তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৪
নীল মণি
“এইযে মিস জলপরী একটু শুনবেন” ….
আকাশের এমন কথায়
আরোহী ঠোঁট উল্টে বলল – “বলুন”…
“তোমার এই রূপের আগুনে ঝলসে যাচ্ছে এই মন … নিজেকে ঠিক রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে … এ তোমার কেমন রূপের খেলা যার জন্য এই মন অবিরাম বিচলিত … ”
আরোহী মনে মনে ভাবলো ” কি বলে এই লোক মাথা কি পুরাই গেছে ?”
“এইযে রাঙামূলা যখন মন ঝলসে যাচ্ছে তাহলে চোখ বন্ধ করে রাখুন… আমি পানি এনে সেই আগুন নিভিয়ে দিচ্ছি “….
“তুমি পানি এনে দিলে সেই পানি কেরোসিন হয়ে আমায় আরো বেশি দগ্ধ করবে ।”
“যত সব ফালতু কথা ।”
আকাশ ফিসফিস করে বলল এই ফালতু লোকের ফালতু কথাই তোমার শুনতে হবে আজীবন …
” এই এই আপনি ফিস ফিস করে কি বললেন ?”
“কিছু না , শোনো রূপসী এই রূপের ঝলকানিতে শুধু আমার জন্য হয় অন্য কেউ যেন নজর না দেয়”…
“নজর দেয়ার জন্যই তো এরকম সেজেছি , বাই দা ওয়ে হু আর ইউ ?”…
” আপাতত আপনার বান্ধবীর ভাই, তবে একটা নাম তোলা রইল যেটা অন্য কোন দিন জানাবো ।”
– “এই যান তো পাবনা যান আমার মাথা পুরা গেছে”….
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই বলে আরোহী ছুট লাগলো … এবং আকাশ তার জলপরীর অঙ্গভঙ্গি করে চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে … পলক ফেলার মতন সময় ব্যয় সে করছে না … এবং সে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে আওড়ালো…
“তুমি যদি বলো তাহলে তাই যাব, তোমার এই রুপের ঝলক বেশিদিন সহ্য করতে পারবো না সত্যিই … এই তুমি টাকে নিজের করে নিবই … যতই বাধা আসুক তবুও আমার একান্তই তোমাকেই লাগবে, হবু ডাক্তার সাহেবের হবু বউ। ”
চৌধুরী বাড়ির প্রাঙ্গণে আজ এক ভিন্ন রকম উচ্ছ্বাস বাতাসে মিশে আছে মেহেদির কাঁচা পাতার ঘ্রাণ, শাড়ির কুচির ঝুমঝুম আওয়াজ আর মেয়েদের হাসির খিলখিল ধ্বনি।
চারদিক আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে,দেয়ালে ঝুলছে রঙিন পর্দা, গাছে জড়ানো ফেয়ারিলাইটের আলো দুলছে বাতাসে।
একটা কোণায় বসানো হয়েছে মেহেন্দির স্টেজ নকশা করা কার্পেট এর উপর বৃষ্টির আসে পাশে বসে আছে সবাই , সবাই হাত মেলে দিয়েছে নকশার জন্য।
কেউ দুলকি চালে গান ধরেছে,”মেহেন্দি হাই রচনে লাগি”আর তার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলছে ঢোলক, হাততালি আর অজস্র স্মৃতির গল্প।
তিয়াশা বাইরে আসার আগে তার সাজ মুছে শাড়ী চেঞ্জ করে একটা থ্রী পিস পরে নিচে এসেছিল।
আরোহী রাগি সুরে জিজ্ঞেস করে ওঠে –
” দোস্ত তুই কি করলি এটা?”
” তোর মনে হয় আমি এইটা করতে ইচ্ছুক ছিলাম।”
” তা তার মানে ভাইয়া ?”
” হুঁমম ”
” দেখছিস দোস্ত আমি বলেছিলাম ভাইয়া তোরে দেখে পড়ছে , তুই মানিস নাই।”
” তুই দেখ বসে আমি ওনার এই সব কাজে প্রচণ্ড রেগে আছি তাই চুপ কর।
অনন্যা , তিয়াশা, নেহা , আরোহী, রাইমা,ইভা, মিথিলা , নূর বৃষ্টির চারপাশ ঘিরে বসেছে তার হাতে পাতার মতো পাতলা মেহেন্দি লাগানো হচ্ছে, মাঝে মাঝে সে চোখ বন্ধ করে কি ভাবছে , তার মধ্যেই মেহেন্দি আর্টিস্ট বলে উঠলেন —
” আপু ভাইয়ার নাম টা কোথায় লিখতে চান ।”
বৃষ্টি একটু চুপ করে ধীম কন্ঠে বলল —
” আপনি ছেড়ে দেন নামের জায়গা টা আমার জামাই কে দিয়ে লিখে নিবো। ”
নূর বলে উঠলো — ” বাহ ভাবি আপনি তো খুব রোমান্টিক, ভাইয়া নিশ্চই বলেছে উনি মেহেন্দি লাগিয়ে দেবে ।”
সবাই খুব হেসে উঠলো কিন্তু হাসি নেই শুধু তিয়াশার
মনে , এই যন্ত্রণা সে আর নিতে পারছে না । এদিকে জায়ন ভাইয়ের সব কথা ,কোথাও যেন মনে হয় আমিই তার সব কিন্তু ……..
