তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৮

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৮
তাবাস্সুম খাতুন

পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বাড়িতে। এইটা শুনে চৌধুরী বাড়ির ছোট রা বায়না ধরলো তাঁদের শপিং করাতে নিয়ে যেতে হবে। সিমিরাও তাই যাবে। বাড়ির প্রতিটা পুরুষ বিজি কালকে বিজনেস এর জন্যই পার্টি রাখা হয়েছে। বাড়ির মহিলারাও সবাই কাজে ব্যাস্ত এখন তাঁদের নিয়ে যাওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছে না। সবাই রেডি হয়ে ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে। মেহরিমা তাঁদের কাছে আছে। সবাই মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কে নিয়ে যাবে তাঁদের। তবে শপিং আজকে করবেই করবে সে যে করেই হোক না কেন।তাঁদের এমন অবস্থার মধ্যে তিহান বাড়ির ভিতরে ঢুকলো ফোন স্ক্রল করতে করতে। মেহেরিমা তিহান কে দেখে খুশি হয়ে ডাক দিলো,,,

“তিহান।”
তিহান তার আম্মুর কাছে গেলো। মেহরিমা হাসি মুখে বললো,,,
“তোর বোনদের আর ভাইকে একটু শপিং করতে নিয়ে যাও বাবা।”
তিহান সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“আসতে বলো সবাইকে।”

বলে তিহান বাড়ির বাইরে গেলো। তিহানের পিছু পিছু সবাই গেলো। একটা গাড়ির মধ্যে তারা বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। এইদিকে সবাই গল্পে মশগুল আর তিহান নিজের মতো ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। চল্লিশ মিনিটের মধ্যে তারা শপিং মলে পৌঁছালো। সবাই একে একে নেমে আসলো। সিমি সবার উদ্দেশ্য বললো,,,
“একে ওপরের হাত ধরে হাঁটবে। হারিয়ে গেলে না খুঁজেই বাড়িতে যাবো।”
সিমির কথা শুনে পিহু হেসে বললো,,
“সিমি আপু তুমি নিজেই সাবধানে হাঁটা চলা কর। নয়তো আমাদের ভাইয়া এক লাথি মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দেবে।”
পিহুর কথা শুনে সবাই হাসলো সিমি চোখ রাঙিয়ে বললো,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হোপ বেডি। তোর ভাইয়া আমার কিছু করতে পারবে না। এখন ভিতরে চল।”
বলে সবাই ঢুকলো। সামিয়া আর সিমি একসাথে। জারা আর রাত্রি একসাথে। আর তাজ, তিহান, পিহু, মিহু চারজন একসাথে আছে। এইখানে সেখানে ঘুরে শপিং করছে। সিমি ফিসফিস করে সামিয়া কে বললো,,,
“সামু আজকে বিয়ের এক দিন হয়ে গেলো। কেমন অনুভূতি হচ্ছে বল?”
সামিয়া নাক মুখ ছিটকিয়ে বললো,,,,
“অসহ্য – জঘন্য, বাজে অনুভূতি একটা।”
সিমি হেসে বললো,,,,
“বাহ্ তোর অনুভূতি গুলো আমি বাঁধিয়ে রাখবো দেওয়াল এ।”
সামিয়া — “চুপ কর ছেমরি আমি সত্যি অতিষ্ট ওই ছেলেকে নিয়ে।”

সিমি — “আচ্ছা ভাইয়া কে মানছিস না কেন? কি খারাপ আছে ভাইয়ার মধ্যে? ভাইয়া দেখতেও মাশাআল্লাহ। কাজ ও মাশাআল্লাহ। ভদ্রতাও মাশাআল্লাহ। কথা গুলোও মাশাআল্লাহ।”
সামিয়া একটু মন খারাপ করে বললো,,,
“আমি জানি সে কোন দিক থেকেই খারাপ না। বরং আমি তার যোগ্য না সিমি। আমার যা পাওয়ার কথা তার থেকে বেশি পেয়েছি।এইটা পারছিনা সইতে। তার তো আমার হওয়ার কথা ছিলো না।”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,
“কেন তুই যোগ্য না। তুই এইটাই ডিজার্ভ করিস সামু। এইটা তোর কপালে লেখা আছে। তাহলে মানতে বাধ্য হচ্ছিস না কেন?”

