তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১২

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১২
Jannatul ferdosi rimi

মেহেভীনকে গভীরভাবে কেউ পর্যবেক্ষন করছে,যা হয়তো মেহেভীন বুঝতে পারছে না। মেহেভীন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে আপনমনে।অতঃপর কি যেন ভেবে জানালা বন্ধ করে দিলো।আরহাম ঘরে ঢুকেই দেখে,মেহেভীন অদ্ভুদ কান্ড করছে। সারা ঘর জুড়ে পাইচারি করছে। আরহাম মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসে। মেহেভীনকে এইভাবে পাইচারি করতে দেখে,আরহাম ভ্র কুচকে বলে,
‘এই মেয়ে তুমি রুমে এইভাবে পাইচারি করছো কেন?’
‘আমার পা আমি যা ইচ্ছে করবো।’
‘ স্টুপিড একটা! সোজা কথা সোজা উত্তর দিতে পারো না? ‘
‘বাসে এতোক্ষন ধরে, ঘুমানোর জন্যে ঘুম আসছে না। তাই পাইচারি করছিলাম যদি ঘুম আসে। ‘
‘তোমাকে আমি এমনি এমনি স্টুপিড বলি? এইভাবে পাইচারি করলে, সারা রাতও ঘুম আসবে না তোমার।’
‘তাহলে কী করবো? ‘

মন খারাপ করে বললো মেহেভীন। আরহাম মেহেভীনকে বিছানায় ইশারা করলো বসতে। মেহেভীন বসে পড়লো। আরহাম নীচে চলে গেলো। অতঃপর নীচ থেকে এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে,মেহেভীনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘দুধ টুকু খেয়ে নাও। সারাদিন তো এখানে সেখানে ছুটাছুটি করেছো। দুধটুকু খেলে, ফ্রেশ লাগবে তোমার। ফ্রেশ হয়ে গেলেই ঘুম চলে আসবে। ‘
মেহেভীন দুধের গ্লাস দেখে নাক ছিটকালো। ছোট বেলা থেকেই সে একদমই দুধ খেতে পছন্দ করেনা।
মেহেভীন মুখ ঘুড়িয়ে বললো,
‘আমার দুধ খেতে একদমই ভালো লাগে না। আমি খাবো না দুধ। ‘
এমন কথায়, আরহাম রেগে মেহেভীনের পাশে বসে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ এই মেয়ে তুমি কী বাচ্ছা নাকি? তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। তুমি জানো এমন অবস্হায় দুধ খাওয়াটা কতটা জরুরী। তোমার সাথে একজন লিটেল বেবীও আছে। তারও তো প্রয়োজন তাইনা?’
মেহেভীন তবুও শুনে না আরহামের কথা,সে সাফ সাফ জানায় সে খাবে না দুধ। আরহাম এইবার জোড় করে, মেহেভীনের মুখটা হা করিয়ে, দুধটুকু খায়িয়ে দেয়। এতে করে, মেহেভীনের মুখ দুধ লেগে যায়। মেহেভীনকে দেখে যথেষ্ট হাসি পাচ্ছে আরহামের। পুরো বাচ্ছাদের মতো মেয়েটা। একদম অবুঝ। মেহেভীন কাদু কাদু মুখ নিয়ে চেয়ে থাকে। আরহামের হাসি পেলেও,সে তা চেপে রেখে, টিস্যু দিয়ে যত্নসহকারে মুখ মুছে দেয়। মেহেভীন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে। আরহাম উঠে দাড়িয়ে বলে,
‘জোড় করে না খাওয়ালে মুখে ভরে যেতো না,বাট তুমি তো স্টুপিড মেয়ে। তোমাকে ভালো করে না বললে, কথা কানে যায় না।’
মেহেভীনও উঠে দাড়িয়ে বলে,

‘কথায় কথায় আমাকে একদম স্টুপিড বলবেন না। ‘
‘স্টুপিড এর কাজ করলে,অবশ্যই করবো। ‘
‘আপনি কিন্তু……
মেহেভীনের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে আরহাম বলে,
”আমার এতো তোমার আজাইরা কথা শুনার টাইম নাই,সো গুড নাইট। ‘
আরহাম তার ছোট্ট বেডে শুয়ে পড়ে, মেহেভীন রাগে ফুশতে ফুশতেই শুয়ে পড়ে।
ঘুম থেকেই উদ্ভুদ একটা কান্ড ঘটে গেলো মেহেভীনের সাথে। দরজা খুলতেই সে দেখতে পেলো বড় একটা কাঠের বাক্স। রেপিন করা। মেহেভীন বুঝতে পারছে না এই বক্সটা হঠাৎ কোথা থেকে এলো?মেহেভীন প্যাকেটটা উঠিয়ে নিলো। সবুজ রংয়ের রেপিং কাগজটা দিয়ে বক্সটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। মেহেভীন প্যাকেটটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখে,তারই নাম লেখা পাশে ছোট্ট করে লেখা ‘প্রিয়সী’। প্রিয়সী নামটি দেখে মেহেভীন কিছুটা ভরকে যায়। এই বক্সটা তার মানে তার জন্যে? কিন্তু কে পাঠালো? মেহেভীন বক্সটা হাতে নিয়ে,রুমের দিকে এগোলো। মেহেভীন রুমের দিকে আসতেই,নজরে পড়ে যায় পাশে ছোট্ট বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা আরহামের দিকে। কি নিশ্চিন্ত ভাবে ঘুমিয়ে যাচ্ছে লোকটা। মেহভীন প্যাকেটটা খুলে দেখে তাতে একটা ছোট্ট প্যাকেট। মেহেভীন খুব আগ্রহ নিয়ে খুলে দেখে,তাতে মেহেভীনের ছবি। যাকে বলে কারো হাতে আঁকা ছবি।

কেউ তার খুব নিঁখুত প্রতিভা দিয়ে এই ছবিটা একেঁছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ছবিটাতে মেহেভীনকে বড্ড সুন্দর লাগছে। সামান্য আলতো হাঁসি দিয়ে রেখেছে মেহেভীন। নিজের সবুজ রংয়ের শাড়িটার আঁচল দিয়ে লজ্জায় নিজের মুখটা ঢেকে রেখেছে মেহেভীন। আঁচল দিয়ে শুধু মেহেভীনের লজ্জামাখা হাঁসিটাই দেখা যাচ্ছে। মেহেভীনের সেদিনের কথা মনে পড়ে যায়। অভ্র সেদিন তাকে হাটু গেড়ে প্রপোজ করছিলো, সেদিন মেহেভীন এতোটাই লজ্জা পেয়েছিলো যে, আঁচল দিয়ে মুখখানা ঢেকে দিয়েছিলো। সেই মুহুর্তের ছবিটাই কেউ একেঁ ফেলেছে। কারো হাতের কাজ এতোটা নিখুঁত হতে পারে? মনে হচ্ছে যেন, একদম সেই মুহুর্তটাকে যেন কেউ ক্যামেরায় বন্ধী করে রেখেছে। মেহেভীন লক্ষ্য করে দেখে, পাশে ছোট্ট চিরকুট। তাতে লেখা,

‘প্রেয়সী,
ঠিক কি বলে সন্মোধন করা উচিৎ তোমায় জানা নেই। তুমি এমন একজন যাকে ভিন্ন সময়, ভিন্ন নামে সন্মোধন করার প্রয়োজন হয়। ছবিটা দেখেছো? কি মায়া সেই মুখশ্রীতে তাই না? আমি তো প্রথম দফায় প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম যাকে বলে অদ্ভুদভাবে। এতোটা মায়াবী হাস্যজ্বল প্রানবন্ত কারো হাসি হয়? দেখলেই শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সময়ের পালাবদলে আজ সেই মুকশ্রীতে শুধুই অশ্রু ঝড়ছে। এইসব আমি কীভাবে সহ্য করি বলো তো প্রেয়সী? তুমি ঠিক আমার কী, তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না প্রেয়সী। আমি আমি জানি আমার একটা ভূলের জন্যে আজ তোমার এই পরিনতি। তুমি চিন্তা করো না। আমি ঠিক নিজের ভূল টা শুধরে নিবো। ‘
ইতি,
তোমার অচেনাতে,প্রিয়। ‘

চিঠিটা পড়ে কিচ্ছুক্ষব থম মেরে বসে থাকে মেহেভীন। কিসব কথা লিখে রেখেছে চিঠিতে? কিসের ভূল। নতুন কোন পাগলের আমদানী হলো কে জানে? মেহেভীনের কাছে এইসব চিঠি এখন শুধু ন্যাকামি লাগে। মেহেভীন বিরক্ত নিয়ে চিঠিটা ফেলে দেয় জানালা দিয়ে। কিন্তু কেন যেন ছবিটা ফেলে দিতে পারলো না। ছবিটার দিকে তাকালেই অদ্ভুদ এক ভালো লাগা কাজ করে।
।ফোনের রিং বাজতেই,মেহেভীনের খেয়াল হলো আরহামের ফোনটা বাজছে। আরহাম এখুনি ঘুম থেকে উঠে যাবে,তাই মেহেভীন ড্রয়ারের এক কিনারে রেখে, ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে,খেয়াল করে তার ওড়নাটা ফুলের টবের সাথে বেজে আছে।মেহেভীন ওড়নাটা ছাড়ানোর চেস্টা করে। ততক্ষনে ফোনের আওয়াজে আরহামের ঘুমটা হাল্কা হয়ে যায়। সে আড়মোড়ে ঘুম থেকে উঠে,তখনি মেহেভীন ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিয়ে, তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেড়োতে যায়,কিন্তু তখনি ঘটে বিপত্তি। মেহেভীনে ফ্লোরে পা পিছলে,আরহামের বুকে গিয়ে পড়ে। বুকে ভারি কিছু অনুভব করতেই আরহাম চোখ খুলে দেখে,মেহেভীন তার বুকে শুয়ে আছে।

