তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪০

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪০
আমেনা আক্তার

রুদ্র ও টলতে টলতে বাড়ি ফিরেছে।অন্য সকল দিন রুদ্রের মা ওর জন্য অপেক্ষা করলেও আজ সাহানারা মির্জা ঘুমিয়ে পরেছেন। মূলত সিরাত উনাকে ঘুমানোর জন্য জোড় করে পাঠিয়েছে।সিরাত চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করছে। সাহানারা মির্জা সিরাতকে আগেই বলেছিল রুদ্র প্রায় মাতাল হয়ে বাড়িতে ফিরে। রুদ্র কে এই অবস্থায় দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখেও সিরাত এগিয়ে গেল না ওকে সামলানোর জন্য।সিরাত যেই খানে ছিল সেখানেই বসে আছে। রুদ্র ও সিরাত কে খেয়াল না করে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়।

রুদ্রকে রুমে যেতে দেখে সিরাত কোনো বাক্য ব্যয় না করে রুমে চলে যায়। রুদ্র রুমে এসে নিজের গায়ে থাকা জ্যাকেটটি ছুড়ে মারে বিছানার উপরে।তখনি সিরাত প্রবেশ করে রুমে। রুমে প্রবেশ করেই সিরাত রুদ্রের অবস্থা। উপলব্ধি করতে পারে রুদ্র ড্রিংক করে এসেছে।সিরাত এটিও খুব ভালো ভাবে জানে এখন রুদ্রকে কিছু জিজ্ঞেস করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।তাই সিরাত রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি বসো আমি তোমার জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসছি। রুদ্র সিরাতের কথা শুনে পিটপিট করে সিরাতের দিকে তাকায়।আর সিরাত যখনি শরবত আনবে রুম থেকে বের হবে রুদ্র সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি, তুমি আমার রুমে কি করছো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুদ্রের কথা শুনে সিরাত ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। রুদ্র তখনি কিছু মনে করার ভান করে বলতে থাকে।
ও মনে পরেছে, তুমি তো এখন আমার বউ।
কথাটি বলেই রুদ্র বোকার মতো হাসতে থাকে।একটি সময়ে হাসি বন্ধ করে সিরাতের কাছে এসে বলল।
কিন্তু তুমি তো জানো না বউদের কিছু দায়িত্ব থাকে।তার থেকে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো স্বামীর সেবা করা।আমি তোমার স্বামী তাই আজকের পর থেকে তুমি আমার সেবা করবে নো ঝগড়া।আমিই তোমার সব আজকের পর থেকে তুমি আমার কথা মতো চলবে।

কথাগুলো বলে রুদ্র বেডে ধপাস করে শুয়ে পরে এবং সিরাত কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আমি শুয়ে পরেছি এখন তোমার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করো। আমার পা দুটো খুব ব্যাথা করছে। আমার পা দুটো তুমি টিপে দিবে।
রুদ্র এমনি আরো অনেক কথা বিরবির করে বলছে সিরাত কে।সিরাত একটি লম্বা শ্বাস ছেড়ে রুদ্রের পায়ের থেকে ওর জুতো জোড়া খুলে দিলো এবং রুদ্রের ছুড়ে মারা জ্যাকেট সঠিক স্থানে রাখল।সিরাত রুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
কালকের পর থেকে তোমার সারাজীবনের জন্য নেশা করা আমি ছুটিয়ে দিবো। তুমি বুঝবে সিরাত কি জিনিস।
কথাটি বলেই সিরাত নিজের জায়গায় চলে যায় ঘুমানোর জন্য।

নতুন সকালের সূচনা ঘটেছে। সূর্যের আলো উঁকি ঝুঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে জানালার পর্দা ভেদ করে। কিন্তু সকাল নয়টা টা বাজার পরেও চোখ খুলতে চাইছে না রুদ্র। চাইবেই বা কি করে কাল তীব্র নেশার প্রভাব যে একটু আধটু আছে ওর মাঝে।তাই তো সূর্যের এই রশ্মি এখন বিরক্তের কারণ হচ্ছে রুদ্রের। রুদ্র বিরক্তি নিয়ে ওপাশ ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেই। কিন্তু একি রুদ্র তো নড়তেও পারছে না।মনে হচ্ছে রুদ্রের উপরে ভারি কোনো জিনিস চেপে বসেছে।তাই না চাইতেও রুদ্র পিটপিট করে নিজের চোখ দুটো মেলে দেখার চেষ্টা করে কি আছে ওর উপরে।
রুদ্র চোখ মেলতেই ওর চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। কারণ সিরাত রুদ্রের পেটের উপর বসে আছে। চুল গুলো সিরাতের এলোমেলো আর হাতে একটি ধারালো ছুরি। রুদ্রের মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে নিশ্চয়ই এটি কাল প্রচুর পরিমাণে ড্রিংক করার প্রভাব। রুদ্র নিজের চোখ বন্ধ করে আবার সিরাতের দিকে তাকায়। কিন্তু নাহ সিরাত তো এক চুলও নড়ে নি। রুদ্র শুকনো একটি ঢোক গিলে এবং মনে মনে ভাবে। কাল রাতে নিশ্চয় নেশার ঘোরে ও এমন কোনো কাজ করেছে যার জন্য সিরাত আজ ওকে মারতে চাইছে।সিরাতের উদ্দেশ্যে কন্ঠ কিছুটা নরম করে বলল।
কি..কি হয়েছে তুমি এভাবে এই ছুড়ি নিয়ে আমার উপরে বসে আছো কেনো।

রুদ্রের কথা শুনে সিরাত বলল।
আমি আমার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। তুমিই তো কাল বলেছিলে স্ত্রীর কিছু কর্তব্য রয়েছে তা আমারও পালন করতে হবে।আমি সেই স্ত্রীর দায়িত্ব এখন পালন করব।
তুমি ছুরি দিয়ে কি দায়িত্ব পালন করতে এসেছে।এটি দিয়ে মানুষ মারা হয় কোনো দায়িত্ব পালন হয় না। তোমার কোনো দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন নেই। তুমি শুধু দয়া করে আমার উপর থেকে এই ছুড়ি নিয়ে উঠো।
অবশ্যই দরকার আছে, স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার।আর এই ছুড়ি দিয়ে স্বামীকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করতে হয়।

কথাটি বলেই সিরাত তার হাতে থাকা ছুরি ধরে রুদ্রের গলায়। রুদ্র সিরাত কে নিজের গলায় ছুরি ধরতে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকায় সিরাতের দিকে। রুদ্র কে এভাবে তাকাতে দেখে সিরাত আবার বলল।
তুমি কি মনে করেছ, তুমি রাতে নেশা করে বাড়ি ফিরবে আর আমি বাংলা ছায়াছবির নায়কা শাবানার মতো ঘরের এক কোনায় বসে কান্না করব। আবার সকাল হতেই তোমার সেবা করার জন্য লেগে পরব।এতটা অবলা নারী মনে করেছ আমায়।
না না বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনো এত অবলা নারী মনে করি নি।আমি তো প্রথম থেকেই জানি তুমি অবলা না হিটলার।
কি?

না না মানে তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে।
আরে তুমি ভুল বুঝেছ আমাকে আমি ভালো মেয়ে না। আমি আসলেই হিটলার।আর অনেক খারাপ আমি বেশি খারাপ তখন হয়ে যাই যখন আমার স্বামী অন্য মেয়ের বিরহে নেশা করে বাড়ি ফিরে।
আমি কারও বিরহে নেশা করে বাড়ি ফিরিনি। আমার অভ্যেস হয়ে গেছে নেশা করতে করতে তাই ছোট খাটো বিষয়েও একটু আধটু নেশা করে ফেলি।
সিরাত ভ্রু কুঁচকে বলল।
একটু আধটু,
না মানে একটু বেশিই।

আজকের পর থেকে সব নেশা বন্ধ,আমি যেনো কখনো তোমার কাছ থেকে সিগারেটের গন্ধটাও না পাই।আর যদি পাই তাহলে তুমি তো থাকবে কিন্তু তোমার একটু আধটু নেশা করার জন্য মাথাটাই থাকবে না বুঝেছ।
হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি,আমি আর নেশা তো দূরের কথা নেশার আশে পাশেও থাকব না।
সিরাত রুদ্রের কথা শুনে মুচকি হেসে ওর উপর থেকে নেমে গেল। রুদ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এতক্ষণ ওর খারাপ অবস্থা হয়ে ছিল মনে হচ্ছিল এই মনে হয় সিরাত গলায় ছুরিটা চালিয়ে ওর কিচ্ছা খমত করে দিবে। আল্লাহ কি সাংঘাতিক বউ পেয়েছে ও।
সিরাত নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হয়ে আসে। ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখতে পায় সালেহা মির্জা সোফায় বসে বসে পান চিবাচ্ছে।সিরাত কে দেখতেই সালেহা মির্জা বলে উঠলেন।
আমাদের বাড়ির বউরা এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠে না। আমাদের সকালের নাস্তা খেয়ে হজম ও হয়ে গিয়েছে। তোমার শাশুড়ি সব একা একা করেছে।তুমি তোমার শাশুড়িকে সাহায্য না করে সকাল নয়টা বাজে ঘুম থেকে উঠেছো। তোমার মাঝে কি সামান্য পরিমাণও ঙ্গান নেই।