মেহেন্দি আর্টিস্ট বলে উঠলেন
” খুব ভালো ডিসিসন আপু ”
বৃষ্টি আর কিছু বললো না , চুপ করে রইলো । বৃষ্টির এই চুপ কি কারো নজরে পরে না ।
তারই ফাঁকে ছেলেরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। এদিকে সাগর , পলাশ, আহান,
আকাশ, ইউভি আড্ডা দিচ্ছে সঙ্গে জায়ন ও আছে
কিন্তু সব কিছুর মাঝেও জায়ান আজ যেন অন্যরকম
–চোখে এক চাপা অস্থিরতা, হৃদয়ে এক বেসামাল ঢেউ চলছে ।
বারবার মনে পড়ছে তিয়াশার বলে যাওয়া কথা ।
প্রোগ্রামের খাবার দাবার এর জন্যে বুফে সিস্টেম করা হয়েছে প্যান্ডেল এর সাইডে। বাড়ির গিন্নি রা কর্তারা এইসব দিকেই ব্যাস্ত। রাতেই আবার হলুদের প্রোগ্রাম , সবাই খুব ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার মধ্যেও রয়েছে এক আলাদা সুখ।
” কি রে জায়ন এই ভাবে বসে আছিস কেন , কিছু হয়েছে ?”
আহান এর কথায় সবাই জায়ন এর মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
জায়নের চোখটা লাল হয়ে আছে, ক্লান্তির জন্য না — ওটা যেন চেপে রাখা অসহ্য রাগ আর বা বলা কষ্টের ছাপ। মুখটা শুকনো, ঠোঁটদুটো শক্ত করে একসাথে চেপে ধরা, যেন ভেতরের সব অনুভূতি আটকে রেখেছে শুধু মাত্র পরিবারের কথা ভেবে , সে কি পারত না একবার পরিবার কে তার মনের কথাটা জানাতে । চোখের কোনায় জমে থাকা অশ্রুটা ঠিক গড়িয়ে পড়ে না, কিন্তু তার ভারে জায়নের সমস্ত মুখাবয়ব যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে —
নিঃশব্দে চিৎকার করছে, “আর পারছি না…”
” আমি কি ভুল করলাম, পারতাম তো একবার পরিবার কে বলতে ? কিন্তু তাতে যদি বিপরীত কিছু হতো ?
নিজেকে তো আর সামলাতে পারছি না রে । আমি আর পারছি না , রোদ এর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না । ভয় হচ্ছে আমার আমি যদি হারিয়ে ফেলি তাহলে এই যে যন্ত্রণা হচ্ছে এই যন্ত্রণায় হয়তো মরেই যাবো।”
জায়ন এর কথায় সবাই যেন নিঃশব্দ হয়ে গেলো।
জায়ন এবার ও বললো –
” বুঝলি সাগর মেনে নিলে শান্তি, মনে নিলে অশান্তি, ও আমাকে বলে আমি বাঘের বাচ্চা কিন্তু ওকে কি করে বোঝাবো নিহত বাঘের থেকে আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর।”
আহান তার বন্ধুর পরিস্থিতি বুঝে বলল —
” দেখ জায়ন তোর পরিস্থিতি এরকম যে তোকে কোন ভাবে সাহায্য করতে পারবো না , শুধু এটাই বলবো তুই যা করবি আলওয়েস পাশে আছি। আর কারো অনুভবে কেউ বাধা দিতে পারে না । অনুভবের অনুভূতি একান্তই নিজের । তাই প্লিজ এবার এই নিয়ে
চিন্তা করিস না ।”
“জী ভাইয়া আহান ভাই ঠিক বলছে, আমি আমার দুই
বোনের ভাইয়া , আমি অন্তত বুঝতে পারছি তুম কোন পরিস্থিতি তে আছো।”
ইউভির কথায় জায়ন ফিরে তাকালো তার দিকে —-
কিছু বললো না সে শুধু নিঃশব্দে একবার তাকিয়ে আবার ও মাথা নিচু করে নিলো।
খাওয়া-দাওয়ার উৎসবমুখর পর্ব অনেকক্ষণ আগেই শেষ,মেঘে ঢাকা এই সন্ধ্যার আকাশের নিচে মেহেন্দির ঘ্রাণ এর সঙ্গে সঙ্গে এখন হলুদের রং ও মিশে যাচ্ছে বাতাসে, চৌধুরী বাড়ির উঠোনে আনন্দের ঢেউ এখনো থেমে নেই,একটা উষ্ণ, আলো-ছায়ার আবহে সবাই অপেক্ষা করছে পরের মুহূর্তের জন্য, কারণ এখন শুরু হবে হলুদের প্রোগ্রাম আরও এক পর্ব, যেখানে স্মৃতি, উল্লাস আর হলুদে রাঙানো ভালোলাগার গল্প তৈরি হবে নতুন করে।
জীবনের প্রতিটি স্মৃতি লিখে যায় কিছু নতুনাধ্যায় ।
চারপাশে ঝিকিমিকি লাইট, হলুদের থিমে সাজানো মঞ্চ, আর তার মাঝখানে আজকের বিশেষ চমক।কারণ সবাই মিলে ঠিক করেছে, এবার শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয, স্টেজটা হবে নাচে-গানে জমজমাট, পরিবার-বন্ধুবান্ধব মিলে কেউ গাইবে, কেউ নাচবে, কেউ আবার ব্যাকস্টেজে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সবার আনন্দ দেখবে ।
এদিকে মেয়েরা আবার হইচই করে রুমে ভিড় জমিয়েছে,সবাই গ্রীন ড্রেস ছেড়ে একে একে হলুদ শাড়িতে সেজে নিচ্ছে নিজেদের, যেন কার আগে কে সুন্দর হয় সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কেউ কারও খোঁপায় ফুল গুঁজে দিচ্ছে, কেউ আবার টিকলিতে পাথর মিলাচ্ছে। কিন্তু এই রঙিন উন্মাদনার মাঝে এক কোণে বসে থাকা তিয়াশার মুখ ভার—সে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ও আর শাড়ি পরবে না। কারণ সে জানে, শাড়ি পড়লেই তাকে তার জায়ন ভাই চেঞ্জ করিয়ে ছাড়বে।
আরোহী পাশে গিয়ে বললো —
” বেবী একটা কাজ কর।”
” কি কাজ?”
