তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৬
তানিশা সুলতানা
আদ্রিতা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবরারের মুখ পানে। যদিও গোটা মুখশ্রী দেখা যাচ্ছে না। মাক্স দ্বারা ঢেকে রাখা। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। রেগে আছে কি লোকটা? হয়ত,
এখন তো ওনার সিঙ্গাপুর থাকার কথা। তাহলে এখানে আসলো কি করে? বড়ই কঠিন প্রশ্ন। উত্তর জানা নেই আদ্রিতার। এয়ারপোর্টের চেকিং এরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তারা। লম্বা ভিড় জমেছে। সকলের পেছনে ওরা। চেকিং করাবে বলে মনে হচ্ছে না। কেনোনা, কেউ পাসপোর্ট ভিসা বা প্রয়োজনীয় কাগজ বের করছে না।
আবরার এক হাত আদ্রিতার কোমর জড়িয়ে আছে। যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। আমান, আহাদ, এবং ইভান আদ্রিতার পেছনে দাঁড়িয়ে।
আর সিয়াম বসে পড়েছে ফ্লোরে। মূলত আবরারের কার্যক্রমে অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে-ই বসে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকতে একটু কষ্ট-ই হচ্ছে। মাথা ভন ভন করে ঘুরছে যে।
এই তো এগারো ঘন্টা আগে তাদের ফ্লাইট ছিলো। কিন্তু এয়ারপোর্টে পৌঁছেই জানতে পারে সকাল সাতটার ফ্লাইটে নয় বরং রাত বারোটায় ফ্লাইটে তারা সিঙ্গাপুর যাবে।
এটা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায় সিয়ামের। সে উচ্চস্বরে কিছু বলার প্রস্তুতি নিতেই আবরার সিয়ামের কাঁধে হাত রাখে এবং বলে,
“চল সিয়াম, তোর মা’কে নিয়ে আসি।
সিয়াম ছোট ছোট নয়নে আবরারকে দেখে। পেছন থেকে আমান বলে ওঠে,
” কেনো ভাই? বউকে ছাড়া ভাল্লাগছে না বুঝি?”
আবরার বোধহয় বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে বলে,
“বউ কেমন শব্দ?”
আহাদ বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” বউ একটা খাটি বাঙালি শব্দ।”
আবরার বিরক্ত হয় বোধহয়। চোখ রাঙিয়ে আমানের দিকে তাকতেই আমান বলে,
“তো কি? সিয়ামের মতো আমরাও মা ডাকব?”
“অভিয়েসলি।আদ্রিতা তোদের সবার মা।”
আমান আহাদ ইভান দুই হাতে কান চেপে অসহায় স্বরে “নাহহহহহহহহ” বলে চিৎকার করে ওঠে।
আবরার গম্ভীর স্বরে ধমক দেয়,
“স্টপিট,
বাঁদরের মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো?”
ব্যাস সকলেই ভদ্র বাচ্চার ন্যায় সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
এয়ারপোর্ট হতে দশ বারো হাত দুরত্বে রয়েছে একটা শিশুপার্ক। সেটা আপাতত কুয়াশায় ঢেকে আছে। থাকারই কথা সবে সকাল সাতটা বাজে। শীতের মৌসুমে সাতটা মানেই ভোর সকাল। এখনো সূর্য মামা ওঠার সময় হয় নি বলেই কুয়াশারা নিজেদের আস্তানায় খুঁটি গেরে বসে আছে। সূর্য উঠলে আবার গাট্টি বোচকা নিয়ে পালাবে।
ইভান শিশুদের ঘোড়ায় বসে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
” আদ্রিতা আমার ক্রাশ। ভাবি ডাকতে বলতো,
মেনে নিতাম,তাই বলে মা?”
আমানও তাল মেলায়,
“মা শব্দটা শুনেই কেমন বুকে আগুন জ্বলছে।”
সিয়াম খিল খিল করে হেসে ওঠে। গান ধরে উচ্চস্বরে
“জ্বলে আগুন বুকে তে।
দে আগুন নিভাইয়া দে।
ট্যা ট্যা টেরাবেরা লাগাইয়া দিমু
সব কিছু শেষ কইরা ফেলাইয়া দিমু
মনেরই আগুন তুই নিভাইয়া
ওই রূপের ঝলকেতে গেছি হারাইয়া”
বড়ই শ্রুতি মধুর সিয়ামের কন্ঠস্বর। ঠিকঠাক চর্চা করলে ভালো সিঙ্গার হতে পারতো। বন্ধুরা সবাই তার গানের গলার প্রশংসা করে। তবে এই মুহুর্তে ডিপজলের বিখ্যাত গানে তাল মেলাতে পারে না ওরা। বরং বিরক্ত হয়।
সিয়াম ওদের থেকে সাড়া না পেয়ে গান বন্ধ করে এবং মুখ বাঁকায়।
আহাদ বলে
” আদ্রিতাকে আপু ডাকবো।”
ইভান বলে,
“হ্যাঁ আমিও ভাবি ডাকবো।
আমান বলে,
” আমিও ভাবি ডাকবো।
কি সুন্দর দেখতে। আমার তো শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।
ভাবছি আদ্রিতার সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করবো। ক্যাপশনে লিখবো “এরকম একটা সুন্দর মেয়ের সন্ধ্যান চাই”
সিয়াম হামি তুলে। দু পা এগিয়ে আমানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এক হাত তুলে দেয় আমানের কাঁধে আরেক হাতে আমানের সদ্য বেড়ে ওঠা ছোট দাঁড়ি টানতে টানতে বলে,
“ভাই কয়দিন আগে তোর হাত ভাঙলো না?
যেই গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে হাত ভেঙেছিলো সেই গাড়ি খানা আবরার তাসনিন এর। তোকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরেছিলো। কারণ তুই আদ্রিতার হাত ধরেছিলি।
আজকে বোধহয় তোর চোখ দুটো গেলো।”
আমান চমকে ওঠে। দু পা পিছিয়ে যায়। শুকনো ঢোক গিলে তাকায় আবরারের পানে। সে তাকিয়ে আছে আমানের চোখের পানে।
ভয়ে কলিজা কেঁপে ওঠে আমানের। তারাহুরো করে বলে,
” মা
আদ্রিতা আমার মা।
সে আমার আপন না।
রক্তের মা।”
আবরার বাঁকা হাসে। আমানের ডান গালে ছোট ছোট দুটো চাপর মেরে বলে
“দ্যাটস লাইক আ গুড বয়।”
তারপর ওদের নিয়ে চলে যায় অহনার বাড়ির সামনে। সেখান থেকে ঘুরে ফিরে পূণরায় এয়ারপোর্টে এসে অপেক্ষা করে আদ্রিতার এখানে আসার জন্য। অবশেষে আদ্রিতা চলে আসে। এবং তাকে কিডন্যাপ করে নেয় আবরার।
দ্বিতীয় বার প্লেনে উঠছে আদ্রিতা। প্রথম বার এক্সাইটেড ছিলো কিন্তু দ্বিতীয় বারের বেলায় খানিকটা ভয় পাচ্ছে। মস্ত বড় সিঁড়ি ডিঙিয়ে প্লেনে উঠতে বুক খানা কাঁপছে। শক্ত করে চেপে ধরে আবরারের হাত। ভেবেছিলো এবার বোধহয় ধমক খাবে। পাষাণ পুরুষ ধমকে বলবে ” ইডিয়েট প্লেনে উঠতেও পারো না”
তবে আদ্রিতার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে আবরার নিজেই এক হাতে জড়িয়ে ধরে আদ্রিতাকে। আশ্বাস দিয়ে বলে
“ভয় পেয়ো না৷ আমি আছি।”
খুশিতে মনটা নেচে ওঠে আদ্রিতার। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি। তবে একটা ব্যাপার ভেবে অবাক লাগে। প্লেনে ওঠার তাড়া নেই কোনো মানুষের। শুধু তারাই উঠছে। একটু দূরে থাকা আরেকটা প্লেনে শত শত মানুষ উঠছে। ভিড় জমে আছে। কিন্তু তাদের প্লেনে কোনো ভিড় নেই। আশ্চর্য ব্যাপার।
অতঃপর প্লেনে উঠে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনে বসে পড়ে। পাশে বসে আবরার। ওদের পেছনে বসেছে সিয়াম আহাদ আমান এবং ইভান।
আর কেউ নেই। গোটা প্লেন ফাঁকা।
আদ্রিতা অবাক হয়। ঘাড় বাঁকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে
” আবরার তাসনিন
প্লেন ফাঁকা কেনো?
আর মানুষ কোথায়?
আবরার মুখের মাক্স খুলতে খুলতে জবাব দেয়
” সবাই মরে গেছে।”
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। বিরবির করে বলে
“হাতির বাচ্চা গন্ডার। ঠিকঠাক কথা বলতেও জানে না।”
আবরার শুনে ফেলে। মুহুর্তেই কোমর জড়িয়ে ধরে আদ্রিতা। এক টানে নিজের কোলে বসে দেয় এবং কামিজের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে কাঁধে ঠোঁট রাখে।
ফিসফিস করে বলে
” কথা বলতে না পারলেও রোমাঞ্চ করতে পারি ঠিকঠাক ।”
হাসফাস করে ওঠে আদ্রিতা। আবরারের কালো রঙয়ের শুট খানা চেপে ধরে। বিরবির করে বলে
“এটা পাবলিক প্লেস,
প্লিজজজ ছেড়ে দিন। সবাই দেখবে।”
আবরার ভ্রু কু্চকে বলে,
” হু কেয়ার’স?”
আদ্রিতার ইচ্ছে করে বেয়াদব লোকটার মাথায় একটা বারি মারতে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“লজ্জা সরম আপনার না থাকতে পারে আমার আছে। ছাড়ুন।”
আবরার ছাড়ে না। বরং কাঁধ হতে ঠোঁট নামিয়ে গলায় রাখে। বেশ শক্তপোক্ত এক খানা কা*ম*ড় দিয়ে পাশে বসিয়ে দেয়।
আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কামড়ে দেওয়া জায়গাটায় বেশ জ্বলছে। তবুও টু শব্দ করছে না।
মুখ খুলে আবরার নিজেই।
সামনে থাকা মনিটর টাইপের টিভি খানা চেপে মুভি সিলেক্ট করতে করতে বলে,
” আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করার পানিশমেন্ট ছিলো এটা।”
চোখ খুলে আদ্রিতা। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় আবরারের পানে।
“আর যদি চলে যেতাম?”
” খুঁজে বের করে লং টাইম কামড়ে দিতাম।
কামড়ানোর জায়গা টা ভিন্ন হতো।”
রাগ বা বিরক্ত হওয়ার কথা ছিলো। তবে আদ্রিতা হেসে ফেলে। এক হাতে মুখ চেপে মৃদু হাসে। মনে মনে বলে
“আপনাকে ছেড়ে যেতে কি আর আমার ইচ্ছে করছিলো?”
আবরার এক খানা গান সিলেক্ট করে। Zara Behaktahe গানটা।
সঙ্গে সঙ্গে সাদা রংয়ের লাইট নিভে যায়। জ্বলে ওঠে নীল রাঙা লাইট।
আবরার গানটা একটু টেনে মাঝ খান হতে প্লে করে। ভলিউম একটু বাড়ায়।
“Rothega, Na Mujhse, Mere sathiyan Yea wada kar tere bina,
Mushkil hai, jeena mera mere dilbar,
Zara zara behekta hai, mehekta hai
Aj toh mera,Taan batan,
Main pyasa hun
Muje bhar le,Apni baho main.
গানের তালে তালে আবরারও বোধহয় ঠোঁট নারাচ্ছে।
পূণরায় আদ্রিতার পানে হাত বাড়ায়। এবার জোর করে নয়, বরং হাঙ্কি স্বরে বলে,
” কাছে আসবে?”
আদ্রিতা আবরার এর হাতের ওপর হাত রাখে।
সঙ্গে সঙ্গে আবারও নিজের কোলের ওপরে আদ্রিতাকে বসিয়ে দেয় আবরার। এবার আর এক পাশ করে নয়, বরং আবরারের দুই পাশে দুটো পা দিয়ে বেশ আরাম করেই বসেছে।
আবরার হাসে।
আদ্রিতার টপস এর ফাঁকে হাত ঢোকাতে যায় বাঁধা দেয় আদ্রিতা। বলে
“সব সময় এসব কেনো?
আজকে গল্প করি চলুন
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৫
আবরার বিরক্ত হলো বোধহয়। কপাল কুঁচকে বলে,
” গল্প নেই আমার ডিকশনারিতে।
আছে শুধু রোমাঞ্চ।”