তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৫
আমেনা আক্তার
বেশ কিছুদিন যাবত সাইরা রাজকে ইগনোর করছে। সাধারণ যেই দিন থেকে রাজ ছেলেটিকে মেরেছে সেই দিন থেকেই সাইরা রাজ কে এড়িয়ে চলছে।সাইরার এভাবে এড়িয়ে চলা রাজের ভিতর ক্ষোভের সৃষ্টি করছে।রাজ যে সকল কিছু সাইরার জন্য করেছে তা জানা সত্ত্বেও সাইরা রাজের সাথে কথা বলতে অনিচ্ছুক। সাধারণ সাইরা ওইদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল কারণ সাইরা এইসবে অভ্যাস নয়। সাইরা গ্রামে থাকতে যদি শুনতে পেতো কোথাও মারামারি হয়েছে তাহলে তিন চারদিন পর্যন্ত ওই রাস্তা দিয়েও কোথাও যেতো না।আর এখানে তো ওর সামনে একটি ছেলেকে নির্দয় ভাবে মারা হয়েছে।
সাইরা উদাস মনে ক্লাসের বাইরে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। রাজের সাথে কথা না বলে সাইরার ও ভালো লাগছে না। কিন্তু ওর যে এই সকল মারামারি ভালো লাগে না। সাইরা কলেজের স্টুডেন্ট থেকে শুনেছে রাজ ও তার বন্ধুরা প্রায় এইসব মারামারি করে বেড়ায় তাই কলেজের সবাই তাদের থেকে দূরে থাকে।কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না এর একটি কারণ হলো তাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস। সকলের পরিবারের অবস্থায় অনেক ভালো।ছয় বন্ধুদের মাঝে সবচেয়ে বড়লোক হলো আব্রাহামের পরিবার। এবং আব্রাহাম তাদের বাড়ির সবচেয়ে আদরের সন্তান।রাজ ও কিছু কম যায়না রাজ আব্রাহামের মতো এত বড়লোক না হলেও বাড়ির একমাত্র ছেলে।রাজের বাবা মা রাজের সকল আবদার পূর্ণ করে।সতো গুন্ডামি করার পরেও বাড়ি থেকে তাকে এতটা শাসন করা হয়না।
তাই সাইরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সময় রাজের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। রাজের জন্য ওর মনে যেই অনুভূতি কাজ করে তা এখানেই ধামা চাপা দিবে নয়তো ভবিষ্যতে অনেক প্রস্তাতে হবে তাকে। কারন রাজ ও তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।রাজ ও তার মধ্যে কিছু হতে পারেনা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সাইরা এই সকল কথা ভাবতে ভাবতে কখন ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে টের পাইনি। যখন বুঝতে পারলো ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে সাইরা নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নীলিমা আজ অর্ধেক ক্লাস করে বাড়িতে চলে গিয়েছে তাই সাইরার বাকি ক্লাস একা একা করতে হয়েছ।সাইরা যখনি দরজা দিয়ে বের হবে তখনি রাজ এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়।রাজ দরজার মাঝ বরাবর দাঁড়ানোর কারনে সাইরা ক্লাস রুম থেকে বের হতে পারছে না।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন রাজের কেনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তখন সাইরা মনে সাহস যুগিয়ে রাজকে জিজ্ঞেস করলো।
সমস্যা কি আপনার?
একই প্রশ্ন তো আমার, তোমার সমস্যা কি?
রাজের কথার সারমর্ম বুঝতে না পারায় সাইরা রাজ কে বলল।
আপনি দরজার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছেন আমি না।তাই সমস্যা আমার না আপনার।
সাইরা রাজের কথা বুঝতে না পারায় রাজ সরাসরি সাইরা কে বলল।
আমাকে ইগনোর করছো কেনো?
আমি আপনাকে ইগনোর করব কেনো কে হোন আপনি আমার?
