তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২
তাবাস্সুম খাতুন
জারা বললো ; — “সোনা আমার তুই নিজেকে শান্ত কর প্লিজ!ভাইয়া এইবার তোকে আর কিছুই করতে পারবেনা, তুই দেখিস? আমার জান টা তুই স্বাভাবিক হো প্লিজ সোনা আমার।”
জারার কথা শেষ হতেই বাহিরে থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। জারা আর সামিয়া একে ওপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। জারা উঠে দাঁড়ালো সামিয়া কে বললো :
— “আমি দেখে আসছি সামু তুই সিমির কাছে থাক।”
সামিয়া মাথা নাড়ালো। জারা সিমি কে রেখে নিচে গেলো। জারা নিচে নামতেই দেখলো তার আম্মু,মেজো আম্মু,ছোট আম্মু, মিহু, পিহু, ভাই রা সবাই কান্না করছে। জারা বুজলো নাহ বিষয়টা তাই সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই পরিচিত মুখ দেখলো। খুশি হলেও যেন হতে পারছেনা। কারণ তার জান ভয় পেয়ে আছে কষ্ট পাচ্ছে সে কিভাবেই বা খুশি হবে। পরিচিত মুখের সাথে আরো কিছু পরিচিত মুখ দেখলো সে। জারা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা। দৌড়ে নিচে গেলো। নিশান জারা কে দেখেই কাছে ডাকলো, জারা গেলো নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো :
— “জারা..?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জারা মাথা নাড়ালো দশ বছর পরে ভাই কে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। সবার কান্না দেখে নিশান বিরক্তি কণ্ঠে বললো :
— “উপস তোমরা থামবে? বাড়ি টাকে তো মরা বাড়ি বানিয়ে দিলে সবাই। এমন করলে আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি এই বাসা থেকে! আমি জাস্ট বোর হয়ে যাচ্ছি।”
নিশান এর এমন গম্ভীরতা শুনে সবাই চোখের পানি মুছলো। তাজউদ্দিন কিছু বলবে তখনি তার বউ সেলিনা চৌধুরী তাজউদ্দিন এর হাত ধরে ফিসফিস করে বললো :
— “শান্ত হোন আপনি, আগের বার আপনার কথার জন্য আমার সোনার টুকরো ছেলে দেশ ছেড়ে ছিলো। দশ টা বছর পরে সে বাড়িতে আসছে, আল্লাহর দোহাই লাগে ছেলে কে আর বিদেশে পাঠাবেন নাহ।”
তাজউদ্দিন চুপ রইলো। এইদিকে নিশান এর সাথে চৌধুরী বাড়ির তিন ভাই এর একমাত্র বোন মেহেরিমা শেখ। সাথে বড়ো ছেলে জিহান শেখ। আর মেয়ে মেহেরিন শেখ রাত্রি কে নিয়ে এসেছে।তারা একেবারে এইখানে চলে এসেছে। তার স্বামী রুবেল শেখ আর ছোট ছেলে তিহান শেখ এখনো আসে নি। বিজনেস বিষয় গুলো সবকিছু দেশে শিপ্ট করতে এখনো পাঁচ দিন সময় লাগবে। তাদের আসতে এখনো এক সপ্তাহ। নিশান বাড়ি ফেরায় যত তা নাহ খুশি হয়েছে তার থেকে বেশি খুশি হয়েছে সবাই মেহেরিমা কে বাড়ি ফিরতে দেখে। এইদিকে নিশান এর এমন কথায় মেহেরিমা নিশান কে ধমক দিয়ে বললো :
— “নিশান কেমন ব্যাবহার এইটা তোমার? এইখানে সবাই ক্লান্ত, তুমি একা নাহ, সবারই বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। তুমি দীর্ঘ দশ বছর পরে দেশে ফিরেছো আবেগ আপ্লুত হয়ে গেছে তোমাকে দেখে। তাই বলে এমন ব্যাবহার করবে? এইটা আমি আশা করি নি।”
