তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৪

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৪
ভূমিকা তালুকদার

জায়ান লিয়ানকে বিয়ে করে দেশ ছেরেছে প্রায় তিনসপ্তাহ খানিক হয়ে গিয়েছে,জায়ানকে প্রথম কয়েকদিন তার মা নাফিসা খান,লিয়ানার মা অনেক কল করেছেন, শত হলেও মায়ের মন, একটা কলও জায়ান ধরে নি, নিজে তো যোগাযোগ রাখতে চায় না আর না কল ধরে লিয়ানাকে দিয়েছে,,,, লিয়ানারও ফোনও নেই, যা একটা ছিল তা বাড়িতে পড়ে রয়েছে, না হলে অন্তত লিয়ানার কাছে ফোন দিতে পারতো।
তারপর আর কি সোলেমান খান ও কড়া গলায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছেন,
এই বাড়ি থেকে যেনো আর একটা কলও দেশের বাইরে না যায়। যে কল দিবে তার ব্যাগ–পত্র গুছিয়ে ঠিক সেখানেই পাঠিয়ে দিবো, কথা টা যেন মাথায় থাকে।

ব্যাস্, তারপর থেকে বাড়ির দুটো বড় ছেলে–মেয়ের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্নর পথে,বিয়ের দিনের সেই ঘটনার রেশ থেমে থাকেনি,পুরো দেশ জুড়েই আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো খবরটা। এক শিল্পপতি সোলেমান খানের একমাত্র ছেলে জায়ান খান, আর দেশের জনপ্রিয় রকস্টার ইশান শেখকে নিয়ে এমন কেলেঙ্কারি বিবাহ ঘটনা,পত্রিকার হেডলাইন থেকে শুরু করে টেলিভিশনের পর্দা,সবখানেই শুধু এই খবর।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিয়ের দিনটিতেই ইশান শেখকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়েছিল। জায়ান খান একেবারে রক্তাক্ত করে, আধমরা অবস্থায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিলো তাকে। জ্ঞান ফিরার পর পাগলের মতো তার নীলাঞ্জনাকে খুঁজে। ডাক্তার, নার্স, কেউ তাকে থামাতে পারছিলো না। শারীরিক যন্ত্রণার চেয়ে বুকের ভিতরের দগদগে ক্ষতটা যেন হাজার গুণ বেশি জ্বালিয়ে দিচ্ছিলো। হাত থেকে ইনজেকশন খুলে ফেলছে, যন্ত্রপাতি ছিঁড়ে ফেলছে, ভাঙচুর করছে পাগলের মতো চারদিকে চিৎকার করে কেবল লিয়ানাকেই খুঁজে যাচ্ছিলো।যে বিয়েটা তার সঙ্গেই হওয়ার কথা ছিল, যে স্বপ্ন সে দুইমাস ধরে বুনেছিল, সেই স্বপ্নটাকেই যেনো মুহূর্তে ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে জায়ান। চোখের সামনে থেকে লিয়ানাকে ছিনিয়ে নিলো কোনো উত্তর না দিয়েই, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই।জায়ানের শত্রুতামি তো তার সাথে ছিলো লিয়ানাতো এসবের বাহিরে ছিলো তাও কেন এমন করলো জায়ান।এত বড় শাস্তি কেন দিয়ে গিলো।

হাসপাতালের দেয়াল কেঁপে উঠছিল তার গলার চিৎকারে।
এটা কেন করলি তুই, জায়ান? কেন আমার নিলাঞ্জনাকে নিয়ে গেলি? সে তো আমার ছিলো!আমার বউ হওয়ার কথা ছিলো।
তার বুক ফেটে বেরোনো চিৎকার শুনে আঁতকে উঠে হসপিটালের সকলে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আঘাত পেলো তার মা, রিনা শেখা। সারা জীবনে তিনি তার ছেলেকে কাঁদতে দেখেননি। কোনো কিছুর অভাব তো কখনোই ছিল না ইশানের জীবনে। নিজের বাবার মৃত্যুতেও এমন হাহাকার করেনি সে। কিন্তু আজ আজ যেন সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের সাদা দেয়ালের কোণে দাঁড়িয়ে রিনা কেবল তাকিয়ে থাকলেন ছেলের দিকে। বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল তার। কণ্ঠ কাঁপছিলো, চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো জলে। অবশেষে ছুটে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন বুকের মাঝে।

শান্ত হও ইশান, সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা, কেঁদো না
কিন্তু কে শোনে কার কথা! ছেলের বুক ভাঙা কান্না থামানো যায় না। বিয়ের পর থাইল্যান্ডে হানিমুনের জন্যে টিকেটও বুক করে রেখেছিলো সে,এখন সেই টিকিট ধরে কাঁদতে থাকে। রিনা শেখার বুক ভিজে গেল ছেলের অশ্রুতে। সেদিন তিনি বুঝলেন, তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভয়টা সত্যি হয়ে গেছে,তার ছেলে ভালোবেসে ভেঙে গিয়েছে, একেবারে চুরমার হয়ে গেছে।তিনি ছেলেকে বুকের ভেতর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললেন,

শান্ত হও ইশান,শান্ত হও বাবা,
কিন্তু কাকে শান্ত করবেন?
একটা ভেঙে যাওয়া হৃদয়কে?
নাকি একটা ছিন্নভিন্ন স্বপ্নকে?
হাসপাতালের অন্ধকার করিডরে শুধু প্রতিধ্বনি হচ্ছিল ইশানের গলা ফাটা চিৎকার,আর রিনা শেখার বুকের নিঃশব্দ কান্না।মায়ের কাঁধে মাথা চাপিয়ে ইশান কেঁদে কেঁদে বলে
আমি তো তাকে মন থেকে চেয়েছিলাম , তাও কেন পেলাম না।ভাগ্য এত নিষ্ঠুর কেনো মামুনি?ভালবাসার এত যন্ত্রণা তা আগে জানা ছিলো না এতো যন্ত্রণা নিয়ে আমি সারাজীবন বেঁচে থাকবো কীভাবে? আমি মরেও যাবো, মামুনি, আমি নিজের চোখের সামনে আমার ভালোবাসার মানুষ অন্য কারোর হতে দেখেছি। এভাবে বাঁচা যায় না,তাকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে সারাজীবন বাঁচার চেয়ে আমার জন্য মৃত্যুই শ্রেয়।

প্যারিসের আকাশ ছোঁয়া ঝলমলে এক নামকরা ফাইভ স্টার হোটেল যেখানে নামিদামি ব্যবসায়ী, সেলিব্রিটি লোকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। সেই বিশাল হোটেলের সামনে এসে থামে এক কালো ঝকঝকে Audi R8। গাড়ির দরজা খুলতেই বেরিয়ে আসে এলেক্স আলবার্ট, সোনালি চুল, নীল চোখের অধিকারী,দেখতে যেনো সরাসরি কোনো ফিল্মস্টার। ইনস্টাগ্রাম এ লাখো ফলোয়ার, মডেল আর সুন্দরীদের প্রিয় মুখ।
যেমন করে গ্রেট জায়ান খানের এর প্রেমে মেয়েরা দেওয়ানা লাইন দিয়ে দাঁড়ালেও জায়ানের কাছ থেকে সামান্যতম পাত্তা না পেলেও, এলেক্স এর কাছে এসে মেয়েরা হতাশা হয় না। ফ্লার্টিং স্কিলে নাম্বার ওয়ান, এই ইবোনহার্ট এর জুনিয়র লইয়ার নিজের পার্সোনালিটির দিয়ে সহজেই বশ করে ফেলতে পারে তরুণীদের।