সামিয়া ঐভাবেই বললো,,,,
“তুই জানিস আমি একজন ধর্ষতি, ধর্ষিতা দের এত কিছু পাওয়া বেমানান। আমি এইসবের যোগ্য না। তোর ভাই আমার পাশে থাকতে পারে না। আমি তার যোগ্য না।”
সামিয়ার কথা শুনে সিমি ধমক দিয়ে বললো,,,,
“কুত্তি চুপ করবি তুই? তুই ধর্ষিতা এতে তোর দোষ কোথায় আছে? দোষ তো ওই কাপুরুষ দের। তুই তো নিষ্পাপ এক ফুল। তুই কলঙ্কিত না। আর না ধর্ষিতা।”
সামিয়া বসলো বেঞ্চের উপরে। সিমিও বসলো সামিয়া ঠোঁট চেপে ধরলো কান্না আটকাচ্ছে। কিছুক্ষন পরে বললো,,,
“আমি ধর্ষিতা সে তো এইটা জানে না সিমি। সে য্খন জানবে তখন তো আমাকে অবহেলা করবে। তাহলে যোগ্য তো আমি ওর কখনোই হবো না।”
সামিয়ার কাঁধে হাত রেখে সিমি বললো,,,,

“সামু জিহান ভাইয়া সব জানে। তুই ধর্ষিতা সে জানে। সবকিছু জেনেই বিয়ে করেছে তোকে। আমি চাই না আমার বোন কষ্ট পাবে পরবর্তী তে এইসব বিষয় জানতে পারলে। তাইতো বিয়ের আগেই সবকিছু বলে দিয়েছি। জিহান ভাইয়া ভাবছিলো কিছু সময় তারপর তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো নিজের সম্মতি তে। কোন উদ্দেশ্য নেই ভাইয়ার।”
সিমির কথা শুনে সামিয়া সিমির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
“কিহ!”
সিমি মাথা নাড়লো সামিয়া সিমির মাথায় চাটি মেরে বললো,,,

“কুত্তি তুই কেন ওকে আমার সব কথা বলেছিস? বল আর কি কি বলেছিস?”
সিমি মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো সামিয়ার হাত টেনে ধরে বললো,,,
“ম্যাম চলেন শপিং করবো। আর বকবকানি হবে না।”
বলে সামিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো শপিং করার জন্য। দুইজনে এইটা সেইটা বিষয়ে কথা বলছে। তাঁদের এইভাবে হাঁটার মধ্যে। একটা হুডি পড়া লোক এসে সিমিকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে নিজের মতো যেতে লাগলো। সিমির পায়ে ব্যাথা লাগছে। সে পায়ে হাত দিয়ে লোকটা কে বলে উঠলো,,,
“এই কালা হুডি পড়া লোক। সমস্যা কি আপনার? এইভাবে ফেলে দিলেন কেন?”
লোকটার পা থেমে গেলো সে সিমির দিকে তাকালো। হুডি পড়া আছে বলে লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সামিয়া সিমি কে ধরে দার করালো। সিমি আবারো বললো,,,,

“চোখ নেই নাকি আপনার? ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। অসভ্য আমার পায়ে ব্যাথা লাগছে। এই ব্যাথা কে ভোগ করবে?”
লোকটা ঘাড় কাত করে সিমির দিকে একপলক তাকিয়ে হুডির ভিতরেই বাঁকা হাসলো। তারপর নিজের মতো চলে গেলো। লোকটার পিছু পিছু কালো পোশাকধারী পাঁচ ছয়টা লোক ও চলে গেলো। সিমি আর সামিয়া ঐদিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ওরা যেতেই সামিয়া বললো,,,,
“মনে হয় কোন বিজনেস ম্যান হবে।”
সিমিও মাথা নাড়লো বললো,,,
“বিজনেস ম্যান হলেও, এমন ছেচড়ামো জুত ভালো না সামু।”
সামিয়া কিছু না বলে বললো,,,

“তোর আর কিছু কিনতে হবে না। চল গাড়িতে উঠে বসি।”
সিমি ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,,,
“হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।”
সামিয়া — “আমি তোর জামাই না। যে তোকে এখন কোলে করে নিয়ে যাবো। হেঁটে চল বইন।”
বলে সামিয়া সিমির বাহু ধরে আস্তে আস্তে তাকে নিচে নিয়ে গেলো। সোজা নিজেদের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।সিমির পা প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। সে সামিয়ার কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে রইলো।

রাত দশটা বেজে পাঁচ মিনিট।হুট্ করে সিমির ঘুম ভেঙে গেলো। অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। গা ঘেমে যাচ্ছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। চোখ বন্ধ করে নিজেকে ঠান্ডা করলাম।হয়তো কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো।কিছুক্ষন পরে উঠে বসলো।
(সিমি তখন গাড়ির ভিতরে ঘুমিয়ে গেছিলো। তারা বাড়ি ফেরার পরে। নিশান কে ডাক দেওয়া হয়েছিল। আর নিশান সিমি কে কোলে করে রুমে আনছিল। সেই ঘুমিয়ে ছিলো। এখন ঘুম ভাঙলো।)
সোফার দিকে চোখ যেতে দেখলো নিশান এখনো ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। সিমি কিছু না বলে বেড থেকে নিচে নেমে হাঁটতে যেতেই উফফ বলে বেডে বসে পড়লো। নিশান দ্রুত ল্যাপটপ রেখে সিমির কাছে আসলো ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,,,

