তাজমহল পর্ব ২২
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
গা গুলিয়ে ওঠা বীভৎস স্পর্শে শাইনার দমবন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়। নিজেকে কোনোমতে ছাড়িয়ে নেবে তার আগেই তাজদার এক ঝটকায় তাকে আরও কাছে টেনে নিল। শক্ত বাহুতে আটকে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,”শাইনা মমতাজ আমার কথা শোনো। নইলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেব। লুক এট মি।”
শাইনা থেমে গেল। গাল মুছে চোখ তুলে তাকাল তাজদারের মুখের দিকে। একটু শান্ত হলো। তাজদার গভীর স্বরে বলল,
“লিসেন কেয়ারফুলি শাইনা মমতাজ। আমি তোমাকে দুটো অপশন দিয়েছি। তোমাকে যেকোনো একটা বেছে নিতেই হবে। আমি তোমাকে লন্ডনে নিয়ে যাব নইলে এখানে বাচ্চাসহ রেখে যাব। এমনি এমনি রেখে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। বিয়েটা আমি রংতামাশা করার জন্য করিনি। আই নিড এ ফ্যামিলি। সাফ সাফ সব জানিয়ে দিলাম তোমাকে। দিজ ইজ ইয়োর লাস্ট চান্স। ডিসাইড নাউ। সারেন্ডার অর সাফার এলৌন। আ’এম নট লিভিং লুজ এন্ডস।”
শাইনা অস্ফুটস্বরে বলল,”বাচ্চার নাম দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল।”
তাজদারের কপাল কুঁচকে গেল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কি বললে?”
শাইনা তার দিকে তাকিয়ে বলল,”অপমানিত হতে চাইলে বলতে পারি।”
“ফালতু কথা ছাড়ো। আসল কথায় আসো।”
শাইনা সোজাসাপটা বলল,”আমি বাচ্চা নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নই।”
তাজদার কাঠকাঠ গলায় বলল,”Reality doesn’t negotiate with excuses. So get ready to face reality with or without your ‘preparedness’.
শাইনা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল। এবারও পারল না। প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে বলল,”আপনি আমার কোনো মতামতকে সম্মান দেননি তাই আমিও দেব না। আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্যাঁড়াকলে ফেলেছেন আপনি। তারপর বলছেন যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নাও। আমার সিদ্ধান্তের প্রতি যেমন আপনি অসন্তুষ্ট তেমন আপনার সিদ্ধান্তের উপরও আমি অসন্তুষ্ট। এত বাহাদুরি দেখানোর পরও আপনি কি করে ভাবছেন আমি স্বেচ্ছায় আপনার বাচ্চা নেব? আপনি জানতেন আমি বিয়েটা করতে রাজী নই তাই নিশানের নাম করে আকদের আয়োজন করলেন।
সবটা আপনার পরিকল্পনায় হয়েছে। দুই পরিবারকে আপনি আপনার কথামতো নাচিয়েছেন। আপনার স্বভাব হয়ে গেছে সবাইকে নিজের মতো করে কন্ট্রোল করতে করতে। আপনি আপনার বিবাহিত স্ত্রী। একবারও কি আপনার মনে পড়ে যে আপনি স্ত্রী হিসেবে আমাকে কোন জায়গায় সম্মান দিয়েছেন?
আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর আজ না হোক কয়েকটা দিন গেলে আস্তেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। কত জটিল সম্পর্ক দেখেছি বিয়ের পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিয়ের পর ভেবেছি আপনি আমাকে এটা ফিল করাবেন যে পূর্বে যা হবার হয়েছে কিন্তু এখন থেকে সব ভালো হবে। আমার কথার একটা ভ্যালু থাকবে।
কিন্তু না আপনি সেটা হতে দেননি। আপনি ওয়ালিমার দিন আমাকে সবার সামনে অপমান করিয়েছেন। নিজের বোনকে একটা বকাও দেননি। নিজের আত্মীয় স্বজনকে কোনো কথা বলেননি। আপনি পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছেন আমাকে অপমানিত হতে দেখে।
আপনি শুরু থেকেই আমার উপর নিজের মর্জি খাটাচ্ছেন হাঁটতে বসতে। একবারও আমাকে এটা ফিল করাননি যে আপনি আমার জন্য আতঙ্ক নয়। স্বামী মানে জানতাম মেয়েমানুষের শান্তির জায়গা।
মেয়েমানুষ গোটা দুনিয়ার সাথে লড়াই করে যদি তার স্বামী ঠিক থাকে। কিন্তু আপনি আমার জন্য আতঙ্কই রয়ে গেলেন। আপনার ব্যবহার, আচার আচরণ কোনোটাই পাল্টায়নি। আপনি আমার উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে ভালোবাসেন। আপনার কথামতো আমাকে চলতে হবে, আপনার সব অন্যায় আবদার আমাকে মানতে হবে। আমার ভালোমন্দ, ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে। আমি বেশি কিছু তো চাইনি। সম্মান চেয়েছি। সেটা আপনি দেননি। আপনার পরিবারও সেটা দেয়নি। তাই আমার সম্মানের কথা আমাকেই চিন্তা করতে হবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাব না। যা হবার হবে। যেখানে সম্মান নেয়, যেই সম্পর্কে পাল্টাপাল্টি শর্ত আরোপ করে আতঙ্কে রাখা হয় সেই সম্পর্কের প্রতি আমার কোনো টান নেই, কোনো সম্মান নেই, কোনো দায় নেই। আপনার তো সবকিছুতে ফোর্স করার স্বভাব আছে। মনে হয় না আমার মতামতের কোনো দরকার আছে। তাই আজ থেকে আমার সাথে শলাপরামর্শ করার বিষয়টা বাদ দিন। এত ভালো সাজার দরকার নেই।”
তাজদার সিদ্দিকী সরু চোখে তাকিয়ে রইলো। কপালে কঠিন ভাঁজ, মুখটা একদম পাথরের মতো শক্ত করে রেখেছে।
“তুমি আমাকে কি মনে করো?”
“আপনি আমাকে নিজের যে রূপটা দেখিয়েছেন সেটাই। বর্বর, উগ্র, ছোটলোক। ভালো রূপ দেখালে সেটাও বলতাম। ওহ হ্যাঁ বিয়ের সময় লাখ টাকার জিনিস দিয়েছেন এটা একটা ভালো ব্যাপার স্যাপার। সবাইকে একদম কিনে ফেলেছেন। আমাকে এভাবে ধরে রাখবেন না। গাড়ি ঘোরান। আমি বাড়ি যাব। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“গাড়ি ঘুরবে না। বাড়িও যাবে না।”
শাইনা বলল,”এভাবে আপনি আমার এডমিশন আটকাতে পারবেন না। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। ছাড়ুন। সবখানে স্বামীগিরি ফলানোটা খুব গর্বের বিষয় না। সামান্য রেসপেক্টটুকু অ্যাচিভ করতে পারেননি আমার কাছ থেকে। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।”
কথাটা শুনে শাইনাকে একধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিল তাজদার। তারপর শাইনা সামলে নেওয়ার আগেই গাড়ি ঘুরিয়ে নিল। দুর্দম গতিতে গাড়িটা ছুটছে রাস্তা ধরে। শাইনার দিকে আর একবারও তাকাল না তাজদার।
গাড়ি উঠোনে এসে থামলো। তাজদার শাইনাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বললো। যেভাবে ছোটবেলায় বাড়ি থেকে বের করে দিত ঠিক একই ভঙ্গি। তুড়ি বাজিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল শাইনাদের বাড়িটা।
তারপর তৌসিফকে ফোন দিতে দিতে নিজের বাড়িতে চলে গেল সে গটগট পায়ে হেঁটে। শাইনা জানতো তার মেল ইগো হার্ট হলে সে আর তাদের বাড়িতে আসবে না। এই লোকটাকে পুরোটা না চিনলে কম চেনেনা সে। নিজের মনমতো না হলে উল্টো পথে হাঁটবে।
শাইনা তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কলিং বেল বাজাতেই কিছুক্ষণ পর শাওন এসে দরজা খুলে দিল। শাইনাকে একা দেখে ঘুম জড়ানো চোখদুটো কিঞ্চিৎ বড় হয়ে গেল তার। শাইনার চোখমুখের অবস্থা এমন যে দেখে মনে হচ্ছে তার মাথায় কেউ হাত রাখলে সে ঝরঝর করে কাঁদবে।
কপালে কাছটায় চোখ পড়তেই শাওন বলল,
“কপালে কি হয়েছে? ফুলে গেছে কেন?”
শাইনা বলল,”গাড়িতে বাড়ি খেয়েছি।”
“তাজ ভাই।”
“নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। শ্বশুরবাড়িতে ঘুমানোর রুচি চলে গেছে।”
শাওনের কপাল আরও কুঁচকে গেল।
“ঝামেলা হয়েছে নাকি?”