হোটেলের বিশাল কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ভদ্রতাপূর্ণ হাসি নিয়ে এগিয়ে আসে সেখানকার স্টাফরা। কেউ কিছু বলে না, অথচ সবার দৃষ্টিতে লুকিয়ে থাকা এক ধরনের অদ্ভুত শ্রদ্ধা-মিশ্রিত ভয় স্পষ্ট। কারণ এলেক্স এখানে নতুন কেউ নয় তার আগমনের খবর পেলে লবি থেকেই নিঃশব্দে সংকেত চলে যায় উপরে।
কেউ প্রশ্ন করলো না, কেউ জিজ্ঞাসা অব্দি করলো না এলেক্স আলবার্ট নামটাই যেনো এক নিঃশব্দ পাসওয়ার্ড। সাথে সাথেই লিফট এর ডাক পড়ে, ৬৬ তলা হোটেলের ৯ তলার এক বিশেষ কক্ষ প্রস্তুত হয়ে যায়।
Room No. 907.

যেনো অদৃশ্য নিয়মে ঠিক এই রুমটাই সবসময় তার জন্য নির্দিষ্ট। স্টাফরা নিঃশব্দে সব আয়োজন সেরে রাখে, আর এলেক্স ধীর পায়ে, হাতে মোবাইল ঘুরাতে ঘুরাতে সোজা সেদিকেই চলে যায়মুখে সেই চিরচেনা বেপরোয়া হাসি।পিন নাম্বার চাপতেই ৯০৭ নাম্বার রুমের দরজা নরম শব্দে খুলে গেলো । ভেতরে ঢুকেই এলেক্স এর চোখ আটকে গেল সাদা মখমলের বেডে বসে আছে এক রাশিয়ান মেয়ে, লাল ওয়াইনের গ্লাস হাতে, ধীরে ধীরে চুমুক দিচ্ছে। চোখে কেমন যেন দুষ্টু ঝিলিক, এলেক্সকে দেখেই হাত নেড়ে ইশারা করে তার পাশে বসতে বললো।
এলেক্স ভেতরে ঢুকেই পিছন থেকে দরজাটা লক করে দিলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো।
আর ইউ নামরা??

মেয়েটি ওয়াইনের গ্লাসটা এক হাত থেকে আরেক হাতে নিলো, তারপর হঠাৎ করে এলেক্সের প্যান্টের বেল্টে আঙুল ঢুকিয়ে টেনে নিজের দিকে আনলো। ঠোঁটে খেলা করল এক প্রলোভনময় হাসি।
Really? তুমি আমাকে না দেখেই চলে এসেছো?
এলেক্স ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ফেললো।
দেখার প্রয়োজন পড়ে না আমার।
নামরা ধীরে ধীরে বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, হাতে ওয়াইনের গ্লাস, ধীর পায়ে হেঁটে তাতে এক চুমুক দিলো। তারপর চোখ তুলে সরাসরি এলেক্স এর দিকে তাকালো।
তোহ মিস্টার এলেক্স!ডু ইউ লাইক মি??
এক মুহূর্ত দেরি না করে এলেক্স এগিয়ে গিয়ে নামরার হাত শক্ত করে ধরে, সোজা দেয়ালে চেপে ধরলো। দুই হাতে গ্রাস করল পুরো দেহটা। ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,

এলেক্স কোনো মেয়েকেই পছন্দ করে না, মেয়েরা শুধু আমার এক রাতের সঙ্গী। তুমি-ও তাই।বাট ইউ আর ডেমেন্ সে *ক্সি রাশিয়ান।
নামরা কিছু বললো না,ঠোঁট কামড়ে,এলেক্স এর ফরমাল শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলতে লাগলো। অন্যদিকে এলেক্স ঝুঁকে তার গলায় চুমু খেতে লাগলো, একের পর এক চুমুতে নামরার গলার প্রতিটি ইঞ্চি জ্বলে উঠল। নামরা শক্ত করে এলেক্স এর চুল চেপে ধরলো।
চুমু দিতে দিতে এলেক্স তার নিজের ঠোঁট চেপে ধরল নামরার ঠোঁটে। দুজনেই ডুবে গেলো সেই গভীরতায়। মুহূর্তেই চারপাশ নিঃশব্দ হয়ে গেল, কেবল শ্বাস আর বড় চুম্বনের শব্দ মিশে একাকার। এলেক্স ধীরে ধীরে নামরার জামার ফিতা কাঁধ বেয়ে নামাতে শুরু করলো।

কিন্তু হঠাৎ,
ধপ্পাং!
একটা প্রবল শব্দে কেঁপে উঠলো গোটা রুম। ৯০৭ নাম্বার রুমের দরজা প্রচণ্ড শব্দে ভেঙে খুলে গেলো।এলেক্স আর নামরা দুজনেই আঁতকে উঠে একসাথে তাকালো দরজার দিকে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিটা দেখে মুহূর্তেই জমে গেলো বাতাস,জায়ান পুরো দরজা ভেঙে দাঁড়িয়ে আছে,রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে সরাসরি তাদের দিকে। পেছনে দু’জন বডিগার্ড, লম্বা–চওড়া, যেন হাতির মতো দেহী। জায়ানের একটুকরো হাতের ইশারাতেই তারা এগিয়ে গিয়ে নামরাকে ধরে ফেললো।

জায়ানের হঠাৎ আগমনে আলেক্স ভুরু কুঁচকে চিৎকার করে উঠলো,
তুই এখানে? এভাবে! আরে ভাই, তুই তো ঘর-শত্রু বিভীষণ! তুই রোমান্স নষ্ট করি আমি?তুই বেটা ভুল সময় ভুল জায়গায় কেন এন্ট্রি নিস।
বলেই এলেক্স এগোতেই জায়ান বিন্দুমাত্র দেরি না করে কয়েকটা ষুষি মেরে আলেক্সের গাল চেপ্টা বানিয়ে ফেলে।
শা*লা মাদার*বোর্ড! তোর পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আমি কখনো মাথা ঘামিয়েছি? না জেনে,শুনে একটা মেয়ে পেলেই সোজা রুম ডেটে চলে আসিস,তুই জানিস এই মেয়ে কে? কী উদ্দেশ্য?
ঠিক তখনই একজন বডিগার্ড টেবিলের ফুলদানির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একটা ছোট স্পাই-ক্যামেরা বের করে জায়ানের হাতে ধরিয়ে দিলো, জায়ান ক্যামেরাটা দেখাতেই এলেক্স হঠাৎ মাথায় হাত দিলো, আর সোজা নামরার দিকে তাকালো।

কি ডেঞ্জারাস মহিলা! ও মাই গড!
নামরা দাঁতে দাঁত পিষে, বারবার নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু হাতির মতো গার্ডদের থাবা থেকে বের হওয়া তো এত সহজ নয়।
ছেড়ে দাও আমায়! কাকে আটকে রেখেছ জানো?
রুমের ভেতর এক মুহূর্তে টানটান নীরবতা নেমে এলো। কেবল ভারী শ্বাস, রক্তিম চোখ আর ভয়ংকর উত্তেজনাই ছড়িয়ে আছে বাতাসে।
Of course?!জায়ানের কণ্ঠে এমন এক ঠান্ডা তীব্রতা ভেসে উঠলো।
কুখ্যাত গ্যাংস্টার ডন কুব্রার গার্লফ্রেন্ড তুমি।
জায়ানের কথাটা কট করে কাটা হতেই এলেক্সের চোখ কপালে উঠলো,অবাক-ভয়ের, বিশ্বাসঘাতকতার সেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া মুখে ফুলে উঠল।
কি? কুব্রার গার্লফ্রেন্ড? নারী কত সুন্দর অভিনয় করে, অভিনয়ের জন্যে নারী সেরা রেহহহ ।
জায়ান:

শুধু তাই নয় কুব্রার কথার মতোই সে এখানে এসেছে।কি জঘন্য নারী।
তারপর নামরার দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি দিয়ে জায়ান বলে,
বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে অন্যে এক পুরুষের সঙ্গে বেডে শুতে চলে এসেছো? যদি সে তোমাকে ভালোবাসতো, তাহলে নিজের স্বার্থের জন্য তোমাকে ব্যবহার করত না! আন্ডারস্ট্যান্ড? আই থিংক্ ইউ বেটার আন্ডারস্ট্যান্ড।
কথা শেষ হতেই গার্ডরা নামরাকে ধরে নিয়ে চলে গেলো