“ভাইয়া তোকে কালকে একটা শাড়ি দিসে না ঐটা পর,
ভাইয়া চাইলেও কিছু করতে হবে না হি হি হি।”
” তোর মাথায় এইসব কই দিয়ে আসে বেবী, কিন্তু শাড়ি টা তো লাল ?”
আরোহী তার নিজের হাত দিয়ে তিয়াশার চিবুক টেনে নাড়িয়ে বলল —
” কোন ব্যাপার না দোস্ত শুধু তুই পর, তারপর দেখবি কি সুন্দর লালে হলুদে মিশে যাবে।”
বসন্তের স্নিগ্ধ শীতল হলুদের আভায় বৃষ্টির কোমল দেহ টা ছুঁয়ে যাচ্ছে , কিন্তু বৃষ্টির মন অবিরাম টাল মাতাল অবস্হা।
প্রান্তিক সাহেব, প্রণয় সাহেব, তাহসান সাহেব, আশরাফ খান,মেহজাবীন বেগম , রুহেনা বেগম , সুরাইয়া বেগম , আয়েশা বেগম ,বৃষ্টির মামুর পড়িবার, খালা মনির পড়িবার, জায়ন এর মামুর পড়িবার, ইভি, মিথিলা, নূর, আরো যত বয়সজ্যেষ্ঠ মেহমান ছিল সবাই বৃষ্টিকে হলুদের পরশ ছুঁয়ে দিল বৃষ্টির গালে ।
” কি রে জায়ন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে , বৃষ্টির হলুদ হয়ে গেছে তোকে তোর আম্মু রা ডাকছে চল।”
জায়ন গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল, কিন্তু তাহসান সাহেব এর কথায় সে উঠে বসে বললো —
” চাচু হলুদে আমার এলার্জি, আমি হলুদ লাগাতে পারবো না ।”
তাহসান সাহেব অবাক হয়ে গেলেন —
” বাবা তোর এই ২৮ বছরে প্রথম শুনলাম তোর হলুদে এলার্জি। আগে তো শুনিনি।”
জায়ন বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো —
” আগে তো কখনো আমাকে হলুদ লাগাও নি তাই জানো না , বিদেশে এক বাঙালি বন্ধুর বিয়ের গায়ে হলুদে বাকি বন্ধুরা আমায় হলুদ লাগিয়েছিল, তখন আমার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে যাই তাই জানি যে আমার হলুদে এলার্জি ।”
“কই আমাদের তো বলিস নি?”
“চিন্তা করবে তাই বলিনি এবার চলো নিচে, তুমি আম্মু দের বলে দিও।”
এদিকে মেহজাবীন বেগম ছেলের এমন নতুন এলার্জির কথা জেনে যেন একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন, তাহলে তাকে হলুদ ছোয়াবে কি করে, এটি তো একটি ঐতিহ্য প্রথা বর কোণে উভয়ের জন্যই প্রয়োজন।
জায়ন নিচে নেমে আসতেই চোখ আটকে গেল স্টেজের সামনে চেয়ার এ বসা এক নিঃশব্দ আগুনের মতো দাঁড়িয়ে আছে তার কিশোরী রমনী,সে পরেছে সেই লাল রঙা রেশমি শাড়িটা, যা জায়নেরই দেওয়া, দুপুরে সবুজ শাড়িতে যে তাকে হৃদয় কাঁপানো বিস্ময়ে ভরিয়ে দিয়েছিল, এবার লালে যেন একেবারে হৃদয়ের গভীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ,তিয়াশাকে দেখার পর জায়নের চোখ ফিরিয়ে নেওয়াটা যেন পাপ বলে মনে হচ্ছে। শাড়ির আঁচলে, চোখের চাহনিতে, আর ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে থাকা এক টুকরো অভিমান যেন জায়নের সমস্ত যুক্তিকে ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে–
সে দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দ, বিস্ময়ে অভিভূত,মনে মনে ফুঁসিয়ে উঠে শুধু একটাই কথা বলে ওঠে–
“হে আল্লাহ্, কেন এতো রূপ দিয়েছো আমার রমণীকে, যে রূপ থেকে চোখ ফেরানো তো দূরের কথা, নিঃশ্বাস নেওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ে?”
