তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৯

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৯
তানিশা সুলতানা

হুজুর কাচুমাচু হয়ে বসে। তিনি বাংলাদেশী। চৌধুরী গ্রুপের সঙ্গে পরিচিত। এবং আবরার তাসনিন সম্পর্কেও বিশেষ ধারণা রয়েছে ওনার। বলা বাহুল্য এই সিঙ্গাপুরের মাটিতে নিজের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র আবরার তাসনিন এর দাদার কারণে।
তাই তো স্পষ্ট স্বরে কিছু বলতে পারছে না। বলতে পারছে না “কাবিন নিয়ে ছেলে খেলা হচ্ছে? নিজের কলিজা কখনোই কাবিনে লেখা যায় না”
হুজুরকে চুপ থাকতে দেখে সিয়াম বলে
“কি হলো হুজুর? মটকা মেরে গেলেন কেনো? লিখুন কাবিন। শুরু করুন বিয়ে।
হুজুর কাবিনের খাতা খোলে। মৃদু হাত কাঁপছে। সিঙ্গাপুরে অহরহ বাঙালির বিয়ে দিয়েছে কিন্তু কখনো ভয় করে নি। তবে আজকে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। ডান হাতে ধরে থাকা কলম খানা খাতার মধ্যে রাখে। মাথা তুলে তাকায় আবরার তাসনিন এর পানে। কি সুন্দর মুখ খানা। দেখলেই মনে হয় কোনো দেশের রাজপুত্র। কিন্তু মুখের ভাষা শুনলে মনে হয় বিখ্যাত কোনো মাফিয়া।
হুজুর নিচু স্বরে বলে

” বাবা কাবিন নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না।
টাকা লিখতে হয় কাবিনে।
আবরার শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। সিঙ্গাপুরের ওয়েদার নাতিশীতোষ্ণ। তারওপরে রুমে এসি চলছে। তবুও কি আবরার কি ঘামছে? নাহলে শার্টের বোতাম খুলবে কেনো? ধবধবে ফর্সা বুক টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর নির্লজ্জ আদ্রিতার নয়ন জোড়া সেইদিকেই যাচ্ছে বারংবার।
আদ্রিতা যখন আবরারকে দেখায় ব্যস্ত তখনই শুনতে পায়
“সবাই যা করবে আমাকেও তাই করতে হবে?
ইউ নো হোয়াট
আবরার তাসনিন ইজ ডিফরেন্ট। সে নিজের রুলস এ চলে।
আদ্রিতা মুখ বাঁকায়। বিরবির করে বলে।
” কথার কি ছিরি। যেনো সে মহারাজা। হাতি কোথাকার। মুখে রসকস নেই। আস্ত একটা করলা। যে আসছে আমাকে বিয়ে করতে। ওরেহহহ আদ্রিতা এই হাতি তোকে ধমক দিতে দিতে আর চুমু খেতে খেতেই মেরে ফেলবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হুজুর বলে
“কাবিনের মূল্য পরিশোধ করে তবেই বউকে ছুঁতে হয়।
আবরার স্পষ্ট স্বরে জবাব দেয়
” আমি অলরেডি ওকে ছুঁয়ে ফেলেছি বহুবার। এখন আপনারা না থাকলে এখনো চুম
বাকিটা শেষ করার আগেই সিয়াম বলে ওঠে
“বুঝছি ভাই বুঝছি
তুই মুখটা বন্ধ কর। লজ্জা শরমের মানেও তো জানিস না।
আবরার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় সিয়ামের পানে।
আমান এগিয়ে গিয়ে কাবিনের খাতা দেখতে দেখতে বলে
” কাবিন লিখুন দশ লাখ।
বাঁধ সাধে আবরার।
“উহু দুই কোটি লিখুন।
আর এটাও লিখুন ও যদি কখনো বিচ্ছেদ চায় তাহলে সেই দিন স্বেচ্ছায় খু/ন হতে হবে আমার হাতে। এন্ড ওর লাশটাও আমার বাড়িতে কবর দেওয়া হবে।
আদ্রিতা ভয়ার্তক দৃষ্টিতে তাকায় আবরারের পানে।
উচ্চস্বরে বলে ওঠে

