তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪১
আমেনা আক্তার
পুলিশ ইন্সপেক্টর নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
আপনি যার নামে রিপোর্ট লেখাতে চান তার নাম বলুন।
নূর পুলিশের কথা শুনে বিনা সংকোচে বলে উঠল।
আদিত্য চৌধুরী,
পুলিশ আদিত্য চৌধুরী নামটি শুনে নূরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। এবং নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
আপনাকে এই লোকটি ডিস্টার্ব করে তার রিপোর্ট লেখাতে এসেছেন তাই না।
নূর আবার সংকোচে হীন ভাবে বলে উঠল।
হ্যাঁ,
পুলিশ নূরের কথা শুনে কিছু না বলে আবার রিপোর্ট লেখা শুরু করে।আপনি কি আদিত্য চৌধুরীর বাবার নাম জানেন।
হ্যাঁ, আফজাল চৌধুরী।
নূরের মুখে আফজাল চৌধুরী নামটি শুনে পুরো পুলিশ স্টেশন মুহূর্তের জন্য যেনো স্তব্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ইন্সপেক্টর বিস্ফোরিত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল।
আপনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরীর ছেলে আদিত্য চৌধুরীর নামে রিপোর্ট লেখাতে এসেছেন।
নূর পুলিশের কথায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল।
হ্যাঁ আমি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরীর ছেলে আদিত্য চৌধুরীর কথা বলছি। এখন দয়া করে রিপোর্ট লিখুন।
না আমরা রিপোর্ট লিখতে পারবো না।আপনি জানেন আপনি কার নামে রিপোর্ট লিখাতে এসেছেন। উনারা কতটা ক্ষমতাবান লোক।আর আদিত্য চৌধুরী উনাকে আপনি চিনেন উনি জানলে আপনি উনার নামে রিপোর্ট লেখাতে এসেছেন। আপনার সাথে কি কি করতে পারেন উনি। আপনাকে আর এই শহরে কি এই দুনিয়ায় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
পুলিশের কথায় নূর প্রচুর পরিমাণ বিরক্ত হয়ে বলল।
আমি আপনার কাছে কোনো জ্ঞান চেয়েছি। আপনার কাছে একজনের নামে রিপোর্ট লিখাতে এসেছি কিন্তু আপনারা রিপোর্ট তো লিখছেন না উল্টো আমাকে জ্ঞান দিচ্ছেন।
হ্যাঁ জ্ঞান দিচ্ছি কারণ আপনি আদিত্য চৌধুরীর নামে একটি মিথ্যা রিপোর্ট লিখাতে এসেছেন।উনি কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করবে তো দূরের কথা কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেও পছন্দ করে না। আপনার মতো হাজারটা মেয়ে আদিত্য চৌধুরীর আশে পাশে ঘুরে কিন্তু কারো দিকে উনি ফিরেও তাকায় না।আর আপনি বলছেন উনি আপনাকে ডিস্টার্ব করে।
আপনার কাছে আদিত্য চৌধুরীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চাইনি আমি।আমি এই কদিনে খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে ওই লোক কেমন।আপনি আমার রিপোর্ট লিখবেন কিনা তা বলুন।
