তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৩৩
ফারহানা নিঝুম
রান্না ঘরে ঠুসঠাস শব্দে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন রুবেনা শেখ।
“কে ওখানে?”
মুখ টিপে ফারাহ কে নিয়ে ফ্রিজের দিকে চেপে দাঁড়ালো তাশফিন। চোখাচোখি হচ্ছে দু’জনের। ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসছে তাশফিন। রাগে ফুঁসছে ফারাহ।টুপটুপ করে তার গালে চুমু খেয়ে ফেলল তাশফিন। ফারাহ কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। এই বুঝি রুবেনা শেখ শুনে ফেলল।
“মিসেস শেখ উম্মাহ্।”
চোখ পাকিয়ে তাকালো ফারাহ। নৈঃশব্দ্যে দুষ্টু হাসে তাশফিন।
নিস্তব্ধ এক রজনী। চারিদিকে নিঃশব্দতার ভার, যেন শব্দেরাও ঘুমিয়ে পড়েছে। সেই রাতের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে এক নিঃসঙ্গ পুরুষ ভালোবাসা হারা এক আ’ত্মা। চোখে তার গভীর বিষাদ, হৃদয়ে অতীতের এক অমোচনীয় ব্যথা।নিহাল একা, একেবারে একা। কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তবুও এক অদৃশ্য প্রত্যাশায় চোখ রাখে আকাশের তারাদের দিকে। মাঝে মাঝে তার চোখের কোণে জমে ওঠে জল, হঠাৎই যেন কান্না ফেটে পড়ে নিস্তব্ধতাকে চিরে। তার কান্না কোনো আওয়াজ করে না, তবু রাতের বাতাসে এক ধরনের বিষণ্ণ সুর বাজে যেন তার একাকীত্বও প্রাকৃতিক নিস্তব্ধতায় মিশে গেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নদীর পাড়ে বসে আছে সে, নদীর ঢেউয়ের ম্লান শব্দ যেনো তার ব্যথা গুলো আঁচ করতে পারছে।খুব করে সিগা’রেট টেনে চলেছে সে।সে মোটেও এসব খায় না,অথচ আজ বাধ্য হয়েই খাচ্ছে।শেষ বার মুখে নিয়েছিল নূপুরের মনের কথা জানতে পেরে।আর আজকে নিয়েছে নূপুর কে আবারো কিছুটা সময় নিজের সাথে পেয়ে।
“নিহাল কি করছিস এগুলো? একের পর এক সি’গারেট খাচ্ছিস!”
আরিয়ান জানতো নিহাল এখানেই থাকবে। কিন্তু এখানে এসে এরকম একটা দৃশ্য দেখবে আশা করেনি।
“প্লিজ ভাই বাঁধা দিস না।”
পুরো একটি প্যাকেট শেষ করেছে নিহাল।অবাক হয় আরিয়ান। শেষমেষ উপায় না পেয়ে মুখে গুঁজে রাখা সি’গারেট টা ফেলে দিল অদূরে।
“পাগল হয়ে গেছিস তুই?কি রে নিহাল তুই তো এমন নয়। তাহলে কি করে এসব করছিস?”
সহসা কেঁদে উঠলো নিহাল।
“আমার কষ্ট হচ্ছে রে ভাই। আমার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার ছিলো না?এতটা কষ্ট কেন পেলাম আমি? আমি তো খুব ভালোবেসেছি নূপুর কে!”
আরিয়ান বুঝে উঠতে পারে না কি করে নিহাল কে শান্তনা দেবে?