” আমি বিয়ে করবো না।
উনি বিয়ে করছে না কি আমাকে মার্ডার করার পায়তারা করছে?
হুজুর মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আহারে ফুলের মতো মেয়েটা। কি সুন্দর দেখতে। কিভাবে এরকম গুন্ডার কবলে ফেঁসে গেলো?
মেয়েটিকে চুপ থাকতে দেখে হুজুর ভেবেছিলো প্রেম করেছে আবরারের সঙ্গে। সুন্দর চেহারা দেখে ফেঁসে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন বিয়ে করবো না বলাতে ফুল কনফার্ম হয়ে গেলো আবরার তাসনিন তুলে এনেছে ফুলটাকে। এবং ভয় দেখিয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছে।
আবরার ছোট ছোট নয়নে তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। আদ্রিতা তাকিয়েই ছিলে বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায়। লাল লাল ওই চোখে চেখ মিলিত হতেই কলিজা কেঁপে ওঠে আদ্রিতার। কি আছে ওই নয়নে? কেনো সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে যতবারই নয়নে নয়ন মিলিত হয়?
কেনো তলপেট মোচর দিয়ে ওঠে। কেনো লোকটার ছোঁয়া পেতে দেহখানা মরিয়া হয়ে ওঠে এবং যখন ছুঁয়ে দেয় ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করে?

এসব যে কি হচ্ছে তার সাথে কে জানে?
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় আদ্রিতা। মাথা নিচু করে ফেলে।
আবরার বলে
“বিয়ে করবে না?
জবাব দিতে পারে না আদ্রিতা। কিভাবে বলবে ” হ্যাঁ চাই না?” গলা দিয়ে আওয়াজ বের হবে? কখনোই না।
আমান হুজুরকে তাড়া দিয়ে বলে
“শুরু করুন।।
হুজুর করুন নয়নে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখ পানে। আরও একবার প্রতিবাদ করুক মেয়েটা। স্পষ্ট স্বরে বলুক “করবো না বিয়ে”

কিন্তু আদ্রিতাকে চুপ থাকতে দেখে আশাহত হয় উনি।
হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বড় খাতায় লিখতে শুরু করে।
সিয়াম আদ্রিতার পাশে দাঁড়িয়ে বলে
“মা যাও বাবার পাশে বসো গিয়ে।
আদ্রিতা রাগী দৃষ্টিতে সিয়ামের পানে তাকিয়ে বলে
” মা ডাকবেন না আমায়। আমি আদ্রিতা
“কিন্তু আমার মা।
” আমান ভাই সিয়াম ভাইকে কিছু বলুন।
আমান কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলে
“তুমি আমারও মা।
আহাদ এবং ইভান এক সঙ্গে বলে ওঠে
“তুমি আমাদেরও মা।
আমরা তোমার সন্তান।
বিরক্ত আদ্রিতা দাঁতে দাঁত চেপে আবরারের পাশে গিয়ে বসে।

সেই মুহুর্তেই মিউ মিউ শব্দে দৌড়ে আসে এ্যানি। এই মুহুর্তে এখানে এ্যানিকে একদমই আশা করে নি আদ্রিতা। সে মমতাময়ী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাচ্চার পানে। এ্যানি এক দৌড়ে এসে আদ্রিতার কোল দখল করে নেয়। আদ্রিতা পরম যত্নে হাজার খানা চুমু এঁকে দেয় এ্যানির সারা শরীরে।
সিয়াম বলে
” আবরার তাহলে তুই এ্যানিকে আনার জন্যই মিস্টার শেখরকে সুইজারল্যান্ড পাঠিয়েছিলি?
জবাব নেই আবরারের। সে হুজুরের লেখা দেখতে ব্যস্ত। ভুলভাল লিখছে না তো আবার।
হুজুরের লেখা শেষ হতেই খাতা এগিয়ে দেয় আবরারের দিকে
বলে
“এখানে তোমার সাইন লাগবে।

সঙ্গে সঙ্গে হুজুরের থেকে কলম খানা নিয়ে সাইন করে দেয় আবরার। এবং খাতা আদ্রিতার দিকে এগিয়ে দেয়।
আদ্রিতা সাইন করতে একটু সময় নেয়।
সাইনের পর্ব শেষ হতেই ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক কালেমা পড়ে কবুল বলানো হয় দুজনকে।
শেষ পর্যায়ে মোনাজাত ধরে বিয়ের পর্ব শেষ করা হয়।
আবরার হুজুরকে এক ব্যান্ডিল টাকা দেয়। কতো টাকা হবে সেখানে?
ওই পঞ্চাশ হাজারের মতো।
তারপর সিয়ামকে ইশারা করে হুজুরকে পৌঁছে দিয়ে আসার জন্য।
বিরক্ত সিয়াম এক খানা কবিতা আবৃত্তি করে
” বিয়ে করবে আমার আব্বা
তারপর করবে বাসর
সব কাজ আমাকে দিয়ে করাবে
যেনো আমি তার চাকর
ভাল্লাগে
বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। পেছন পেছন যায় হুজুর। একবার পেছন ফিরে আদ্রিতার পানে তাকাতেও ভুলে না।

ওরা চোখের আড়াল হতেই আবরার উঠে দাঁড়ায়। এবং আদ্রিতার হাত ধরে।
আমানের পানে তাকিয়ে বলে
“তোদের জন্য কোন রুম বুক করেছিস?
” ওই তো পাশের টা।
“আমি আর ও ওই রুমে থাকবো।
তোরা এখানে থাক।
আমান আহাদ এবং ইভান বড় বড় নয়নে তাকায় আবরারের মুখ পানে।
আশ্চর্য স্বরে বলে
” তোদের জন্য এই রুম সাজালাম।
আবরার যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে বলে
“ফুলের গন্ধে রোমাঞ্চ করতে অসুবিধা হবে।
ফুল প্রাইভেসি চাই আমার। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।
ব্যাসস আর কোনো কথা নয়। চলে যায়।
আহাদ ফুল সাজানো খাটে শুয়ে পড়ে
” কি কপাল রে ভাই আমাদের?

বউ ছাড়া বাসর করবো?
সিয়াম থাকলে এতোক্ষণে একটা কবিতা আবৃত্তি করে ফেলতো।
ইভান বলে
“এই এই আমি ট্রাই করি সিয়ামের মতো?
বাসর ঘরে বর নেই
চলে গেছে অন্য রুমে
আমান চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে
” কবিতা সিয়ামকেই মানায়। তোকে মানাবে না শালা। চুপ থাক

সিয়ামদের রুমটা একদমই সাদামাটা। শুধু বড়সর একটা বিছানা রয়েছে। আবরার কক্ষে এসে আদ্রিতার হাত ছেড়ে দেয় এবং দরজা বন্ধ করে ফেলে।
আদ্রিতা নিজের কোলে থাকা এ্যানিকে নামিয়ে দেয়। ভয়ার্তক এ্যানি আদ্রিতার পা ঘেসে দাঁড়িয়ে থাকে। তার ধারণা একটু দূরে গেলেই আবার মা হারিয়ে যাবে। বা তাকে ছেড়ে দূরে চলে যাবে।
আদ্রিতা আবরারের মুখ পানে তাকায়। নিচু স্বরে বলে
“এখানে কেনো আসলাম?
আবরারের সোজাসাপ্টা জবাব
” রোমাঞ্চ করবো বলে।
“আমি জানি।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৮

রোমাঞ্চ ছাড়া আর বোঝেন কি আপনি?
কিন্তু আমি বুঝিয়েছি ওই সুন্দর রুম ছেড়ে এখানে কেনো?
” জাস্ট ওয়েট এন্ড সী
ভ্রু কুচকে ফেলে আদ্রিতা। এ আবার কি দেখাবে? আবরার খাটের পাশে থাকা লাগেজ খুলে ল্যাপটপ বের করে।
সঙ্গে সঙ্গেই প্রচন্ড জোরে শব্দ হয়ে ওঠে।
চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪০