তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১১

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১১
আমেনা আক্তার

আব্রাহাম তার গাড়ির উপরে শুয়ে আকাশ দেখছে। তাকে দেখে মনে হবে কতদিন ধরে হয়তো আকাশ দেখে না। হয়তো আকাশের দিকে তাকিয়ে কারও নামে অভিযোগ করছে। মুখে কিছু না বললেও মনে অনেক কথা বলছে আব্রাহাম হয়তো। নিজের ভিতরে লুকানো কষ্ট কারও সামনে দেখাতে চায় না।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আব্রাহাম যখন আকাশ দেখতে ব্যস্ত তখনি তার দুপাশে উঠে বসে আরশাদ ও রুদ্র।
রুদ্র আরশাদের উদ্দেশ্যে বলল।

তুই এখানে বসে আকাশ দেখছিস।আর আমি তো মনে করেছিলাম এতক্ষণে বিরহের গান গাইছিস হয়তো। শুধু শুধু এত কষ্ট করে তোকে খুঁজে বের করেছি।
রুদ্রের কথার প্রতি উত্তরে আরশাদ বলল।
তুই কি ওকে তোর মতো মনে করেছিস।ও হচ্ছে শক্ত মনের মানুষ ভিতর থেকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলেও কাওকে কিছু জানতে ও দিবে না। চেহারায় ভাব ধরে রাখবে যেনো কিছুই হয়নি।
আরশাদের কথার প্রতি উত্তরে আব্রাহাম বলল।
তাহলে তোরা কি চাস তোদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করি।
না তুই কান্না করবি কেনো তুই বিরহের আগুনে পুড়বি। পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাবি তোবুও কাওকে নিজের মনের দুঃখ বলবি না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আচ্ছা আব্রাহাম তুই তো আয়নার জন্য বিয়ের প্রস্তাব ও নিয়ে যেতে পারিস।
আব্রাহাম হেসে রুদ্রের কথার উত্তরে বলল।
তোর কি মনে হয় রাজ তার বোনের সম্মতি ছাড়া ওকে আমার সাথে বিয়ে দিবে।
তুই একবার চেষ্টা তো করে দেখ এমনও তো হতে পারে।রাজ সকল কথা শুনে সকল সত্য জেনে নিজে আয়নার হাত তোর হাতে দিয়ে দেয়।
আরশাদের কথায় আব্রাহাম মুচকি হেসে বলল।

এমনটা না হয়ে, যদি রাজ সকল কথা জানার পর আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়।আর কখনো আমাদের উপর বিশ্বাস না করে । তোর মনে আছে একবার ওর চাচাতো ভাইয়ের বন্ধু ওর চাচাতো ভাইয়ের বোনকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল তখন ও তার চাচাতো ভাইয়ের বন্ধুর সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল। আবার ওই ছেলেকে আমরা সবাই মেরে ও এসেছি।রাজ কতটা ঘৃণা করে এই বিষয়টাকে।এখনো সেই ছেলের কথা আমাদের কাছে বলে।
তুই ওই এক কথা নিয়ে কেনো পরে আছিস।ওটা অন্য পরিস্থিতি ছিল আর ওই ছেলে নিজের বন্ধুকে ধোঁকা দিয়ে বন্ধুর বোনকে নিয়ে পালিয়েছিল। কিন্তু তুই তো এমন কিছু করিস নি। উল্টো তুই সকল প্রকার চেষ্টা করেছিস আয়না থেকে নিজেকে দূরে রাখার।আজ এই কারণে আয়না এখন তোর নাম ও শুনতে চায় না। না তুই ভালোবাসার কারণে আয়না থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছিস।আর না নিজের বন্ধুত্বের কারনে ওকে কাছে নিয়ে আসতে পারছিস।
আরশাদের কথার সাথে সম্মতি প্রকাশ করে রুদ্র বলল।

