলভ মুখটুকু!
কবিতার এসব চিন্তায় শামিমা আবার ভীষন আমলে না নিয়ে; স্বস্থির শ্বাস ফেলে জানালেন;
কুহু বড় হচ্ছে। এইবার হয়তো আল্লাহ ওকে বুদ্ধি-টুদ্ধি দিয়েছেন। কুহু বুঝদার হচ্ছে. . পড়াশোনার প্রতি এই বয়সে চিন্তা করছে. .এটা তো ভালো কথা!
বললেন; কবিতা এইবার শুধুশুধু চিন্তা করছেন। চিন্তার এত কারণ নেই।
দুই জা যখন কুহুকে নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত; তখন একটু পর ছোট জা প্রেমাও এসেও যোগ দিলেন। কবিতা তাকেও চা দিলেন। প্রেমা ওদের আলোচনা শুনে গম্বীর হয়ে গেলেন কেমন যেন! কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি হঠাৎ মতামত দিলেন; কুহুর সঙ্গে ওদের একবার বসা উচিত। সিনেমায় প্রেমে পড়লে মানুষ এতটা বদলে যায়। কুহু কি তবে প্রেম করছে?

কবিতা-শামিমা দুজনেই আতকে উঠে তাকালেন প্রেমার দিকে। কবিতা এই চিন্তা নাকচ করে দিয়ে বললেন:
— এমন কিছু হলে আমি টের পেতাম। ও তো কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলে না। আমি দেখিনি কখনো!
শামিমাও বাধ সাধলেন:
— এমন কক্ষনো হবে না। কুহু প্রেম করলে কাব্য-স্নিগ্ধ ওরা খবর পেতো না? দুই ভাই বোনদের খবর রাখে নিয়মিত!
প্রেমা চায়ে চুমুক দিতে দিতে গম্ভীর গলায় ভাবুক ভাবে বললেন;
— আমি শুধু আমার সন্দেহের কথা বললাম। বাকিটা কুহুর পেট থেকে বের করতে হবে।
তাদের এই গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যে হঠাৎ এলোমেলো চুলে; ঘুমে হেলতে-দুলতে কুহু রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। কবিতা মেয়েকে দেখে চায়ের কাপ রেখে দৌড়ে আসলেন;
— ঘুম থেকে উঠে গেছো, আম্মু?নাশতা দিয়ে দেই আম্মু?
কুহু মায়ের পেছনে দুই চাচিকে অবাক চোখ দেখলো! চোখ ঘষতে ঘষতে এলোমেলো ভঙ্গিতে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল;

— হাই বড় মা: ছোট মা।
দুই চাচী অপলক কুহুর দিকে চেয়ে আছেন। ওদের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না. . .কুহুর মতো ছোট মেয়ে কিনা প্রেম করছে! এটা তো চিন্তার বিষয় হয়ে গেল। কুহু যদি কারো ফাঁদে পা দিয়ে দেয়? বলা যায় না. . যা বুদ্ধি এই মেয়েটার. .যে কেউ বোকা বানাতে পারবে।
দুই চাচির এমন তাকিয়ে থাকা দেখে কুহু মায়ের দিকে চোখের ইশারা করে বলল;
—- তোমরা আমাকে এভাবে কেন দেখছে? হোয়াটস রং উইদ মি?
বলে কুহু নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো! প্রেমা কুহুকে অস্থির হতে দেখে হাসার চেষ্টা করলেন। শামিমা তো ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে বললেন;

— না রে। তোকে ঘুমে কাহিল লাগছে তাই দেখছি।তুই নাস্তা খেয়ে নে; আমরা আসি।
বলেই শামিমা আঁচলে মুখ লুকিয়ে আলগোছে বেরিয়ে গেলেন। প্রেমাও পেছন পেছন যেতে যেতে কি মনে করে আবার ফিরে আসলেন কুহুর কাছে। কুহু তাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে; প্রেমা কুহুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে গেলেন;
— ছোট মায়ের ফ্ল্যাটে একবার যেও তো। কথা আছে তোমার সঙ্গে।
কুহু মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বলল;
— যাব!
— লক্ষ্মী মেয়ে আমার!

প্রেমা কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে বেরিয়ে গেলেন।ওরা যেতেই কুহু মাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বায়না করা শুরু করেছে— আজ আলু পরোটা খাবে।
তখনও কুহুর ছোট মস্তিষ্কে আসেনি-ওরা আসলে কুহুর এই হঠাৎ বদলে যাওয়া নিয়ে কথা বলে যাচ্ছিল। ওরা যেতেই কবিতা আলু পরোটা বানাতে বসলেন। কুহু পাশে দাড়িয়ে উনার কাজ দেখছে। আজকাল এসবে কুহু হঠাৎ বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে. .যা আগে কখনো করেনি। কবিতা আবার চিন্তিত হয়ে গেলেন.. তার আদুরে মেয়েটার হয়ে গেলোটা কি?

কবিতা প্লেটে নাশতা নিয়ে কুহুকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। কুহু সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে টিভি দেখতে দেখে একহাতে পানির গ্লাস নিয়ে মায়ের হাতে খেতে ব্যস্ত। টিভিতে চলছে— গোয়েন্দা গিন্নি! সেটাই হা করে গিলতে গিলতে; খাবার খাচ্ছিল।
কুহুর খাবার খাওয়ার মধ্যে বেডরুম থেকে সাদাত এলেন। কুহু বাবাকে দেখেই হেসে বলল;
— আব্বু! আসো বসো পাশে!
সাদাত মৃদু হেসে মেয়ের পাশে বসলেন। কুহু এইবার গ্লাস টেবিলে রেখে বাবার কোলে মাথা রেখে সোফাতে শুয়ে টিভি দেখতে লাগল। কবিতা বললেন;

— কুহু উঠে বসে খাও। শুয়ে খাবে কিভাবে? উঠে বসো!
কুহু টিভির একেকটা সিন হা করে গিলতে গিলতে জবাব দিল—
— পেট ভরে গেছে! আর খাব না।
কবিতা কিছুক্ষণ জোরাজড়ি করে লাভ হলো না। তাই আর জোর করলেন না। মেয়ের মুখটা পানিতে মুছিয়ে দিয়ে সাদাতের দিকে চেয়ে বললেন;
— কুহুর রেজাল্ট শুনেছেন?
সাদাত মেয়ের এলোমেলো চুল আরাম করে টেনে দিতে দিতে বললেন;

— হ্যাঁ। সারপ্রাইজ আছে আমার মায়ের জন্যে আজ।
কুহু অবাক হয়ে গেল শুনে! টিভি থেকে চোখ সরিয়ে দ্রুত তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে উঠে বসল;
— কি সারপ্রাইজ আব্বু?
সাদাত একটা ম্যাগাজিন হাতে নিলেন। অবাক; চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকা কুহুর দিকে ওটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন;

— পড়ো তো দেখি এতে কি আছে।
কুহু পরে দেখলো! অথচ আগামাথা কিছু না বুঝে মাথা তুলে আবার সাদাতের দিকে তাকাল; স্বাভাবিক স্বরে বললো;
— সাজেকের ভ্যালির এডভারটাইজমেন্ট!
কবিতার ঠোঁট হেসে উঠল কি মনে করে! কুহু তখনো হা করে বাবার দিকে চেয়ে আছে! সাদাত অবাক কুহুর দিকে চেয়ে হালকা হেসে বললেন;
— আমরা তিন ভাই তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে সাজেক যাচ্ছি; একটা ফ্যামিলি ট্যুর দিতে।
—- কি?
কুহু চিৎকার করে উঠে; মুখে হাত চেপে বড়বড় চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। কবিতা হেসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সাদাতের দিকে চেয়ে বললেন;

