তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৯
নীল মণি
সন্ধ্যা রাতের সব কৃত্তিম আলো যখন চৌধুরী বাড়ির বারান্দায় ঢেউ খেলে, তখন পুরো বাড়িটা যেন একটা জীবন্ত গল্পে বদলে যায় যেখানে প্রতিটা হাসি, প্রতিটা ডাক, আর প্রতিটা আলো-ছায়া মিশে যায় আপন আর আত্মার শব্দে। হবে নাই বা কেন বাড়িতে শুরু হয়েছে বিয়ের আমেজ , আত্মীয় স্বজন দের নিয়ে পুরো বাড়ি হেসে খেলে উঠেছে । জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত বদলে ফেলে মানব জীবনের প্রতিটা অধ্যায় , এখন চৌধুরী বাড়িতেও এত আনন্দের মাঝেও কিছু কিছু মানুষের মন যেন নিঃশব্দে বদলে আছে — হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে একরাশ অদেখা পরিবর্তন আবার ও তার সঙ্গে শুরু হয়
কিছু কিছু মানুষের নতুন পরিবর্তন ।
তিয়াশার ভয়ে আরোহী রুম থেকে ছুটে করিডোর দিয়ে পালাচ্ছিল,
আরোহীর দৃষ্টি পিছনে থাকায় তার নজরে এড়িয়ে যায় সামনের পথ টা , মনে মনে ভাবছিল তিয়াশাও তার পিছনে ছুট না লাগায় ।কিন্তু হঠাৎ করেই এক শক্ত খাম্বার মত কিছু একটার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পরতে যাবে ঠিক তখনই আরোহীর কোমর পুরুষালী দুই বাহু জাপটে ধরে — অধিকারের এক নীরব ঘোষণা হয়ে দাঁড়ায় সেই স্পর্শ।
“আরোহীর চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে যায়। পলকে সবকিছু থেমে যায় যেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আকাশ গলা শুকিয়ে ঢোক গিলে , শুষ্ক গলায় বলল —
” জলপরী এত ব্যস্ততায় কোথায় ছুটে চললে ,
চললে তো চললে আমার কোলেই পড়লে ?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরোহী থতমত খেয়ে আকাশের হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বুক ভরা অব্যক্ত কাঁপন নিয়ে উঠে দাঁড়ায়—চোখেমুখে যেন বিস্ময়, লজ্জা আর এক অপমানের ছায়া খেলে যায়। তখনই আমতা আমতা করে বলে উঠলো–
“এ এ এইইযে রাঙা মুলো শোনো আমার কোন শখ হয়নি আপনার কোলে পরার, নিহাত দেখিনি তাই নইলে আমার খেয়ে কাজ নেই আপনার কোলে পরার। আল্লাহ আর লোক ও খুঁজে পায়নি ।”
আকাশ দুহাত কোমরে দিয়ে একটু হেসে বলল —
” একচুয়ালী মিস জলপরী আল্লাহ ও চায় আপনি আমার কোলে পরেন । আর আপনি চাইলে লাখো বার আমার কোলে পরতে পারেন আই ডোন্ট মাইন্ড।”
আরোহী দাঁত কিট মিট করে বলল –
” উ আমার খেয়ে কাজ নেই ওনার কোলে পরতে জাবো।
শান্তিতে ছিলাম দুপুর থেকে । এবার আবার ও মাইন্ড খারাপ করবেন। ”
এবার আকাশ সামান্য ঝুঁকে , ঠোঁটের কোণে এক বিদ্রুপ মেশানো হাসি দিয়ে বলল —
” ওয়াও জলপরী ইন্টারেস্টিং।”
আরোহী বুকের কাছে দুই হাত জড়িয়ে, চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তিকর গলায় বলে ওঠে,
” কিসের ইন্টারসেটিং, কি ইন্টারেস্টিং ?”
আকাশ দুই পকেটে হাত গুজে আরোহীর পাশ ঘেষে চলে যেতে বলল —
” এই যে আমি যে বাড়িতে নেই সেই টা তোমার নজরে পরেছে। তার মানে আমি তোমার নজর কেরেছি জলপরী।”
এক বিদ্রুপ হাসি দিয়ে পাস কেটে চলে গেলো আকাশ । আর এদিকে আরোহী যত যা গালি গালাজ জানা ছিল তা সব মনে মনে আকাশের দিকে ছুঁড়ে মারল।
বাসায় আজ গিন্নী দের রান্নাঘর থেকে ছুটি। আজ বাসায় বাবার্চি আনা হয়েছে , বাড়িতে এত মেহমান তাই বাড়ির কর্তা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাল নাস্তা পর্যন্ত বাবার্চি
দিয়েই রান্না করা হবে কারণ আগামীকাল নাস্তা সেড়েই বেরিয়ে পড়বে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। বড়রা সবাই ড্রয়িং রুমে হাসাহাসি গল্পগুযোগে মেতে উঠেছে।
অনন্যা , রায়ান ,বৃষ্টি ,অয়ন ,নয়ন সেখানে উপস্থিত তারাও তাদের নিজেদের গল্প নিয়ে ব্যাস্ত।
তিয়াশা নিজে রুমেই বসে ছিল সে আর আরোহীর পেছনে ছোটেনি, ওয়াশরুম থেকে চোখ মুখ এ পানি দিয়ে এসে সবে বসেছে । তখন আরোহীর কথা ভেসে আসলো _
” বেয়াদব ছেলে বলে কি না ও নজর কাড়ছে, ওরে আমার রাঙ্গামুলো এসেছে ওনার কোলে একবার ও পরার সখ নেই হু লাখোবার পরবো খেয়ে আমার কাজ নেই।”
তিয়াশা কিছু বুঝতে পারছে না কি বলে এই মেয়ে , মাথা কি নষ্ট হয়ে গেলো এর পুরাটাই —
” কি রে গেলি তো তিরিং বিরিং করতে করতে , তো এখন এরকম মুখ মৌ মাছির চাকের মত ফুলিয়ে রেখেছিস কেন? আর কার কোলে পড়েছিস?”
“কার আবার ওই রাঙ্গা মুলোর, বলে কি না লক্ষ বার পরো আই ডোন্ট মাইন্ড। ওরে মাইন্ড রে ওর মাইন্ড এর একশো আট। ”
তিয়াশা এবার হেসে হেসে বলল —
“তো বেবি শুধুই পরেছো আমার ভাইয়ার কোলে না কি অন্য কিছুও হয়েছে ।”
এবার আরোহী তিয়াশাকে ধরে কান টেনে দাঁতে দাঁত পিষে বলল —
” কি হবে হারামজাদি?”
” কেন যখন আমায় নিয়ে বলছিলে , তখন মজা নিচ্ছিলে যে খুব ভালো লাগছিল তাই না।”
এইভাবে দুজনের মাঝে চলল খানিক খুনসুটি…..
এদিকে জায়ন আর ইউভি রুমেই বসে ছিল । হঠাৎ আকাশ গিয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই বলল —
” ভাইয়া চলো শপিং টা সেরে আসি এর পর আর কিছু খোলা থাকবে না। ”
জায়ন বলে উঠলো —
” তোরা যা আমার ভালো লাগছে না ।”
আকাশ একটু নাছোড়বান্দা হয়ে বলল —
” না তোমাকে নিয়েই যাবো, নয়তো আমি এখুনি বাসায় ফিরে যাবো।”
আকাশের কথা শুনে ইউভি বলল —
” বাসায় ফেরত যাবি মনে?”
“মানে ভাইয়া না গেলে আমি এক্ষুনি বাসায় ফিরে চলে যাব ,না তো কালকে রাঙামাটি যাব।”
আমি জায়ন একটু হেসে বলে উঠলো-
“আচ্ছা যাবো আর ঢং করতে হবে না। ইউভি ওই লিস্ট টাও নিয়ে নিস।”
ইউভি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করল–.
“কোন লিস্ট ভাইয়া”
“মনে নেই আমার,
হবু বউয়ের পছন্দ-অপছন্দের লিস্ট।”
“হ্যাঁ ভাইয়া ঠিক আছে ঠিক আছে নিয়ে নেব।”
অমনি আকাশ বলে উঠলো —
” ওহো আমার ভাইয়াটাও কত রোমান্টিক, এখনই বউয়ের এত যত্ন।”
জায়ন চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে বলল–
” হুমম তোর মত তো আর আমার হঠাৎ করে জলপরীর সঙ্গে ইন্টারেস্টিং কোন ঘটনা ঘটে না,তাই নিজে নিজেই ইন্টারেস্টিং জিনিষ করি।”
আকাশ যেন একটু চমকে গেল, চোঁখ জোড়া বড় বড় করে বলল —
” মা মানে ভাইয়া?”
