তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৫

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৫
তানিশা সুলতানা

“সুখ গুলো দিলাম তোমায় সাজিয়ে রেখো যত্নে
আমি তোমার আপন ছিলাম বুঝবে তুমি কবে?
অবহেলা আর অপমানে হৃদয়ে করলে আঘাত
ভালোবাসার পরিবর্তন দুঃখই শুধু পেলাম”
ব্যথায় জর্জরিত দেহখানা, অশ্রুকণায় টইটুম্বুর আঁখি পল্লব, ১০৩° জ্বর শরীরে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসেছে আদ্রিতা। উহু নিজে পড়ালেখা করার জন্য নয়। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু তিক্ত বক্তব্য গুলো কাগজে কলমে প্রকাশ করার জন্য।

গায়ে এখনো বিছানায় থাকা চাদর খানা জড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে র*ক্ত গুলো শুকিয়ে জমাট বেঁধেছে। গলায় জ্বল জ্বল করছে আবরারের দেওয়া ক্ষত চিহ্ন।
কাঁপা কাঁপা হাতে কলম নারিয়ে লিখতে শুরু করে।
প্রিয় আব্বু
তুমি আমার ভীষণ প্রিয় ছিলে এখনো আছো। ছোট বেলায় বুঝতাম না তুমি কি করেছো? কি তোমার অপরাধ। সব তো ঠিক ছিলো। তুমি আমি আম্মু তিন জন মিলে সুন্দর সংসার ছিলো। সারাদিন শেষে তুমি একবার কল করতে আমি আর আম্মু সেই কলের জন্য অপেক্ষা করতাম। জানো সারাদিন আমি আর আম্মু পরিকল্পনা করতাম “কি কি বলবো তোমায়? সারাদিনে দুজন মিলে কি কি করেছি তার গল্প শেনাবো” কিন্তু যখন তুমি কল করতে দুই মিনিট কথা বলেই কল কাটতে ভীষণ মন খারাপ হতো আমাদের। মাঝেমধ্যে আম্মু কাঁদতো। কিন্তু আমি কাঁদতাম না বরং আম্মুর ওপর রাগ হতো। কেনো কাঁদছে সে? হয়ত তোমার কাজের চাপ বেশি

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু সেইদিন আন্টিটার সাথে তোমায় দেখেছিলাম সেইদিন বুঝতে পারলাম। তোমার ব্যস্ততা আসলে কোথায়।
জানো আব্বু আম্মু মরে যাওয়ার পরে আমার দিন গুলো খুব খারাপ কেটেছে। কথা বলার কেউ ছিলো না। আমি চাইতাম তুমি আসো আমার সাথে কথা বলো। কিন্তু তুমি আসতে না।
জানো আব্বু সেইদিন যখন তোমায় এয়ারপোর্টে দেখলাম ভেবেছিলাম দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরবে। এতোগুলো দিন তোমার সঙ্গে ছিলাম এই লোভে যে তুমি একবার আমায় মামনি বলে ডাকবে। একবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। একবার ভালোবেসে আদর করবে।
তোমার ওপর আমার ভীষণ অভিমান জমে আছে। অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম তোমায়।
কিন্তু এখন আর বলতে ইচ্ছে করছে না।
শুধু এই টুকুই বলবো “তুমি ভালো থাকো। সুখে থাকো। সুস্থ থাকো।”
তোমার সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে তোমার দিন গুলো সুন্দর কাটুক।
আব্বু আমি এখনো তোমায় ভীষণ ভালোবাসি। যতদিন বেঁচে থাকবো তোমায় ভালোবাসবো। তুমি আমার সুপারহিরো।

ইতি
তোমার অপ্রিয় মেয়ে
লেখা শেষ করে একবার নজর বুলায় আদ্রিতা। সব ঠিকঠাক আছে তো? ঠিকঠাক তো আছে তবে কয়েক ফোঁটা চোখের পানি ভিজিয়ে দিয়েছে চিঠিখানা। তবুও লেখা গুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
তারপর চিঠি খানা খাটের ওপর রাখে। যাতে উড়ে না যায় সেই জন্য বাটন ফোন খানা রেখে দেয় চিঠির ওপর।
“আজকে থেকে তোমাদের সবাইকে মুক্তি দিলাম। আমি না থাকলে সবাই ভালো থাকবে।
ইতি বেগম অনেক গুলো জামা কিনে দিয়েছে আদ্রিতাকে। সব গুলো নতুন জামার মাঝখানে আবরারের কিনে দেওয়া গাউন খানাও রয়েছে। সেই গাউনটা তুলে নেয়। বিছানা চাদর ফেলে জামাখানা পড়ে নেয়।
অতঃপর গুটিগুটি বেড়িয়ে যায় এই বাড়ি থেকে। বৃষ্টির স্রোত এখনো কমে নি। কয়েক সেকেন্ডেই আদ্রিতা ভিজে গিয়েছে।
আরিফ নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। কোনো এক অজানা কারণে তার ঘুম আসছিলো না।
হঠাৎ নজর পড়ে বাড়ির মেইন গেইটে।
আদ্রিতাকে বেরিয়ে যেতে দেখে বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে ওনার। পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকে না। যাক চলে।
তিনি অতিদ্রুত চলে যায় আদ্রিতার কক্ষে। ওনার মনে হচ্ছিলো কোনো না কোনো চিরকুট রেখে গিয়েছে আদ্রিতা। হৃদয়ে জমানো কথাগুলো বাবাকে বলে গিয়েছে।

