তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৮
তানিশা সুলতানা
ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছে আদ্রিতা। আসমানে মেঘ জমেছে। যখন তখন ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়বে। রিকশার বড়ই অভাব। একটা ফাঁকা রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু মুহূর্ত ভার্সিটির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় হেঁটেই বাসায় ফিরবে। সেই মোতাবেক একা একা হাঁটছে। হঠাৎ করে আদ্রিতার সামনে আসিফ চলে আসে।
“তুমি বিয়ে করছো?
আসিফ শুধায়। আদ্রিতা ভ্রু কুচকে বলে
” আমি তো আগে থেকেই বিবাহিত। ভুলে গেলেন আপনি?
আসিফ নিজের রাগটা কন্ট্রোলে আনতে পারে না। চট করেই আদ্রিতার হাত চেপে ধরে। এবং চিৎকার করে বলে ওঠে
“হ্যাঁ ভুলে গেছি আমি। সব ভুলে গেছি। শুধু মনে আছে তুমি একদিন আমাকে ভালোবাসতে। আমার জন্য পাগল ছিলে।
আদ্রিতা নিজের হাত খানা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে আসিফের শক্তির সঙ্গে পেরে উঠতে পারে না।
” আসিফ প্লিজজ হাত ছাড়ুন।
“আদ্রিতা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের বিয়ে হবে। রাণীর মতো সাজিয়ে রাখবো তোমায়।
” আসিফ আদনান আমার রাজা আছে।
“সে তোমার যোগ্য নয় আদ্রিতা। ভালোবাসে না তোমায়। তার সাথে থাকলে তুমি কখনোই সুখী হতে পারবে না। বোঝার চেষ্টা করো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আসিফ হাত ছাড়ুন।
আদ্রিতার হাত ছেড়ে দেয় আসিফ। আদ্রিতা মৃদু হেসে বলে
“আপনি আমার ভালো লাগা ছিলেন আসিফ। আপনাকে ভালো লাগতো। কখনো ভালোবাসি নি।
তাই তো আবরারকে পেয়ে খুব সহজেই আপনাকে ভুলে যেতে পেরেছি।
” তাহলে ভালোবাসো কাকে? আবরারকে?
আদ্রিতা জবাব দেয়
“হ্যাঁ
দেখুন কেমন বেহায়া হয়ে উঠেছি।
গোটা দুনিয়া পেয়েও তাকে ভুলতে পারছিনা। আমি রাতে ঘুমোতে পারি না। খেতে পারি না। কোথাও গিয়ে শান্তি পাই না। মনের মধ্যে শুধু আবরার তাসনিন ঘুরতে থাকে। কবে তাকে এক পলক দেখবো? কবে তার স্পর্শ পাবো? সেটার প্রহর গুনে যাচ্ছি। আই থিংক এটাই ভালোবাসা।
আসিফ আমার কখনো মনে হয়নি আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আপনাকে না পেলে এলোমেলো হয়ে যাবো।
কিন্তু আবরারকে দেখার পর থেকে। তার প্রতি মনে ফিলিংস জাগার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে। তাকে না পেলে আমি বাঁচবো না
মরে যাবো।
চলে যাই আদ্রিতা। দাঁড়িয়ে থাকে আসিফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতা যাওয়ার পানে। আনমনে বিরবির করে বলে ওঠে
“তুমি যদি আমারই না হবে? আমাকে ভালোই না বাসবে? তাহলে আমাকে ভালবাসতে বাধ্য করলে কেনো? কেনোই বা দুদিনের জন্য আমার জীবনে আসলে? আদ্রিতা তোমাকে অভিশাপ দিতে মন চাচ্ছে। ইচ্ছে করছে বলতে “তুমি কোনদিনও সুখী হবে না” কিন্তু তুমি কি জানো? তুমি সুখী না হলে আমিও এক সেকেন্ড ভালো থাকতে পারবো না।
তোমাকে ভালো রাখবো বলেই তোমায় ভালোবেসেছিলাম। তোমার ভালো থাকা কেড়ে নিতে নয়।
আবরারের বিয়ের ডেট এগিয়ে আসছে। এইতো মাঝখানে আর তিন দিন আছে। তারপরে তাদের বাংলাদেশে যেতে হবে। তুলে নিয়ে আসতে হবে আদ্রিতা নামক রমণীটি কে। আমান আহাদ ইভান এবং সিয়াম দারুন উৎসাহে কাজ করে চলেছে। বাড়ি খানা কে সুন্দর করে ডেকোরেশন করছে। একখানা হেলিকপ্টারে ফুল দিয়ে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত তাদের দুটো হেলিকপ্টার এবং একটা প্লেন লাগবে। একটা হেলিকাপ্টারে বাসা থেকে সুইজারল্যান্ড এর এয়ারপোর্ট যাবে। সেখান থেকে প্লেনে বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট নামবে। এবং সেখান থেকে আরেকটা হেলিকপ্টার নিয়ে চৌধুরী বাড়ির সামনে যাবে। এমনটা প্ল্যানিং সাজিয়েছে সিয়াম। দ্য গ্রেট আবরার তাসনিন বিয়ে করবে। নিশ্চয়ই সাধারণ প্রাইভেট কারে করে যাওয়া ঠিক হবে না।
এই মুহূর্তে বাড়ির সামনে থাকা ছোট্ট গার্ডেনটি পরিচর্যা করছে সিয়াম এবং আমান। আবরার কবরের সামনে বসে ল্যাপটপে অফিসের ইম্পরট্যান্ট কিছু ফাইল চেক করছে। মূলত তখনই বাংলাদেশের একজন বডিগার্ড আবরার কে আদ্রিতা এবং আসিফের একখানা ফটো পাঠান। রাস্তার মাঝখানে আসিফ অার্জিত তার হাত চেপে ধরেছে আবরারের মাথাটা গরম হয়ে যায় মুহূর্তেই।
বাংলাদেশে থাকলে নিশ্চয়ই আসিফ আপনাদের মন্টু কেটে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিত কিন্তু এই মুহূর্তে যেহেতু সেটা পসিবল নয় তাই চট করে কল করে আসিফ আদনানের নাম্বারে।
প্রথমবার রিং হতে হতে কল খানা কেটে যায় দ্বিতীয়বার কল করে আবরার এবার রিসিভ হয়।
আসিফ কল রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই আবরার দাঁতের দাঁত চেপে গালি দিয়ে ওঠে
“বাস্টার। হু আর ইউ? আমার পাখির হাত ধরার সাহস তোকে কে দিয়েছে?
আসিফ মৃদু হেসে জবাব দেয়
“অধিকার আছে বলেই ধরেছি
“ওহ নো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার পাখি তোর বোন।
ওকে আই ডোন্ট মাইন্ড
৯ মাস পরে মামা হবি নেক্সট টাইম দেখা হলে কনগ্রাচুলেশন বলে দিস বোনকে।।
“এই শালা আদ্রিতা আমার বোন নয়।
“ট্রাস্ট মি আসিফ বাংলাদেশে থাকলে তোর জিভ টেনে কেটে ফেলতাম। আবরার তাসনিন তোর দুই টাকার বোনের দিকে ফিরেও তাকায় না। সো ডোন্ট কল মি শালা।
“তুই আমার বোনকে
আসিফের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আবরার বলে ওঠে
“দু টাকার বলেছি। এর থেকে জঘন্য গালি দেওয়ার আগে কল কাট।
এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং নেক্সটাইম আমার পাখির আশেপাশেও তোকে দেখলে খবর আছে।
আবরার কল কেটে দেয়। তবুও যেনো তার রাগটা কমছে না। দু চারঘাত দিতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো।
এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় টনির মেয়ে টিশা।
হাঁটু ওবদি শর্ট ড্রেস পড়েছে। সিয়াম তাকে দেখেই বলে ওঠে
” আফা আপনি পায়জামা পড়তে ভুলে গেছেন। মোটা মোটা ঠ্যাং বেরিয়ে আছে।
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে টিশা। ইভান এবং আহাদ ঠোঁট চেপে হাসে। আমান বিরক্ত হয়।
“একচুয়েলি ভাইয়া ড্রেসটা এমনই।
” ওহহ তাই
হাঁটু ওবদি পড়ে ড্রেস
মাইয়ারা হাঁটে বেশ
আমার যে অস্থির লাগে
তাগোরে ঠ্যাং ধরতে ইচ্ছে করে
ধরলে পরেই দিবে বকা
চরিত্র হীন বলে করবে বকাঝকা
আমি সিয়াম ভালা ছেলে বুঝবে না কেউ
তাগোরে অর্ধেক ড্রেস দেখে হৃদয়ে ওঠে যে ঢেউ
সিয়ামের কবিতায় হাত তালি দিয়ে ওঠে ইভান এবং আহাদ।
আমান বলে
“সিয়াম স্টপ ইয়ার।
টিশা কিছু বলবে?
” একচুয়েলি আবরার স্যারের কাছে এসেছিলাম।
“ওহহ
আবরারের তো বিয়ে তাই মেশিনে তেল দিচ্ছে।
মানে বউয়ের সাথে প্রেম করছে।
টিশা বোধহয় অবাক হলো।
” ওনার বিয়ে?
সিয়াম ভ্রু কুচকে বলে
“হ্যাঁ জানেন না?
কালকের পরের দিনই বিয়ে।
আপনার কিন্তু দাওয়াত৷ একটা রোস্ট খেয়ে যাইয়েন।
” আসছি তাহলে
বলেই টিশা চলে যায়। তার পেছন পেছন আমানও যায়। সিয়াম মুখ বাঁকায়৷
“ওগোরে ঢং দেখলে বিরক্ত লাগে রে ভাই।
আতিয়া বেগমের খুশির শেষ নেই। এলাকার মহিলাদের ডেকে এনেছে কাজ করানোর জন্য। নিজেও বসে নেই। সেও সকলের হাতে হাতে কাজ করছে। এবং খুশি মনে গল্প করে যাচ্ছে। আদ্রিতা নিজ কক্ষের বেলকনি থেকে মায়ের খুশি টা দেখছে।
কতদিন পরে মাকে মন প্রাণ খুলে হাসতে দেখছ সে। কতদিন পরে কি? আদ্রিতা কখনো তাকে হাসতেই দেখিনি। বরাবরি গম্ভীর। যেনো কত দুঃখী সে।
এই প্রথমবার আতিয়া বেগমকে সুখী মনে হচ্ছে।
এসব ভাবনার মাঝে আদ্রিতার কল বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে আবরার তাসনিন নামটা জলজল করছে।
সেসঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ করে। কিছু বলবে তার আগে আবরার বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৭
“মুভি দেখা ডান?
আদ্রিতা ভুরু কুচকে বলে
“কি? মুভি?
আবরার তাড়াহুড়ো করে বলে
“আরেকটা মুভি আছে Fifty Shades of grey. এটা বেশ হট। লিংক পাঠাচ্ছি আজ রাতের মধ্যে দেখে শেষ দিবা। ওকে।
বলেই কল কেটে দেয়