— কবে যাচ্ছি আমরা?
সাদাত জবাবে বললেন;
— আগামীকাল। ভাইয়াদের বলা হয়ে গেছে। ভ্যালিও বুকড অলরেডি!
কুহু এইবার চুড়ান্ত চমকে উঠে! সাদাত হেসে তাকিয়ে রইলেন মেয়েটার দিকে। কুহু এইবার মুখ থেকে হাত সরিয়ে মুখ ভর্তি হাসি হেসে দুহাতে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো! সাদাতও আলগভে মেয়েকে বুকে চেপে ধরে থাকেন। কুহু প্রচণ্ড উচ্ছাস নিয়ে বলতে থাকে;
— থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ আব্বু! ইউ আর দ্য বেস্ট আব্বু ইন দ্য হোল ড্যাম ওয়ার্ল্ড!
সাদাত হাসতে থাকেন. . বলেন;

— অ্যাই নো! আমি একজন ভীষন ভালো আব্বু!
কবিতাও বাবা-মেয়ের খুশিতে সামিল হলেন। নিজে সাদাতকে জড়িয়ে ধরা কুহুর মাথায় হাত বুলালেন। কুহু মনেমনে বাবার বুকে মিশে যেতে যেতে ভাবতে থাকে,
~ তোমার কুহু এইবার সাজেক থেকে এক থেকে দুই হয়েই ফিরবে আব্বু। প্লিজ আব্বু, দোয়া করো আমার জন্য! অ্যাই এম গোনা প্রপোজ কাব্য ভাই ইন সাজেক! ~

আজ ’ভাইকুঞ্জ’- এর ভাইরা সকলে সাজেক যাচ্ছে!
সকাল থেকে এ বাড়ির মেঝো ভাইয়ের মেয়ে কুহু দরজা বন্ধ করে কি করছে রুমটায়। কবিতা এসে কয়েকবার ডেকে গেলেন কুহুর দরজায়; খুললো না মেয়েটা। কায়া দরজার বাইরে দাড়িয়ে কতবার ডাকলো; জবাব অব্দি দিলো না কুহু। বিরক্ত কায়া তাই অন্য রুমে গিয়ে বসেছে।
সকাল থেকে প্রায় দু ঘণ্টা পর দরজা খুললো কুহু! দেখা গেল. . একটা বড় লাগেজ রেডি করেছে এতক্ষণে কুহু; সেটাতে আবার বিশাল এক তালাও ঝুলিয়েছে। কায়া-মহুর সমস্ত আকর্ষণ তাই হুড়মুড় করে চলে গেল সেই তালা ঝুলানো লাগেজের দিকে।

তারাও আরেক জোচ্চর! কুহুর পেছনেই পরে গেলো একপ্রকার. .সেই তালা-চাবির জন্যে! কুহুর কাছে কতবার চাইল; কুহুও আরেক ফাজিল. . দিলোই না। মহু এইবার ভীষণ ব্যাথিত গলায় কুহুকে বলল;
— বলো না কুহুপু। কি আছে এই লাগেজে?
কুহু তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে মেকআপ করতে ব্যস্ত। ফোলা-ফোলা গাল দুটোতে ব্লাশন লাগাতে লাগাতে হেঁয়ালি করে জবাবটা দিল;

— বলবো না। বললে তুই পেকে যাবি। এমনিতেই অনেক পেকে গেছিস!
বলেই কুহু আয়নার মধ্যে কায়ার দিকে বাকা চোখে তাকাল! কুহুর ওই তাকানো ডেকজে কায়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অন্যদিকে মুখ সরিয়ে কেশে উঠলো! কুহু শয়তানি হাসি দিয়ে বলল;
— কি রে কাশিস কেন? আমি তো ওইটা মিন করিনি যেটা তুই ভাবছিস!
কায়া এইবার রক্তলাল চোখে তাকালো কুহুর দিকে: অতিষ্ট গলায় মহুকে দেখিয়ে বললো;
— বেশি কথা কেন বলছো? চুপচাপ মেকআপ করো। আমার তোমার লাগেজের ভেতরের গুপ্তধন দেখার কোনো ইচ্ছে নেই।