নূর চিল্লিয়ে ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো। নূরের কথা শুনে পুলিশ ইন্সপেক্টর কিছু বলার আগেই অন্য আরেকজন পুলিশ নূরের কাছে এসে বলল।
আরে ম্যাডাম আপনি তো উত্তেজিত হয়ে পরছেন। আমরা অবশ্যই আপনার রিপোর্ট লিখবো আপনি একটু বসুন। কথাটি বলেই পুলিশটি দ্বিতীয় পুলিশ কে চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতেই উনি আর কিছু বললেন না। দ্বিতীয় পুলিশ নূরকে বসিয়ে চলে আসলো অন্য যায়গায় এবং ফোন মিলালো আরিফের নাম্বারে।
আদিত্য এখন তার গাড়িতে বসে আছে।গাড়ি চলছে আদিত্যের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আদিত্যর মা কিছু জরুরী কাজের জন্য আদিত্য কে ডেকে পাঠিয়েছে। আরিফ বসে আছে গাড়ির সামনের সিটে। আরিফের ফোন বেজে উঠতেই ও ফোনের দিকে তাকায় আরিফ। ফোনে ভেসে উঠা নাম্বারটি দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে আরিফ। আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আরিফ বলল।
ভাই থানার এসপি ফোন করেছে,
আদিত্য গম্ভীর গলায় বলর।
রিসিভ কর,
আরিফ ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাস থেকে বলা এসপির কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলল আরিফ। এবং আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল।
ভাই একটি মেয়ে নাকি থানায় গিয়ে আপনার নামে মামলা করতে চাইছে তাও আবার ওই মেয়ে বলছে আপনি নাকি ওই মেয়েকে ডিস্টার্ব করেছেন।
আদিত্য আরিফের কথা শুনে গম্ভীর গলায় বলল।
এসিপি কে বল,ও তোর ভাবি হয় ওর যেনো কোনো সমস্যা না হয় থানায়।ওর যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে পুরো পুলিশ স্টেশন গোরস্থান পরিনত হবে।আমি আসছি।
আদিত্যর কথা ওপাশে থাকা এসিপি সবই শুনেছে। এসিপি ফোনের ওপাশ থেকে কাঁপতে কাঁপতে বলল।
আপনি চিন্তা করবেন না ম্যাডামের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা ওনার খেয়াল রাখব আদিত্য স্যার আসা পর্যন্ত।
আরিফ ফোন কেটে দিয়ে আদিত্যর দিকে তাকায়। অতঃপর অনেক কষ্টে মনে সাহস সঞ্চয় করে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল।
ভাই যদি আপনার অনুমতি হয় তাহলে একটি কথা জিজ্ঞেস করব।
কর?
আদিত্যর অনুমতি পেয়ে আরিফ একটি ঢোক গিলে বলল।
ভাই এসপি তো কোনো মেয়ের নাম বলেনি। তাহলে আপনি বুঝলেন কিভাবে ভাবি আপনার নামে রিপোর্ট লিখাতে গিয়েছে।
তোর কি মনে হয়,তোর ভাবি ছাড়া এই শহরে আর কোনো মেয়ের এত বড়ো সাহস আছে যে আদিত্য চৌধুরীর নামে পুলিশ ইস্টিশনে রিপোর্ট লিখাতে যাবে।
আরিফ মাথা নেড়ে না সম্মতি দিয়ে আবার বলল।
কিন্তু ভাই বড়ো ম্যাম যে আপনাকে বাড়িতে জরুরিভিত্তিতে যেতে বলেছে। এখন বাড়িতে না গেলে তো বড় ম্যাম..
কথাটি সম্পূর্ণ করতে পারল না আরিফ আদিত্যর লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো দেখে থেকে যায়। আদিত্য আরিফের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
আমি কি করব এর কৈফিয়ত এখন আমার তোকে দিতে হবে। আদিত্য চৌধুরী এক আল্লাহ কে ছাড়া আর কাওকে ভয় পায় না। সেটা ওর বাবা মা যেই হোক না কেনো।আর আমি আমার কাজের জবাব ও কাওকে দিতে পছন্দ করি না।
আরিফ মাথা নিচু করে বলল জ্বি ভাই,
এসিপি ফোনে কথা শেষ করে এসে নূরের সামনে বসে থাকা ইন্সপেক্টর কে কিছু বলতেই ইন্সপেক্টরের কপাল পেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে। নূর হঠাৎ ইন্সপেক্টরের এই অবস্থার কারণ বুঝতে পারছে না। নূর চোখ ছোট ছোট করে ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল।
কি হয়েছে আপনার আপনি এভাবে ঘামছেন কেনো। আপনার শরীর অসুস্থ মনে হচ্ছে।
ইন্সপেক্টর নূরের কথার জবাবে বলল।
কিছু না, আপনি বসুন ম্যাম আপনি কিছু খাবেন।
কথাটি বলেই ইন্সপেক্টর একজনকে উদ্দেশ্য করে বলল।
এই ম্যামের জন্য চা নাস্তা নিয়ে আস। ইন্সপেক্টর কথাটি বলে নূরের উদ্দেশ্যে আবার বলল।
ম্যাম আপনার কি সমস্যা হচ্ছে এই পুরোনো চেয়ারে বসতে যদি সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলুন আমি এখনি এটা বদলে নতুন চেয়ার এনে দিচ্ছি।
নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুলিশ ইন্সপেক্টরের দিকে একটু আগে যেই লোক তাকে কথা শুনাচ্ছিল এখন কিনা সেই লোক নূরের সুবিধা অসুবিধা জানার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। নূরের কাছে ভালো ঠেকলো না বিষয়টি তাই নূর বলল।
কি হয়েছে আপনার একটু আগেও তো আপনি আমাকে আদিত্য চৌধুরীর নামে রিপোর্ট লিখাতে না করছিলেন।আর এখন আপনি আমার সুবিধা অসুবিধা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে পরছেন কেনো?
নূরের কথায় পুলিশ ইন্সপেক্টর বলল।
ম্যাম তখনকার ব্যবহারের জন্য আমি মাফ চাইছি আপনার কাছে। তখন তো আমি জানতাম না আপনি আসলে আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী।
পুলিশ ইন্সপেক্টরের কথা শুনে নূর রাগান্বিত হয়ে বলল।
আপনাকে কে বলেছে?আমি আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী।
নূর কথাটি বলার সাথে সাথে পিছন থেকে আদিত্য বলে উঠলো।
আমি বলেছি,
নূর পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে পিছনে তাকাতেই আদিত্য কে দেখে কিছুটা অবাক হলো। আদিত্য এই সময় এখানে কি করছে। সাথে নূর কিছুটা রাগান্বিত হয়ে আদিত্য কে জিজ্ঞেস করল।
তুমি এখানে কি করছো?
নূরের কথায় আদিত্য বলল।
শুনলাম তুমি আমার নামে থানায় রিপোর্ট লিখাতে এসেছ।তাই ভাবলাম আমি যদি তোমার সামনে থাকি তাহলে তোমার কিছুটা সহজ হবে রিপোর্ট লিখাতে।
আদিত্যর কথায় নূর জেনো জ্বলে উঠলো। এবং পুলিশ কে বলল।
আপনারা জানিয়েছেন না ওকে,
নূর আর কিছু বলার আগেই আদিত্য নূরকে কুলে তুলে নেয়। নূর হতভম্ব হয়ে যায় আদিত্যর আচরণে ও কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিত্য নূরকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে যায়। পুলিশগুলো পিছন থেকে মুচকি মুচকি হাসছে। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ বলে উঠলো।
আদিত্য চৌধুরীর মনে হয় ওনার স্ত্রী নূর চৌধুরীর সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই ওনার স্ত্রী রাগ করে ওনার নামে রিপোর্ট লিখাতে এসেছিলেন।
এদিকে নূর যখনি বুঝতে পারে ও এখন আদিত্যর কুলে রয়েছে তখনি নূর মুচড়া মুচড়ি শুরু করে দেয়। আদিত্য গাড়ির সামনে আসতেই আরিফ দরজা খুলে দেয় আদিত্য নূরকে জোড় করে গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে নিজেও বসে পরে নূরের সাথে।আরিফ সামনে বসতে নিলে আদিত্য কড়া কন্ঠে বলে উঠলো।
আমার বউয়ের সাথে রোমান্স কি আমি তোর সামনে করব ইডিয়েট।
আদিত্যর কথায় আরিফ শুকনো একটি ঢোক গিলে অন্য গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে গাড়ি চলছে নূরের অজানা গন্তব্যে।এদিকে নূর আদিত্যের উদ্দেশ্যে বলল।
ছাড় শয়তান আমাকে,আমাকে তুই এভাবে ধরে এনেছিস কোনো ছাড় আমাকে।
নূরের কথা শুনে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল।
By any chance,তুমি কি বাংলা সিনেমার নায়কা হতে চাচ্ছো।তাই নায়িকাদের মতো ছেড়ে দে শয়তান ডায়লগ বলছ।
আদিত্যর কথা শুনে নূর কি বলবে বুঝতে পারে না।ও এই মুহূর্তে আদিত্যর মুখ থেকে এমন কেনো কথা আশা করেনি।তাই নূর অবাক হয়েই আদিত্য কে জিজ্ঞেস করলো।
কি?