“না।”
ওই বাড়িতে সম্ভবত কেউ জোরে জোরে কথাবার্তা বলছে। শাওন বাইরে এসে কান পাতলো। শাইনা নিজের ঘরে চলে গেল। শাহিদা বেগম উঠেছে মেয়ে আর জামাই এসেছে ভেবে। ওদের কিছু লাগবে কিনা জানার জন্য। কিন্তু শাইনাকে একা ফিরতে দেখে চক্ষু চড়কগাছ!
কৌতূহলে হেঁটে সামনে চলে এল। দরজা খোলা দেখে বাইরে বেরিয়ে এল। দেখলো শাওন আর তৌসিফ উঠোনের এককোণায় দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে। শাহিদা বেগম বেরিয়ে এলেন,
“কি হয়েছে রে শাওন?”
শাওন বলল,”তেমন কিছু হয়নি।”
“তাহলে ও এল না কেন? দুজন তো ভালোই ভালোই বেরিয়েছিল।”
তৌসিফ বলল,”মনে হচ্ছে দুজনের মধ্যে তর্কতর্কি হয়েছে।”
ঘুমঘুম চোখে আফসার সাহেবও বেরিয়ে এল। ওই বাড়িতে বিস্তর তর্কতর্কি হচ্ছে। কার সাথে কে কথা কে বলছে বোঝা যাচ্ছে না।
শাহিদা বেগম বললেন,”আল্লাহ আবার কি ঝামেলা লেগে গেল কে জানে। আমার মেয়েটা সংসার করার আগেই সংসারটা ভাঙবে।”
তৌসিফ বলল,”চাচীমা আপনারা ঘরে চলে যান। কাল সকালে যা হবার হবে। টেনশন করিয়েন না।”
শাহিদা বেগম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।
তাজদার ঘরে এসে পাঞ্জাবি পাল্টে নিয়েছে। গায়ে একটা শার্ট ছড়িয়েছে। পকেটে একহাত রেখে অন্য হাতে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে জানালার বাইরে তাকালো। রাত অনেক হয়েছে। তার চওড়া কপালে অনেকগুলো ভাঁজ। একটু একটু সে অনুধাবন করতে পারছে বিয়েটা করা তার মস্তবড় ভুল হয়েছে। এখন সবটা তাকেই হ্যান্ডেল করতে হবে। পরিবারও তার দিকেই আঙুল তুলবে। বিশেষ করে আব্বা। শুরুতেই বলবে, নিজের ত্যাড়ামির ফল। তোমাকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। ওই বাড়ির মেয়ে কেন আমাদের আনতে হবে? দেশে কি মেয়ে কম পড়েছে? বাপের বাড়ি কাছে হলে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ির মানুষকে ভয় পায় না। তাছাড়া সারাজীবন তার মা বাপ অন্যদের বাড়িতে খেটে এসেছে। ছোটলোকিপনা যায়নি।
তাজদার সিদ্দিকী ঘনঘন চুমুক দিল কফির মগে। অস্থিরতা কাটছেনা। তাকে অপছন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু হুট করে শাইনা মমতাজকে তার পছন্দ হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। আর এজন্যই শাইনা মমতাজ তাই এককাঠি উপরে থাকবেই। কিন্তু ভুল তো সে করে ফেলেছে। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ছবিগুলোতে তিতলির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে তার ডেটা সেন্টারে হাজার ইনস্ট্যান্স চালু হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল একটাই প্রাইমারি নোড, বাকি সব স্লেভ!
হার্টে অটো-স্কেলিং চালু হয়ে গিয়েছিল, সিপিইউ ইউসেজও হান্ড্রেড পার্সেন্ট যখন ও চাচার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে একবার তাকাল চোখ তুলে! আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়াল!
ভেবেছিল শাইনা মমতাজ ছোট একটা সিগন্যাল মাত্র। শেষে দেখা গেল একটা ডিডস অ্যাটাক! মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছে। ইমোশনাল এসএলএতে সাইন করার আগে শর্তগুলো একটু ভালো করে পড়া উচিত ছিল! তাজদার সিদ্দিকীর দ্বারা এতবড় ভুল কি করে ঘটলো? যাকে ছোটবেলায় দূরছাই করতো, ঘৃণা হতো দেখলে তার প্রতি হুট করে এটেনশন যাবে এটা তাজদার সিদ্দিকীর ধারণারও বাইরে ছিল।
রওশনআরা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন।
“কি হয়েছে তাজদার? তুমি চলে এলে কেন? তোমার বাবা কেন চেঁচামেচি করছেন? বিয়ের এক সপ্তাহও যায়নি। তারমধ্যে এইসব কি শুরু করলে তোমরা?”