কি করব বলেন দাদি, আপনার নাতি যদি মাঝ রাতে মদ গিলে বাড়িতে ফিরে তাহলে তার জন্য তো আমাকেও তো অর্ধেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়েছে।আর বলছেন ঙ্গানের কথা।আমি নাহলে দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠেছি। আমার চাচি শাশুড়ি তো আপনার সাথেই উঠেছে উনি কি আম্মুর সাহায্য করতে পারতেন না। কিন্তু না আপনারা শুধু ঙ্গান দেওয়ার কথা মুখেই বলতে পারেন কিন্তু কাজের সময় শূন্য।
কথাটি বলেই সিরাত কিচেনে চলে যায় আর এদিক দিয়ে সালেহা মির্জা রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
সাহানারা তোর ছেলের বউয়ের মুখে লাগাম লাগা।পরশু ওদের রিসিপসন। সেখানে অনেক বড় বড় মানুষ আসবে।তোর ছেলের বউ যদি এভাবেই বেয়াদবি করতে থাকে তাহলে সবার সামনে আমাদের নাক কাটা যাবে।
কথাটি বলেই সালেহা মির্জা বিরবির করে বলল।
রিসিপসন তো শুধু বাহানা পরশু এই মেয়ের আসল যায়গা দেখাবো আমি।

আব্রাহামের বাবা মা দুজনে চিন্তিত অবস্থায় আব্রাহামের রুমে বসে আছে। সারারাত দুজনে একসাথেই আব্রাহামের রুমে ছিল। ছেলের চিন্তায় কারও ঘুম হয় নি। আব্রাহাম ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই ওর বাবা মাকে নিজের রুমে দেখে চমকে উঠলো। এবং বলল।
বাবা মা তোমরা এই রুমে কি করছ,তাও এত সকালে।
আমরা সারারাত এখানেই ছিলাম,
মায়ের কথা শুনে আব্রাহাম অবাক হয়ে বলল।
তোমরা সারারাত এখানে ছিলে, কিন্তু কেনো?
তোর জন্য,তোর কি হয়েছে বল বাবা। তুই কাল রাতে আমাকে ধরে এভাবে কান্না করছিলি কেনো?আর তুই কোন মেয়ের কথা বলছিলি বল।
আব্রাহাম বুঝতে পারলো ও নেশার ঘরে হয়তো নিজের আবেগকে সামলাতে পারে নি। আব্রাহাম কথাটি এড়াতে বলল।

তোমরাও না,আমি নেশার ঘোরে কি না কি বলেছি।সেটা বিশ্বাস করে আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছো কোন না কোন মেয়ের কথা। সিরিয়াসলি।
আব্রাহামের কথা শুনে ওর বাবা চোখ মুখ শক্ত করে বলল।
আমরা বাচ্চা নয় আব্রাহাম,আমরা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারি কোন কথা তোমার নেশার ঘোরে বলা।আর কোন কথা তোমার মন থেকে বলা।আর কাল রাতে তোমার কান্না দেখেই বুঝতে পেরেছি তুমি মেয়েটাকে প্রচুর পরিমাণে ভালোবাসো।
আব্রাহামের বাবার কথা শুনে আব্রাহামের মা বলল।
তোর বাবা ঠিকই বলছে,আর যদি আমরা ভুল হয়ে থাকি তাহলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।
আব্রাহাম ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না।তাই ও এখান থেকে চলে যায়। আব্রাহামের বাবা মা শুধু তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৯

নূর বসে আছে পুলিশ স্টেশনে।আজ নূর আদিত্যর নামে পুলিশ কাছে কমপ্লেন করতে এসেছে। নূর বসে আছে পুলিশ ইন্সপেক্টরের সামনে…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪১