তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ২২
ফারহানা নিঝুম
নিস্তব্ধ রাত, যখন চাঁদের আলোও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, তখন আশেপাশে শুধু গভীর অন্ধকার। সারা পৃথিবী যেন নিস্তব্ধ, এক মুহূর্তের জন্যও কোনো শব্দ নেই।বাতাসও একপাশে থেমে গেছে, যেন কোনো শব্দ নেই। রাতের শীতলতা সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে এক অদ্ভুত শান্তি, যেন কিছুই ঘটছে না, অথচ কিছু একটা চলছে একটা অবর্ণনীয় গতি, একান্ত নিরবতা। গাছগুলোর ডালপালা একে অপরের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যেন বাতাসের অপেক্ষায়। কোনো পাখির ডাকও শোনা যাচ্ছে না, একমাত্র দূরের নদীর কলকল শব্দটিই যেন জীবন টানে এই নীরবতার মধ্যে।
বাতাসে এক ধরনের নিরবতা মিশে গেছে, যেন প্রকৃতি নিজেও কোনো কিছু বলার অপেক্ষায় আছে। অন্ধকার কক্ষে, এক কোণায় বসে আছে এক মেয়ে ফারাহ। তার চোখে বিষা’দের ছাপ, মনে যেন কোনো গভীর দুঃখ। একা, নিঃসঙ্গ, অনুভব করছে সেই মুহূর্তের তীব্র শূন্যতা। কক্ষের দেয়ালগুলোও যেন তার একাকীত্বের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনো শব্দ নেই, কেবল তার হৃদয়ের আওয়াজ, যার প্রতিটি ধ্বনি যেন আরও এক পলক বিষা’দ যোগ করছে।
চুপচাপ জানালার কাছে বসে আছে ফারাহ। এটা অন্যায়, অবিচার হচ্ছে তার সহিত। এভাবে একা ফেলে চলে গেল? বিকেলের দিকে আরিফা আহমেদ কল করেছিল তাকে। মেয়েটা নিজেকে সংযত করে বছর ভদ্র ভাবেই কথা বলেছে।তাশফিনের কথা জানতে চাইলে খুব সূক্ষ্মভাবে প্রসঙ্গ পাল্টাতে।কেউ জানতেই পারলো না ফারাহর মনের খবর টুকু।কেউ বুঝতে চাইলো না তাকে,চাপা অভিমান তৈরি হয় তাশফিনের প্রতি।
দরজায় টোকা পড়তেই সেদিক পানে দৃষ্টি ফেলল ফারাহ। আলগোছে জানালার কাছ থেকে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। হলুদ রঙা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে নূপুর। ঠোঁট জুড়ে বিচরণ করছে চমৎকার হাসিটা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপু তুমি!”
এখানে আসার পর নূপুর কে আপনি আগ্গে করে চলছিল ফারাহ। অথচ নূপুর কি সুন্দর তাকে ছোট বোনের মতো আগলে নিয়েছে।
“চলো নিচে,একা একা রুমে কি করছো?চলো আমার সাথে।”
ফারাহ ফের রুমে এসে সফেদ রঙা ওড়না টা নিয়ে নিল।ভালো করে জড়িয়ে নিচে গেল। সিঁড়ির কাছে আসতেই নজরে এলো ঝুমুর কে। হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহ কে দেখা মাত্র হাত বাড়িয়ে দিল।
“এসো ছোট ভাবি।”