‘ইউ স্টু…
আরহামের সম্পুর্ন কথা শেষ হওয়ার আগেই, মেহেভীন আরহামের মুখ চেপে ধরে বলে,
”আপনি আপনার ‘স্টুপিড ‘নামক রেডিও টা বাজানো শুরু করুন, তার আগে একটা কথা বলতে চাই। প্লিয আমার এখন বকা খাওয়ার মুডে নেই। প্লিয আমাকে ছেড়ে দিন। ‘
উনি বাঁকা হেঁসে বলেন,
”যদি ছেড়ে না দেই তবে? ‘
‘মানে?’
আরহাম ধমক দিয়ে বললো,
‘মানে হলো। গেট লস্ট ফ্রম হিয়ার। ইউ ব্লাডি!’
মেহেভীন মুখ বেকিয়ে ঘর থেকে চলে এলো। এইভাবে বকার কি আছে? সে কি ছেচে খবিশ লোকটার বুকে গিয়ে পড়েছিলো। মেহেভীন রুম থেকে চলে যেতেই,আরহাম ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ৩টা মিসডকল।তাহসান করেছে। আরহাম কল পুনরায় করে বলে,
‘হ্যালো বল। ‘

”আরহাম তোর কথা মতো চিটাগং এই আমাদের কম্পানি তার নিউ প্রযেক্ট করছে। ‘
আরহাম কথাটি শুনে,হাঁসি দিয়ে বলে,
‘দ্যাটস গুড। ভেইরি গুড। ‘
‘হঠাৎ তুই চিটাগং এ প্রযেক্টটা ফিক্সড করলি কেন?’
‘সেইটা নিশ্চই তোকে বলে দিতে হবে না।’
আরহাম তার টাউজারের পকেটে হাত গুজে ,কথাটি বললো।
‘হুম আরহাম আহহেদ কোন উদ্দেশ্য করে কাজ করেনা। জানি আমি এইটুকু। ‘
আরহাম প্রতিউত্তরে কিছু বললো না, বরং আরেকদফা হাসলো।

মায়রা মুখ ঘুমড়া করে, নীচে নামে। অভ্রের মা মায়রার মন খারাপ বুঝতে পারলেন ইশরা বেগম। অভ্র কালকে সারাটা রাত বাড়িতে ফিরেনি,এমনকি মায়রাকে একটা কল পর্যন্ত করেনি। ইশরা বেগম অবশ্য অভ্রকে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছেন যে, অভ্রের কালকে অফিসের বড্ড চাপ ছিলো, তাই অভ্র একেবারে সন্ধ্যাতেই বাসায় ফিরবে। ইশরা বেগম মায়রার পাশে বসে বললেন,
”মন খারাপ করো না মা। অভ্রের তো প্রচন্ড চাপ যাচ্ছে,তাই সে হয়তো তোমাকে ফোন করতে পারেনি। আমি অভ্রকে বলে দিবো, যেন সে ফিরে আসার পথে তোমাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসে।’
শ্বাশুড়ির কথা শুনে,মায়রা নিজের অভিমান টুকু প্রকাশ করে বলে,
‘কি জানি ?তোমাকে আর কি বলবো আন্টি। অভ্র আজ-কাল আমাকে একটু বেশিই ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। সে কি জানে না? তার এই ব্যস্ততা কতটা পুড়াচ্ছে আমায়।’
ইশরা মায়রার থুত্নি উঁচু করে বলে,

‘একদম মন খারাপ করবে না মা। আমি অভ্রকে আচ্ছামতো বকে দিবো। তুমি তো জানো অভ্র তোমাকে কতটা ভালোবাসে। আজ-কাল অফিসের ব্যস্ততা তাই আর কি…’
”কিন্তু তাই বলে এইভাবে অবহেলা করবে?মাঝে মাঝে মনে হয় অভ্র আমাকেই ভালোই বাসে না।’
” এইভাবে বলো না। সে তোমাকে ভালোবাসা বলেই মেহেভীনকে ছেড়ে দিতে একটুও পিছপা হয়নি।
আচ্ছা মা তুমি বরং অভ্রের সাথে কথা বলো। আমিও বলবো না হয় পরে। ‘
”আচ্ছা। ‘

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১১

মেহেভীন আজকে আরহামের মাকে কিছু একটা বুঝিয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে । যদিও আরহাম আবারো ঘুমিয়ে পড়েছে,যেহুতু আজকে আরহামের অফিস নেই। তাই মেহেভীন তারাতাড়ি বেডিয়ে গেছে। যে আজ কিছুতেই তার সকালের শুরুটা ‘স্টুপিড ‘ নামক গালি টা শুনে শুরু করতে পারবে না। আজকে মেহেভীনের ভার্সিটির ছোট–খাটো টেস্ট আছে,তাই খুব তাড়াতাড়িই ভার্সিটি যাচ্ছে। ভার্সিটির গেটে আসতেই,মেহেভীন গেটের ভাড়া মিটিয়ে, ভার্য়িটির গেটে প্রবেশ করে। তখনি তার পথ আটকে কেউ দাড়ায়। যাকে দেখেই মুহুর্তেই মেহেভীনের বুকটা ধক করে উঠে। তার শরীরটা কেঁপে উঠে আলাদা উত্তেজনার শিহরনে!

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৩