তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৮
তানিশা সুলতানা
সাদা রংয়ের রুম খানায় লাল হলুদ এবং গোলাপি রংয়ের গোলাপের ছোঁয়া। দরজার সামনে তরতাজা গোলাপ দিয়ে বাঁধানো বিশাল আকারের সাইন বোর্ড টাঙানো। তার মাঝ খানে লেখা “Abrar❤️Adrita”
সিয়াম বড়ই বুদ্ধিমান। লাভ কেমিস্ট্রি ভালোই বোঝে বা কাপলদের কিভাবে ওয়েলকাম করতে হয় ভালোই জানা আছে তার। তবুও তার জীবনে কখনো ভালোবাসা আসলো না। কাপল হওয়ার সুযোগ পেলো না।
কেনো?
কারণ যারা বেশি বোঝে তাদের কপালে মেয়ে জোটে না। মেয়েরা সব সময় ভোলাভালা ছেলেই পছন্দ করে।
বিরবির করে কথা গুলো বলছে সিয়াম এবং আবরার এবং আদ্রিতার বাসরের খাট সাজাচ্ছে। গোটা কক্ষ সাজানো হলেও বাকি রয়ে গেছে খাটটা।
Marina Bay Sands হোটের এর বিশতম তলায় একদম কর্ণারের রুমটা আবরার এবং আদ্রিতার জন্য বুক করা হয়েছে। এবং তার পাশের রুমটা সিয়ামদের। সব বন্ধুরা মিলে এক কক্ষেই রাত্রি যাপন করবে।
আবরারদের কক্ষের বিষষত হচ্ছে এই কক্ষের সঙ্গে যুক্ত সুইমিং পুল রয়েছে এবং বারান্দা। বারান্দা হতে বিশাল বড় আকারের পাহাড় দেখা যায়।
আমান ইভান এবং আহাদ সুইমিং পুল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজাচ্ছে। সাজাচ্ছে বললে ভুল হবে বড় বড় অক্ষরে লিখছে “Happy Fulsojja”
ইভান একটু দুষ্টুমি করে সুইমিং পুলের ওপরে লিখেছে “বাসর শেষে এখানে গোসল সেরে নিস”
কক্ষ সাজানোর দায়িত্ব সিয়াম একাই নিয়েছে। তার মতে সে একাই একশ। সিয়াম মানেই গোটা বিশ্ব একাই জয় করে ফেলবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবরার আদ্রিতাকে নিয়ে টনির দেওয়া লোকেশনে চলে গিয়েছে। আদ্রিতাকে রেখে যেতে চেয়েছিলো তবে সিয়াম জোর করে সঙ্গে দিয়েছে। কারণ ওরা বাসর সাজাবে। অবশ্য আবরার এবং আদ্রিতা এসব কিছু জানে না।
এনির দেওয়া লোকেশনটা খুব বেশি দূরে নয়। এই তো এই হোটেল এর নিচ তালায় বিশাল বড় শপিং মল রয়েছে তার পাশে কফিশপ। সেই কফিশপেই তাদের প্রাইভেট আলাপ হবে। কফি শপ থেকে শপিং মলটা স্পষ্ট দেখা যায়।
বুদ্ধি মান আবরার আদ্রিতাকে শপিং মলের একটা দোকানে ঢুকিয়ে দেয় এবং গম্ভীর স্বরে বলে
“লাল দেখে একটা শাড়ি কিনো।”
তারপর দোকানের মালিককে বলে
“সী ইন মাই ওয়াইফ। দেখে রাখবেন”
বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। আদ্রিতা কিছু বলার সুযোগটাও পায় না। গাল ফুলিয়ে আবরারের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
গোটা কফিশপ বুক করেছে টনি। চারিপাশে তার গার্ডরা বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের পরনে কালো রংয়ের শার্ট এবং মাথায় কালো রোমাল বাঁধা। যেনো পারফেক্ট গুন্ডা।
আবরার চারিদিকে নজর ফিরিয়ে কফিশপটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। তারপর ঘাড় বাঁকিয়ে আদ্রিতার পানে তাকায়। বুদ্ধুটা এখনও একই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। বিরক্ত হয় আবরার। কপাল কুঁচকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে কফিশপে ঢুকে পড়ে।
গোলাপি রংয়ের সোফায় দুই হাত মেলে বসে আছে টনি। কালো রংয়ের জুতো পড়া পা জোড়া সামনে থাকা টি-টেবিলে রাখা।
আবরার সোজা গিয়ে টনির সামনাসামনি দাঁড়ায়।
আবরারকে দেখে টনি কুটিল হাসে। চোখে থাকা কালো রংয়ের সানগ্লাস খুলে বলে
“আবরার তাসনিন যে বসুন।
আবরার বসে না। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে। এবং পেয়েও যায়। টি টেবিলের পাশেই একটা চামচদানি রাখা রয়েছে। সেখানে ধারালো ছুড়িও আছে।
ছুরি খানা তুলে নেয় আবরার। এবং চোখ বন্ধ করে ছুড়ে মারে ডান পাশে। মুহুর্তে একজন গার্ড চিৎকার করে ওঠে। কেনোনা ছুরিটা তার চোখেই বিঁধেছে। গড়িয়ে পারে ফ্লোরে। গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কারোর সাহায্য চাইতে থাকে।
টনি ভরকায়। টি-টেবিল হতে পা নামিয়ে ফেলে। হাতে থাকা সানগ্লাস কখন হাত ফঁসকে পড়ে গিয়েছে ফ্লোরে।
বাকি গার্ড গুলোও অবাক হয়েছে। কয়েকটা আহত গার্ডকে ধরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
টনির গলা কাঁপছে। তিনি শুকনো ঢোক গিলে বলে
” একা এসেছো আবরার তাসনিন। আমি চাইলে তোমাকে মে/রে পুঁতে ফেলতে পারি এই সিঙ্গাপুরের মাটিতে।
আবরার বোধহয় মজা পেলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে টি টেবিলের ওপরে পা রাখে। টনির দিকে একটু ঝুঁকে বলে
“আমাকে ছুঁয়ে দেখা।
টনি জিভ দ্বারা ঠোঁট ভেজায়। ইতোমধ্যেই তার কানে খবর পৌঁছে গিয়েছে তার ছেলে মিসিং। কাজ খানা যে আবরার তাসনিন এর সেটা বেশ ভালোই জানে সে।
তাই নত স্বরে বলে
” মারলে কেনো তাকে?