মেহেরিমার কথা শুনে নিশান সোজাসুজি জবাব দিলো :
— “আশা কর নি এইবার থেকে করতে শিখো আশা ফুফি। আমি অনেক tired.. আমার রুম টা কোন দিকে বলে দিলে ভালো হতো।”
সেলিনা হাসি মুখে ছেলের কাছে এসে বললো :
— “তোমার রুম আগে যেইটা ছিলো সেইটাই এখনো আছে আব্বু, তুমি যাও রুমে যাও, আমি সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছি।”
নিশান যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবারো পিছন ঘুরে জিহান এর দিকে তাকিয়ে বললো :
— “এইখানে তোর কোন কাজ নেই? আমার সাথে আয় কুইক।”
বলে নিশান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। জিহান ও গম্ভীর মুখ করে নিশানের সাথে উপরে উঠে গেলো। নিশান চলে যেতেই তাজউদ্দিন মুখ খুললো :
— “এই বেপারোয়া ছেলে কে আমি মানুষ করতে পারলাম নাহ, ভাবলাম ওর ফুফির কাছে থাকলে হয়তো একটু সভ্য হবে, সেই কপাল আমার নেই।”
মেহেরিমা কি বলবে নিজের বড়ো ছেলে ও নিশান এর কপিক্যাট কাকে রেখে কাকে বলবে কম শাসন তো সে করে নি। বাড়ির সকলে মেহেরিমা আর রাত্রি কে নিয়ে ড্রইং রুম এর সোফায় বসলো। বাড়ির কর্তা রা গেলো ডাইনিং টেবিলে। দুপুরের খাবার সময় হয়েছে। সেলিনা তাদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে। কর্তা দের খাওয়া শেষ হলে বাড়ির বাকি সদস্য রা খাবে। মেহেরিমা কে খেতে বলা হলে সে বললো পরে খাবে। মেহেরিমা চারিদিকে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছে কিন্তূ পাচ্ছে নাহ। তাই সে তার মেজো ভাই এর বউ রোজিনার দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “রোজিনা.!সিমি, সামিয়া এই দুই বাঁদর কোথায়?”
রোজিনা হাসি মুখে জবাব দিলো ;
— “আফা ওরা হয়তো জানেনা, আমি ডাকছি অপেক্ষা কর।”
বলে রোজিনা জারার দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “জারা আম্মু যা তো দুটো কে ডেকে আন।”
জারা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। উপরে। ছোট্ট মিহু রাত্রি কে উদ্দেশ্য করে বললো ;
— ” রাত্রি আপু, আমি মিহু। ”
রাত্রি — “ইয়ে পিহু সোনা কেমন আছো?”
মিহু — “ভালো আপু, আচ্ছা আপু তুমিও কি সিমি আপুনি, সামু আপুনি আর জারা আপুনির মতো আমার সাথে খেলা করবে? মজা করবে?”
রাত্রি মিহুর মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো ;
— “অবশ্যই সোনা, তবে তোমার আপুনি গুলো যদি তাঁদের দলে আমাকে নেই, তাহলে তোমার সাথে খেলা করে ফাটিয়ে দিবো।”
মিহু — “নেবে নাহ মানে, নাহ নিলে আমি আর তুমি মিশনে নামবো ঠিক আছে?”
রাত্রি হাসলো তারপর মাথা নাড়ালো। মিহু টুকটাক প্রশ্ন করতে লাগলো রাত্রির কাছ থেকে। রাত্রি ও মিহুর সাথে হেসে হেসে সব কথার উত্তর দিতে লাগলো।
— “রোজিনার বাচ্চা সিমি, সামু রামু আপনারা নিচে চলেন ফুফি ডাকছে।”
জারার কথা শুনে সিমি আর সামিয়া অবাক হলো। ফুফি ডাকে মানে?
জারা ওদের অবাক হতে দেখে বললো ;.
