তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮৩
তানিশা সুলতানা
আল্লাহর নামে ঢুকিলো আমান
শেষ করিবে আজ রোমাঞ্চের কামান
আমি সিয়াম হতভাগা
তাই কপালে জুটলো আমানের বাসর দেখা
সিয়ামের কবিতা শুনে আবরার নিজ কক্ষে যেতে যেতে বলে
“জানালা দিয়ে উঁকি দিতে পারিস।
আই থিং কিছু দেখতে পাবি।
সিয়াম যেনো আশার আলো খুঁজে পেলো। জুতো খুলে আহাদ এবং ইভানের কক্ষের দিকে দৌড় দেয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে ওদের খুঁজে পায় না। কোথায় গেছে হাদারাম দুটো আল্লাহ জানে। তাতে সিয়ামের কি? ওদের ছাড়াই ও আমানের বাসর দেখবো।
এটা ভেবেই সিয়াম এগোতে থাকে। সামনে পড়ে ইশারা। কপাল কুঁচকে বলে
” কোথায় যাচ্ছো?
“পরে বলবো। আগে সামনে থেকে সরো। সব কিছু শেষ হয়ে গেলো ওইখান দিয়ে
বলেই ইশারাকে সরিয়ে দৌড়ে চলে যায় সিয়াম। সেখানে গিয়ে সারপ্রাইজ হয়ে যায়। কেনোনা আহাদ এবং ইভান আগে ভাগেই সেখানে উপস্থিত।
তাদর হাত বেঁধে রাখা হয়েছে জানালার গ্রিলের সাথে। সিয়াম কপাল কুঁচকে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” ওহেহহহ শালার দল
আমায় না বলিয়া কেনো এসেছো ভাই
আমি সিয়াম রাগ করেছি তাই
বন্ধুত্বকে দিয়ে বিসর্জন
আমি চলে যাবো বৃন্দাবন
কেউ পারবে না ফেরাতে আমায়
আটকাতে কোনো মতে
আমি জানি ভাই আমি চলে গেলে
তোদের কি এসে যায় তাতে?
ইভান বিরক্ত স্বরে বলে
“হালা চুপ কর।।
আমান বেঁধে রেখেছে আমাদের।
বলেছে যদি টিশা আক্রমণ করে তাহলে চিল্লাচিল্লি করে মানুষ জড়ো করতে।
” তা না হয় বুঝলাম
কিন্তু আমায় কেনো বললো না? তোদের থেকে আমার গলার আওয়াজ বেশি।
আহাদ বলে
“আমান তোকে বিশ্বাস করে না। তুই না কি পাখি কাটার পরে চিৎকার দিবি।।
দুঃখ পেলো সিয়াম। ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। নাড়িভুড়ি খানা তরতর করে কাঁপছে। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে বন্ধুত্ব মূল্যহীন।
এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে সিয়াম। বিচার দিবে আবরারের কাছে। খালি সকাল হওয়ার অপেক্ষা। আপাতত মনের দুঃখ মনে চেপে জানালা দিয়ে উঁকি দেয় সিয়াম।
দেখতে পায় টিশা বিছানার মাঝখানে বসে আছে। আর আমান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা যে বেশ ভয় পেয়েছে মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
” ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?
টিশা আমানের পানে তাকিয়ে বলে ওঠে।
শুকনো ঢোক গিলে বেচারা। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“ন….না
আসসসবো তো তোমার কাছে। তবে
কথা দাও কাছে গেলে গোপনঅঙ্গের দিকে তাকাবা না। তোমার বাবার কসম আমি ভালো ছেলে। ওই সিয়াম বুদ্ধি দিয়েছিলো তোমার বাপের ওই….
মানে কাটার জন্য। সব দোষ সিয়ামের।
তুমি চাইলে আমি সিয়ামের সব কেটে দিবো।
সিয়াম কটমট নয়নে তাকিয়ে থাকে আমানের দিকে। আসলেই বন্ধুত্ব নামের কলঙ্ক আমান৷ ওই হালার ব্যবস্থা করতেই হবে।
হৃদয়ের মধ্য থেকে ওর নামটা বের করে ফেলতে হবে।
টিশ বলে
“আমি কিছু মনে রাখি নি। তুমি আমার হাজব্যান্ড। তোমার ক্ষতি করবো না।
কাছে এসো
বিশ্বাস হলো না আমানের। তবুও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়। একই সাথে ঘুমতে হবে। রিক্স একটু না নিলে চলছেই না।
বিছানার কাছে যেতেই নজর পড়ে টি টেবিলের ওপরে থাকা চাকুর দিকে। সঙ্গে সঙ্গে সেটা হাতে নিয়ে দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে ফেলে দেয়। এক্কেবারে সিয়ামের পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে।
টিশ হাসে
” আমান তোমার ওইসব কাটবো না আমি।।বাংলাদেশের টিপিকাল বউ না কি আমি?
একটু নরমাল হও।
আমানের বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো।
ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে খাটে গিয়ে বসে। কাঁপা-কাঁপা হাতে টিশার হাতটা ধরে বলে
“যা হয়েছে ভুলে গিয়ে সুন্দর সংসার সাজাই আমরা চলো।
টিশা আমানের গালে হাত দিয়ে বলে
” সংসার করবো বলেই তো এসেছি।।
আপাতত সব বাদ।
আজকো আমাদের বাসর। সেটা নিয়ে ভাবো।
কাছে এসো।
৩১ বছরের টগবগে যুবক। আজ ওবদি একটা চুমু পর্যন্ত খেতে পারে নি৷ আহহা আজকে সে অশ্লীল কাজকর্মও করে ফেলবে। ভাবতে ভাবতেই টিশা শুয়িয়ে দেয়। এবং নিজেও টিশার ওপরে আধশোয়া হয়। ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে চুমু খেতে যাবে তখনই সিয়াম চেঁচিয়ে ওঠে।।
লাফাতে লাফাতে বলতে থাকে
“আমানের পাখি কাটা গেছে।
আবরার দেখে যাহহহহ আমান শেষ হয়ে গেছে।
আমান লাফিয়ে ওঠে। প্রথমেই চেক করে নেয় সব ঠিকঠাক আছে কি না। টিশা প্রচন্ড বিরক্তিতে বিছানা ছেড়ে নামে।
জানালার কাছে গিয়ে বলে
” পাগল না কি আপনি? এভাবে চিৎকার করছেন কেনো?
প্রাইভেসি বলে কি কিছু নেই?
সিয়াম ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে
“প্রাইভেসি? ও মা ইংরেজি শব্দ।
আমার দাদা নয় মাস নানির পেটে মামারে রেখে যুদ্ধ করছে বাংলা ভাষার জন্য।
আমি ওই করুণ কাহিনি ভুলি নি। তাই জীবনে ইংরেজি বই ছুঁয়ে দেখি নি। আমার সামনে ইংরেজি বললে ডিরেক্ট আমার নেত্রীকে কল করবো। জেলে ঢুকাই দিবে।
কথাবার্তা সাবধানে বলবেন।
টিশা ঠাসস করে জানালা বন্ধ করে দেয়।
আমানের পানে তাকিয়ে বলে
” তোমার বন্ধুরা এক একটা বাঁদর।
বাইরে থেকে গানের সুর ভেসে আসে
“তুমি দিও না গো আমান ভাইয়ের পাখি কাটিয়া
পাখির অভাবে ভাই আমার যাবে মরিয়া
আমান শুকনো ঢোক গিলে। বিরবির করে বলে
” হালা খ্রাপ প্রো ম্যাক্স হয়ে গেছে।
বাবা মায়ের সঙ্গে বড় বেলার কোনো ছবি নেই আদ্রিতার। মাঝেমধ্যে বড্ড আফসোস হতো। ভাবতো “ইসস বাবা মাকে আবার এক সঙ্গে পেলে অনেক গুলো পিকচার তুলে রাখতাম”
আদ্রিতার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হয়ে গেলো আজকে। এ আই এর সাহায্যে আদ্রিতা তার বাবা এবং মায়ের সঙ্গে বড় বেলার ফটো বানিয়েছে আবরার।
বিশাল একটা ফটো ফ্রেমে পিকচার খানা বাঁধাই করে এনেছে।
তাছাড়া বাবা মায়ের সঙ্গে কাটানো ছোট বেলার মুহুর্ত গুলোও সুন্দর করে এডিটিং করে সাজানো হয়েছে।
এসব দেখে ইমোশনাল হয়ে ওঠে আদ্রিতা। মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে। চোখের পানি বাঁধ মানছে না। তাই হু হু করে কেঁদে ওঠে সে।
আবরারের এটা সহ্য হলো না। সে বড় বড় পা ফেলে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আদ্রিতার কাছে আসে।
কান্দনরত আদ্রিতাকে বুকে জড়িয়ে খাটের ওপর বসে পড়ে। ভরসার বুকে পেয়ে মেয়েটার কান্নার স্বর বেড়ে যায়। মনের মধ্যে চাপা কান্না গুলো উগড়ে দিতে থাকে।
আবরার নিজের হাত খানা ঢুকিয়ে দেয় আদ্রিতার কাপড়ের ফাঁকে। স্পর্শকাতর জায়গায় চাপ প্রয়োগ করতেই আদ্রিতার কান্না থেমে যায়। সে ভেজা নয়ন মেলে আবরারের চোখের দিকে তাকায়।
বেহায়া লোকটা বাঁকা হেসে বলে ওঠে
“কাঁদলে তোমায় সে*** দেখায়। আই কেন নট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।
একটু ব্যাথা দেই পাখি?
তোমার দুঃখ কমে যাবে আর আমার শান্তি লাগবে।
আদ্রিতা চলে যেতে চায় আবরারের কাছ থেকে। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে ব্যর্থ হয়। বেপরোয়া পাষাণ পুরুষের কবল থেকে মুক্তি মেলে না। বরং নিজেকে সপে দিতে হয়।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮২
” কাঁদবে না পাখি
তুমি কাঁদলে হেরে যাবে আবরার তাসনিন।।
তোমার চোখের এক এক ফোঁটা পানি হিরার চেয়েও মূল্যবান।।
আদ্রিতা আবরারের দুই গালে হাত দিয়ে বলে
“কান্না পেলে কি করবো?
” আমার কাছে আসবে। উন্মাদনায় কান্নার পিনিক ভুলিয়ে দিবো।
