তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৭
তানিশা সুলতানা
যে মানুষটার মুখোমুখি হতে হবে বলে বাবার বাড়ি থেকে চোরের মতো পালিয়ে আসলো সেই মানুষটারই মুখোমুখি হতে হলো আদ্রিতাকে।
বুকের ভেতরটা অসম্ভব কাঁপছে। পাশে আসিফ আদনান দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটা বোধহয় রেগে গেলো এবার আদ্রিতাকে মারবে, বকবে। আসিফকেও কয়েকটা কড়া কথা শোনাতে ভুলবে না।
পূণরায় রেগে যাবে লোকটা? তার অভিমান গাড়ো হবে। ভুল বুঝবে তাকে।
আশ্চর্য
যে কয়েক ঘন্টা আগেও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো “আবরার তাসনিনের প্রতি দুর্বলতা আর রাখবো না। আজকের পর থেকে তার কথা ভাববো না। মুখোমুখি হলেও এড়িয়ে চলবো। সে যতটা আঘাত করেছে আমায় তার থেকেও দ্বিগুণ আঘাত করবো তাকে”
কিন্তু এই মুহুর্তে আবরার তাসনিনের আঘাতের কথা মন থেকে উড়ে গিয়েছে। মন শুধু বলছে “সে কি আসিফকে দেখে ভুল বুঝলো?”
আবরারের চোখে চোখ রেখে কতক্ষণ যাবত উল্টাপাল্টা ভেবে চলেছে জানা নেই আদ্রিতার। তবে আতিয়া বেগম এগিয়ে এসে যখনই বলে ওঠে
“আদ্রিতা তুমি?
তখনই ভাবনা থেকে বের হয়। চোখ জোড়া নামিয়ে নেয়।
এদিক ওদিক দৃষ্টি ফিরিয়ে বলে
” মা এখনই আসলাম।
“তোর সাথে ওরা কারা?
” আ…
বাকিটা বলার আগেই ইশারা বলে ওঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আন্টি আমাদের চিনবেন না। রাস্তায় কাঁপতে কাঁপতে হাঁটছিলো। ভাইয়া আর আমি বাড়িতে পৌঁছে দিলাম।
ঠিক আছে তাহলে আন্টি আমরা যাচ্ছি।
ভালো থাকবেন।
আদ্রিতা নিজের খেয়াল রেখো।
বলেই আসিফের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
ইশারা চেনে আবরার তাসনিনকে। এমনকি আসিফের হাত ভাঙার রহস্যও জানে। তাই সে চাচ্ছে না তার ভাই এই লোকটার পাশাপাশি থাকুক।
আতিয়া বেগম নিজের শাড়ির আঁচল দ্বারা আদ্রিতার মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে বকতে থাকে
” ঠান্ডা লেগে গেলে কে দেখবে তোমায়?
নিজের প্রতি একটু যত্নশীল হতে পারো না? সারাক্ষণ আমার জানটা জ্বালিয়ে খাওয়ার ধান্দা।
এমন বকা প্রায়ই শুনে আদ্রিতা। কখনো মন খারাপ হয় না। বরং মিষ্টি বকা গুলো ভালোই লাগে। মা মা একটা ফিল পাওয়া যায়।
কিন্তু আজকে কেনো জানি মন খারাপ হয়ে যায়।
আড়চোখে এক পলক তাকায় আবরারের পানে। সে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যাচ্ছে। একবারও পেছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করলো না বোধহয়।
আদ্রিতাও অতি দ্রুত নজর ফিরিয়ে নেয়।
মনে মনে বলে
“নির্লজ্জ বেহায়া আদ্রিতা।
মরে যা
তবুও আগুন দেখে ঝাপ দিস না।
আতিয়া বেগম এবং আদ্রিতাকে সাথে নিয়ে আবরার কোথাও যাচ্ছে।
সকালে ব্রেকফাস্ট শেষে আতিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” পাখি এবং আপনি রেডি হয়ে নিন। বেরবো আমরা।
আদ্রিতা নিজের কক্ষে থেকেই শুনতে পায় আবরারের বলা কথা গুলো। মনের মধ্যে ভয়রা দাবা বাঁধে। ডিভোর্স দেওয়ার জন্য উকিল এর চেম্বারে নিয়ে যাবে না তো? অসম্ভব ভাবে কাঁপতে কলিজা খানা। মৃত্যু আসুক তবুও আবরার তাসনিনকে ডিভোর্স ািডে পারবে না সে। কিছুতেই না।
“আদ্রিতা তৈরি হয়ে নাও।
বেরবো আমরা
আতিয়া বেগম তাড়া দিয়ে বলে।
আদ্রিতা মানা করার সাহস পায় না। শুধু আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে জামা পাল্টে নেয়।।
এমনিতে গাড়ি ছাড়া কখনোই আবরার বাইরে বের হয় না।
তবে আজকে হাঁটছে। চোখে রোদ চশমা পড়ে নিয়েছে।
আদ্রিতা আবরারের পেছনে।
আতিয়া বেগম আহাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে আদ্রিতার নজর পড়ে রাস্তার পাশে থাকা হলুদ রংয়ের ছোট ফুলের পানে।
