তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৫ (২)
তাবাস্সুম খাতুন
সময় দুপুর একটা বেজে চার মিনিট। নিশানের গেস্ট হাউস এর ড্রইং রুমে বসে আছে। সিমি আর সামিয়া। একটু আগে নিশান আর সামিয়া নিজেদের বউদের এই বাড়িতে রেখে গায়েব হয়ে গেছে। কোথায় গেছে? সেইটা বলেনি। সিমি আর সামিয়া চুপচাপ বসে আছে। সামিয়া যে সিমির উপরে রাগ করছে এইটা সিমি বুজতে পারছে। তাই সিমি সামিয়ার আরো একটু কাছে সরে এসে মিনমিনে সুরে বললো,,,
“সামুরেএএএ।”
সামিয়া বিরক্তি কণ্ঠে জবাব দিলো,,,
“কি সমস্যা?”
সিমি — “কথা বলিস না কেন আমার সাথে?”
সামিয়া সিমির থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,,,
“কে তুই যে তোর সাথে কথা বলবো আমি?”
সিমি সামিয়াকে আবারো জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো,,
“জানুউউ এইভাবে রাগ করিস না। বিশ্বাস কর জিহান ভাইয়া খুব ভালো। সেইজন্যই তো তোর সাথে বিয়ে দিয়েছি রাগ করিস না প্লিজ।”
সামিয়া আবারো বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“আপনি কে যে আমি আপনার উপরে রাগ করবো?”
সিমি এইবার ন্যাকা কান্না করতে করতে বললো,,
“সামু তুই যদি এইরকম করিস আমার সাথে। তাহলে আমার হার্ট স্টোক করবে।”
সামিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“মিস থুরি মিসেস চৌধুরী মানুষের ব্রেন স্টোক হয় হার্ট স্টোক না।”
সিমি হেসে বললো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আসলে আমার হার্ট টা ব্রেন এর মতো কাজ করে। সেইজন্য আমার হার্ট অ্যাটাক না করে স্টোক করে।”
সামিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,,
“মিসেস চৌধুরী আপনার ফালতু বকবকানি রাখেন। আমার পিছু নিবেন না।”
বলে চলে যেতে নিলে। সিমি ও উঠলো। সামিয়ার উড়না ধরে টান দিতেই সামিয়া বলে উঠলো,,,,
“আঁচল ধরে টান দিও না লাজে মরে যাই,
প্রথম রাতে তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাই।”
সিমিও গেয়ে উঠলো,,
“ওও সুখের পরশ দিব তোমায় থেকো না দূরে,
শান্তি খুঁজে পাবে আমার, প্রেমের আদরে।”
সিমির গান শেষ হতেই হুট্ করে নিশান বলে উঠলো,,,
“স্টুপিড কি করছিস তুই?”
সামিয়া আর সিমি একসাথে চমকে উঠে তাকালো সদর দরজার কাছে। দেখলো নিশান আর জিহান দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের দিকে ভ্রু কুঁচকে। সিমি দ্রুত সামিয়ার উড়না ছেড়ে দিলো।মনে মনে ভাবছে শুনে ফেললো নাকি? জিহান নিশান কে বললো,,
“কি ভাই আমার বউ কে তোর বউ কিভাবে প্রেমের আদর দেবে?”
নিশান জিহানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“নিজের বউ কে সামলা। নয়তো।”
জিহান নিশান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোজা সামিয়ার কাছে গেলো। সামিয়া কে কিছু বলতে না দিয়ে জিহান সামিয়া কে পাঁজা কোলে তুলে উপরের দিকে হাঁটতে লাগলো। সোজা রুমে নিয়ে গেলো। এইদিকে সিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিশান সিমির কাছে আসলো গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“কি করছিলিস?”
সিমি মিনমিনে সুরে বললো,,,
“ইয়ে মানে গান গাচ্ছিলাম।”
নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,
“কোন স্টাইলের গান এইটা?”
সিমি — “খাঁটি বাংলা ভাষায় বাসর রাতের গান।”
নিশান একই ভাবেই বললো,,,
“বাসর রাতের গান এইটা?”
সিমি নিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“হ্যা কেন আপনি জানেন নাহ?”
নিশান সিমির হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,,,
“আমি যেইটা জানি সেইটা তোকে শুনাবো।”
বলে নিশান সিমি কে নিয়ে নিজের রুমে গেল। রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। সিমি বেডে গিয়ে বসলো। নিশান নিজের শার্ট খুলে ফেলে দিলো। ঘাড় এইপাসে ঐপাশে করে সিমির দিকে এগিয়ে গেলো। সিমি নিশানের প্রসস্ত বুকের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিললো। নিশান এগিয়ে সিমির কাছে আসলো। সিমি বেডে পিছাতে পিছাতে একদম সাইট এ চলে গেলো। নিশান সিমির কাছে আসতে আসতে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“পিচাচ্ছিস কেন এইভাবে?”
সিমি যেমন তেমন করে বললো,,,
“এমনি আপনি এগিয়ে আসছেন কেন?”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,,
“তোর সন্নিকটে আশার জন্য।”
সিমি চোখ বন্ধ করে অজান্তে বলে ফেললো,,
“আমার এইসব ভালো লাগে না।”
নিশান সিমির কাছে এসে সিমির একদম মুখের কাছে আসলো এত কাছাকাছি যেইখানে তাঁদের দুইজনের নিশ্বাস একে ওপরের উপরে উপচে পড়ছে। নিশান হাঁস্কি টোনে বললো,,,
“ভালো লাগলেও আমাকে সয্য করতে হবে। ভালো না লাগলেও আমাকে সয্য করতে হবে জানবাচ্চা।”
বলে সিমির মুখের দুইপাশে হাত দিয়ে সিমির কোমল ঠোঁট জোড়া টে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো। সিমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে। সিমির রেসপন্স না পেয়ে নিশান সিমির ঠোঁটে কামড় দিলো। তাও সিমি কোন রেসপন্স দিলো না। নিশান পাঁচ মিনিট পরে সিমিকে ছেড়ে দিয়ে সিমির উড়না টা নিয়ে ফেলে দিলো বেডের ঐপাশে। সিমি একটু সরে গিয়ে বললো,,,
“দেখেন আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন, আমি আপনাকে ঘৃণা করি।”
নিশান বাঁকা হেসে গান ধরলো,,,
“Monday, Tuesday, Wednesday,
Thursday, Friday, Sunday, Monday,
Tuesday,Wednesday,Thursday,
Friday,seven day’s a week,
Every hour, every minit, every second,
You know night aftar night
I ‘LL be fuckin’ you right
Saven day’s a week…..”
বলে সিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। সিমি কে নিজের কাছে আনলো নিজের কোলে বসিয়ে সিমির গলায় মুখ বসালো। ঘাড়ে বাইট করলো। মুখে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে তারা আরো গভীরে যেতে লাগলো। সমুদ্রের অতল সাগরে ডুব দিলো। যেই সাগরে ডুব দিলে তারা ডুবে যাবে না। ভালোবাসায় ভেসে থাকবে।
জিহান সামিয়া কে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে বেডের উপরে নামিয়ে দিলো। সামিয়া খিটখিটে ভাবে বললো,,,
“সমস্যা কি আপনার? প্রতিবার কোলে কি জন্য নেন? আমার কি পা নেই? আমি কি হাঁটতে পারি না?”
জিহান দরজা লক করে বললো,,,
“আমি চাই না আমার বউ কষ্ট করে হাঁটুক।”
বলে সামিয়ার দিকে আসতেই সামিয়া চিৎকার দিয়ে বললো,,,
“আপনি দরজা লক করলেন কেন?”
জিহান সোজা ভাবে উত্তর দিলো,,,
“বউ এর সাথে রোমান্স করার জন্য।”
সামিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,,,
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ তওবা তওবা জবেদায় ভাতার রোমান্স করতে পারবেনা জবেদা ছাড়া। আমি জবেদা কে আনতে যাচ্ছি।”
বলে সামিয়া উঠে যেতে নিলেই জিহান সামিয়ার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাঁস্কি টোনে বললো,,,
“জবেদা তা তো তুমি নিজেই বেবি। কাম অন বিয়ে করেছি তিন ঘন্টা বা তার বেশি হয়েছে। এখনো একটা কিস করতে পারলাম না। I need deeply kiss…!”
বলে সামিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকাতেই সামিয়া নিজের ঠোঁটে দুই হাত দিয়ে বললো,,,
“এই জবেদার ভাতার। আমার ঠোঁট কে ছুঁয়ে দেখলে তুই অপবিত্র হবি। So দূরে থাক।”
জিহান নিজের এক হাত দিয়ে সামিয়ার দুই হাত সরিয়ে ধরে আর এক হাত দিয়ে কোমর ধরে সামিয়ার ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে গেলো। সামিয়া মাথা এইদিকে ওইদিকে নাড়াতে লাগলো। আবাল তাবাল বকতে লাগলো। এইদিকে জিহান সামিয়ার ঠোঁট নিজের ঠোঁট দ্বারা স্পর্শ করতেই সামিয়া সাথে সাথে জিহানের বুকে ঢলে পরে। জিহান সামিয়ার এমন অবস্থা দেখে ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সে তো কিছু করি নি? সামান্য ঠোঁট ছুঁয়েছে কিস ও করে নি।তাতেই এই মেয়ে কিনা অজ্ঞান। কিস করলে কি করতো। আল্লাহ এখন কি হবে সবাই বলবে ছিঃ ছিঃ। জিহান নিজের উপরে নিজেই ধিক্কার জানাচ্ছে। সামিয়া কে কোলে তুলে বেডে শুয়ে দিলো। সামিয়ার হাত দুটো মালিশ করলো। পায়ের তলা মালিশ করলো। মুখে পানির ছিটা দিলো। কিন্তূ সামিয়ার জ্ঞান ফিরছে না। সে চিন্তিত কি করবে এখন? নিশান নাহয় কিছু না but সিমি জানলে কি হবে। এইগুলো ভেবেই জিহানের রাগ হচ্ছে। একি আসলে মেয়ে নাকি অন্যে কিছু। শালা সামান্য চুমু খেতে যেই গেসে অমনি বউ আমার অজ্ঞান। শালার কপাল।
বলে সামিয়ার মাথার কাছে চুপচাপ বসে রইলো। আপাতত জ্ঞান কখন আসে এইটাই দেখার পালা।
বিকাল চারটা বাজে। মাত্র চৌধুরী ম্যানশন এ প্রবেশ করলো মিষ্টি। মিষ্টি কে দেখে কেউ কোন কথা বললো না। মিষ্টি সোজা নিজের খালাআম্মুর রুমে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখলো সেলিনা বসে কাপড় ভাজ করছে। মিষ্টি গিয়ে বললো,,,
“খালাআম্মু কেমন আছো?”
সেলিনা উঠে দাঁড়িয়ে মিষ্টি কে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
“মিষ্টি মামুনি আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস?”
মিষ্টি পাংশুতে মুখে বললো,,,
“আপাতত ভালো না। যাকে চাইলাম তাকে পেলাম না।”
সেলিনা মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
“একবার ব্যার্থ হয়েছি বলে এই না যে প্রতিবার আমরা ব্যার্থ হবো। কথাই আছে না একবার না পারিলে দেখ শত বার।”
মিষ্টি মলিন হেসে বললো,,,
“চেষ্টা করেও যদি না পাই।”
সেলিনাr নিজের ও মন খারাপ হলো তাও সে ভরসা দিয়ে বললো,,,
“আমি আছি তো নিশ্চই আমরা পারবো। আমি আমার ছেলে কে তোর আঁচলেই বাঁধবো।”
মিষ্টি কিছু বললো না। সেলিনা মিষ্টি কে বেডে বসিয়ে এইটা সেইটা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। দুইজনে গল্প করতে লাগলো।
বিকাল সাড়ে চারটা বাজে সামিয়ার জ্ঞান এখনো ফেরে নি। এইদিকে নিশান আগে রুম থেকে বেড়িয়ে জিহান এর নাম্বারে কল লাগালো। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো। নিশান কিছু বলবে জিহান এর মধ্যে অসহায় কণ্ঠে বললো,,,
“ভাই হেল্প কর আমাকে। বউ কে চুমু খেতে গিয়েছি তো বউ আমার অজ্ঞান হয়ে গেছে জ্ঞান ফেরে না এখনো।”
নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কিহ? অজ্ঞান হয়ে গেছে?”
জিহান — “হুম একটু রুমে আয়।”
বলে জিহান কল কেটে দিলো। নিশান জিহানের রুমের দিকে গেলো। এইদিকে সিমি অজ্ঞান এর কথা শুনে নিশানের পিছু পিছু গেলো। নিশান রুমে ঢুকলো সিমি একপাশে দাঁড়ালো কি বলে সেইটা শোনার জন্য। নিশান কে দেখে জিহান নিশান কে জড়িয়ে ধরতেই নিশান জিহান কে নিজের থেকে সরিয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“ইডিয়েট মেয়েদের মতো এইভাবে গায়ে পড়বি না। দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলবি।”
জিহান একটু দূরে থেকেই বললো,,,
“বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে!”
নিশান স্বাভাবিক ভাবে বললো,,
“কি করেছিলিস তুই?”
জিহান গলায় হাত দিয়ে বললো,,
“কসম কেটে বলছি ভাই কিছু করি নি। সামান্য শুধু ঠোঁট ছুঁয়েছি তাতেই বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
নিশান সামিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর জিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“তোর ঠোঁট এ এলার্জি আছে সেইজন্য তোর বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
নিশানের কথা শুনে জিহান চোখ বড়ো বড়ো করে নিলো। এইদিকে সিমি দরজার আড়াল থেকে হাসতে হাসতে বাহির হলো। সিমি কে দেখে জিহান লাফ দিলো। সিমি হাসতে হাসতে বললো,,
“আপনারা যান আমি ওকে জ্ঞানে ফিরাচ্ছি।”
নিশান বেড়িয়ে গেলো।সাথে জিহান ও। সিমি গিয়ে দরজা লক করে দিলো।বেডে এসে সামিয়ার মুখে হাত দিয়ে স্লাইড করতেই সামিয়া লাফ দিয়ে উঠে সিমির হাত ধরে বললো,,,
“শালী এমন করছিস কেন?”
সিমি মুখ চেপে বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৫
“অজ্ঞান হওয়ার নাটক করছিলিস সেই জন্য।”
সামিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,,,
“তো কি করবো ওই জবেদায় ভাতার আমার ঠোঁটে চুমু খাবে। আর আমি কি খেতে দেবো। তাই এইভাবে নাটক করছি। বেডা আমার সামনে বসে ছিলো। ভাই কি কষ্ট যে হলো।”
সিমি হাসতে হাসতে বললো,,,
“আমার টেলেন্টেড বান্ধবী।”
সামিয়া হাসতে হাসতে মাথা নাড়লো।