— “ফুফি আসছে।”
তারপর সিমির দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “চিন্তা নেই রোজিনার বাচ্চা সিমি আমার ভাইয়া এখন নিজের রুমে আছে আপাতত রুম থেকে বাহির হবে নাহ।”
সিমি যেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। উঠে দাঁড়ালো ওদের দুজনের উদ্দেশ্য বললো ;
— “সামু, জারা দ্রুত চল, ফুফি কে হয়তো দুনিয়ায় আসার পরে এই ১৯ বছরে এইবার সামনাসামনি দেখবো আয়।”
বলে সিমি দৌড় দিলো। সামিয়া জারা কে বললো ;
— “এই জাওড়া পাখি এই ছেমরি একটু আগে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছিলো এখন 4g গতিতে দৌড় দিলো যে?”
জারা সামিয়ার হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো ;
— “ভাইয়া তো রুমে তাই 1g থেকে 4g হয়ে গেছে আরকি।”
সামিয়া হাসলো। দুইজনে নিচে নামলো। নামতে দেখলো। সিমি তার ফুফি কে জড়িয়ে ধরেছে। সামিয়া আর জারা গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালো। সামিয়া জারা কে ফিসফিস করে বললো ;
— “এই জাওড়া পাখি শোন, ঐযে মেয়েটা বসে আছে ওইটা কি ফুফির মেয়ে নাকি?”
জারা — “ইয়া মেরি রামু সামু ঐটা ফুফির মেয়ে।”
সামিয়া কিছু বললো নাহ। এইদিকে সিমি বলে উঠলো :
— “এই ১৯ বছর বয়সে তোমাকে এই প্রথম দেখলাম ফুফি, আর যাই বলো তোমাকে আর যেতে দেবো নাহ আমি হুম।”
মেহেরিম হেসে বললো ;
— “আরে আমার সোনা পাখি, আমি যাবো নাহ আর একবারে এইখানে সেটেল হয়ে যাবো।”
এইদিকে সামিয়া আর জারা একসাথে বলে উঠলো ;
— “সিমি ই হলো আসল ভাইজি আমরা তো কেউ নাহ তাই আমাদের আদর করে নাহ।”
মেহেরিম ওদের কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো। তাদের কাছে গিয়ে দুইজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে বললো ;
— “পাগলী মেয়ে, একে একে আদর করবো তো নাকি?”
কিয়া চৌধুরী বলে উঠলো ;
— “মামুনিরা তোমরা খেতে বসো।”
সিমি — “ছোট আম্মু এখন খাওয়ার ইচ্ছা নেই আমার, পরে খাবো।”
সিমির কথা শুনে সালাউদ্দিন বললো :
— “আবারো অনিয়ম শুরু নাকি তোমার?”
সিমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো ;
— “নাহ আব্বু আমার এখন খিদে নেই তাই খাবো নাহ, তবে প্রমিস একটু পরে খেয়ে নিবো।”
সালাউদ্দিন আর কিছু বললো নাহ। তিন ভাই তাজউদ্দিন, সালাউদ্দিন আর জামালউদ্দিন নিজেদের কাজে বেড়িয়ে পড়লো। মেহেরিম রাত্রি কে বললো ;
— “রাত্রি তুমি খাবে নাহ?”
রাত্রি — “না আম্মু।”
মেহেরিম — “আচ্ছা তাহলে সিমিদের সাথে থাকো।”
বলে মেহেরিম চলে গেলো খাবার টেবিলে। সাথে সেলিনা, রোজিনা, কিয়া, পিহু, মিহু আর তাজ। খেতে বসলো। এইদিকে রাত্রি সিমিদের কাছে আসলো। এসে বললো :
— “আমার নাম মেহেরিন শেখ রাত্রি। আমি কি তোমাদের ফ্রেড হতে পারি?”
সামিয়া বললো ;
— “অবশ্যই তবে কিছু শর্ত আছে পূরণ করতে হবে?”