ছোট ভাবি ডাকটা শুনতে ভীষণ মিষ্টি লাগে ফারাহর নিকটে । ঝুমুর বড় হওয়ার দরুন ভীষণ আদুরে ভাবে কথা বলে তার সহিতে।
“চলে এসো একটা জিনিস দেখাই।”
রুবেনা শেখ এবং রিজুয়ান শেখ ঘুমে বিভোর রয়েছে। ফারাহ বুঝতে পারছে না তাহলে ওরা এখন তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
“আচ্ছা আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি।”
হেসে ফেলল নূপুর।
“চলো আগে তারপর দেখতে পাবে।”
ফারাহ কে নিয়ে করিডোরের পাশ দিয়ে বন্ধ ঘরে গেল নূপুর এবং ঝুমুর দু’জনে। বন্ধ দরজা, এটা মূলত তাশফিন, নূপুর,ঝুমুরের একান্তই ব্যক্তিগত ঘরটা। তালাবদ্ধ ঘরটা খুলে দিল নূপুর। ভেতরে প্রবেশ করলো তিনজন। অন্ধকারে নিমজ্জিত কক্ষটি। ঝুমুর এগিয়ে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে দিল।চোখ ধাঁধা’নো সুন্দর ঘরটা।অবাক নেত্রে চেয়ে রইল ফারাহ।কক্ষ জুড়ে বিচরণ করছে শৈশবের স্মৃতি গুলো।একপাশে কাঠের তৈরি ছোট্ট কাঁচের তৈরি আলমারিতে একের পর মেডেল রাখা, ক্রেস্ট সব কিছু তাশফিনের নামে। শৈশবের দারুণ দারুণ ছবি। অপর পাশেই নূপুর এবং ঝুমুরের প্রাপ্তি গুলো। ফারাহ এগিয়ে গিয়ে ছুঁয়ে দিল সব কিছু।
“এগুলো সব আমাদের ছোট বেলার স্মৃতি। ভাবলাম তুমি যখন এসেছ তোমাকে দেখাই।”
ফারাহ চরম আশ্চর্যান্বিত হয়ে সবটা দেখলো। অবাক নেত্রে বিস্ময় নিয়ে শুধোয়।
“তোমাদের ভাইয়া তো দারুন ব্রিলিয়ান্ট ছিলো আপু।”
ঝুমুর হেসে ফেলল, সম্মতি প্রকাশ করে বলল।
“হ্যা ভাইয়া খুব ব্রিলিয়ান্ট বা ব্রাইট স্টুডেন্ট বলতে পারো।”
মুখখানি চুপসে আমসী হয়ে গেল ফারাহর।এত ব্রিলিয়ান্ট মানুষের বউ নাকি ফেল্টুস কুমারী ফারাহ?ছে এটা মানা যায় না? আচ্ছা বাই এনি চান্স কখনো যদি কোথাও কেউ জিজ্ঞেস করে আপনার স্ত্রী স্টুডেন্ট লাইফে কেমন রেজাল্ট করতো তখন তাশফিন কি বলবে? ধ্যাত এরকম হয় নাকি? মানুষের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই এসে জিজ্ঞেস করবে এরকম আজাইরা কথা!নিজ ভাবনায় মগ্ন ফারাহ!কী আজাইরা ভাবনা তার। এখন তো উচিত মুখ ঝামটা দিয়ে চুপচুপ ঘুমিয়ে পড়া।তাশফিন আসুক একবার,ফেলে যাওয়ার বদলা শোধে আসলে তুলে নিবে সে।
রাগে দুঃখে গজগজ করতে করতে রুমে গেল ফারাহ। টেবিলের উপর সাদা কাগজের টুকরো দেখে অবাক হলো।কাগজ খুলতেই দেখতে পেলো স্পষ্ট ভাবে লিখা।
“ফিরে এসে সব অভিমান ভাঙিয়ে দেব। আপনার তোলার মতো শরীরের ইঞ্চি ইঞ্চিতে চুমু খাবো।”
লজ্জায় হা হয়ে গেল ফারাহ।এই লোকটা এত ঠোঁটকা’টা?কি ভাবে বলছে রে? চিন্তিত হলো ফারাহ,বার বার শুকনো ঢোক গিলছে সে!আগে তো এমন করেনি!এই লেফটেন্যান্ট সাহেবের কি একটুও লজ্জা নেই!
