তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৬
আমেনা আক্তার
পার্টির সকলে হা করে তাকিয়ে আছে আদিত্য ও নূরের দিকে। আদিত্য নিজের হাতের মুঠোয় নূরের মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। ওদের দুজনকে পারফেক্ট জুটি লাগছে। ওদের থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরেছে। নূর নীল রঙের একটি গ্রাউন পরেছে ও আদিত্য পরেছে একটি নীল রঙের পাঞ্জাবি। ওদের ম্যাচিং করে পড়া পোশাক সকলকে ভাবতে বাধ্য করছে আদিত্য ও নূরের মধ্যকার গভীর সম্পর্কের কথা। পার্টিতে ফিসফিস আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।কেউ মনে করছে নূর হয়তো বা আদিত্যর গার্লফ্রেন্ড হবে। আবার কেউ মনে করছে নূর আদিত্যর হবু বউ।একেক জনের একেক ভাবনা।
এই সকল কিছুর মাঝে আদিত্যর বাবা আফজাল চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে খুব শান্ত ভাবে। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে আফজাল চৌধুরী বোধহয় আগেই জানতেন আজ আদিত্য নূরকে পার্টিতে নিয়ে আসবে। আফজাল চৌধুরী কে দেখে বুঝা যাচ্ছে না আদিত্যর এই সিদ্ধান্তে উনি খুশি হয়েছেন নাকি বেজার।
আদিত্য বাড়িতে প্রবেশ করতেই এক গাধা সাংবাদিক এসে দাঁড়ায় আদিত্য ও নূরের সামনে সকলের মতো তাদেরও একই প্রশ্ন। নূর ও আদিত্যর মধ্যকার সম্পর্ক কি। সকলে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। আদিত্যর উত্তর শোনার জন্য। সকলের মনে এখন অস্থিরতা কাজ করছে সত্য জানার জন্য। কেননা কেউ আজ পর্যন্ত আদিত্য কে কোনো মেয়ের সাথে দেখেনি। আদিত্য মেয়েদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করে।আর না কেউ আদিত্যর সাথে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে জড়িত কোনো বিষয়ের কথা শুনেছে।তাই সকলের আগ্রহ আদিত্য ও নূরের সম্পর্ক জানার জন্য স্বাভাবিক।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কিন্তু সকলে নিরাশ করে দিয়ে আদিত্য সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে বলল।
আপনাদের প্রশ্নের জবাব আপনারা খুব শ্রীঘ্রই পাবেন। কিন্তু আপাতত পার্টি ইন্জয় করুন।
আদিত্যর কথা শুনে সাংবাদিকদের আর কিছু বলার সাহস হয় না।তাই তারা সেখান থেকে চলে যায়। পার্টির অন্যান্য ব্যক্তিরাও আবার পার্টির দিকে মনোনিবেশ করে।তখনি আয়শা চৌধুরী রাগে কটমট করতে করতে এগিয়ে আসে আদিত্যর দিকে। এবং আদিত্যকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
এই মেয়েকে তুমি সাথে করে কেনো নিয়ে এসেছে, তুমি জানো না আমি এই মেয়েকে পছন্দ করি না।এইটা জানার পরেও তুমি এই মেয়েকে আমার বাড়িতে আমারি জন্মদিনে নিয়ে এসেছে।এই মেয়ের তোমার স্ত্রী এই কথা যদি লোকে জানে তাহলে আমার উপর ছি ছি করবে।
আদিত্য খুবই শান্তভাবে নিজের মায়ের কথা শুনে এবং আয়শা চৌধুরী কে জবাবে বলল।
তুমি ভুলে যাচ্ছ এই বাড়ি তোমার একার নয়। তুমি যেমন এই বাড়ির বউ তেমনি নূর ও এখন এই বাড়ির বউ। তোমার যতটা অধিকার এই বাড়িতে আছে তেমন নূরের ও আছে।তাই আমার স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতে হলে আমার নিশ্চয়ই কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই।আর আদিত্য যে কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না এটিও খুব ভালোভাবে জানো তুমি।আমার ওয়াইফের উপর কেউ ছি ছি করবে এত যোগ্যতা এখনো কারো হয়নি।