সাইরার কথার প্রতি উত্তরে রাজ কিছু না বলে আসতে আসতে আগে বাড়তে লাগলো।সাইরা রাজের এভাবে আগানো দেখে শুকনো একটি ঢোক গিলে আস্তে আস্তে পিছে যেতে থাকলো।সাইরা পিছে যেতে যেতে হঠাৎ বেঞ্চের সাথে বারি খেতে থেমে গেল।সাইরা থেকে যাওয়ায় রাজ সাইরার দিকে একটু ঝুঁকে যায় সাইরার দিকে । সাইরা রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । সাইরার মনে হচ্ছে রাজের চোখের মাঝে কেনো যাদু আছে। রাজের চোখের থেকে নিজের চোখ ফিরাতে পারছে না। যেনো আটকে গেছে এই চোখে।সাইরার চোখে চোখ রেখেই রাজ সাইরার উদ্দেশ্যে বলল।
এই প্রশ্ন করার সাহস দ্বিতীয় বার করো না।আর যদি একবারও আমাকে ইগনোর করো তাহলে তোমাকে দেখাবো আমি তোমার কে। তোমার মোবাইল দেও।
শেষের কথাটি রাজ কিছুটা ধমকের স্বরে বলে উঠলো।
সাইরা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের মোবাইল রাজের হাতে তুলে দিলো।রাজ সাইরার নাম্বার নিজের মোবাইলে ও নিজের নাম্বার সাইরার মোবাইলে সেফ করে বলল।
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আমাকে ফোন করবে। আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর ঘুমাবে।বুঝেছ?
সাইরা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
হ্যা বুঝেছি,
গুড,
কথাটি বলেই রাজ চলে যায় সেখান থেকে। এদিকে সাইরা থরথর করে কাঁপছে রাজের এরুপ আচরণে।
রুদ্র মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে বসে আছে নিজের কেবিনে। রুদ্রের এই হাসির প্রধান কারণ হলো সে সিরাত কে অনেক বেশি কাজ দিয়েছে।যা করতে করতে সিরাত হাঁপিয়ে উঠছে তবুও সিরাত রুদ্রকে কিছু বলছে না। কারন কিছু নতুন নতুন ডিল সাইন করায় কাজের চাপ একটু বেশি। এমনিতেও রুদ্র সিরাত কে খাটানোর সুযোগ খুজছিল। নতুন ডিল সাইন করায় মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেছে।সিরাত রুদ্রের কেবিনে কাউচ এর উপর বসে বসে নতুন ডিজাইন তৈরি করছে।সিরাত কে নিজের কেবিনে বসিয়ে কাজ করানোর একটি কারণ হলো সিরাত কষ্ট পাবে আর রুদ্র তা দেখে আনন্দ পাবে। রুদ্র একটু মজা নেওয়ার জন্য সিরাত কে প্রশ্ন করলো।
তো মিস.সিরাত কাজ করতে কেমন লাগছে?
সিরাতের ত্যারা উত্তর,
এত ভালো লাগছে যে, তোমাকে এই বিল্ডিং থেকে নিচে ফেলে দিতে মন চাইছে।
রুদ্র সিরাতের কথায় রাগ করলো না। মজা পেলো কারণ রুদ্রের মনে হলো বেশি কাজের চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে সিরাত এই কথা বলছে।রুদ্র সিরাতকে বলল।
আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে মন চাইছে কেনো।কাজ করতে করতে কি হাড় গুড় সব বাঁকা হয়ে গেছে?