তাজদার মায়ের দিকে ফিরলো। পকেটে দুইহাত রেখে ঘরজুড়ে পায়চারি করতে করতে বলল,
“নুভার বিয়ের পাকাকথাটা সেরে ফেলো। আগামী মাসেই আমি ফ্লাইট ধরব।”
রওশনআরা হতভম্ব!
“কি বলছো! বিয়ে অব্দি তুমি থাকবেনা? শাইনার সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে?”
“সে আস্ত একটা ঝামেলা। নতুন করে ঝামেলা হবে কেন? জেনেশুনে যখন ঝামেলটিকে কাঁধে নিয়েছি তখন আমাকেই ঝেড়ে ফেলতে হবে।”
রওশনআরা বললেন,”তুমি রেগে আছ। শান্ত হও। আমাকে বলো কি হয়েছে। কারো কথা না শুনে বিয়ে করেছ। সেটা ভালো কথা। কিন্তু বিয়ে যখন হয়ে গিয়েছে তখন এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা তুমি। তোমার সাথে আরও একটা জীবন জড়িয়ে গেছে। ওর কথা তোমাকে ভাবতে হবে। ও যখন যেতে চাইছেনা তখন তোমারও উচিত তার কথাকে মূল্যায়ন করা। তাহলে সংসারের প্রতি তার মন বসবে। শুরু থেকেই এত তিক্ততা দেখলে সংসারের প্রতি ওর বিতৃষ্ণা তৈরি হবে।”
“ও এখানে থেকে করবেটা কি? পড়াশোনা মাইফুট! লাখো মানুষ ন্যাশনাল থেকে পাশ করে ঘরে বসে আছে। বিয়ে যখন করেছে তখন আমার সুবিধা অসুবিধার কথা তাকে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু সে সেটা করছেনা। উল্টো আমি যেটা বলছি সে তার বিপরীতটাই করছে।”
রওশনআরা তার রাগের ধরণ দেখে বুঝতে পারে তাকে কিভাবে হার্ট করা হয়েছে। শাইনা নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছে যার কারণে তার মেজাজ তুঙ্গে উঠে গিয়েছে। আর এখন সে না শাইনামুখী হবে না পরিবারের সামনে নিজের ভুলটা স্বীকার করবে। তিনি মা। তাই যাকে পেটে ধরেছেন তাকে ভালোভাবেই চেনেন। রওশন আরা শুধু এটুকু বললেন,
“সম্পর্ক যদি ঠিক করতে চাও তাহলে বলব অসম্ভব শান্ত হয়ে যেতে হবে।”
“অলরেডি মাটির সাথে মিশে গিয়েছি। আর পসিবল না।”
“কি চাইছ?”
“যেটা বলেছি, আগামী মাসে আমার ফ্লাইট। ওই মেয়ে আমার কথা না শুনলে আমি তার সাথে কোনোপ্রকার সম্পর্ক রাখব না। ব্যস! কথাটা তার ফ্যামিলিকেও জানিয়ে দেব। এখনো চেনেনি আমাকে।”
রওশনআরা হতাশ হলেন। ছেলেটা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি শাইনা এখন পাশের বাড়ির মেয়ে নেই। তার স্ত্রী হয়ে গিয়েছে। তার ভালোমন্দের কথা চিন্তা করতে শেখেনি সে। আর কোনোদিন শিখবে বলে মনে হয় না।
রওশনআরা তার ঘর থেকে বেরিয়ে এল।
তাজউদ্দীন সিদ্দিকী ঘরজুড়ে পায়চারি করছেন। রওশনআরা আসতেই বললেন,”বউকে রাজি করাতে না পেরে নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে?”
“আপনি এভাবে চেঁচাচ্ছেন কেন?”
“চেঁচাব না? এত টাকাপয়সা খরচ করে বিয়ে করে এইসব তামাশা দেখাচ্ছে আমাদের। মানুষের কানে গেলে হাসাহাসি করবেনা?”
“শাইনা ভুল কিছু তো বলছেনা। আপনার ছেলে যে পরিমাণ গাদ্দার তাতে ওর সাথে একা অন্য একটা দেশে যাওয়ার সাহস কোনো মেয়েই করবেনা। বিপদে আপদে পড়লে সেখানে ও যাবে কার কাছে আপনার ছেলে তাকে সাপোর্ট না করলে?”
তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বলল,”বউ নিয়ে যাক সেটা আমিও চাইনা, বউ নিয়ে চলে গেলে আর এমুখো হবেনা তোমার ছেলে। ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। কিন্তু ওই মেয়ে আজ ওকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল কিভাবে? রাতবিরেতে কি হচ্ছে এইসব? তার স্বামী ঘাড়ত্যাড়া বলে তাকেও ঘাড়ত্যাড়া হতে হবে কেন?”