রাত্রি ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো –
— “কি শর্ত?”
জারা — “বেয়াদবের দল এইখানে নাহ রুমে চল।”
জারার কথা মতো সবাই উপরে সিমির রুমে গেলো। দরজা লক করে দিলো। সবাই বেডে বসলো গোল হয়ে। জারা এইবার রাত্রি কে উদ্দেশ্য করে বললো ;
— “শর্ত নাম্বার এক, আমাদের বন্ধুত্ব মানে তুই কোনরকম তুমি আমি আপনি এইসব not not মানে এলাও করবো নাহ অনলি তুই ঠিকাছে?”
রাত্রি মাথা নাড়লো। সামিয়া বললো ;
— “দ্বিতীয় রুলস আমরা যাকে যেই নাম ধরে ডাকতে বলবো তাকে সেই নামেই ডাকতে হবে? মানে আমাদের বান্ধবীদের মধ্যেই। ”
রাত্রি হেসে মাথা নাড়লো। সিমি বললো ;
— “হেসো নাহ মেয়ে এইভাবে, তোমার হাসিতে মুই ফেঁসে যাই ক্ষনে ক্ষনে।”
সিমির কথা শুনে জারা বললো ;
— “রোজিনার বাচ্চা সিমি ফাঁসার কথা ছেলেদের হাসিতে আর তুই গরু মেয়েদের হাসি তে ফিদা ছে।”
জারার কথা শুনে রাত্রি জোরে হেসে দিলো। সামিয়া বললো ;
— “এইগুলো আমাদের মধ্যে কমন বিষয় তুমি থাকো দুইদিন শিখে যাবে। সবকিছু যাইহোক পরিচয় করিয়ে দেই।”
রাত্রি মাথা নাড়লো। সিমি প্রথমে বললো ;
— “আমার নাম ঈশিতা জাহান সিমি।”
জারা ততক্ষণাক বললো ;
— “কিন্তূ তাকে এই নামে ডাকা যাবে নাহ রোজিনার বাচ্চা সিমি তাকে এই নামে ডাকতে হবে ঠিকাছে?”
রাত্রি হাসতে হাসতে মাথা নাড়লো। জারা বললো ;
— “আমার নাম সিনথিয়া ইয়াসমিন জারা।”
সামিয়া বললো ;
— ” উহুম এই নামে নাহ, ওকে জাওড়া পাখি বলে ডাকতে হবে। ”
রাত্রি হাসতে হাসতে বললো ;
— “শেষমেষ জাওড়া পাখি?”
সিমি আর সামিয়া মাথা নাড়লো। সামিয়া বললো ;
— “আমার নাম সামিয়া আক্তার তুলি, আমাকে এই নামে নাহ ডেকে সামু রামু/ শুধু সামু যেইটা ইচ্ছা।”
রাত্রি মাথা নাড়লো। সিমি রাত্রি কে বললো ;
— “তুই তো এইটুকু তে এই অবস্থা করেছিস, আর সারাদিন এই দুটো কুত্তি কানের কাছে ঘেউ ঘেউ করতেই আছে।”
সামিয়া আর জারা একসাথে বললো ;
— “চুপ কর রোজিনার বাচ্চা সিমি।”
সিমি মুখে হাত দিলো। এইদিকে জারা সামিয়া কে বললো ;
— “আচ্ছা সামু এই রাত্রি কে একটা নাম দে আমি রাত্রি বলে ডাকতে পারবোনা।”
সামু একটু ভাবুক হলো তারপর মাথায় একটা নাম আসলো। লাফ দিয়ে বললো ;
— “রাত্রির নাম আজ থেকে রাতের নেশা। উফ অসাধারণ নাম রাতে নেশা ধরিয়ে দিবে রে।”
সামুর কথা শুনে জারা, সিমি, রাত্রি একত্রে হাসলো। সিমি বললো ;
— “ইয়া আমার জান্স তুমি ঠিক বলেছো, রাতের নেশা হতে আমাদের রাত্রি বেবস যথেষ্ট।”
সবাই হাসলো। জারা বললো ;
— “ছাদে যাবো চল।”
সবাই উঠে দাঁড়ালো একত্রে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
— “জিহান তুই এইভাবে গোমড়া মুখু হয়ে বসে আছিস কেন?”