একটা মিষ্টি সকাল মানেই যেন স্নিগ্ধতা আর প্রশান্তির ছোঁয়া। ভোরের নরম আলো ধীরে ধীরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, গাছের পাতাগুলোয় শিশিরবিন্দু চিকচিক করে ওঠে। হালকা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যায়, সঙ্গে নিয়ে আসে ফুলের মৃদু গন্ধ। পাখিরা মিষ্টি সুরে ডাকতে থাকে, যেন এক অদৃশ্য সঙ্গীত বয়ে নিয়ে আসে।সকালের রোদের কোমল পরশ গায়ে লাগলে মনের তীব্র অনূভুতি গুলো মস্তিষ্কে ভ’য়াবহ ভাবে জেগে উঠে।এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় বসে থাকার মজাই আলাদা। চারপাশের প্রকৃতি তখন একদম শান্ত, মনে হয় যেন পৃথিবী একটু ধীর হয়ে গেছে, শুধু অনুভব করার জন্য। কোথাও দূরে মসজিদের আজানের ধ্বনি শোনা যায়, যা সকালকে আরও পবিত্র করে তোলে।
বারান্দায় বসে বসে গল্প করে ফারাহ এবং রুবেনা শেখ।রুবেনা শেখ আচার গুলো আগেভাগেই বয়ামে ভরে রাখছেন। ফারাহ চুপচাপ কফি কাপ হাতে বসে আছে। এখানে আসার পর কেউই তাকে কাজ করতে দিচ্ছে না। বিশেষ করে রুবেনা শেখ তো একদমই না। নিজের মেয়ের মতো রাজরানী করে রেখেছেন রীতিমতো।
“ও আম্মু।”
“বল।”
“বলছিলাম যে দুপুরের রান্না কী করবেন? আমি রান্না করি?”
ডান ভ্রূ কুঁচকে নিলেন রুবেনা শেখ,মুখ ফিরিয়ে চাইলেন ফারাহর পানে।
“রান্না করবি তুই? আমি কী তোকে রান্না করাতে নিয়ে এসেছি?”
মুখ ঝামটা দিয়ে বলল রুবেনা শেখ,হতাশ হলো ফারাহ। বারান্দায় এলেন রাইমা শেখ।
“এত ভাবতে হবে না তোমাকে ফারাহ। রান্না করে দিয়েছি আমি।আর বুয়া তো চলেই এসেছে ও সবটা গুছিয়ে নিয়েছে।”
কথা গুলো বলতে বলতে পাশের চেয়ার টেনে বসলেন তিনি।ফের হতাশ হলো ফারাহ। কাঁদো কাঁদো ভাবটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।বাইরে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে আসলেন রিজুয়ান শেখ।নজরে এলো ফারাহর ফ্যাকাশে মুখ খানি।
“কী ব্যাপার ফারাহ মা এভাবে মুখ ভার করে বসে আছো কেন?”
ফারাহর ইচ্ছে করলো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে।
“আম্মু আমাকে বসিয়ে রেখেছেন! আমি কি করব? আমাকে কিছু করতেই দিচ্ছেন না।”
ফ্যাকাশে মুখ টা দেখে হেসে ফেলল রিজুয়ান শেখ।
“তাই বলে এরকম মুখ করবে?”
নাক ফুলে উঠে ফারাহর। রিজুয়ান শেখ কিয়ৎ সময় ভেবে বললেন।
“তুমি বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করো।”
চকচক করছে আঁখিদ্বয়।
“কী আব্বু?”
“লম্বা একটা ঘুম দাও।”
হো হো করে হেসে উঠলো রাইমা শেখ।
“ঠিক বলছেন ভাইজান। ফারাহ যাও গিয়ে ঘুমাও।”
আশাহত হলো ফারাহ। এভাবে বসে থাকতে বুঝি ভালো লাগে?যদি এটা কৃষ্ণপুর হতো তাহলে এতক্ষণে স্নেহা কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তো সে, অথচ এখানে কিছুই চিনে না সে। চিনবেই বা কি করে?ঢাকা তো আসাই হয়নি তার!
রাতের শেষ প্রহর।আকাশে এখনো অন্ধকারের চাদর মোড়া, তবে পূর্ব দিগন্তের এক কোণে হালকা নীলচে আভা জানান দিচ্ছে ভোর আসন্ন। সমুদ্রের বাতাস নৌঘাঁটির ধাতব কাঠামোর মধ্যে দিয়ে শোঁ শোঁ করে বইছে, যেন নিঃশব্দে রাতের ক্লান্তি মুছে দিচ্ছে।
“নৌঘাঁটির ভেতর”
নৌঘাঁটির প্রশস্ত ডকইয়ার্ড এখন প্রায় নীরব। রাতের পালার গার্ডরা টহল দিচ্ছে নিয়ম মেনে, তাদের বুটের চাপা শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কংক্রিটের মেঝেতে। দূরে অ্যাঙ্কর করা যুদ্ধজাহাজের উপর লালচে নেভিগেশন লাইটগুলো টিমটিম করে জ্বলছে, যেন অন্ধকারের বুক চিরে দিক নির্দেশ করছে। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে কোনো ইঞ্জিনের ক্ষীণ গুঞ্জন সমুদ্রের ওপারে কোনো জাহাজ হয়তো তার গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তাশফিন শেখ অবশেষে ফিরে এসেছে। তার ইউনিফর্ম এখনো লবণের গন্ধ মাখা, ক্লান্ত দেহ কিন্তু চোখজোড়া সতর্ক। নৌঘাঁটির গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় তার চোখ আটকে যায় কন্ট্রোল টাওয়ারের ঝাপসা আলোয়। এত রাতেও কিছু অফিসার ডিউটিতে রয়েছে, কেউ কেউ রিপোর্ট তৈরি করছে, কেউ মেশিন চেক করছে।
সে ধীর পায়ে নিজের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়, পাশ কা’টিয়ে যায় কয়েকজন জুনিয়র অফিসারকে, যারা কেবলই নাইট শিফট শেষ করে বিশ্রামে যাচ্ছে। নৌঘাঁটির ঘড়িতে সময় দেখায় ০৪:১০। এখনো কিছুক্ষণ বাকি ভোর হতে, কিন্তু তাশফিন জানে এই স্বল্প সময়ের নীরবতাই তাকে আবার নতুন দিনের জন্য প্রস্তুত করবে।
ইউনিফর্ম খুলে গোসলের উদ্দেশ্যে ভেতরে যায় তাশফিন। আপাতত তাকে গোসল নিতেই হবে। শরীর প্রচন্ড রকম ঘেমে গেছে, রীতিমতো ঘামের গন্ধ বের হচ্ছে।
গোসল শেষে বেরিয়ে এলো,বেডে এসে টান টান হয়ে শোয়। অনেক গুলো রহস্যের জ’ট খুলতে হবে তাকে।লোক গুলো কি ভাবে জানলো সেদিন ওদিকে কোনো টহলদারি জাহাজ থাকবে না?এতটাই সহজ কি সবটা জানা?তবে কি সরষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে?
না না খুব শীঘ্রই এসব কিছুর সমাধান খুঁজতে হবে । অবৈ’ধ অ’স্ত্র গুলো সঠিক স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।তাশফিন কে সেদিন রাতে কৃষ্ণপুর কে গুলি করেছিল তার হদিস পাওয়া গিয়েছে! বর্তমানে চট্টগ্রামে লুকিয়ে বসে আছে সে।রাফজাল নামক এক অপরাধী!তাশফিন ইতিমধ্যেই তার কিছু লোকজন পাঠিয়েছে যাতে তাকে ধরা হয়?কত দিন লুকিয়ে থাকবে সে?কখনো না কখনো তো ধরা দিতেই হবে তাকে,তাশফিনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না কখনোই।
টিকটিক শব্দ করে ঘড়ির কাঁ’টা ঘুরছে। ফোনটা হাতে তুলে নিল তাশফিন।সময় সাড়ে চার টা ছুঁই ছুঁই।এই মূহুর্তে প্রিয় বউ টাকে কি ফোন করা উচিত হবে? পুরুষ মন মানতে নারাজ, একটুখানি কথা বলা প্রয়োজন আছে।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে আছে কক্ষটি। বিছানায় গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে ফারাহ, গায়ে পাতলা কাঁথা মুড়ি দেওয়া। ফোনের ব্রিফ ব্রিফ শব্দটি তীব্র ভাবে কর্ণ কুহু হওয়া মাত্র নড়েচড়ে বসল ফারাহ।চোখ ভর্তি ঘুম,এই অসময়ে কে তার শান্তির ঘুম টুকু নষ্ট করতে উদ্যত হয়েছে?ফোন হাতে নেওয়া মাত্র বুকের বাঁদিকে ধুকপুক ধুকপুক শব্দটি প্রগাঢ় হচ্ছে। স্ক্রিনের উপর স্পষ্টভাবে লিখা আছে “Tashfin Sheikh”
ফোনটা কি রিসিভ করা উচিত হবে? উঁহু করা উচিত নয়,লোকটা মোটেও সুবিধার নয়।তার কথা কি ভাবে?এই মাঝরাতে ফোন কেন করেছে?