রওশনআরা বললেন,”আমি আর কিছু বলবো না। যা ইচ্ছে করুক। বিয়ে যখন নিজের ইচ্ছেতে করেছে তখন বউ নিয়ে যা ইচ্ছে করুক। মেয়েটা শান্তি পাবেনা এটা আমি বুঝে গিয়েছি। আপনার ছেলেকে ত্যাড়াব্যাড়া কিছু বলেছে তাই সোজা বাড়ি চলে এসেছে। এভাবে ঘর সংসার হয়? একজন আগুন হলে অপরজনকে পানি হতে হয়। নিজের ছেলেকে যখন কিছু বলতে পারছিনা তখন পরের মেয়েকেও কিছু বলতে পারব না আমি।”
শাওনকে নিয়ে ভর্তি হতে গিয়েছে শাইনা। রূপালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বের হতেই শাওন বলল,
“ফুচকা খাবি?”
শাইনা না করার মেয়ে না। ফুচকা, চটপটি তার অনেক প্রিয়। শাওন তাকে ফুচকার দোকানের সামনে নিয়ে গেল। শাওনের হাতে তার কাগজপত্র রেখে সে টকঝাল ফুচকা একে একে মুখে পুরতে লাগলো। নাকের মাথা লাল হয়ে এসেছে ঝালে। শাওন পানি এনে দিল। শাইনা পানি খেল। রাস্তার পাশে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ঝালে হা হু করছিল ঠিক তখুনি তার পাশ দিয়ে একটা বাইক ছুটে গেল। কাদা ছিটকে পড়লো তার বোরকায়। ছুটে চলা বাইকারের দিকে চেয়ে রইলো সে। তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এদের কি বলা যায়?”
শাওন বলল,”ছাড়। মনে হয় মাল খেয়েছে। মেয়ে দেখলে শালাদের কুড়কুড়ানি বেড়ে যায়।”
বাড়ি ফিরতেই তাদের পাশ দিয়ে শাঁ করে একটা বাইক ছুটে গেল ওই বাড়ির উঠোনে। শাইনা আর শাওন একে অপরের দিকে তাকালো। কালো হেলমেটটি খুলে তাজদার সিদ্দিকী বাইক থেকে নামলো। শাওন বাইক পাগল। সে ছুটে গেল।
“তাজ ভাই এটা কখন কিনলে?”
শাইনার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে তাজদার জবাব দিল,”তৌসিফের জন্য।”
“জানতাম না তো।”
“এতদিন তৌকিরের কাছে ছিল।”
তৌকির তার বড় ফুপুর ছেলে। শাওন বাইকটা দেখছিল ধরে ধরে। শাইনা তার বোরকার দিকে তাকালো। ইচ্ছে করে কাদা ছিটকে দিয়েছে।
তাজউদ্দীন সিদ্দিকীর গলা ভেসে এল,
“বাইকটা ভেতরে ঢুকিয়ে রাখো। সবাই এসে ধরবে।”
শাইনা হঠাৎ থমকে গেল। পা জোড়া থেমে গেল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো সে শাওনের দিকে। শাওন কথাটা শুনে আর দাঁড়াল না। সোজা চলে এল। শাইনার চোখজোড়া আচমকা ছলছল করে উঠলো। শাওন তাকে ডিঙিয়ে চলে গেল ঘরে। তার চেহারা দেখে শাইনার কেমন দমবন্ধ লাগলো।
শাইনার যদিও দুইদিন থাকার ছিল বাপের বাড়িতে কিন্তু সেটা আর হলো না। তাজদার সিদ্দিকী ফোনে জানিয়েছে তাদের মেয়েকে যেন বিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিকেলে না পাঠালে আর পাঠানোর দরকার নেই।
আর মাসে একবার সে বাপের বাড়িতে আসতে পারবে। সবার এত মন পুড়লে তারা গিয়ে যেন দেখে আসে। শ্বশুরবাড়ি লন্ডন নয়। শাহিদা বেগম এখনো কথাগুলো ভুলতে পারছেনা। বাবাগো বাবা কি শক্ত শক্ত কথা ব্যাটার।
এডমিশন নিতে পেরে শাইনা দুপুরে শান্তির ঘুম দিয়েছে। ফুরফুরে মেজাজে নিজের ঘরদোর পরিষ্কার করলো সে ঘুম থেকে উঠে। শাহিদা বেগম বলল,”চলে যাবি এখন এসব করার কি দরকার? তোর আপারা করবে।”
শাইনা কথা শুনলো না। নিজের ঘর নিজে সাফ করে নিল। শাহিদা বেগম তার যাওয়ার সময় নাশতা, আর খাবার দাবারও দিয়েছে সবার জন্য। শাইনা মেজাজ শান্ত ছিল। শাহিদা বেগম তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বললেন,
“জামাই গরম হলে তখন তুই মুখের উপর কথা বলিস না। যে চুপ থাকে সেই জিতে যায়। তর্ক কোনো সমাধান নইরে মা।”
শাইনা বলল,”আমার যখন ইচ্ছা তখন আমি এই বাড়িতে আসব সেটা ওদের বলে দিও।”
“সমস্যা নেই আমি তোকে দেখতে চলে যাব।”
“আমি সবাইকে দেখার জন্য চলে আসব। তুমি ওই বাড়িতে যাবে না। শুধু তুমি না। কেউ যেন না যায় ওই বাড়িতে। আমার ইচ্ছে হলে আমি আসব।”
দাদীমা তাকে উঠোন অব্দি এগিয়ে দিল। ফিসফিস করে বলল,”ব্যাটা বউ ছাড়া থাকতে পারবেনা বলে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন করতেছে। রাগ করিস না।”
“বউ ছাড়া এতবছর কিভাবে থেকেছে? তোমাদের মুখে যত ধরণের নাটকীয় কথাবার্তা!”
“যাওয়ার সময়ও এভাবে কথা বলবি নাকি?”
“লন্ডন তো যাচ্ছি না। আসি। ওই বাড়িতে যাবেনা ঘনঘন।”
দাদীমাকে জড়িয়ে ধরলো সে। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। আফসার সাহেব তাকে হেঁটে যেতে দিচ্ছে না। গাড়িটা পটিয়া থেকে ঘুরে আসবে এরূপ কথা ছিল কিন্তু তাজদার সিদ্দিকীর আদেশে ড্রাইভার পাঁচ মিনিটের মধ্যে অলিরহাঁট থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে তাদের উঠোনে এসে থামলো।
শাইনা ফ্লোর মুছল। বিছানার চাদর, বালিশের কভার পাল্টাল। জানালার পর্দা পাল্টে নিল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা মুছে নিল। আসবাবপত্রের ধূলো ঝাড়লো। একটু ঝাড়ুও দেয়নি। কি আশ্চর্য! মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে তার জন্য এত কাজ বাড়িয়ে রেখেছে।
তাজদার সিদ্দিকী দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। শাইনা নিজের কাজে ব্যস্ত। তবুও সে জানে ভদ্রলোকের অভদ্র, নির্লজ্জ চোখদুটো তার শরীরের বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চেয়ারে বসে ঠোঁটের কাছে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে কপাল কুঁচকে। শাইনা বালতিতে রাখা বিছানার চাদর, বালিশের কভার সব নিয়ে যাচ্ছিল। তাজদার সিদ্দিকী তুড়ি বাজালো। শাইনা তার দিকে তাকালো। তাজদার আঙুলের ইশারায় ওয়াশিং মেশিনটা দেখিয়ে দিল।
তারপর নিজের কাবার্ড খুলে কিছু শার্ট, টিশার্ট আর প্যান্ট শাইনার হাতে ধরিয়ে দিল। শাইনা সেগুলো মাটিতে ফেলে দিল। নিজের কাদামাখা বোরকাটা এনে তাজদারের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর একে একে সব শার্টগুলো তাজদারের হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“আমি ওয়াশিং মেশিন ইউজ করতে জানিনা।”
বলেই চলে যাচ্ছিল তাজদার খপ করে তার বেণীটা ধরে ফেললো। শাইনা মাথার পেছনে হাত চাপলো। আয়নায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাজদার সিদ্দিকী শক্ত হাতে বিনুনিটা ধরে রেখেছে। শাইনা বলল,
“আমি বড়আম্মুকে ডাকছি।”
“এতে আমি ভয় পাচ্ছি।”
“আপনার বোধহয় আমার কটু কথা না শুনলে ভাত হজম হয় না। নইলে সারাক্ষণ নাটক করার তালে থাকেন কেন?”
“তোমার কথার ধরণ খুব রুক্ষ শাইনা মমতাজ।”
বলেই বেণীটা টেনে শাইনাকে নিজের কাছে নিয়ে এল। সামনে ঘুরিয়ে এনে বেণীটা শাইনার গলায় পেঁচিয়ে বলল,
“সবসময় এভাবে কথা বললে তোমার চুল দিয়ে তোমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেব।”
শাইনার হাঁসফাঁস করছে। চুলে টান পড়ছে। তাজদার তার বেণী ছেড়ে দিল।
তারপর হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে বলল,”হাত ধুতে হবে। তেল চিটচিটে চুল!”
শাইনা বেণীটা পেছনে ঠেলে শাড়ির আঁচলে কপাল মুছতে মুছতে বলল,”সারাক্ষণ জাপটে ধরার তালে থাকে আবার সে ধুচ্ছে হাত!”
তাজদার বলল,”লিসেন শাইনা মমতাজ, তোমাকে ছুঁলে আমাকে গোসল করতে হয়। ব্যাপারটা ভেবে দেখেছ? তারমানে তোমাকে ছুঁলেই আমি অপবিত্র হয়ে যাই।”
শাইনা তার কথা কানে না তুলে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তাজদার ও। শাইনা তার দিকে তাকিয়ে বলল,”আজব! আমি এমনি শুয়েছি। দরজা খোলা রেখে এসবের মানে কি? এখন কি ঘুমানোর সময়? মাগরিবের আজান দিবে কিছুক্ষণ পর।”
তাজদার মাথার নীচে হাত রেখে শুয়ে বলল,”আজানের অপেক্ষায়। উঠে যাব। প্যানপ্যান করলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব।”
শাইনা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তাজদার তাকে টেনে এনে মুখ চেপে ধরবে তখুনি তিতলি বলল,”শাইনা আম্মু তোমাকে..
সে ঘরের চৌকাঠে পা দিতে না দিতেই উল্টোদিকে ভোঁ দৌড়। তৌসিফের সাথে প্রবল ধাক্কা। তৌসিফ গর্জে উঠে বলল,
“বাড়িতে এইসব কানা ল্যাংড়া নিয়ে তো বহুত জ্বালায় আছি।”
তিতলি জিভে কামড় দিয়ে বলল,”ওইদিকে যেওনা।”
“কেন ওইদিকে কি?”
তিতলি তাকে ঠেলে দিল। তৌসিফ একসাথে অনেকদূর চলে গেল পিছু হেঁটে। বলল,
“মাথা গেছে নাকি?”
তিতলি তাকে বোঝাতে না পেরে পালিয়ে গেল। ধুর ধুর!
তাসনুভার বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত করার কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তাজদারকে সবাই বোঝাচ্ছে তার বিয়ের পর ফেরার জন্য। এভাবে চলে গেলে নিজেরই লস। তাজদার হ্যাঁ না কিছু বলেনি।
শাইনা রান্নাঘরের দিকে যায়নি। একেবারে কাল সকালে যাবে। ঘর থেকেও বের হয়নি সে। তিতলি আর বাকিরা এসে তাকে দেখে গিয়েছে। রাতের খাবার খেতে ডেকেছে। শাইনা খাবেনা বলে দিয়েছে। পেট ব্যাথা করছিল সকাল থেকে। খাওয়াদাওয়া ভালো লাগছেনা। মাছ মাংসের ভাত তো একদম নয়।
রওশনআরা এসে বলল,”না খেয়ে থাকা ভালো নয়। দুটো করে খেয়ে যাও।”
শাইনা জানে সে হাজার বললেও শুনবে না। তাই খেতে গিয়েছে। তখন তাসনুভার বিয়ে বিষয়ক কথাবার্তা কানে এল। তার শ্বশুরবাড়ির মানুষ স্বপরিবার আমেরিকায় থাকে। পুরোনো বাড়ি ঢাকার গাজীপুরে। বেশ টাকাপয়সা আছে। ছেলেও দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। তার ভাই তার বিয়েতে থাকবে না শুনে সে মন খারাপ করেছে। তাজদার এখনো কোনো আশা দেয়নি কাউকে।
তিতলি শাইনার সামনে আসছেনা। শাইনারও কেমন অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু তাজদার সিদ্দিকীর বিন্দুমাত্র লজ্জাশরম নেই। তিতলি তিতলি ডেকে তাকে দিয়ে এই কাজ ওই কাজ করাচ্ছে।
রওশনআরা তাসনুভাকে বোঝাচ্ছে ও থাকতে না চাইলে কেউ ধরে রাখতে পারবে না ওকে। তাসনুভা রাগের একটা অংশ শাইনাকে ঘিরে। সে ইনিয়েবিনিয়ে বিষয়টাকে শাইনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শাইনা চুপচাপ খাচ্ছে। তাসনুভা এবার তাকে সরাসরি বলল,
“শাইনা তুমি দায়ী এটার জন্য। ইউ’ল হ্যাভু টু বি দ্য ওয়ান টু কনভিন্স ভাইয়া।”
শাইনা রওশনআরার দিকে তাকালো। তারপর তাসনুভাকে বলল,”আমি বলে দেখব।”
“কথাটা দায়সারাভাবে বলেছ ঠিক আছে। কিন্তু কাজটা ভালোভাবে করবে। কারণ তোমার জন্যই ভাইয়া এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার ডিসিশনটা নিয়েছে। ভাইয়া যদি বিয়েতে না থাকে তাহলে তুমিও থাকতে পারবেনা। নো মোর ডিসকাশন। দ্যাটস ফাইনাল।”
শাইনা বলল,”আমি বলব। এবার রাজী না হলে সেখানে আমার কি করার আছে?”
