তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৫

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৫
তাবাস্সুম খাতুন

চৌধুরী বাড়িতে যেন খুশির আমেজে ছেয়ে গেলো। তাজউদ্দিনদের ফোন করে বলা হলে তারা দ্রুত বাড়ি আশার জন্য রওনা দিলো। জিহান বাজার থেকে বড়ো মিষ্টির দোকানে গিয়ে ত্রিশ কেজি মিষ্টি কিনে আনলো বাড়িতে। পনেরো কেজি মিষ্টি নিয়ে চললো মসজিদের উদ্দেশ্য তার সাথে তিহান, তাজ গেলো। এইদিকে সামিয়া, জারা, রাত্রি, মিহু, পিহু সবাই হাতে মিষ্টি নিয়ে আশেপাশে পাড়ার মানুষদের দিতে গেলো। জারা সামিয়ার উদ্দেশ্য বললো,,,

“তোর সু খবর কবে শুনবো সামু?”
সামিয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,,,
“সু খবর একটা নিয়েই থাক, মাস যাক বছর যাক বাড়িতে একজনই বেড়ে উঠুক।”
রাত্রি জারা কেউ বুজতে পারলোনা তাই রাত্রি বললো,,,
“এর মানে কি?”
সামিয়া ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
“তোর ভাইয়া পুরোটাই এলার্জি।”
জারা রাত্রি — “কিহহহ!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হুম তোর ভাই যদি আমাকে টাচ করে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তাই নিশান ভাই বলছে তোর ভাই এলার্জির গোডাউন ধরলেই অজ্ঞান।”
সামিয়ার কথা শুনে সবাই হাসলো রাত্রি বললো,,,
“উফফ ভাবি সেইইইই দিলে তুমি। আমি ভাইয়াকে গিয়ে এইটা বলবো ঠিকাছে।”
“তো বল গিয়া আমি ভয় করি মনে হয়।”
জারা বলে উঠলো,,,
“হয়েছে এইবার চুপ কর, মিষ্টি দে।”
তারা একটা বাড়িতে ঢুকলো ডাক দিলো বাড়ির মানুষকে। সেই বাড়ির বারান্দায় অনেক মহিলাই বসে ছিলো সবাই বেড়িয়ে উঠানে বসলো। সামিয়া হাসি মুখে বললো,,

“একটা বাটি আনেন মিষ্টি দেবো।”
মহিলাটা বাটি আনতে ভিতরে ঢুকলো। বাইরে বসে থাকা এক মহিলা বললো,,,
“কিসের মিষ্টি দিচ্ছ তোমরা?”
জারা হেসে বললো,,,
“আমাদের সিমি মা হতে যাচ্ছে এইজন্য সারা পাড়া মিষ্টি দিতে বেরিয়েছি।”
সিমির প্রেগনেন্টর খবর শুনে মহিলা গুলো মুখ কেমন করলো একজন বললো,,,
“সিমি মাইয়াটার কি বিয়া হয়েছে?”
আরেক জন,,
“বিয়ে না করেই পেট বাঁধাইলো ছিঃ ছিঃ।”
সামিয়া বলে উঠলো,,,,
“আপনাদের কে বললো ও বিয়ে করি নী?”
“করেছে কার লগে করছে?”
জারা — “আমার বড়ো ভাই নিশানের সাথে।”

“ছিঃ ছিঃ ছিঃ চাচতো ভাইয়ের লগে ইটিস পিটিশ করে প্রেম করছে। লজ্জা করেনা বিয়ে করে আবার তার সন্তানের মা হয়তে যাচ্ছে।”
সামিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“লজ্জা করবে কেন? বিয়ে করেই তারপর নিশান ভাইয়ের সন্তানের মা হতে যাচ্ছে।”
“তুমি চুপ কর মাইয়া, তোমার নিজেরই তো কিছু ঠিক নাই ধর্ষণ হয়েছো আবার বড়ো বড়ো কথা কও লজ্জা করে না ধর্ষিতা হয়ে ঘুরে বেড়াও আবার তর্ক কর।”
মহিলাটার কথা শুনে সামিয়ার চোখে পানি ভীড় করলো সত্যিই সে ভুলেই বসেছে সে একজন ধর্ষিতা। তার কাহিনীটা এমন নাহলেও পারতো। জারার রাগ হলো সে বলে উঠলো,,,

“সমস্যা কি আপনাদের মিষ্টি নিলে নেন, নয়তো না নেন অন্যের ব্যাপারে নাক না গলালে কি ভালো লাগে না।”
“তোমাগো মিষ্টি তুমরা খাও। এইসব অবৈধ ভাবে পেট বাঁধানো মেয়ের মিষ্টি খাইতে পারবোনা। ছিঃ ছিঃ এই চৌধুরী বাড়ির প্রতিটা সদস্যই এমন ছিঃ চল দেহি তোরা এদের লগে কথা বলতে গেলেও ঘৃণা আসে।”
বলে চলে যেতে নিলেই একটা মহিলা সামিয়ার কাছে এসে বললো,,,
“তুমি হয়লা এতিম এই বাড়ি ঠাই না দিলে মইরে যাইতে এত কথা কওয়া ভালো না বুজছো মাইয়া। আর ওই বেলজ্জিত সিমি মাইয়াটার মিষ্টি পাড়ায় দিও না সবজায়গায় এমন কথা কয়বে। আস্তাগফিরুল্লাহ ছিঃ ভাইয়ের লগে শুয়ে থাকে।”
বলে যেতে যেতে আবারো বললো,,,

“নাং এর লগে শুলেও মিষ্টি খাওয়া যাই।আর শেষে কিনা ভাই ছিঃ ছিঃ এইসব এখনো যে কি কি কি দেখতে হবে বিশেষ কইরা এই চৌধুরী বাড়ি থেকে আল্লাহ জানে।”
মহিলা গুলোর তিক্ত কথা আর সইতে পারলো না। চার বোনে চোখে পানি নিয়েই দৌড়ে বাড়ির দিকে গেলো। বাড়িতে ঢুকে তারা নিজেদের রুমে যেতে নিলেই তাজউদ্দিন ডাক দিলো মেয়েরা সোফায় বসলো। মেয়েদের চোখে পানি দেখে তাজউদ্দিন প্রশ্ন করলো,,,
“কি হয়েছে আম্মুরা এইভাবে কান্না করছো কেন?”
জারা, রাত্রি, সামিয়া কোন কথা বলছে না ফুফাচ্ছে। পিহু মুখ খুললো। প্রথম থেকে শুরু করে সবকিছু খুলে বললো সামিয়া আর সিমিকে যেইসব খারাপ কথা বলেছে।সবকিছু শুনে তাজউদ্দিনের মাথা গরম হয়ে গেছে সে বলে উঠলো,,,

“বলেছিলাম সুস্থ ভাবে অনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করতে। তাহলে মানুষ এইসব বলার সাহস পেতো না। না রাতে চুরি করে বিয়ে করছে অসভ্য ছেলে। ওর জন্য আমার মেয়েটাও কথা শুনছে ওর কি কোন দোষ?”
সেলিনা তাজউদ্দিনের গায়ে হাত দিয়ে বললো,,,
“চুপ করেন ঠান্ডা হন। ছেলে যদি এইসব শোনে তাহলে বড়ো কিছু হবে নিশ্চিত।”
সেলিনার কথার মধ্যেই জিহান আর নিশান বাড়ি ঢুকলো সেলিনের শেষের কথা শুনে বললো,,,
“কি হয়েছে?”
জারা উঠে তার ভাইয়ের কাছে গেলো কান্না করতে করতে সবকিছু খুলে বললো। সবকিছু শুনে নিশানের রাগে হাতের মুঠি শক্ত করলো। জিহানের ও একই অবস্থা রাগে যেন মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তবুও নিজেকে শান্ত রাখছে নিশান আস্তে করে বললো,,,