“কি হয়েছে?”
সিমি মিনমিনে সুরে বললো,,,,
“পায়ে ব্যাথা লাগছে।”
নিশান — “ব্যাথা পেলি কিভাবে?”
সিমি — “পরে গিয়ে।”
নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“চোখ জোড়া কি আলমারিতে রেখে গেছিলিস? ”
সিমি কোন উত্তর দিলো না। পা ধরে বসে রইলো ভীষণ ব্যাথা করছে। নিশান হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসলো। সিমির মুচকে যাওয়া পা তা নিজের হাঁটুর উপরে নিলো। সুন্দর ভাবে পা তা ধরে সিমির দিকে তাকিয়ে জোরে মুচড়ে দিলো। সিমি ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। নিশান সিমির পা ফেলে দিয়ে বললো,,,

“হেঁটে দেখ এইবার।”
সিমি চোখ খুললো। পা নামালো ফ্লোরে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো হাটলো। না ব্যাথা আর নেই। সিমি খুশি হয়ে নিশান কে থ্যাংক জানাবে তখনি নিশান সিমিকে বন্ধী করে নেই। সিমিকে বেডে বসিয়ে সিমির দুইপাশে হাত রাখে। সিমির মুখোমুখি এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“কার পারমিশন নিয়ে তুই শপিং করতে গিয়েছিলিস?”
সিমি একটা ঢোক গিলে বললো,,,
“কারোর না। কালকে পার্টি সেইজন্য।”
নিশান — “পার্টি তাতে তোর কি?”
সিমি মাথা নিচু করে বললো,,,,
“পার্টি তে কি করবো সেইটাই কিনতে গিয়েছিলাম।”
নিশান সিমির চুলের মুটি শক্ত করে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বললো,,,
“তোকে পার্টি তে যাওয়ার অনুমতি কি আমি দিয়েছি?”
সিমি — “সবাই তো যা…!”
নিশান সিমির চুলের মুটি আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,,
“সবাই যাবে তাতে তোর কি?”
সিমির চুলে ব্যাথা লাগলো সে চোখ মুখ কুঁচকে বললো,,,
“ব্যাথা লাগছে আমার।”
নিশান — “লাগুক লাগার জন্যই তো ধরেছি।”

সিমির চোখে পানি চিকচিক করছে। নিশান সিমি কে ঐভাবেই ধরে ওয়াশরুম এ নিয়ে গেলো। ওয়াশরুমে ঢুকে বার্থটব এ সিমি কে ফেলে দিলো। সিমির কোমরে ব্যাথা লাগলো। নিশান এইবার কচ টেপ আনলো। সিমির দুই হাত একজায়গায় করে কচ টেপ লাগিয়ে দিলো। পা দুটো এক জায়গায় করে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলো। সিমির মুখেও কচ টেপ লাগিয়ে দিলো। বার্থটবে পানি ভরলাম। ফুল বার্থটব পানি ভরলো। সিমি নড়াচড়া করছে কিন্তূ কিছু করতে পারছেনা। শুধু তার মাথাটা বাহির হয়ে আছে। কান্না আসছে তার। কথা ও বলতে পারছেনা। নিশান একটু ঝুঁকে সিমির মুখোমুখি হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

“আমাকে না বলে, আমার পারমিশন ব্যাতিত শপিং করতে যাওয়ার জন্য। আজকের রাত তুই এইভাবেই কাটাবি। আর কালকে বিকালের আগেই তোকে এই রুমে বন্ধী করবো আমি। আমার পারমিশন ব্যাতিত কেউ খুলবে না এই রুম। আর যদিও খোলে তবে পরপর তিনটা লাশ পরবে। যে খুলবে তার আরেকটা তোর। আরেকটা আমার। Mind it….!”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৭

বলে নিশান সিমিকে ঐভাবে একা রেখে বেড়িয়ে গেলো ওয়াশরুম থেকে। ওয়াশরুম এর বাইরে বেড়িয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম এর লাইট অফ করে। আবারো নিজের মতো কাজ করতে লাগলো।
এইদিকে ওয়াশরুম এর লাইট অফ হতেই সিমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। ভয় লাগছে তার প্রচুর। আর এইভাবে পানির ভিতরে থেকে দেহ যেন অবাস হয়ে আসছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। সে ডাকতেও পারছেনা। তার কষ্ট হচ্ছে খুব। ভয় লাগছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করছে। কেউ এসে যেন তাকে নিয়ে যাক।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here