“হ্যালো!”
“বেদ্দপ মাইয়া সালাম কই?”
থতমত খেয়ে গেল ফারাহ। ছোট্ট করে বলল।
“আসসালামুয়ালাইকুম।”
“ওয়া আলাইকুমস সালাম।”
“আপনার লজ্জা করে না আমাকে ফোন করছেন।”
“হুস চিৎকার কম। না হলে ফিরে এসে গলা টিপে দেব।”
শিথিল হুম’কিতে দমে গেল ফারাহ।অপর প্রান্তের লোকটা নিঃশব্দে হাসছে।
“মিসেস শেখ হাত চেক করুন।”
মিসেস শেখ খুব আদুরে একটা ডাক।তাহার নিকটে এসে এমন আদুরে ডাক শুনলে গলে যায় ফারাহ। নিজের হাত দুটো চেক করতে লাগলো ফারাহ, আবিষ্কার করলো দুটো সুন্দর বালা। চমকে উঠে ফারাহ,সেদিন সকালে উঠে হাতে এগুলো দেখেছিল।সে ভেবেছিল হয়তো রুবেনা শেখ দিয়েছে।
“পছন্দ হয়েছে মিসেস শেখ?”
“আপনি নিতান্তই অস’ভ্য লেফটেন্যান্ট সাহেব। অনুমতি ব্যতীত আমার হাত ধরেছিলেন!”
বিরক্ত হলো তাশফিন, ক্ষি’প্ত মেজাজে বলে।
“আহ্ চিৎকার পছন্দ নয় মোটেও। আস্তে কথা বলো।”
মুখখানি চুপসে গেল ফারাহর।ফের গম্ভীর স্বরে বলল তাশফিন।
❝”আমার উপর রাগ করা তোমার জন্য বারণ আছে সুখ।রাগ করতে পারবে না তুমি।সে যতই অন্যায় করি। কারণ স্রষ্টা আমার সব সুখ তোমার মাঝে দিয়ে দিয়েছে।”❞
ফারাহ চুপ করে বসে আছে। অকস্মাৎ তাকে অবাক করে দিয়ে তাশফিন হিসহিসিয়ে বলল।
“মিসেস শেখ চিৎকার করে কথা বললে কন্ঠনালিতে কা’মড় দেব।”
চমকে উঠে ফারাহ। আচ্ছা এখন তো সে দূরে আছে তাহলে একটু বকলে কি কিছু করতে পারবে?যেই ভাবনা সেই কাজ। রাগিনী হয়ে চট করে বলল।
তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ২১
“আপনি না ভীষণ খারাপ কমান্ডার। সামনে থাকলে আপনাকে এক ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিতাম।”
ফিচলে হাসে তাশফিন।কি বলবে মেয়ে কে! উফ্ এতটা বাচ্চামো কি তার করা উচিত?তাশফিন যে অন্য রকম কিছু অনুভব করছে!
“হাত আস্ত থাকবে তো ম্যাডাম?দেখা গেল আপনার হাত থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে এলাম!”
দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম ফারাহর।কাকে দেখছে সে? ইস্ কি লুচু তার স্বামী! বেমালুম ভুলে গেছে লোকটাকে টাইট দিতে গিয়ে নিজেই বেফাঁ’সে পড়ে যায়।