কুহু ঠোঁট টেনে হেসে বিজয়ীর ন্যায় আবার মেকআপ করতে বসে গেল। কিন্তু এইবার মহু মুখ কুচকাল। চোখের ভারি চশমা ঠিকঠাক করে বললো;
— কুহুপু; লাগেজে কি বো-ম নিয়ে যাচ্ছো তুমি? একটু দেখালে কি হয়?
কুহুও আরেক ফাজিল; জবাব দিল;
— একটু-অনেকটা কিছুই দেখানো যাবে না বাচ্চা। এত আগ্রহ দেখাবি না। আয় তোর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দে। ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে তোকে।

বলে কুহু লিপস্টিক নিয়ে এগুতেই; মহু দ্রুত দু কদম পিছিয়ে বলল;
— না না। এসব কেমিক্যাল আম্মু ইউজ করতে মানা করেছে।
কুহু বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকালো; পরপর টেনে এনে মহুকে জোর করে লিপস্টিক দিয়ে দিল। মহু এতক্ষণ মানা করলেও; এইবার আয়নায় নিজেকে সুন্দররূপে দেখে মুচকি হেসে ফেললো। কুহুর দিকে চেয়ে বলল;
— একটু আইলাইনারও দিয়ে দাও প্লিজ!
কুহু হেসে ফেললো!

কুহু রেডি হয়ে বেরিয়েছে। বাড়ির বাকিদের এখনো গোসল করাই হয়নি। কবিতা স্ন্যাকস প্যাক করছেন গাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে। চিপস; কুকিজ; চকলেট বক্স এসব হাবিজাবি ভরছেন প্যাকেটে। কুহু গিয়েই সোজা মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রাখলো। কবিতা মৃদু হেসে সেভাবেই কাজ করতে করত্র বললেন;
— যাও তো আম্মু। গিয়ে তোমার বড় আম্মুর বাসা থেকে আমার সোনার যে চিকন চেইনটা আছে; ওটা নিয়ে আসো। আম্মু পরে যাব ওটা।

কুহু হালকা হাসল; কাব্য ভাই আছেন যে ঘরে সেই ঘরে কুহু রোজ-রোজ যেতে চাইবে। কুহু মাথা নেড়ে মায়ের গালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেল নীচ তলার ফ্ল্যাটের দিলে। কলিং বেল বাজাতেই স্নিগ্ধ এসে দরজা খুলে দিল। স্নিগ্ধ শুধু টাওয়াল কোমরের দিকে জড়িয়ে একহাতে চুল ঝাড়ছে। কুহু এভাবে স্মিগ্ধকে দেখেই নাক-মুখ কুচকে বলে উঠল;
— ছি; স্নিগ্ধ ভাইয়া। তুমি এভাবে কেন ঘুরাঘুরি করে বেড়াচ্ছো?
স্নিগ্ধ ওসব পাত্তাও দিল না এক ফোঁটা। ওভাবেই বলল;
— ন্যাকামির গোষ্টি ছেড়ে দরজা আটকে ভেতরে ঢোক, আম্মু গোসল গেছে।
বলে ওভাবেই নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা আটকে দিল স্নিগ্ধ। কুহু চুপচাপ সদর দরজা আটকে দিল।শামিমার রুমে একবার গিয়ে দেখল; শামিমা গোসল দিচ্ছেন। কুহু দরজায় ধাক্কালো;

