তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৫

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৫
তানিশা সুলতানা

“ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার মধ্যেও এক ধরণের সুখ লুকিয়ে থাকে। গোটা দুনিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে প্রিয় মানুষটির অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার গল্পটা সহজ ছিলো না ইশারার জন্য।
এই তো গত পৌরসু রাতে বাবা সাফ সাফ জানিয়ে দিলো “তোমায় বিয়ে করতে হবে”
দিশেহারা ইশারা বাবাকে হাজারবার বললো “বাবা এখুনি বিয়ে করতে চাই না আমি। আর একটু সময় দাও”
বাবা তখন ইশারার হাত দুটো মুঠো করে ধরে বলে

“তুমি আর আসিফ ছাড়া কেউ নেই আমার। আসিফের অবস্থা দেখেছো? ভালোবেসে দুঃখ পেয়ে কেমন পাগল পাগল হয়ে গিয়েছে। আমি চাই না এমন পরিস্থিতিতে তুমিও পড়ো। সামনে শুক্রবার তোমার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে কাবিন করিয়ে রাখবো। আর কোনো কথা শুনবো না।
মনের মধ্যে সিয়ামের জন্য ভালোবাসা রেখে অন্য কারো সঙ্গে কিভাবে সংসার করবে ইশারা? তাই তো সেইদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সিয়ামকে মনের কথা জানাবে। আকুতি করে নিজের ভালোবাসার কথা বলবে। প্রয়োজনে পা জড়িয়ে ধরবে।
কেঁদে কেঁদে বলবে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার আপনাকে লাগবে সিয়াম। গোটা দুনিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও আপনাকে আমার চাই। আপনাকে না পেলে মরে যাবো তবুও অন্য কাউকে মানতে পারবো না।
আমায় আপনার সঙ্গে রাখবেন সিয়াম? ভালোবাসা গ্রহণ করবেন আমায়?
কিন্তু সেসব কিছুই করতে হলো না। সিয়াম নিজেই সবটা করলো।
সকালে ঘুম ভাঙতেই ইশারা দেখতে পায় সিয়াম জামাকাপড় প্যাক করছে। হাসি ফুটে ওঠে ইশারার ঠোঁটের কোণে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে বলে
” এখনই যাবো আমরা?
সিয়াম লাজুক হাসে। আসলে ইশারার দিকে তাকাতে লজ্জা করছে তার। কাল রাতে কি সব অশ্লীল কাজকর্ম করে ফেললো। ছি ছি

“আপনি লজ্জা পাচ্ছেন সিয়াম?
“ও মা পাবো না? জীবনের প্রথম অশ্লীল কাজকর্ম করলাম। লজ্জা না পেলে তুমি ভাবতে পারো আমি আগেও এসব করেছি।
ইশারা ফিক করে হেসে ওঠে।
তখনই দরজা ধাক্কানোর শব্দ ভেসে আসে। তিন বলদ চলে এসেছে। আমান চিল্লিয়ে বলছে
” আবার কাল ট্রাই করিস হাডুডু খেলার। আজকের মতো দরজা খোল। যদিও সারাজীবন ট্রাই করলেও তোর মেশিন কাজ করবে না।
সিয়াম দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“এসে গেছে শয়তানের দল
ওরে সিয়াম তুই তাড়াতাড়ি চল
নাহলে ওরা মানসম্মান নিয়ে করবে খেলা
কোথায় পেয়েছিলাম এসব অসভ্যদের মেলা?
জীবন আমার করে ছিলো ছারখার
বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করেও শান্তি নাই।
বলতে বলতে দরজা খুলতে যায়। সিঁটকেনিতে হাত দিয়ে ইশারার দিকে তাকায়।

” শোনে মেয়ে আমরা এক মাসের মধ্যেই বেবি নিয়ে নিবো। তারপর ওদের দেখাবো আমার মেশিন কাজ করে।
ইশারা নাক মুখ কুঁচকে ছিহহ বলে।
সিয়াম দরজা খুলতেই হুরমুর করে তিনজনই ভেতরে ঢুকে পড়ে। আহাদ চলে যায় ইশারার কাছে। সামনে দাঁড়িয়ে লম্বা সালাম দেয়
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি। আমি আহাদ। আপনার দেবর।
ভালো আছেন? ভাই পারে?
না মানে কথা বলতে আর কি
ইশারা শুকনো ঢোক গিলে কোনোরকমে সালাম ফেরায়। তারপর খাট থেকে নেমে দৌড়ে বেরিয়ে যায় কক্ষ থেকে।
সিয়াম সাংঘাতিক রেগে যায়।

” শালার দল আমার বউকে লজ্জা দিলি কেন?
ইভান বলে
“ও মা ভাবির খবরবার্তা জানবো না?
ভাই তুই না পারলে বলিস। কুদরতি শরবত পাওয়া যায় হুলালা শহরে। তোর জন্য কিনে আনবোনি।
আমান বলে
” আমি তো অলরেডি অর্ডার দিয়ে ফেলেছি।
সিয়ামের দুঃখ আমি ছাড়া আর কে বোঝে?
হতাশ সিয়াম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
“তোরা ভালো হবি না?
তিনজন এক সাথে বলে ওঠে
“ভালো হয়ে গেছি। খ্রাপ কথা বলা পৌরসুদিন ছেড়ে দিছি”