এর মধ্যেই কানে আসল বক্স সাউন্ড এর থেকে ভেসে আসা একটা গান , হলদে রঙের পাঞ্জাবি পায়জামা ওহ গলায় ওড়না নিয়ে যার তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে
নয়ন , রায়ান, রিক।
” বেন্নো কে সহেলী রেশম কি ডোরী ,
ছুপ ছুপ কে সর্মায়ে কোই ,দেখে চোরি চোরি।
ইয়ে মানে ইয়া না মানে ,
ম্যায় তো ইস্পে ম্যার গ্যায়া ।
এ লড়কি হায় আল্লাহ্ হায় হায় রে আল্লাহ্ ,
এ লড়কি হায় আল্লাহ্ হায় হায় রে আল্লাহ্ ……
সবাই সেই নাচের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছে নিজেদের হাতের তালি।
জায়ন এসে দাড়ালো ইউভি, আকাশ, আহান দের কাছে …..
হঠাৎ সাউন্ড বক্স এর আরেকটা আওয়াজ আসলো–
” বুক চিন চিন করছে হায়,
মন তোমায় কাছে চায়।
বুক চিন চিন করছে হায়,
মন তোমায় কাছে চায়।
আমরা দুজন দুজনেরই প্রেমের দুনিয়ার,
তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়,
আমার কিযে হয়ে যায়……..
তালে তাল মিলাচ্ছে সাগর ইভা , পলাশ নূর,
তাদের নাচের ভঙ্গী দেখে সবাই হেঁসে লুটিয়ে পড়ছে ,
হাঁসি দেখা যাচ্ছে জায়ন এর মুখে তার বন্ধু দের কান্ড দেখে তার ও হাসি স্থির রইলো না,ইউভি কে জিজ্ঞেস করলো
” এটা আবার কি সং রে ইউভি?”
” কেন ভাইয়া এইটা তো আমাদের বাংলাদেশের মার্কমারা ফেমাস গান তুমি শোনো নাই?”
একটু হেসে বললো —
” না এই প্রথম শুনলাম।”
এর মধ্যে স্টেজে উঠেছে নেহা সেও একটা গানে সোলো ড্যান্স করছে ….
দেখা গেলো তিয়াশা , আরোহী, অন্যনা কে স্টেজের পাশে , হঠাৎ তাদের পেছনে এসে দাঁড়াল অয়ন , নয়ন আর রিক ….
যা দেখে জায়ন এর রাগে মস্তিষ্ক চরমে পৌঁছালো —
জায়ন কৌতুহলের সহিত জিজ্ঞেস করলো আকাশ কে
” এই আকাশ আমার বাচ্চা হবু বউ ওই স্টেজের ওখানে কি করে তাও আবার ওই হার***াদার পাশে?”
” আমি তো এইখানে ভাইয়া শুধু কি তোমার হবু বাচ্চা বউ, আমার জলপরী ও তো ওখানে আরে অনু ও তো ঐখানে ওই রিকের পাশে দাঁড়ানো।”
ইউভি অন্য দিকে তাঁকিয়ে আহান এর সঙ্গে কি নিয়ে কথা বলছিল হঠাৎ অনুর নাম শুনে তাকিয়ে পড়ল —
” কোথায় অনু, কার পাশে দাঁড়ানো?”
” ওই স্টেজের পাশে তাকা ইউভি ।”
দেখে ইউভির ও যেন চোঁখ মুখ কুচকে গেলো।
হঠাৎ তাদের চোখে ধরা পড়ল
সামনে দিয়ে রায়ান আর মারিয়া দৌড়া দৌড়ী করছে ,
” এই রায়ান শোন।”
ইউভির ডাকে তৎক্ষনাৎ রায়ান সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো…..
” জী ভাইয়া বলো ?”
” অনু রা ওই খানে দাড়িয়ে কি করে রে?”
