তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৮

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৮
আমেনা আক্তার

দাদি,
ডাক শুনে সালেহা মির্জা সহ বাকি সকলে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সেখানে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র কে দেখে সালেহা মির্জার মুখে হাসি ফুটে উঠে। সালেহা মির্জা নিজের জায়গা থেকে উঠে রুদ্রের কাছে গিয়ে রুদ্রের গালে স্নেহের হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
কেমন আছে আমার দাদুভাই,
ভালো কিন্তু তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি,
রুদ্রের কথায় সালেহা মির্জা বলল।
হ্যাঁ তাই তো দাদিকে একটুও ফোনও করো না তুমি। তোমার দাদির কথা তোমার একটু মনেও পরে না।
সালেহা মির্জার কথা শুনে রুদ্র বলল।

তোমার কথা আমার মনে পরবে কিভাবে,মনে তো পরে তাদের কথা যাদের ভুলা যায়। তুমি তো সবসময় আমার বুকের ভিতরে আমার হৃদপিন্ডে থাকো।
আমাকে তোমার হৃদপিন্ডে রাখলে তোমার নতুন বউকে কোথায় রাখবে।আবার তোমার নতুন বউয়ের জন্য আমাকে না আবার হৃদপিন্ড থেকে বের করে দাও।
উফ দাদি তুমি কি বলছো তোমার তুলনা কারো সাথে হয় বলো। তোমার স্থান কেউ নিতে পারবে না।মাই সুইট হার্ট,
আমার তুলনা কারও সাথে হয়না, আবার আমাকে না জানিয়ে তো বিয়েও করে ফেলেছ।
দাদি তুমি তো জানো ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।তখন আমার কিছুই করার ছিল না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুদ্রের কথা শুনে সালেহা মির্জা আর কিছু বললেন না। কিন্তু ওনার মনের মধ্যে চলছে অনেক কিছু। সিরাতকে সালেহা মির্জার পছন্দ হয়নি।ওনি চেয়েছিলেন রুদ্রের জন্য তাদের মতোই বড় ঘর থেকে মেয়ে আনতে। এবং অবশ্যই মেয়ে ওনার পছন্দের হতে হবে। এবং রুদ্র যেমন দেখতে শুনতে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট তেমন মেয়ে রুদ্রের বউ হয়ে আসবে। কিন্তু সালেহা মির্জার চোখে সিরাতের না আছে আভিজাত্য আর না আছে রুপ।
যখন রুবেল মির্জা সালেহা মির্জাকে রুদ্রের বিয়ের কথা বলেছিল তখন সালেহা মির্জা অনেক রাগারাগী করেছেন রুবেল মির্জার সাথে।আর যখন সালেহা মির্জা সিরাতের একটি ছবি চাইলো দেখার জন্য তার নাতি কেমন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেছে দেখার জন্য।তখনি রুবেল মির্জা সিরাতের ছবি পাঠিয়ে দেয় ওনার কাছে।সিরাতের ছবি দেখে যেনো সালেহা মির্জার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল তখন। সালেহা মির্জা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ওনার এত সুন্দর নাতির স্ত্রী এত কালো মেয়ে।

সালেহা মির্জা এই নিয়েও রুবেল মির্জার সাথে অনেক রাগারাগী করেছেন। রুবেল মির্জা এই মেয়েকে কেনো বাড়িতে উঠতে দিয়েছেন। এই সকল কথা বলেও অনেক চিল্লাচিল্লি করেছেন। সালেহা মির্জা সিরাত কে বাড়ি থেকে বের করে দিতেও বলে ছিলেন।সিরাতকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা শুনে রুবেল মির্জা সালেহা মির্জার ফোন কেটে দিয়েছিল দুদিন পর্যন্ত আর ফোন ধরেনি রুবেল মির্জা।তাই সালেহা মির্জা সিরাতের সম্পর্কে আর কিছু বলে নি রুবেল মির্জা কে কিন্তু মনে মনে ওনার ক্ষোভ ঠিকই রয়ে গেছে।