আরশাদ ঠিক বলেছে। তাছাড়া তুই একবার আয়নার সাথে আমাদের কথা বলতে দে। সকল কিছু ক্লিয়ার করতে দে। তারপর তো এমনো হতে পারে আয়না তোকে আগের মতো ভালোবাসছে।
আব্রাহাম একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল।
তোদের কি মনে হয় আমি আয়না কে আমি কিছু বলিনি। ওকে হাজার বার বলার পরেও ও আমাকে ঘৃণা করে। এখন এই সকল কথা বাদ দে এখন বাড়িতে চল অনেক রাত হয়ে গেছে।
আব্রাহামের কথায় তারা দুজনে সম্মতি প্রকাশ করে। নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।

মহিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা কাগজটির উপর। মহিমা যেই কাগজটির দিকে তাকিয়ে আছে সেটি ডিভোর্স পেপার। কিছুক্ষণ আগে মহিমা ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে। ডিভোর্স পেপার রাজিব পাঠিয়েছে এটা জানা সত্ত্বেও এখন তাদের ডিভোর্স হবে না।তাই মহিমা ডিভোর্স পেপারটি সযত্নে রেখে দিল কারণ এখন তাদের ডিভোর্স না হলেও বাচ্চা হওয়ার পর ডিভোর্স হয়ে যাবে। রাজিব মহিমার গ্রামের বাড়িতে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে কারণ কেউ জানেনা রেহানা বেগম তার তিন মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে। ডিভোর্স পেপার গ্রামের বাড়িতে দিয়ে গেলেও।সিরাত শামসুজ্জামানের টের পাওয়ার আগেই ডিভোর্স পেপার পাশের বাড়ির ভাবিকে দিয়ে সরিয়ে নিয়ে ছিল।ওই ভাবিতো সব খবরা খবর সিরাত কে দেয় যে তাদের বাড়িতে কি চলছে।
মহিমার কেনো দুঃখ নেই রাজিব তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে। মহিমা আরো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কিছুদিন পরেই রাজিব টের পাবে সে কাকে ছেড়ে কাকে বেছে নিয়েছে। কারন যেই মেয়েরা বিবাহিত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তারা আর যাই হোক চরিত্রবান ও বিশ্বাসের যোগ্য হতে পারে না।
মহিমা নিজের পেটের উপর হাত রাখে তার বাবুটা লড়ছে। এখন মহিমার সাড়ে সাত মাস চলছে। চলতে ফিরতে তার কিছুটা সমস্যা হয় এখন। তবুও ভালো লাগে মহিমার। পেটের উপর হাত বুলিয়ে আদর করে সে নিজের বাচ্চাকে।

একটি নতুন সকালের সূচনা ঘটেছে। রুদ্র তার বাবার অফিসে বসে আছে। কত মাস পর রুদ্র অফিসে এসেছে তা সে নিজেও জানে না।আজ এসেছে রুদ্র তার বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে। এবং টাকাটা সে নিজের জন্য নিচ্ছে না। টাকা নিতে চাইছে ওই মেয়ের জন্য যেই মেয়ে রুদ্র কে বারবার ফিরিয়ে দেয়। তাকে ইগনোর করে ,সবার সামনে তাকে অপমান করে কিন্তু যখন টাকার প্রয়োজন হয় তখন ফোন দিয়ে শুরু রুদ্র রুদ্র করতে থাকে। রুদ্র ও গলে যায় কিন্তু টাকা দিয়ে দিলে আর রুদ্রের খবর ও নেই না।
রুদ্র তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
বাবা তুমি টাকাটা দিচ্ছ না কেনো?
কারন তুমি নিজের জন্য টাকা না নিয়ে ওই মেয়ের জন্য নিতে চাইছো।ওই মেয়েকে আমি আমার এক টাকাও দিবো না।

বাবা ওই মেয়ে তোমার হবু পুত্র বধূ।
কখনো না, ওই মেয়ের সাথে আমি তোমার বিয়ে হতে দিবো না।ওই মেয়ে তোমার যোগ্য না।
রুদ্র কথাটি শুনে তার হাতের কাছে থাকা সব কিছু ফেলে দিলো। রুবেল মির্জা খুব ভালো ভাবে জানে রুদ্র এখন এমন কিছুই করবে। এবং তাকে থামাতে যাওয়া ও বিথা কারণ রুদ্র এখন কারো কথা শুনবে না। রুদ্র রুবেল মির্জার কেবিনে ভাংচুর করছে সকলে বাইরে থেকে আওয়াজ শুনলেও কারো ভিতরে এসে দেখার সাহস নেই।
রুদ্র তার হাতে একটি ল্যাপটপ তুলে নেয়। ল্যাপটপটি যেই না ধরে আছাড় মারবে তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো।
এই খবরদার ওটা ভাংগবে না ওটাতে আমার কষ্ট করে তৈরিকৃত ডিজাইন আছে।
রুদ্র পরিচিত কন্ঠ শুনে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো সিরাত দাঁড়িয়ে আছে।সিরাত কে দেখে রুদ্র অবাক হয়ে বলল।

তুমি আমাদের অফিসে কি করছো?
সিরাত খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।
আমি এই অফিসে কাজ করি।
কি তুমি আমাদের অফিসে কাজ করো।আর আমাদের অফিসের একটি সামান্য কর্মচারী হয়ে আমাকে বলছো আমাদের জিনিস ভাংগতে না।
হ্যা বলছি কারন ল্যাপটপটি আমাকে দেওয়া হয়েছে অফিস থেকে।আর এতে আমার অনেক কষ্টে তৈরি করা ডিজাইন আছে।তাই তুমি এটা ভাংগতে পারবে না।
ও এই কথা তাহলে তো আমার এই ল্যাপটপ সবার আগে ভাংগা উচিত ছিল।
কথাটি বলে রুদ্র ল্যাপটপটি আছাড় মারবে তার আগেই সিরাত বলে উঠলো।
যদি তুমি এই ল্যাপটপ মাটিতে আছাড় মারবে তো।
সিরাতের কথার সাথে সাথে রুদ্র বলল।
তো,

তো, সেদিন তোমার গাড়ির যেই অবস্থা করেছিলাম না। আমার ল্যাপটপ ভাংগলে তোমার ও ঠিক একই অবস্থা হবে বুঝেছ।
উফ আমি অনেক ভয় পেয়েছি, সত্যি ভয় পেয়েছে।এই যে আমি ল্যাপটপ রেখে দিলাম তোমার কথা মতো। কিন্তু আজ থেকে তোমাকে জ্বালানোর পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলাম বুঝেছ।
কথাটি বলেই রুদ্র নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বলল।
বাবা কাল থেকে আমিও অফিসে জয়েন করব।
কথাটি বলেই রুদ্র ফুল মুডে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। এতক্ষণ রুবেল মির্জা সিরাত ও রুদ্র কে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি ভাবতেও পারেননি তার ছেলে এত তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে যাবেন।তার থেকেও বড় কথা রুদ্র অফিসে আসবে বলে জানিয়েছে। স্বপ্নের মতো লাগছে। তখনি সিরাত বলল।
ও আপনার ছেলে,
রুবেল মির্জা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।
আদর দিতে দিতে মাথায় উঠিয়ে ফেলেছেন।তাই এখন আপনার কথাও শুনে না।এখনো সময় আছে মাথার থেকে নামিয়ে ওকে মাটিতে আনুন।
রুবেল মির্জা সিরাতের কথা শুনে আবার মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।সিরাত বের হয়ে গেল কেবিন থেকে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে।সিরাত বের হতেই রুবেল মির্জা তার স্ত্রী কে ফোন দিয়ে খুশির সংবাদটি জানিয়ে দিলেন।যে রুদ্র কাল থেকে অফিসে আসবে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১০

আজ শামসুজ্জামানের বাড়িতে এক প্রকার তান্ডব চলেছে। শামসুজ্জামান এখন বাড়িতে নেই বাইরে গিয়েছে।শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বসে বসে কান্না করছেন কারণ …

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১২