এবার ইউভি দাঁত বের করে বিদ্রুপ এক হাসি দিয়ে বলল —
” মানে ভাইয়ার রুমের সামনে বসে রোমান্স করবি। আর আমরা বললে মানে মানে করবি। ভালোই ভাই হি হি হি।”
এবার আকাশ পরে গেলো লজ্জায় —
” এই না ম মানে ওই জলপরী না মানে আরোহী পরে যাচ্ছিল তাই ধরে বসেছি।”
এবার জায়ন ওর কাছে এসে পিঠ চাপড়ে বলল —
” মানে মানে করতে হবে না ,ভালো চয়েস। এগিয়ে যাও হি হি হি ।”
আকাশ মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে কান চুলকাতে চুলকাতে বলল –
” না মানে জলপরী কে জলপরী লাগে ।”
” হ্যাঁ বুঝলাম বুঝলাম তোমার জলপরী কে জলপরী লাগে । এবার চল ।”
এইভাবেই পেড়িয়ে গেল দীবারাত্রির এক মুহুর্ত।
নিভৃত নিশিথিনীর দীর্ঘশ্বাস পেরিয়ে, পূর্ব দিগন্তে যখন সূর্য তার আবির ভোরের আঁচলে ধীরে ধীরে রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন সমগ্র প্রকৃতি যেন নিঃশব্দে এক অন্তরাল গান গাইতে থাকে। শিশিরে ভেজা ঘাসে প্রতিটি কণা যেন আত্মপ্রকাশের প্রতীক্ষায় জ্বলজ্বল করে ওঠে, আর বাতাসের হালকা স্রোতে পাতারা কাঁপে যেন কোনো অদৃশ্য ঈশ্বরী হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাদের ওপরে। মন্দ্রস্বরের মতো পাখিদের কুজন সেই নিসর্গে বুনে দেয় অদ্ভুত এক সুর, যা নিঃশব্দতাকেও অর্থপূর্ণ করে তোলে। এই নতুন সকাল কেবল একটি সময়ের সূচনা নয়; এটি যেন এনে দেয় এক নতুন দিনের নতুন এক পাতা। মানুষের মনোজগতেও ছায়া ফেলে আসে এক আলো।
নানান ব্যস্ততার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে চৌধুরী পরিবার ।
গতকাল রাত হতে তিয়াশা আর জায়ানের সামনা সামনি হয়নি । বৃষ্টির মনে শুরু হয়েছে এক ছটফটানি তার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে সে খুব ই অসুখী তার এই রাঙ্গামাটি যাওয়ার তীরে।
সকালে বৃষ্টি নিজের রুমেই বসেছিল,ভাবনার ঘূর্ণিপাকে নিমগ্ন হঠাৎ দড়যাতে কেউ নক্ করলো…..
” বৃষ্টি আসবো?”
” ও জায়ন ভাই আসেন ।”
” তোর সঙ্গে কিছু কথা ছিল । তাই ভাবলাম যাওয়ার আগেই ক্লিয়ার করে দেই ।”
” জী ভাইয়া বলেন ।”
“আসলে….
বলতে পারলো না তার আগেই তিয়াশা দড়জা দিয়ে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠলো —
” বৃষ্টি আপু তোমায় আম্মু নাস্তা করতে ………
কথা মাঝপথেই স্থির হয়ে গেল।
তিয়াশার চোখের দৃষ্টি স্থির হলো এক অভাবিত দৃশ্যে একই কক্ষে, একান্তে, বৃষ্টি ও জায়ন। শব্দ নিঃসরণে তার কথা যেন জড়িয়ে এলো, হৃদয়কোষে যেন হঠাৎ করেই জমে উঠল এক অজানা বেদনার হিমশীতলতা। নিঃশ্বাস আটকে এলো, গলায় যেন কোনো অব্যক্ত যন্ত্রণার পিণ্ড। কেন এই অস্থিরতা? এই পুরুষ তো তার নয় সে তো তার প্রিয় আপুর। তবু কেন হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে? কেন নিজের আপু কেও এই মুহূর্তে সহ্য হচ্ছে না , তার শখের পুরুষের সঙ্গে কেন সহ্য হচ্ছে না তার আপু কে ? কেন এত অমোঘ এক তীব্র বিরক্তি জাগছে? কেন?