— বড় মা, ও বড় মা।
শামিমা কুহুর আওয়াজ শোনে পানির ট্যাপ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বললেন;
— কুহু; বড় মা আসছি। দশ মিনিট লাগবে আর। বস তুই।
কুহু কি করবে আর; চুপচাপ হেলে-দুলে গিয়ে ড্রইং রুমেই ঘুরাঘুরি করতে লাগলো। হঠাৎ দেখে; কাব্যের রুমের দরজা হা করে খোলা। কুহুর মাথায় হুট করে ইনার শয়তানি বুদ্ধি চলে আসলো। ও চুপচাপ আশপাশ ভালো করে দেখে নিয়ে হঠাৎ কাব্যের ঘরে ঢুকে গেল। কাব্য বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। কোলবালিশ একটা পাশে; একটা হাত মাথার উপরে রাখা; আরেক হাত কোলবালিশের উপরে। এসি অন, অথচ দরজা ওভাবে খোলা ছিলো।
কুহু ঘুমন্ত কাব্যকে ওভাবে দেখে কেমন যেন খেই হারিয়ে বসল। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় এগিয়ে গেল কাব্যের বিছানার দিকে। কাব্যের পাশে মেঝেতে হাঁটুগেড়ে বসলো আস্তে করে। তারপর অপলক ওভাবেই চেয়ে রইল কাব্যের ঘুমন্ত মুখটার দিকে। কাব্য ধীরেধীরে শ্বাস ফেলছে; কুহু ওভাবেই ফিদা হয়ে বলল;

— হাও ম্যানলি! কাব্য ভাই..এই কুহু কতটা বাজেভাবে; নিষ্ঠুর উপায়ে; বিশ্রী রকমের অবসেসড আপনার প্রতি; আফসোস আপনি যদি সেটা জানতেন।
কাব্য শোনে না ওসব আবেগের কথা; ও তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। কুহু ধীরে ধীরে কাব্যের গালটায় হাত রাখল। কাব্যর রক্তিম-ব্রাউন রঙা ঠোঁটের দিকে অপলক চেয়ে রইল; নিজেকে মনে হলো বড্ড তৃষ্ণার্থ এক পাখি! কুহু অন্যপাশে চেয়ে একটা বড় ঢোক গিলে আবার কাব্যের দিকে চোখ রাখল। গালে ওভাবেই হাত ছুইয়ে রেখে ফিসফিস করে বললো কুহু;

— এখন যদি আমি আপনাকে গাড়; শক্ত করে চেপে ধরা টাইপস চুমু খাই; আপনি কি সেটা অনুভব করতে পারবেন কাব্য ভাই?
কাব্য জবাব দিল না। কুহু হাসলো খানিক! তারপর কি মনে হলো কে জানে! কুহু আলগোছে মুখটা বাড়িয়ে কাব্যের প্রশস্ত কপালটায় ঠোঁট দিল! কাব্যর চোখ একটু নড়ল বুঝি তখন?
চুমুটা খেয়েও কুহুর তৃষ্ণা নিবারণ হলো না। কুহু ঘুমন্ত কাব্যের কানের লতিতে আলতো এক চুমু খেল, চোখ বুজে— ভীষন আশ্লেষে! কিন্তু এইবার কাব্যের চোখ-দুটো খানিক নড়ে উঠতেই; কুহুর হুশ ফেরে। পরপর আতঙ্ক নিয়ে সরে ঠোঁটে আঙুল চেপে ভয়ার্ত গলায় বিড়বিড় করে বসে——

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৭

— ‘আ…আমি চুমু খেলাম; আমি কুহু মাত্রই লাইফের প্রথম চুমুটা কাব্য ভাইকে দিলাম! ও গড!’
কুহু সরে গেল চট করে! কাব্য নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে গেছে সেভাবেই! কাব্য ভাই সত্যিই কুহুর চুমু অনুভব করেননি? নাকি ঘুমানোর ভান করে আছেন? কুহু চুপচাপ উঠে গেল বসা থেকে। দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমন্ত কাব্যের দিকে কিছুক্ষণ ওভাবেই চেয়ে রইল; তারপর আস্তে করে বেরিয়ে গেল তার বুক-মন কাপানো মালিকের ঘরটা থেকে।
কুহু হয়তবা খেয়াল করেনি— কাব্যের কপালে; কানের লতিতে কুহুর ঠোঁটের লিপস্টিক স্টেইন লেগে গেছিল ততক্ষণে! আর কাব্য কি সত্যই ঘুমেই ছিলো এতক্ষণ? কে জানে. .হয়তোবা——

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৯