রায়ান একটু হেঁসে বললো
” ওই যে কি বলে না কাপল ড্যান্স তার জন্য দাড়িয়ে আছে, নেহা আপুর পরেই ওদের নাচ।”
ইউভির নজর অনু দের দিকে থাকায় বেখেয়াল ভাবে উত্তর দিল — ” ওহ আচ্ছা।”
কিন্তু রায়ান এর কথায় হুস ফিরতেই চিৎকার করে বললো —
“কী ই ই ই।”
আকাশ আর জায়ন এর কানে আগেই পৌঁছে গেছে
” কাপল ডান্স এর ক্যাথায় আগুন । ”
আকাশের রাগান্বিত কণ্ঠ ভেসে আসলো বাকিদের কানে……
এদিকে জায়ন এর চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে হাতের মুঠো বন্ধ, কিন্তু অজান্তেই কাঁপে, কপালের নীল শিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে মুখে কিছু না থাকলেও চোখে একটা অদ্ভুত গাঢ়তা,
ওখানে থাকা সবার চোখে দেখছে কেমন গর্জে ওঠার আগে এক নিঃশব্দ ঝড় জমে আছে সেখানে,
আকাশের মেঘ ও গর্জে উঠছে জায়ন এর সঙ্গে সঙ্গে
এর মধ্যেই উপস্থিত হয় সাগর আর পলাশ ও তাঁদের চোঁখ ও এড়ালো না জায়ন এই ভয়ঙ্কর চোঁখ।
সাগর ধীর গলায় আহান কে জিজ্ঞেস করল–
” মামা কি কেস? দোস্ত এর এরম অবস্থা কে করলো?”
আহান কিছু না বলে তার তর্জনী আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ওই স্টেজের দিকে, সেই দৃশ্য দেখে সাগর আর পলাশ এর ও বাকি রইল না তাদের বন্ধুর এই অবস্থার কি কারন।
“ইউভি লাইটের মেইন সুইচ ১০ মিনিট এর জন্য আমার বন্ধ চাই”
জায়নের গম্ভীর কণ্ঠ ঠিক যেন শীতল ছুরি— তার উচ্চারিত শব্দগুলো কেটে গিয়ে তাদের কানে গিয়ে বিঁধলো সরাসরি।
সবাই ভেবে ঊঠতে পাড়ছে না লাইট অফ করে কি করবে এই ছেলে —-
পলাশ জিজ্ঞেস করেই বসলো —
” এখন লাইট অফ করে কি করবি?”
জায়নের চোখ তখন এমন এক দৃষ্টি দিয়ে তাকালো যেন আর কোন প্রশ্ন করলেই চুপচাপ দাঁড়িয়েই কাউকে ছারখার করে দিবে।
ইউভি তৎক্ষনাৎ গিয়ে তার ভাইয়ের আদেশ সম্পূর্ণ করলো ।
এরকম ভাবে লাইট চলে যাওয়ায় সবাই অবাক হয়ে গেলো , জেনারেটর এর ব্যবস্থা ও তো আছে তবুও কেন এই অবস্থা।
হঠাৎ তিয়াশা টের পেল, তাকে কেউ এই ঘন অন্ধকারে কোলে তুলে নিয়েছে, মুহূর্তেই তার শরীরটা কেঁপে উঠলো আতঙ্কে, চেঁচিয়ে ওঠার জন্য সে প্রস্তুত হচ্ছিল,কিন্তু হঠাৎ থমকে গেল।
এই ছোঁয়া… অচেনা নয়।
এই গায়ের গন্ধ, এই শ্বাসের তাপ… এতটাই পরিচিত যে বুকের গভীরে কোথাও যেন কাঁপুনি ফিরে এলো।
তার হৃদপিণ্ডের স্পন্দন হঠাৎ দ্বিগুণ হয়ে উঠলো। গলার স্বর আটকে গেল, তবু ঠোঁট ফাঁক করে ফিসফিস করে বলে উঠলো–
” আরে এই ভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ? নিচে নামান?”
“কাপল ডান্স করবি না? কাপল ডান্স করতে যাচ্ছি চল কাপল ডান্স করাবো তোকে আজ , আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস, আজকে তার উত্তর সহিত সব কিছু ফেরত পাবি?”
কলের মধ্যেই ছোটপট করতে লাগলো তিয়াশা –
” তাতে আপনার কি?”
জায়ন আর একটি কথাও বাড়ালো না সোজা নিয়ে গেলো বাসার পেছনের ফুলের বাগানের দিকে, সবার আড়ালে আবডালে …….
এদিকে হঠাৎ করেই লাইট আসার পড়েই নয়ন দেখতে পেলো তার ভাইয়া অয়ন মাটিতে পরে আছে —
” আরে ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?”
হঠাৎ নয়ন এর চোঁখে পড়ল অয়নের ঠোঁটের কোনা দিয়ে হালকা রক্ত বেয়ে পড়ছে । আরোহী, অনন্যা রিকের চোখেও পরলো —
” আরে ভাইয়া তোর ঠোঁট বেয়ে রক্ত ঝরছে , কি হয়েছে ?”
অয়ন একটু মাথা ঝাঁকিয়ে বলল —
” আমার মনে হলো কারো কনুই আমার মুখে এসে লাগলো , আর টাল সামলাতে না পেরে পরে গেছি।”
“ভাইয়া ঠিক আছেন আপনি এখন ?”
অনন্যা বলে উঠলো…
” হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি।”
এতক্ষন কারো নজরে পড়েনি জে তিয়াশা এখানে অনুপস্থিত। আরোহী বলে উঠলো –
” আরে তিয়াশা কোথায়?”