তাসনুভা চলে যাচ্ছিল। তার কথায় থেমে গিয়ে বলল,”কিছু করার না থাকলে আমার বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে তুমি তোমার বাপের বাড়িতে চলে যাবে।”
শাইনা তার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর রওশনআরার দিকে তাকালো। তৌসিফের মা, দাদীমা সবাই কথাটা শুনেছে কিন্তু টুঁ শব্দটা করলো না কেউ।
শাইনা ঘরে এসে তাজদারকে ফোন করলো।
“ঘরে আসুন।”
তাজদার কোনো জবাব দেয়নি। কিছুক্ষণ পর তাকে ঘরে দেখা গেল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,”কোনো সমস্যা?”
শাইনা বলল,
“সবসময় আমাকে বিপদে ফেলার পায়তারা করেন তাই না? এমন এমন কাজ করবেন যাতে সব দেষ আমার দিকে তেড়ে আসে।”
তাজদার বলল,”হোয়াট!”
“আপনি আপনার বোনের বিয়ের আগে কোথাও যাবেন না। আর যদি যান তার দুই সপ্তাহ আগে আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যাব।”
তাজদার বলল,”তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার সবকথা শুনতে আমি বাধ্য।”
“যে নিজের বোনের আবদার রাখতে পারেনা সে স্ত্রীর কথার মর্যাদা দিতেও জানবেনা সেটা আমি জানি। তারপরও বললাম। এবার সিদ্ধান্ত আপনার।”
বলেই শাইনা বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো।
তাজদার সিদ্দিকী বলল,”আমি তোমাকে এত শান্তিতে রেখে দেশ ছাড়ব এমনটা ভেবো না।”
“আমার সারাজীবন অশান্তিতে কাটবে সেটা আমি জানি। প্রস্তুত আছি।”
তাজদার তার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে শাইনার পাশে শুয়ে পড়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,,
“তোমাকে অশান্তিতে থাকতে দেখলে আমার মজা লাগে শাইনা মমতাজ।”
শাইনা বলল,”আমার ফেসবুক আইডি ফেরত চাই। কথাটা বারবার বলবো না।”
“পায়ে ধরলেও দেব না।”
“আমার চাই মানে চাই।”
“চাইতে থাকো।”
শাইনা আচমকা তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। তাজদার হতভম্ব! শাইনা বিছানা থেকে নেমে কাঁপা হাতে তার আইডিতে লগইন করলো। তারপর ডিলিট করতে যাচ্ছিল। তাজদার ছুটে এল। শাইনা সরে গেল। তাজদার শাঁসিয়ে বলল,
“লাস্ট ওয়ার্নিং শাইনা মমতাজ। আমি কি করতে পারি তোমার ধারণাও নেই। ফোনটা দাও ননসেন্স!”
পরে মনে পড়লো পাসওয়ার্ড না দিলে ডিলিট করা যাবে না। তাই সে শান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শাইনা ফোনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পাসওয়ার্ড চাচ্ছে। তাজদার বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে হাসছে। শাইনা এসে ফোনটা বালিশের উপর ছুঁড়ে ফেললো। তারপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। তাজদার সিদ্দিকী হাসছে নিঃশব্দে! শাইনা চোখ লাল করে একবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তাজদারের ঠোঁটের কোণায় তীর্যক হাসি। শাইনা বলল,
তাজমহল পর্ব ২১
“আপনাকে আমি কোনোদিন মাফ করবো না।”
তাজদার তাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল,”মাফ চাইলে তবেই তো মাফ করবে।”
শাইনা আবারও দূরে চলে গেল। তাজদার ডিমলাইটটাও নিভিয়ে দিল। ওটা নিভিয়ে দিলে শাইনা মমতাজ তাকে দেখে না। তাই কাছে যেতে বাঁধা আসে না।