নিঃশব্দে এক ফোঁটা জল ছলকে পড়ল তিয়াশার চোখ থেকে। সেই অশ্রুবিন্দু আড়াল হলো না জায়নের দৃষ্টিপথে। সে নিঃশব্দে অনুধাবন করল তিয়াশার হৃদয়পটে যে অজস্র প্রশ্ন, যে অব্যক্ত আকুতি ও অস্বীকার জমে উঠেছে, তার ভার এক
” কি রে হয়েছে তোর দাড়িয়ে থাকা , জায়ন ভাইয়ের কথা আছে যা তুই আমি একটু পরে আসছি ”
বৃষ্টি আরোহীর উদ্দেশ্যে বলে উঠল
এইটুকুই যেন ছিল শেষ আঘাত। তিয়াশা কেবল একবার বলল “সরি”, তারপর নিঃশব্দে দৌড়ে সরে গেল।
নিজর রুমে ফিরে, পেছন থেকে দরজা বন্ধ করে ফেলল যেন এই পৃথিবীর সব শব্দ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
তারপর আরোহীর বুকের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে, সে ফুঁপিয়ে উঠল। কান্নার শব্দে আরোহী বিভ্রান্ত, সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
এদিকে জায়ণের বুঝতে বাকি নেই তার কিশোরী রমনীর না বলা কথা , সে নিজেও এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে চায়নি ।
চোয়াল শক্ত করে নিঃশব্দে উচ্চারণ করল,
“ড্যাম ইট”
“ভাইয়া, আপনি কিছু বলছিলেন… বলুন।”
জায়ন নিঃশব্দে মাথা নাড়ল। তার চোখে ছিল বিষাদ।
“পরে বলব।”
এই বলে সে যেন এক অতল যন্ত্রণাকে গোপন করে ধীরে ধীরে রুম ত্যাগ করল।
নাস্তার টেবিল এ সবাই নাস্তা করছিল , তিয়াশা আর নিচে নামেনি , এদিকে জায়ন এর চোঁখ তার প্রাণপ্রিয় কিশোরী কে খুঁজে চলেছে নাস্তার আসরে , না সে নেই এখানে। ইউভি আরোহী কে জিজ্ঞেস ও করেছিল বনু আসবে না কেন ? আরোহী জবাবে বলেছিল তার খিদে নেই , কিন্তু জায়নের হয়তো এই উওর বিশ্বাসযোগ্য মনে হলনা। নাস্তার টেবিলে চলছে এক গল্পের আসর কিন্তু সেই আসরে অনেকের ই বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে।
এর মধ্যেই উপস্থিত হয়েছে নতুন অতিথি অনন্যার খালামনির পরিবার ও বৃষ্টির নানু বাড়ির পরিবার –
অনন্যার খালামনি( মারিয়া খান) স্বামী( নিহার খান )দুই মেয়ে – উর্মি (৮)
সুরমি (৫) ।
বৃষ্টির এক মামা- মসরুফ শেখ স্ত্রী রাবেয়া শেখ তাদের দুই ছেলে মেয়ে ( রিক – ২০ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, নেহা –১৮ এইচ এস সি দিল এবার । নেহার একটাই আশা আর লক্ষ ইউভি ভাইয়ার বৌ হওয়া)
আর এক খালামনি রাবেয়া শেখ – বিয়ে করেনি ( শিক্ষিকা)
“ইউভান ভাই আমায় কেমন লাগছে?”