“তুই চল। এখুনি বাড়ি যাবি।”
নিহাল কে জোরপূর্বক দাঁড় করালো।নিহালের এক একটি দীর্ঘ শ্বাস বার বার বলছে।
❝পৃথিবী, তুমি তাকে নিঃশব্দে জানিয়ে দিও
আজও কোনো এক কোণে, এক প্রহরী হৃদয় তাকে আগলে রাখে।একটুকরো ভালোবাসা, যা উচ্চারিত না হয়েও জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিভে যাবে না।❞
তার ব্যাকুল হৃদয় আর্তনাদ করে জানান দেয়।
❝পৃথিবী যদি পারো, কানে কানে বলে দিও তাকে
কেউ আছে, আজও তার নামে হৃদয়ের মন্দিরে দীপ জ্বালে।যে অনুভব প্রকাশে আসে না,
তবু সারা জীবন কেবল তাকেই ঘিরে বাঁচে।❞
নিস্তব্ধ কালো মেঘে ঢাকা রাত।আকাশজুড়ে ভারী মেঘের চাদর, চাঁদ-তারার আলো ঢেকে গেছে গভীর অন্ধকারে। বাতাসে এক ধরনের চাপা নিস্তব্ধতা, যেন প্রকৃতিও নিঃশব্দে শ্বাস নিচ্ছে। দূর কোথাও বাজ পড়ার আবছা আলো অন্ধকার আকাশকে মুহূর্তের জন্য ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে।তারপর আবার সব কিছু গাঢ় কালোতে মিশে যায়।
কেবল মাঝেমধ্যে কোনো কুকুরের ডেকে ওঠা এবং হালকা বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ কানে আসছে।
পাতলা জামাটা খানিকটা সরে গেছে ফারাহর।তাশফিন এক পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফারাহ বরাবরই এলোমেলো ভাবে ঘুমায়, আজকেও তাই। বিছানার এক কোণে শুয়ে আছে সে। জানালা দিয়ে হিমশীতল বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে তাকে। কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো ফারাহ। ফারাহ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসতেই চারদিকের অন্ধকার যেন আরও গাঢ় হয়ে আসে। বুকের ভেতর ছন্দপতন, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। জানালার পর্দা হালকা নড়ছে, যেন অদৃশ্য কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে তার দিকে তী’ক্ষ্ণ, গভীর, অথচ নিরব দৃষ্টিতে।মনে হচ্ছে, এই নিস্তব্ধতা কেবল রাতের নয় এই অন্ধকারে কেউ আছে,যে নিঃশ্বাস ফেলছে তার খুব কাছাকাছি,যার দৃষ্টির ভার সে স্পষ্ট টের পাচ্ছে নিজের ত্বকে।অস্থির হাতে পাশের চাদর টেনে নেয় সে,পাতলা জামাটা বুক বরাবর ঠিক করে টেনে তোলে।নিজেকে জড়িয়ে ফেলে দ্বিগুণ করে যেন স্পর্শ নয়, দৃষ্টিও যেন ভেদ না করতে পারে তার শরীর।চোখদুটো ছায়ার দিকে ছুটে বেড়ায়,কিন্তু অন্ধকার কেবল রহস্য ছড়ায়, ব্যাখ্যা দেয় না কিছুই।তার ভেতরটা কেঁপে ওঠে এ কি নিছক কল্পনা,নাকি কোনো গভীর চোখ সত্যিই তাঁকে গিলে নিচ্ছে অন্ধকারের আড়ালে?
এক মুহূর্তে ফারাহ যেন নিজের শরীর থেকে পালাতে চায়
নিজেকে আড়াল করতে চায় নিজের মধ্যেই।
যেন সমস্ত আলো নিভে গেলে,একটি চোখও তাকে আর চিনতে না পারে। ফারাহর শীতল কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো ধীরে তাশফিনের বাহুতে গিয়ে থামে। কণ্ঠটা প্রায় নিঃশব্দ, কিন্তু আবেগে ভেজা
“লেফটেন্যান্ট সাহেব আমি কেমন অস্থির লাগছে একটু জড়িয়ে ধরবে?”
ঘুমভাঙা চোখে তাশফিন তাকায়, কিছুটা অবাক। ফারাহর কণ্ঠে এমন কম্পন সে খুব কমই শুনেছে যেনো নিঃশব্দ কোনো কান্না লুকিয়ে আছে ওই ক’টি শব্দের মধ্যে।
তাশফিন উঠে বসে। তার চোখে ঘুম নেই, এখন সেখানে সূক্ষ্ম দৃষ্টি। ফারাহ ভয়ে ভয়ে হাত উঁচিয়ে দেখালো।
জানালার বাইরে একবার তাকায় মেঘের ঘন চাদর আরও কালো হয়েছে। বাতাসে আজকের রাতটা যেনো সত্যিই অস্বাভাবিক ভারী।পা টিপে টিপে সে বিছানা ছেড়ে জানালার কাছে যায়। পর্দা সরিয়ে বাইরের অন্ধকারে একবার চোখ বুলায়। আবার ঘরের কোণাগুলোও দেখে ফেলে একবার। চারিদিকে যেন সব ঠিকই আছে, তবু কিছু একটা অদৃশ্য ভাব তার মনে খানিক চেপে বসে।
ফিরে এসে ফারাহর মুখের দিকে চেয়ে, গলাটা কোমল করে বলে।
“কিছু নেই, আমি দেখলাম সব ঠিক আছে।তবে এই রাত হ্যাঁ, আজকের রাতটা একটু বেশিই নিঃশব্দ। চলো, তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে থেকো।আমি আছি তোমার পাশে।”
তাশফিন ধীরে ফারাহকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়।
ফারাহর মাথাটা গিয়ে ঠেকে তার বুকে সেই বুক,
যার শব্দে সে শান্তি খোঁজে, ঠিক যেনো কোনো পুরনো লুকিয়ে রাখা অনুভূতি।তাশফিনের বাহুর জড়িয়ে ধরা উষ্ণতায় ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসে ফারাহ। তার বুকের ধুকপুক শব্দে ফারাহর বুকের কাঁপুনি মিলিয়ে যায় যেন এই হৃদস্পন্দন দুটো বহুদিন ধরেই একে অপরকে খুঁজছিল, নিঃশব্দে, নিঃস্বরে।ফারাহ চোখ বন্ধ করে থাকে, তবু বুঝতে পারে তাশফিন জেগে আছে।
তার নিঃশ্বাসের ভার, বুকের উষ্ণতা, হাতের আলতো চাপ সব যেন ফারাহকে আশ্বস্ত করতে চায় নিঃশব্দ ভাষায়।
রাতটা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়,বাইরে দূরে কোথাও শেয়াল ডাকছে, হাওয়ায় পাতার কাঁপন।
সকালটা ধীরে ধীরে নামে। জানালার ফাঁক গলে ম্লান আলো ঘরে ঢোকে, যেন নিঃশব্দে রাতের সমস্ত গোপনতা উন্মোচন করতে এসেছে।ফারাহ প্রথমে চোখ মেলে একটু ঘুম জড়ানো দৃষ্টিতে তাকায় চারপাশে। তাশফিনের বুকের ওপরে মাথা রাখা, তার বাহুর নরম বন্ধনে নিজেকে আগলে রাখা সেই অবস্থানটা হঠাৎ যেন বাস্তব বলে বিশ্বাস হতে চায় না তার।তার মনে পড়ে রাতের প্রতিটি মুহূর্তকাঁপতে থাকা কণ্ঠ, আশ্রয় চাওয়া বুক,আর সেই একটুকরো নিঃশব্দ চুমু যেটা ওর কপালে পড়েছিল নিঃসন্দেহে, নিঃশর্তে।হঠাৎ লজ্জায় গালটায় র’ক্ত জমে ওঠে ফারাহর।সে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিতে চায়,
কিন্তু তাশফিনের বাহুটা যেন একটুখানি শক্ত হয়ে আসে,
মনে করিয়ে দেয় সে এখনো ঠিক পাশেই আছে।ফারাহ চোখ নামিয়ে ফেলে, চুপচাপ।জানালার বাইরের আলোয় তার মুখে এক রকম নরম আলো পড়ে,যেটা লজ্জা আর অনুভবে গলে গিয়ে তাকে আরও মায়াবী করে তোলে।তাশফিন তখনো ঘুমের ভান করে,কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে থাকে এক চিলতে স্মিত হাসি যেটা কেবল সেই পুরুষ জানে,যে কারো লজ্জার ভাষাও পড়ে ফেলতে পারে নিঃশব্দে।
খাওয়া দাওয়া শেষে ঝুমুর অপেক্ষা করছে তাশফিনের সাথে কথা বলতে। নবীন তাকে ইগনোর করছে ইদানিং, রাগে ফুঁসছে ঝুমুর।এত সাহস হয় কি করে তার সাথে এমন করে?