অভির কথাই জিহান বিরক্তি কণ্ঠে জবাব দিলো ;
— “এত গরম জাস্ট আমি অসহ্য হয়ে যাচ্ছি।”
নিশান — “ব্রো ছাদে চল বাতাস আছে, আমিও এই গরম সয্য করতে পারছিনা।”
নিশান এর কথা শুনে আয়ান, অভি আর জিহান এক মত হলো। ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আভিয়ান শিকদার অভি আর আরিহান শিকদার আয়ান দুইজনে জমজ। আর নিশান আর জিহানের বেস্ট ফ্রেন্ড। তারা দুইজন ও এই দশ বছর ধরে ইতালি তে ছিলো পড়াশোনা কমপ্লিট করেছে। দেশে নিজেদের বিজনেস দাঁড় করিয়েছে। আর তারা দুইজন এক সপ্তাহ আগে দেশে এসেছে। নিশান আর জিহানের আসার খবর শুনেই তারা দুইজন ছুটে আসছে। নিশান, জিহান, অভি আর আয়ান। ছাদের বাম সাইট এ ছাদের কার্নিশ এ গিয়ে রেলিং এ হেলাম দিয়ে দাঁড়ালো। আয়ান বললো ;
— “আরে ইয়ার, তোদের গোমড়া মুখ দেখে আমার বমি পাচ্ছে, ইতালি তে যেইভাবে মজা করতাম ঐভাবে করোস নাহ কেন?”
জিহান — “আমি তো গরমে চুপ হয়ে গেছি নিশান ও এক তোরা দুটো বকবক করছিস নাহ কেন?”
অভি — “দাঁড়া তোদের তো একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি।”
নিশান — “বলে ফেলেন আপনার অমূল্য বান কথা গুলো!”
অভি ভাব নিয়ে বললো :
“অমূল্য নাহ সোনা মূল্য। শোন পশুদিন। আমি আর আয়ান শপিং মল এ গিয়েছিলাম সেখানে…”
বাকি কথা বলার আগে আয়ান অভির মুখ চেপে ধরলো বললো ;
— “চুপ কর এইসব কি বলছিস তুই?”
জিহান এসে আয়ান কে সরিয়ে নিয়ে বললো ;
— “কিরে তুই মুখ চেপে ধরলি কেন? নিশ্চই কোন অঘটন ঘটিয়েছিস, অভি বল।”
অভি নিশ্বাস নিলো তারপর বললো ;
— “জানিস তো আয়ান আজ পযন্ত একটা মেয়েকে পটাতে পারলো নাহ। তো শপিং মল এ আমরা কেনা কাটা করে য্খন বিল পরিষধ করছিলাম সেইসময় একটা মেয়েকে দেখি পিছন দিক থেকে সামনে দিয়ে নাহ…!”
শেষ করার আগেই আয়ান বললো ;
— “চুপ কর ভাই আমার এইভাবে পামচার করিস নাহ।”
নিশান — “আয়ানের বাচ্চা তোকে ডাস্টবিন এ ফেলে দিয়ে আসবো চুপ থাক। অভি বল.!”