সিয়াম বড়ই চিন্তিত। সে ক্ষণে ক্ষণে আবরারের কক্ষে উঁকি দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে কক্ষে ঢুকে পড়তে কিন্তু ভয় পাচ্ছে। যদি বকে বা মাইর দেয়?
কিন্তু নিজের লোভী মনকে দমাতেও পারছে না।
অবশেষে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বুক ভর্তি সাহস নিয়ে কক্ষে ঢুকে পড়ে।
আবরার রকিং চেয়ারে বসে আছে। দৃষ্টি শূন্যে। ঠোঁটের ভাজে সিগারেট। ডান হাত আঘাতপ্রাপ্ত। থেতলে গিয়েছে। টপটপ করে র*ক্ত ঝড়ছে। সিয়াম বিচলিত হয়। কাবাড থেকে ফাস্ট এইচ বক্স বের করে আবরারের পাশে গিয়ে বসে। আঘাতপ্রাপ্ত হাত খানা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ব্যথিত স্বরে বলে
“কি হয়েছে ভাই?
নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস কেনো?
আবরার জবাব দেয় না। সিগারেট এ শেষ টান ািয়ে সেটা ফেলে দেয় এবং তখুনি আরেকটা সিগারেট নিয়ে সেটা ঠোঁটের ভাজে পুরে নেয়। লাইটারের সাহায্যে তাতে আগুন জ্বালায় এবং সুখময় টান দেয়।

” আমি কি খুব খারাপ সিয়াম?
অসহায় শোনালো কি আবরারের কন্ঠস্বর? আবরার তাসনিন সে সব সময় নিজের মনের কথা শোনে। কারো কম্পিমেন্ট পাওয়া পছন্দ নয় তার।
সেই আবরার তাসনিন আজকে সিয়ামের কাছে নিজে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে?
আশ্চর্য বিষয় না?
সিয়াম তুলোয় স্যাভলন মাখিয়ে তা আবরারের হাতের ক্ষত স্থানে চেপে ধরে বলে
“তুই খুব ভালো ভাই।
আমার আবরার কখনো খারাপ হতে পারেই না।
আবরার ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। তারপর ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে
” সেই ছোট বেলায় বাবা মারা গেলো। বাবার মৃত্যুর আগের কাহিনির স্বাক্ষী আমি৷ মা যখন আরিফ রহমানের সাথে কথা বলছিলো বাবার সঙ্গে আমিও দেখেছিলাম।
ভেবেছিলাম মাকে কিছু বলবো।

কিন্তু বাবা তার মাথায় হাত রেখে বললো “আবরার তোকে আমার কসম। তাকে কিছু বলবি না”
বাবার একটা কসম আমার থেকে বাবাকে কেড়ে নিলো।
সেই একই কসম আজকে আদ্রিতা দিলো।
থামে আবরার। সিয়াম হা করে তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে। চোখের কুর্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়লো। সেটা সিয়াম স্পষ্ট দেখে ফেলেছে। আবরার কাঁদছে?
“এই আবরার
আদ্রিতাকে আমি গিয়ে নিয়ে আসি? ভাই তুই কষ্ট পাচ্ছিস? আমি ওকে এনে দিতে পারবো৷
তুই শুধু একবার বল।
আবরার সিয়ামের হাত ধরে।
“ওকে আমার চাই না।

” ওকে ছাড়া তুই দুই দিনও থাকতে পারবি না ভাই। ও তোর ভালো থাকার মেডিসিন।
“থাকতে না পারলে মরে যাবো। তবুও ওকে লাগবে না আমার।
সিয়াম আর কিছু বলে না। চুপচাপ আবরারের হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিতে থাকে। মনে মনে ভাবতে থাকে অন্য কিছু। আদ্রিতাকে আনতে হবে। কিভাবে আনবে? কোথায় আছে আদ্রিতা?
আবরার আবার বলে
” কালকেই সুইজারল্যান্ড ব্যাক করছি। সব কিছু গুছিয়ে রাখিস।
ব্যান্ডেজ করা শেষ। বক্স গুছিয়ে দাঁড়ায় সিয়াম। নিজের ভাঙা হাত খানা এগিয়ে আবরারের মাথায় হাত বুলায়।
“ভাই আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলবো। তুই রেস্ট কর।
বলেই সিয়াম চলে যায়। আবরার এবার হেসে ফেলে। বিরবির করে বলে
“পাগল একটা।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৪ (২)

আমান আহাদকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে সিয়াম। এবং তিন বন্ধু মিলে তখুনি বেরিয়ে পড়ে আদ্রিতাকে খুঁজতে। আবরারের খেয়াল রাখার জন্য ইভানকে রেখে যায়। পই পই করে বলে ” কুমিরের মতো না ঘুমিয়ে আবরারকে চোখে চোখে রাখবি”

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৬