আদিত্য মুচকি হেসে বলল।
তুমি যখন বাংলা সিনেমার নায়কা হতে চাইছো তাহলে আমারও তো ভিলেন হয়ে দেখাতে হবে।
আদিত্যর কথা আবার বুঝতে পারল না নূর। নূর কিছু বলার আগেই আদিত্য ড্রাইভার ও ওদের মধ্যে থাকা পর্দাটা টেনে দিলো। এবং নিজের দুটো ঠোঁট নূরের দুটি ঠোঁটের সাথে এক করে দিলো। নূর হতভম্ব হয়ে গেছে আদিত্যর আচরণে। নূর নিজের পুরো দম দিয়ে আদিত্য থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নূর। কিন্তু নূরকে ব্যর্থ করে নিজের আরো কাছে চেপে ধরে আদিত্য। নূরের নিঃশ্বাস যেনো আটকে আসছে।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আদিত্য নূরের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আদিত্য নূরকে ছেড়ে দিয়ে নূরের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় নূর অচেতন হয়ে গেছে। আদিত্য নূরকে নিজের বুকে আগলে ধরে মুচকি হেসে বলল।
এত দূর্বল হলে চলবে কি করে বউ, তুমি আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী তোমার আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে।আরও অনেক কিছু যে এখনও বাকি রয়েছে।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একাধারে কেঁদে চলেছে নূর। নূরকে ঘিরে আছে ওর বন্ধুরা।সকলে নূরকে এভাবে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হয়েছে।আর অবাক হওয়ারই বিষয় কেননা আজ পর্যন্ত ওরা সকলে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে নূরকে শক্ত থাকতে দেখেছে।আর আজ সেই নূর কিনা এভাবে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে।রাজ নূরকে এভাবে কান্না করতে দেখে বলল।
কি হয়েছে পাথর কখন থেকে কান্না করছিস। এখন তো বল কি হয়েছে?
রাজের কথার সাথে সহমত প্রকাশ করে হৃদিতা বলল।
হ্যাঁ জান প্লিজ বল, তোর কান্না দেখে আমারও কান্না এসে পরছে।
হৃদিতার কথায় নূর নিজের মাথা তুলে তাকায় এবং সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখ।
নূরের কথা অনুযায়ী সকলে ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আতংকে উঠলো এবং রুদ্র বলল।
তোর ঠোঁটের এই অবস্থা করেছে কে এতটা ফুলে রয়েছে। সত্যি কথা বল জান আমাদের না জানিয়ে কাকে চুমু দিয়ে এসেছিস।
আমি কাওকে চুমু দেয়নি আমাকে চুমু দিয়েছে।
নূরের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠল।
কে,
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪০
আদিত্য, আদিত্য চৌধুরী আমাকে জোড় করে চুমু দিয়েছে আমাকে।
কথাটি বলেই তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা নূর ওদের খুলে বলল।
সকল ঘটনা শুনে রুদ্র অবাক হয়ে বলল।
আমি বিয়ে করে এখনো বউয়ের সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারলাম না।আর ও বাসরের প্রসেসিং ও শুরু করে দিয়েছে।