অভি একটু হেসে বললো ;
— “মেয়েটাকে পিছন দিক দিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। চুলগুলো ঘাড় পযন্ত সিল্কি। আর জামা পড়েছিল হাঁটুর একটু নিচ্ পযন্ত। আয়ান এর সেই মেয়েকে দেখে হার্টবিট বেড়ে গেলো। আমাকে বলছে মেয়েটা সামনের দিক দিয়ে আরো সুন্দর দেখতে তাই নাহ অভি? আমি মাথা নাড়লাম। পরে আয়ান মেয়েটির কাছে যাই। একটু সাহসী প্রণতা দেখাতে মানে হিরো রা যেমন হাত টেনে ধরে ঐরকম করতে চেয়েছিলো। ছুরী দেখে আয়ান পাগল হয়ে গেছে। হাত টেনে ধরলো। ছুরী টা পিছে ঘুরলো আয়ানের দিকে তাকালো।সবে সবে প্রেমের ফুল ফুটছিলো। কিন্তূ ছুরী থেকে একেবারে বুড়ি কে দেখে আমার ভাই টার প্রেমের গোলাপ মরে গেলো।”
অভির কথা শুনে নিশান আর জিহান হেসে উঠলো আয়ান লজ্জায় মাথা নিচু করলো জিহান বললো ;
— “মানে ঐটা ছুরী নাহ বুড়ি?”
অভি মাথা নাড়লো।নিশান আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “ছি তোর থেকে এইটা আশা আমি করিনি দোস্ত, ছুরী পাস নি বলে বুড়ি কে ধরলি।”
আয়ান — “বাল আমি কি জানতাম নাকি যে ঐটা ছুরী নাহ বুড়ি।”
আয়ান এর কথা শুনে ওরা আবারো হাসলো। ওদের হাসার মধ্যেই আরো কয়জনের মেয়েলি হাসির শব্দ শুনতে পেলো তারা। তারা চারজন সিঁড়ির দরজার দিকে তাকালো। দেখলো চারটা মেয়ে হাসতে হাসতে ছাদে আসছে। এর মধ্যে দুটো মেয়েকে সবাই চেনে। রাত্রি জিহানের বোন আর জারা নিশানের বোন। বাকি দুইজন কে চেনে নাহ। আয়ান নিশান কে বললো ;
— “ওই মেয়ে দুটো কে?”
নিশানের সোজাসুজি জবাব ;
— “চিনিনা।”
আয়ান মুখ বাঁকালো তারপর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে রাত্রি কে উদ্দেশ্য করে বললো ;
— “রাত্রি এইখানে আসো তোমরা।”
ছেলের কণ্ঠ শুনে জারা, সিমি, সামু, রাত্রি একসাথে ছাদের বাম সাইট এ দেখলো। চারজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। জারা আর রাত্রি সবাই কে চেনে কিন্তূ সিমি আর সামিয়া এইখানে কাউকে চেনে নাহ। তাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রাত্রি, জারাদের দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “ভাইয়া ডাকে আয়।”
বলে জারা আর রাত্রি একসাথে গেলো পিছু পিছু সামু আর সিমি গেলো। ওরা ঐখানে যেতেই। আয়ান রাত্রি কে বললো ;
— “এইগুলো কি বান্ধবী নাকি?”
রাত্রি — “সম্পর্ক মামাতো বোন, আর তার থেকে বেশি যেইটা বেস্ট ফ্রেন্ড।”
আয়ান অবাক হয়ে বললো ;
— “বাহ্ তোমার তো দেখছি অনেক মামাতো বোন? কিরে জিহান আমাদের তো একবারো বলিস নি যে তোর তিনটা মামাতো বোন।”
জিহান কিছু বললো নাহ চুপ রইলো। এইদিকে নিশান অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। অভি বললো ;
— “তো পরিচয় হলে ভালো হতো?”
রাত্রি হাসি মুখে বললো :
— “অবশ্যই ভাইয়া আমি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।”
রাত্রি, জারা কে দেখিয়ে বললো :
— “এর পরিচয় কি দেবো তোমরা তো জানোই? নিশান ভাই এর বোন।”
সবাই মাথা নাড়লো। রাত্রি এইবার সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো :
— “সামিয়া আক্তার তুলি। সালাউদ্দিন মামার মেয়ে।”
তারপর সিমির দিকে ইশারা করে বললো ;
— “ঈশিতা জাহান সিমি। সালাউদ্দিন মামার ছোট মেয়ে।”
সিমির পরিচয় দিতেই অভি আর আয়ান সিমির দিকে তাকালো।অবাক নয়নে।সিমি তাদের তাকানো দেখে অস্বস্তি ফিল করলো মাথা নামিয়ে সামিয়ার পিছনে লুকিয়ে পড়লো। অভি আর আয়ান একবার নিশান এর দিকে তাকালো তার কোন ভাবান্তর নেই যেন এইখানে কেউ নেই। জিহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এইবার রাত্রি, তার বোন দের দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “এইবারের পরিচয় পর্ব আমি করিয়ে দেই। ”
বলে জিহান এর হাত ধরে বললো ;
— “আমার বড়ো ভাইয়া জিহান শেখ।”
আয়ান আর অভির দিকে ইশারা করে বললো :
— “জিহান ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড আয়ান ভাইয়া আর অভি ভাইয়া।দুইজনে জমজ কিন্তূ দেখতে একদম আলাদা বুজতেই পারছিস।”
জারা, সামিয়া আর সিমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছে। রাত্রি এইবার নিশানের দিকে তাকালো। জারা এসে সিমির হাত ধরলো। রাত্রি বললো :
— “আর ইনি হলেন জারার একমাত্র ভাই নিশান ভাই। আমারো ভাই। তাজউদ্দিন মামার বড়ো ছেলে।”
নিশান ভাই নামটা সিমির কানে যেতেই সে চোখ তুলে নিশান এর দিকে তাকালো। মন মনে ভয় কাজ করছে তাও নিশান এর দিকে তাকিয়ে। এই দশ বছরে নিশান ভাই কত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের নিশান ভাই আর এই নিশান ভাই কোন মিল নেই। আগের নিশান ভাই এর বডি ছিল নাহ তেমন। রোগা ছিল অনেক টা সাথে চুলগুলো ছিলো বড়ো। দেখলেই যেন ভয় লাগত। But এই নিশান ভাই এর বডি ইয়া বড়ো জিম করা। হাত গুলো যেন বেলুনের মতো ফোলা। আর চুলগুলো আগের মতো অতটাও বড়ো নাহ মিডিয়াম। সিমির এইভাবে তাকিয়ে থাকার মধ্যে নিশান সিমির দিকে তাকাতেই দুইজনের চোখাচোখি হলো। সিমি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো। এইদিকে সামিয়া আর জারা সিমি কে ধরে আছে। সিমি ফিসফিস করে বললো ;
— “সামু, জারা আমি নিচে রুমে যাবো। চল আমার সাথে।”
জারা তাদের চার জনের দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “ভাইয়া গণ আপনারা থাকেন আমরা নিচে গেলাম।”
বলে জারা, সামু, সিমি আর রাত্রি নিচে নামলো। এইদিকে নিশান তার নিজের মতো ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। আয়ান ভয়ে ভয়ে নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো ;
— “দোস্ত বিশ্বাস কর, আমি তাকাতে চাই নি কিন্তূ চোখ আমার চলে গিয়েছে। ব্যাপার টা এমন যে কোন কিছু আমি অনেক দিন ধরে দেখার বাহানা করছি কিন্তূ পারছিনা হুট্ করে সামনে আসলে দেখার জন্য পরান টা বেড়িয়ে যাই অমন অবস্থা।”
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১
আয়ানের সাথে সাই দিলো অভি ও। জিহান বললো ;
— “আমার মতো মাথা নিচু করে থাকলেই তো হয়। বোজ ঠেলা ডাকছিলিস তো তুই পরিচয় হবি হয়েছিস?”
তিনজনের কথার মধ্যে নিশান ফোন স্ক্রল করতে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্য বললো ;
— “অবাক হওয়া ভালো but ওভার পজেজিভ অবাক হওয়া i don’t like…!”