তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৬

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৬
আমেনা আক্তার

সিরাত নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে রুদ্র বিছানার উপর বসে রয়েছে চুপ করে।সিরাত রুদ্রের কাছে গিয়ে বলল।
অনেক রাত হয়ে গিয়েছে বসে না থেকে শুয়ে পরো।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে জোড় পূর্বক একটি হাসি দিয়ে শুয়ে পরলো। রুদ্র অনেক ক্লান্ত বাড়িতে অনুষ্ঠানের পর আর বিশ্রাম করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। রুদ্র এতক্ষণ ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু রুদ্র এসির নিজে ও আরাম দায়ক বেডে ঘুমানোর অভ্যাস থাকার কারণে ওর এখানে ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু রুদ্র নিজের অসুবিধার কথা সিরাতের সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না।সিরাতের যদি মনে হয় রুদ্র ওদের বাড়িতে না থাকার বাহানা বানাচ্ছে। এমনিতেও রুদ্রের দাদি রুদ্র কে সিরাতদের বাড়িতে আসতে মানা করেছিলেন। কিন্তু রুদ্র রেহানা বেগমের মন রক্ষা করতে এসেছে।ও সিরাতের সাথে সিরাতের অতীতের থাকা পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে এসেছে।

সিরাতের বাড়ির খাট রুদ্রের বাড়ির খাটের তুলনায় অনেকটা ছোট।তাই রুদ্র খাটে শুতেই বিছানার অর্ধেক দখল করে নিলো রুদ্র।সিরাত সেদিকে তাকিয়ে একটি শ্বাস ফেলে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পরে । রুদ্র এপাস ওপাস করছে তবুও কিছুতেই ওর চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।সিরাত রুদ্রের এত নড়াচড়া করার কারণে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারছে না। রুদ্র যেমন ক্লান্ত তেমন তো সিরাত ও খুব ক্লান্ত।ওর এখন জরুরি ভাবে ঘুমের প্রয়োজন।
তাই সিরাত বিরক্ত হয়ে কিছুটা রাগ নিয়ে রুদ্রের দিকে ফিরতেই রুদ্রের কপালের সাথে ওর কপাল বারি খায়। দুজনে আউচ করে শব্দ করে দুজনের দিকে তাকাতেই একজন আরেকজনের একবারে কাছে আবিষ্কার করে। রুদ্র ও সিরাত বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে একজন আরেকজনের দিকে।ওরা এখন একজন আরেকজনের এত কাছে আছে যে একজনের শ্বাসের শব্দ আরেকজনের কানে এসে বারি খাচ্ছে। ওদের দুজনকে শ্বাস প্রশ্বাস যেনো ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। রুদ্রের মনে সিরাতকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে। রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে শুকনো একটি ঢোক গিলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিরাত আর এই দম বন্দি পরিস্থিতি নিতে পারছে না।তাই সিরাত অন্য পাশ ফিরে শুতে নিলেই রুদ্র নিজের বলিষ্ঠ হাত ধারা ওকে আটকে ফেলে।সিরাত রুদ্রকে এভাবে নিজেকে আটকাতে দেখে খুব ধীরে বলল।
ছাড়ো,
সিরাত কথাটি বলতেই রুদ্র সিরাতের মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল।
ছাড়বো না এভাবেই থাকো,
কথাটি বলেই রুদ্র নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।সিরাত ও আর কোনো উপায় না পেয়ে রুদ্রের বুকেই ঘুমিয়ে যায়। রুদ্রের এতক্ষণ ঘুমাতে সমস্যা হলেও সিরাত কে নিজের বুকে নিতেই ওর বুকে যেনো প্রশান্তিময় হাওয়া বয়ে যায়।সাথে রুদ্রের চোখে ঘুম নেমে আসে।