এই সব দৃশ্য সামনে থেকেই পরখ করছিল আকাশ, ইউভি , সাগর, পলাশ, আহান —
“ও তাইলে মামা আমাদের এই জন্য কইছে লাইট অফ করতে, এতক্ষণে মস্তিষ্কে ঢুকলো।”
সাগরের কথায় সবার টনক নড়লো।
হঠাৎ অয়ন দের কাছে ইউভি আর আকাশ গিয়ে দাঁড়ালো, ইউভি রসভরা স্বরে বলে উঠলো —
” নয়ন অয়ন কে নিয়ে যা ঘরে , বেশি ব্যথা পাশ নিত ভাই অয়ন ? ”
” না না ভাই ঠিক আছি।”
” তাও যা ঘরে । ”
আর কথা না বাড়িয়ে অয়ন আর নয়ন চলে গেলো । এবার রিক এর দিকে তাঁকিয়ে ইউভি বলল —
” তোদের কাপল ডান্স তো আর হচ্ছে না , যা তুই ও যা।”
রিক কিছু না ভেবে বলে উঠলো —
” কেন ভাইয়া ?”
ইউভি কোমরে হাত দিয়ে জবাব দিল —
” কি কেন ভাইয়া? জানিস না কাপল ডান্স করতে কাপল লাগে , তোর কাপল কৈ? ”
” কেন আমার তো অনুর সঙ্গে ডান্স করার কথা ।”
ইউভির চোঁখ রক্তময় লাল হয়ে উঠলো —
” যেতে বলেছি যা, কোন ডান্স হবে না।”
রিক ও চলে গেলো তার ইউভি ভাইয়ার কথা শুনে ।
এদিকে এই সব দৃশ্যমান হচ্ছিল আরোহী আর অনন্যার সামনে …
হঠাৎ অনু বলে উঠলো —
” ইউভি ভাইয়া তিউ আপুকে দেখেছো, কোথায় যে গেল এখানেই ছিল?”
ইউভির জবাব দেওয়ার আগেই আকাশ বলে উঠলো-
” তিয়াশার যেখানে থাকার সেখানেই ঠিকই আছে।”
আরোহীর দিকে তাকিয়ে আকাশ আবারও বলল “এবার চলেন”
আরোহী হতবাক হয়ে প্রশ্ন করল-
“কোথায়?”
“কেন কাপল ডান্স করতে, ওই ডান্স করার জন্য একটু দাঁড়িয়ে ছিলেন।”
ইউভি আর আকাশ দুজনেই তাদের হাত টেনে উপরে স্টেজে নিয়ে গেলো এত কোলাহলের মধ্যে কেউ যেন নজর ই দিল না এখানে কি হয়ে গেলো—–
সাউন্ড বক্স এ গান বেজে উঠলো
“লিখেছি নাম তোর , জেগেছি রাত ভোর,
আয়না কাছে আয় , হবো আজ আমি তোর।
লিখেছি নাম তোর , জেগেছি রাত ভোর,
আয়না কাছে আয় , হবো আজ আমি তোর।
তুই আমার মাহিয়া মাহিয়া মাহী মাহিয়া ,
তুই আমার মাহিয়া মাহিয়া মাহী মাহিয়া ,
তুই আমার মাহিয়া মাহিয়া মাহী মাহিয়া ,
তুই আমার মাহিয়া মাহিয়া মাহী মাহিয়া …..
এক অজানা অচেনা তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে ওই প্রণয়ী যুগলের দল , আর এই দৃশ্য সন্ধ্যার আলোয় আলাদা গল্প বলে যাচ্ছে।
সাগর দের মুখ থেকে শুধু একটাই কথা বের হয়ে এলো —
“মাশাল্লাহ কি ডান্স দেখাচ্ছ।”
এরই মাঝে বৃষ্টির শরীর খারাপ লাগছে বলে তাকে নিয়ে উপড়ে চলে যায় । তাও চোধুরী বাড়ির বাচ্চা কাচ্চারা মেতে আছে আনন্দে, অনুষ্ঠানে হয়নি এখনো বিরত ….
” আমাকে এখানে কেন আনলেন?”