ইউভির সামনে গিয়ে একটু লাজুক স্বরে নেহা প্রস্ন করল।
ইউভি ওর দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলো —
” একদম নিজের বোনের মত।”
এই বলে নেহা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাশ কাটিয়ে স্থান ত্যাগ করলো।”
সবাই সবার মত রেডী হয়ে দাড়িয়ে আছে ফটক এর সামনে গন্তব্য রাঙ্গামাটি —–
কে কোন গাড়িতে যাবে এইটাই হচ্ছে ব্যাপার এখন।
জায়ন আর বৃষ্টি কে পাঠানো হবে একি গাড়িতে ,কিন্তু সবার মাঝে জায়ন না ও করতে পারছে না । এদিকে তিয়াশা একটি বার ও জায়ন এর দিকে দৃষ্টি পাত করলো না । রায়ান , আকাশ , ইউভি , জায়ন , বৃষ্টি একি স্থান এ দাড়িয়ে আছে , একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে আরোহী, মারিয়া , অনন্য, তিয়াশা, নেহা , রিক , অয়ন , নয়ন।
প্রান্তিক সাহেব বলে উঠলেন –” আরে কে কোন গাড়িতে যাবে তারাতারি উঠে পরো।”
অয়ন তিয়াশা কে উদ্যেশ্য করে বলল —
” তিয়াশা তুমি, আরোহী, অনন্যা তোমরা আমাদের সঙ্গে চলো মজা হবে।”
এই কথা যেন বিদ্যুত চমকানোর মত জায়নের কানে লাগল। মুহূর্তেই তার দৃষ্টি রক্তবর্ণ হয়ে উঠল, ক্রোধে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, আর আড়ষ্ট হাতে পেশীগুলি যেন উত্তেজনায় স্পষ্ট হয়ে উঠল।একদম আগ্নেয়গিরির অন্তর্লীন স্ফোটনের পূর্বলক্ষণ যেন তার শরীরজুড়ে প্রতিফলিত হচ্ছিল।
অয়ন কে তিয়াশা জবাব দিতে যাবে তার আগেই
হঠাৎ সবার মাঝে এক কন্ঠস্বর বেজে উঠল —
” রোদ”
তিয়াশা অন্য মনস্ক ছিল হঠাৎ এই স্বর শুনতেই বুকের ভেতর কেপে ওঠে । জায়ন এর দিকে দৃষ্টি রাখলো , কেন যেন তার মনে এক ভয় সৃষ্টি করছে বেড়ে চলেছে শরীরের নোনাজল।
রূহেনা বেগম কে উদ্দেশ্য করে জায়ন বলল —
” মেজো মা আমার কিছু জরুরী সামান রুমে রয়ে গেছে ,
যদি খুঁজে না পাই রোদ কে নিয়ে যাই।”
মেহজাবীন বেগম বললেন –
” এখন আবার কি রেখে আসলি, সত্যি বাবা তুই ও না তারাতারি যা । আমি আসবো?”
” না মা সিঁড়ি দিয়ে উঠবে নামবে হাঁটুর ব্যথা হয় যদি ।”
জায়ন রোদ এর দিকে এক দৃষ্টি দিয়ে ঘুরে বাসার দিকে গেলো ।
” আরে এই মেয়ে যা দাড়িয়ে আছিস কেন , দেখ গিয়ে ভাইয়ার কি লাগবে ।”
রূহেনা বেগম বলে উঠল তিয়াশার দিকে তাকিয়ে ।
তিয়াশা এদিকে বুঝতে পারছে –
“এই লোকের ভাবসাব ভালো লাগছে না । আবার থাপ্পর দিয়ে না বসে , কালকের থাপ্পড়ের ব্যথা এখনো যায়নি।”
এইসব ভাবনার ভার নিয়ে ধীরে ধীরে বাসার দিকে পা বাড়াতে লাগল তিয়াশা। জায়ন আগেই চলে গেছে রুমে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে তিয়াশা ডুবে ছিল নিজের দ্বন্দ্বে—অজানা এক ব্যাখ্যাতীত অস্থিরতায়।
ঠিক তখনই…
জায়নের রুমের সামনে পৌঁছাতেই এক ঝটকায় তার পেছন থেকে ছোঁ মেরে জায়নের শক্ত হাত তাকে টেনে নিল ভিতরে।
দরজাটা পেছন থেকে সজোরে বন্ধ করল সে।
কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিয়াশা নিজেকে আবিষ্কার করল জায়নের বুকের ভেতর, সেই আগলে রাখা স্পর্শ , যেখানে বিস্ময়, রাগ আর ব্যথা একসাথে জড়িয়ে ছিল। তিয়াশা কিছু বলতে যাবে কিন্তু
জায়নের কণ্ঠে নেমে এল এক গম্ভীর, চাপা আগুনমাখা ধ্বনি
” শ্যসসসস একদম চুপ ।”
” ছাড়ুন আমাকে , একদম ছুবেন না আমাকে ।”
” তো কে টাচ্ করবে ওই অয়ন এর বাচ্চা ? ”
” আমি আপনার মত না যে সবার ছোয়া নিয়ে বেড়াবো, আর উনি না আপনার ভাই হয়? এসব বলছেন।”
জায়ন এক টানে রোদের কোমল, মেদহীন কোমর জড়িয়ে নিজের বুকে চেপে ধরল। তার মুখ নিচু হয়ে এল রোদের মুখের একেবারে কাছাকাছি, দু’জনের নাক একসাথে গিয়ে ঠেকল নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে মিশে গেল এক তীব্র উত্তাপ। গলা ঘন আর নিচু, কিন্তু চোখে ছিল ঝলকানো আগুন।
“আমি কার ছোয়া নিয়েছি বলে দে আমায় , আর আমার জিনিসের দিকে কেউ তাকালে, আমি দেখে নেব রোদ। একটুও ছাড় দেব না প্রয়োজনে শেষ করে দেব ভাই মানবো না।”
রোদের ঠোঁট হালকা কাঁপছে, দেহে অস্পষ্ট শিহরণ
যেন নিজের অবস্থান, অহং, সবকিছু হঠাৎ করে হারিয়ে যাচ্ছে এক গভীর দোলাচলে।
অভিমানের দেয়াল বুকে থাকলেও, নিজেকে আজ কেমন অস্থির, অসহায় মনে হচ্ছে তার।
তবু গলাটা শক্ত করে, নিজেকে স্থির রাখার ভান করে ধীরে জিজ্ঞেস করল ,
“কিসের জিনিস? কোন জিনিস?”
জায়ন কিছু বলল না। কেবল নিজের মুখটা ধীরে ধীরে রোদের গলার কাছে ঠেকিয়ে দিল। তার ঠোঁটের স্পর্শ যেন বারবার ঘষে দিচ্ছে সেই কোমল গলার পাশে, হাতের খেলা চলছে তিয়াশার চুরিদার এর পিছনে উন্মুক্ত হওয়া বাকি অংশে , পাগলের মত জায়ন নিজের ঠোটের স্পর্শ করেই যাচ্ছে , তিয়াশা অনুভব করছে তার গলা ভিজে উঠেছে জায়নের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে, চুপচাপ, অথচ দাবির মতো।
তার কণ্ঠ যেন গলা ছুঁয়ে নামল ধমকের মতো মৃদু কিন্তু স্থির স্বরে,
“তা তোর বুঝে দরকার নাই, রোদ। শুধু মনে রাখিস,তোকে আমি কোন ছাড় দিব না।”
” আপনার সমস্যা কি , চান কি আপনি ? ছাড়ুন আমায় ”
নিজেকে ছাড়াতে যাবে জায়ন এর কঠিন বাহু থেকে ঠিক তখনি জায়ন এর কাম**ড় পড়ল তিয়াশার ঘাড়ে।
চিৎকার করে উঠলো রোদ তীব্র যন্ত্রণায়।
তিয়াশার গলায় অনবরত জায়ন নিজের ঠোঁট ঘষতে ঘষতে হস্কি স্বরে বলে উঠল —
“নিজেকে আর ছাড়ানোর চেষ্টা করবি তো , আরো বেশি আঘাত পাবি। যতক্ষন আমি নিজে না চাইবো ততক্ষন তোর মুক্তি হবে না”
রোদ এর চোঁখ বেয়ে পড়ছে নোনাজল , ধীর কন্ঠে ব্যথায় জর্জরিত হয়ে বলে উঠলো —
” আপনি কি পাগল ? এমন কেন করছেন?”
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৮
” এখনো আমার পাগলামি দেখিস নি রোদ , বলেছিলাম আমার কাছ থেকে নিজেকে সামলাশ , এখন আমি বেসামাল হয়ে পড়েছি তাই এখন তোর নিস্তার নেই।”
কিছুক্ষন পর
ছেড়ে দিল জায়ন রোদ কে, রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুধু একটাই কথা রুমে ভেসে উঠল —
” সিধা গিয়ে যেন ইউভি বা আমার গাড়িতে ওঠা হয়, ওই কু***র বাচ্চার অয়নের গাড়ির আসে পাশে দেখলে গাড়ি শুদ্ধ ওখানেই পুঁতে দেব ।”