তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫০

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫০
আমেনা আক্তার

আর্তনাদ করতে করতে হসপিটালে প্রবেশ করে আয়না ও আব্রাহামের বাবা মা। নিজেদের সন্তানদের জন্য যে ওনাদের জান বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আয়নার মা রাজের সামনে এসে দাঁড়ায়।রাজ নিজের মাকে কিছু বলার আগেই রাজের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারে।রাজ আহত দৃষ্টিতে তাকায় মায়ের দিকে। রাজের মা রাজকে থাপ্পড় মেরে শান্ত হতে পারেনি।তাই রাজের শার্টের কলার ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল।
তোর উপর বিশ্বাস করে আমি আয়নাকে একা যেতে দিয়েছি।আমি ভেবেছিলাম তুই যখন বলেছিস তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। তুই তোর বোনের খেয়াল রাখবি। কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম তুই ওর খেয়াল রাখিস নি। তুই যদি ওর সাথে যেতি তাহলে আয়নার এই অবস্থা হতো না। কেমন ভাই তুই যে নিজের ছোট বোনের খেয়াল রাখতে পারলি না।আজ তোর বোনের এই অবস্থা শুধু তোর বেখেয়ালির জন্য আজ আয়নার এই অবস্থা হয়েছে।

কথাগুলো বলে থামে রাজের মা।ওনি এখন অঝোরে কান্না কান্না করছে
রাজের বাবা ও একটি চেয়ারে চুপচাপ বসে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক আদরের মেয়ে ওনার আয়না। মেয়ের জন্য নিজের কলিজা কেটে খাওয়ালেও উনার কম মনে হয়।আর আজ সেই মেয়ের কিনা এই অবস্থা। এদিকে রাজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ওর যে কিছু বলার মতো ভাষা নেয়। একদিকে ওর প্রাণের চেয়েও প্রিয় বোন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।তো আরেকদিকে ওর প্রাণ প্রিয় বন্ধু। একজন যদি ওর হৃদয় হয় তাহলে আরেকজন সেই হৃদয়ে চলা শ্বাস। রাজের ভিতরে এখন কি চলছে শুধু এটি রাজই জানে।
রাজ নিজের মায়ের দিকে এক নজর তাকায় যে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কান্না করে চলেছে। আরেকদিকে আব্রাহামের বাবা মা যেনো ছেলের অবস্থা দেখে পাথর বনে গেছে। আব্রাহামের বড়ো ভাই বাবা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আব্রাহামের বড়ো ভাইয়ের চেহারা দেখেও বুঝা যাচ্ছে আব্রাহামের অবস্থা দেখে কতটা বেদনায় আছে।
রাজ ওদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটি চেয়ারে বসে পরে। এবং দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ আগের কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অতীত..
আব্রাহাম দৌড়ে দোকানে গিয়ে যখন আয়নাকে পায় না। তখন পাগলের মতো আব্রাহাম আয়নাকে খুঁজতে খুঁজতে এদিক থেকে সেদিক ছুটতে থাকে।ইতি মধ্যে গুন্ডা গুলো হামলা করে দিয়েছে মেলার মধ্যে। মানুষ ছুটাছুটি করছে। গুন্ডা দোকান পাট ভাংচুর করছে। মানুষের উপর ও হামলা করছে গুন্ডা গুলো। আব্রাহাম মনের মধ্যে এখন শুধু সংকোচ কাজ করছে। নিজের জীবনের বিনিময়েও আব্রাহাম নিজের প্রিয়তমা কে হারাতে চায় না।তাই ও খুঁজে চলেছে আব্রাহাম কে।
আয়না নিজের বান্ধবীদের সাথে এসেছিল একটি গহনার দোকানে এখানে বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা আছে।আয়না যখনি নিজের জন্য একটি সুন্দর পায়েল পছন্দ করছিল তখনি শুনতে পায় শোরগোলের আওয়াজ।আয়না ও ওর বান্ধবীরা দোকানের বাইরে তাকাতেই মানুষ জনদের এদিক থেকে সেদিক ছুটতে দেখে।ওরাই আগ্রহ নিয়ে বাইরে আসতেই গুন্ডা গুলোকে দেখে ওদের অন্তত আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো।আয়না তার বান্ধবীদের হাত চেপে ধরে লুকিয়ে পরে দোকানের মধ্যে।

দোকানে লুকিয়ে কতক্ষন থাকতে পারবে ওরা দোকানের ভিতর তো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে গুন্ডা গুলো। এখান থেকে বের হওয়া ও তো সম্ভব না। মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে চারদিক থেকে। আয়না ও ওর বান্ধবীরা ভয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এখন কি করবে ওরা।আয়না কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে থেকে নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। ফোনটি বের করতেই রাজের অনেক গুলো কল দেখতে পায়।আয়না ভাইয়ের ফোন থেকে মনের মাঝে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে কল ব্যাক করার আগেই কেউ ওর হাত থেকে ফোনটি থাবা দিয়ে নিয়ে নেয়।

আয়না ও ওর বান্ধবীরা ওপরের দিকে তাকাতেই একটি গুন্ডাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়না ভয়ে একটি শুকনো ঢোক গিলে। আয়না বুঝতে পারছে না গুন্ডাটির থেকে কিভাবে বাঁচবে গুন্ডাটি আয়না ও ওর বান্ধবীদের আরো নিকটে চলে আসছে।আয়নার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আয়না নিজের হাত নিচে রাখতেই অনুভব করে আয়নার হাতে সামনে বালি তখনি আয়নার মাথায় একটি বুদ্ধি এসে হানা দেয়।আজ পর্যন্ত যা সিনেমায় দেখে এসেছে তা আজ কাজে লাগানোর সময় এসে গেছে।আয়নাকে যখনি লোকটি ধরতে নেই তখনি আয়না নিজের হাতে বালি মুষ্টিবদ্ধ করে গুন্ডাটার চোখের দিকে মারে।কিছু বালি প্রবেশ করে গুন্ডা টার চোখে।এই সুযোগে আয়না নিজের বান্ধবীদের নিয়ে বের হয়ে যায় সেখান থেকে।আয়না ও ওর বান্ধবীরা ছুটছে ওদের পিছনে পরে আছে কিছু গুন্ডা। যাদের সকলের হাতেই লাঠি। গুন্ডা গুলো আয়নার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে আয়না একসময় আব্রাহাম কে দেখতে পায়। নিজের মনের ভুল ভেবে দৃষ্টি সরিয়ে আবার তাকায় সেই দিকে। কিন্তু না আব্রাহাম সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে আয়নার সকল ভয় যেনো কেটে যায়। আব্রাহাম কে এই সময় মেলাতে পেয়ে ওর যে এখন কি অনুভূতি হচ্ছে তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।আয়না সময় ব্যয় না করে দৌড়ে চলে যায় আব্রাহামের কাছে। আব্রাহামের হাত আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠলো আয়না।

আব্রাহাম এতক্ষণ ধরে আয়নাকেই খুঁজছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে না পেয়ে ও ভাবছে কিভাবে আয়নাকে খুঁজে বের করা যায়। তখনি কেউ আব্রাহামের হাত জাপটে ধরে আব্রাহাম সেখানে তাকাতেই আয়নাকে দেখে মনে হচ্ছে ওর কলিজা কিছুটা হলেও শীতল হয়েছে। আব্রাহাম জাপটে ধরে আয়নাকে। আব্রাহামের চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে দু ফোঁটা অশ্রু।
আব্রাহাম যখনি আয়না কে আগলে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। তখনি হঠাৎ পিছন থেকে একটি গুন্ডা লাঠি দিয়ে বারি মারে আব্রাহাম কে। হঠাৎ আক্রমণে আব্রাহাম ও আয়না একজন আরেকজন থেকে ছিটকে পরে কিছুটা দূরে। লোকটি আব্রাহাম কে আঘাত করে শান্তি পায়নি তাই তো গুন্ডাটা আবার আঘাত করতে চাইলো আয়নাকে। নিজের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে যেই না আঘাত করতে নেই আয়নাকে তখনি আব্রাহাম লাঠিটি ধরে ফেলল। এবং সজোরে একটি লাত্থি মারলো গুন্ডাটির বুক বরাবর।গুন্ডাটি ছিটকে পরলো কিছুটা দূরে। নিজের সহকর্মী কে মারতে দেখে আরো কিছু গুন্ডা এগিয়ে আসলো আব্রাহামের দিকে।

গুন্ডা গুলো ঘিরে ধরলো আব্রাহাম কে।এত গুলো গুন্ডার একা মোকাবেলা করা অনেক কঠিন তবুও আব্রাহাম গুন্ডা গুলোকে এলোপাথাড়ি মেরে চলেছে। গুন্ডা গুলোকে মারার সাথে সাথে নিজেও আহত হচ্ছে। কিন্তু আব্রাহামের নিজেকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না। ওর সকল চিন্তার মূল কারণ হলো আয়না। নিজের জীবনের বিনিময় হলেও আব্রাহাম আয়নাকে এখান থেকে সুরক্ষিত বের করতে চায়।

আয়না আব্রাহামের দিকেই তাকিয়ে আছে।ও চেয়েও কিছু করতে পারছে না। আব্রাহাম কে একা লড়াই করতে দেখে আয়না অনেক জনের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েও আয়না কারও কাছ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য পায়নি।সকলে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে বাঁচাতে ব্যস্ত এখন। আয়না লক্ষ্য করলো একটি গুন্ডা আব্রাহামের পিছনে একটি লোহার লাঠি নিয়ে আগে বাড়ছে। আব্রাহাম এখন অন্য গুন্ডাদের সাথে মারামারি করতে ব্যস্ত তাই গুন্ডা টিকে খেয়াল করেনি।
আয়না আব্রাহাম কে সাবধান করার জন্য আওয়াজ লাগালেও এত হৈচৈ এর মধ্যে তা আব্রাহামের কান পর্যন্ত পৌছালো না। আয়না আর উপায় না পেয়ে আব্রাহামের দিকে দৌড় দেয়। লোকটি আব্রাহামের একদম নিকট চলে এসেছে।আয়না আব্রাহাম কে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু সময়ের অভাবে আয়না আর সরতে পারে না।যার ফলে লোহার লাঠিটার বারি এসে লাগে আয়নার মাথায়। আয়নার মাথায় বারি লাগতেই আয়না সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। এবং আয়না মাথা দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৯

আব্রাহাম কিছু সময়ের জন্য যেনো পাথর বনে গেল। আব্রাহাম তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে আব্রাহাম যখনি দেখলো আয়নার মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আব্রাহাম যেনো পাগলের মতো হয়ে গেল। আব্রাহাম আয়নার কাছে যাওয়ার জন্য ছুটতে লাগলো তখনি একটি গুলি এসে লাগলো আব্রাহামের পায়ে। আব্রাহাম সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর দিকে গুলি তাক করে আছে একটি গুন্ডা। গুন্ডা টি এখন আব্রাহামের পায়ের কাছ থেকে বন্দুক সরিয়ে আব্রাহামের বুকের দিকে বন্ধুক তাক করলো…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫১