তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২২
আমেনা আক্তার
টানা পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে গাড়ি এসে থেমেছে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্য সূর্যধারি গ্রামে। অবশ্য গাড়ি রাস্তায় এক দুবার দাঁড়িয়ে ছিল। রুদ্রই দাড় করিয়েছিল হালকা কিছু খাবার খাওয়ার জন্য।সিরাত ও নূরের কাছে আজকের সফরটি মোটামোটি খারাপ যায়নি। কিন্তু সফরটি খারাপ কেটেছে রুদ্রের কাছে তার বিশেষ কারণ হলো সিরাতের খোঁচা মারা কথা গুলো হজম করা যা রুদ্রের সহ্যের বাইরে ছিল তবুও বিষের মতো সেই কথাগুলো কেও হজম করতে হয়েছে রুদ্রের। ভুলটি আসলে রুদ্রের ছিল ।কারণ সেই আগে সিরাতকে জ্বালাতন করার জন্য ও নিজের সময়টি একটি মজাদার কাটানোর জন্য সিরাতকে খোঁচা মারা কথা বলেছে। কিন্তু ও ভুলে গেছে ও কার সাথে টক্কর নিতে চাইছে। সিরাত যে ইটের জবাব পাথরে দিতে পছন্দ করে তা হয়তো রুদ্রের মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।তাই তো সিরাত পুরো রাস্তা রুদ্রের নাজেহাল অবস্থা করে ছেড়েছে সিরাত। রুদ্র সিরাতকে কিছু করতে না পেরে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিল। এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এই সকল কিছুর প্রতিশোধ রুদ্র নিয়েই ছাড়বে সিরাত থেকে।
রুদ্র ও সিরাতের ঝগড়া থেকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছে নূর। দুজনের ঝগড়া নূর খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। শুধু নূর শুনেনি তার সকল বন্ধুকেও কল করে শুনিয়েছে। কিন্তু তা সিরাত ও রুদ্র কেউ জানে না। নূর শুধু একা মজা কেনো নিবে এই ঝগড়ার তার বন্ধুদের ও তো অধিকার আছে একটু বিনেদন নেওয়ার। এবং তারাও এই সুযোগ হাত ছাড়া করেনি।সকলে ফোনের উপাস থেকে সিরাত ও রুদ্রের ঝগড়া শুনে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।তারা সকলে ভালোভাবে এটা বুঝে গেছে রুদ্রকে জব্দ করা শুধু সিরাতের পক্ষে সম্ভব।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সূর্যধারি গ্রামটি খুবই সুন্দর একটি গ্রাম মন মুগ্ধ করার মতো । তা গ্রামের পরিবেশ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।সিরাত, নূর ও রুদ্র এখন হোটেলের ভিতর প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে আছে রিসিভশনে।রিসিভশনিষ্ট কিছুতেই তাদের রুম বুক করতে দিচ্ছে না। এখানে গ্রামের বাইরে থেকে আসা কেনো মানুষকে নাকি রুম দেওয়া হয়না।আর যদি রুম বুক করতে হয় তাহলে নাকি পারমিশন নিয়ে আসতে হবে।রুদ্র আজ পর্যন্ত এমন আজব নিয়ম কেনো হোটেলে দেখেনি।এই নিয়মের জন্য এখন তারা রুম বুক করতে পারছে না। কিন্তু রুদ্রের জানা মতে এই হোটেল ছাড়া এই গ্রামের ভিতরে আর একটিও ভালো হোটেল নেই।তাই রুদ্র এখানে রুম বুক করতে চাইছে। রুদ্রের সাথে এক প্রকার ঝগড়া লেগে গেছে রিসিভশনিস্ট এর সাথে। তবুও কিছুতেই যেনো কাজ হচ্ছে না। রুদ্র এখানে নিজের ক্ষমতার ও ব্যবহার করতে চাইছে না। কারণ তার সাথে সিরাত ও নূর আছে। এখানে বেশি ঝামেলা করলে তার প্রভাব নূর ও সিরাতের উপর ও পড়বে। রুদ্রের ঝগড়ার মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় রুদ্রের ক্লাইন্ট মি.আজা।উনি এসই রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
