তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৫
তাবাস্সুম খাতুন
সকাল সাত টা বেজে পাঁচ মিনিট। অবস্থান টা চৌধুরী ম্যানসন এর ড্রইং রুমে। বাড়ির তিন কর্তা এখন অফিসে যাবে কিন্তূ তাঁদের যেতে দিচ্ছে না। জিহান আটকিয়ে রাখছে। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কি জন্য? বলে একটু অপেক্ষা করতে? এই করতে করতে পুরো দশ মিনিট পাড় হয়ে গেলো। সেখানে হাজির হলো বাড়ির তিন গিন্নি সাথে জিহানের বাবা মা। তিহান, জারা, সামিয়া, রাত্রি, পিহু, মিহু, তাজ। এখন শুধু সিমি আর নিশানের আশা বাকি। সবাই সোফায় বসে আছে। জারারা সোফার পাশে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে। তাজউদ্দিন এইবার বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“সমস্যা টা কি তোমার?এইভাবে কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে নাকি?”
জিহান উপরের দিকে তাকালো নিশানের আশার খোঁজ নেই। তাই সে নিজেই বললো,,,
“Just 1 minit…!”
এর মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে নিশান নেমে এলো। নিশান কে আসতে দেখে সবাই তার দিকে তাকালো। নিশান এসে সোজা সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়লো। সিমি ও এসে জারা দের কাছে দাঁড়ালো। মেহেরিমা এইবার বললো,,,
“যার অপেক্ষা করছিলে সে আসছে। তো এইবার কি বলার বলে ফেলো?”
জিহান নিশানের দিকে তাকালো নিশান কিছু বললো না। জিহান সরাসরি সালাউদ্দিন কে উদ্দেশ্য করে বললো,,,
“মেজো মামা আমি আপনার মেয়ে সামিয়া কে বিয়ে করতে চাই। ভালোই ভালোই বিয়ে দিলে ভালো। বেশি তেড়ামি করলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জিহানের এমন কথা শুনে বাড়ির প্রতিটা মানুষ অবাক। এইদিকে সামিয়ার তো হিচকি উঠে গেছে। ও হিচকি তুলতে তুলতে সিমি কে ফিসফিস করে বললো,,,
“সিমি জবেদার ভাতার জবেদা কে বিয়ে না করে আমাকে কেন বিয়ে করার কথা বলছে? ”
সিমি সামিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,,
“সব জায়গায় জবেদা থাকে না সামু। ধৈর্য ধর।”
সিমির কথার মানে সামিয়া কিছু বুজলো না। এইদিকে রুবেল বললো,,,
“জিহান এইটা কেমন ব্যাবহার তোমার?”
জিহান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কেমন ব্যবহার বিয়ে করবো তাই মেয়ে চাচ্ছি।”
তাজউদ্দিন গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“তুমি মেয়ে চাইবে আর আমরা দেবই বা কেন?”
জিহান স্বাভাবিক ভাবে বললো,,,
“কারণ আমি ওকে বিয়ে করতে চাই সেইজন্য।”
তাজউদ্দিন — “হ্যা তো বিয়ে করতে চাও কেন?”
জিহান কপাল কুঁচকে বললো,,,
“আশ্চর্য কথাবাত্রা আপনারা বিয়ে করেছেন কেন? চির কুমার থাকতে পারতেন নিজেরা বউ নিয়ে সব করতে পারবেন। আর আমি বিয়ে করতে গেলে কেন বিয়ে করতে চাই সেইটা বলতে হবে অসাধারণ।”
জিহানের কথা শুনে সিমি বিড়বিড় করলো,,,
“শালা একটাও ভালো না দুইটার মুখের লাগাম একদম আকাশে বাতাসে উড়ে বেড়ায়।”
এইদিকে তাজউদ্দিন সব সবাই মুখ গম্ভীর করে নিলো। মেহেরিমা রাগানিত্ব কণ্ঠে বললো,,,
“এইটা কেমন কথা তোমার?”
জিহান — “যেমন প্রশ্ন করছেন? সেইরকম উত্তর দিচ্ছি।”
মেহেরিমা — “আমি সামিয়ার সাথে তোমার বিয়ে দেবো না। কালকে তো তাড়িয়ে দিয়েছিলে তাই আজকে আমার মত ও ঘুরে গেছে বিয়ে দেবো না।”
জিহান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,,
“কবুল বলবো আমি, বিয়ে করবো আমি, বাসর করবো ও আমি, বাচ্চার বাপ ও হবো আমি। তো আপনাদের এত সমস্যা হচ্ছে কেন? দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিলে দ্রুত বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবে।”
জিহানের কথাই অটোমেটিকলি সবার কাশি উঠে যাচ্ছে। তাজউদ্দিন বললো,,,
“দুই ভাই মেয়াদ উত্তীর্ণ গাঁজা খেয়েছো নাকি? কি ভাষা তোমাদের বিদেশের মাটিতে এইসব শিখেছো? কোন বিয়ে হবে না। বেড়িয়ে যাও বাড়ি থেকে।”
জিহান — “বিয়ে হবে কিনা হবে না সেইটা আমিই ডিসিশন করবো বড়ো মামা। বিয়ে টা আমি করবো আপনি না।শুধু সবাইকে বলার কথা বলে দিলাম।”
বলে জিহান কাউকে তৌক্কা না করে সামিয়ার কাছে গেলো। সামিয়া কে কিছু বলার আগেই সামিয়া চিৎকার দিয়ে বললো,,,
“এই মিস্টার আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আমার থেকে দূরে থাকুন।”
জিহান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“পারমিশন চাই নি।”
বলে সামিয়া কে কোলে তুলে নিলো। বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যাচ্ছে জিহানের কাজ দেখে। মেহেরিমা বললো,,,
“জিহান ও তোমাকে বিয়ে করবে না, তো জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছ কেন?”