তিয়াশার কথাগুলো যেন বাতাস ছুঁয়ে চলে গেল— জায়নের চোখেমুখে, মনোজগতে বিন্দুমাত্রও পরিবর্তনের ছাপ ফেলল না। সে ছিল স্থির, নির্লিপ্ত, যেন কিছু শুনেইনি।
হঠাৎ জায়ন তিয়াশাকে কাছে টেনে নেয়, এমন জোরে ও গভীর টানে যে এক মুহূর্তে তাদের মাঝে আর এক বিন্দুও ফাঁকা থাকে না।
তিয়াশা অবাক, নিঃশব্দ, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু জায়নের চোখে তখন এক অন্য আগুন,অসহ্য টান, অধিকার আর একরাশ দাহ।
তাদের নিঃশ্বাসের ঘনিষ্ঠতা জড়িয়ে যায় একে অপরের সাথে, স্পর্শের উত্তাপে গলে যায় চারপাশের বাতাস।
জায়ন বেসামাল হয়ে পড়ে, তিয়াশার গায়ের মিষ্টি গন্ধ যেন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক অদৃশ্য নেশার জগতে।
তার হাতের বাঁধন শক্ত হয়ে আসে, তিয়াশার শাড়ি পরা মেদহীন উম্মুক্ত কোমরে জায়ন এর পুরুষালি হাতের আঙুলের ছোঁয়ায় যেন কেঁপে ওঠে তিয়াশা,
এক অনিচ্ছুক স্বীকারোক্তির মতো শরীর সাড়া দিয়ে ফেলে।
হঠাৎ ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয় জায়ন। তিয়াশার চুলের গন্ধ, তার উষ্ণ ত্বক সব কিছু মিলে যেন জায়নকে টেনে নিচ্ছে গভীর কোনো মাদকতার গভীরে।
নিজেকে বেসামাল করে, সে তার অধরের স্পর্শ
ছুঁয়ে দিয়ে যায় তিয়াশার গলার চারপাশ বারবার, আরও গভীর, আরও আপন করে।
তিয়াশা চেয়েছিল নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে, জায়নের সেই উষ্ণ, অস্থির আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতে। কিন্তু পারছিল না। যেন শরীর আর মন দু’ভিন্ন স্রোতে ভাসছে। চেষ্টার পরও কোথাও একটা অদৃশ্য টান, এক অমোঘ টানাপোড়েন ওকে আটকে রেখেছে।
সে বুঝতে পারছিল, জায়নের স্পর্শে শুধু সে নয়,ওর সত্ত্বাটাই যেন বেসামাল হয়ে উঠেছে।
” কাপল ডান্স করবো রোদ।”
হঠাৎ জায়ন নিজেকে স্থির করে বলে ওঠে তিয়াশার কানে।
“ম মানে?”
হঠাৎ এক বজ্রপাতের পর তাঁদের শরীরে ছুঁয়ে যেতে
লাগলো বৃষ্টির ছোঁয়া…… মনে হচ্ছে প্রকৃত ও তাদের এই
মুহূর্তের সঙ্গী হতে চায়….
সামনে দাঁড়িয়ে ছিল জায়ন লেমন ইয়েলো পাঞ্জাবিতে, বৃষ্টির ফোঁটায় ভেজা কাপড় তার গায়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল, চোখে ছিল অভিমানের চেয়ে বড়ো এক আকর্ষণ, এক অমোঘ দাবি।
তিয়াশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো সে নীরব, ধীর কিন্তু নিশ্চিত।
তিয়াশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার দিকে, তারপর নিঃশব্দে এগিয়ে এল,
সাউন্ড বক্স এ আবার এক গান বেজে উঠল —
( এর পরে লাইন গুলো পড়ার সময় আপুরা ভাইয়ারা এই গান টা চালিয়ে পড়বেন, আমি লিখছি ও গান টা চালিয়ে)
” খোলা খুলি বলতে গেলে,
পরে গেছি তোর কবলে ,
তোলিয়েছে মন , ভীষন রকম
অথই জলে।
খোলা খুলি বলতে গেলে,
পরে গেছি তোর কবলে ,
তোলিয়েছে মন , ভীষন রকম
অথই জলে।
সাঁতার কেটেছি, ঘুমিয়ে হেঁটেছি
এতটা ডুবেছি , তোরি তো কারনে
তোকে ভালবাসতে গিয়ে …..
তিয়াশা হাত রাখে তার হাতে
দু’জনের চোখে চোখ পড়ে ভিজে চুল মূখে গিয়ে লেগে আছে,
জায়ন হালকা টান দিয়ে তিয়াশাকে কাছে আনে।
তার এক হাত কোমরে, আরেক হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দেয় তাকে।
তিয়াশার লাল শাড়ি বৃষ্টির জলে নেমে পড়া আগুনের মতো পাক খায়, আর চুলগুলো উড়ে এসে মুখ ঢেকে দেয়।
এবার তারা একে অপরের শরীরের একেবারে কাছে—কোমর ও কাঁধে হাত রেখে ধীরে ধীরে গানের তালে তাল, এক ছন্দে বৃষ্টির ফোঁটার সঙ্গে মিল রেখে নড়তে থাকে।
পা দুটো ভিজে মাটিতে ঘুরে চলে গোল বৃত্তে, যেন তারা পৃথিবীকে একসাথে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ এক নিঃশ্বাসে জায়ন তিয়াশাকে তুলে নিয়ে শুইয়ে দিলো নিজের বাহুর ওপর,
তিয়াশার শরীর যেন ছুঁয়ে ফেললো বৃষ্টিভেজা মাটি, কিন্তু বাস্তবে সে ছিল জায়নের উষ্ণ হাতের আশ্রয়ে।
” দেরেনা দেরেনা দেরেনা
So long this love can breathe
Our heart can say
So long lives this,
And this gives life there
You touch my heart
When i miss you…..
তিয়াশার ভেজা শাড়ির আঁচল একটু সরে গিয়ে উন্মুক্ত করে দিলো তার ফর্সা উদর,
সেই কোমল, মসৃণ ত্বকের উপর জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন মুক্তোর মতো ঝলমল করছিল।
জায়ন এক মুহূর্ত থমকে তাকিয়ে রইল…
তার চোখে বিস্ময়ের রেখা, মুখে প্রশান্তির চাপা ঢেউ।
তারপর ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে তিয়াশাকে বাহু থেকে টেনে নিলো নিজের কাছে
পেছন ঘুরিয়ে এক আলিঙ্গনে আটকে ফেললো তাকে।
তিয়াশার সারা শরীর কেঁপে উঠলো সেই আবদ্ধতায়।
জায়নের ঠোঁট এগিয়ে এলো…
তিয়াশার ভেজা পিঠে সে রাখলো এক নিঃশব্দ, আবেশময় স্পর্শ–
একটি চুম্বন, যেখানে ভাষা নেই, আছে অধিকার…
যেখানে শব্দ নেই, কিন্তু আছে এক অনন্ত চাওয়া।
তিয়াশার চোখ বুঁজে আসে, ঠোঁটে এক অস্ফুট কাঁপুনি
আর এই ছোঁয়া শুধু অনুভবের জন্য।
জায়ন আঙুল দিয়ে তিয়াশার চিবুকে স্পর্শ করে তার মুখটা নিজের দিকে তোলে–
” ভালোবাসি রোদ, খুব ভালোবাসি তোকে,
নিজের চেয়েও বেশি। কবে, কখন ভালবেসেছি নিজেই জানি না শুধু এইটুকু জানি তুই আমার হৃদয়ের একমাএ রোদ।
এই ভালবাসা তুই ফিরিয়ে দিলে হয়তো বাঁচার আর সাহস হবে না …
কিন্তু তোর একটা ‘হ্যাঁ’…
আমার জীবনটাকে হয়তো বাঁচিয়ে দেবে।”
জায়ন এর এই শব্দগুলো যেন তিয়াশার অন্তর্গত প্রশান্ত জগতে এক আকস্মিক ঝড় বইয়ে দিল, সে স্তব্ধ, বিস্মিত, কাঁপা কাঁপা চোখে তাকিয়ে রইলো
” সে কি শুনল , তাঁর শখের পুরুষ, এই সুন্দর পুরুষ তাকে ভালোবাসে এটাও সম্ভব?”
জায়ন চোঁখ বুঝে আবার ও বলল —
“তুই ভাবিস, আমি তোর প্রতি কড়া… অভিমানী… কিন্তু আসলে আমি তোর জন্যে পাগল রোদ ,
তুই যখন অন্য কারও সাথে হাসিস, কথা বলিস… তখন মনে হয় সব শেষ করে দেই ,কেন রেগে যাই? কেন এতকিছু ? সব সময় তুই আমার মাথায় ঘুরিস।
হয়তো আমার এই অনুভুতি সহজ না, স্বাভাবিক না
কিন্তু এটা সত্যি।
তুই যদি কখনোও আমার না হোস, তাহলেও এই সত্যিটা আমি লুকিয়ে রাখবো না। কারণ এটা আমার সবচেয়ে সুন্দর ব্যথা।”
তিয়াশা কি শুনছে এইসব , কেন এক অজানা ভালো লাগা ভার করছে তার মনে , কিন্তু তার আপু —
” আপনি তো আপুকে …….
বাক্য সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই জায়ন তার তর্জনী আঙুল দিয়ে তিয়াশার ওষ্ঠ জুড়ে রাখে …
” আমি বৃষ্টি কে আগেই বলে দিয়েছি আমার মনে কেউ ঝড় তুলেছে , তাকে না পেলে হয়তো আমার আমি টাই থাকবো না । আমি বৃষ্টি কে ভালবাসিনী কখনো, শুধু মাত্র মেজো মায়ের শরীরের কথা ভেবে কিছু বলিনি পড়িবার কে , এখন ভাবছি হয়তো একবার কেন চেষ্টা করলাম না । ”
একটু থেমে বললো —
“আমায় বিয়ে করবি রোদ?”
তিয়াশা যেন হওয়ায় ভাসছে , তার শরীর অবশ হয়ে আসছে , সে কি খুশিতে নাচবে , না কি কান্নায় ভাসিয়ে দেবে তার সখের পুরুষের বুক ।
কিন্তু এখন সে কি বলবে আগে নিজেকে গুছিয়ে নিক এই ভেবেই জায়ন কে একা রেখে দৌড়ে চলে গেল —–
” রোদ কিছু তো বলে যা , কেন অসুস্থ পরিবেশে রেখে চলে যাচ্ছিস সুস্থ হতে চাই রোদ ।”
জায়ন এর কথা কানে আসে রোদের শুধু একটু মুচকি হাঁসি দিয়ে বাসার দিকে চলে যায় —–
আর রেখে যায় জায়ন কে এক অপেক্ষার জালে….
“কিন্তু রোদ কি জানতো তার এই চলে যাওয়া তাদের কত দূরে করে দেবে ।”
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৩
রোদ এক অজানা খুশিতে তার ভেজা শাড়ি পরা অবস্তায় তাঁদের রুমে প্রবেশ করতে যাবে ,
” আমি জানি আমি প্রেগনেন্ট,আমাদের সন্তান আমার গর্ভে। কিন্তু আমি গেলে মা তো অসুস্থ হয়ে যাবে ……
তিয়াশা চিৎকার করে উঠল —
” আ আপু….. ”
তিয়াশার চিৎকার এ বৃষ্টির কান থেকে ফোন টা পড়ে গেল…..