রুদ্ররা সকল বন্ধু মিলে গভীর আলোচনা করছে সিরাতের রুমে। হৃদিতা সকাল সকাল সকল কে বলে দিয়েছে ওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে সকলের সাথে। রুদ্র সিরাত কে কথাটি বলতেই সিরাত ওদের বাড়িতে আসতে বলেছে সকলকে। রেহানা বেগম কালই সিরাত কে বলেছিল রুদ্রের বন্ধুদের যাতে সকালে নাস্তার দাওয়াত দেয় কিন্তু সিরাত ভুলে যাওয়াই রুদ্র কে বলা হয়নি। রুদ্র যখন ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল তখন সিরাতের মনে পরে যায় কথাটি । তখনি সিরাত রুদ্রকে বলেছে ওদের কে বলেছে সিরাতের বাড়িতে আসতে ।
আব্রাহাম হৃদিতার দিকে তাকিয়ে ওকে প্রশ্ন করল।
এত জরুরি তলব করলি কেনো,

আব্রাহামের কথার প্রতি উত্তরে হৃদিতা বলল।
বলব কিন্তু, আমার কথা শুনে কেউ হাইপার হতে পারবে না।
আব্রাহাম ও তার বন্ধুরা এটি খুব ভালোভাবে জানে কথাটি আরশাদ কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। আরশাদ হৃদিতার দিক কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
কি এমন কথা বলবি যা শুনে আমাদের হাইপার হতে হবে?
আমি হাইপার হতে না করেছি আর তুই কথা শোনার আগেই হাইপার হয়ে যাচ্ছিস।যদি এমন ব্যবহার করিস তাহলে আমি বলব না।
হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করে বলল।
ঠিক আছে হাইপার হব না,কি বলবি বল।
আরশাদের কথা শুনে হৃদিতা ভাব অলসহীন ভাবে বলল।
শিহাবের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।আমার ও শিহাবের কাবিনের দিন তারিখ ও ঠিক হয়ে গেছে সামনের শুক্রবার।

হৃদিতার কথা শুনে যেনো আরশাদের রাগ দমন করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। আরশাদ নিজের রাগ তবুও দমন করার প্রচেষ্টা করতে নিজের চুল খামচে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। আরশাদ রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
কখন ঠিক করেছে?
কাল রাতে,
আরশাদ রুদ্রের কথা শুনে একদম হৃদিতার নিকটে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
কাল রাতে ঠিক হয়েছে,আর তুই আমাদের এখন বলছিস।আর তুই বিয়ের জন্য রাজি হলি কেনো? বিয়ের জন্য মানা কেনো করে দিলি না?

আরশাদের কথা শুনে হৃদিতার মনে একটু দুষ্টু বুদ্ধি আছে।তাই হৃদিতা আরশাদ কে আরেকটু রাগিয়ে দিতে বলল।
আমি কেনো না বলব, বিয়েতে না বলার বিশেষ কারণ তো দেখছি না।বাবা যখন আমার সাথে শিহাবের বিয়ে ঠিক করেছে তাহলে তো নিশ্চয়ই কিছু ভেবে তারপর আমাদের বিয়ে ঠিক করেছে।তাই তোদের আমি দাওয়াত দিতে এসেছি। সামনের শুক্রবার আমার ও শিহাবের বিয়ে, তোরা সবাই গিয়ে পেট পুরে খেয়ে আসিস।
হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ একদম শান্ত চোখে হৃদিতার দিকে তাকায়। সবাই তাকিয়ে আছে আরশাদের দিকে আর আরশাদ তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে। আরশাদ খুবই শান্ত স্বরে হৃদিতার উদ্দেশ্যে বলল।
তোর মনে হয় ওই কুত্তার বা** লাশ দেখতে মন চাইছে তাই এই কথা বলছিস।ঠিক আছে তুই যখন চাইছিস আমারও কেনো সমস্যা নেই ওকে কবরে পাঠাতে।
সকলে জানে আরশাদের বলা কথাটি খুবই সিরিয়াস।ও শান্ত ভঙ্গিতে কথাটি বললেও এর গুরুত্ব অনেক তাই হৃদিতা শুকনো ঢোক গিলে আরশাদ কে বলল।

