তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৬

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৬
তানিশা সুলতানা

জরুরি মিটিং বসানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করা হবে। মিটিং ডেকেছে সিয়াম। আর তাকে হেল্প করেছে বাকিরা। আবরার বরাবরই রগচটা এবং অধৈর্য পুরুষ। রাগের মাথায় মানুষ খু ন করতেও দুবার ভাবে না। বছর দুয়েক আগে। কোম্পানির একটা ফাইল এদিক সেদিক হয়েছিলো। ফাইল রাখার দায়িত্ব যাকে দেওয়া হয়েছিলো
সে মূলত সেভ জায়গায় রেখেছিলো কিন্তু পরমুহূর্তে অসাবধানতায় সেটা পড়ে গিয়েছিলো। আই মিন ফ্লোরে।
তো আবরারের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং রয়েছে। কাইন্ট অপেক্ষা করছে। ম্যানেজারকে কল করে জিজ্ঞেস করা হলো ফাইল কোথায়। সে বললো কিন্তু জায়গা মতো ফাইল পাওয়া গেলো না। তখনই আবরার তাসনিন কেস করে বসলো ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। হাজতবাস করানো হলো তাকে। পরমুহূর্তে ফাইল পাওয়া গেলো ফ্লোরে। সেই ঘটনার পর থেকেই সিয়াম সতর্ক থাকে। কোনো গরবর দেখলেই মিটিং ফিক্সড করে। মাথা মোটা সিয়াম সব বিষয়ে গরবরে হলেও আবরারকে সামলাতে পারে ভালোই।

তো আজকে ভেবেছিলো আসিফকে মেরেই দিয়েছে। কিন্তু কিছু মুহুর্ত আগেই বুঝতে পারলো “আসিফ আদনান অক্ষত রয়েছে।
এবং সারাজীবন যাতে অক্ষত থাকে সেই জন্যই খোলামেলা কথা বলা প্রয়োজন। তাকে জানানো প্রয়োজন “আদ্রিতা বিবাহিত। তার বর দ্যা গ্রেট আবরার তাসনিন”
ফাঁকা একটা রুম। এখানে একটা বিশাল টেবিল এবং কিছু চেয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই।
একটা চেয়ারে আবরার বসে আছে। তার সামনেই আসিফ আদনান। বেচারা ভীষণ ভয়ে রয়েছে বোধহয়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ক্ষণে ক্ষণে শুকনো ঢোক গিলছে। দুই হাত কচলাচ্ছে।
আর এই পুরো ব্যাপারটাই আবরার গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বড়ই গম্ভীর তার মুখশ্রী। যেনো করলার রস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মুখে।
সিয়াম আমান ইভান এবং আহাদ আবরারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তারা গোটা রাস্তা আবরারকে শিখিয়েছে। অনুন্নয়ের স্বরে বলেছে
“ভাই শান্ত স্বরে কথা বলবি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দীর্ঘক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু দুজনের একজনও কথা বলছে না। তাই সিয়াম শুকনো কাশি দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।
আসিফ সিয়ামের পানে তাকালেও আবরার তাকায় না। বরং গম্ভীর স্বরে বলে
“এখানে কেনো এসেছো?
আসিফ সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দেয়। যেনো জিহ্বার আগায় জবাব রেডি ছিলো।
“আই ডোন্ট নো। খালামনি নিয়ে এসেছে।
সিয়াম বলে ওঠে
“আবরার ওর দোষ নেই। খালামনি এনেছে।
আসিফ বলে ওঠে
“আমার একটা প্রশ্ন আছে। কিছু জানতে চাই আমি।
আমান বলে ওঠে
” আমাদেরও তোমাকে কিছু বলার আছে।
তুমি আর কখনোই আদ্রিতার সঙ্গে কথা বলবে না। দেখা হলেও মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। ঠিক আছে?
আসিফ কপাল কুঁচকায়।

“কেনো?
কে হয় আদ্রিতা ওনার?
সিয়াম জবাব দেওয়ার জন্য হা করে তখনই আবরার জবাব দেয়
” ও ওর ভার্জিনিটি আমার কাছেই হারিয়েছে।
এবার বুঝে নে কে হয় ও আমার।
আসিফ দাঁড়িয়ে পড়ে। বুকটা বুঝি ওর কেঁপে উঠলো। সাথে একটু লজ্জাও পেলো। কি খারাপ লোক। কিভাবে একটা মেয়ের ব্যাপারে কথা বলছে। তবে সে একদমই বিশ্বাস করলো না আবরারের কথা। আদ্রিতা পবিত্র এবং ভীষণ সরল। এই মাফিয়া নিশ্চয় ওকে দেখে প্রেমে পড়েছে তাই গল্প বানাচ্ছে। যাতে ও আদ্রিতাকে ভুল বোঝে এবং ছেড়ে চলে যায়।
তবে আসিফ যাবে না। সরল মেয়েটাকে এই মাফিয়ার কবলে ফেলে কখনোই যাবে না।
সিয়াম শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে কবিতা আওড়ায়

“লজ্জা গেছে বাপের বাড়ি
আবরারের সঙ্গে তার বড়ই আড়ি
আমার মায়ের কপাল ফাঁটা
তাই তো ভাগ্যে জুটেছে নির্লজ্জ বেডা
কবিতা খানা শুনে ফেলে আমান। সে জড়িয়ে ধরে সিয়ামকে। ফিসফিস করে বলে
” জীবনে প্রথমবার তোর কবিতা ভালো লাগবে। বন্ধু তুই এগিয়ে যা। কিন্তু আর কখনোই ফিরে আসিস না।
সিয়াম মুখ বাঁকিয়ে জবাব দেয়
“যাবো শালা যাবো
একদিন অনেক দূরে এগিয়ে যাবো। গলায় থাকবে আমার মেডেল।
আহাদ হামি তুলে বলে
” জুতোর মেডেল বড়ই সুন্দর দেখতে।
সিয়াম কটমট নয়নে তাকায় আহাদের পানে। কিছু বলবে তার আগেই আবরারের কন্ঠস্বর শুনতে পায়
“আদ্রিতার আশেপাশে একটা মাছিকেও সহ্য করি না আমি।
ফারদার ওর দিকে তাকালে চোখ তুলে লুডু খেলবো।
বলেই আবরার চলে যায়। সিয়াম আসিফের গাল টেনে দিয়ে বলে
“উম্মাহহহহ বেবি।
তোমার একটা বোন থাকলে আমাকে দিও।
আমি ভীষণ হট

জ্ঞান ফেরার পর থেকেই আদ্রিতার নয়ন জোড়া আবরারকে খুঁজছে। ছটফট করছে এক পলক দেখার জন্য। কোথায় গেলো লোকটা? চুমু খেয়েই লাপাত্তা। আর কোনো খোঁজ নেই।
খুব তো গলা উঁচু করে বলে
” তোমাকে ছাড়া আমি দুই সেকেন্ডও থাকতে পারি না”
অথচ চার ঘন্টা হয়ে গেলো। তার কেনো খবর নেই।
আদ্রিতা একটা ব্যাপার বুঝে ফেলেছে
“ওই লোকটা তাকে দেখে দুই সেকেন্ডও থাকতে পারবে কি না সেটা ও জানে না।
তবে আদ্রিতা আবরার তাসনিনকে না দেখে দুই সেকেন্ডও থাকতে পারবে না।
কলিজা কাঁপতে থাকে। নয়ন জোড়া চাতক পাখির মতো এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে।
কি জাদু করলো সে?
কই কখনো তো ভালোবাসি বলে নি।

আদর করে আহ্লাদী স্বরে দুটো কথা বলে নি।ভালোবেসে খাইয়ে দেয় নি।
বুকের সঙ্গে মিশিয়ে দুই দন্ড গল্প করে নি।
হাত ধরে হাঁটে নি।
যত্ন করে নি।
হ্যাঁ অযত্ন করেছে।
হাত পুরিয়ে দিয়েছে।
গলা চেপে ধরেছে
ধমক দিয়েছে
কষ্ট দিয়েছে।
হাসি পায় আদ্রিতার। এ্যানিকে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে নিচু স্বরে বলে
“ভালোবাসে নি তাতেই আমি তাকে এতো ভালোবেসেছি।
একটু ভালোবাসলে যত্ন করলে পাগল হয়ে যেতাম তো।
“আদ্রিতা

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে পাশ ফিরপ তাকায় আদ্রিতা। জন্মদাতা পিতাকে দেখে হাসি মুখ খানা চুপসে যায়। আঁখি পল্লবে ভর করে এক রাশ ভয়। আবরারকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
আরিফ মুচকি হেসে এগিয়ে আসে। আদ্রিতার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“আম্মু ভালো আছো?
শুনলাম হাসপাতালে ভর্তি আছো। তাই জলদি চলে আসলাম।
কোনো জবাব দেয় না আদ্রিতা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকে বাবার মুখ পানে।
এ্যানি আদ্রিতার বুক থেকে মুখ তুলে আরিফকে এক পলক দেখে। সে হয়ত ভেবেছিলো আবরার এসেছে। কাঙ্ক্ষিত মানুষ নয় বলে পূণরায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।
” আদ্রিতা কথা কেনো বলছো না? বাবাকে দেখে খুশি হও নি?
আদ্রিতা মলিন হাসে।

“আম্মুকে হারিয়েছি বহুদিন হলো। তোমার জন্যই হারিয়েছিলাম।
দ্বিতীয় বার কাউকে হারাতে চাই না বাবা। তুমি প্লিজজ চলে যাও।
” চলে যাবো মানে কি?
তোমায় সাথে নিয়ে যাবো। আবরার তাসনিন একজন মাফিয়া। সে ভীষণ খারাপ। তার প্রমাণ তুমিও পেয়েছে। তার কাছ থেকে তোমাকে মুক্ত করতেই আমি এসেছি।
“বাবা সে মাফিয়া গুন্ডা বয় সাইকো যাই হোক
আমি তার সঙ্গেই থাকতে চাই।
আরিফ কপাল কুঁচকে ফেলে। বলে
“ওই মাফি
বাকিটা শেষ করার আগেই পেছন থেকে আবরার বলে ওঠে
” শশুর মশাই আপনার মেয়ে মাফিয়া আবরার তাসনিনকেই ভালোবাসে। হযবরল অন্য কাউকে গিয়ে বোঝান। আবরার তাসনিন এর ওয়াইফ এসব বুঝবে না।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৫

শুকনো ঢোক গিলে আরিফ। ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকায়। আবরার পকেটে হাত পুরে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। পেছনে চার বন্ধু। আরিফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“বেয়াদব ছেলে। তোমাকে আমি
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে
” সিয়াম তাকে বাইরে নিয়ে যা।
ওনার মেয়েকে চুমু খাওয়ার জন্য আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আই কেননট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ। নিড হার লিপস রাইট নাউ।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৭