কথাটি বলেই আদিত্য ও নূর চলে যায় সামনের দিকে।আর আয়শা চৌধুরী রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে।আয়শা চৌধুরী আদিত্য কে কিছু বলার উদ্দেশ্যে ওর পিছনে যেতে নিলেই আয়শা চৌধুরীর সামনে এসে দাঁড়ায় আফজাল চৌধুরী। এবং তিনি আয়শা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল।
আমি চাইনা পার্টিতে কোনো প্রকার সিন ক্রিয়েট হোক। এমনিতেও তোমার জন্য এটাই ভালো হবে তুমি আদিত্যর স্ত্রী কে মেনে নাও। তুমি খুব ভালোভাবেই আদিত্য কে চিনো।ও কাওকে পরোয়া করে না নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেই। এবং ওর সিদ্ধান্তে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তার অবস্থা ও কি করে তাও খুব ভালোভাবে জানো।
স্বামীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেল আয়শা চৌধুরী। এখন তিনি চাইলেও কিছু বলতে পারবেন না।আর কিছু বললেও যে কোনো লাভ হবে না এটি খুব ভালোভাবে জানেন। আয়শা চৌধুরী আশেপাশে তাকিয়ে সারা কে খুঁজতে চেষ্টা করলেন উনি এই বিষয়টি মেনে নিলেও সারা যে এত সহজে মেনে নিবে না তা খুব ভালোভাবে জানে আয়শা চৌধুরী।সানা উল্টো পাল্টা কিছু করে না বসে।
এর আগেও সানা নিজের রাগের বশে অনেক কিছু করতে চেয়েছে যা শুধু সানার জন্য বিপদ ডেকে আনত। আয়শা চৌধুরী তাকে ওই সকল কাজের থেকে বিরত রেখেছে।সানা কে বুঝিয়েছে। কিন্তু আজ সানা কোনো ভুল না করে বসে। সানা আজ নূরের ক্ষতি করতে চাইলে আদিত্য যে ওকে ছাড়বে না এটা খুব ভালোভাবে জানে আয়শা চৌধুরী।তাই তিনি আফজাল চৌধুরী কে রেখেই চলে গেলেন সারা কে খোঁজার উদ্দেশ্যে।
নূর চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে।আসলে ও বুঝতে চাইছে আদিত্য কি করতে চাইছে।নূরকে আদিত্য এই পার্টিতে কি জন্য নিয়ে এসেছে তা এখনো নূরের অজানা।তাই ও আদিত্যর মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে।
নূরকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরকে জিজ্ঞেস করল।
আমাকে কি গিলে ফেলবে চোখ দিয়ে, আমাকে দেখতে এতই হ্যান্ডসাম লাগছে যে চোখ সরাতে পারছ না।যদি আমাকে দেখার এতই ইচ্ছা থাকে তাহলে বলো দুজনে রুমে চলে যায়। সেখানে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করবে না।
আদিত্যর কথা শুনে নূর থতমত খেয়ে যায়।ও কি ভাবছে আর এই বজ্জাত কি বলছে।নূর নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছুটা শক্ত গলায় বলল।
আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি? আমার একদম ভালোলাগে না যারা আমাকে পছন্দ করে না, তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে।
তোমার সব পছন্দ অপছন্দ সকল কিছু আমাকে ঘিরে থাকবে। আমার এইটা পছন্দ না যে অন্য কারও থাকা না থাকা আমার স্ত্রীর উপর সামান্য পরিমাণও প্রভাব ফেলবে।
কথাটি বলেই আদিত্য নূরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল।
চলো,
কথাটি বলেই আদিত্য নূরকে কোথায় যেনো টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।নূর কিছুই বুঝতে পারছে না ওকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আদিত্য নূরকে নিয়ে থামতেই নূর লক্ষ্য করে দেখলো এখানে কিছু সাংবাদিক ও পার্টিতে আসা মানুষগুলো জড়ো হয়ে আছে।মূলত আদিত্যর কথায় সকলকে এখানে ডাকা হয়েছে। আদিত্য সকলের মাঝে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করলো।
আপনারা সকলেই আমার ও নূরের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইছেন। আপনাদের সকলে মনে হয়তো কৌতুহল জন্মাচ্ছে আমি কেনো নূরকে আমার সাথে এই পার্টিতে নিয়ে এসেছি।
আদিত্যর কথা শুনে এক গাধা সাংবাদিক আদিত্যর সামনে এসে প্রশ্ন করতে লাগলো।
আদিত্য চৌধুরী উনি কি আপনার হবু ওয়াইফ। আপনাদের কি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে এই কথা জানাতেই কি আপনি ওনাকে এই পার্টিতে নিয়ে এসেছেন।
সাংবাদিকের কথা শুনে আদিত্য বলল।
না ও আমার হবু স্ত্রী না,
কথাটি বলেই আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলল।
ও আমার হবু স্ত্রী না।ও আমার বর্তমান স্ত্রী।ওর আর আমার বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে।
আদিত্যর কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে তাকায় ওদের দিকে। আদিত্য চৌধুরীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে কিন্তু এই কথা এখনো কেউ জানেনা। কিভাবে সম্ভব। সাংবাদিক আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে চায় আদিত্য কে কিছু আদিত্য নিজের হাতের ইশারায় সাংবাদিকদের থামিয়ে দেয় এবং নূরকে চলে যায় সেখান থেকে।
দূর থেকে আদিত্য ও নূরকে একসাথে দেখে একের পর এক ড্রিংক শেষ করছে সারা।ওর এখন মনে হচ্ছে সারার পুরো শরীরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।এই আগুন এখন তখনি নিভভে যখন সারা নূরকে নিজের ও আদিত্যর মাঝ থেকে সরাতে পারবে।
অনেক্ষণ যাবত নূর দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য ওকে রেখে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছে তা নূরের অজানা। নূরের প্রচুর বিরক্ত লাগছে। নূর এখানে একা দাঁড়িয়ে আছে এমনটি নয় নূরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে চার পাঁচজন মহিলা সকলের মুখে একই প্রশ্ন কিভাবে নূর ও আদিত্যর বিয়ে হয়েছে। নূর ও আদিত্য কি প্রেম করে বিয়ে করেছে নাকি পারিবারিক ভাবে ওদের বিয়ে হয়েছে।ওরা কতদিন ধরে একজন আরেকজনকে চিনে বা কেনো ওরা এতদিন ওদের বিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল।
এমন আরো অনেক কথা জিজ্ঞেস করছে নূরকে।নূর মহিলাদের প্রশ্ন শুনে প্রচুর পরিমাণে বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। কেননা নূর চাইনা ওর জন্য আদিত্যর সম্মানে কোনো আঘাত আসে।তাই চুপচাপ মহিলাদের সকল কথা হজম করতে হচ্ছে ওকে।এর মধ্যে একটি ওয়েটার এসে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
আদিত্য স্যার আপনার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছেন।
কথাটি বলেই ওয়েটার চলে যায় নিজ কাজে।নূর বুঝতে পারছে না আদিত্য ওকে ছাদে কেনো ডেকেছে।ওতো এই বাড়ির কিছু ভালোভাবে চিনেও না।নূর একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করলো ছাদের উদ্দেশ্যে।নূর ছাদে পৌঁছানোর পর চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখছে। কোথাও আদিত্য তো দূরের কথা অন্য কোনো মানুষ ও দেখা যাচ্ছে না।
নূর কাওকে না পেয়ে ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ মনে হলো হয়তো নূর কারও ছায়া দেখতে পেয়েছে এখন।নূর সামনের দিকে তাকাতেই ছাদের একদম কর্ণারে কাওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৫
নূর ভাবে হয়তো আদিত্য হবে। নূর আগে বেড়ে সেই ছায়াটির কাছে যেতেই দেখতে পায় এটি একটি পুতুল। নূর ছাদে এতবড় একটি পুতুল তাও এই সময় দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায়।নূর পিছনে ফিরতে নিলেই হঠাৎ কে যেনো নূরকে ধাক্কা মারে।
নূরকে ধাক্কা মারতেই বিকট শব্দে কিছু নিচে পড়ার আওয়াজ আসে। পার্টিতে থাকা লোকজন বাইরে বের হয়ে দেখতে পায় একটি মেয়ের রক্তাক্ত দেহ। পার্টির সকলের রুহ কেঁপে উঠছে মেয়েটির এই অবস্থা দেখে।