রিক্সা এসে থামে একটি নামি দামি রেস্টুরেন্টের সামনে। রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চার পাঁচজন বডিগার্ড। নূর এগিয়ে যায় রেস্টুরেন্টের দিকে। নূর রেস্টুরেন্টের দরজার সামনে আসতেই একজন বডিগার্ড দরজা খুলে দেয়।এতে নূর একটুও অবাক হয়নি।নূর ভিতরে যেতেই দেখতে পায় আদিত্য চেয়ারে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে। দৃষ্টি নূরের দিকে।আরিফ আদিত্যর পাশে দাঁড়িয়ে কানের সামনে ফিসফিস করে কি যেনো বলছে।হয়তো ওদের কাজ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করছে। আদিত্যর হাতের ইশারা পেতেই আরিফ থেমে যায়। এবং সামনে তাকিয়ে নূরকে দেখে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। এখন আরিফের মাথায় নূরকে দেখে একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
ভাবির মনে হয় জানেন মায়া নেই,তাই যেচে বাঘের কাছে এসেছে মরতে।না না বাঘ না ভাই তো বাঘের চেয়েও বেশি হিংস্র।

মনের কথা মনে রেখে বের হয়ে যায় আরিফ। আরিফের যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকায় নূর।ও বুঝতে পারছে না আরিফ ওকে দেখতেই এখান থেকে বের হয়ে গেল কেনো।নূর পুরো রেস্টুরেন্টের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো। রেস্টুরেন্ট পুরোটা ফাঁকা এখানে এখন ও আর আদিত্য ছাড়া আর কেউ নেই। আদিত্যর সাথে নিজের একা রেস্টুরেন্টে দেখে নূরের গলা শুকিয়ে আসছে।ওর ভিতরে এখন কিছুটা ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।নূর আদিত্যর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আদিত্য ওর দিকেই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
আদিত্যকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুকনো একটি ঢোক গিলে। কিন্তু আবার পরের মুহূর্তে নিজেকে নিজে সাহস যোগানোর জন্য মনে মনে বলল।

এখন ভয় পেলে হবে না, এখানে যখন এসেই পরেছি আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই যাবো। জীবনে কত কঠিন পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে জয়ী হয়েছি তাহলে এই আদিত্য চৌধুরী কি জিনিস।
কথাগুলো নিজেকে নিজে মনে মনে বলে এগিয়ে যায় আদিত্যের দিকে নূউ। নূর আদিত্যর কাছে গিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল।
কি সমস্যা তোমার?

নূর প্রশ্নটি করার পর আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই আদিত্য জবাবে বলল।
বউ কাছে নেই,এর থেকে বড় সমস্যা একজন পুরুষের আর কি হতে পারে।তেমনি আমার ও অনেক সমস্যা হচ্ছে নিজের বউ কে কাছে না পেয়ে। বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করতে পারছি না।একটু না অনেকটাই রোমান্স করতে চাই আমি আমার বউয়ের সাথে। কিন্তু বউ সব সময় পালাই পালাই করে।
নূর আদিত্যের কথা শুনে কিছুটা রেগে যায় তবুও নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।
আমি তোমার সাথে মজা করতে আসিনি,তাই সোজাসুজি বলো কি চাই তোমার। তুমি এই সকল কিছু কেনো করছো?
নূরের কথাটি বলার সাথে সাথেই আদিত্য হেঁয়ালি করে বলল।

বাসর করতে চাই,
আদিত্যর বলা হেঁয়ালি করে কথাগুলো শুনে নূরের মাথা গরম হয়ে গেল। নূর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আদিত্যর সামনে এসে নিজের এক আঙ্গুল আদিত্যর দিকে তাক করে বলতে লাগলো।
অনেক হয়েছে অনেক শুনেছি তোমার ফালতু কথা।তুমি যদি পরবর্তীতে আমাকে জ্বালানো বন্ধ না করো তাহলে তার ফলাফল ভালো হবে না।আমি তোমার সাথে কি করব তুমি ভাবতেও পারবে না।
নূরের কথা শেষ হতেই আদিত্য নূরের হাতটি খপ করে ধরে ফেললো। এবং নূরের হাত ধরে নিজের দিকে টান দিতেই নূর গিয়ে পরলো আদিত্যর কুলের উপর। আদিত্য তার দু হাত দিয়ে নূরকে এক প্রকার সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে। নূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। আদিত্য ও নূরের ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই। নূরের যেনো শ্বাস আটকিয়ে আসছে। আদিত্য নূরকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যে নূর নড়তেও পারছে না।
আমি ভবিষ্যৎ না বর্তমানে বিশ্বাসী তাই যা করার এখন এখানে করো।আমি একদম তৈরি আছি বউয়ের সাথে রোমান্স করার জন্য।

কথাটি বলেই আদিত্য নূরকে তার আর একটু কাছে টেনে নেয়। এদিকে নূরের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। নূর আজ পর্যন্ত কখনো কেনো পুরুষের এত কাছে আসেনি বা বলতে গেলে কেউ নূরকে আজ পর্যন্ত নিজের এত কাছে নিয়ে আসতে পারেনি। নূর আর সহ্য করতে না পেরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
আ..আমা… আমাকে ছাড়ো আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আ..আমি মরে যাবো।
আদিত্য নূরের কথা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল।
এখনো তো আমি কিছু করিনি এতেই তোমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বউ। যখন আমি কিছু করবো তখন তো তোমাকে খুজেও পাওয়া যাবে না।
কথাটি বলেই আদিত্য ছেড়ে দেয় নূরকে। আদিত্যর থেকে ছাড়া পেয়ে নূর ছিটকে ওর থেকে দূরে সরে যায় এবং জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে থাকে। নূর এমন ভাবে শ্বাস নিচ্ছে ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো এতক্ষণ কেউ ওর গলা চেপে ধরে রেখেছিল। নূর নিজেকে কিছু সময়ের ব্যবধানে স্বাভাবিক করে। এবং আদিত্যর দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

এর পরিণাম অনেক খারাপ হবে,
কথাটি বলেই নূর রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করার আগেই নূরের কানে আসে আদিত্যর বলা কথা। আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
I am waiting বউ
নূর আদিত্যের কথা শুনে বিরবির করে বলল।
বেহায়া..

রুদ্র রুমে বসে মোবাইলে ওর বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছে।সিরাত সারাদিন সাহানারা মির্জার সাথে কাজ করার পর সাওয়ার নিতে ঢুকে।সকালে একবার সাওয়ার নেওয়ার পরেও দুপুরে আবার সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে সিরাত।সিরাতের চুল থেকে পানি টপটপ করে পরছে।সিরাত সাওয়ার নিয়ে বের হতেই রুদ্রের চোখ যায় সিরাতের দিকে।সিরাতের দিকে তাকাতেই রুদ্রের চোখ যেনো সিরাতের উপরে থেকে যায়। রুদ্র জানেনা আজ কাল রুদ্রের চোখ দুটো সিরাতের দিকেই থেমে যায় কেনো।ও যেনো চোখ ফিরাতে পারে না সিরাত থেকে।আর যখন সিরাত নিজের হিজাব খুলে ওর রেশমী লম্বা চুল খুলে সিরাত রুদ্রের সামনে আসে তখন রুদ্রের চোখ যেনো সিরাতের দিকেই থেমে থাকে। রুদ্রের কাছে এখন সিরাতকে অপ্সরা মনে হচ্ছে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৭

রুদ্র সিরাত থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।চোখ সরিয়ে নেওয়ার পরেও বেহায়া চোখ বারবার সিরাতের দিকেই যাচ্ছে।সিরাত নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে রুদ্রের এখন মন চাইছে সিরাতের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু সিরাতের দিকে সরাসরি তাকানোও যেনো ওর জন্য ঘোর অপরাধ। কিন্তু নিজের মনের ইচ্ছা কে কিছুতেই দমাতে পারছে না রুদ্র।তাই রুদ্রের মাথায় ফট করে একটি বুদ্ধি উদয় হলো। রুদ্র হঠাৎ নূরকে বলে উঠলো।
রুদ্র বেডের থেকে উঠে কাভার্ড এর কাছে গিয়ে কাভার্ড টি খুললো এবং আস্তে করে ওটার ভিতর থেকে কিছু একটা বের করলো। এবং আবার চুপচাপ গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরলো। রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠার মতো ভাব করে বলল…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৯