না আল্লাহ আমাকে এতটুকু কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু আমার ভিতর অকর্মা মানুষদের চোখের সামনে সহ্য করার ক্ষমতা একটু কম।
কি? তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি অকর্মা বলছো।
ছিঃ ছিঃ কি বলছো,আমি তোমাকে ইনডাইরেক্টলি অকর্মা বলবো আমার এত বড় সাহস।আমি তোমাকে ইনডাইরেক্টলি অকর্মা বলছি না। বরং ডাইরেক্টলি অকর্মা বলছি।
রুদ্র কিছু বলার আগেই সিরাত তার ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আমার কাজ শেষ আমি এখন বাসায় যাবো।
রুদ্র সিরাত এর উদ্দেশ্যে বোধহয় কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই সিরাত রুদ্র কে আবার বলল।
তুমি নিজেই বলেছিলে কাজ শেষ করলেই আমার ছুটি তাই আমার কাজ শেষ আমি বাড়ি যাচ্ছি।ঠিক আছে বাই।
কথাগুলো বলেই সিরাত বের হয়ে যায় অফিস থেকে। রুদ্র রাগে তার হাতের কাছে থাকা জিনিসপত্র ছুড়ে মারে। তারপর সেও অফিস থেকে হনহন করে বেড়িয়ে যা যায়।
রাজিব নিজের চুল ধরে খামচে বসে আছে বিছানায়। এদিকে তিতির বকবক করে যাচ্ছে। রাজিব তিতিরের উপর মহা বিরক্ত। তার একটি কারণ হলো তিতিরের অধিক চাহিদা আর দ্বিতীয় অশ্লীল ভাবে চলাফেরা করা ও ছেলেদের সাথে কথা বলার সময় তাদের গায়ে এক প্রকার ঢলে পড়া।
অন্যদিকে রাজিবের মায়ের চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে বাইরে থেকে। রাজিবের মায়ের চিল্লাচিল্লি করার যথেষ্ট কারণ আছে। তিতির ঘরের কেনো কাজে হাত লাগায় না।সব সময় নিজের রুপ চর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আবার রাজিব বাইরে থেকে আসলেই তাকে নিয়ে নামিদামি রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে চায়। তার নাকি বাড়ির খাবার একদম ভালো লাগে না। তিতির কে এখন রাজিবের বিরক্ত লাগে যখন প্রেমিকা ছিল তখন মনে হতো তিতির এর মতো স্মার্ট মেয়ে তার জীবনে আসলে জীবন হয়তো অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। বন্ধুদের সাথে নিজের বউকে দেখা করানোর সময় গর্বে বুক ফুলে উঠবে। কিন্তু এখন সব বিপরীত দেখছে কারণ তিতির কে বন্ধুবান্ধবদের সামনে নিয়ে গেলে আরো লজ্জায় পড়তে হয়। রাজিবের বন্ধুরা ঠাট্টার স্বরে রাজীবকে বলে।
তোর নতুন বউ এর কথা বলার ম্যানারস নেই। আগের বউ এর থেকে অনেক ভালো ছিল।
রাজিব তিতিরের কথা মতো মহিমাকে ডিভোর্স পেপার ও পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে অনেক বড় ভুল করেছে সে মহিমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে। এতদিন না ইচ্ছে করলেও এখন মহিমাকে দেখার খুব ইচ্ছে জাগ্রত হয় রাজিবের মধ্যে।সব কিছুতে শুধু মহিমাকে খুঁজে। রাজিব এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না দ্বিধায় পরে গেছে রাজিব।
আয়নার পুরো মন দিয়ে এখন পড়াশোনা করছে।রাত এখন প্রায় ১ টার মতো বাজবে।এত রাত জেগে পড়াশোনা করার প্রয়োজন না থাকলেও আয়না পড়ছে।হয়তো মনের কষ্ট ভুলে থাকার মাধ্যম হিসেবে আয়না এই পড়াশোনাকে বেছে নিয়েছে।
রাজ অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছে। বন্ধুদের সাথে এতক্ষণ আড্ডায় ব্যস্ত ছিল। রাজের রুমে যাওয়ায় সময় আয়নার রুমের লাইট জ্বালানো দেখে আয়নার রুমে নক করে রাজ। আয়না জানে এই সময় তার ভাই ছাড়া আর কেউ হবে না কারণ ভাই যে বাড়ি ফিরেনি আয়না এটি বেশ ভালোভাবে জানে।তাই রাজ নক করার সাথে সাথে আয়না ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে দেয়।রাজ আয়নার রুমে প্রবেশ করেই তাকে জিজ্ঞেস করলো।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৪
তোকে না বলেছি,এত রাত জেগে পড়াশোনা করতে না।
রাজের কথার প্রতি উত্তরে আয়না কিছু বলার আগেই আয়নার ফোনটি বিকট শব্দে বেজে উঠল।ফোনটি টেবিলের উপরে থাকায় স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে আব্রাহামের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।রাজ আয়নার ফোন টেবিলের থেকে তুলে কানের কাছে ধরতেই..