চলে যাচ্ছে আদ্রিতা। সারাজীবনের মতো বাংলাদেশকে পরিত্যাগ করছে। না না ইচ্ছে করে নয়। আসলেই এই দেশটা এতো পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে তাকে, এতো কিছু কেড়ে নিয়েছে যে মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে।
মন বলে “আদ্রিতা এখানে আর থাকিস না। এখন যে সুখ টুকু পাচ্ছিস সেটাও চলে যাবে”
চলে যাচ্ছে বলে আদ্রিতার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে না কারো সঙ্গে একটু দেখা করতে। শুধু মনে হচ্ছে কখন যাবো এই দেশ ছেড়ে? কখন?
আজকে আর হেলিকপ্টার নয়। ছাঁদ খোলা প্রাইভেট কারে করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাবে ওরা। লাগেজ সহ প্রয়োজনীয় সকল কিছুই গাড়িতে তোলা হয়েছে। ইশারা সহ সকলেইও উঠে পড়েছে। এবার শুধু আবরার আদ্রিতা উঠলেই গাড়ি চলতে শুরু করবে। এমন মুহুর্তে আবরার আটকে দেয় আদ্রিতাকে।
সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলে

“তোরা এগো
আমরা আসছি।
কপাল কুঁচকে আবরারের মুখ পানে তাকায় আদ্রিতা। বলে
” আমরা পরে যাবো কেনো?
আবরার আদ্রিতার কাঁধে হাত রেখে বলে
“বাবা আর দাদুর সঙ্গে দেখা করতে হবে পাখি।
আর তোমার মায়ের সঙ্গেও।
চলো আমরা তাদের থেকে দোয়া নিয়ে আসি।
আবরারের কালো রংয়ের বাইক খানা বের করা হয়। এবং সেই বাইকে চেপে দুজন উপস্থিত হয় কবরস্থানে। তিনজনকে একই কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছে।
আদ্রিতার বুকটা ভাড়ি হয়ে ওঠে। মায়ের কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার পায়ের দিকটায় বসে পড়ে। সবুজ ঘাস ডিঙিয়ে একটুখানি মাটি তুলে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে

” আম্মু তুমি বলেছি আমি অনেক সুখী হবো। পৃথিবী সব সুখ আমার হবে। তুমি দেখতে পাচ্ছো মা? আমি কতোটা সুখে আছি?আল্লাহ আমাকে সুখ দিয়েছে। কিন্তু দিন শেষে তোমার শূন্যতা পিছু ছাড়ে না। একটা উপায় বলে দাও না আম্মু৷ কিভাবে পূর্ণ হবো আমি?
আদ্রিতার কানে বোধহয় তার মা বলে গেলো
“খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণতার সুখটাও পাবে তুমি। সেইদিনটা খুব বেশি দূরে নয়।
আবরার বাবা এবং দাদুর কবরে সালাম করে আদ্রিতার হাত ধরে। বড্ড নরম সুরে বলে
” আজকেই শেষ। এরপর থেকে তোমার নয়নে এক ফোঁটা অশ্রু জমার সাহস পাবে না। আই প্রমিজ।
আদ্রিতা হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নেয়।
“আপনি আমার সাথে থাকলে কান্নারাও ভয় পেয়ে যায়। আবরার তাসনিন এর বউয়ের চোখে ভিড় করার জন্য যদি তাদের গর্দান যায়?
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে আবরার। আদ্রিতা সেটা দেখে নেয়

” আপনি হাসলেন?
আল্লাহহ আমার জামাই হেসেছে। আম্মু দেখলে গোমড়ামুখো হাতি হাসছে।
আবরার হাসি থামিয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলে
“আমি হাতি?
প্রসঙ্গ পাল্টাতে আদ্রিতা বলে
” দেরি হয়ে যাচ্ছে। চলুন চলুন
বলতে বলতে আবরারের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।আবরার বাইকে বসতেই আদ্রিতাও পেছনে বসে। তখনই খাটিয়ায় করে একটা লাশকে কবরস্থানে ঢোকানো হয়।

আদ্রিতা এক পলক তাকায় সেইদিকে। বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আবরার বাইক চালিয়ে চলে যায়।
আদ্রিতা জানলো না ওই লাশটা তার বাবার। বুঝলো না বাবা নামক খারাপ লোকটা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে।
একজন পাপিষ্ঠ পাপ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আর কখনেই কেউ কল করবে না। বলবে না “আদ্রিতা মামনি ভালো আছো? খেয়েছো? টাকা লাগবে তোমার? পড়ালেখা কেমন চলছে? আম্মু মন দিয়ে পড়বে”
ঈদ আসলে নতুন জামা কিনে পাঠাবে না। পছন্দের পার্সিয়ান বিড়াল নিয়ে কেউ দেখা করতে আসবে না।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৪

বাবা বলে ডাকার মতো কেউ রইলো না।
পুরোপুরি এতিম হয়ে গেলো আদ্রিতা।
জানতে পারলো না মেয়েটা।
জানলে হয়ত বাবা নামক পাপি মানুষটাকে ক্ষমা করে চিৎকার করে কাঁদতো। শেষবার বাবার মুখ খানা দেখে শৈশবের কথা মনে করতো।
করুন আকুতি নিয়ে বলতো “বাবা আমি এতিম হয়ে গেলাম। এক আবরার ছাড়া আমার আর কেউ রইলো না”

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৬