জায়ান ধীরে টেবিলের ওপর থেকে ওয়াইনের গ্লাসটা তুলে শুঁকতে লাগলো যেটা নামরা এলেক্সের জন্য বানিয়ে রেখেছিলো, গন্ধ শুকেই জায়ন এর বোঝতে দেরি হলো না,এতে মিশানো আছে উচ্চ ডোজের ড্রাগ।
জায়ানকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র বানাচ্ছে কুব্ররা,তাই এলেক্সকে টপ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলো। এলেক্স নিজে কিছুই বুঝতে পারছেনা।মাথা হাত রেখে।জায়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।তবে সেও বুঝলো তাকে মাতাল করে, তার পেট থেকে, ফোন থেকে তাতে থাকা সব তথ্য, ডকুমেন্টস ফাইল লিক করতে চেয়েছিলো।তাদের সম্পর্ক, পরিকল্পনা এসব বের করে আনার উদ্দেশ্যে তার সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডকেই ব্যবহার করেছে ডন কুব্ররা। আর রেকর্ডিং? স্পাই- ক্যামেরা নিয়ে কেন এসেছে নামরা?
এ লেইম মহিলা স্পাই ক্যামেরা কেন নিয়ে এলো?

জায়ান:
তোর মানসম্মান নষ্ট করতে সাথে আমারও! আরও কর বেডি*বাজি।তোকে স্কেন্ডেল এ জড়াতে চেয়েছিলো।
মানে??
তোর আ*কাম কু*কাম গুলো রেকর্ড করে বড় পর্দায় দেখিয়ে দিতো, সবার সামনে রিপ্রেজেন্ট করতো, তুই মেয়েদের নিয়ে কী কী করিস!
এলেক্স বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে যেনো চোখ ফেটে বের হয়ে যাবে, গলায় হঠাৎ এক কাঁটা ধরা শব্দ।
শিট! শিট! শিট! হুয়াট দ্যা ফা*ক! আমার ইজ্জত লন্ডভন্ড হয়ে যেত ভাই, তুই না থাকলে! আয়, তোরে একটা বড় করে চুমু খাই।

ছেহ্! আমি কি গে নাকি! মন চাচ্ছে তোকে এই বিল্ডিংয়ের ৬৬ তলা ছাদ থেকে ফেলে মেরে ফেলতে শা*লা, ভাতার।
আরে আরে না ভাই, মারিস না, এখনও বিয়ে সাদি করতে পারি নি।
তোরর বিয়ের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।
এলেক্স:
যত যাই বলিস, বিয়ে আর বউয়ের মধ্যে আলাদা এক ফ্লেভার আছে, কী বলিস?
তোকে কে বিয়ে করবে? কোনো ভালো মেয়ে তোকে বিয়ে করবে না।
করবে না মানে? দেখবি, আমি একদম পিউর ভদ্র মেয়েকেই বিয়ে করে দেখাবো!
গড যেনো তোর কপালে বউই না রাখে।
এলেক্স গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে-

এক মিনিট,কুব্রা যে ভাবে আমাদের পিছনে পড়ে আছে, বিশেষ করে তোর পিছনে,তোদের বিয়ের ব্যাপার তো এখন সবার জানা, এখন কুব্রা যদি লিয়ানার কোনো ক্ষতি করতে চায়?
জয়ান অন্ধকার রাস্তায় দূরে কিছুটা তাকিয়েই ধীরে বলল
পার্টিতে সেদিন আমি তাকে নিয়ে যেতেই চাইনি,মানুষ দেখবে, শুনবে,জানবে,চিনবে তা আমি কখনই চাইনি। আমার জীবন তো মোটেও চার পাঁচজন মানুষের মত না,এই মেয়েটাকে কিভাবে বুঝাবো? টাকার চেয়েও শত্রু সংখ্যা বেশি আমার। আমি কখনই চাই না,আমার জন্য ওকে কেউ টার্গেট করুক। তার জন্যে যদি আমাকে নিচে নামতে হয়, আমি ততটা নিচে নামতে রাজি আছি।

তারপর এলেক্স বলল,
আমার মনে হয় লিয়ানার জন্যে এখন প্যারিস একদমই সেইফ না। তুই লিয়ানাকে প্যালেসে নিয়ে যা।
জায়ান কিছু বললো না,শুধু তার ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি টেনে নিল; হাসিটা ছিল শুকনো, তীব্র,সেখানে ছিল না কোমলতার চিহ্ন, তবু ভেতরটা ভরা ছিল বিষণ্নতা আর হিংস্রতার মিশ্র রং।

শ্যাডো এম্পায়ারের বাগানের সোফায় লিয়ানা বসে বিস্কুট ভিজিয়ে চা খাচ্ছে অনেকদিন পরে চা খাচ্ছে, অলরেডি,দুই কাপ খেয়ে ফেলেছে। মিসেস হান আরেক কাপ নিয়ে এসে দিলেন।
ওহ্ মিসেস হান, আপনি তো চা একদম অসাধারণ বানান, একদম মায়ের হাতের মতো। (লিয়ানা মুখে হাসি, চোখে নীরব প্রশান্তি।)
পাশে নাদিয়া বসে হাসতে থাকে লিয়ানার কান্ডো দেখে। লিয়ানা মিসেস হান থেকে চা আর স্যুপের বাটি নিয়ে নাদিয়াকে স্যুপ খেতে বলে।
নুরি আপু, তোমার শরীর এখনও ভালো হয় নি এতো কাজ করো না তো, বলে নাদিয়ার ল্যাপটপটা বন্ধ করে দেয় লিয়ানা,তারপর চুল পেছনে সরিয়ে দুষ্টুমির টেনে বলে,
দেখো, মাহতাব ভাইয়া, তোমার কত কেয়ার করে, ঐ গুণ্ডা লোকটা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে, কী সুন্দর ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আচ্ছা ঐ বদমাশ লোকটার কি অবস্থা কেমন এখন?
নাদিয়া বুঝতে পারলো জায়ানই লিয়ানাকে এসব বুলিয়ে বালিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে,

নাদিয়া:
ওহহ না মানে, গুণ্ডা নিশ্চয়ই এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি তো জানিনা।মার্কো একটু মেরেছে এই আার কি।
লিয়ানা:
একেবারে মেরে ফেলা উচিৎ ছিলো বদমাইশ লোক।
জায়ান, এলেক্স ও ততক্ষণে চলে এসেছে। জায়ান গাড়ি থেকে নেমেই সোজা সোফায় এসে বসে পড়ে লিয়ানার পাশে, পায়ের ওপর পা তুলে।
লিয়ানা জায়ানকে দেখেই মুখে ভেংচি কেটে ফিসফিস করে উঠে,
আসছে জমিদার।
জায়ান নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
জানিস, একজন বলেছে তার নাকি কাছে থেকে চাঁদ দেখার অনেক শখ। ভাবছি, কাছ থেকে দেখার কী দরকার? একেবারে চাঁদ থেকে ঘুরে আসি, কী বলিস।
জায়ানের এহন কথা শেষ হতেই নাদিয়া, লিয়ানা, মিসেস হান, এলেক্স—সবাই অবাক হয়ে যায়। লিয়ানা চোখ বন্ধ করে ফেলে। সে বুঝতে পেরেছে কথাটা জায়ান তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছে, কারণ ওইদিন রাতে জায়ান যখন লিয়ানাকে বলেছিলো,

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৩

❝আপনার কী লাগবে ম্যাডাম❞
লিয়ানাও তখন মজা করে বলেছিলো চাঁদ দেখতে চাই কাছ থেকে । কিন্তু জায়ান বিষয়টা এতটা সিরিয়াস নিয়ে নিবে তা তার জানা ছিলো না।
জায়ান:
নাদিয়া মার্কো কে ডাক।
❝চাঁদে যাওয়ার সব রকম ব্যবস্থা কর❞

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here