জিহান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো,,,
“করবে না বলেই তুলে নিয়ে যাচ্ছি বিয়ে করার জন্য।”
বলে জিহান চলে গেলো। এইদিকে সবাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেই গেলো। কেউ কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই লাপাত্তা। নিশান এইবার উঠে দাঁড়ালো। সিমি দৌড়ে নিশানের কাছে এসে বললো,,,
“আমিও বিয়ে দেখতে যাবো আমাকে নিয়ে চলেন।”
নিশান কিছু বললো না হাঁটতে লাগলো বাড়ির সদর দরজার দিকে। সিমিও গেলো হাঁটতে হাঁটতে নিশানের পিছু পিছু। মেহেরিমার রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। এইযে দুটো ছেলে একটা কেউ মানুষ করতে পারলাম না। একজন রাতের আঁধারে বিয়ে করছে আরেকজন দিনের আলোয়। ছি।বলে সে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। রাগ কমছে না কিছুতে। বাড়ির তিন কর্তা সহ রুবেল ওরা আর দাঁড়ালো না। এই ছেলে তাঁদের কথা শুনবে না যা পারে করুক। জারা আর রাত্রি। দুইজনে উপরে গেলো। রুমে ঢুকে বসলো। জারা দুঃখ প্রকাশ করে বললো,,,,
“ওরে রাত সবার বিয়ে হলো শুধু হলো না আমার আর তোর। হাইহাই এইভাবে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে পারে না কেন আমাকে।”
রাত্রি নিজেও দুঃখ প্রকাশ করে বললো,,,,,
“হ্যা রে কেউ একটু এসে এইভাবে হুমকি ধামকি। সাথে আমাকে একটু ধমক দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। টা না কেউ নেই জীবনে জীবনটাই বেদনার।”
জারা — “হ্যা রে। জীবনটাই বেদনার। ইসসস কবে যে করবো বিয়ে টা। সেই আশায় আমি মরে যাবো দেখিস।”
রাত্রি এইবার জারা কে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
“হুম হুম।”
জিহান সামিয়া কে নিয়ে গাড়ির ব্যাক সিট্ এ উঠে বসলো। সামিয়া কে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দুই হাত ধরে রেখেছে জিহান তার ডান হাত দিয়ে। আর বাম হাত দিয়ে কোমর শক্ত করে ধরে আছে। জিহান মোচড়া মুচরি করতে করতে বললো,,,
“এই জবেদার ভাতার আমাকে এইভাবে কোলে নিয়েছেন কেন? নামিয়ে দেন বলছি।”
জিহান আরো শক্ত করে কোমরে চাপ দিলো। সামিয়া ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। জিহান বললো,,,,
“মিস ক্যারক্যারানি বেশি তিড়িং বিড়িং করলে বিয়ের পরে যেইটা করার কথা সেইটা এখন করে ফেলবো। So চুপচাপ বসে থাকো।”
সামিয়া রাগে ফুসতে ফুসতে জিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মধ্যে নিশান আর সিমি উঠে বসলো। সিমি একবার পিছে ঘুরে এই অবস্থা দেখে মুখে হাত দিয়ে হাসলো। যা সামিয়ার চোখ আড়ালো না। সামিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“শালী তুই হাসছিস? তোকে যে কি করবো আমি। শুধু আটকা পড়েছি বলে এখনো হাসছিস ছাড়া থাকলে কান্না করতিস।”
সিমি কিছু বললো না চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। সামিয়া জিহানের মুখের দিকে আবারো তাকাতেই জিহান বলে উঠলো,,,
“বারবার এইভাবে আমাকে দেখে সিডিউস কর না মেয়ে। পরে সামলাতে কষ্ট হবে।”
জিহানের কথা শুনে সামিয়া দ্রুত চোখ নামিয়ে বিড়বিড় করলো,,,
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ আমার চোখের ইজ্জত আছে ভাই তোর তো কোন তাতেই ইজ্জত নেই। ছিঃ।”
অপরদিকে জিহানের বলা কথা শুনে সিমি ফিক করে হেসে দিলো। যা দেখে নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,
“হাসছিস কেন?”