মি. মির্জা প্লিজ আপনি শান্ত হোন আমি কথা বলছি।
মি.আজাদ কে দেখে রুদ্র কিছুটা শান্ত হয়ে দাঁড়ায়।মি.মির্জা ফোন বের করে একজনকে কল করে রিসিভশনিসের কাছে ফোনটি এগিয়ে দেয়। রিসিভশনিস্ট ফোন কানে নিয়ে বলল।
জ্বী ভাই আপনি যা বলবেন তাই হবে।
কথাটি বলেই ফোনটি আবার মি.আজাদের কাছে দিয়ে দিলো।মি.আজাদ ফোনটি কানে ধরে বলল।
জ্বী ভাই, ধন্যবাদ ভাই, জ্বী জ্বী আপনি যেভাবে বলেছেন ঠিক তাই হবে।
কথাটি বলেই ফোনটি কেটে দিলো।সিরাত, নূর, রুদ্র তিনজনই মি.আজাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।মি.আজাদ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল।
মি.মির্জা আপনাকে আমি এইজন্যই আমাদের বাড়িতে থাকার কথা বলেছিলাম কিন্তু আপনি আমার কথা শুনেন নি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ হোটেলেই বাইরের কাওকে ভাড়া দেওয়া হয়না।আর যেগুলো দেওয়া হয় সেই গুলো অনেক লো কোয়ালিটির হোটেল। কিন্তু এখন কেনো সমস্যা নেই আপনারা এখানে আপনাদের ইচ্ছে অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
কথাটি বলেই মি.আজাদ চলে গেলেন।
রুদ্র তাদের জন্য মোট তিনটি রুম বুক করেছে।একটি সিরাতের একটি নূরের আরেকটি তার নিজের জন্য।সকলেই জার্নি করে অনেক বেশি ক্লান্ত তাই রুমে ঠুকেই সর্বপ্রথম তিনজনেই ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
সিরাত ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়ে বিছানায়।কাল রাতে ও ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি নি।ওর উপর কাজের অনেক প্রেসার তার মাঝে নতুন ডিলের জন্য বারতি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।আজ সন্ধ্যার দিক দিয়ে তাদের মিটিং এটেন্ড করতে হব। এখানে আসার পর জার্নি করে সিরাতের শরীর আর চলবে না তা ও খুব ভালোভাবেই জানতো।তাই কাল রাতেই সকল কিছু রেডি করে রেখেছিল সিরাত।সকল কিছু রেডি করতেও প্রায় রাত দুটো বেজে গেছে আবার সকলে তাড়াতাড়ি বের হতে হয়েছে বলে ঘুম ঠিকমতো হয়নি তার। এখন যদি না ঘুমাতে পারে।তাহলে সিরাতের জন্য মিটিং টি এটেন্ড করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।তাই ঘুম এখন সিরাতের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
নূর একেবারে গোসল করে বের হয়েছে ওয়াশ রুম থেকে। কারণ লম্বা জার্নি করার পর যদি নূর গোসল না করতে পারে তাহলে ওর কাছে মনে হয় ওর পুরো শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে।এটি নূরের ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস।শত শীতের মাঝেও নূর নিজের অভ্যাসটি পরিবর্তন করতে পারেনি।নূর গোসল করে ভিজা চুলে এসে খোলা বারান্দায় দাঁড়াতেই তার পুরো শরীর জুড়ে একটি ঠান্ডা বাতাস স্পর্শ করে ছুঁয়ে গেল। গ্রামের দূষণ মুক্ত শীতল হওয়ায় শরীরের সাথে সাথে যেনো নূরের মন ও ফ্রেশ হয়ে গেল। নূর চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে চাইছে এই শীতলতা কে।
কিছুক্ষণ এই মন মুগ্ধ পরিবেশ কে অনুভব করে নূর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রুমের ভিতরে চলে আসে।