তাশফিন রেডি হয়ে নিচে এলো, আপাতত বাইরে যাবে তবে কিছুক্ষণের জন্য। এরপরেই ফিরে আসতে হবে তাকে। ফারাহ কে নিয়ে বের হবে।সবটাই রুবেনা শেখ এবং রিজুয়ান শেখের কারসাজি।তারা চান ফারাহ কে নিয়ে তাশফিন হানিমুনে যাক।দেশের বাইরে যাওয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু তা এখন সম্ভব নয়।তাশফিন কিছু দিন পরেই রওনা দেবে নৌঘাঁটিতে।তার ছুটি শেষ হয়ে এসেছে প্রায়।এক মাত্র ফারাহর জন্য সে উপর মহলে ছুটির আর্জি করেছিল।
ড্রয়িং রুমে আসতেই ঝুমুর থামিয়ে দিলো তাশফিন কে।
“ভাইয়া শুনো।”
হাত ঘড়িটা ঠিক করতে করতে তাকালো তাশফিন, শিথিল কন্ঠে শুধোয়।
“কিছু বলবি?”
“আসলে ভাইয়া আমার তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিলো।”
তাশফিন আরো একবার টাইমটা দেখে বলল,
“আচ্ছা বল।”
“তুমি বসো না প্লিজ, আমার কথা গুলো একটু মন দিয়ে শুনো।”
তাশফিন বরাবরের ভাই বোনেদের কথা মন দিয়ে শুনে।এবারেও তাই। কিছুটা স্থির হয়ে বসলো সোফায়, ঝুমুর নিজেও একপাশে বসে।
“এবার বল কি হয়েছে?”
“কলেজে কোনো সমস্যা?নাকি কেউ বিরক্ত করছে? পড়াশোনার চাপ? ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যেতে চান?”
ঝুমুর অস্থির কন্ঠে বলে উঠে,
“না না ভাইয়া ওসব কিছু না। আসলে আমি অন্য কিছু বলতে চাইছি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে বল কি বলতে চাইছিস?”
“ভাইয়া আসলে নবীন আমাকে ভুল বুঝছে?”
ভ্রু কুঁচকে এলো তাশফিনের।সহসা প্রশ্ন করে বসে,
“মানে?”
ঝুমুর সেদিন রাতের তেলাপোকা জামার ভেতরে ঢুকে যাওয়ার বিষয়টি বলল এবং এটাও বলল নবীন তাকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু পরেই নিজেকে অপরাধী ভেবে চলেছে। নিজেকে নিজেই দোষ দিচ্ছে একের পর এক।সেই থেকে ঝুমুর কে ইগনোর করে চলেছে।সবটাই শুনলো তাশফিন, লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল।
“চিন্তা নেই, আমি কথা বলব নবীনের সাথে। এমনিতেও নবীন ছেলেটা বড্ড ভালো। আসলে আহমেদ পরিবারের প্রতিটা সদস্য চমৎকার ভালো মনের মানুষ।এনি ওয়ে তুই চিন্তা করিস না, আমি ওর সাথে কথা বলব।”
ঝুমুর এতক্ষণে খানিকটা স্বস্তি পেলো।তাশফিন যখন বলেছে কথা বলবে তাহলে আর চিন্তা নেই।
“ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে তুমি কথা বলো।”
তাশফিন উঠে গেল, বড্ড দেরি হয়ে গেছে।এখন যেতে হবে।না গেলেও নয়। আহমেদ পরিবারের কথায় আরিফা আহমেদের কথা মনে পড়ছে তার। মানুষটা রুবেনা শেখের মতো।মা মা গন্ধ মিশে আছে ওনার মাঝে। অনেক দিন কথা হয়নি,এবারে কথা বলা প্রয়োজন।
“হ্যালো আম্মু?”
“ডাকবে না আম্মু বলে। বেয়াদব ছেলে একটা বার কল করে খোঁজ নেয় না।”
আরিফা আহমেদের রাগান্বিত কন্ঠস্বর শুনে ফিক করে হেসে উঠলো তাশফিন।
“আহা মিসেস আহমেদ আপনি তো পুরো রাগে ফুলে আছেন!”
তেতে উঠেন আরিফা আহমেদ। এ নাকি তার মেয়ের জামাই।
“কিসের জন্য ফোন দিয়েছো শুনি?”
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলে উঠে তাশফিন।
“আচ্ছা আম্মু আব্বুর শরীরে কি বেশী রাগ? নাকি আপনার শরীরে বেশি রাগ?”
ভ্রুদ্বয় কুঞ্চিত করে তাকালো আরিফা আহমেদ।
“মানে?”
“উমম আমি শিওর হয়ে বলতে পারি আমার শ্বশুর মশাই নিতান্তই ঠান্ডা মানুষ একদম আমার মতো। না হলে আপনারা মা মেয়ের যা রাগ কি বলব?”
নাকের ডগা ফুলে উঠে আরিফা আহমেদের।
“তাই নাকি? তাহলে আমার মেয়ে ফেরত দিয়ে যাও।”
আঁতকে উঠে তাশফিন।
“ওটি হচ্ছে না মিসেস আহমেদ। মিসেস শেখ যে আমার প্রাণ , তাকে ছাড়া ম’রেই যাবো।”
ক্ষেপে গেলেন আরিফা আহমেদ।
“চুপ করো বেয়াদব। কিসব আজেবাজে কথা? আমাদের রাগ যখন স’হ্য হয় না তাহলে দরকার কি রেখে?”
“ইস্ মিসেস আহমেদ এত রাগ করেন কেন বলেন তো? ”
“ওরে বেটা আমার সাথে ফাজলামি হচ্ছে?”
গা দুলিয়ে হেসে উঠলো তাশফিন। শ্বাশুড়ি তার মনের মতো , তার দ্বিতীয় মা।খুব নরম কন্ঠে ডেকে উঠে।
“আম্মু।”
“কি?”
“আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসি। মিস করছি।”
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন আরিফা আহমেদ। এমন একটা ছেলে পেয়েছেন তিনি আর কি লাগে? ব্যস ছেলে না থাকার আফসোস মিটে গেছে তার।
কলেজের ক্যাম্পাসে আছে ফারাহ। ক্লাস শেষ হয়েছে সবে। তবে এখনো আরেকটি ক্লাস বাকি তার।
বোনের টুং শব্দ হতেই রিসিভ করলো তা।
“হ্যালো।”
তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৩২
“মিসেস শেখ কোথায় আছেন?”
মিসেস শেখ শেখ ডাকাটা ভীষণ ভালো লাগে ফারাহর নিকটে। মুচকি হেসে ফেলল ফারাহ।
“কলেজে আছি।”
“ওহ্। তাহলে আমি আসছি আপনাকে রিসিভ করতে।”
চোখ দুটো চকচক করে উঠলো ফারাহর। প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে শুধোয়।
“কোথায় আছেন এখন?”
“আপনার বুকে।”
লজ্জায় কান গরম হয়ে আসছে ফারাহর।কী ঠোঁটকাটা দুষ্টু লোক!