সিমি কোন মতে বললো,,,
“ভাইয়ার দিকে তাকালেই নাকি সিডিউস হয় তাই হাসি লাগছে।”
নিশান — “এতে হাসার কি আছে? ঠিকই তো বলেছে।”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“মানে?”
নিশান স্বাভাবিক ভাবে বললো,,,
“তুই তো আমার আশেপাশে থাকলেই আমি সিডিউস হয়ে পরি। তাকানোর প্রয়োজন ও লাগে না।”
নিশানের কথা শুনে সিমির লজ্জা লাগছে মানে এখনো এই বিদেশি কুত্তা সিডিউস হচ্ছে?জিজ্ঞাসা করবে ও? নাকি না? এমন করতে করতে সিমি ধীরে ধীরে বললো,,,,
“তারমানে আপনি এখনো হচ্ছেন?”
নিশান চোখ বন্ধ করে আবারো তাকিয়ে গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিতে দিতে বললো,,,
“বললে সামলাতে পারবি না। চুপ থাক।”
নিশানের বলা ঘুরাই পেচাই কথা সিমি ভাবতে লাগলো। এর মধ্যে গাড়ি কাজী অফিসে থামলো। নিশান নামলো গাড়ি থেকে। সিমি ও দ্রুত নেমে পড়লো। জিহান সামিয়া কে কোলেই নিয়েই নামলো। সামিয়া বলে উঠলো,,,
“আমার পা আছে আমি হাঁটতে পারি।”
জিহান যেতে যেতে বললো,,,,
“দুঃখিত আপনার পা আমি দেখতে পাই নি।”
সামিয়া অবাক হয়ে গেলো। পা দেখতে পাই নি মানে। এইটার মানে কি বুজালো?সামিয়ার ভাবনার মধ্যে জিহান সামিয়া কে একটা চেয়ারে বসালো। একটু শান্তি অনুভব করতেই অশান্তি হাজির। চেয়ায় টা একদম জিহান নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। ধরতে গেলে সামিয়া কে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। সিমি এইটা দেখে দুঃখ প্রকাশ করে বললো,,,
“এরা কত ভালো কি সুন্দর ভাবে বিয়ে করতে আসছে। আর আমাকে চুরের মতো চুরি করে বিয়ে করতে হয়েছে। তাও থাপ্পড় মেরে মেরে।”
নিশান আর চোখে একবার তাকালো সিমির দিকে। কিছু বললো না। বিয়ের কাজ শুরু হলো। কাজী সবকিছু লেখার পরে সামিয়া কে বললো,,,
“মা কবুল বলো?”
সামিয়া বেঁকে বসে আছে। বলবে না। কাজী আরো দুইবার বললো। বরাবরই সামিয়া চুপ। নিশান এইবার নিজের প্যান্টের পেছন থেকে পিস্তল বাহির করে কাজীর মাথায় রেখে সামিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো,,,
“সময় এক মিনিট তবে ডিসিশন গুরুত্ব কবুল বললে বাঁচবে। আর না বললে মরবে। টাইম স্টার্ট। ”
এইদিকে কাজী ভয়ে কাঁপছে। সামিয়া ও কাঁপছে পিস্তল দেখে সে দ্রুত বললো,,,,
“কবুল কবুল কবুল কবুল।”
নিশান বন্ধুক সরিয়ে নিজের প্যান্টের পিছনে রেখে জিহানের উদ্দেশ্য বললো,,,
“চারবার কবুল বলছে তোর বউ। এইবার তুই বল।”
জিহান নিজেও তিনবার কবুল বললো। এইভাবে ইসলামী শরীয়তে তাঁদের বিয়ে শেষ। আইন ভাবেও তাঁদের বিয়ে সম্পর্ণ। জিহান আবারো সামিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে যেতে গেলে সামিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“বউ তো হয়ে গেছি। তো এইবার নামলে কি হয়?”
জিহান — “প্রথম দিন বউকে আলমারিতে রাখতে হয়। সেইটাই করছি।”
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৪
জিহানের কথা শুনে সামিয়া ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মানে কি বললো এইটা? সে গাড়িতে উঠে বসলো। নিশান আর সিমি ও বসলো। নিশান গাড়ি ঘুরালো গাড়ি চৌধুরী ম্যানশন এর দিকে না গিয়ে সোজা নিশানের গেস্ট হাউস এর দিকে যাচ্ছে। সবাই চুপচাপ রয়েছে কেউ কোন কথা বলছে না। সিমি আপাতত নিশানের ভয়ে কথা বলছে না। ভুল কিছু বললে যদি গুলি করে দেই? আর সামিয়া ওর ইচ্ছে করছে না বলতে কিছু তাই চুপ করেই আছে। গাড়ি চলতে লাগলো। নিজ গন্তব্যর দিকে।