“আমার বউয়ের পানে তাকিয়েছিলো।
” যেই তাকাবে তারই চোখ তুলে ফেলবে?
“ইয়েসস
” কিন্তু কেনো?
তুমি আবরার তাসনিন। হাজারো মেয়ে তোমার জন্য পাগল। তাহলে একটা মেয়ের জন্য পাগলামির মানে কি? কি আছে তার মধ্যে? আহামরি সুন্দরও না
সে তোমার উপযুক্ত নয়।
আবরার দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়
“ওই একটা মেয়ের মাঝেই আমি গোটা দুনিয়ার সৌন্দর্য দেখতে পাই।
তার পানে যেই তাকাবে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো। সে আমার বাপ হোক বা বন্ধু।
আর কিছু বলার সাহস পায় না টনি। অথচ আবরার তাসনিনকে ট্যাপে ফেলানোর কতোই না ফন্দি এঁটেছিলো। জাল দলিল বানিয়ে এসেছে। আদ্রিতাকে কিডন্যাপ করে সেই দলিলে সাইন নিবে আবরারের থেকে। তারপর সুইজারল্যান্ড এর রাজা হবে সে। আদ্রিতার বাবা আরিফের সাথেও প্ল্যানিং সেরে ফেলেছে।
অথচ আবরার তাসনিন এর মুখ দেখেই প্যান্ট ভিজে যাচ্ছে টনির। প্ল্যানিং কি করে সাকসেসফুল করবে?
টনির এই ভাবনার মাঝেই আবরার বলে ওঠে
” সিঙ্গাপুর তুই আমায় আনিস নি। আমি তোকে এনেছি।
জাস্ট ওয়েট এন্ড সী
তোকে আর আরিফ চৌধুরীকে যদি কুকুরের মতো না পিটিয়েছি তো আমার নামও আবরার তাসনিন নয়।
নিক বক্তব্য শেষ করে বড় বড় ফেলে কফিশপ থেকে বেরিয়ে আসে আবরার। টনি এবং তার গার্ডরা বড় বড় নয়নে দেখতে থাকে শুধু।
সিঙ্গাপুরে কাজির অভাব রয়েছে। অনেক খুঁজে একটা হুজুর পাওয়া গিয়েছে। তাকেই তুলে এনেছে আমান আহাদ সিয়াম এবং ইভান।
আবরার সবেই নিজের এপার্টমেন্টস এ ঢুকেছে এখনো ফ্রেশ হয় নি। আদ্রিতা কক্ষে ঢুকেই বড় বড় নয়নে চারিপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে
তখনই ওরা ঢুকে পড়ে। হুজুরকে সোফায় বসায়।
আবরার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাতেই সিয়াম বলে
“ওমন করে তাকাবি না। হুজুর এনেছি চুপচাপ বিয়ে করবি।
আদ্রিতা চমকায় লোকটাকে বিয়ে করতে হবে? তাও আবার এখুনি? কোনো প্রিপারেশন ছাড়া। ওই তো ফ্লোরে পড়ে আছে লাল রংয়ের শাড়ি খানা। যেটা একটু আগে কিনলো। পড়ার সময় দিবে কি?
আবরার এলোমেলো পা ফেলে হুজুরের পাশে গিয়ে বসে। শার্টের দুই খানা বোতাম খুলে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। হুজুর বোধহয় একটু ভয় পেলো। শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে।
সিয়াম এক গাল হেসে বলে
“হুজুর আপনি লিখতে থাকুন। আব্বা
কাবিন কতো লিখবে রে?
দশ কোটি বিশ কোটি না কি ত্রিশ ক
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে ওঠে
“এক টাকাও না
সিয়াম ধপ করে বসে পড়ে। কাজি হাতের উল্টো পিঠে কপালের ঘাম মুছে বলে
” এটা কি করে হয় বাবা? টাকা ছাড়া কাবিন। কি লিখবো আমি?
আবরার আদ্রিতার পানে তাকিয়ে বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৭
“আমার কলিজা লিখুন কাবিন এর জায়গায়।
সিয়াম মহা বিরক্ত। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলেই সে বিরিয়ানি খেতে যাবে।
“ভাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে ইতিহাস বলিস না। শটকার্টে বল। তোর বিয়ে শেষ হলে বিরিয়ানি খাবো।
আবরার: কলিজাটা দিয়ে দিলাম আদ্রিতাকে।
ও যদি কখনো বিচ্ছেদ চায় তো আমার কলিজা কেটে নিয়ে যাবে। নয়ত বিচ্ছেদ পাবে না। এটাই আমাদের বিয়ের কাবিন।