“তোর বউকে গিয়ে সামলা বিষয়টা রাতে দেখবো।”
বলে নিশান সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে গেলো। জিহান সামিয়ার কাছে গেলো সামিয়াকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো। সামিয়া কান্না করছে জিহান সামিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
“তুমি কান্না করছো কেন?”
সামিয়া কোন উত্তর দিলো না। জিহান সামিয়ার মুখে হাত দিয়ে বললো,,,
“দেখো ছোট বেলায় তোমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো। তোমার সামনে তোমার বাবা মাকে মেরেছিলো। সবকিছু দেখেও তোমার উপরে এত নির্যাতন হওয়ার পরেও তুমি বেঁচে আছো মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসছো। এইরকম যদি তাঁদের মেয়ের হতো আমি গ্রান্টি দিয়ে বলছি তারা হয়তো মরে যেত। ”
সামিয়া জিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে কথা গুলো সত্যিই। তবে আরেকটা কথা সে তো এতিম? তাই সে বললো,,,

“মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে মন ভালো করলেও একটা কথা তো আর বদলাবে না আমি তো এতিম।”
জিহান মুচকি হাসলো সামিয়ার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,,
“তুমি কি জানো? আমাদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও এতিম ছিলেন!”
সামিয়া মাথা নাড়লো। জিহান আবারো বললো,,,
“মানুষে তো অনেক কথাই বলে। সব কথা যে কানে দিতে হবে এমন তো নয়। তারা যে একটা মানুষকে এইভাবে খারাপ কথা বলছে তাহলে তাঁদের চরিত্র কত ভালো। নিশ্চই ফুলের মতো পবিত্র না যদি পবিত্র হতো তাহলে এইসব খারাপ কথা বলতে পারতো না।”
সামিয়া বললো,,,

“ঠিকই বলেছেন ওদের কথা শুনে আমার কান্না না করে জবাব দেওয়া উচিত ছিলো। সত্যি বোকা আমি।”
জিহান সামিয়ার মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে বললো,,,
“তুমি বোকা হলেও আমার রাজ্যের রানি। কখনো অন্যের কথা শুনে কান্না করবে না। আমি অথবা বাড়িতে কেউ খারাপ কটু কথা বললে তখন কান্না করবে। এছাড়া বাড়তি মানুষের কথা শুনে নয়। আমি জানি আমার বউ খুব সাহসী নিশ্চই এইরকম ভুল আর দ্বিতীয়বার করবে না।”
সামিয়া হাসলো বললো,,,
“যেমন আজ্ঞা আপনার আর কোনসময় এইসব ফালতু লোকের কথা শুনে কান্না করবো না।”
জিহান সামিয়ার মাথায় হাত বুললো। এইদিকে জিহানের বুকের ভিতরে হার্টবিট জোরে জোরে বিট করছে। সামিয়া সেইটা স্পষ্ট শুনতে পারছে তাই বললো,,

“আপনার হার্টবিট এত জোরে বিট করছে কেন?”
“বউ যদি এইভাবে বুকে মাথা দিয়ে রাখে। তাহলে তো আমার হার্টবিট জোরে জোরে বিট দিতে দিতে বাহির হয়ে আসবে।”
সামিয়ার হুস আসলো ও এতক্ষণ কই ছিলো দ্রুত মাথা তুলতে গেলেই জিহান সামিয়ার মাথা চেপে ধরে বললো,,,
“উহুম উঠো না শান্তি লাগছে থাকো এইভাবে কিছু ক্ষণ।”
জিহানের কথা শুনে সামিয়ার আর উঠার সাহস হলো না পরে রইলো ঐভাবেই জিহানের বুকে। কেন জানি তার মনে হচ্ছে এই বুকে সে নিরাপত্তা খুঁজে পাচ্ছে মুচকি হাসলো চোখ বন্ধ করে জিহানের হার্টবিট এর শব্দ শুনতে লাগলো।

নিশান রুমে ঢুকে দেখলো সিমি বেডে হেলাম দিয়ে ফোন দেখছে। নিশান সিমির কাছে গিয়ে বসে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,,
“ঠিক আছিস তুই? কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?”
সিমি মাথা দুইপাশে নাড়ালো মানে না। নিশান সিমির ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,,,
“বেশি ফোন দেখা ভালো নাবাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।”
সিমি কিছু বললো না। এর মধ্যে নিশানের ফোনে কল আসলো সে ফোন নিয়ে বেলকুনিতে গেলো। এইদিকে সিমি নিশানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মনে মনে একটা কথা ভাবছে,,,
“নিশান কি খুশি!সে বাবা হতে যাচ্ছে এতে কি সে খুশি? নাকি অখুশি?”
নিশান কথা শেষ করে রুমে আসলো। সিমির পাশে বসলো সিমিকে এক গ্লাস পানি দিলো। সিমি পানি পান করে বললো,,

“একটা কথা বলবো?”
“বল…!”
সিমি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললো,,,
“আপনি কি আমার প্রেগনেন্সি নিয়ে অসন্তুষ্ট? বাচ্চা নিয়ে কি আপনার অসুবিধা? আপনি বাবা হতে চান না তাই তো? বাচ্চা নষ্ট করে দিবেন আপনি? প্লিজ এমনটা করবেন না আমি আর আমার সন্তান দূরে চলে যাবো আপনার ধারে কাছেও আসবো না তবে বাচ্চা নষ্ট কো…!”

বাকি কথা শেষ করার আগেই জোরে কিছু ভাঙার শব্দ হলো। সিমি কেঁপে উঠলো সে সামনে তাকাতেই দেখলো নিশান কাঁচের জগ টা জোরে আছাড় মারছে। সিমি নিশানের দিকে তাকাতেই দেখলো নিশান বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিচ্ছে। সিমি কিছু বলবে এর মধ্যে নিশান সিমির দিকে ফিরে ওর দিকে একটু ঝুঁকে চিৎকার দিয়ে বললো,,,
“তোকে বলেছি আমি খুশি না?আমি বলেছি একবারও বাচ্চা নষ্ট করবো? ইডিয়েট দূরে থাকার শখ তোর? আমার বাচ্চাকে আমার থেকে দূরে রাখার কথা ভাবিস কিভাবে তুই?আমার অস্তিত্ব তোর গর্ভে বড়ো হচ্ছে একটু একটু করে। আর তুই কিনা বলিস আমি নষ্ট করবো।”

নিশানের কথা শুনে সিমি বললো,,,
“তার মানে আপনি খুশি।”
নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“আমার খুশিতে তোর কি আশে যাই। শোন তোকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম। আমার বাচ্চাকে আমার থেকে দূর করতে চাইলে তোকে কিন্তূ জা..!”
বাকি কথা শেষ করার আগেই সিমি নিশানের গলা জড়িয়ে ধরে নিশানের বাম গালে শব্দ করে চুমু খেলো। এইভাবে চুমু খাওয়াই নিশান ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সিমি নিশানের ডান গালেও শব্দ করে চুমু খেয়ে হেসে বললো,,,
“আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা আমি আর বেবি কখনো চিন্তা করবো না। শুধু একটাই আবদার আমাকে আর থাপ্পড় মারবেন না। আমরা কিন্তূ এখন দুইজন দুইজনের পাওয়ার দিয়ে কিন্তূ আপনাকে মারবো।”
নিশান সিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,,

“ভণ্ডামি করিস আমার সাথে?”
“আমি কি আপনার সাথে ভণ্ডামি করতে পারি বলেন?”
নিশান উঠে গিয়ে বললো,,,
“চুপচাপ ঘুমা। একদম উঠবি না।”
নিশান যেতে নিলেই সিমি একটু নাটক করে পেটে হাত দিয়ে বললো,,,
“উফফফ এমন হচ্ছে কেন? কি কষ্ট।”
নিশান দ্রুত সিমির কাছে এসে বললো,,,
“কি হচ্ছে কোথায় ব্যাথা হচ্ছে?”
“পেটে।”
“কই দেখি?”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৪

সিমি নিশানের কোলে মাথা রেখে বললো,,,
“শুয়ে থাকি এইভাবে তাহলে ভালো হয়ে যাবে। কারণ বেবি বলেছে তার পাপার কোলে ঘুমাবে।”
নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“এক মাসের বেবি তোর সাথে কথা বলছে?”
“হ্যা বলছে এই দেখেন এখন বলছে মাম্মা পাপা কে বলো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ঘুম লাগছে তার।”
নিশান কিছু বললো না আর। সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সিমি মুচকি হাসলো নিশানের পা জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পারি জমাতে লাগলো।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here