আমি শয়তানি করছি, আমার কোনো শখ নেই ওকে বিয়ে করার।আর ওকে মারার ও কোনো প্রয়োজন নেই। এমন কিছু ভাবতে হবে যেনো সাপ ও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে।
হৃদিতার কথার সাথে রুদ্র ,নূর, আব্রাহাম ও রাজ সম্মতি প্রকাশ করে আরশাদ কে শান্ত করে বসিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে যায় ওরা সকলে। ওদের প্রধান লক্ষ্যই হলো কিভাবে ঝামেলা বিহীন হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গা যায়। কারণ ওদের খুব ভালোভাবে জানা আছে হৃদিতার বাবা কতটা কঠোর টাইপের।পরে দেখা যাবে হৃদিতা কে ওদের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিবে।তাই ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করতে চাই না।
এর মধ্যে সিরাত কিছু খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। সিরাত রুমে প্রবেশ করার পরেও কারও ধ্যান ওর দিকে নেই সবাই কে চিন্তায় মশগুল থাকতে দেখে সিরাত সকলের উদ্দেশ্যে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল।
কি হয়েছে তোমাদের সকলে একসাথে কোন ভাবনায় হারিয়ে গেছ।
সিরাতের কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গে সকলের।সিরাত ওদের সামনে খাবার রাগে কাওকে কিছু না বলতে দেখে সিরাত আবার বলল।

তোমাদের পার্সোনাল বিষয় হলে বলার দরকার নেই।
সিরাতের কথা শুনে হৃদিতা হাসি মুখে বলল।
এমন কিছু না যে তোমাকে বলা যাবে না,আসলে বাবা আমার মতের বিরুদ্ধে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে ওকে আমি পছন্দ করি না।তাই এই বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গা যায় সেই কথায় চিন্তা করছি।
সিরাত হৃদিতার কথা শুনে ওর উদ্দেশ্যে বলল।
কোন কারণে তুমি ওই ছেলেকে পছন্দ করো না।
অনেক চিপকু স্বভাবের,আর আমার বাবার সামনে এক রুপ ও বাইরে অন্য রুপ ধারণ করে। আমার বাবার সামনে দুনিয়ার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে হয়ে থাকে।আর বাইরে সবচেয়ে বেয়াদব।
হৃদিতার কথা শুনে সিরাত কিছু একটা ভেবে বলব।
আচ্ছা ওকি শুধু তোমার সাথে চিপকে থাকে নাকি অন্য মেয়েদের সাথেও একই রকম আচরণ করে।
ওই শয়তান সবার সাথে একই আচরণ করে। যেই মেয়েকে দেখে তারই পিছে পরে থাকে ।
তাহলে তো তোমার জন্য এই বিয়ে ভাঙ্গা খুবই সহজ,

সিরাতের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠলো।
কিভাবে,
খুব সহজ, তোমার বাবার সামনে ওর আসল চেহারা তুলে ধরো তাহলেই দেখবে তোমার বাবা নিজ থেকে বিয়ে ভেঙে দিবে।
এই চেষ্টা অনেক আগেও আমি করেছি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।ও খুব চালাক ওর পিছনে যদি কোনো মানুষ লাগাই তাহলে কিভাবে জানি ও সব বুঝে ফেলে ও সাবধান হয়ে যায়।
হৃদিতার কথা শুনে সিরাত মুচকি হেসে বলল।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪

মানুষ লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই,আমরা এমন কিছু করব যে ও বুঝতেও পারবেনা আর ওর বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ আমাদের হাতে থাকবে।
কথাটি বলেই রহস্যময় হাসি দেয় সিরাত,আর সিরাতের কথার অর্থ না বুঝতে পেরে সকলে ওর পানে তাকিয়ে থাকে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৭