এদিকে রুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসেই ল্যাপটপ নিয়ে নিজের অসম্পূর্ণ সকল কাজ সম্পূর্ণ করতে থাকে।কাল রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় থাকার কারণে ও নিজের কাজ পুরো করতে পারনি ।তাই এখন ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও বিশ্রাম নিতে পারছে না। সন্ধ্যা বেলা প্রজেক্ট পুরো তৈরি করে রাখতে হবে।সিরাত নিজের সকল কাজ সম্পূর্ণ করে রেখেছে তা রুদ্র খুব ভালোভাবেই জানে।তাইতো রুদ্র নিজের কাজ যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ করতে চাইছে। নাহলে ক্লাইন্টরা তো বাদের কথা সিরাতি তাকে কথা শুনাতে শুনাতে কান জ্বালা ফালা করে ফেলবে। রুদ্র কিছু সময় চিন্তা করে সিরাত কোন ছেলের বউ হবে সেই বেচারার কপাল কতটাই না খারাপ হবে যে সিরাতের মতো একটি জল্লাদ মেয়েকে বিয়ে করবে।আসলে রুদ্রের তার জন্য প্রচুর আফসোস হয়।যখনি রুদ্র সেই ছেলেটির কথা ভাবে তখনি রুদ্রের ছেলেটির জন্য মন থেকে একটি কথায় বের হয়।
হায় বেচারা,
রাজিব এখন বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে মহিমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে ও আর নিজের বাড়িতে যায়নি।এই কয় ঘন্টা সে বাইরেই ছিল। মূলত তার বাড়ি গিয়ে মা বউয়ের ঝগড়া শুনার কেনো ইচ্ছে নেই। রাজিব যেনো ক্লান্ত তাদের এমন আচরণে। বাড়িতে না ফিরার আরেকটি কারণ হলো মহিমা কে তার বাবার বাড়িতে না পাওয়া। রাজিব ভেবেছিল হয়তো শামসুজ্জামান মিথ্যা কথা বলছেন তিনি জানেন না মহিমা কোথায় তিনিই হয়তো তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহিমা কে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।তাই রাজিব মহিমাদের সকল আত্নীয় দের বাড়িতে তার খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কোথাও তাকে পায়নি।উল্টো এটি জানতে পেরেছেন শামসুজ্জামান ও নাকি তার স্ত্রী সন্তানদের সন্ধান করে গিয়েছে। তার মানে শামসুজ্জামান ও তাদের খোঁজ চালাচ্ছে।
রাজিব এটি ভেবে পায়না মহিমা যেই সহজ সরল ও বোকা মেয়ে ও কিভাবে রাতারাতি গায়েব হয়ে গেল। মহিমার পেটে তো ওর সন্তান আর রাজিব যতটুকু জানে মহিমা তাকে ভালোবাসে।আর এই ভালোবাসার জন্যই রাজিবের শত ভুল ও মাফ করেছে।তাইতো মহিমার তার প্রতি এই অগাত ভালোবাসা দেখে এই বিরাট কান্ড ঘটিয়েছিল রাজিব।ও মনে করেছিল ও যা কিছু করুক না কেনো মহিমা তাকে নিশ্চিত মাফ করে দিবে নিজের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের কথা ভেবে সতীন কেও মেনে নিবে। কিন্তু মহিমা এরকম কিছুই করেনি উল্টো তার সকল ভাবনাকে বুরো আঙ্গুল দেখিয়ে অন্য যায়গায় চলে গেছে নিজের মা বোনের সাথে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২১
রাজিবের মা একটু আগে ফোন দিয়ে রাজিবকে বাড়িতে ফিরতে বলেছে। রাজিবের মা ফোন করে কান্না ও করছিল কিন্তু এত আর্জেন্ট ডাকার কারণ ও কান্না করার কারণ কিছুই বলেনি তাকে তাই চিন্তিত হয়ে রাজিব বা বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরেই রাজিব দেখতে পায় বাড়ির ভিতরে মানুষের ভীড়। রাজিব বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলো বাড়িতে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। রাজিবের মা আর্তনাদ করতে করতে রাজিবের কাছে এসে বলল।
বাবা দেখ তোর বউ কি করেছে…