স্কুল বোধহয় এটা। উঁচু বিল্ডিং এর পাশে সুন্দর ফুল গাছ। তাতে হলুদ রংয়ের ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে।
আদ্রিতার বড্ড ইচ্ছে করে একখানা ফুল ছিঁড়তে। কিন্তু সাহস পায় না। কেনোনা সেখানেই দারোয়ান বসে আছে। দেখলে নিশ্চয় বকবে।
মনটা খারাপ হয় তার।
ফুলের পান থেকে নজর ফেরাতে যেতেই দেখতে পায় আবরার তাসনিন খুবই যত্ন সহকারে একটা ফুল ছিঁড়ে নিলো এবং ফুলটা আদ্রিতার পানে এগিয়ে দেয়।
মনে মনে বেশ খুশি হয় আদ্রিতা। ঠোঁটের কোণের হাসি লুকিয়ে ফুলটা হাতে নেয়। এবং সমান তালে হাঁটতে থাকে আবরারের সঙ্গে পা মিলিয়ে।
টনি এবং ইমা পাশাপাশি বসে আছে। তাদের মূলত বসিয়ে রাখা হয়েছে।
অনেক মুরব্বিরা তাদের ঘিরে বসে আছে।
সিয়াম ইমার পায়ের কাছে মোড়া টেনে বসে আছে। মানে টনির সাথে বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এখান থেকে নরবে না এটাই তার প্রতিজ্ঞা।
আরিফ তার দুই বাচ্চা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।
এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
বিচার কার্যক্রম শুরু হবে কিন্তু আমান হতে দিচ্ছে না। আবরার আসবে তার পরই যা হওয়ার হবে।
তারই মধ্যে আহাদ এবং আতিয়া চলে আসে। পেছনে দেখা যাচ্ছে আদ্রিতা এবং আবরার আসছে।
এবার আমান অনুমতি দেয়।
একজন মুরব্বি আরিফের পানে তাকিয়ে বলে
” আপনার বউকে অ*ন্ত*র*ঙ্গ অবস্থায় এই লোকটার সঙ্গে দেখা গেছে।
ভদ্র সমাজে বসবাস করি আমরা। এমন অশ্লীলতার সঙ্গে পরিচিত নই।।
এবার আপনি বলুন কি করবো?
আরিফ এক পলক তাকায় ইমার মুখ পানে। পরপরই নজর ফিরিয়ে নেয়।
আদ্রিতা সব কথা শুনে আবরারের মুখ পানে তাকিয়ে আছে। কেনোনা সে বুঝে গিয়েছে এসব আবরারের কারসাজি।
আরেকজন মুরব্বি বলে ওঠে
“আপনার বউ আপনার সঙ্গে সুখী না। সে এই লোকটার সঙ্গে থাকতে চায়।
সিয়াম বলে
” চাচ্চু এটা কবিতার সুরে বলতে হয়
সুখী নয় আপনার বউ
বিবাহিত জীবনে
শখ জেগেছে লাং ধরার
নতুন করে ফুল ফুটেছে হৃদয় কাননে
বুড়ি সে হয়েছে ঠিকই
তবে মনের বয়স ষোল
ত
বাকিটা শেষ করার আগেই আমান মুখ চেপে ধরে সিয়ামের। ফিসফিস করে বলে
“চুপ কর শালা।
তোর কবিতা পরে শুনবোনি।
আরিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
” আপনাদের যা ভালো মনে হয় করেন।
বলেই সে তার বাচ্চা দুটো নিয়ে চলে যায়। ইমা অনেকবার পিছু ডাকে কিন্তু একবারও পেছন ফিরে তাকায় না।
এলাকার মুরব্বিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে আগেই। এবার জানিয়ে দেয় শুধু।
বলে “ওনাদের বিয়ে দেওয়া হবে।”
এরপর টনি এবং ইমাকে নিয়ে চলে যায় সবাই।
সিয়াম মুক্ত পাখির মতো উচ্চ স্বরে গেয়ে ওঠে
“লাফা লাফা লাফা লাফা লা রে লাফারা
বন্ধু রে তোর মুখের হাসি লাগে রে ভালা
বন্ধু রে তোরে নিয়ে সুখেরই সাগরে
ভাসাবো প্রেমের ভেলা
এই গানটা আজকে সিয়াম আর টনি শুনবে।
আমান মুখ বাঁকিয়ে বলে
” ধুরর শালা
ইমা গাইবে
তুমি দিও না গো বাসর ঘরে বাত্তি নিভাইয়া
আমি অন্ধকারে বন্ধ ঘরে যাবো মরিয়া
তারপর টনি বলবে
“তুমি ভয় কেনো পাও প্রাণ সজনি আমায় দেখিয়া
তারপর জানি কি ভুলে গেছি।
আদ্রিতার দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে৷ রাগে শরীর কাঁপছে।
” আবরার তাসনিন হার্ট লেস জানতাম।
কিন্তু আপনারা ৪ জন এতোটা খারাপ জানতাম না।
ভীষণ খারাপ আপনারা।
ভীষণ খারাপ
কেনো করলেন এমনটা?
আতিয়া বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৬
আবরারের মুখ পানে তাকিয়ে বলে
“তুই ওনাদের মেরে ফেলতিস সেটাই ভালো হতো।
কিন্তু যেটা করলি
আবরার কপাল কুঁচকে বলে
” সিয়াম ওদের ভিডিও দেখা।